শিক্ষণ পদ্ধতি (Pedagogy)

শিক্ষণ পদ্ধতি বা পেডাগজি হলো সেই কৌশল, পদ্ধতি এবং প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা এবং মানসিক বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে। এটি শিক্ষকতা পেশার কার্যকারিতা বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


১. শিক্ষণ পদ্ধতির সংজ্ঞা

শিক্ষণ পদ্ধতি হলো সেই পরিকল্পিত এবং সংগঠিত কার্যক্রমের সমষ্টি, যা শিক্ষার্থীকে শেখার উদ্দেশ্য অর্জনে সাহায্য করে। এটি শিক্ষকের ব্যবহারিক দক্ষতা ও কৌশলকে নির্দেশ করে।


২. শিক্ষণ পদ্ধতির লক্ষ্য

  • শিক্ষার্থীদের জ্ঞান, দক্ষতা, ও মনোভাবের বিকাশ।
  • শিক্ষাকে সহজ, বোধগম্য ও আকর্ষণীয় করা।
  • শিক্ষার্থীদের চিন্তা-চেতনা ও সৃজনশীলতা বৃদ্ধি।
  • শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিত্ব ও সামাজিক দক্ষতা উন্নত করা।

৩. প্রধান শিক্ষণ পদ্ধতি

(ক) বক্তৃতা পদ্ধতি (Lecture Method):

শিক্ষক বক্তব্য প্রদান করে শিক্ষার্থীদেরকে জ্ঞান উপস্থাপন করেন। এটি বড় গ্রুপের জন্য উপযুক্ত।

(খ) প্রশ্নোত্তর পদ্ধতি (Question-Answer Method):

শিক্ষক শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করেন এবং তাদের উত্তর থেকে শেখার পরিবেশ তৈরি করেন।

(গ) আলোচনা পদ্ধতি (Discussion Method):

একটি বিষয় নিয়ে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা মতবিনিময় করেন, যা চিন্তাশীলতা এবং বিশ্লেষণ দক্ষতা বাড়ায়।

(ঘ) অনুশীলন পদ্ধতি (Demonstration Method):

শিক্ষক কোন প্রক্রিয়া বা কাজ সরাসরি প্রদর্শন করেন, যাতে শিক্ষার্থীরা তা সহজে বুঝতে পারে।

(ঙ) গোষ্ঠী পদ্ধতি (Group Work Method):

ছাত্ররা ছোট ছোট গোষ্ঠীতে ভাগ হয়ে একত্রে কাজ করে এবং পারস্পরিক সহযোগিতায় শেখে।

(চ) প্রকল্প ভিত্তিক পদ্ধতি (Project-Based Learning):

শিক্ষার্থীরা প্রকল্প তৈরি করে প্র্যাকটিক্যাল জ্ঞান অর্জন করে।

(ছ) অনুসন্ধান পদ্ধতি (Inquiry-Based Learning):

শিক্ষার্থী প্রশ্ন করে, তথ্য সংগ্রহ করে, এবং নিজেরাই সমাধান খোঁজে।


৪. আধুনিক শিক্ষণ কৌশল

(ক) সক্রিয় শেখা (Active Learning):

শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করে শেখার গুণগত মান বাড়ানো।

(খ) প্রযুক্তি ব্যবহার (Use of Technology):

কম্পিউটার, ইন্টারনেট, অডিও-ভিডিও উপকরণ ব্যবহার করে শিক্ষাকে আকর্ষণীয় করা।

(গ) পার্থক্যকৃত শিক্ষা (Differentiated Instruction):

প্রত্যেক শিক্ষার্থীর শেখার ধরন ও গতি অনুযায়ী শিক্ষা প্রদান।

(ঘ) সমস্যা ভিত্তিক শিক্ষা (Problem-Based Learning):

প্রকৃত সমস্যা থেকে শেখার প্রক্রিয়া শুরু করা।


৫. শিক্ষকের ভূমিকা শিক্ষণ পদ্ধতিতে

  • শিক্ষার্থীদের শেখার পরিবেশ তৈরি করা।
  • বিভিন্ন শিক্ষণ কৌশল ও উপকরণ ব্যবহার করা।
  • শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও উৎসাহ বৃদ্ধি করা।
  • শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত পার্থক্য বুঝে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান।

৬. শিক্ষণ পদ্ধতির মূল্যায়ন

  • শিক্ষার্থীদের শেখার ফলাফল পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়ন।
  • শিক্ষণ পদ্ধতির কার্যকারিতা যাচাই করা।
  • প্রয়োজন অনুযায়ী পদ্ধতি পরিবর্তন বা উন্নয়ন।

৭. শিক্ষণ পদ্ধতির গুরুত্ব

  • শিক্ষাকে কার্যকর এবং ফলপ্রসূ করে তোলে।
  • শিক্ষার্থীদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে।
  • শিক্ষার্থীর শেখার প্রক্রিয়াকে সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলে।

শিক্ষকের দক্ষতা বৃদ্ধি করে।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top