পথের দাবী গল্পের প্রশ্ন উত্তর

পথের দাবী গল্পের প্রশ্ন উত্তর

পথের দাবী ( শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় )

ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৫০টি)

১. ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের লেখক কে?

  • (ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • (খ) বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
  • (গ) শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়
  • (ঘ) বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়

২. গিরীশ মহাপাত্রের বয়স কত ছিল?

  • (ক) কুড়ি-বাইশ
  • (খ) পঁচিশ-ছাব্বিশ
  • (গ) ত্রিশ-বত্রিশের অধিক নয়
  • (ঘ) চল্লিশের কাছাকাছি

৩. “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোল আনাই বজায় আছে” – বাবুটি কে?

  • (ক) অপূর্ব
  • (খ) নিমাইবাবু
  • (গ) গিরীশ মহাপাত্র
  • (ঘ) রামদাস

৪. গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁক থেকে কী পাওয়া গিয়েছিল?

  • (ক) একটি টাকার থলি
  • (খ) একটি লোহার কম্পাস
  • (গ) একটি দেশলাই
  • (ঘ) একটি টাকা ও গণ্ডা-কয়েক পয়সা

৫. পুলিশ স্টেশনে কে গিরীশ মহাপাত্রকে নিয়ে এসেছিল?

  • (ক) নিমাইবাবু
  • (খ) অপূর্ব
  • (গ) জগদীশবাবু
  • (ঘ) রামদাস তলোয়ারকর

৬. গিরীশ মহাপাত্রের রুমালে কীসের ছবি আঁকা ছিল?

  • (ক) ফুলের
  • (খ) পাখির
  • (গ) বাঘের
  • (ঘ) হরিণের

৭. অপূর্ব কোন ট্রেনে করে যাচ্ছিল?

  • (ক) প্যাসেঞ্জার ট্রেন
  • (খ) ফার্স্ট ক্লাস ট্রেন
  • (গ) মেল ট্রেন
  • (ঘ) মালগাড়ি

৮. গিরীশ মহাপাত্রের জুতোর রং কেমন ছিল?

  • (ক) দুটোই কালো
  • (খ) দুটোই বাদামী
  • (গ) সবুজ রঙের
  • (ঘ) একটা কালো, একটা বাদামী

৯. অপূর্বর সহযাত্রী কে ছিল?

  • (ক) নিমাইবাবু
  • (খ) রামদাস তলোয়ারকর
  • (গ) সব্যসাচী মল্লিক
  • (ঘ) জগদীশবাবু

১০. সব্যসাচী মল্লিকের ছদ্মনাম কী ছিল?

  • (ক) রামদাস
  • (খ) অপূর্ব রায়
  • (গ) গিরীশ মহাপাত্র
  • (ঘ) নিমাই হাজরা

১১. “নিমাইবাবু চুপ করিয়া রহিলেন” – কারণ কী?

  • (ক) তিনি ভয় পেয়েছিলেন
  • (খ) তিনি অপূর্বর কথায় লজ্জা পেয়েছিলেন
  • (গ) তিনি গিরীশের কথায় অবাক হয়েছিলেন
  • (ঘ) তিনি ক্লান্ত ছিলেন

১২. গিরীশ মহাপাত্রের গায়ের জামাটি কীসের ছিল?

  • (ক) সুতির
  • (খ) সিল্কের
  • (গ) জাপানি সিল্কের
  • (ঘ) রামধনু রঙের মটকার

১৩. গিরীশ মহাপাত্রের কাছে গাঁজার কলকে পাওয়া গিয়েছিল –

  • (ক) ট্যাঁকে
  • (খ) পকেটে
  • (গ) জামার আস্তিনে
  • (ঘ) কোমরের কাছে গোঁজা

১৪. অপূর্ব তার ঘর থেকে কত টাকা চুরি যাওয়ার কথা বলেছিল?

  • (ক) একশো টাকা
  • (খ) তিনশো টাকা
  • (গ) ছয়-সাতশো টাকা
  • (ঘ) হাজার টাকা

১৫. “যাকে খুঁজছেন সে যে এ নয়, তার আমি জামিন হতে পারি।” – বক্তা কে?

  • (ক) অপূর্ব
  • (খ) রামদাস
  • (গ) জগদীশবাবু
  • (ঘ) অফিসের বড়বাবু

১৬. গিরীশ মহাপাত্রের দৃষ্টি কেমন ছিল?

  • (ক) উজ্জ্বল ও তীক্ষ্ণ
  • (খ) গভীর জলাশয়ের মতো
  • (গ) ভয়ার্ত
  • (ঘ) উদাসীন

১৭. “বুড়ো মানুষের কথাটা শুনো।” – এখানে বুড়ো মানুষটি কে?

  • (ক) অপূর্বর বাবা
  • (খ) অফিসের বড়বাবু
  • (গ) নিমাইবাবু
  • (ঘ) জগদীশবাবু

১৮. গিরীশ মহাপাত্রের হাতে কী ছিল?

  • (ক) একটি লাঠি
  • (খ) একটি ছাতা
  • (গ) একটি টিনের তোরঙ্গ
  • (ঘ) হরিণের শিঙের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি

১৯. “পথের দাবী” কোন ধরনের রচনা?

  • (ক) ছোটগল্প
  • (খ) নাটক
  • (গ) উপন্যাস
  • (ঘ) প্রবন্ধ

২০. “কি আপদ! অপূর্ব হাসিয়া কহিল।” – অপূর্ব কাকে ‘আপদ’ বলেছে?

  • (ক) নিমাইবাবুকে
  • (খ) চোরকে
  • (গ) গিরীশ মহাপাত্রকে
  • (ঘ) রামদাসকে

২১. গিরীশ মহাপাত্রের মাথার চুল থেকে কীসের গন্ধ আসছিল?

  • (ক) নারকেল তেলের
  • (খ) সুগন্ধি তেলের
  • (গ) নেবুর তেলের
  • (ঘ) কিসেরও না

২২. অপূর্ব কোন দেশের পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিল?

  • (ক) ভারতবর্ষ
  • (খ) বর্মা (মায়ানমার)
  • (গ) চীন
  • (ঘ) ইংল্যান্ড

২৩. “কেবল আশ্চর্য সেই দুটি চোখের দৃষ্টি।” – চোখ দুটিকে কার সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?

  • (ক) বাঘের চোখের সঙ্গে
  • (খ) হরিণের চোখের সঙ্গে
  • (গ) গভীর জলাশয়ের সঙ্গে
  • (ঘ) পাখির চোখের সঙ্গে

২৪. গিরীশ মহাপাত্র নিজের নাম কী বলে স্বাক্ষর করেছিল?

  • (ক) গিরীশ মহাপাত্র
  • (খ) শ্রী গিরীশ মহাপাত্র
  • (গ) গীরিশ মহাপাত্র
  • (ঘ) শ্রীগিরিশ মহাপাত্র

২৫. নিমাইবাবু অপূর্বর কে হতেন?

  • (ক) কাকা
  • (খ) মামা
  • (গ) জেঠু
  • (ঘ) বাবার বন্ধু

২৬. গিরীশ মহাপাত্র নিজেকে কী বলে পরিচয় দিয়েছিল?

  • (ক) একজন ব্রাহ্মণ
  • (খ) একজন ব্যবসায়ী
  • (গ) একজন পর্যটক
  • (ঘ) কায়স্থ সন্তান

২৭. রামদাসের স্ত্রীর অনুরোধে অপূর্ব কী খেতে রাজি হয়েছিল?

  • (ক) চা-বিস্কুট
  • (খ) মিষ্টি
  • (গ) জলখাবার
  • (ঘ) ফল

২৮. গিরীশ মহাপাত্র কীসের খদ্দের জোগাড় করতে গিয়েছিল?

  • (ক) তামাকের
  • (খ) কাপড়ের
  • (গ) লোহার
  • (ঘ) জাহাজের

২৯. অপূর্বর চোখে জল এল কেন?

  • (ক) ভয়ে
  • (খ) দুঃখে
  • (গ) অভিমানে ও লজ্জায়
  • (ঘ) আনন্দে

৩০. গিরীশ মহাপাত্রের মোজার রং কী ছিল?

  • (ক) দুটিই কালো
  • (খ) দুটিই সাদা
  • (গ) দুটিই সবুজ
  • (ঘ) একটি লাল ও একটি সবুজ

৩১. “এমন瀟洒 স্বাস্থ্য আর দেখিনি।” – এই মন্তব্যটি কার?

  • (ক) অপূর্ব
  • (খ) রামদাস
  • (গ) নিমাইবাবু
  • (ঘ) জগদীশবাবু

৩২. গিরীশ মহাপাত্রের বুক পকেটে কী দেখা যাচ্ছিল?

  • (ক) একটি কলম
  • (খ) বাঘ-আঁকা একটি রুমাল
  • (গ) একটি চিরুনি
  • (ঘ) একটি নোটবুক

৩৩. “তোমার মতো বুদ্ধিবান লোককে সঙ্গে নিয়ে … ” – বক্তা কে?

  • (ক) অপূর্ব
  • (খ) সব্যসাচী মল্লিক
  • (গ) নিমাইবাবু
  • (ঘ) রামদাস

৩৪. ব্রিটিশ সরকার কোন উপন্যাসটি বাজেয়াপ্ত করেছিল?

  • (ক) পথের পাঁচালী
  • (খ) পথের দাবী
  • (গ) আরণ্যক
  • (ঘ) দেবদাস

৩৫. “আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারের দণ্ডভোগ…” – বক্তা কে?

  • (ক) রামদাস
  • (খ) গিরীশ মহাপাত্র
  • (গ) অপূর্ব
  • (ঘ) নিমাইবাবু

৩৬. সব্যসাচীকে কোন বিষয়ে ‘অদ্বিতীয়’ বলা হয়েছে?

  • (ক) লড়াইয়ে
  • (খ) ছদ্মবেশ ধারণে
  • (গ) বক্তৃতায়
  • (ঘ) লেখায়

৩৭. গিরীশ মহাপাত্রের কাশির ধমকে কী হচ্ছিল?

  • (ক) সে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছিল
  • (খ) তার সর্বাঙ্গ دولছিল
  • (গ) সবাই ভয় পাচ্ছিল
  • (ঘ) সে কথা বলতে পারছিল না

৩৮. গিরীশ মহাপাত্রের হাতে ধরা ছড়ির হাতলটি কীসের ছিল?

  • (ক) হাতির দাঁতের
  • (খ) রুপোর
  • (গ) হরিণের শিংয়ের
  • (ঘ) কাঠের

৩৯. “এই লোকটিকে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন” – অপূর্ব কাকে এই কথা বলেছিল?

  • (ক) জগদীশবাবুকে
  • (খ) রামদাসকে
  • (গ) নিমাইবাবুকে
  • (ঘ) পুলিশ কনস্টেবলকে

৪০. অপূর্বর মতে, গিরীশ মহাপাত্রের চোখ দুটি কেমন ছিল?

  • (ক) মায়াবী
  • (খ) ভয়ংকর
  • (গ) সজল
  • (ঘ) অসম্ভব সুন্দর

৪১. অপূর্ব পেশায় কী ছিল?

  • (ক) ডাক্তার
  • (খ) উকিল
  • (গ) জাহাজের কেরানি
  • (ঘ) অফিসের বড়বাবু

৪২. সব্যসাচী মল্লিককে ধরার জন্য কে তৎপর ছিল?

  • (ক) স্থানীয় পুলিশ
  • (খ) ব্রিটিশ সরকার
  • (গ) অপূর্ব
  • (ঘ) বিপ্লবী দল

৪৩. গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁকে গোঁজা ছিল –

  • (ক) একটি ছুরি
  • (খ) একটি পিস্তল
  • (গ) একটি ফাউন্টেন পেন
  • (ঘ) কাঠের চিরুনি

৪৪. “আমার ইচ্ছা তুমি একবার সবগুলো দেখে আসো।” – বক্তা অপূর্বকে কী দেখতে বলেছেন?

  • (ক) চোরদের
  • (খ) বিপ্লবীদের
  • (গ) সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের
  • (ঘ) তার আত্মীয়দের

৪৫. গিরীশ মহাপাত্রের মুখে কী ছিল?

  • (ক) সিগারেট
  • (খ) চুরুট
  • (গ) পান
  • (ঘ) বার্মা চুরুট

৪৬. “একেবারে রাজবিদ্রোহী!” – এই মন্তব্যটি কার সম্পর্কে করা?

  • (ক) অপূর্ব
  • (খ) সব্যসাচী মল্লিক
  • (গ) রামদাস
  • (ঘ) গিরীশ মহাপাত্র (ব্যঙ্গ করে)

৪৭. নিমাইবাবু কাকে ‘অতি নোংরা’ বলেছেন?

  • (ক) পলিটিক্সকে
  • (খ) চোরকে
  • (গ) গিরীশকে
  • (ঘ) অপূর্বকে

৪৮. গিরীশ মহাপাত্রের জ্যাকেটের পকেটে কী ছিল?

  • (ক) একটি মানিব্যাগ
  • (খ) একটি কাঠের চিরুনি
  • (গ) একটি চশমা
  • (ঘ) একটি রুমাল

৪৯. “তার আমি জামিন হতে পারি” – এখানে ‘জামিন’ শব্দের অর্থ কী?

  • (ক) সাক্ষী
  • (খ) দায়িত্বগ্রহণকারী
  • (গ) বন্ধু
  • (ঘ) আইনজীবী

৫০. অপূর্ব শেষ পর্যন্ত কার কাছে ক্ষমা চেয়েছিল?

  • (ক) নিমাইবাবুর কাছে
  • (খ) জগদীশবাবুর কাছে
  • (গ) রামদাসের কাছে
  • (ঘ) গিরীশ মহাপাত্রের কাছে (মনে মনে)

খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (SAQ) – মান ১ (৪০টি)

১. ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের কোন অংশ পাঠ্যাংশে অন্তর্ভুক্ত?

উত্তর: ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের একটি নির্দিষ্ট অংশ পাঠ্যাংশে অন্তর্ভুক্ত, যেখানে পুলিশ স্টেশনে সব্যসাচী মল্লিকের জেরা পর্ব দেখানো হয়েছে।

২. গিরীশ মহাপাত্রের আসল নাম কী?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের আসল নাম সব্যসাচী মল্লিক।

৩. নিমাইবাবু কে ছিলেন?

উত্তর: নিমাইবাবু ছিলেন বর্মার এক পুলিশ স্টেশনের বড়কর্তা এবং অপূর্বর বাবার বন্ধু।

৪. অপূর্ব কেন পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিল?

উত্তর: তার ঘরে চুরির অভিযোগ জানাতে অপূর্ব পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিল।

৫. গিরীশ মহাপাত্রের শখকে ‘ষোল আনা’ বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: কারণ তার স্বাস্থ্য ভেঙে গেলেও তার সাজসজ্জার পারিপাট্য ও শৌখিনতা অটুট ছিল।

৬. অপূর্ব কাকে লাথি মেরে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিয়েছিল?

উত্তর: অপূর্ব কয়েকজন ফিরিঙ্গি ছোকরাকে লাথি মেরে ট্রেন থেকে নামিয়ে দিয়েছিল।

৭. গিরীশ মহাপাত্রের চোখের দৃষ্টিতে কীসের আভাস ছিল?

উত্তর: তার চোখের দৃষ্টিতে গভীর জলাশয়ের মতো অতল রহস্যের আভাস ছিল।

৮. “তবে এ বস্তুটি পকেটে কেন?” – কোন বস্তুর কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: এখানে গিরীশ মহাপাত্রের পকেট থেকে পাওয়া গাঁজার কলকের কথা বলা হয়েছে।

৯. রামদাস তলোয়ারকর কে?

উত্তর: রামদাস তলোয়ারকর ছিলেন অপূর্বর সহকর্মী ও বন্ধু।

১০. সব্যসাচী মল্লিক পেশায় কী ছিলেন?

উত্তর: সব্যসাচী মল্লিক ছিলেন একজন বিপ্লবী এবং ‘পথের দাবী’ নামক বিপ্লবী সংগঠনের নেতা।

১১. গিরীশ মহাপাত্রের জামার বোঁতাম কীসের ছিল?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের জামার বোঁতাম ছিল হাড়ের।

১২. “কেবল আশ্চর্য সেই দুটি চোখের দৃষ্টি” – চোখ দুটিকে আশ্চর্য বলা হয়েছে কেন?

উত্তর: কারণ তার রোগা, জীর্ণ শরীরের সঙ্গে সেই গভীর ও রহস্যময় চোখের দৃষ্টি একেবারেই বেমানান ছিল।

১৩. অপূর্ব কোথায় চাকরি করত?

উত্তর: অপূর্ব বর্মার একটি অফিসে চাকরি করত।

১৪. জগদীশবাবু গিরীশ মহাপাত্র সম্পর্কে কী বলেছিলেন?

উত্তর: জগদীশবাবু বলেছিলেন যে, পুলিশ যাকে খুঁজছে সে যে গিরীশ মহাপাত্র নয়, তার জন্য তিনি জামিন হতে পারেন।

১৫. গিরীশ মহাপাত্র নিজেকে কোন জাতির সন্তান বলে পরিচয় দেয়?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্র নিজেকে কায়স্থ জাতির সন্তান বলে পরিচয় দেয়।

১৬. “আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারের দণ্ডভোগ…” – অপূর্ব কোন অবিচারের কথা বলেছে?

উত্তর: বিনা দোষে ফিরিঙ্গি ছোকরাদের দ্বারা অপমানিত হওয়া এবং তার প্রতিবাদ করায় স্টেশন থেকে বিতাড়িত হওয়ার অবিচারের কথা বলেছে।

১৭. গিরীশ মহাপাত্র কী কারণে কাশছিল?

উত্তর: অতিরিক্ত গাঁজা সেবনের ফলে তার ফুসফুসের অবস্থা খারাপ হওয়ায় সে কাশছিল।

১৮. অপূর্বর লজ্জা পাওয়ার কারণ কী ছিল?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের মতো একজন নিরীহ ও অসুস্থ মানুষকে সন্দেহ করার জন্য অপূর্ব লজ্জা পেয়েছিল।

১৯. নিমাইবাবু কাকে ‘ভারী চট্টপটে ছেলে’ বলেছেন?

উত্তর: নিমাইবাবু সব্যসাচী মল্লিককে ‘ভারী চট্টপটে ছেলে’ বলেছেন।

২০. গিরীশ মহাপাত্রের কাছ থেকে আর কী কী পাওয়া গিয়েছিল?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের কাছ থেকে একটি লোহার কম্পাস, কাঠের ফুটরুল, কয়েকটি বিড়ি, দেশলাই ও গাঁজার কলকে পাওয়া গিয়েছিল।

২১. রামদাসের কথায় অপূর্বর কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

উত্তর: রামদাসের কথায় অপূর্বর নিজের ব্যবহারের জন্য অনুশোচনা হয় এবং সে তার কাছে ক্ষমা চায়।

২২. সব্যসাচী মল্লিকের বয়স কত ছিল?

উত্তর: সব্যসাচী মল্লিকের বয়স ত্রিশ-বত্রিশের বেশি ছিল না।

২৩. “পথের দাবী”-কে পথের দিকে তাকাতে বারণ করা হয়েছে কেন?

উত্তর: কারণ পথের দিকে তাকালে অর্থাৎ দেশ ও দেশের মানুষের দুঃখ-দুর্দশা দেখলে তার নিজের ঘরে ফেরা কঠিন হয়ে যাবে।

২৪. গিরীশ মহাপাত্রের কথাবার্তার ধরণ কেমন ছিল?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের কথাবার্তার ধরণ ছিল অত্যন্ত বিনয়ী, ভীতু এবং জড়ানো।

২৫. নিমাইবাবু গিরীশকে ছেড়ে দিলেন কেন?

উত্তর: গিরীশের চেহারা, কথাবার্তা ও তার কাছ থেকে পাওয়া জিনিসপত্র দেখে তিনি নিশ্চিত হন যে, সে কোনো বিপ্লবী নয়।

২৬. অপূর্ব প্রথমে গিরীশকে সন্দেহ করেছিল কেন?

উত্তর: কারণ গিরীশের অস্বাভাবিক পোশাক, চালচলন এবং তীক্ষ্ণ চোখের দৃষ্টি দেখে অপূর্বর মনে হয়েছিল সে-ই হয়তো বিপ্লবী সব্যসাচী।

২৭. “বাবাই একদিন এঁর চাকরি করে দিয়েছিলেন।” – কার চাকরির কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: এখানে নিমাইবাবুর চাকরির কথা বলা হয়েছে।

২৮. গিরীশ মহাপাত্র কোন ভাষায় উত্তর দিয়েছিল?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্র বাংলা ও ভাঙা ভাঙা হিন্দুস্তানি ভাষায় উত্তর দিয়েছিল।

২৯. রামদাস অপূর্বর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল কেন?

উত্তর: কারণ রামদাস একজন স্বদেশপ্রেমী মানুষ ছিলেন এবং অপূর্বর দেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদাবোধকে তিনি সম্মান করতেন।

৩০. গিরীশ মহাপাত্রের চুল কেমন ছিল?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের চুল ছিল প্রায় কানের উপর পর্যন্ত ছাঁটা, কিন্তু লেবুর তেলের গন্ধে ভরা।

৩১. “এই অন্যায়ের প্রতিবাদ যখন করতে গেলাম…” – কোন অন্যায়ের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: বিনা কারণে ফিরিঙ্গি ছোকরাদের দ্বারা লাথি খাওয়ার অন্যায়ের কথা বলা হয়েছে।

৩২. গিরীশ মহাপাত্রের প্রকৃত উদ্দেশ্য কী ছিল?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল ছদ্মবেশে পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে তার বিপ্লবী কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া।

৩৩. “তুমি তো ইউরোপীয় নও।” – বক্তা কে?

উত্তর: এই উক্তিটির বক্তা হলেন স্টেশনের বড় সাহেব।

৩৪. অপূর্বর দেশের বাড়ি কোথায়?

উত্তর: অপূর্বর দেশের বাড়ি বাংলায়।

৩৫. নিমাইবাবু নিজেকে কী বলে পরিচয় দেন?

উত্তর: নিমাইবাবু নিজেকে অপূর্বর কাকা এবং একজন ‘বুড়ো মানুষ’ বলে পরিচয় দেন।

৩৬. গিরীশের হাঁটার ভঙ্গি কেমন ছিল?

উত্তর: গিরীশের হাঁটার ভঙ্গি ছিল টলমল, যেন সে এখনই পড়ে যাবে।

৩৭. গিরীশের উত্তরীয়টি কীসের ছিল?

উত্তর: গিরীশের উত্তরীয়টি ছিল বিলাতি মিলের কালো মখমলের পাড়ের।

৩৮. অপূর্ব রামদাসের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল কেন?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রকে সন্দেহ করে তার প্রতি অমানবিক আচরণ করার জন্য অপূর্ব রামদাসের কাছে ক্ষমা চেয়েছিল।

৩৯. “তার কালচারের কথাটা একবার ভেবে দেখ।” – কে, কার সম্পর্কে এ কথা বলেছে?

উত্তর: রামদাস অপূর্বকে গিরীশ মহাপাত্রের কালচার বা সংস্কৃতি সম্পর্কে এ কথা বলেছে।

৪০. “নিজেরই লজ্জা করে” – কী কারণে লজ্জা করে?

উত্তর: নিজের দেশের লোককে সন্দেহ করে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার মতো নিচু কাজ করতে অপূর্বর লজ্জা করে।


গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ৩ (২৫টি)

১. “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোল আনাই বজায় আছে” – কার সম্পর্কে, কেন এই মন্তব্য করা হয়েছে?

উত্তর: এই মন্তব্যটি গিরীশ মহাপাত্র সম্পর্কে করা হয়েছে। তার চেহারা ছিল অত্যন্ত রুগ্ন ও জীর্ণ, যেন তার শরীরে কোনো রোগ বাসা বেঁধেছে। কিন্তু তার পোশাকে ছিল শৌখিনতার ছাপ—লেবুর তেল মাখা চুল, জাপানি সিল্কের শার্ট, বিলাতি মখমলের পাড়ের চাদর, সবুজ রঙের মোজা ও জুতো। এই বৈপরীত্য দেখেই নিমাইবাবু মন্তব্যটি করেছিলেন।

২. গিরীশ মহাপাত্রের পোশাক-পরিচ্ছদের বর্ণনা দাও।

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের পরনে ছিল জাপানি সিল্কের রামধনু রঙের শার্ট, বিলাতি কালো মখমলের পাড়ের চাদর এবং হাঁটুর উপরে পরা একটি খাকি রঙের সার্ট। তার পায়ে ছিল সবুজ রঙের মোজা ও বার্নিশ করা পাম্প শু। তার বুক পকেটে বাঘ-আঁকা রুমাল এবং হাতে হরিণের শিংয়ের হাতল দেওয়া বেতের ছড়ি ছিল।

৩. “কেবল আশ্চর্য সেই দুটি চোখের দৃষ্টি।” – চোখ দুটির বর্ণনা দাও এবং কেন তা আশ্চর্যকর?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের চোখ দুটি ছিল গভীর জলাশয়ের মতো, যার মধ্যে কোনো তল খুঁজে পাওয়া যায় না। তার রুগ্ন ও জীর্ণ শরীরের সঙ্গে এই অতলস্পর্শী, রহস্যময় ও বুদ্ধিদীপ্ত চোখের দৃষ্টি একেবারেই বেমানান ছিল। এই বৈপরীত্যের কারণেই তার চোখ দুটিকে আশ্চর্যকর বলে মনে হয়েছে।

৪. “আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারের দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না।” – বক্তা কে? কোন প্রসঙ্গে এই উক্তি?

উত্তর: উক্তিটির বক্তা অপূর্ব। সে যখন বিনা দোষে ফিরিঙ্গি ছোকরাদের দ্বারা অপমানিত হয়ে স্টেশন মাস্টারের কাছে নালিশ করতে যায়, তখন স্টেশন মাস্টার তার অভিযোগ না শুনে তাকেই স্টেশন থেকে বের করে দেন। এই অন্যায় ও অপমানের কথা বলতে গিয়েই অপূর্ব তার সহকর্মী রামদাস তলোয়ারকরের কাছে এই উক্তিটি করে।

৫. “বুড়ো মানুষের কথাটা শুনো।” – বুড়ো মানুষটি কে? তিনি কী কথা শুনতে বলেছেন?

উত্তর: এখানে ‘বুড়ো মানুষটি’ হলেন পুলিশ কর্তা নিমাইবাবু। অপূর্ব যখন গিরীশ মহাপাত্রকে সন্দেহ করে তাকে জেরা করার জন্য নিমাইবাবুকে অনুরোধ করছিল, তখন নিমাইবাবু অপূর্বকে এই ধরনের রাজনৈতিক সন্দেহ থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন যে, পলিটিক্স একটি ‘অতি নোংরা’ জিনিস এবং অপূর্বর মতো ভদ্র ও শিক্ষিত ছেলের এই বিষয়ে না জড়ানোই ভালো।

৬. অপূর্বের চোখে জল এল কেন?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের প্রতি অমানবিক আচরণ করার জন্য এবং তাকে সন্দেহ করার জন্য অপূর্ব মনে মনে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়েছিল। রামদাস যখন তাকে তার ব্যবহারের ভুল ধরিয়ে দেয়, তখন নিজের ভুলের কথা ভেবে এবং দেশের একজন স্বাধীনতা সংগ্রামীকে চিনতে না পারার অভিমানে তার চোখে জল এসে গিয়েছিল।

৭. নিমাইবাবু কীভাবে গিরীশ মহাপাত্র সম্পর্কে তাঁর সন্দেহ দূর করেছিলেন?

উত্তর: নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রকে নানা প্রশ্ন করেন এবং তার পোশাক ও জিনিসপত্র তল্লাশি করেন। তার কাছ থেকে গাঁজার কলকে, বিড়ি, দেশলাই ইত্যাদি ছাড়া সন্দেহজনক কিছু পাননি। তার ওপর, গিরীশের ভীতু, জড়ানো কথাবার্তা এবং অসুস্থ চেহারা দেখে তিনি নিশ্চিত হন যে, এই ব্যক্তি কোনোভাবেই দুর্ধর্ষ বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক হতে পারে না।

৮. “একেবারে রাজবিদ্রোহী! … তার আমি জামিন হতে পারি।” – বক্তা কে? তার এই উক্তির কারণ কী?

উত্তর: উক্তিটির বক্তা হলেন জগদীশবাবু, যিনি গিরীশ মহাপাত্রকে ধরে পুলিশে নিয়ে এসেছিলেন। তিনি গিরীশের করুণ চেহারা ও বিনয়ী আচরণ দেখে নিশ্চিত হয়েছিলেন যে, সে কোনো বিপ্লবী নয়। তাই নিমাইবাবু যখন গিরীশকে রাজবিদ্রোহী বলে ব্যঙ্গ করেন, তখন জগদীশবাবু তার দায়িত্ব নিয়ে বলেন যে, পুলিশ যাকে খুঁজছে, সে এই লোক নয়।

৯. ‘পথের দাবী’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘পথের দাবী’ বলতে দেশের পরাধীনতার শৃঙ্খল মোচনের দাবিকে বোঝানো হয়েছে। ‘পথ’ এখানে দেশের মুক্তির পথ। এই পথের দাবি হলো স্বাধীনতা, সাম্য এবং আত্মমর্যাদার দাবি। সব্যসাচী মল্লিক ও তার বিপ্লবী সংগঠন এই দাবি আদায়ের জন্যই সংগ্রামরত।

১০. রামদাস তলোয়ারকরের চরিত্রটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর: রামদাস তলোয়ারকর অপূর্বর সহকর্মী এবং একজন সহানুভূতিশীল ও দেশপ্রেমিক মানুষ। তিনি অপূর্বর আত্মমর্যাদাবোধকে সম্মান করেন। তিনি গিরীশ মহাপাত্রের প্রতি অপূর্বর আচরণে ব্যথিত হন এবং তাকে তার ভুল ধরিয়ে দেন। তার চরিত্রের মাধ্যমে লেখকের স্বদেশপ্রেম ও মানবিকতার আদর্শ ফুটে উঠেছে।

১১. অপূর্ব চরিত্রটির দ্বিধাগ্রস্ততার কারণ কী?

উত্তর: অপূর্ব চরিত্রটি দ্বিধাগ্রস্ত কারণ তার মধ্যে শিক্ষিত বাঙালি ভদ্রলোকের ভীরুতা এবং দেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদাবোধ—এই দুই বিপরীতধর্মী সত্তার দ্বন্দ্ব রয়েছে। সে একদিকে ব্রিটিশ শাসকের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে চায়, আবার অন্যদিকে পুলিশের ঝামেলা এড়িয়ে চলতে চায়। এই মানসিক দ্বন্দ্বই তার চরিত্রকে দ্বিধাগ্রস্ত করে তুলেছে।

১২. “কি জানি, হয়তো আপনাদেরও দরকার হতে পারে।” – কে, কোন প্রসঙ্গে এই কথা বলেছে?

উত্তর: এই কথাটি গিরীশ মহাপাত্র ওরফে সব্যসাচী মল্লিক পুলিশ স্টেশনে নিমাইবাবুকে বলেছিল। নিমাইবাবু যখন তার কাছ থেকে পাওয়া কাঠের ফুটরুল ও কম্পাস দেখে প্রশ্ন করেন যে, এগুলোর কী প্রয়োজন, তখন গিরীশ এই উত্তর দেয়। এর মাধ্যমে সে বোঝাতে চায় যে, সাধারণ দেখতে জিনিসেরও প্রয়োজন থাকতে পারে, যা তার ছদ্মবেশী চরিত্রের একটি দিক।

১৩. “লোকটির দিকে তাকাইয়া তাহার কেবলই মনে হইতে লাগিল, … ” – কী মনে হতে লাগল এবং কেন?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের দিকে তাকিয়ে অপূর্বর কেবলই মনে হচ্ছিল, এই লোকটির চোখের মধ্যে যে গভীরতা ও রহস্য আছে, তা তার বাহ্যিক রূপের সঙ্গে মেলে না। তার মনে হচ্ছিল, এই অদ্ভুতদর্শন ব্যক্তির পিছনে হয়তো কোনো বড় রহস্য লুকিয়ে আছে। তার তীক্ষ্ণ ও বুদ্ধিদীপ্ত চোখই অপূর্বর মনে এই সন্দেহের জন্ম দিয়েছিল।

১৪. গিরীশ মহাপাত্রের কাছ থেকে কী কী পাওয়া গিয়েছিল?

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের কাছ থেকে একটি টাকা ও গণ্ডা-কয়েক পয়সা, একটি লোহার কম্পাস, একটি কাঠের ফুটরুল, কয়েকটি বিড়ি, একটি দেশলাই এবং একটি গাঁজার কলকে পাওয়া গিয়েছিল। তার ট্যাঁকে একটি ফাউন্টেন পেন এবং পকেটে একটি কাঠের চিরুনিও ছিল।

১৫. নিমাইবাবুর চরিত্রটি সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: নিমাইবাবু একজন অভিজ্ঞ ও ধূর্ত পুলিশ কর্তা। তিনি ব্রিটিশ সরকারের অনুগত কর্মচারী হলেও তার মধ্যে কিছুটা মানবিকতা ও স্নেহপ্রবণতা রয়েছে। তিনি অপূর্বকে স্নেহ করেন এবং তাকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে চান। কিন্তু তার অভিজ্ঞ চোখও সব্যসাচীর নিখুঁত ছদ্মবেশ ধরতে ব্যর্থ হয়, যা তার চরিত্রের সীমাবদ্ধতাকে প্রকাশ করে।

১৬. “কিন্তু ইহা যে কত বড়ো ভ্রম” – কোনটিকে ভ্রম বলা হয়েছে?

উত্তর: অপূর্ব প্রথমে ভেবেছিল, গিরীশ মহাপাত্রের মতো একজন নিরীহ ও অসুস্থ ব্যক্তিকে সন্দেহ করা তার ভুল হয়েছে। কিন্তু পরে যখন সে বুঝতে পারে যে ওই ব্যক্তিই আসলে বিপ্লবী সব্যসাচী, তখন সে উপলব্ধি করে যে, গিরীশকে নিরীহ ভাবাটাই ছিল তার সবচেয়ে বড় ভ্রম বা ভুল।

১৭. “এইটুকু কাশির পরিশ্রমেই সে যেন একেবারে পরিশ্রান্ত হইয়া পড়িল।” – এই বর্ণনার কারণ কী?

উত্তর: এই বর্ণনার কারণ হলো গিরীশ মহাপাত্রের অসুস্থ ও দুর্বল শারীরিক অবস্থার অভিনয়কে ফুটিয়ে তোলা। সব্যসাচী মল্লিক তার ছদ্মবেশকে বিশ্বাসযোগ্য করার জন্য একজন রুগ্ন, ক্ষয়কাশে আক্রান্ত ব্যক্তির মতো আচরণ করছিলেন, যাতে পুলিশ তাকে কোনোভাবেই সন্দেহ করতে না পারে।

১৮. অপূর্ব কীভাবে সব্যসাচীকে চিনেছিল?

উত্তর: অপূর্ব প্রথমে গিরীশকে চিনতে পারেনি। কিন্তু পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় গিরীশ মহাপাত্র যখন তার দিকে তাকিয়ে হাসে, তখন তার সেই অসাধারণ চোখের দৃষ্টি দেখে অপূর্বর মনে হয় সে-ই বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক। তার পূর্বের সন্দেহ এবং এই মুহূর্তের উপলব্ধি মিলে সে নিশ্চিত হয়।

১৯. “তোমার বাবুরা এসব কি ভালোবাসে?” – বক্তা কে? ‘এসব’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: উক্তিটির বক্তা রামদাসের স্ত্রী। ‘এসব’ বলতে বাঙালি রান্না অর্থাৎ মাছের ঝোল ও ভাতকে বোঝানো হয়েছে। যেহেতু অপূর্ব একজন বাঙালি, তাই রামদাসের মারাঠি স্ত্রী তার জন্য বাঙালি খাবার রান্না করার বিষয়ে অপূর্বকে এই প্রশ্নটি করেছিলেন।

২০. “পথের দাবী”-কে সবাই তার ঘরবাড়ি ছেড়ে পথে এসে দাঁড়াতে বলে কেন?

উত্তর: “পথের দাবী” অর্থাৎ দেশের মুক্তির সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করার জন্য দেশের মানুষকে তাদের ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও ঘরবাড়ির মায়া ত্যাগ করে বেরিয়ে আসতে বলা হয়েছে। কারণ, দেশের পরাধীনতার যন্ত্রণা দূর করতে হলে ব্যক্তিগত স্বার্থত্যাগ করে সমষ্টির জন্য পথে নামা প্রয়োজন।

২১. “তাহার পরিচ্ছদের বাহার” – পরিচ্ছদের বাহারের বর্ণনা দাও।

উত্তর: গিরীশ মহাপাত্রের পরিচ্ছদের বাহার ছিল চোখে পড়ার মতো। তার মাথায় ছিল রঙিন টুপি, পরনে জাপানি সিল্কের শার্ট ও খাকি সার্ট, পায়ে সবুজ মোজা ও পাম্প শু, এবং হাতে হরিণের শিংয়ের হাতল দেওয়া ছড়ি। তার এই শৌখিন পোশাক তার জীর্ণ স্বাস্থ্যের সঙ্গে একেবারেই বেমানান ছিল, যা এক ধরনের কৌতুক সৃষ্টি করেছিল।

২২. অপূর্ব এবং রামদাসের মধ্যে মূল পার্থক্য কী ছিল?

উত্তর: অপূর্ব ও রামদাসের মধ্যে মূল পার্থক্য ছিল তাদের মানসিকতায়। অপূর্ব দেশপ্রেমিক হলেও তার মধ্যে ভীরুতা ও দ্বিধা ছিল, সে ব্রিটিশ আইন ও ক্ষমতার প্রতি ভীত ছিল। অন্যদিকে, রামদাস ছিলেন স্থির, সহানুভূতিশীল এবং বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তিনি অপূর্বর মতো দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন না।

২৩. “এই লোকটিকে নিয়ে সমস্ত পোলিটিক্যাল সাসপেক্টদের একটা বড় রকম lezione দেবার ইচ্ছা ছিল” – বক্তা কে? তার ইচ্ছা পূরণ হয়নি কেন?

উত্তর: উক্তিটির বক্তা নিমাইবাবু। তার ইচ্ছা পূরণ হয়নি কারণ তিনি গিরীশ মহাপাত্রকে সব্যসাচী মল্লিক বলে প্রমাণ করতে পারেননি। গিরীশের নিখুঁত অভিনয় এবং তার কাছ থেকে সন্দেহজনক কিছু না পাওয়ায় নিমাইবাবুকে তাকে ছেড়ে দিতে হয়, ফলে রাজনৈতিক সন্দেহভাজনদের শিক্ষা দেওয়ার পরিকল্পনাও ব্যর্থ হয়।

২৪. “কিন্তু আশ্চর্য! সেই দুটি চোখের দৃষ্টি।” – চোখের দৃষ্টির কী বৈশিষ্ট্য ছিল?

উত্তর: চোখের দৃষ্টির বৈশিষ্ট্য ছিল তার গভীরতা ও স্থিরতা। সেই চোখের মধ্যে কোনো ভয়, লজ্জা বা জড়তা ছিল না। বরং ছিল এক ধরনের দুর্ভেয় রহস্য, যা তার করুণ বাহ্যিক রূপের আড়ালে এক শক্তিশালী ও বুদ্ধিদীপ্ত সত্তার আভাস দিচ্ছিল। এই দৃষ্টিই অপূর্বকে মুগ্ধ ও সন্দিহান করে তুলেছিল।

২৫. গিরীশ মহাপাত্রের চরিত্রটিকে ‘ট্র্যাজিক-কমিক’ (Tragic-Comic) বলা যায় কি?

উত্তর: হ্যাঁ, গিরীশ মহাপাত্রের চরিত্রে ট্র্যাজিক ও কমিক উপাদানের মিশ্রণ রয়েছে। তার অদ্ভুত পোশাক ও আচরণ কৌতুক বা হাসির উদ্রেক করে (কমিক)। অন্যদিকে, তার অসুস্থতার অভিনয় এবং দেশের জন্য তার আত্মত্যাগ এক ধরনের করুণা বা ট্র্যাজেডির অনুভূতি জাগায়। এই দুই বিপরীত রসের সমন্বয় চরিত্রটিকে আরও জটিল ও আকর্ষণীয় করে তুলেছে।


ঘ) রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৫ (১০টি)

১. ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশ অবলম্বনে গিরীশ মহাপাত্র বা সব্যসাচী মল্লিকের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:
ভূমিকা: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের সবচেয়ে উজ্জ্বল ও রহস্যময় চরিত্র হলো সব্যসাচী মল্লিক, যিনি পাঠ্যাংশে গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশে উপস্থিত। তার চরিত্রটি একাধারে বিপ্লবী, শিল্পী ও দার্শনিকের সমন্বয়।
১. অসাধারণ অভিনেতা ও ছদ্মবেশী: সব্যসাচীর সবচেয়ে বড় পরিচয় তার ছদ্মবেশ ধারণের ক্ষমতা। তিনি গিরীশ মহাপাত্রের চরিত্রে এমনভাবে অভিনয় করেছেন যে, নিমাইবাবুর মতো ধূর্ত পুলিশ অফিসারও তাকে চিনতে পারেনি। তার পোশাক, হাঁটাচলা, কথাবার্তা এবং অসুস্থতার নিখুঁত অভিনয় তাকে একজন জাত শিল্পীর পর্যায়ে উন্নীত করেছে।
২. বুদ্ধিদীপ্ত ও প্রত্যুৎপন্নমতি: পুলিশের জেরার মুখে তিনি একটুও বিচলিত না হয়ে সহজ ও নির্বিকারভাবে উত্তর দিয়েছেন। তার বুদ্ধিদীপ্ত চোখ তার ভেতরের জ্ঞান ও প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়। তার প্রতিটি কাজ ও কথা ছিল পরিকল্পিত।
৩. গভীর দেশপ্রেমিক ও আত্মত্যাগী: দেশের স্বাধীনতার জন্য তিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তার এই আত্মত্যাগ ও কষ্টস্বীকার তাকে এক মহৎ বিপ্লবীর আসনে বসিয়েছে। তার হাসির আড়ালে লুকিয়ে থাকা বেদনা ও চোখের গভীরতা তার দেশপ্রেমের তীব্রতাকে প্রকাশ করে।
৪. মানবিক ও সহানুভূতিশীল: তিনি অপূর্বের দেশপ্রেমকে সম্মান করেন এবং তার প্রতি এক ধরনের সহানুভূতি প্রকাশ করেন। তার চরিত্রের এই দিকটি তাকে নিছক একজন কঠোর বিপ্লবী থেকে এক মানবিক সত্তায় রূপান্তরিত করেছে।
উপসংহার: সব্যসাচী মল্লিক শুধু একজন বিপ্লবী নন, তিনি একটি আদর্শের প্রতীক। তার চরিত্র একদিকে যেমন ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে এক তীব্র প্রতিবাদ, তেমনই অন্যদিকে শিল্পীসত্তা ও মানবিকতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

২. “বাবুটির স্বাস্থ্য গেছে, কিন্তু শখ ষোল আনাই বজায় আছে।” – বাবুটি কে? তার স্বাস্থ্য ও শখের পরিচয় দাও। এই উক্তির মধ্যে দিয়ে বক্তার কী মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে?

উত্তর:
পরিচয়: এখানে ‘বাবুটি’ হলেন গিরীশ মহাপাত্রের ছদ্মবেশে থাকা বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক।
স্বাস্থ্য ও শখের পরিচয়:
স্বাস্থ্য: গিরীশ মহাপাত্রের স্বাস্থ্য ছিল অত্যন্ত রুগ্ন ও জীর্ণ। তার বয়স ত্রিশ-বত্রিশ হলেও তাকে দেখে আরও বয়স্ক মনে হচ্ছিল। তার শরীর ছিল ক্ষীণ এবং কাশির ধমকে তার সর্বাঙ্গ دولছিল। এই ভগ্ন স্বাস্থ্য তার ছদ্মবেশের একটি অংশ ছিল।
শখ: তার ভগ্ন স্বাস্থ্যের বিপরীতে তার শখ ছিল ষোল আনা। তিনি লেবুর তেল মেখে চুল আঁচড়েছিলেন, পরনে ছিল জাপানি সিল্কের রঙিন শার্ট, মখমলের পাড়ের চাদর এবং পায়ে সবুজ রঙের মোজা ও বার্নিশ করা জুতো। তার এই শৌখিন ও পারিপাট্যপূর্ণ পোশাক তার প্রবল শখের পরিচয় দেয়।
বক্তার মনোভাব: উক্তিটির বক্তা পুলিশ কর্তা নিমাইবাবু। এই উক্তির মধ্যে দিয়ে তার ব্যঙ্গ ও তাচ্ছিল্যের মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। তিনি গিরীশের এই অদ্ভুত বৈপরীত্য দেখে তাকে একজন অন্তঃসারশূন্য, শৌখিন কিন্তু অকর্মণ্য ব্যক্তি বলে মনে করেছেন। তার অভিজ্ঞ চোখ গিরীশের এই ছদ্মবেশের আড়ালে থাকা আসল মানুষটিকে ধরতে পারেনি, বরং তাকে নিয়ে কৌতুক করেছে।

৩. ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশ অবলম্বনে অপূর্ব চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:
ভূমিকা: ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশের অন্যতম প্রধান চরিত্র অপূর্ব একজন শিক্ষিত, ভদ্র, মধ্যবিত্ত বাঙালি যুবক, যার চরিত্রটি নানা দ্বন্দ্ব ও দ্বিধায় পূর্ণ।
১. দেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদাবোধ: অপূর্বর মধ্যে তীব্র দেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদাবোধ রয়েছে। সে ফিরিঙ্গি ছোকরাদের অন্যায় আচরণ সহ্য করতে না পেরে তার প্রতিবাদ করে, যা তার সাহসী সত্তার পরিচয় দেয়। সে স্বদেশী বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
২. ভীরুতা ও দ্বিধাগ্রস্ততা: দেশপ্রেম থাকা সত্ত্বেও অপূর্বর চরিত্রে ভীরুতা ও দ্বিধা স্পষ্ট। সে ব্রিটিশ পুলিশ ও আইন-কানুনের প্রতি ভীত। সে বিপ্লবের পথে সরাসরি যুক্ত হতে ভয় পায় এবং নিমাইবাবুর মতো সরকারি অফিসারকে তোষামোদ করে চলে।
৩. সহানুভূতি ও অনুশোচনা: অপূর্বর মধ্যে গভীর মানবিকতা ও সহানুভূতি রয়েছে। গিরীশ মহাপাত্রকে প্রথমে সন্দেহ করলেও পরে তার জন্য সে অনুতপ্ত হয়। তার এই অনুশোচনা এবং রামদাসের কাছে ক্ষমা চাওয়া তার সংবেদনশীল মনের পরিচয় দেয়।
৪. পরিবর্তনশীল চরিত্র: গল্পের শেষে সব্যসাচীকে চেনার পর অপূর্বর মধ্যে এক ধরনের মানসিক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। তার দ্বিধা কেটে যায় এবং সে বিপ্লবের পথের প্রতি আরও আকৃষ্ট হয়।
উপসংহার: অপূর্ব চরিত্রটি তৎকালীন পরাধীন ভারতের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজের প্রতিনিধি, যারা একদিকে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখে, আবার অন্যদিকে ব্রিটিশ শক্তির ভয়ে সংকুচিত থাকে।

৪. “আমি ভীরু, কিন্তু তাই বলে অবিচারের দণ্ডভোগ করার অপমান আমাকে কম বাজে না।” – বক্তা কে? তার ভীরুতা ও প্রতিবাদের স্বরূপ আলোচনা করো।

উত্তর:
বক্তা: উক্তিটির বক্তা ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশের অন্যতম কেন্দ্রীয় চরিত্র অপূর্ব।
ভীরুতার স্বরূপ: অপূর্ব চরিত্রগতভাবে ভীরু এবং সংঘাত এড়িয়ে চলতে চায়। সে ব্রিটিশ শাসনাধীন বর্মায় একজন সাধারণ কর্মচারী। তাই সে পুলিশ বা সরকারি அதிகாரীদের সঙ্গে কোনো ঝামেলায় জড়াতে চায় না। নিমাইবাবুর কাছে তার বিনয়ী আচরণ এবং রাজনৈতিক বিষয় থেকে দূরে থাকার চেষ্টা তার ভীরু মানসিকতার পরিচয় দেয়। সে স্বীকার করে যে, সে একজন ভীরু মানুষ।
প্রতিবাদের স্বরূপ: ভীরু হওয়া সত্ত্বেও অপূর্বর মধ্যে প্রবল আত্মমর্যাদাবোধ রয়েছে। যখন তার এই আত্মমর্যাদায় আঘাত লাগে, তখন সে প্রতিবাদ করতে দ্বিধা করে না। ট্রেনের কামরায় বিনা দোষে ফিরিঙ্গি ছোকরারা যখন তাকে লাথি মেরে নামিয়ে দেয়, তখন সে তার তীব্র প্রতিবাদ করে এবং স্টেশন মাস্টারের কাছে নালিশ জানায়। যদিও তার প্রতিবাদ ব্যর্থ হয়, কিন্তু এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সাহস তার আছে। তার প্রতিবাদ শারীরিক শক্তির আস্ফালন নয়, বরং নৈতিকতার জায়গা থেকে আসা এক আত্মমর্যাদাপূর্ণ প্রতিরোধ।

৫. ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে নিমাইবাবুর চরিত্রটি কীভাবে ফুটে উঠেছে, তা আলোচনা করো।

উত্তর:
ভূমিকা: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে নিমাইবাবু একটি গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্র। তিনি ব্রিটিশ পুলিশ বিভাগের একজন উচ্চপদস্থ বাঙালি কর্মচারী এবং তার চরিত্রের মধ্যে আনুগত্য ও মানবিকতার এক জটিল মিশ্রণ দেখা যায়।
১. অভিজ্ঞ ও ধূর্ত পুলিশ অফিসার: নিমাইবাবু একজন অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসার। তিনি সন্দেহভাজনদের জেরা করার কৌশল জানেন। গিরীশ মহাপাত্রকে তিনি নানা প্রশ্ন করে তার আসল পরিচয় জানার চেষ্টা করেন।
২. ব্রিটিশ সরকারের অনুগত: তিনি ব্রিটিশ সরকারের একনিষ্ঠ কর্মচারী। রাজদ্রোহ বা রাজনৈতিক কার্যকলাপকে তিনি ‘নোংরা’ বলে মনে করেন এবং বিপ্লবীদের দমন করা তার কর্তব্য বলে মনে করেন।
৩. স্নেহপ্রবণ ও মানবিক: পেশাগত কঠোরতার আড়ালে তার মধ্যে একটি স্নেহপ্রবণ মন রয়েছে। তিনি অপূর্বর বাবার বন্ধু হওয়ায় অপূর্বকে ছেলের মতো স্নেহ করেন। তিনি অপূর্বকে রাজনৈতিক ঝামেলা থেকে দূরে থাকার জন্য আন্তরিকভাবে পরামর্শ দেন।
৪. সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতা: এত অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নিমাইবাবু সব্যসাচী মল্লিকের নিখুঁত ছদ্মবেশ ধরতে ব্যর্থ হন। তিনি গিরীশের বাহ্যিক রূপ দেখেই তাকে বিচার করেন এবং তার ভেতরের বিপ্লবী সত্তাকে চিনতে পারেন না। এই ব্যর্থতা আসলে ব্রিটিশ পুলিশি ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতাকেই তুলে ধরে।
উপসংহার: নিমাইবাবু চরিত্রটি ঔপনিবেশিক শাসনে কর্মরত একজন বাঙালির প্রতিচ্ছবি, যিনি পেশাগত দায়িত্ব ও ব্যক্তিগত সম্পর্কের মধ্যে ভারসাম্য রক্ষার চেষ্টা করেন।

৬. “পথের দাবী”-কে সবাই তার ঘরবাড়ি ছেড়ে, তার আপনার জন, তার একান্ত আপনার জনকে ফেলে রেখে পথে এসে দাঁড়াতে বলে কেন? – এই উক্তির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:
ভূমিকা: অপূর্বের প্রতি রামদাসের এই উক্তিটি ‘পথের দাবী’ উপন্যাসের মূল ভাবাদর্শকে প্রকাশ করে। এটি শুধুমাত্র একটি বাক্য নয়, এটি বিপ্লবের এক উদাত্ত আহ্বান।
তাৎপর্য:
১. আত্মত্যাগের আহ্বান: ‘পথের দাবী’ হলো দেশের মুক্তির দাবি। এই মহান উদ্দেশ্য সাধন করতে হলে ব্যক্তিগত সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য ও পারিবারিক মায়া ত্যাগ করতে হয়। ‘ঘরবাড়ি’ ও ‘আপনার জন’ হলো ব্যক্তিগত জীবনের প্রতীক। দেশের বৃহত্তর স্বার্থে এই ব্যক্তিগত জীবনকে উৎসর্গ করার আহ্বানই এখানে জানানো হয়েছে।
২. সমষ্টির জন্য ত্যাগ: বিপ্লব কোনো ব্যক্তিগত কাজ নয়, এটি একটি সমষ্টিগত প্রয়াস। যখন দেশের কোটি কোটি মানুষ পরাধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ, তখন ব্যক্তিগত সুখ অনৈতিক। তাই আপনজনের মায়া কাটিয়ে দেশের সকল মানুষকে ‘আপনার জন’ হিসেবে গ্রহণ করে তাদের মুক্তির জন্য পথে নামতে বলা হয়েছে।
৩. বিপ্লবীর জীবনদর্শন: এই উক্তিটি সব্যসাচী মল্লিকের মতো বিপ্লবীদের জীবনদর্শনকে তুলে ধরে। তারা দেশের জন্য সমস্ত ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও স্বাচ্ছন্দ্য ত্যাগ করেছেন। রামদাস অপূর্বকে এই মহান ত্যাগের কথাই স্মরণ করিয়ে দিতে চেয়েছেন।
উপসংহার: এই উক্তির মাধ্যমে লেখক বোঝাতে চেয়েছেন যে, স্বাধীনতা সংগ্রাম এক কঠোর সাধনা, যার জন্য চরম আত্মত্যাগ অপরিহার্য।

৭. “কিন্তু ইহা যে কত বড়ো ভ্রম, তাহা কয়েকটা স্টেশন পরেই সে টের পাইয়াছিল।” – কার, কোন বিষয়ে ভ্রম হয়েছিল? সে কীভাবে তা টের পেয়েছিল?

উত্তর:
ভ্রমের পরিচয়: এখানে অপূর্বের ভ্রমের কথা বলা হয়েছে। পুলিশ স্টেশনে গিরীশ মহাপাত্রের করুণ অবস্থা ও বিনয়ী আচরণ দেখে অপূর্ব তাকে একজন নিরীহ, অসুস্থ ব্যক্তি বলে মনে করেছিল। তাকে বিপ্লবী সব্যসাচী বলে সন্দেহ করা যে তার ভুল হয়েছে, এটাই ছিল তার প্রাথমিক ধারণা বা ভ্রম।
ভ্রম ভাঙার বৃত্তান্ত:
এই ভ্রম তার ভেঙেছিল যখন সে পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে আসে। যাওয়ার আগে গিরীশ মহাপাত্র তার দিকে ফিরে তাকিয়ে মৃদু হেসেছিল। সেই হাসির সঙ্গে তার চোখের যে অসাধারণ, তীক্ষ্ণ ও বুদ্ধিদীপ্ত দৃষ্টির প্রকাশ ঘটেছিল, তাতেই অপূর্বর সমস্ত ধারণা পাল্টে যায়।
অপূর্ব বুঝতে পারে যে, ওই চোখের দৃষ্টি কোনো সাধারণ, ভীতু বা অসুস্থ মানুষের হতে পারে না। সে উপলব্ধি করে যে, গিরীশের করুণ চেহারাটা ছিল একটি নিখুঁত ছদ্মবেশ এবং ওই ব্যক্তিই আসলে দুর্ধর্ষ বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক। এভাবেই, কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই তার ভ্রম দূর হয় এবং সে কঠিন সত্যটিকে টের পায়।

৮. ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে অপূর্বের স্বদেশপ্রেমের পরিচয় কীভাবে ফুটে উঠেছে?

উত্তর:
ভূমিকা: ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশে অপূর্বের চরিত্রটি ভীরু ও দ্বিধাগ্রস্ত হলেও তার মধ্যে এক গভীর স্বদেশপ্রেম ও আত্মমর্যাদাবোধ সক্রিয় ছিল।
১. অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ: অপূর্বের স্বদেশপ্রেমের প্রথম প্রকাশ ঘটে যখন সে ট্রেনের কামরায় ফিরিঙ্গি ছোকরাদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে। একজন ভারতীয় হিসেবে সে এই অপমান মেনে নিতে পারেনি। তার এই প্রতিবাদ তার জাতীয়তাবোধ ও আত্মসম্মানের পরিচয় দেয়।
২. বিপ্লবীদের প্রতি শ্রদ্ধা: অপূর্ব বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিকের প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল। সে মনে করে, দেশের জন্য যারা আত্মত্যাগ করছে, তাদের সম্মান করা উচিত। সে নিজে বিপ্লবী না হলেও বিপ্লবের আদর্শকে সম্মান করে।
৩. আত্মগ্লানি ও অনুশোচনা: যখন সে গিরীশ মহাপাত্রকে সন্দেহ করে, তখন সে মনে মনে লজ্জিত হয়। সে ভাবে, নিজের দেশের লোককে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া বা সন্দেহ করা অত্যন্ত লজ্জার। এই আত্মগ্লানি তার স্বদেশপ্রেমেরই প্রতিফলন।
৪. মানসিক পরিবর্তন: গল্পের শেষে সব্যসাচীকে চেনার পর তার মধ্যে যে মানসিক আলোড়ন সৃষ্টি হয়, তা তার সুপ্ত স্বদেশপ্রেমকে আরও জাগ্রত করে। সে বিপ্লবের পথের মহত্ত্ব ও আত্মত্যাগের গভীরতা উপলব্ধি করে।
উপসংহার: এভাবেই, অপূর্বর দ্বিধাগ্রস্ত আচরণের আড়ালেও তার স্বদেশপ্রেমের পরিচয় সুস্পষ্টভাবে ফুটে উঠেছে।

৯. “এই লোকটিকে আপনি কোনো কথা জিজ্ঞেস না করেই ছেড়ে দিন।” – অপূর্ব কেন এই অনুরোধ করেছিল? এর উত্তরে শ্রোতা কী বলেছিলেন?

উত্তর:
অনুরোধের কারণ: গিরীশ মহাপাত্রের অত্যন্ত রুগ্ন ও করুণ চেহারা দেখে অপূর্বর মনে দয়া ও অনুকম্পার জন্ম হয়েছিল। সে ভেবেছিল, এই ব্যক্তি এতটাই অসুস্থ যে, সামান্য কাশির ধমকেই তার প্রাণ বেরিয়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছে। এমন একজন মৃত্যুপথযাত্রীকে পুলিশি জেরার মুখে ফেলাটা অমানবিক বলে তার মনে হয়েছিল। এই মানবিকতাবোধ থেকেই সে নিমাইবাবুকে অনুরোধ করেছিল, গিরীশকে কোনো প্রশ্ন না করেই ছেড়ে দিতে।
শ্রোতার উত্তর: এই অনুরোধের উত্তরে শ্রোতা, অর্থাৎ নিমাইবাবু, হেসে ফেলেছিলেন। তিনি অপূর্বকে আশ্বস্ত করে বলেন যে, তিনি গিরীশকে কোনো রকম শারীরিক কষ্ট দেবেন না। তিনি ব্যঙ্গ করে বলেন, “তোমার মতো বুদ্ধিমান লোককে সাক্ষী মেনে সেপাইয়ের সামনে মারধর করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।” এরপর তিনি অপূর্বকে গিরীশের তল্লাশি দেখার জন্য আমন্ত্রণ জানান। তার এই উত্তরে একদিকে যেমন অপূর্বকে আশ্বস্ত করার চেষ্টা ছিল, তেমনই অন্যদিকে তার অনুরোধকে হালকাভাবে নেওয়ার মনোভাবও প্রকাশ পেয়েছিল।

১০. ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশের শেষে অপূর্বর যে মানসিক রূপান্তর লক্ষ্য করা যায়, তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর:
ভূমিকা: ‘পথের দাবী’ পাঠ্যাংশের শেষে অপূর্বের চরিত্রে এক নাটকীয় মানসিক রূপান্তর ঘটে। গল্পের শুরুতে সে ছিল একজন দ্বিধাগ্রস্ত, ভীরু এবং আত্মকেন্দ্রিক যুবক, কিন্তু শেষে তার মধ্যে এক গভীর আত্ম-উপলব্ধি ও চেতনার উন্মেষ ঘটে।
রূপান্তরের প্রক্রিয়া:
১. প্রাথমিক দ্বিধা: প্রথমে অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। একদিকে তার অদ্ভুত চোখ দেখে তাকে বিপ্লবী বলে সন্দেহ হচ্ছিল, অন্যদিকে তার করুণ অবস্থা দেখে দয়া হচ্ছিল।
২. অনুশোচনা: রামদাসের কথায় সে নিজের ব্যবহারের জন্য অনুতপ্ত হয়। সে বুঝতে পারে, একজন দেশপ্রেমিকের প্রতি তার আচরণ সঠিক ছিল না। এই অনুশোচনা তার রূপান্তরের প্রথম ধাপ।
৩. সত্যের উপলব্ধি: পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় সব্যসাচীর চোখের দৃষ্টি এবং হাসিতে অপূর্ব কঠিন সত্যটি উপলব্ধি করে। সে নিশ্চিত হয় যে, গিরীশ মহাপাত্রই বিপ্লবী সব্যসাচী। এই মুহূর্তটি তার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।
৪. চূড়ান্ত রূপান্তর: সব্যসাচীর মহত্ত্ব, আত্মত্যাগ এবং বুদ্ধিমত্তার কাছে অপূর্ব নিজের ভীরুতা ও ক্ষুদ্রতাকে উপলব্ধি করে। তার মন শ্রদ্ধা, বিস্ময় ও এক ধরনের আধ্যাত্মিক চেতনায় পূর্ণ হয়ে ওঠে। সে বুঝতে পারে, ‘পথের দাবী’র আহ্বান কতটা মহান। এই উপলব্ধিই তার মানসিক রূপান্তর সম্পূর্ণ করে এবং তাকে একজন সংবেদনশীল ও সচেতন ব্যক্তিতে পরিণত করে।

Class 10 bengali পথের দাবী question answer

পথের দাবী শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় গল্পের প্রশ্ন উত্তর, MCQ, অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : Class 10 bengali পথের দাবী গল্পের প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top