অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান ( জয় গোস্বামী )
ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৫০টি)
১. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির কবি কে?
২. কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?
৩. কবি অস্ত্র কোথায় রাখতে বলেছেন?
৪. কবি কীসের বর্ম গায়ে পরেছেন?
৫. মাথায় কী গোঁজার কথা বলা হয়েছে?
৬. কবি কিসের সঙ্গে গান বাঁধতে বলেছেন?
৭. কবি কার মতো অস্ত্র ফেলতে বলেছেন?
৮. “রক্ত মুছি” – কী দিয়ে?
৯. ‘তোপ’ কী?
১০. কবি কতগুলো গান জানেন?
১১. “বর্ম খুলে দেখো” – বর্মের নীচে কবি কী দেখাতে চেয়েছেন?
১২. কবি কাকে অস্ত্র রাখতে বলেছেন?
১৩. “গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে” – ‘বর্ম’ কীসের প্রতীক?
১৪. গানের দুটি হাত কী করে?
১৫. কবি হাতে ও পায়ে কী পরতে বলেছেন?
১৬. কবিতায় কোন পাখির উল্লেখ আছে?
১৭. নদী-স্রোতে কী ভেসে যায়?
১৮. “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো” – এই পঙক্তিটি কবিতায় কতবার আছে?
১৯. ‘পাতার পোশাক’ কাব্যগ্রন্থটি কার লেখা?
২০. “গান দাঁড় করান দুই হাতে” – কে?
২১. “আমার শুধু একটা কোকিল” – কোকিল কী করবে?
২২. ‘খড়কুটো’ কিসের প্রতীক?
২৩. “বর্ম খুলে দেখো” – এই আহ্বানের মধ্যে কী প্রকাশ পেয়েছে?
২৪. কবি অস্ত্রকে কী করতে বলেছেন?
২৫. ‘ঋষি বালক’ কিসের প্রতীক?
২৬. “আমার শুধু একটা কোকিল” – ‘একটা’ শব্দটি কী বোঝায়?
২৭. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি কোন বিষয়ের বিরোধিতা করেছেন?
২৮. গানের দুটি হাত দিয়ে কবি কী করতে চান?
২৯. কবি গানের মাধ্যমে কী গড়ে তুলতে চান?
৩০. ‘হাজার হাতে-পা’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
৩১. “গায়ে… গানের বর্ম” – এই লাইনটিতে কোন অলঙ্কার ব্যবহৃত হয়েছে?
৩২. কবিতাটির মূল সুর কী?
৩৩. কবি কীভাবে অস্ত্রকে প্রত্যাখ্যান করেছেন?
৩৪. ময়ূরপালক কিসের প্রতীক?
৩৫. “গান তো জানি একটা দুটো” – এই উক্তিটিতে কী প্রকাশ পায়?
৩৬. কবি গান দিয়ে কী করতে চান না?
৩৭. কবি গানকে কার সঙ্গে যুক্ত করেছেন?
৩৮. ‘সুরের জাল’ কীসের প্রতীক?
৩৯. “আমার শুধু একটা কোকিল” – এখানে ‘আমার’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?
৪০. কবি কোন ঋতুর কথা বলেছেন?
৪১. ‘হাতে-পায়ে’ কী বাঁধা?
৪২. ‘আদর’ কোথায় লুকিয়ে আছে?
৪৩. ‘গান’ শব্দটি কবিতায় কতবার ব্যবহৃত হয়েছে?
৪৪. ‘অস্ত্র’ শব্দটি কবিতায় কতবার ব্যবহৃত হয়েছে?
৪৫. কবি শেষ পর্যন্ত কীসের উপর আস্থা রেখেছেন?
৪৬. “গান দাঁড় করান” – কোথায়?
৪৭. ‘গানের গায়ে’ কবি কী মোছার কথা বলেছেন?
৪৮. কবি গানকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
৪৯. ‘পাতার পোশাক’ কাব্যগ্রন্থের বিষয়বস্তু কী?
৫০. “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” – এই শিরোনামটি কী ধরনের?
খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (SAQ) – মান ১ (৪০টি)
১. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির উৎস কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
উত্তর: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির উৎস কাব্যগ্রন্থের নাম ‘পাতার পোশাক’।
২. কবি অস্ত্র কোথায় রাখতে বলেছেন?
উত্তর: কবি অস্ত্র পায়ে রাখতে বলেছেন।
৩. কবি কীসের বর্ম গায়ে পরেছেন?
উত্তর: কবি গানের বর্ম গায়ে পরেছেন।
৪. কবি মাথায় কী গোঁজার কথা বলেছেন?
উত্তর: কবি মাথায় ময়ূরপালক গোঁজার কথা বলেছেন।
৫. কবি কতগুলো গান জানেন?
উত্তর: কবি একটা-দুটো গান জানেন।
৬. গানের দুটি হাত কী করে?
উত্তর: গানের দুটি হাত বুলেট তাড়ায়।
৭. কবি কার মতো অস্ত্র ফেলতে বলেছেন?
উত্তর: কবি ঋষি বালকের মতো অস্ত্র ফেলতে বলেছেন।
৮. কী দিয়ে রক্ত মোছার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: গানের গা দিয়ে রক্ত মোছার কথা বলা হয়েছে।
৯. ‘তোপ’ কী?
উত্তর: ‘তোপ’ হলো একটি আগ্নেয়াস্ত্র বা কামান।
১০. কবি হাতে-পায়ে কী পরতে চান?
উত্তর: কবি হাতে-পায়ে সুরের জাল পরতে চান।
১১. কবিতায় উল্লিখিত পাখিটির নাম কী?
উত্তর: কবিতায় উল্লিখিত পাখিটির নাম কোকিল।
১২. নদী-স্রোতে কী ভেসে যায়?
উত্তর: নদী-স্রোতে খড়কুটো ভেসে যায়।
১৩. গানের বর্মের নীচে কী আছে?
উত্তর: গানের বর্মের নীচে আদর লুকিয়ে আছে।
১৪. ‘ঋষি বালক’ কিসের প্রতীক?
উত্তর: ‘ঋষি বালক’ অহিংসা, সারল্য ও পবিত্রতার প্রতীক।
১৫. কবি গানকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?
উত্তর: কবি গানকে বর্মের সঙ্গে তুলনা করেছেন।
১৬. কোকিল কী করবে?
উত্তর: কোকিল গান গাইবে।
১৭. “হাজার হাতে-পা” – বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: “হাজার হাতে-পা” বলতে গানের ব্যাপক ও সর্বজনীন প্রভাবকে বোঝানো হয়েছে।
১৮. ‘বর্ম’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ‘বর্ম’ শব্দের অর্থ হলো দেহ রক্ষার জন্য ব্যবহৃত লোহার আবরণ বা কবচ।
১৯. “অস্ত্র রাখো, অস্ত্র ফ্যালো” – এই পঙক্তিতে কী প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: এই পঙক্তিতে হিংসা ও যুদ্ধের বিরুদ্ধে কবির তীব্র প্রতিবাদ ও প্রত্যাখ্যান প্রকাশ পেয়েছে।
২০. কবি গান দিয়ে কী বাঁধতে চান?
উত্তর: কবি গান দিয়ে বুলেট তাড়ানোর সুর বাঁধতে চান।
২১. “আমার শুধু একটা কোকিল” – ‘শুধু’ শব্দটি কীসের দ্যোতক?
উত্তর: ‘শুধু’ শব্দটি কবির সম্বল যে কত সামান্য, তার দ্যোতক।
২২. কবি কাকে বর্ম খুলে দেখাতে বলেছেন?
উত্তর: কবি অস্ত্রধারী শক্তিকে তার গানের বর্ম খুলে দেখাতে বলেছেন।
২৩. ‘খড়কুটো’ কিসের প্রতীক?
উত্তর: ‘খড়কুটো’ অসহায়, দুর্বল ও সাধারণ মানুষের প্রতীক।
২৪. কবিতাটির মূল বার্তা কী?
উত্তর: কবিতাটির মূল বার্তা হলো, অস্ত্রের ধ্বংসাত্মক শক্তির বিরুদ্ধে গানের সৃজনশীল ও মানবিক শক্তিই একমাত্র প্রতিরোধ।
২৫. ‘ময়ূরপালক’ মাথায় গোঁজা কীসের ইঙ্গিত দেয়?
উত্তর: ‘ময়ূরপালক’ মাথায় গোঁজা হিংসা ত্যাগ করে শান্তি ও শিল্পের পথ বেছে নেওয়ার ইঙ্গিত দেয়।
২৬. কবি নিজেকে কোন রূপে কল্পনা করেছেন?
উত্তর: কবি নিজেকে গানের বর্ম পরা, মাথায় ময়ূরপালক গোঁজা এক শিল্প-সৈনিক রূপে কল্পনা করেছেন।
২৭. কবি জয় গোস্বামীর একটি বিখ্যাত কাব্যের নাম লেখো।
উত্তর: কবি জয় গোস্বামীর একটি বিখ্যাত কাব্য হলো ‘পাগলী, তোমার সঙ্গে’।
২৮. কবিতায় কোন নদীর কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: কবিতায় কোনো নির্দিষ্ট নদীর নাম বলা হয়নি, শুধুমাত্র ‘নদী-স্রোত’-এর কথা বলা হয়েছে।
২৯. ‘বুলেট’ কীসের প্রতীক?
উত্তর: ‘বুলেট’ হলো আধুনিক মারণাস্ত্র ও হিংসার প্রতীক।
৩০. গানকে কবি কী হিসেবে ব্যবহার করতে চান?
উত্তর: গানকে কবি অস্ত্রের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিরোধ হিসেবে ব্যবহার করতে চান।
৩১. “গান দাঁড় করান দুই হাতে” – এর অর্থ কী?
উত্তর: এর অর্থ হলো, সমস্ত শক্তি দিয়ে গান বা শিল্পকে হিংসার বিরুদ্ধে এক প্রতিরোধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা।
৩২. ‘সুরের জাল’ কীসের প্রতীক?
উত্তর: ‘সুরের জাল’ হলো গানের সুরক্ষাদায়ী আবরণের প্রতীক।
৩৩. কবি কাকে গান শেখাতে চান?
উত্তর: কবি নদী, খড়কুটো অর্থাৎ প্রকৃতির সমস্ত অসহায় উপাদানকে গান শেখাতে চান।
৩৪. কবিতার শেষ পঙক্তিটি কী?
উত্তর: কবিতার শেষ পঙক্তিটি হলো “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো গানে”।
৩৫. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কোন ধরনের কবিতা?
উত্তর: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ একটি প্রতিবাদী ও মানবতাবাদী কবিতা।
৩৬. কবি কী দিয়ে বুলেট তাড়াতে চান?
উত্তর: কবি গানের দুটি হাত দিয়ে বুলেট তাড়াতে চান।
৩৭. “গানের গায়ে” কী মোছার কথা বলা হয়েছে?
উত্তর: “গানের গায়ে” রক্ত মোছার কথা বলা হয়েছে।
৩৮. কবি কিসের বদলে গানকে বেছে নিয়েছেন?
উত্তর: কবি অস্ত্রের বদলে গানকে বেছে নিয়েছেন।
৩৯. “আঁকড়ে ধরে সে খড়কুটো” – ‘সে’ কে?
উত্তর: ‘সে’ হলো অসহায় সাধারণ মানুষ বা কবি নিজে।
৪০. কবি কেন গানকে বর্ম বলেছেন?
উত্তর: কারণ কবি মনে করেন, গানই তাকে হিংসা ও ধ্বংসের আঘাত থেকে রক্ষা করবে।
গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ৩ (২৫টি)
১. “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে” – কবি কেন এই আহ্বান জানিয়েছেন?
উত্তর: কবি এই আহ্বান জানিয়েছেন কারণ তিনি মনে করেন অস্ত্র হলো হিংসা, ধ্বংস ও মৃত্যুর প্রতীক। মানবসভ্যতার অগ্রগতির জন্য অস্ত্রের কোনো প্রয়োজন নেই। তাই তিনি সমস্ত অস্ত্রধারী শক্তিকে তাদের অস্ত্র পায়ের কাছে রেখে অর্থাৎ হিংসার পথ ত্যাগ করে আত্মসমর্পণ করতে বলেছেন।
২. “গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে” – ‘গানের বর্ম’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
উত্তর: ‘গানের বর্ম’ একটি রূপক। বর্ম যেমন শরীরকে অস্ত্রের আঘাত থেকে রক্ষা করে, তেমনই গান বা শিল্প মানুষের মনকে হিংসা, ঘৃণা ও ধ্বংসের প্রভাব থেকে রক্ষা করে। কবি গানের এই সুরক্ষাদায়ী, মানবিক শক্তিকেই ‘বর্ম’ বলে অভিহিত করেছেন এবং তা গায়ে পরে হিংসার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন।
৩. “মাথায় গোঁজা ময়ূরপালক” – এই চিত্রকল্পটির তাৎপর্য কী?
উত্তর: মাথায় সাধারণত মুকুট বা শিরস্ত্রাণ পরা হয়, যা ক্ষমতা ও যুদ্ধের প্রতীক। কিন্তু কবি তার পরিবর্তে মাথায় ময়ূরপালক গোঁজার কথা বলেছেন। ময়ূরপালক হলো সৌন্দর্য, শিল্প ও শান্তির প্রতীক। এর মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, তিনি ক্ষমতার দম্ভ ও হিংসার পথ ত্যাগ করে শিল্প, সৌন্দর্য ও অহিংসার পথকে বরণ করে নিয়েছেন।
৪. “গান তো জানি একটা দুটো/আঁকড়ে ধরে সে খড়কুটো” – এই পঙক্তি দুটির অন্তর্নিহিত অর্থ কী?
উত্তর: এই পঙক্তি দুটির মাধ্যমে কবি নিজের বিনয় এবং গানের শক্তির প্রতি তাঁর অগাধ আস্থা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলছেন, তাঁর সম্বল হয়তো সামান্য—মাত্র একটা বা দুটো গান। কিন্তু বন্যায় ভেসে যাওয়া মানুষ যেমন প্রাণ বাঁচাতে খড়কুটো আঁকড়ে ধরে, তেমনই কবি এই সংকটময় পরিস্থিতিতে তাঁর সামান্য গানকেই বাঁচার একমাত্র অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছেন।
৫. “রক্ত মুছি গানের গায়ে” – ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ‘রক্ত’ হলো যুদ্ধ ও হিংসার ফলে সৃষ্ট ক্ষত ও যন্ত্রণার প্রতীক। কবি মনে করেন, এই ক্ষত একমাত্র গান বা শিল্পের মাধ্যমেই নিরাময় করা সম্ভব। ‘গানের গায়ে’ রক্ত মোছার অর্থ হলো, গানের মানবিক আবেদন ও ভালোবাসার শক্তি দিয়ে হিংসার ক্ষতকে মুছে ফেলা এবং সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি ফিরিয়ে আনা।
৬. ‘ঋষি বালক’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন? তার মতো অস্ত্র ফেলতে বলার কারণ কী?
উত্তর: ‘ঋষি বালক’ হলো সারল্য, পবিত্রতা এবং অহিংসার প্রতীক। ঋষিরা যেমন জাগতিক লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থাকেন, শিশুরাও তেমনই নিষ্পাপ হয়। কবি অস্ত্রধারী শক্তিকে সেই ঋষি বালকের মতো হতে বলেছেন, যে কোনো হিংসা বা বিদ্বেষ বোঝে না। তিনি চেয়েছেন, তারা যেন শিশুর সারল্য নিয়ে হিংসার পথ ত্যাগ করে।
৭. “গান দাঁড় করান দুই হাতে” – এই পঙক্তিটির তাৎপর্য কী?
উত্তর: এই পঙক্তিটির মাধ্যমে কবি গানকে এক সক্রিয় প্রতিরোধ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। ‘দাঁড় করান’ কথাটির অর্থ হলো, গানকে নিষ্ক্রিয় বিনোদনের বস্তু না ভেবে, তাকে অস্ত্রের বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করানো। ‘দুই হাতে’ কথাটি এই প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য সমস্ত শক্তি প্রয়োগের ইঙ্গিত দেয়।
৮. “আমার শুধু একটা কোকিল” – ‘একটা কোকিল’ কীসের প্রতীক?
উত্তর: ‘একটা কোকিল’ হলো কবির সীমিত কিন্তু শক্তিশালী শৈল্পিক সত্তার প্রতীক। কোকিল যেমন তার একটি মাত্র সুর দিয়ে বসন্তের আগমন ঘোষণা করে এবং প্রকৃতিতে আনন্দ ছড়িয়ে দেয়, তেমনই কবি তাঁর একটি মাত্র গান বা কবিতার মাধ্যমে সমাজে শান্তি ও ভালোবাসার বার্তা ছড়িয়ে দিতে চান। এই সামান্য শক্তিই তাঁর কাছে অনেক বড়।
৯. “বর্ম খুলে দেখো, আদরে রয়েছে ঢাকা” – এই আহ্বানের মধ্যে কবির কোন মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর: এই আহ্বানের মধ্যে কবির গভীর আত্মবিশ্বাস ও মানবিকতার প্রতি আস্থা প্রকাশ পেয়েছে। তিনি অস্ত্রধারী শক্তিকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বলছেন, তারা যেন তাঁর গানের বর্ম খুলে দেখে। তারা সেখানে কোনো হিংসা বা ঘৃণা পাবে না, পাবে শুধু ‘আদর’ বা ভালোবাসা। কবি বিশ্বাস করেন, ভালোবাসা ও মানবিকতাই হলো তাঁর আসল শক্তি।
১০. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় গান কীভাবে অস্ত্রের বিকল্প হয়ে উঠেছে?
উত্তর: কবিতায় অস্ত্র যেখানে ধ্বংস, হিংসা ও মৃত্যুর প্রতীক, গান সেখানে সৃষ্টি, ভালোবাসা ও জীবনের প্রতীক। অস্ত্র মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে, আর গান মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে। কবি গানের বর্ম পরে, গানের হাত দিয়ে বুলেট তাড়িয়ে এবং গানের গায়ে রক্ত মুছে দেখিয়েছেন যে, গানই পারে অস্ত্রের ধ্বংসাত্মক শক্তিকে প্রতিহত করতে। এভাবেই গান অস্ত্রের এক শক্তিশালী অহিংস বিকল্প হয়ে উঠেছে।
১১. কবি হাতে ও পায়ে সুরের জাল পরতে চান কেন?
উত্তর: ‘সুরের জাল’ হলো সুরক্ষার প্রতীক। কবি তাঁর হাত, যা দিয়ে তিনি কাজ করেন, এবং পা, যা দিয়ে তিনি চলেন—এই দুইকেই গানের সুর দিয়ে সুরক্ষিত রাখতে চান। এর অর্থ হলো, তিনি তাঁর সমস্ত কর্ম ও গতিকে শিল্পের ভালোবাসা ও সৌন্দর্য দিয়ে আবৃত করতে চান, যাতে কোনো হিংসা বা অশুভ শক্তি তাঁকে স্পর্শ করতে না পারে।
১২. “নদী-স্রোতে ভেসে যায় খড়কুটো” – এই চিত্রকল্পটি কেন ব্যবহৃত হয়েছে?
উত্তর: এই চিত্রকল্পটি ব্যবহার করে কবি অসহায়, সাধারণ মানুষের অবস্থাকে তুলে ধরেছেন। ‘খড়কুটো’ যেমন নদীর স্রোতে অসহায়ভাবে ভেসে যায়, তার নিজের কোনো নিয়ন্ত্রণ থাকে না, তেমনই যুদ্ধ ও হিংসার স্রোতে সাধারণ মানুষ অসহায়ভাবে ভেসে যায়, তাদের জীবন বিপন্ন হয়। কবি সেই অসহায় মানুষদেরও গানের শক্তি জোগাতে চান।
১৩. “গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে” – ‘সহস্র উপায়’ বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
উত্তর: ‘সহস্র উপায়’ বলতে কবি গানের বহুমুখী ও সর্বব্যাপী প্রভাবকে বুঝিয়েছেন। তিনি বলতে চেয়েছেন, গান শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বাঁধা যায় না। ভালোবাসা, প্রতিবাদ, শান্তি, সম্প্রীতি—নানাভাবে, নানা সুরে গান তৈরি করা যায়। এই সমস্ত উপায়েই গান হিংসার বিরুদ্ধে এক শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।
১৪. ‘পাতার পোশাক’ কাব্যগ্রন্থের নামকরণের তাৎপর্য কী?
উত্তর: ‘পাতার পোশাক’ হলো প্রকৃতি ও সারল্যের প্রতীক। আদিম মানুষ যেমন পাতার পোশাক পরে প্রকৃতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে থাকত, তেমনই কবি এই কাব্যগ্রন্থে হিংসা ও কৃত্রিমতা ত্যাগ করে এক সহজ, সুন্দর ও প্রকৃতি-ঘনিষ্ঠ জীবনের কথা বলতে চেয়েছেন। ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটিও এই ভাবধারারই অংশ।
১৫. এই কবিতায় কবি নিজেকে কী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন?
উত্তর: এই কবিতায় কবি নিজেকে শুধুমাত্র একজন শিল্পী হিসেবে নয়, বরং একজন ‘শিল্প-সৈনিক’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন। তিনি অস্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর শিল্প অর্থাৎ গানকে এক শক্তিশালী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তিনি দেখিয়েছেন যে, একজন কবি বা শিল্পীও সমাজের অন্যায়ের বিরুদ্ধে তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে প্রতিবাদ করতে পারেন।
১৬. “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো গানে” – শেষ পঙক্তিটির তাৎপর্য বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: এটি কবিতার চূড়ান্ত আহ্বান ও সমাধান। কবি এখানে শুধু অস্ত্র ফেলতে বলছেন না, তিনি অস্ত্রকে গানের মধ্যে রাখার কথা বলছেন। এর অর্থ হলো, অস্ত্রের ধ্বংসাত্মক শক্তিকে গানের সৃজনশীল ও মানবিক শক্তি দিয়ে রূপান্তরিত করা। তিনি চান, অস্ত্রের ঝংকার নয়, গানের সুরই যেন পৃথিবীকে শাসন করে। এটি হিংসার উপর শিল্পের চূড়ান্ত বিজয়ের ঘোষণা।
১৭. ‘বুলেট’ ও ‘তোপ’-এর মতো আধুনিক মারণাস্ত্রের উল্লেখের কারণ কী?
উত্তর: কবি ‘বুলেট’ ও ‘তোপ’-এর মতো আধুনিক মারণাস্ত্রের উল্লেখ করে বুঝিয়েছেন যে, তাঁর প্রতিবাদ কোনো প্রাচীন কালের হিংসার বিরুদ্ধে নয়, বরং বর্তমান যুগের ভয়াবহ যুদ্ধ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। এই আধুনিক অস্ত্রের ধ্বংসাত্মক শক্তির বিপরীতে তিনি গানের শাশ্বত শক্তিকে স্থাপন করেছেন, যা কবিতাটিকে সমകാലിക ও প্রাসঙ্গিক করে তুলেছে।
১৮. কবিতায় ‘হাতে-পা’ ও ‘হাজার হাতে-পা’—এই দুটি শব্দগুচ্ছের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ‘হাতে-পা’ বলতে কবির নিজের বা একজন ব্যক্তির অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে বোঝানো হয়েছে, যা তিনি সুরের জাল দিয়ে বাঁধতে চান। অন্যদিকে, ‘হাজার হাতে-পা’ বলতে গানের ব্যাপক, সর্বজনীন প্রভাবকে বোঝানো হয়েছে। একটি কোকিলের গান যেমন বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে বহু মানুষকে প্রভাবিত করে, তেমনই গানের শক্তিও বহুমাত্রিক ও সর্বব্যাপী।
১৯. কবিতাটির গঠনশৈলী সম্পর্কে আলোচনা করো।
উত্তর: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি একটি ঘোষণামূলক বা আবেদনমূলক ভঙ্গিতে লেখা। এর ভাষা সহজ কিন্তু ব্যঞ্জনাধর্মী। কবি বারবার “অস্ত্র ফ্যালো”, “গান বাঁধো” ইত্যাদি ক্রিয়াপদ ব্যবহার করে এক ধরনের সক্রিয়তার আহ্বান জানিয়েছেন। ছোট ছোট পঙক্তি এবং পুনরাবৃত্তির ব্যবহার কবিতার বক্তব্যকে তীব্র ও জোরালো করে তুলেছে।
২০. “গান হবে…ঋষি বালক” – এই লাইনটির অর্থ কী?
উত্তর: এই লাইনটির অর্থ হলো, গান বা শিল্প হবে ঋষি বালকের মতো পবিত্র, সরল এবং অহিংস। গান কোনো হিংসা বা বিদ্বেষ ছড়াবে না, বরং শিশুর সারল্য এবং ঋষির পবিত্রতা নিয়ে মানুষের মনকে জয় করবে। শিল্পের এই অহিংস ও নির্মল রূপকেই কবি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন।
২১. “তোমায় নিয়ে বেড়াবে গান” – গান কোথায় বেড়াবে?
উত্তর: গান নদীতে এবং দেশ-গাঁয়ে বেড়াবে। এর মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, গানের আবেদন কোনো নির্দিষ্ট স্থানে সীমাবদ্ধ নয়। এটি নদীর স্রোতের মতো 자연적으로 এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায়, শহর থেকে গ্রামে, সমস্ত মানুষের কাছে পৌঁছে যাবে এবং শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেবে।
২২. কবি কীভাবে গানের সুরক্ষাদায়ী ক্ষমতার কথা বলেছেন?
উত্তর: কবি তিনটি উপায়ে গানের সুরক্ষাদায়ী ক্ষমতার কথা বলেছেন। প্রথমত, তিনি গানের ‘বর্ম’ পরেছেন, যা তাঁকে অস্ত্রের আঘাত থেকে রক্ষা করে। দ্বিতীয়ত, গানের ‘দুটি হাত’ বুলেট তাড়িয়ে দেয়। তৃতীয়ত, তিনি হাতে-পায়ে ‘সুরের জাল’ পরতে চান, যা তাঁকে অশুভ শক্তি থেকে সুরক্ষিত রাখবে।
২৩. “অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান” কবিতায় কোন কোন প্রাকৃতিক উপাদানের উল্লেখ আছে?
উত্তর: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কোকিল, ময়ূরপালক, নদী এবং খড়কুটোর মতো প্রাকৃতিক উপাদানের উল্লেখ আছে। কবি এই প্রাকৃতিক উপাদানগুলিকে শান্তি, সৌন্দর্য এবং সারল্যের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করে অস্ত্রের কৃত্রিম ও ধ্বংসাত্মক রূপের সঙ্গে বৈপরীত্য তৈরি করেছেন।
২৪. কবিতাটি কীভাবে একটি বিশ্বজনীন আবেদন লাভ করেছে?
উত্তর: কবিতাটি কোনো নির্দিষ্ট দেশ, কাল বা জাতির কথা বলে না। এটি যুদ্ধ, হিংসা ও অস্ত্রের বিরুদ্ধে কথা বলে, যা একটি বিশ্বজনীন সমস্যা। গান বা শিল্পের মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে আহ্বান কবি জানিয়েছেন, তা পৃথিবীর সমস্ত মানুষের কাছেই প্রাসঙ্গিক। এই কারণেই কবিতাটি এক বিশ্বজনীন আবেদন লাভ করেছে।
২৫. ‘অস্ত্র’ এবং ‘গান’-এর মধ্যে কবি যে বৈপরীত্য তৈরি করেছেন, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর: কবি ‘অস্ত্র’ এবং ‘গান’-কে দুটি সম্পূর্ণ বিপরীত শক্তি হিসেবে দেখিয়েছেন। অস্ত্র হলো ধ্বংস, মৃত্যু, হিংসা ও বিভেদের প্রতীক। অন্যদিকে, গান হলো সৃষ্টি, জীবন, ভালোবাসা ও ঐক্যের প্রতীক। অস্ত্র রক্ত ঝরায়, আর গান সেই রক্ত মুছে দেয়। অস্ত্র বুলেট ছোড়ে, আর গান সেই বুলেট তাড়িয়ে দেয়। এভাবেই কবি এই দুইয়ের মধ্যে বৈপরীত্য তৈরি করে দেখিয়েছেন যে, ধ্বংসের চেয়ে সৃষ্টির শক্তি অনেক বড়।
ঘ) রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৫ (১০টি)
১. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর:
ভূমিকা: যেকোনো শিল্পকর্মের নামকরণ তার বিষয়বস্তু ও মূল সুরের ইঙ্গিত দেয়। জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির নামকরণও এই বিচারে অত্যন্ত ব্যঞ্জনাধর্মী ও সার্থক।
কবিতার বিষয়বস্তু: কবিতাটির মূল বিষয় হলো যুদ্ধ, হিংসা ও অস্ত্রের ধ্বংসাত্মক শক্তির বিরুদ্ধে গানের সৃজনশীল, মানবিক ও অহিংস শক্তির প্রতিরোধ। কবি শুরুতেই “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে” বলে হিংসার পথকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। এরপর তিনি দেখিয়েছেন কীভাবে গান অস্ত্রের বিকল্প হতে পারে। গান ‘বর্ম’ হয়ে সুরক্ষা দেয়, তার ‘হাত’ বুলেট তাড়ায়, তার ‘গায়ে’ রক্ত মুছে ক্ষত নিরাময় করা যায়।
নামকরণের প্রাসঙ্গিকতা: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’—এই শিরোনামটিই কবিতার মূল দ্বন্দ্ব ও সমাধানকে এক বাক্যে প্রকাশ করেছে। ‘অস্ত্র’ হলো প্রতিপক্ষ, আর ‘গান’ হলো প্রতিবাদের হাতিয়ার। কবি এখানে অস্ত্রের বিরুদ্ধে অস্ত্র দিয়ে নয়, গান দিয়ে লড়াই করার কথা বলেছেন। কবিতার প্রতিটি পঙক্তি এই শিরোনামের ভাবটিকে সার্থক করে তুলেছে। শেষ পর্যন্ত কবি অস্ত্রকে গানের মধ্যে রাখার কথা বলে হিংসার উপর শিল্পের চূড়ান্ত বিজয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
উপসংহার: সুতরাং, যেহেতু কবিতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত অস্ত্রের ধ্বংসলীলার বিরুদ্ধে গানের মানবিক প্রতিরোধই প্রধান বিষয়, তাই ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ নামকরণটি সর্বাংশে সার্থক।
২. “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে” – কবি কাদের অস্ত্র ফেলতে বলেছেন? এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে কবির কোন মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে? অস্ত্রের বিরুদ্ধে কবি কীভাবে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেয়েছেন?
উত্তর:
ভূমিকা: জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার এই পঙক্তিটি এক বলিষ্ঠ অহিংস প্রতিবাদের ঘোষণা।
আহ্বানের লক্ষ্য: কবি এখানে সমস্ত যুদ্ধবাজ, ক্ষমতালোভী, হিংস্র শক্তিকে অস্ত্র ফেলতে বলেছেন। যারা অস্ত্রের জোরে পৃথিবীকে শাসন করতে চায়, মানুষের উপর অত্যাচার চালায়, তাদের প্রতিই কবির এই আহ্বান।
কবির মনোভাব: এই আহ্বানের মধ্য দিয়ে কবির যুদ্ধবিরোধী ও মানবতাবাদী মনোভাব তীব্রভাবে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি হিংসা ও ধ্বংসের পথকে ঘৃণা করেন এবং শান্তি ও ভালোবাসার পথকে বরণ করতে চান। ‘পায়ে’ অস্ত্র রাখতে বলার মাধ্যমে তিনি অস্ত্রধারী শক্তির প্রতি এক ধরনের তিরস্কার ও তাদের আত্মসমর্পণ করার দাবি জানিয়েছেন।
প্রতিরোধের উপায়: অস্ত্রের বিরুদ্ধে কবি এক অভিনব ও অহিংস প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেয়েছেন। সেই প্রতিরোধের প্রধান হাতিয়ার হলো ‘গান’ বা শিল্প।
১. আত্মরক্ষা: তিনি গানের বর্ম পরে নিজেকে সুরক্ষিত রেখেছেন।
২. সক্রিয় প্রতিরোধ: তিনি গানের হাত দিয়ে বুলেট তাড়ানোর কথা বলেছেন।
৩. নিরাময়: তিনি গানের গায়ে রক্ত মুছে হিংসার ক্ষত সারিয়ে তুলতে চেয়েছেন।
৪. অহিংসার আদর্শ: তিনি ঋষি বালকের মতো পবিত্র ও অহিংস উপায়ে এই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেয়েছেন।
উপসংহার: এভাবেই কবি অস্ত্রের পাশবিক শক্তির বিরুদ্ধে শিল্পের মানবিক ও সৃজনশীল শক্তিকে দাঁড় করিয়ে এক শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চেয়েছেন।
৩. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় গানের যে বহুবিধ ভূমিকার কথা বলা হয়েছে, তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
উত্তর:
ভূমিকা: জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় ‘গান’ শুধুমাত্র একটি বিনোদনের মাধ্যম নয়, এটি এক সক্রিয়, শক্তিশালী ও মানবিক সত্তা, যা হিংসার বিরুদ্ধে নানা ভূমিকা পালন করে।
গানের ভূমিকা:
১. সুরক্ষার বর্ম: কবি গানের বর্ম গায়ে পরেছেন। অর্থাৎ, গান তাঁকে হিংসা, ঘৃণা ও ধ্বংসের মানসিক আঘাত থেকে রক্ষা করে। এটি এক আত্মরক্ষার কবচ।
২. প্রতিবাদের হাতিয়ার: গানের দুটি হাত বুলেট তাড়ায়। এর মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন, গান বা শিল্প পারে হিংসার গতিকে প্রতিহত করতে। এটি এক সক্রিয় অহিংস প্রতিরোধ।
৩. নিরাময়ের ঔষধ: কবি গানের গায়ে রক্ত মোছার কথা বলেছেন। অর্থাৎ, গান পারে যুদ্ধের ক্ষত, যন্ত্রণা ও দুঃখকে সারিয়ে তুলতে। এটি তার নিরাময়কারী ভূমিকা।
৪. ঐক্যের প্রতীক: কবি হাতে-পায়ে সুরের জাল পরার কথা বলেছেন। গান মানুষকে ভালোবাসার বন্ধনে আবদ্ধ করে, ঐক্যবদ্ধ করে।
৫. শান্তির দূত: কোকিলের মতো গান গেয়ে, নদীর স্রোতের মতো ভেসে গিয়ে গান দেশ-গাঁয়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়।
উপসংহার: এভাবেই কবি গানকে এক বহু মাত্রিক রূপে চিত্রিত করেছেন, যা একই সঙ্গে রক্ষাকর্তা, প্রতিবাদী, আরোগ্যকারী এবং শান্তির দূত।
৪. “আমার শুধু একটা কোকিল/গান বাঁধবে সহস্র উপায়ে” – ‘একটা কোকিল’ এবং ‘সহস্র উপায়’ – এই দুটি বিপরীতধর্মী ধারণার মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
উত্তর:
ভূমিকা: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার এই পঙক্তি দুটিতে কবি তাঁর শৈল্পিক শক্তির সীমাবদ্ধতা ও তার অসীম সম্ভাবনার কথা বলেছেন, যা এক চমৎকার বৈপরীত্য তৈরি করেছে।
‘একটা কোকিল’: ‘একটা কোকিল’ বলতে কবি তাঁর নিজের সীমিত শক্তি বা সম্বলকে বুঝিয়েছেন। তিনি বিনয়ের সঙ্গে স্বীকার করেছেন যে, অস্ত্রের বিশাল ধ্বংসাত্মক শক্তির বিরুদ্ধে তাঁর সম্বল হয়তো খুবই সামান্য—একটি কোকিলের গানের মতোই ক্ষুদ্র। এটি কবির অসহায়ত্ব বা দুর্বলতা নয়, বরং তাঁর বিনয় ও বাস্তববোধের পরিচায়ক।
‘সহস্র উপায়ে’: কিন্তু এই সীমিত শক্তির মধ্যেই লুকিয়ে আছে অসীম সম্ভাবনা। ‘সহস্র উপায়ে’ কথাটির মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, তাঁর এই একটি গান বা কবিতার প্রভাব বহুমাত্রিক ও সর্বব্যাপী হতে পারে। এটি—
১. বুলেট তাড়াতে পারে।
২. রক্ত মুছতে পারে।
৩. মানুষকে ঐক্যের বন্ধনে বাঁধতে পারে।
৪. নদীর স্রোতের মতো দেশ-গাঁয়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিতে পারে।
বৈপরীত্যের তাৎপর্য: এই বৈপরীত্যের মাধ্যমে কবি এক গভীর সত্যকে প্রতিষ্ঠা করেছেন। তা হলো, শিল্পের শক্তি তার আকারে নয়, তার প্রভাবে। একটি মাত্র ভালো কবিতা বা গানও পারে হাজার হাজার মানুষের মনে প্রেরণা জোগাতে এবং সমাজে এক বিরাট পরিবর্তন আনতে। এই বিশ্বাসই কবিকে অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান গাইতে অনুপ্রাণিত করেছে।
৫. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি যে অহিংস মানবিক চেতনার প্রকাশ ঘটিয়েছেন, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:
ভূমিকা: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি জয় গোস্বামীর গভীর অহিংস ও মানবতাবাদী চেতনার এক উজ্জ্বল প্রকাশ। কবি এখানে হিংসার উত্তরে হিংসা নয়, বরং ভালোবাসা ও শিল্প দিয়ে হিংসাকে জয় করার কথা বলেছেন।
অহিংস চেতনার প্রকাশ:
১. অস্ত্রের প্রত্যাখ্যান: কবিতার শুরুতেই “অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে” বলার মাধ্যমে কবি হিংসার পথকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন।
২. গানের আশ্রয় গ্রহণ: তিনি অস্ত্রের পরিবর্তে গানকে তাঁর হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়েছেন। গানের বর্ম পরা, গানের হাত দিয়ে বুলেট তাড়ানো—এই সমস্ত চিত্রকল্প তাঁর অহিংস প্রতিরোধের পরিচয় দেয়।
৩. ঋষি বালকের আদর্শ: কবি অস্ত্রধারীদের ‘ঋষি বালক’-এর মতো হতে বলেছেন, যা অহিংসা ও পবিত্রতার প্রতীক। তিনি হিংস্রতাকে সারল্য দিয়ে জয় করতে চান।
মানবতাবাদী চেতনার প্রকাশ:
১. ক্ষত নিরাময়ের প্রচেষ্টা: “রক্ত মুছি গানের গায়ে” – এই উক্তির মাধ্যমে যুদ্ধের দ্বারা সৃষ্ট মানুষের ক্ষত ও যন্ত্রণা নিরাময়ের প্রতি তাঁর গভীর মানবিক দায়বদ্ধতা প্রকাশ পেয়েছে।
২. ভালোবাসার প্রতি আস্থা: “বর্ম খুলে দেখো, আদরে রয়েছে ঢাকা” – এই কথা প্রমাণ করে যে, কবি বিশ্বাস করেন, মানব হৃদয়ের মূল ভিত্তি হলো ভালোবাসা বা ‘আদর’, হিংসা নয়।
৩. সর্বজনীন আবেদন: তিনি শুধু নিজের কথা বলেননি, নদী-স্রোতে ভেসে যাওয়া খড়কুটোর মতো অসহায় সাধারণ মানুষের কথাও ভেবেছেন। তাঁর আবেদন সমস্ত মানবজাতির প্রতি।
উপসংহার: এভাবেই, কবিতাটি এক গভীর অহিংস ও মানবতাবাদী দর্শনের উপর দাঁড়িয়ে আছে, যা বর্তমান হিংসাদীর্ণ পৃথিবীতে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক।
৬. ‘পাতার পোশাক’ কাব্যগ্রন্থের নামকরণের সঙ্গে ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার যোগসূত্রটি আলোচনা করো।
উত্তর:
ভূমিকা: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি জয় গোস্বামীর ‘পাতার পোশাক’ কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত। এই কাব্যগ্রন্থের নামকরণ এবং কবিতার মূল ভাবের মধ্যে এক গভীর যোগসূত্র রয়েছে।
‘পাতার পোশাক’-এর তাৎপর্য: ‘পাতার পোশাক’ হলো সারল্য, অকৃত্রিমতা এবং প্রকৃতির সঙ্গে একাত্মতার প্রতীক। আদিম মানুষ যেমন পাতার পোশাক পরে প্রকৃতির অংশ হয়ে থাকত, তেমনই কবি আধুনিক সভ্যতার কৃত্রিমতা, হিংসা ও যান্ত্রিকতা থেকে মুক্তি চেয়ে এক সহজ, সুন্দর ও প্রকৃতি-ঘনিষ্ঠ জীবনে ফিরে যেতে চান। পাতার পোশাক হলো বর্মের বিপরীত—এটি সুরক্ষার জন্য নয়, বরং উন্মুক্ত ও অকৃত্রিম থাকার প্রতীক।
কবিতার সঙ্গে যোগসূত্র:
১. কৃত্রিমতার বিরোধিতা: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি ‘অস্ত্র’ নামক কৃত্রিম ও ধ্বংসাত্মক বস্তুর বিরোধিতা করেছেন। এটি ‘পাতার পোশাক’ কাব্যগ্রন্থের মূল সুরের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ।
২. প্রকৃতির আশ্রয়: কবিতায় কবি প্রকৃতির নানা উপাদানের (কোকিল, ময়ূর, নদী) আশ্রয় নিয়েছেন। তিনি মাথায় ক্ষমতার মুকুটের বদলে প্রকৃতির ‘ময়ূরপালক’ পরেছেন। এটি ‘পাতার পোশাক’-এর ভাবনারই প্রতিফলন।
৩. সারল্যের জয়গান: কবি ‘ঋষি বালক’-এর মতো সরল ও অহিংস হতে বলেছেন। এই সারল্যের আদর্শই ‘পাতার পোশাক’ কাব্যগ্রন্থের মূল উপজীব্য।
উপসংহার: সুতরাং, ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটি ‘পাতার পোশাক’ কাব্যগ্রন্থের মূল দর্শন—অর্থাৎ হিংসা ও কৃত্রিমতা ত্যাগ করে প্রকৃতি ও সারল্যের পথে ফিরে যাওয়ার আদর্শকেই সার্থকভাবে বহন করেছে।
৭. “গান তো জানি একটা দুটো” – এই পঙক্তিটির আপাত অর্থ ও অন্তর্নিহিত অর্থ ব্যাখ্যা করো। এই উক্তির মাধ্যমে কবির কোন মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে?
উত্তর:
ভূমিকা: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতার এই পঙক্তিটি অত্যন্ত সরল হলেও এর মধ্যে এক গভীর ব্যঞ্জনা লুকিয়ে আছে।
আপাত অর্থ: পঙক্তিটির আপাত বা সরল অর্থ হলো, কবি খুব বেশি গান জানেন না, তাঁর জ্ঞানের ভাণ্ডার সীমিত, মাত্র একটি বা দুটি গানই তাঁর সম্বল।
অন্তর্নিহিত অর্থ: এর অন্তর্নিহিত অর্থ অনেক গভীর।
১. শিল্পের প্রতি আস্থা: কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, অস্ত্রের বিশাল আয়োজন ও ধ্বংসাত্মক শক্তির বিরুদ্ধে তাঁর সম্বল হয়তো খুবই নগণ্য। কিন্তু তিনি বিশ্বাস করেন, সেই সামান্য শৈল্পিক শক্তিই পারে হিংসাকে প্রতিহত করতে। একটি ভালো গান বা কবিতাই যথেষ্ট।
২. সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি: কবি এখানে নিজেকে একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে দেখিয়েছেন, যার হয়তো অনেক জ্ঞান বা ক্ষমতা নেই, কিন্তু ভালোবাসা ও সৃষ্টির সামান্য শক্তি আছে। তিনি সেই সামান্য শক্তি দিয়েই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে চান।
কবির মানসিকতা: এই উক্তির মাধ্যমে কবির দুটি প্রধান মানসিকতা প্রকাশ পেয়েছে—
১. বিনয়: তিনি নিজের জ্ঞান বা ক্ষমতা নিয়ে কোনো অহংকার করেননি, বরং অত্যন্ত বিনয়ের সঙ্গে নিজের সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন।
২. দৃঢ় আত্মবিশ্বাস: বিনয়ী হলেও তিনি তাঁর শিল্পের শক্তির প্রতি গভীরভাবে আস্থাশীল। তিনি জানেন, তাঁর এই ‘একটা দুটো’ গানই খড়কুটোর মতো অসহায় মানুষকে আঁকড়ে ধরে বাঁচার রসদ জোগাতে পারে।
৮. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় কবি অস্ত্র ও গানের যে তুলনামূলক চিত্র এঁকেছেন, তা নিজের ভাষায় লেখো।
উত্তর:
ভূমিকা: জয় গোস্বামীর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটির মূল ভিত্তি হলো অস্ত্র ও গানের মধ্যেকার এক তীব্র বৈপরীত্য। কবি এই দুটিকে দুটি ভিন্ন জগতের প্রতীক হিসেবে দেখিয়েছেন।
অস্ত্রের চিত্র:
কবিতায় অস্ত্র হলো এক ধ্বংসাত্মক, নেতিবাচক শক্তি।
১. হিংসার প্রতীক: ‘তোপ’, ‘বুলেট’ ইত্যাদি শব্দের মাধ্যমে কবি অস্ত্রের হিংস্র ও প্রাণঘাতী রূপকে তুলে ধরেছেন।
২. বিভেদের কারণ: অস্ত্র মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে, রক্তপাত ঘটায়।
৩. প্রত্যাখ্যানের যোগ্য: কবি এই অস্ত্রকে পায়ে রাখার কথা বলেছেন, যা তাঁর চূড়ান্ত প্রত্যাখ্যান ও ঘৃণার প্রতীক।
গানের চিত্র:
অন্যদিকে, গান হলো এক সৃজনশীল, ইতিবাচক শক্তি।
১. সুরক্ষার প্রতীক: গান ‘বর্ম’ হয়ে মানুষকে রক্ষা করে।
২. প্রতিরোধের হাতিয়ার: গানের ‘হাত’ বুলেট তাড়িয়ে দেয়।
৩. আরোগ্যের প্রতীক: গানের ‘গায়ে’ রক্ত মুছে ক্ষত সারানো যায়।
৪. ভালোবাসার প্রতীক: গানের বর্মের নীচে ‘আদর’ বা ভালোবাসা লুকিয়ে থাকে।
উপসংহার: এভাবেই কবি দেখিয়েছেন যে, অস্ত্র যেখানে ধ্বংস করে, গান সেখানে সৃষ্টি করে। অস্ত্র যেখানে বিভেদ তৈরি করে, গান সেখানে মিলন ঘটায়। এই তুলনার মাধ্যমে কবি হিংসার উপর শিল্পের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন।
৯. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় ব্যবহৃত প্রাকৃতিক চিত্রকল্পগুলির সার্থকতা বিচার করো।
উত্তর:
ভূমিকা: জয় গোস্বামী তাঁর ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতায় প্রকৃতির নানা উপাদানকে অত্যন্ত সার্থকভাবে প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করেছেন, যা কবিতার ভাবকে গভীর ও সুন্দর করেছে।
ব্যবহৃত প্রাকৃতিক চিত্রকল্প ও তার সার্থকতা:
১. ময়ূরপালক: ময়ূরপালক সৌন্দর্য, শিল্প ও অহিংসার প্রতীক। কবি অস্ত্রের ক্ষমতার মুকুটের পরিবর্তে মাথায় প্রকৃতির এই সহজ সৌন্দর্যকে ধারণ করে তাঁর জীবনদর্শনকে স্পষ্ট করেছেন।
২. কোকিল: কোকিল বসন্তের দূত এবং তার গান আনন্দের প্রতীক। কবি নিজের সীমিত শৈল্পিক শক্তিকে ‘একটা কোকিল’-এর সঙ্গে তুলনা করে বুঝিয়েছেন যে, শিল্পের সামান্য প্রকাশও পারে সমাজে নতুন প্রাণের সঞ্চার করতে।
৩. নদী ও খড়কুটো: ‘নদী-স্রোত’ হলো জীবনের প্রবাহ বা সময়ের প্রতীক, যা কখনও থেমে থাকে না। আর সেই স্রোতে ভেসে যাওয়া ‘খড়কুটো’ হলো অসহায়, বিপন্ন সাধারণ মানুষের প্রতীক। কবি চেয়েছেন, তাঁর গান যেন এই অসহায় মানুষদের কাছে পৌঁছে তাদের বাঁচার অবলম্বন হয়।
উপসংহার: এই প্রাকৃতিক চিত্রকল্পগুলি কবিতার মধ্যে এক স্নিগ্ধ ও মানবিক আবহ তৈরি করেছে। এগুলি অস্ত্রের কৃত্রিম ও যান্ত্রিক ধ্বংসলীলার বিপরীতে প্রকৃতির সহজ, সুন্দর ও জীবনদায়ী শক্তির কথা বলে, যা কবিতার মূল বক্তব্যকে আরও শক্তিশালী করে তুলেছে।
১০. ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাকে একটি প্রতিবাদী কবিতা বলা কতখানি যুক্তিযুক্ত? আলোচনা করো।
উত্তর:
ভূমিকা: ‘অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান’ কবিতাটিকে বিষয়বস্তু, ভাষা এবং আবেদনের দিক থেকে একটি সার্থক প্রতিবাদী কবিতা বলা সম্পূর্ণ যুক্তিযুক্ত।
প্রতিবাদী কবিতার বৈশিষ্ট্য:
১. অন্যায়ের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান: একটি প্রতিবাদী কবিতা সমকালীন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি অবস্থান নেয়। এই কবিতায় কবি যুদ্ধ, হিংসা ও অস্ত্রের বিরুদ্ধে তাঁর দ্ব্যর্থহীন অবস্থান ঘোষণা করেছেন—”অস্ত্র ফ্যালো, অস্ত্র রাখো পায়ে”।
২. বিকল্প পথের সন্ধান: প্রতিবাদী কবিতা শুধু অন্যায়ের বিরোধিতা করে না, একটি বিকল্প পথের সন্ধানও দেয়। কবি এখানে হিংসার বিকল্প হিসেবে গান বা শিল্পের অহিংস প্রতিরোধের পথ দেখিয়েছেন।
৩. ঘোষণামূলক ভঙ্গি: কবিতার ভাষা অত্যন্ত দৃঢ় ও ঘোষণামূলক। “গান দাঁড় করান দুই হাতে”, “গানের বর্ম আজ পরেছি গায়ে”—এই পঙক্তিগুলি কবির দৃঢ় প্রতিবাদের পরিচায়ক।
৪. সাধারণ মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা: কবি শুধুমাত্র নিজের কথা বলেননি, তিনি ভেসে যাওয়া খড়কুটোর মতো অসহায় সাধারণ মানুষের পক্ষ নিয়েছেন। এই সামাজিক দায়বদ্ধতা প্রতিবাদী কবিতার এক গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।
উপসংহার: যেহেতু কবিতাটি হিংসার বিরুদ্ধে এক অহিংস, শৈল্পিক ও মানবিক প্রতিবাদের কথা বলে এবং এক বিকল্প পৃথিবীর স্বপ্ন দেখায়, তাই একে একটি শক্তিশালী ও সার্থক প্রতিবাদী কবিতা হিসেবে অভিহিত করা যুক্তিযুক্ত।
Class 10 bengali অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান question answer
অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান জয় গোস্বামী কবিতার প্রশ্ন উত্তর, MCQ, অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : Class 10 bengali অস্ত্রের বিরুদ্ধে গান কবিতার প্রশ্ন উত্তর