কোনি সহায়ক পাঠের প্রশ্ন উত্তর

কোনি সহায়ক পাঠের প্রশ্ন উত্তর

কোনি – মতি নন্দী

রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৫ (২০টি)

১. ‘কোনি’ উপন্যাস অবলম্বনে কোনি চরিত্রটির সংগ্রামী জীবনের পরিচয় দাও।

ভূমিকা: মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসের কেন্দ্রবিন্দু কোনি, যে এক সাধারণ বস্তির মেয়ে থেকে নিজের অদম্য জেদ ও সংগ্রামের মাধ্যমে এক সফল সাঁতারু হয়ে উঠেছে। তার জীবন সংগ্রাম ও সাফল্যের এক জীবন্ত আখ্যান।

সংগ্রামী জীবনের পরিচয়:
১. দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই: কোনি এক অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের মেয়ে। তার বাবা যক্ষ্মা রোগী, মা লোকের বাড়ি কাজ করে এবং বড় ভাই কমল সংসারের জন্য লড়াই করে। তাদের প্রতিদিনের জীবন ছিল খাবারের জোগাড় করার লড়াই। “খিদ্দা, এবার আমরা কী খাব?”—এই উক্তি তার দারিদ্র্যপীড়িত জীবনের করুণ চিত্র তুলে ধরে।
২. সামাজিক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম: একজন বস্তির মেয়ে হিসেবে তাকে সামাজিক অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। ক্লাবের রাজনীতি, অমিয়া ও বেলার মতো সাঁতারুদের তাচ্ছিল্য এবং কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্র তার পথকে কঠিন করে তুলেছিল।
৩. প্রশিক্ষণের কঠোরতা: ক্ষিতীশের প্রশিক্ষণের কঠোরতা সহ্য করাও ছিল তার সংগ্রামের অংশ। কঠোর অনুশীলন, নিয়মানুবর্তিতা এবং কোচের বকুনি সহ্য করে সে নিজেকে তৈরি করেছে।
৪. মানসিক সংগ্রাম: দাদার আকস্মিক মৃত্যু, পারিবারিক দায়িত্ব এবং প্রতিযোগিতার চাপ—এই সবকিছু তার কিশোরী মনের উপর প্রচণ্ড প্রভাব ফেলেছিল। কিন্তু সে কখনও হার মানেনি।

উপসংহার: সুতরাং, দারিদ্র্য, সামাজিক বাধা, ব্যক্তিগত দুঃখ এবং প্রশিক্ষণের কঠোরতা—এই সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করেই কোনি তার লক্ষ্যে পৌঁছেছে। তার জীবন এক অসমাপ্ত কিন্তু বিজয়ী সংগ্রামের নাম।

২. ‘কোনি’ উপন্যাসে ক্ষিতীশ সিংহ চরিত্রটি কীভাবে একজন আদর্শ প্রশিক্ষক ও অভিভাবক হয়ে উঠেছে, তা আলোচনা করো।

ভূমিকা: মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসের অন্যতম প্রধান চরিত্র হলেন প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ। তিনি শুধুমাত্র একজন সাঁতারের কোচ নন, তিনি কোনির জীবনে একজন আদর্শ শিক্ষক, পথপ্রদর্শক এবং অভিভাবক।

আদর্শ প্রশিক্ষক ও অভিভাবক হিসেবে ক্ষিতীশ:
১. প্রতিভা অন্বেষণকারী: ক্ষিতীশই প্রথম গঙ্গার ঘাটে কোনির মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভা আবিষ্কার করেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন, এই সাধারণ মেয়ের মধ্যেই অসাধারণ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
২. কঠোর কিন্তু স্নেহশীল প্রশিক্ষক: তিনি কোনিকে অত্যন্ত কঠোর প্রশিক্ষণের মধ্যে দিয়ে নিয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁর এই কঠোরতার আড়ালে ছিল গভীর স্নেহ ও মমতা। তিনি জানতেন, কঠোরতা ছাড়া চ্যাম্পিয়ন তৈরি করা সম্ভব নয়।
৩. ব্যক্তিগত ত্যাগ: কোনিকে তৈরি করার জন্য ক্ষিতীশ নিজের সমস্ত সঞ্চয়, স্ত্রীর গয়না এবং এমনকি নিজের খাবারের খরচও উৎসর্গ করেছেন। তিনি নিজের চায়ের দোকান থেকে যা আয় করতেন, তার সবটাই কোনির পুষ্টিকর খাবারের জন্য ব্যয় করতেন।
৪. অভিভাবকের ভূমিকা: কোনির দাদার মৃত্যুর পর ক্ষিতীশই তার পরিবারের দায়িত্ব নেন। তিনি শুধু কোনির সাঁতারের কোচ ছিলেন না, তার পড়াশোনা, তার মানসিক স্বাস্থ্য এবং তার ভবিষ্যতের অভিভাবকও ছিলেন।
৫. অনুপ্রেরণা ও দর্শন: “ফাইট, কোনি, ফাইট!”—এই মন্ত্র দিয়ে তিনি কোনির মনে জেদ ও লড়াইয়ের আগুন জ্বেলে দিয়েছিলেন। তিনি শিখিয়েছিলেন, সাঁতার জীবনের চেয়ে বড় নয়, কিন্তু জীবনকে সুন্দর করার জন্য লড়াইটা জরুরি।

৩. “ফাইট, কোনি, ফাইট!” – এই উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো এবং এটি কীভাবে কোনিকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে, তা লেখো।

উৎস ও বক্তা: উক্তিটি ‘কোনি’ উপন্যাসে প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহের। এটি শুধুমাত্র একটি সংলাপ নয়, এটি উপন্যাসের মূল দর্শন।

তাৎপর্য বিশ্লেষণ:
‘ফাইট’ বা লড়াই কথাটির তাৎপর্য multifaceted।
১. জীবনের বিরুদ্ধে লড়াই: এই লড়াই শুধুমাত্র সাঁতারের প্রতিযোগিতা জেতার লড়াই নয়, এটি দারিদ্র্য, সামাজিক বঞ্চনা এবং প্রতিকূল পরিস্থিতির বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার লড়াই।
২. নিজের সীমাবদ্ধতার বিরুদ্ধে লড়াই: এটি কোনির নিজের শারীরিক ও মানসিক সীমাবদ্ধতাকে অতিক্রম করার লড়াই।
৩. অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই: সাঁতার জগতের রাজনীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর লড়াই।

কোনির জীবনে অনুপ্রেরণা:
এই একটি মাত্র মন্ত্র কোনির জীবনে বারবার संजीवनीর মতো কাজ করেছে।

  • যখন সে অনুশীলনে ক্লান্ত হয়ে পড়ত, তখন এই কথাটিই তাকে নতুন শক্তি জোগাত।
  • জাতীয় প্রতিযোগিতায় যখন তাকে অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়, তখন এই মন্ত্রই তাকে অপমানকে শক্তিতে রূপান্তরিত করতে সাহায্য করে।
  • শেষ রেসে যখন সে প্রায় হারতে বসেছিল, তখন ক্ষিতীশের এই চিৎকারই তার মধ্যে জেতার আগুন জ্বেলে দেয় এবং সে অসম্ভবকে সম্ভব করে তোলে।
সুতরাং, এই উক্তিটি কোনির জীবন সংগ্রামের মূল চালিকাশক্তি।

৪. দারিদ্র্য ও বঞ্চনা কীভাবে কোনির জীবনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং সে কীভাবে তা অতিক্রম করেছিল, তা উপন্যাস অবলম্বনে আলোচনা করো।

ভূমিকা: ‘কোনি’ উপন্যাসটি শুধুমাত্র একজন সাঁতারুর কাহিনী নয়, এটি দারিদ্র্য ও বঞ্চনার বিরুদ্ধে এক কিশোরীর অদম্য লড়াইয়ের দলিল।

দারিদ্র্য ও বঞ্চনার বাধা:
১. খাদ্যের অভাব: একজন সাঁতারুর জন্য পুষ্টিকর খাবার অপরিহার্য। কিন্তু কোনির পরিবারে দু’বেলা ঠিকমতো খাবারই জুটত না। “খিদ্দা, এবার আমরা কী খাব?”—এই প্রশ্নটি তাদের চরম দারিদ্র্যের পরিচয় দেয়।
২. প্রশিক্ষণের উপকরণের অভাব: তার ভালো সুইমিং কস্টিউম বা প্রশিক্ষণের অন্যান্য সরঞ্জাম কেনার ক্ষমতা ছিল না।
৩. সামাজিক বঞ্চনা: বস্তির মেয়ে হওয়ায় তাকে বারবার সামাজিক তাচ্ছিল্য ও বঞ্চনার শিকার হতে হয়েছে। ক্লাবের প্রভাবশালী সদস্যরা তাকে সুযোগ দিতে চায়নি।
৪. প্রাতিষ্ঠানিক বঞ্চনা: জাতীয় প্রতিযোগিতায় তাকে ইচ্ছাকৃতভাবে রিলে টিম থেকে বাদ দেওয়া হয়, যা ছিল তার প্রতি চরম বঞ্চনা।

অতিক্রম করার উপায়:
কোনি এই সমস্ত বাধা অতিক্রম করেছিল মূলত দুটি শক্তির উপর ভর করে—
১. নিজের জেদ ও কঠোর পরিশ্রম: তার মধ্যে ছিল এক অদম্য জেদ এবং সে কঠোর পরিশ্রম করতে ভয় পেত না।
২. ক্ষিতীশের অভিভাবকত্ব: ক্ষিতীশ সিংহ তার খাবারের দায়িত্ব, প্রশিক্ষণের দায়িত্ব এবং তাকে সমস্ত বঞ্চনার বিরুদ্ধে রক্ষা করার দায়িত্ব নিয়েছিলেন।

এভাবেই, নিজের জেদ এবং কোচের নিঃস্বার্থ সমর্থনে কোনি সমস্ত বাধা জয় করেছিল।

৫. “‘অবশেষে কোনি বাংলা সাঁতার দলে জায়গা পেল।’ – কোনি কীভাবে দলে জায়গা পেয়েছিল? এর জন্য ক্ষিতীশকে কী করতে হয়েছিল?”

ভূমিকা: জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতার জন্য বাংলা দল নির্বাচনের সময় কোনিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু ক্ষিতীশের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সে দলে জায়গা পায়।

দলে জায়গা পাওয়ার কাহিনী:
বাংলা সাঁতার দলে কোনির নাম না থাকায় ক্ষিতীশ憤怒 হন। তিনি জানতে পারেন যে, বাংলার অন্যতম সেরা সাঁতারু হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র ক্লাব রাজনীতির কারণে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। ক্ষিতীশ এর তীব্র প্রতিবাদ করেন।
তিনি অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তা থেকে শুরু করে মন্ত্রী পর্যন্ত সকলের কাছে যান। তিনি প্রমাণ করেন যে, সময়ের বিচারে কোনি দলে জায়গা পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু কর্মকর্তারা তাকে সুযোগ দিতে রাজি ছিলেন না।

ক্ষিতীশের ভূমিকা ও ত্যাগ:
শেষ পর্যন্ত ক্ষিতীশ এক চরম পদক্ষেপ নেন। তিনি বাংলার সাঁতার দলের কর্মকর্তা ধীরেন ঘোষকে বলেন যে, তিনি যদি কোনির অন্তর্ভুক্তির জন্য সুপারিশ করেন, তবে তিনি (ক্ষিতীশ) চিরদিনের জন্য সাঁতার জগৎ থেকে সরে যাবেন এবং কোনোদিন আর সুইমিং পুলে ঢুকবেন না। ক্ষিতীশের এই আত্মত্যাগের প্রস্তাবেই ধীরেন ঘোষ রাজি হন এবং அமைச்சர்কে বলে কোনিকে দলে অন্তর্ভুক্ত করার ব্যবস্থা করেন। এভাবেই, নিজের কোচিং জীবনকে বাজি রেখে ক্ষিতীশ তাঁর ছাত্রীকে তার যোগ্য সম্মান পাইয়ে দিয়েছিলেন।

৬. ‘কোনি’ উপন্যাসে লীলাবতী চরিত্রটির ভূমিকা আলোচনা করো।

ভূমিকা: ‘কোনি’ উপন্যাসে ক্ষিতীশ সিংহের স্ত্রী লীলাবতী একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পার্শ্বচরিত্র। তিনি একাধারে একজন সাধারণ সংসারী মহিলা এবং ক্ষিতীশের সংগ্রামের এক নীরব সঙ্গী।

লীলাবতীর ভূমিকা:
১. ক্ষিতীশের কাজের সমালোচক: প্রথমে লীলাবতী ক্ষিতীশের কাজকর্ম পছন্দ করতেন না। তিনি মনে করতেন, ক্ষিতীশ নিজের সংসার ও ব্যবসার দিকে নজর না দিয়ে ক্লাবের রাজনীতি এবং ছেলেমেয়েদের নিয়ে সময় নষ্ট করছেন। তিনি বারবার ক্ষিতীশকে বাস্তববাদী হতে বলতেন।
২. স্নেহময়ী সত্তা: তাঁর বাইরের কঠোরতার আড়ালে একটি স্নেহময়ী মন ছিল। তিনি কোনিকে ভালোবাসতেন এবং তার জন্য পুষ্টিকর খাবারের ব্যবস্থা করতেন। ক্ষিতীশ যখন নিজের খাবার না খেয়ে কোনির জন্য খাবার বাঁচাতেন, তখন লীলাবতী বকাবকি করলেও শেষে তিনিই সব ব্যবস্থা করে দিতেন।
৩. প্রেরণা ও সমর্থক: গল্পের শেষে লীলাবতীর চরিত্রের রূপান্তর ঘটে। তিনি ক্ষিতীশের আদর্শকে বুঝতে পারেন। যখন ক্ষিতীশ জুপিটার ক্লাব থেকে বিতাড়িত হন, তখন লীলাবতীই তাঁকে সাহস জোগান এবং বলেন, “জুপিটার ক্লাবে আমি किल्ला আগলে বসে থাকব।” তিনি ক্ষিতীশের অনুপস্থিতিতে প্রজাপতি দোকানের দায়িত্ব নিয়ে তাঁর সংগ্রামকে সমর্থন করেন।

উপসংহার: সুতরাং, লীলাবতী চরিত্রটি ক্ষিতীশের জীবনের এক পরিপূরক শক্তি, যিনি প্রথম দিকে সমালোচক হলেও শেষে তাঁর সংগ্রামের সবচেয়ে বড় সমর্থক হয়ে উঠেছিলেন।

৭. “‘এটা বুকের মধ্যে পুষে রাখুক।’ – কী পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে? কেন পুষে রাখতে বলা হয়েছে?”

উৎস ও বক্তা: উক্তিটি ‘কোনি’ উপন্যাস থেকে গৃহীত। এর বক্তা হলেন প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ।

কী পুষে রাখার কথা বলা হয়েছে:
জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনিকে রিলে টিম থেকে অন্যায়ভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল এবং তার জায়গায় কম যোগ্যতাসম্পন্ন একজনকে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। এই অপমান, বঞ্চনা এবং অবিচারের স্মৃতিকেই ক্ষিতীশ সিংহ কোনির বুকের মধ্যে পুষে রাখতে বলেছেন।

কেন পুষে রাখতে বলা হয়েছে:
ক্ষিতীশ জানতেন, এই অপমানই হবে কোনির সবচেয়ে বড় শক্তি। তিনি চেয়েছিলেন, কোনি যেন এই অপমানকে ভোলার চেষ্টা না করে, বরং তাকে জেদ ও বারুদে পরিণত করে।
১. জেদ বাড়ানোর জন্য: এই অপমান তাকে আরও বেশি জেদি করে তুলবে এবং সে দ্বিগুণ শক্তি নিয়ে অনুশীলনে মন দেবে।
২. প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য: ক্ষিতীশ চেয়েছিলেন, কোনি যেন এই অপমানের প্রতিশোধ কথায় না নিয়ে, কাজে নেয়। সে যেন সাঁতারের মাধ্যমে প্রমাণ করে দেয় যে, তাকে বাদ দেওয়াটা কত বড় ভুল ছিল।
৩. মানসিক শক্তি অর্জনের জন্য: এই পুষে রাখা যন্ত্রণা তাকে মানসিক দিক থেকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে এবং যেকোনো কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার সাহস জোগাবে।

সুতরাং, ক্ষিতীশ একজন দক্ষ মনস্তাত্ত্বিকের মতো অপমানকে ইতিবাচক শক্তিতে রূপান্তরিত করার জন্যই এই কথা বলেছিলেন।

৮. ‘কোনি’ উপন্যাসটিতে বাংলার সাঁতার জগতের যে নোংরা রাজনীতির ছবি ফুটে উঠেছে, তার পরিচয় দাও।

ভূমিকা: মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসটি শুধুমাত্র একজন সাঁতারুর জীবন সংগ্রাম নয়, এটি বাংলার সাঁতার জগতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি ও দুর্নীতির এক বিশ্বস্ত দলিল।

সাঁতার জগতের রাজনীতির পরিচয়:
১. ক্লাব রাজনীতি ও দলাদলি: উপন্যাসে জুপিটার এবং অ্যাপোলো ক্লাবের মধ্যেকার রেষারেষি দেখানো হয়েছে। শুধুমাত্র দলাদলির কারণে যোগ্য সাঁতারুরা সুযোগ পেত না। ক্ষিতীশ সিংহকে তাঁর সৎ মতামতের জন্য জুপিটার ক্লাব থেকে অন্যায়ভাবে বরখাস্ত করা হয়।
২. কর্মকর্তা ও কর্তাদের দুর্নীতি: সাঁতার অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা ছিলেন অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত। তাঁরা যোগ্যতার পরিবর্তে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও অর্থের বিনিময়ে সাঁতারুদের সুযোগ দিতেন। ধীরেন ঘোষ, হরিচরণ মিত্রের মতো চরিত্ররা এই দুর্নীতির প্রতীক।
৩. প্রতিভাকে অবহেলা: কোনি একজন প্রতিভাবান সাঁতারু হওয়া সত্ত্বেও, শুধুমাত্র সে গরিব এবং ক্ষিতীশের ছাত্রী হওয়ায় তাকে বারবার অবহেলা করা হয়েছে। জাতীয় স্তরে তাকে দল থেকে বাদ দেওয়া এই নোংরা রাজনীতিরই চূড়ান্ত উদাহরণ।
৪. স্বজনপোষণ (Nepotism): অনেক ক্ষেত্রে অযোগ্য সাঁতারুরা শুধুমাত্র কর্মকর্তাদের প্রিয়পাত্র হওয়ায় বা প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হওয়ায় দলে সুযোগ পেয়ে যেত, যা যোগ্যদের প্রতি চরম অবিচার।

উপসংহার: এভাবেই, লেখক বাংলার ক্রীড়া জগতের এক অন্ধকার দিককে তুলে ধরেছেন, যেখানে প্রতিভার চেয়ে রাজনীতি ও দুর্নীতিই বড় হয়ে ওঠে।

৯. ক্ষিতীশ ও কোনির মধ্যেকার গুরু-শিষ্যের সম্পর্কটি পাঠ্যাংশ অবলম্বনে বিশ্লেষণ করো।

ভূমিকা: ‘কোনি’ উপন্যাসের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও মর্মস্পর্শী দিক হলো ক্ষিতীশ সিংহ ও কোনির মধ্যেকার গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক। এই সম্পর্ক প্রচলিত গুরু-শিষ্যের ধারণাকে ছাপিয়ে এক নতুন মাত্রা লাভ করেছে।

সম্পর্কের স্বরূপ:
১. কঠোর শাসন ও গভীর স্নেহ: ক্ষিতীশ ছিলেন একজন কঠোর শৃঙ্খলাপরায়ণ গুরু। তিনি কোনিকে কঠিন অনুশীলনের মধ্যে রাখতেন, তাকে বকাবকি করতেন। কিন্তু এই শাসনের আড়ালে ছিল এক পিতার মতো গভীর স্নেহ। তিনি কোনির পুষ্টি, স্বাস্থ্য ও মানসিক অবস্থার দিকে কড়া নজর রাখতেন।
২. পারস্পরিক বিশ্বাস ও নির্ভরতা: কোনি তাঁর ‘খিদ্দা’কে অন্ধভাবে বিশ্বাস করত। সে জানত, খিদ্দা যা করছে, তার ভালোর জন্যই করছে। অন্যদিকে, ক্ষিতীশও কোনির প্রতিভা ও লড়াই করার ক্ষমতার উপর সম্পূর্ণ আস্থা রাখতেন।
৩. বন্ধুর মতো সম্পর্ক: অনেক সময় তাদের সম্পর্ক ছিল বন্ধুর মতো। তারা একসঙ্গে ঠাট্টা-ইয়ার্কি করত, একে অপরের সঙ্গে রাগ-অভিমান করত। এই বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তাদের বন্ধনকে আরও দৃঢ় করেছিল।
৪. ত্যাগ ও কৃতজ্ঞতা: ক্ষিতীশ কোনির জন্য নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করেছিলেন। আর কোনিও তাঁর কঠোর পরিশ্রম ও সাফল্য দিয়ে সেই ত্যাগের মর্যাদা রেখেছিল।

উপসংহার: সুতরাং, ক্ষিতীশ ও কোনির সম্পর্ক শুধুমাত্র গুরু-শিষ্যের নয়, এটি পিতা-কন্যা, বন্ধু এবং দুই সহযোদ্ধার এক জটিল ও পবিত্র সম্পর্ক।

১০. “‘হঠাৎ কোনির দুচোখ জলে ভরে এল।’ – কোনির চোখে জল আসার কারণ কী? এই ঘটনা তার মানসিকতার কোন দিকটি তুলে ধরে?”

প্রসঙ্গ ও কারণ: জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর যখন সাংবাদিকরা কোনির ছবি তুলছিল এবং তার সাক্ষাৎকার নিচ্ছিল, তখন সে দেখে যে, তার ‘খিদ্দা’ অর্থাৎ ক্ষিতীশ সিংহ ভিড়ের মধ্যে এক কোণে একা দাঁড়িয়ে আছেন। যে মানুষটা তাকে তৈরি করার জন্য নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করেছে, আজ তার সাফল্যের মুহূর্তে সে প্রচারের আলো থেকে সম্পূর্ণ দূরে। ক্ষিতীশের এই নিঃস্বার্থ ত্যাগ, তার প্রতি অভিমান এবং তার জন্য গভীর ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতায় কোনির দুচোখ জলে ভরে এসেছিল।

মানসিকতার পরিচয়:
এই ঘটনা কোনির চরিত্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে—
১. কৃতজ্ঞতাবোধ: কোনি ভোলেনি যে, তার এই সাফল্যের পিছনে কার অবদান সবচেয়ে বেশি। সে তার গুরুর প্রতি গভীরভাবে কৃতজ্ঞ।
২. সংবেদনশীলতা: সাফল্যের উল্লাসে সে আত্মহারা হয়ে যায়নি। সে তার কোচের নিঃসঙ্গতা ও ত্যাগকে অনুভব করতে পেরেছে, যা তার সংবেদনশীল মনের পরিচয় দেয়।
৩. সরলতা ও সারল্য: প্রচারের আলো বা খ্যাতি তাকে তার শিকড় থেকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেনি। সে তখনও সেই সরল, আবেগপ্রবণ মেয়েটিই ছিল, যার কাছে তার ‘খিদ্দা’র স্থান সবার উপরে।

সুতরাং, এই ঘটনাটি কোনির চরিত্রের মহত্ত্ব ও তার গুরুর প্রতি গভীর ভালোবাসাকেই প্রকাশ করে।

১১. “‘খিদ্দা, এবার আমরা কী খাব?’ – এই উক্তিটির আলোকে কোনির জীবনযুদ্ধে খাবারের অভাব কীভাবে প্রভাব ফেলেছিল, তা আলোচনা করো।”

ভূমিকা: কোনির এই সরল প্রশ্নটি শুধুমাত্র একটি প্রশ্ন নয়, এটি তার এবং তার মতো হাজারো মানুষের জীবন সংগ্রামের এক করুণ প্রতিধ্বনি। এই উক্তিটির মাধ্যমে লেখক দারিদ্র্যের ভয়াবহ রূপকে তুলে ধরেছেন।

খাবারের অভাবের প্রভাব:
১. শারীরিক দুর্বলতা: একজন সাঁতারুর জন্য প্রয়োজন প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিকর খাবার। কিন্তু কোনির পরিবারে সেই খাবার জোগাড় করার ক্ষমতাই ছিল না। পুষ্টিকর খাবারের অভাবে তার শারীরিক সক্ষমতা তৈরিতে বাধা সৃষ্টি হচ্ছিল।
২. মানসিক চাপ: প্রতিদিন কী খাবে, এই চিন্তা কোনির কিশোরী মনের উপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করত। এটি তার অনুশীলনে মনোযোগ দিতেও বাধা দিত।
৩. প্রশিক্ষকের সংগ্রাম: কোনির খাবারের অভাব তার কোচ ক্ষিতীশকেও এক কঠিন সংগ্রামের মুখে ফেলেছিল। ক্ষিতীশকে নিজের চায়ের দোকানের আয় এবং ব্যক্তিগত সঞ্চয় থেকে কোনির জন্য পুষ্টিকর খাবারের (যেমন—ডিম, কলা, মাংসের স্ট্যু) ব্যবস্থা করতে হয়েছে।
৪. জেদ ও প্রেরণা: অন্যদিকে, এই খাবারের অভাবই কোনিকে আরও বেশি জেদি করে তুলেছিল। সে জানত, সাঁতারে সফল হতে পারলে হয়তো এই দারিদ্র্য থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। এই অভাবই তার লড়াই করার অন্যতম প্রেরণা ছিল।

উপসংহার: এভাবেই, খাবারের অভাব কোনির জীবনযুদ্ধে এক বিরাট বাধা হিসেবে কাজ করলেও, তা পরোক্ষভাবে তাকে আরও শক্তিশালী ও সংগ্রামী করে তুলেছিল।

১২. ‘কোনি’ উপন্যাসের নামকরণ কতখানি সার্থক? আলোচনা করো।

ভূমিকা: সাহিত্যের নামকরণ তার বিষয়বস্তু বা কেন্দ্রীয় চরিত্রের পরিচয় বহন করে। মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসটির নামকরণ কেন্দ্রীয় চরিত্র-ভিত্তিক এবং তা সর্বাংশে সার্থক।

নামকরণের সার্থকতা:
১. কেন্দ্রীয় চরিত্র: উপন্যাসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ঘটনা প্রধান চরিত্র কোনিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। তার দারিদ্র্যপীড়িত জীবন, সাঁতারু হিসেবে তার উত্থান, তার সংগ্রাম, তার জয়-পরাজয়—এই সবই উপন্যাসের মূল উপজীব্য। কোনিকে ছাড়া এই উপন্যাসের অস্তিত্ব কল্পনা করা যায় না।
২. সংগ্রামের প্রতীক: ‘কোনি’ নামটি শুধুমাত্র একটি মেয়ের নাম নয়, এটি হয়ে উঠেছে সংগ্রাম, জেদ এবং অদম্য লড়াইয়ের প্রতীক। কোনি হলো সেই সমস্ত মানুষের প্রতিনিধি, যারা দারিদ্র্য ও প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করে নিজেদের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠা করে।
৩. কাহিনীর গতিপথ: উপন্যাসের সমস্ত পার্শ্বচরিত্র (যেমন—ক্ষিতীশ, লীলাবতী, কমল, অমিয়া) এবং ঘটনা কোনির জীবনকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে এবং তার চরিত্রকে বিকশিত করতে সাহায্য করেছে।

উপসংহার: যেহেতু উপন্যাসের কাহিনী, ভাববস্তু এবং মূল দর্শন—সবকিছুই কোনি নামক চরিত্রটিকে আশ্রয় করে গড়ে উঠেছে, তাই ‘কোনি’ নামকরণটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত, আকর্ষণীয় এবং সার্থক।

১৩. জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনির চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কাহিনীটি সংক্ষেপে বর্ণনা করো।

ভূমিকা: ‘কোনি’ উপন্যাসের ক্লাইম্যাক্স বা চূড়ান্ত মুহূর্ত হলো জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতায় কোনির চ্যাম্পিয়ন হওয়া, যা ছিল তার সমস্ত সংগ্রাম ও অপমানের যোগ্য জবাব।

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কাহিনী:
জাতীয় প্রতিযোগিতায় কোনিকে রিলে টিম থেকে বাদ দেওয়া হয়। কিন্তু তার প্রতিদ্বন্দ্বী রমা যোশী অসুস্থ হয়ে পড়ায় শেষ মুহূর্তে তাকে ১ x ৪০০ মিটার রিলে রেসে নামানো হয়। এটি ছিল বাংলার জন্য একটি সম্মানরক্ষার লড়াই।
রেসের শুরুতে কোনি অনেকটা পিছিয়ে পড়ে। সকলেই ধরে নেয় যে সে হেরে যাবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গ্যালারি থেকে ভেসে আসা তার কোচ ক্ষিতীশের সেই অমোঘ চিৎকার, “ফাইট, কোনি, ফাইট!”—তার মধ্যে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করে।
সে তার সমস্ত শক্তি, জেদ এবং অপমানকে একত্রিত করে সাঁতরাতে শুরু করে। তার মনে হচ্ছিল, সে যেন জলের উপর দিয়ে উড়ে চলেছে। শেষ পর্যন্ত সে তার প্রতিদ্বন্দ্বীকে মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে হারিয়ে দেয় এবং বাংলাকে চ্যাম্পিয়ন করে। এই জয় ছিল শুধুমাত্র একটি রেস জেতা নয়, এটি ছিল সমস্ত বঞ্চনা ও রাজনীতির বিরুদ্ধে এক সাধারণ মেয়ের জয়।

১৪. “আমার বিরুদ্ধে চার্জগুলো স্পষ্ট করে চিঠিতে বলা নেই।” – বক্তা কে? তাঁর বিরুদ্ধে কী কী অভিযোগ আনা হয়েছিল এবং এর পরিণতি কী হয়েছিল?

বক্তা: উক্তিটির বক্তা হলেন ‘জুপিটার সুইমিং ক্লাবে’র প্রধান প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ।

অভিযোগসমূহ:
ক্ষিতীশ সিংহের বিরুদ্ধে ক্লাবের কর্মকর্তারা বেশ কিছু মিথ্যা ও ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছিলেন।

  • অভিযোগ ১: তিনি ক্লাবের টাকাপয়সা নিয়ে নয়ছয় করেছেন।
  • অভিযোগ ২: তিনি ক্লাবের সাঁতারুদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন এবং কয়েকজনকে অন্যায়ভাবে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেন।
  • অভিযোগ ৩: তিনি ক্লাবের নিয়মশৃঙ্খলা মানেন না এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন।
এই অভিযোগগুলি ছিল মূলত ক্লাবের নোংরা রাজনীতির ফল। ক্ষিতীশের সততা ও স্পষ্টবাদী মনোভাব ক্লাবের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের স্বার্থে আঘাত করেছিল, তাই তারা তাঁকে সরানোর জন্য এই ষড়যন্ত্র করে।

পরিণতি:
এই অভিযোগগুলির ভিত্তিতে ক্ষিতীশ সিংহকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়েই ক্লাবের চিফ ট্রেনার পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এই ঘটনা তাকে গভীরভাবে আহত করে, কিন্তু তিনি ভেঙে পড়েন না। বরং এই ঘটনার পরেই তিনি কোনিকে এককভাবে প্রশিক্ষণ দিয়ে চ্যাম্পিয়ন তৈরি করার জন্য আরও বেশি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন।

১৫. হিয়া মিত্র চরিত্রটি কীভাবে কোনির প্রতিদ্বন্দ্বী ও অনুপ্রেরণা – উভয়ই হয়ে উঠেছিল, তা আলোচনা করো।

ভূমিকা: ‘কোনি’ উপন্যাসে হিয়া মিত্র চরিত্রটি কোনির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে আবির্ভূত হলেও, সে পরোক্ষভাবে কোনির অনুপ্রেরণারও উৎস ছিল।

প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে হিয়া:
হিয়া মিত্র ছিল বাংলার সেরা সাঁতারু এবং ‘অ্যাপোলো’ ক্লাবের তারকা। সে ছিল ধনী পরিবারের মেয়ে এবং সমস্ত রকম সুযোগ-সুবিধা পেত। সাঁতারের দক্ষতায়, রেকর্ডে এবং সামাজিক মর্যাদায় সে ছিল কোনির সম্পূর্ণ বিপরীত। জাতীয় স্তরে কোনির প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল হিয়া। তাদের এই প্রতিদ্বন্দ্বিতাই উপন্যাসের উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তুলেছে।

অনুপ্রেরণা হিসেবে হিয়া:
ক্ষিতীশ সিংহ অত্যন্ত বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে হিয়াকে কোনির অনুপ্রেরণা হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
১. লক্ষ্য স্থাপন: ক্ষিতীশ কোনির সামনে হিয়াকে একটি লক্ষ্য হিসেবে স্থাপন করেন। তিনি হিয়ার রেকর্ড টাইমিং দেখিয়ে কোনিকে সেই সময় অতিক্রম করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন।
২. জেদ তৈরি: হিয়ার সাফল্য ও খ্যাতি কোনির মনে এক ধরনের স্বাস্থ্যকর ঈর্ষা ও জেদ তৈরি করত। সে হিয়াকে হারানোর জন্যই আরও বেশি কঠোর পরিশ্রম করত।
৩. আদর্শ স্থাপন: ক্ষিতীশ হিয়ার সাঁতারের কৌশল, তার নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদির উদাহরণ দিয়ে কোনিকে শেখাতেন। এভাবেই, প্রতিদ্বন্দ্বী হওয়া সত্ত্বেও হিয়া মিত্রের অস্তিত্ব কোনিকে একজন সেরা সাঁতারু হয়ে উঠতে পরোক্ষভাবে সাহায্য করেছিল।

১৬. “‘আজ বারুণী। গঙ্গায় কাঁচা আম ভেসে বেড়াচ্ছে।’ – এই উক্তির মাধ্যমে উপন্যাসটি কীভাবে শেষ হয়েছে? এর মধ্যে কোন ব্যঞ্জনা লুকিয়ে আছে?”

ভূমিকা: মতি নন্দীর ‘কোনি’ উপন্যাসটি এই লাইনটি দিয়েই শুরু হয়েছিল এবং প্রায় একই ধরনের লাইন দিয়ে শেষ হয়েছে। এই পুনরাবৃত্তির মধ্যে এক গভীর ব্যঞ্জনা লুকিয়ে আছে।

উপন্যাসের সমাপ্তি:
জাতীয় প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর কোনি এবং ক্ষিতীশ কলকাতায় ফিরে আসে। কিন্তু তাদের এই বিশাল সাফল্য সত্ত্বেও তাদের জীবনে কোনো পরিবর্তন আসে না। তারা আবার তাদের পুরনো জীবনসংগ্রামে ফিরে যায়। ক্ষিতীশ তাঁর চায়ের দোকানে বসেন এবং কোনি হয়তো আবার গঙ্গার ঘাটে তার পুরনো জীবনে ফিরে যায়। উপন্যাসের শেষে কোনি তার খিদ্দাকে বলে, “আজ বারুণী। গঙ্গায় কাঁচা আম…।” এই কথাটি বুঝিয়ে দেয় যে, সাফল্য পেলেও তাদের জীবনের মূল সংগ্রাম শেষ হয়নি।

ব্যঞ্জনা:
১. জীবন সংগ্রামের চক্রাকার রূপ: উপন্যাসের শুরু ও শেষের এই মিল প্রমাণ করে যে, জীবন সংগ্রাম একটি চক্রের মতো। একটি সাফল্য মানেই সংগ্রামের শেষ নয়, এটি একটি নতুন সংগ্রামের সূচনা।
২. শিকড়কে না ভোলা: কোনি চ্যাম্পিয়ন হয়েও তার অতীত বা শিকড়কে ভোলেনি। গঙ্গার ঘাটের সেই সাধারণ জীবনই তার আসল পরিচয়।
৩. প্রশ্নবোধক সমাপ্তি: এই সমাপ্তি পাঠকের মনে একটি প্রশ্ন রেখে যায়—কোনির ভবিষ্যৎ কী? সে কি তার সাফল্যকে ধরে রাখতে পারবে? এই অসম্পূর্ণ সমাপ্তিই উপন্যাসটিকে আরও বেশি বাস্তবসম্মত ও মর্মস্পর্শী করে তুলেছে।

১৭. ‘কোনি’ উপন্যাসে কমল চরিত্রটির গুরুত্ব আলোচনা করো।

ভূমিকা: ‘কোনি’ উপন্যাসে কোনির বড় ভাই কমল একটি স্বল্পস্থায়ী কিন্তু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তার স্বপ্ন ও মৃত্যুই কোনির জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

কমল চরিত্রটির গুরুত্ব:
১. কোনির প্রথম অনুপ্রেরণা: কমল নিজে একজন ভালো সাঁতারু ছিল এবং সে-ই প্রথম কোনির মধ্যে সাঁতারের বীজ বপন করেছিল। সে স্বপ্ন দেখত, কোনি একদিন বড় সাঁতারু হবে। এই স্বপ্নই ছিল কোনির প্রাথমিক অনুপ্রেরণা।
২. ক্ষিতীশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনকারী: কমলের মাধ্যমেই ক্ষিতীশ সিংহ কোনির পরিবারের সঙ্গে পরিচিত হন এবং কোনির প্রশিক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার সুযোগ পান।
৩. ত্যাগের প্রতীক: কমল তার পরিবারের জন্য নিজের সাঁতারের স্বপ্ন ত্যাগ করে একটি কারখানায় কাজ নিয়েছিল। সে ছিল পরিবারের প্রতি দায়বদ্ধ ও স্নেহশীল এক যুবকের প্রতীক।
৪. কোনির জীবনের টার্নিং পয়েন্ট: কারখানার দুর্ঘটনায় কমলের আকস্মিক মৃত্যু কোনির জীবনকে সম্পূর্ণ বদলে দেয়। দাদার স্বপ্ন পূরণ করার জন্যই সে সাঁতারকে আরও বেশি গুরুত্বের সঙ্গে গ্রহণ করে। এই ঘটনা তাকে আরও বেশি সংগ্রামী ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তোলে।

উপসংহার: সুতরাং, কমল চরিত্রটি physically উপস্থিত না থাকলেও, তার স্বপ্ন ও স্মৃতি সমগ্র উপন্যাস জুড়ে কোনিকে চালিত করেছে। সে কোনির সংগ্রামের এক নীরব প্রেরণা।

১৮. ‘কোনি’ উপন্যাসের কাহিনিতে বিষ্ণু ধরের ভূমিকা কী ছিল?

ভূমিকা: ‘কোনি’ উপন্যাসে বিষ্ণু ধর ক্ষিতীশ সিংহের প্রতিদ্বন্দ্বী এবং অ্যাপোলো ক্লাবের একজন প্রভাবশালী সদস্য। সে মূলত একটি খল চরিত্র হলেও, তার কার্যকলাপ কাহিনিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করেছে।

বিষ্ণু ধরের ভূমিকা:
১. ক্ষিতীশের প্রতিপক্ষ: বিষ্ণু ধর প্রথম থেকেই ক্ষিতীশের প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিল। সে ক্ষিতীশকে জুপিটার ক্লাব থেকে সরানোর জন্য ষড়যন্ত্র করে এবং তার কাজে বারবার বাধা দেওয়ার চেষ্টা করে।
২. সাঁতার জগতের রাজনীতির প্রতীক: বিষ্ণু চরিত্রটি সাঁতার জগতের নোংরা রাজনীতি, দলাদলি এবং দুর্নীতির প্রতীক। সে প্রতিভার চেয়ে অর্থ ও ক্ষমতার উপর বেশি বিশ্বাসী ছিল।
৩. কোনির প্রতি অবহেলা: সে কোনিকে “গঙ্গার ঘাট থেকে তুলে আনা মেয়ে” বলে তাচ্ছিল্য করত এবং তার প্রতিভাকে স্বীকার করতে চাইত না।
৪. পরোক্ষ অনুপ্রেরণা: বিষ্ণুর এই বিরোধিতা ও ষড়যন্ত্র ক্ষিতীশ ও কোনিকে আরও বেশি জেদি করে তুলেছিল। তাকে ভুল প্রমাণ করার জন্যই ক্ষিতীশ কোনিকে চ্যাম্পিয়ন তৈরি করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন।

উপসংহার: সুতরাং, বিষ্ণু ধর চরিত্রটি কাহিনিতে একজন প্রতিপক্ষ বা ভিলেনের ভূমিকা পালন করেছে, যার নেতিবাচক কার্যকলাপ ক্ষিতীশ ও কোনির সংগ্রামকে আরও তীব্র ও মহৎ করে তুলেছে।

১৯. “চ্যাম্পিয়নরা জন্মায়, তাদের তৈরি করা যায় না” – এই ধারণাটিকে ক্ষিতীশ সিংহ কীভাবে ভুল প্রমাণ করেছিলেন?

ভূমিকা: “চ্যাম্পিয়নরা জন্মায়, তাদের তৈরি করা যায় না” (Champions are born, not made) – এটি একটি প্রচলিত ধারণা। কিন্তু ‘কোনি’ উপন্যাসের প্রশিক্ষক ক্ষিতীশ সিংহ এই ধারণাটিকে সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করেছেন।

ধারণা ভুল প্রমাণের প্রক্রিয়া:
১. প্রতিভার আবিষ্কার: ক্ষিতীশ বিশ্বাস করতেন, প্রতিভা লুকিয়ে থাকে এবং তাকে খুঁজে বের করে পরিচর্যা করতে হয়। তিনি গঙ্গার ঘাটের এক সাধারণ, দরিদ্র মেয়ে কোনির মধ্যে সেই সম্ভাবনা খুঁজে পেয়েছিলেন, যাকে কেউ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে কল্পনাও করতে পারেনি।
২. কঠোর প্রশিক্ষণ: ক্ষিতীশ জানতেন, শুধু প্রতিভা থাকলেই হয় না, তাকে সঠিক প্রশিক্ষণ ও কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হয়। তিনি কোনিকে দিনের পর দিন বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কঠিন অনুশীলন করিয়েছেন এবং তার শারীরিক ও মানসিক সক্ষমতা তৈরি করেছেন।
৩. মানসিক গঠন: তিনি শুধু কোনির শরীর তৈরি করেননি, তার মনকেও তৈরি করেছেন। তিনি কোনির মনে জেদ, আত্মবিশ্বাস এবং লড়াই করার মানসিকতা (“ফাইট, কোনি, ফাইট!”) তৈরি করে দিয়েছেন, যা একজন চ্যাম্পিয়নের জন্য অপরিহার্য।
৪. চূড়ান্ত প্রমাণ: শেষ পর্যন্ত কোনি যখন জাতীয় স্তরে চ্যাম্পিয়ন হয়, তখন ক্ষিতীশের দর্শনই জয়ী হয়। তিনি প্রমাণ করেন যে, সঠিক প্রশিক্ষণ, যত্ন এবং অনুপ্রেরণা পেলে একজন সাধারণ মানুষও চ্যাম্পিয়ন হয়ে উঠতে পারে। প্রতিভা জন্মায় না, তাকে তৈরি করতে হয়।

২০. “আমার বুকের ভেতরটা হু-হু করছে, কান্না পাচ্ছে।” – কার, কেন এমন অনুভূতি হয়েছিল? এই অনুভূতির কারণ বিশ্লেষণ করো।

বক্তা ও প্রসঙ্গ: উক্তিটির বক্তা হলেন ক্ষিতীশ সিংহ। জাতীয় প্রতিযোগিতায় রিলে রেসে কোনির অবিশ্বাস্য জয়ের পর যখন সে সকলের প্রশংসায় ভাসছে, তখন ভিড়ের মধ্যে একা দাঁড়িয়ে থাকা ক্ষিতীশের এই অনুভূতি হয়েছিল।

অনুভূতির কারণ বিশ্লেষণ:
ক্ষিতীশের এই অনুভূতি ছিল আনন্দ, কষ্ট এবং এক গভীর আত্মতৃপ্তির মিশ্রণ।
১. সাফল্যের আনন্দ: তাঁর ছাত্রী, তাঁর সৃষ্টি কোনি আজ চ্যাম্পিয়ন। তাঁর এতদিনের পরিশ্রম, ত্যাগ ও স্বপ্ন সার্থক হয়েছে। এই সাফল্যের আনন্দই তাঁর কান্নার একটি কারণ। এটি আনন্দাশ্রু।
২. নিঃসঙ্গতা ও অভিমান: সাফল্যের এই মুহূর্তে সকলেই কোনিকে নিয়ে ব্যস্ত, কিন্তু যে মানুষটি তাকে তৈরি করল, সে আজ প্রচারের আলো থেকে দূরে, একা। এই নিঃসঙ্গতা এবং সাঁতার জগৎ থেকে নির্বাসিত হওয়ার অভিমান তাঁর কান্নার আরেকটি কারণ।
৩. আত্মতৃপ্তি: তিনি প্রমাণ করতে পেরেছেন যে, তিনি ভুল ছিলেন না। তিনি একজন সাধারণ মেয়েকে চ্যাম্পিয়ন তৈরি করতে পেরেছেন। এই আত্মতৃপ্তি ও সার্থকতার অনুভূতি এতটাই গভীর ছিল যে, তা তাঁর চোখে জল এনে দিয়েছিল।

সুতরাং, ক্ষিতীশের এই কান্না শুধুমাত্র দুঃখের বা আনন্দের নয়, এটি একজন স্রষ্টার তাঁর সৃষ্টিকে সফল হতে দেখার এক জটিল ও মহৎ অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ।

Class 10 bengali কোনি question answer

কোনি মতি নন্দী সহায়ক পাঠের প্রশ্ন উত্তর, MCQ, অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : Class 10 bengali কোনি সহায়ক পাঠের প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top