ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৫০টি)
১. নিম্নলিখিত কোনটি জৈব ভঙ্গুর বর্জ্য?
২. একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য হল –
৩. নিম্নলিখিত কোনটি বিষাক্ত বর্জ্য?
৪. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার 3R-এর মধ্যে পড়ে না কোনটি?
৫. কম্পোস্টিং পদ্ধতিতে তৈরি হয় –
৬. একটি ই-বর্জ্যের উদাহরণ হল –
৭. গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান (GAP) কর্মসূচিটি গৃহীত হয় –
৮. বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের প্রক্রিয়াকে বলে –
৯. নিম্নলিখিত কোনটি গ্যাসীয় বর্জ্য?
১০. তেজস্ক্রিয় বর্জ্যের প্রধান উৎস হল –
১১. একটি জৈব অভঙ্গুর বর্জ্য হল –
১২. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রথম ধাপটি হল –
১৩. ফ্লাই অ্যাশ-এর প্রধান উৎস হল –
১৪. স্ক্র্যাবার যন্ত্রটি ব্যবহৃত হয় নিয়ন্ত্রণের জন্য –
১৫. কোন ধরনের বর্জ্য পরিবেশে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে?
১৬. ‘Reduce’ কথাটির অর্থ হল –
১৭. ভরাটকরণ বা ল্যান্ডফিলিং করা হয় মূলত –
১৮. কেঁচোর সাহায্যে জৈব বর্জ্য থেকে সার তৈরির পদ্ধতিকে বলে –
১৯. একটি অ-বিষাক্ত বর্জ্যের উদাহরণ হল –
২০. যে প্রক্রিয়ায় বর্জ্য পদার্থকে গলিয়ে নতুন সামগ্রী তৈরি করা হয়, তাকে বলে –
২১. একটি তরল বর্জ্যের উদাহরণ হল –
২২. বর্জ্য জল পরিশোধনের পদ্ধতি হল –
২৩. পুরোনো টায়ার কোন ধরনের বর্জ্য?
২৪. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের একটি ভূমিকা হল –
২৫. ভাগাড় থেকে উৎপন্ন প্রধান গ্যাসটি হল –
২৬. ‘পুনর্ব্যবহার’ (Reuse) এর একটি উদাহরণ হল –
২৭. ল্যান্ডফিল থেকে যে দূষণ হয়, তা হল –
২৮. একটি কৃষিজ বর্জ্য হল –
২৯. নির্মল গঙ্গা কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য হল –
৩০. পৌরসভার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি আধুনিক পদ্ধতি হল –
৩১. বায়োমেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য উপযুক্ত পদ্ধতি হল –
৩২. 4R-এর চতুর্থ R টি হল –
৩৩. DDT হল এক প্রকার –
৩৪. বর্জ্য জল থেকে ছড়ায় এমন একটি রোগ হল –
৩৫. কোন ধরনের বর্জ্য পরিবেশে দীর্ঘদিন অবিকৃত থাকে?
৩৬. বর্জ্য পদার্থকে útil সম্পদে রূপান্তর করাকে বলে –
৩৭. চর্মশিল্প থেকে নির্গত একটি বিষাক্ত ধাতু হল –
৩৮. একটি গৃহস্থালির বর্জ্য হল –
৩৯. বর্জ্যের পুনর্ব্যবহারের প্রধান উদ্দেশ্য হল –
৪০. যে প্রক্রিয়ায় বর্জ্য পদার্থকে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে ফেলা হয় –
৪১. বর্জ্য পৃথকীকরণে কোন রঙের পাত্রে পচনশীল বর্জ্য রাখা হয়?
৪২. ভাঙা কাচের টুকরো হল একটি –
৪৩. পুরোনো খবরের কাগজ কোন ধরনের বর্জ্য?
৪৪. BOD-এর পুরো নাম হল –
৪৫. বর্জ্য জল পরিশোধনের সময় যে কঠিন পদার্থ থিতিয়ে পড়ে, তাকে বলে –
৪৬. ল্যান্ডফিল থেকে চুঁইয়ে আসা দূষিত তরলকে বলে –
৪৭. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি হল –
৪৮. সবচেয়ে বেশি ই-বর্জ্য উৎপাদনকারী দেশ হল –
৪৯. একটি জৈব গ্যাস হল –
৫০. কোন ধরনের বর্জ্যকে ইউরেনিয়াম খনি থেকে পাওয়া যায়?
খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (SAQ) – মান ১ (৪০টি)
১. বর্জ্য কী?
উত্তর: মানুষের ব্যবহারের পর পরিত্যক্ত বা অপ্রয়োজনীয় কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় পদার্থকে বর্জ্য বলে।
২. 3R কী?
উত্তর: বর্জ্য ব্যবস্থাপনার তিনটি প্রধান নীতি হল 3R – Reduce (কমানো), Reuse (পুনর্ব্যবহার) এবং Recycle (পুনর্নবীকরণ)।
৩. ই-বর্জ্য কাকে বলে?
উত্তর: পরিত্যক্ত বা অকেজো ইলেকট্রনিক সামগ্রী যেমন – মোবাইল, কম্পিউটার, টিভি ইত্যাদিকে ই-বর্জ্য বলে।
৪. ভরাটকরণ বা ল্যান্ডফিল কী?
উত্তর: শহরের কঠিন বর্জ্য পদার্থগুলিকে কোনো নিচু বা পরিত্যক্ত জমিতে ভরাট করার পদ্ধতিকে ভরাটকরণ বা ল্যান্ডফিল বলে।
৫. কম্পোস্টিং কী?
উত্তর: জীবাণু দ্বারা জৈব বর্জ্য পদার্থকে বিয়োজিত করে জৈব সার তৈরি করার পদ্ধতিকে কম্পোস্টিং বলে।
৬. একটি বিষাক্ত বর্জ্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর: পারদ বা সিসা।
৭. একটি জৈব ভঙ্গুর বর্জ্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর: সবজির খোসা বা কাগজ।
৮. স্ক্র্যাবার কী?
উত্তর: শিল্পক্ষেত্রে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবহৃত একটি যন্ত্র যা গ্যাসীয় বর্জ্য থেকে দূষক পদার্থকে পৃথক করে।
৯. ফ্লাই অ্যাশ কী?
উত্তর: তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পোড়ানোর ফলে উৎপন্ন উড়ন্ত ছাইকে ফ্লাই অ্যাশ বলে।
১০. একটি চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্যের নাম লেখো।
উত্তর: ব্যবহৃত তুলো বা ইনজেকশনের সিরিঞ্জ।
১১. লিচেট কী?
উত্তর: ল্যান্ডফিল বা ভাগাড়ে জমা বর্জ্যের উপর বৃষ্টির জল চুঁইয়ে নীচে যাওয়ার সময় যে বিষাক্ত তরল পদার্থ তৈরি হয়, তাকে লিচেট বলে।
১২. ভস্মীকরণ কাকে বলে?
উত্তর: যে পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থকে উচ্চ তাপমাত্রায় (৮০০°-১০০০° সে) পুড়িয়ে ছাইয়ে পরিণত করা হয়, তাকে ভস্মীকরণ বা ইনসিনারেশন বলে।
১৩. একটি গ্যাসীয় বর্জ্যের নাম লেখো।
উত্তর: কার্বন মনোক্সাইড (CO)।
১৪. তেজস্ক্রিয় বর্জ্য কী?
উত্তর: পারমাণবিক কেন্দ্র, চিকিৎসাক্ষেত্র ইত্যাদি থেকে নির্গত যে সমস্ত বর্জ্য থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয়, তাদের তেজস্ক্রিয় বর্জ্য বলে।
১৫. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সংজ্ঞা দাও।
উত্তর: যে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতিতে বর্জ্যের পরিমাণ হ্রাস, সংগ্রহ, পৃথকীকরণ, পরিবহন এবং সঠিক উপায়ে তার নিষ্কাশন ও প্রক্রিয়াকরণ করা হয়, তাকে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বলে।
১৬. একটি জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর: প্লাস্টিক বা পলিথিন।
১৭. স্যানিটারি ল্যান্ডফিল কী?
উত্তর: যে স্বাস্থ্যসম্মত ও বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে বর্জ্য ভরাটকরণের সময় দূষণ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নেওয়া হয়, তাকে স্যানিটারি ল্যান্ডফিল বলে।
১৮. বর্জ্য পৃথকীকরণ কেন প্রয়োজন?
উত্তর: বর্জ্যের সঠিক পুনর্ব্যবহার ও পুনর্নবীকরণের জন্য বর্জ্য পৃথকীকরণ প্রয়োজন।
১৯. একটি তরল শিল্প বর্জ্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর: চর্মশিল্প থেকে নির্গত দূষিত জল।
২০. ‘পুনর্নবীকরণ’ (Recycle) বলতে কী বোঝো?
উত্তর: যে পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে নতুন সামগ্রী তৈরি করা হয়, তাকে পুনর্নবীকরণ বলে।
২১. গঙ্গা অ্যাকশন প্ল্যান (GAP)-এর প্রধান উদ্দেশ্য কী?
উত্তর: গঙ্গা নদীকে দূষণমুক্ত করা।
২২. স্লাজ কী?
উত্তর: নর্দমার বর্জ্য জল পরিশোধনের সময় যে কঠিন, কাদার মতো পদার্থ থিতিয়ে পড়ে, তাকে স্লাজ বলে।
২৩. কোন ধাতু মিনামাটা রোগের জন্য দায়ী?
উত্তর: পারদ।
২৪. একটি কৃষিজ বর্জ্যের নাম লেখো।
উত্তর: ধানের খড় বা তুষ।
২৫. ভার্মিকম্পোস্টিং কী?
উত্তর: কেঁচোর সাহায্যে জৈব বর্জ্যকে বিয়োজিত করে সার তৈরির পদ্ধতিকে ভার্মিকম্পোস্টিং বলে।
২৬. ‘পুনর্ব্যবহার’ (Reuse) বলতে কী বোঝো?
উত্তর: কোনো সামগ্রীকে তার কার্যকারিতা শেষ হওয়ার পর ফেলে না দিয়ে আবার অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করাকে পুনর্ব্যবহার বলে।
২৭. একটি নিষ্ক্রিয় বা জড় বর্জ্যের উদাহরণ দাও।
উত্তর: ভাঙা কাচ বা ইটের টুকরো।
২৮. পরিবেশের উপর বর্জ্যের একটি প্রভাব উল্লেখ করো।
উত্তর: বর্জ্য পদার্থ জল, বায়ু ও মাটি দূষিত করে।
২৯. কোন রোগের জন্য ক্যাডমিয়াম দায়ী?
উত্তর: ইতাই-ইতাই রোগ।
৩০. পৌরসভার বর্জ্যকে কী বলা হয়?
উত্তর: মিউনিসিপ্যাল সলিড ওয়েস্ট (MSW)।
৩১. বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে কোন গ্যাস উৎপন্ন হয়?
উত্তর: মূলত মিথেন গ্যাস।
৩২. বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস (Reduce) কীভাবে করা যায়?
উত্তর: প্রয়োজনের অতিরিক্ত সামগ্রী না কিনে এবং टिकाউ জিনিস ব্যবহার করে।
৩৩. ইউট্রোফিকেশন কী?
উত্তর: জলাশয়ে অতিরিক্ত পুষ্টির (যেমন – ডিটারজেন্ট থেকে ফসফেট) কারণে শৈবালের বৃদ্ধি ঘটে জলের অক্সিজেন কমে যাওয়ার ঘটনাকে ইউট্রোফিকেশন বলে।
৩৪. একটি তেজস্ক্রিয় মৌলের নাম লেখো।
উত্তর: ইউরেনিয়াম বা প্লুটোনিয়াম।
৩৫. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভরাটকরণের একটি অসুবিধা লেখো।
উত্তর: ভরাটকরণ থেকে লিচেট ভূগর্ভস্থ জলকে দূষিত করে।
৩৬. হাসপাতালে ব্যবহৃত সুচ, সিরিঞ্জ কোন পাত্রে ফেলা উচিত?
উত্তর: লাল রঙের পাত্রে।
৩৭. বর্জ্য থেকে সম্পদ সৃষ্টির একটি উদাহরণ দাও।
উত্তর: জৈব বর্জ্য থেকে কম্পোস্ট সার তৈরি।
৩৮. বর্জ্য পোড়ালে কোন বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়?
উত্তর: ডাইঅক্সিন ও ফিউরান।
৩৯. কোন পদ্ধতিতে কঠিন বর্জ্যের আয়তন সবচেয়ে বেশি কমে যায়?
উত্তর: ভস্মীকরণ বা ইনসিনারেশন পদ্ধতিতে।
৪০. namami Gange প্রকল্পটি কবে শুরু হয়?
উত্তর: ২০১৪ সালে।
গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ২ (২০টি)
১. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর: ১. পরিবেশকে দূষণমুক্ত রাখা এবং জনস্বাস্থ্য রক্ষা করা। ২. প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয় কমানো এবং বর্জ্যকে সম্পদে পরিণত করা।
২. জৈব ভঙ্গুর ও জৈব অভঙ্গুর বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: জৈব ভঙ্গুর: এই বর্জ্য জীবাণু দ্বারা সহজে বিয়োজিত হয়ে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। যেমন – সবজির খোসা। জৈব অভঙ্গুর: এই বর্জ্য সহজে বিয়োজিত হয় না এবং পরিবেশে দীর্ঘদিন অবিকৃত থাকে। যেমন – প্লাস্টিক।
৩. 3R বা 4R পদ্ধতির গুরুত্ব কী?
উত্তর: 3R বা 4R পদ্ধতির মাধ্যমে বর্জ্যের পরিমাণ কমানো (Reduce), পুনর্ব্যবহার (Reuse) ও পুনর্নবীকরণ (Recycle) করা সম্ভব হয়। এর ফলে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ কমে এবং পরিবেশ দূষণও হ্রাস পায়।
৪. ভরাটকরণ (Landfill) পদ্ধতির দুটি সুবিধা ও দুটি অসুবিধা লেখো।
উত্তর: সুবিধা: ১. এটি একটি সহজ ও কম ব্যয়বহুল পদ্ধতি। ২. ভরাট করা জমিকে পরে পার্ক বা খেলার মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা যায়। অসুবিধা: ১. এটি প্রচুর জমির প্রয়োজন হয়। ২. এখান থেকে লিচেট ভূগর্ভস্থ জলকে দূষিত করে।
৫. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থীদের দুটি ভূমিকা লেখো।
উত্তর: ১. নিজেদের স্কুল ও বাড়িতে বর্জ্য পৃথকীকরণের ব্যবস্থা করা এবং অন্যদেরও উৎসাহিত করা। ২. পোস্টার, নাটক বা আলোচনার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মধ্যে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
৬. ই-বর্জ্য বিপজ্জনক কেন?
উত্তর: ই-বর্জ্যের মধ্যে সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়াম, বেরিলিয়াম-এর মতো অনেক বিষাক্ত ও ক্ষতিকারক পদার্থ থাকে। এগুলি পরিবেশে মিশলে জল, বায়ু ও মাটি দূষিত হয় এবং মানুষের স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করে।
৭. কম্পোস্টিং ও ভার্মিকম্পোস্টিং-এর পার্থক্য কী?
উত্তর: কম্পোস্টিং: এটি জীবাণু (ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক) দ্বারা জৈব বর্জ্যকে বিয়োজিত করে সার তৈরির পদ্ধতি। ভার্মিকম্পোস্টিং: এটি কেঁচোর সাহায্যে জৈব বর্জ্যকে বিয়োজিত করে সার তৈরির পদ্ধতি। ভার্মিকম্পোস্টিং দ্রুত হয় এবং এর সারের গুণমান بهتر।
৮. বর্জ্য পৃথকীকরণ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: বর্জ্য পদার্থকে তার প্রকৃতি অনুসারে (যেমন – জৈব ভঙ্গুর, জৈব অভঙ্গুর, বিষাক্ত, পুনর্নবীকরণযোগ্য ইত্যাদি) আলাদা আলাদা করে সংগ্রহ করার পদ্ধতিকে বর্জ্য পৃথকীকরণ বলে। এটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।
৯. চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য কীভাবে শোধন করা হয়?
উত্তর: চিকিৎসা সংক্রান্ত বর্জ্য অত্যন্ত সংক্রামক হওয়ায় এটিকে বিশেষ পদ্ধতিতে শোধন করা হয়। প্রধানত ইনসিনারেশন বা ভস্মীকরণ পদ্ধতিতে উচ্চ তাপমাত্রায় পুড়িয়ে জীবাণুমুক্ত করা হয়। এছাড়া অটোক্লেভিং (উচ্চ চাপে বাষ্প দিয়ে শোধন) পদ্ধতিও ব্যবহার করা হয়।
১০. পুনর্ব্যবহার ও পুনর্নবীকরণের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: পুনর্ব্যবহার (Reuse): কোনো বস্তুকে তার আকৃতির পরিবর্তন না ঘটিয়ে আবার ব্যবহার করা। যেমন – কাচের বোতল পরিষ্কার করে আবার ব্যবহার করা। পুনর্নবীকরণ (Recycle): বর্জ্য বস্তুকে গলিয়ে বা প্রক্রিয়াকরণ করে নতুন কাঁচামাল তৈরি করা। যেমন – পুরোনো কাগজ থেকে মণ্ড তৈরি করে নতুন কাগজ তৈরি।
১১. ফ্লাই অ্যাশের দুটি ব্যবহার লেখো।
উত্তর: ১. ফ্লাই অ্যাশ সিমেন্টের সঙ্গে মিশিয়ে ইট ও বিভিন্ন নির্মাণ সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ২. এটি রাস্তা নির্মাণ এবং নিচু জমি ভরাট করার কাজেও ব্যবহৃত হয়।
১২. পরিবেশের উপর বর্জ্যের দুটি প্রভাব লেখো।
উত্তর: ১. জলদূষণ: বর্জ্য পদার্থ থেকে নির্গত বিষাক্ত রাসায়নিক ও লিচেট ভূগর্ভস্থ ও ভূপৃষ্ঠের জলকে দূষিত করে। ২. বায়ুদূষণ: বর্জ্য পোড়ানোর ফলে এবং ভাগাড় থেকে মিথেন, কার্বন মনোক্সাইডের মতো ক্ষতিকারক গ্যাস নির্গত হয়ে বায়ুকে দূষিত করে।
১৩. তেজস্ক্রিয় বর্জ্যকে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়?
উত্তর: তেজস্ক্রিয় বর্জ্য অত্যন্ত বিপজ্জনক হওয়ায় এটিকে বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। এই বর্জ্যকে সিসার পাত্রে ভরে কংক্রিটের মোটা দেওয়ালযুক্ত কক্ষে বা মাটির অনেক গভীরে পুঁতে রাখা হয় যাতে তেজস্ক্রিয়তা পরিবেশে ছড়িয়ে পড়তে না পারে।
১৪. স্ক্র্যাবারের কার্যনীতি কী?
উত্তর: স্ক্র্যাবার যন্ত্রের মধ্যে দিয়ে কলকারখানার দূষিত গ্যাসীয় বর্জ্যকে চালনা করা হয়। যন্ত্রের মধ্যে থাকা জল বা চুনজলের স্প্রে গ্যাসীয় দূষক পদার্থগুলিকে শোষণ বা অধঃক্ষিপ্ত করে। এর ফলে বিশুদ্ধ গ্যাস চিমনি দিয়ে বেরিয়ে যায় এবং দূষক পদার্থ নীচে জমা হয়।
১৫. বিষাক্ত ও অ-বিষাক্ত বর্জ্যের পার্থক্য লেখো।
উত্তর: বিষাক্ত বর্জ্য: যে বর্জ্য পরিবেশ ও জীবজগতের জন্য ক্ষতিকারক এবং রোগ সৃষ্টি করতে পারে। যেমন – পারদ, সিসা। অ-বিষাক্ত বর্জ্য: যে বর্জ্য সাধারণত পরিবেশ বা জীবজগতের কোনো ক্ষতি করে না। যেমন – সবজির খোসা, কাগজ।
১৬. গ্যাসীয় বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের দুটি উপায় কী?
উত্তর: ১. কলকারখানার চিমনিতে ফিল্টার বা স্ক্র্যাবার যন্ত্র বসিয়ে দূষক পদার্থগুলিকে বাতাসে মেশার আগে আটকে দেওয়া। ২. যানবাহন ও শিল্পে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার করে ক্ষতিকারক গ্যাসের নির্গমন কমানো।
১৭. ‘Waste to Energy’ বা বর্জ্য থেকে শক্তি বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: যে পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থকে, বিশেষত কঠিন পৌর বর্জ্যকে, ভস্মীকরণ বা অন্য কোনো প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পুড়িয়ে তাপশক্তি উৎপাদন করা হয় এবং সেই তাপকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা হয়, তাকে ‘Waste to Energy’ বা বর্জ্য থেকে শক্তি বলে।
১৮. নিষ্কাশন (Effluent Treatment) কী?
উত্তর: কলকারখানা বা গৃহস্থালি থেকে নির্গত দূষিত তরল বর্জ্যকে (Effluent) বিভিন্ন ভৌত, রাসায়নিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শোধন করে তাকে দূষণমুক্ত করার পদ্ধতিকে নিষ্কাশন বা তরল বর্জ্য পরিশোধন বলে।
১৯. বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস (Reduce) বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস বা Reduce হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। এর অর্থ হল বর্জ্য সৃষ্টির পরিমাণকেই কমিয়ে আনা। যেমন – প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস না কেনা, প্যাকেজিং-এর ব্যবহার কমানো এবং टिकाউ সামগ্রী ব্যবহার করা।
২০. ভাগাড় বা ডাম্পিং গ্রাউন্ডের দুটি সমস্যা লেখো।
উত্তর: ১. ভাগাড় থেকে দুর্গন্ধ ছড়ায় এবং মশা-মাছির উপদ্রব বাড়ে, যা স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর। ২. ভাগাড় থেকে উৎপন্ন বিষাক্ত লিচেট ভূগর্ভস্থ জলকে দূষিত করে।
ঘ) সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৩ (২০টি)
১. বর্জ্য ব্যবস্থাপনার বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি কী কী?
উত্তর: বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান পদ্ধতিগুলি হল:
ক) বর্জ্যের পরিমাণগত হ্রাস (Reduce): অপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর ব্যবহার কমিয়ে বর্জ্য উৎপাদন কমানো।
খ) পুনর্ব্যবহার (Reuse): কোনো বস্তুকে ফেলে না দিয়ে আবার অন্য কোনো কাজে লাগানো।
গ) পুনর্নবীকরণ (Recycle): বর্জ্যকে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করে নতুন জিনিস তৈরি করা।
ঘ) ভরাটকরণ (Landfill): নিচু জমিতে বর্জ্য ফেলে ভরাট করা।
ঙ) ভস্মীকরণ (Incineration): বর্জ্যকে পুড়িয়ে ছাই করা এবং শক্তি উৎপাদন করা।
চ) কম্পোস্টিং: জৈব বর্জ্যকে বিয়োজিত করে সার তৈরি করা।
২. পরিবেশের উপর বর্জ্যের তিনটি প্রধান প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: ১. জলদূষণ: শিল্প ও গৃহস্থালির বর্জ্য, কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত কীটনাশক এবং ভাগাড় থেকে নির্গত বিষাক্ত লিচেট নদী, হ্রদ ও ভূগর্ভস্থ জলের সঙ্গে মিশে জলকে দূষিত করে। এর ফলে জলজ প্রাণীর মৃত্যু ঘটে এবং জলবাহিত রোগ ছড়ায়।
২. বায়ুদূষণ: বর্জ্য পোড়ানোর ফলে কার্বন মনোক্সাইড, ডাইঅক্সিনের মতো বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে মেশে। ভাগাড় থেকে উৎপন্ন মিথেন গ্যাস একটি অন্যতম গ্রিনহাউস গ্যাস।
৩. মৃত্তিকা দূষণ: প্লাস্টিক, বিষাক্ত রাসায়নিক, ভারী ধাতু ইত্যাদি মাটিতে মিশে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে এবং মাটির স্বাভাবিক গঠনকে পরিবর্তন করে দেয়।
৩. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় 3R পদ্ধতির ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর: বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় 3R পদ্ধতিটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:
১. পরিমাণগত হ্রাস (Reduce): এটি বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রথম ও শ্রেষ্ঠ ধাপ। এর মাধ্যমে বর্জ্য তৈরির পরিমাণই কমিয়ে আনা হয়, ফলে ব্যবস্থাপনার চাপ কমে। যেমন – প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের পরিবর্তে চটের ব্যাগ ব্যবহার করা।
২. পুনর্ব্যবহার (Reuse): এর মাধ্যমে কোনো সামগ্রীকে ফেলে না দিয়ে বারবার ব্যবহার করা হয়, ফলে নতুন সামগ্রী উৎপাদনের প্রয়োজন কমে এবং সম্পদ বাঁচে। যেমন – কাচের বোতলকে ফুলদানি হিসেবে ব্যবহার করা।
৩. পুনর্নবীকরণ (Recycle): এর মাধ্যমে বর্জ্য পদার্থকে নতুন সম্পদে পরিণত করা হয়। যেমন – পুরোনো কাগজ থেকে নতুন কাগজ তৈরি। এটি প্রাকৃতিক সম্পদের উপর চাপ কমায় এবং দূষণ হ্রাস করে।
৪. বিভিন্ন প্রকার বর্জ্যের শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর: বর্জ্যকে বিভিন্ন ভিত্তিতে শ্রেণিবিভাগ করা যায়:
ক) প্রকৃতির ভিত্তিতে:
১. কঠিন বর্জ্য: যেমন – প্লাস্টিক, কাগজ, ভাঙা কাচ।
২. তরল বর্জ্য: যেমন – নর্দমার জল, কারখানার দূষিত জল।
৩. গ্যাসীয় বর্জ্য: যেমন – ধোঁয়া, কার্বন মনোক্সাইড।
খ) বিষক্রিয়ার ভিত্তিতে:
১. বিষাক্ত বর্জ্য: যেমন – পারদ, সিসা, কীটনাশক।
২. অ-বিষাক্ত বর্জ্য: যেমন – সবজির খোসা, ধানের খড়।
গ) বিয়োজনের ভিত্তিতে:
১. জৈব ভঙ্গুর: যা সহজে মাটির সঙ্গে মেশে। যেমন – কাগজ, পাট।
২. জৈব অভঙ্গুর: যা সহজে মেশে না। যেমন – প্লাস্টিক, পলিথিন।
৫. কম্পোস্টিং পদ্ধতির সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর: সুবিধা:
১. এটি একটি পরিবেশবান্ধব পদ্ধতি, কারণ জৈব বর্জ্যকে সম্পদে (সার) পরিণত করা হয়।
২. এই পদ্ধতিতে তৈরি সার মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমায়।
৩. এটি ভাগাড় বা ল্যান্ডফিলের উপর চাপ কমাতে সাহায্য করে।
অসুবিধা:
১. এই পদ্ধতিতে শুধুমাত্র জৈব ভঙ্গুর বর্জ্যই ব্যবহার করা যায়।
২. কম্পোস্টিং প্রক্রিয়াটি সময়সাপেক্ষ।
৩. সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে এখান থেকে দুর্গন্ধ ছড়াতে পারে এবং মশা-মাছির উপদ্রব বাড়তে পারে।
৬. স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ও সাধারণ ভাগাড়ের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ১. পদ্ধতি: স্যানিটারি ল্যান্ডফিল একটি বিজ্ঞানসম্মত ও স্বাস্থ্যসম্মত পদ্ধতি। সাধারণ ভাগাড় হল একটি অবৈজ্ঞানিক ও অস্বাস্থ্যকর পদ্ধতি।
২. দূষণ নিয়ন্ত্রণ: স্যানিটারি ল্যান্ডফিলে লিচেট সংগ্রহ ও পরিশোধনের ব্যবস্থা থাকে এবং গ্যাস নির্গমনের জন্য পাইপ বসানো থাকে। সাধারণ ভাগাড়ে এই ধরনের কোনো ব্যবস্থা থাকে না।
৩. পরিবেশগত প্রভাব: স্যানিটারি ল্যান্ডফিল পরিবেশ দূষণ অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে। সাধারণ ভাগাড় জল, বায়ু ও মাটি দূষণের অন্যতম কারণ।
৭. তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতিগুলি লেখো।
উত্তর: তরল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার প্রধান পদ্ধতি হল নিষ্কাশন বা পরিশোধন (Effluent Treatment)। এর বিভিন্ন ধাপগুলি হল:
ক) প্রাথমিক পরিশোধন: এই ধাপে ছাঁকনি ও থিতানো পদ্ধতির মাধ্যমে ভাসমান কঠিন বস্তু ও তৈলাক্ত পদার্থগুলিকে আলাদা করা হয়।
খ) গৌণ পরিশোধন: এই ধাপে জীবাণুর সাহায্যে জৈব পদার্থগুলিকে বিয়োজিত করা হয় এবং স্লাজকে পৃথক করা হয়।
গ) প্রগৌণ পরিশোধন: এই ধাপে ক্লোরিনেশন বা অন্য রাসায়নিক পদ্ধতির মাধ্যমে জলকে সম্পূর্ণ জীবাণুমুক্ত করে ব্যবহারের উপযুক্ত করে তোলা হয়।
৮. জৈব ও অজৈব বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য উদাহরণসহ লেখো।
উত্তর: জৈব বর্জ্য (Organic Waste): যে সমস্ত বর্জ্য উদ্ভিদ বা প্রাণীজ উৎস থেকে আসে এবং জীবাণু দ্বারা সহজে বিয়োজিত হয়, তাদের জৈব বর্জ্য বলে। এগুলি পচনশীল প্রকৃতির। যেমন – ফলের খোসা, পাতা, মাছের আঁশ, খাবারের উচ্ছিষ্ট।
অজৈব বর্জ্য (Inorganic Waste): যে সমস্ত বর্জ্য উদ্ভিদ বা প্রাণীজ উৎস থেকে আসে না এবং জীবাণু দ্বারা সহজে বিয়োজিত হয় না, তাদের অজৈব বর্জ্য বলে। যেমন – প্লাস্টিক, কাচ, ধাতব পদার্থ, পলিথিন।
৯. ভাগীরথী-হুগলি নদীর উপর বর্জ্যের প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: ভাগীরথী-হুগলি নদীর উপর বর্জ্যের প্রভাব অত্যন্ত মারাত্মক:
১. নদীর দুই তীরে অবস্থিত অসংখ্য কলকারখানা থেকে অপরিশোধিত তরল বর্জ্য সরাসরি নদীতে মেশায় জলের গুণমান নষ্ট হচ্ছে এবং জলজ প্রাণী মারা যাচ্ছে।
২. কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী শহরগুলির নিকাশি নালার জল নদীতে মেশায় জলের BOD (Biochemical Oxygen Demand) বেড়ে যাচ্ছে, যা জলকে দূষিত করছে।
৩. প্রতিমা নিরঞ্জন, কঠিন বর্জ্য নিক্ষেপ ইত্যাদি কারণে নদীর নাব্যতা কমছে এবং জল দূষিত হচ্ছে।
১০. চিকিৎসা বর্জ্যের সঠিক ব্যবস্থাপনার গুরুত্ব কী?
উত্তর: চিকিৎসা বর্জ্য (ব্যবহৃত সিরিঞ্জ, ব্যান্ডেজ, রক্তমাখা তুলো, রাসায়নিক) অত্যন্ত সংক্রামক ও বিষাক্ত। এর সঠিক ব্যবস্থাপনা না হলে:
১. হেপাটাইটিস-বি, HIV-এর মতো মারাত্মক রোগ ছড়াতে পারে।
২. এই বর্জ্য পরিবেশে মিশলে জল, বায়ু ও মাটি দূষিত হয়।
৩. বর্জ্য সংগ্রহকারী কর্মীদের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকে।
তাই জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ রক্ষার জন্য চিকিৎসা বর্জ্যের সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত ব্যবস্থাপনা (যেমন – ভস্মীকরণ) অত্যন্ত জরুরি।
১১. কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি হিসেবে ভরাটকরণের ভূমিকা কী?
উত্তর: ভরাটকরণ বা ল্যান্ডফিল কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি প্রচলিত পদ্ধতি।
১. ভূমিকা: এই পদ্ধতিতে শহরের বিপুল পরিমাণ কঠিন বর্জ্যকে একটি নির্দিষ্ট নিচু জায়গায় জমা করে তার নিষ্পত্তি করা হয়। এটি একটি সহজ ও কম খরচের পদ্ধতি।
২. উপযোগিতা: যে সমস্ত বর্জ্যকে পুনর্ব্যবহার বা পুনর্নবীকরণ করা যায় না, সেগুলির চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য এই পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়। ভরাট করা জমিকে পরবর্তীকালে পার্ক, খেলার মাঠ বা সবুজায়নের কাজে ব্যবহার করা যায়।
৩. সীমাবদ্ধতা: তবে এই পদ্ধতির কিছু সমস্যাও আছে, যেমন – জমির অভাব, দূষণ (লিচেট, মিথেন গ্যাস) ইত্যাদি।
১২. বর্জ্য থেকে সম্পদ পুনরুদ্ধার (Recovery) বলতে কী বোঝায়? উদাহরণ দাও।
উত্তর: বর্জ্য থেকে সম্পদ পুনরুদ্ধার হল বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি আধুনিক ধারণা (4R-এর চতুর্থ R)। এই পদ্ধতিতে বর্জ্য পদার্থকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবহারযোগ্য শক্তিতে বা সম্পদে রূপান্তরিত করা হয়। এর মূল উদ্দেশ্য হল বর্জ্যকে ফেলে না দিয়ে তার থেকে অর্থনৈতিক মূল্য তৈরি করা।
উদাহরণ:
১. পৌরসভার কঠিন বর্জ্যকে পুড়িয়ে (ভস্মীকরণ) তাপশক্তি উৎপাদন করা এবং সেই তাপকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ তৈরি করা।
২. জৈব বর্জ্য থেকে বায়োগ্যাস প্ল্যান্টের মাধ্যমে মিথেন গ্যাস উৎপাদন করা, যা রান্নার কাজে বা বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
১৩. মানব স্বাস্থ্যের উপর বর্জ্যের তিনটি ক্ষতিকর প্রভাব লেখো।
উত্তর: মানব স্বাস্থ্যের উপর বর্জ্যের তিনটি ক্ষতিকর প্রভাব হল:
১. জলবাহিত রোগের বিস্তার: বর্জ্য মিশ্রিত দূষিত জল পান করলে কলেরা, টাইফয়েড, জন্ডিস, আমাশয়ের মতো মারাত্মক রোগ ছড়ায়।
২. শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা: বর্জ্য পোড়ানোর ফলে বা ভাগাড় থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস (যেমন – কার্বন মনোক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড) ফুসফুসের রোগ, হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টের কারণ হয়।
৩. বিষাক্ত পদার্থের প্রভাব: ই-বর্জ্য বা শিল্প বর্জ্যে থাকা সিসা, পারদ, ক্যাডমিয়ামের মতো ভারী ধাতু শরীরে প্রবেশ করে স্নায়ুতন্ত্র, কিডনি ও মস্তিষ্কের মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
১৪. কৃষিক্ষেত্রে বর্জ্য কীভাবে তৈরি হয়? এর ব্যবস্থাপনার উপায় কী?
উত্তর: বর্জ্য সৃষ্টির উৎস: কৃষিক্ষেত্রে ফসল কাটার পর পড়ে থাকা গাছের অংশ (খড়, নাড়া, তুষ), আখের ছিবড়ে, পশুপালনের ফলে সৃষ্ট গোবর ইত্যাদি হল প্রধান বর্জ্য। এছাড়া ব্যবহৃত কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের প্যাকেটও কৃষিজ বর্জ্যের অন্তর্গত।
ব্যবস্থাপনার উপায়:
১. ফসলের অবশিষ্টাংশ ও গোবরকে কম্পোস্টিং বা ভার্মিকম্পোস্টিং-এর মাধ্যমে জৈব সারে পরিণত করা।
২. বায়োগ্যাস প্ল্যান্টে ব্যবহার করে শক্তি উৎপাদন করা।
৩. কীটনাশকের পাত্রগুলিকে যত্রতত্র না ফেলে নিরাপদে নিষ্পত্তি করা।
১৫. কঠিন, তরল ও গ্যাসীয় বর্জ্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: কঠিন বর্জ্য: এগুলি কঠিন অবস্থায় থাকে। যেমন – প্লাস্টিক, কাগজ, ধাতব পদার্থ। এগুলিকে মূলত ভরাটকরণ বা ভস্মীকরণ করা হয়।
তরল বর্জ্য: এগুলি তরল অবস্থায় থাকে। যেমন – নর্দমার জল, শিল্পজাত দূষিত জল। এগুলিকে নিষ্কাশন বা পরিশোধনের মাধ্যমে শোধন করা হয়।
গ্যাসীয় বর্জ্য: এগুলি গ্যাসীয় অবস্থায় থাকে। যেমন – যানবাহনের ধোঁয়া, কারখানার গ্যাস। এগুলিকে স্ক্র্যাবার বা ফিল্টারের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
১৬. ‘পুনর্নবীকরণযোগ্য’ ও ‘পুনর্নবীকরণ-অযোগ্য’ বর্জ্যের পার্থক্য কী?
উত্তর: পুনর্নবীকরণযোগ্য বর্জ্য (Recyclable Waste): যে সমস্ত বর্জ্য পদার্থকে প্রক্রিয়াকরণের মাধ্যমে পুনরায় নতুন কাঁচামাল বা সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা যায়। যেমন – কাগজ, কাচ, লোহা, অ্যালুমিনিয়াম।
পুনর্নবীকরণ-অযোগ্য বর্জ্য (Non-recyclable Waste): যে সমস্ত বর্জ্য পদার্থকে সহজে বা লাভজনকভাবে নতুন সামগ্রীতে পরিণত করা যায় না। যেমন – খাবারের উচ্ছিষ্ট (যদিও এটি কম্পোস্টযোগ্য), চিকিৎসা সংক্রান্ত কিছু বর্জ্য, মিশ্র প্লাস্টিক।
১৭. বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় ভস্মীকরণের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি কী কী?
উত্তর: সুবিধা:
১. এই পদ্ধতিতে বর্জ্যের আয়তন প্রায় ৯০% কমে যায়, ফলে ভরাটকরণের জন্য কম জমির প্রয়োজন হয়।
২. বর্জ্য পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব।
৩. হাসপাতাল ও বিষাক্ত বর্জ্যের জীবাণু ধ্বংস করার জন্য এটি একটি কার্যকর পদ্ধতি।
অসুবিধা:
১. এই পদ্ধতিতে বায়ুদূষণ ঘটে, কারণ ডাইঅক্সিন, ফিউরানের মতো বিষাক্ত গ্যাস নির্গত হয়।
২. ভস্মীকরণ চুল্লি স্থাপন ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক বেশি।
৩. এর ফলে উৎপন্ন ছাই (Fly Ash) নিজেও একটি সমস্যাজনক বর্জ্য।
১৮. জৈব গ্যাস উৎপাদনের প্রক্রিয়াটি সংক্ষেপে লেখো।
উত্তর: জৈব গ্যাস প্ল্যান্টে গবাদি পশুর মল, কৃষিজ বর্জ্য, পচা শাকসবজি ইত্যাদি জৈব পদার্থগুলিকে একটি বায়ুরোধী ট্যাঙ্কে (ডাইজেস্টার) রাখা হয়। অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে অবায়বীয় জীবাণুরা এই বর্জ্যকে পচিয়ে বা বিয়োজিত করে। এই বিয়োজনের ফলে মূলত মিথেন (৫০-৭০%) এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস উৎপন্ন হয়, যা জৈব গ্যাস বা বায়োগ্যাস নামে পরিচিত। অবশিষ্ট পদার্থটি উৎকৃষ্ট জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
১৯. বর্জ্য জল পরিশোধনের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর: বর্জ্য জল পরিশোধনের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম:
১. অপরিশোধিত বর্জ্য জল নদী বা হ্রদে মিশলে জলকে দূষিত করে এবং জলজ বাস্তুতন্ত্রকে ধ্বংস করে। পরিশোধন এই দূষণ রোধ করে।
২. দূষিত জল থেকে কলেরা, টাইফয়েডের মতো মারাত্মক জলবাহিত রোগ ছড়ায়। পরিশোধন জনস্বাস্থ্য রক্ষায় সাহায্য করে।
৩. পরিশোধিত জলকে সেচ, শিল্প বা অন্য কোনো কাজে পুনরায় ব্যবহার করা সম্ভব, যা জলের সংকট কমাতে সাহায্য করে।
২০. তোমার বাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তুমি কী কী পদক্ষেপ নেবে?
উত্তর: আমার বাড়ির বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য আমি নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেব:
১. পৃথকীকরণ: প্রথমেই পচনশীল (রান্নাঘরের বর্জ্য) এবং অপচনশীল (প্লাস্টিক, কাচ) বর্জ্যকে আলাদা আলাদা পাত্রে রাখব।
২. কম্পোস্টিং: রান্নাঘরের পচনশীল বর্জ্যগুলিকে একটি নির্দিষ্ট জায়গায় গর্ত করে কম্পোস্ট সার তৈরি করব, যা বাগানে ব্যবহার করা যাবে।
৩. পুনর্নবীকরণ: পুরোনো খবরের কাগজ, কাচের বোতল, প্লাস্টিকের সামগ্রী ইত্যাদি পুনর্নবীকরণের জন্য স্থানীয় সংগ্রাহকদের কাছে বিক্রি করব।
৪. পরিমাণ হ্রাস: প্লাস্টিকের ক্যারিব্যাগের পরিবর্তে চটের ব্যাগ ব্যবহার করব এবং অপ্রয়োজনীয় জিনিস কেনা থেকে বিরত থাকব।
বর্জ্য ব্যবস্থাপনা class 10 MCQ, অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : Class 10 Geography বর্জ্য ব্যবস্থাপনা Question Answer