ভারতের জলবায়ু Class 10
ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৭০টি)
১. ভারতে বর্ষাকালে যে বায়ু প্রবাহিত হয়, তা হল –
২. ভারতের জলবায়ু প্রধানত –
৩. ভারতের সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থান হল –
৪. উত্তর-পশ্চিম ভারতে গ্রীষ্মকালে যে ধূলিঝড় দেখা যায়, তাকে বলে –
৫. আম্রবৃষ্টি দেখা যায় –
৬. ভারতে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় –
৭. ভারতের শুষ্কতম অঞ্চলটি হল –
৮. ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রক হল –
৯. ‘মৌসুমী বিস্ফোরণ’ দেখা যায় –
১০. উত্তর ভারতে গ্রীষ্মকালে প্রবাহিত উষ্ণ বায়ুকে বলে –
১১. ভারতে শীতকালে যে বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টি হয়, তা হল –
১২. ভারতে এক বছরে কটি প্রধান ঋতু দেখা যায়?
১৩. কালবৈশাখী ঝড় অসমে যে নামে পরিচিত, তা হল –
১৪. ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল হল –
১৫. এল নিনোর প্রভাবে ভারতে –
১৬. মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন কাল হল –
১৭. ভারতের শীতলতম স্থান হল –
১৮. ভারতের জলবায়ুকে কোপেন কী নামে চিহ্নিত করেছেন?
১৯. ‘আশ্বিনের ঝড়’ দেখা যায় –
২০. ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের প্রধান কারণ কোনটি?
২১. পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয় –
২২. ভারতের উষ্ণতম মাস হল –
২৩. ভারতে প্রথম মৌসুমী বায়ু প্রবেশ করে –
২৪. ভারতের কোন উপকূলে বছরে দুবার বৃষ্টিপাত হয়?
২৫. ‘কফি বৃষ্টি’ দেখা যায় –
২৬. ভারতের একটি শীতল মরুভূমির উদাহরণ হল –
২৭. ‘মৌসিম’ শব্দটি হল একটি –
২৮. মুম্বাইয়ের তুলনায় পুনেতে বৃষ্টিপাত কম হয় কারণ –
২৯. ভারতের জলবায়ুতে জেট বায়ুর প্রভাব প্রথম লক্ষ্য করেন –
৩০. ভারতের কোন রাজ্যে মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন সর্বপ্রথম হয়?
৩১. শরৎকালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে বলে –
৩২. ভারতের বার্ষিক গড় উষ্ণতা হল প্রায় –
৩৩. ভারতের জলবায়ু চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির –
৩৪. লা নিনার প্রভাবে ভারতের জলবায়ু হয় –
৩৫. কালবৈশাখী পশ্চিমবঙ্গে যে নামে পরিচিত, তা হল –
৩৬. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা প্রথম বাধা পায় –
৩৭. মৌসিনরাম কোন পাহাড়ে অবস্থিত?
৩৮. ভারতের কোন রাজ্যে খরা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়?
৩৯. শীতকালীন বৃষ্টিপাত যে চাষের জন্য উপকারী, তা হল –
৪০. ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে হিমালয়ের ভূমিকা হল –
৪১. ভারতের উষ্ণতম স্থান হল –
৪২. ভারতের কোন রাজ্যে বন্যা সবচেয়ে বেশি হয়?
৪৩. মৌসুমী বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখা প্রথম বৃষ্টিপাত ঘটায় –
৪৪. ভারতের কোন রাজ্যে ‘চেরি ব্লসম’ দেখা যায়?
৪৫. ভারতের কোন অংশে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায়?
৪৬. পশ্চিমী ঝঞ্ঝা হল একটি –
৪৭. ITCZ-এর পুরো নাম হল –
৪৮. সমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায় –
৪৯. ভারতের জলবায়ুতে এল নিনো হল একটি –
৫০. ভারতের কোন রাজ্যে বছরে প্রায় প্রতিদিন বৃষ্টিপাত হয়?
৫১. কোন বায়ুর প্রভাবে করমণ্ডল উপকূলে শীতকালে বৃষ্টি হয়?
৫২. ভারতের একটি খরাপ্রবণ অঞ্চল হল –
৫৩. ভারতের শীতকালীন আবহাওয়ার প্রধান বৈশিষ্ট্য হল –
৫৪. ভারতের কোন ঋতুতে দিনের বেলা ছোট ও রাত্রি বড় হয়?
৫৫. ভারতের কোন রাজ্যে কালবৈশাখী ঝড় হয়?
৫৬. মৌসুমী বায়ুর উপর কোন বায়ুর প্রভাব সর্বাধিক?
৫৭. ‘Break of Monsoon’ বা মৌসুমী ছেদ কী?
৫৮. ভারতের কোন অংশে দৈনিক উষ্ণতার প্রসর সর্বাধিক?
৫৯. ভারতের কোন রাজ্যে লু প্রবাহিত হয়?
৬০. ভারতে ঋতুচক্রের কারণ হল –
৬১. মৌসিনরাম ও চেরাপুঞ্জি কোন রাজ্যে অবস্থিত?
৬২. ভারতের বার্ষিক মোট বৃষ্টিপাতের কত শতাংশ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে হয়?
৬৩. ভারতের কোন ঋতুকে ‘ঘূর্ণবাতের ঋতু’ বলা হয়?
৬৪. পশ্চিমী ঝঞ্ঝার উৎপত্তি হয় –
৬৫. ‘মৌসুমী’ শব্দটি কোন ভাষা থেকে এসেছে?
৬৬. ভারতের কোন অঞ্চলে গ্রীষ্ম ও শীতের উষ্ণতার পার্থক্য সবচেয়ে কম?
৬৭. ভারতে মৌসুমী বায়ু কখন সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাবর্তন করে?
৬৮. এল নিনো হল একটি –
৬৯. কোন বায়ুপ্রবাহ ভারতের জলবায়ুকে প্রত্যক্ষভাবে প্রভাবিত করে?
৭০. ভারতের কোন রাজ্যে বছরে দুটি ফসল ফলানোর প্রধান কারণ জলবায়ু?
খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (SAQ) – মান ১ (৬০টি)
১. ভারতের জলবায়ু কী প্রকৃতির?
উত্তর: ক্রান্তীয় মৌসুমী প্রকৃতির।
২. ‘মৌসিম’ শব্দের অর্থ কী?
উত্তর: ঋতু।
৩. লু কী?
উত্তর: গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রবাহিত অত্যন্ত উষ্ণ ও শুষ্ক স্থানীয় বায়ুকে লু বলে।
৪. কালবৈশাখী কী?
উত্তর: গ্রীষ্মকালের বিকেলে পশ্চিমবঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে সৃষ্ট বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টিকে কালবৈশাখী বলে।
৫. আম্রবৃষ্টি কী?
উত্তর: গ্রীষ্মকালের শেষে দক্ষিণ ভারতে (কেরালা, কর্ণাটক) আম পাকাতে সাহায্যকারী প্রাক-মৌসুমী বৃষ্টিকে আম্রবৃষ্টি বলে।
৬. পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কী?
উত্তর: শীতকালে ভূমধ্যসাগর থেকে আসা দুর্বল নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারতে যে বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত হয়, তাকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বলে।
৭. মৌসুমী বিস্ফোরণ কাকে বলে?
উত্তর: বর্ষার শুরুতে (জুন মাসের প্রথম দিকে) কেরালা উপকূলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আগমনের ফলে বজ্রবিদ্যুৎসহ যে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়, তাকে মৌসুমী বিস্ফোরণ বলে।
৮. ভারতের সর্বাধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থান কোনটি?
উত্তর: মেঘালয়ের মৌসিনরাম।
৯. ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের নাম লেখো।
উত্তর: পশ্চিমঘাট পর্বতের পূর্ব ঢাল বা মেঘালয় মালভূমির শিলং।
১০. ‘আশ্বিনের ঝড়’ কী?
উত্তর: শরৎকালে বা মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন কালে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে ‘আশ্বিনের ঝড়’ বলে।
১১. ভারতে কোন বায়ুর প্রভাবে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর: উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে।
১২. ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: ঋতু পরিবর্তন।
১৩. জেট বায়ু কী?
উত্তর: ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বস্তরে প্রবাহিত অতি দ্রুতগামী সর্পিল বায়ুপ্রবাহকে জেট বায়ু বলে।
১৪. ভারতের শীতলতম স্থানের নাম কী?
উত্তর: লাদাখের দ্রাস।
১৫. কালবৈশাখী অসমে কী নামে পরিচিত?
উত্তর: বরদৈছিলা।
১৬. ভারতের কোন উপকূলে বছরে দুবার বৃষ্টি হয়?
উত্তর: করমণ্ডল উপকূলে।
১৭. এল নিনো কী?
উত্তর: এল নিনো হল পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের একটি সাময়িক উষ্ণ সমুদ্রস্রোত।
১৮. ভারতের কোন রাজ্যে প্রথম মৌসুমী বায়ুর আগমন ঘটে?
উত্তর: কেরালা।
১৯. ভারতের উষ্ণতম স্থানের নাম কী?
উত্তর: রাজস্থানের ফালোদি।
২০. ভারতের কোন অঞ্চলে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায়?
উত্তর: ভারতের অভ্যন্তরীণ অংশে (যেমন – দিল্লি, নাগপুর)।
২১. আঁধি কী?
উত্তর: গ্রীষ্মকালে রাজস্থান ও পাঞ্জাবে সৃষ্ট ধূলিঝড়কে আঁধি বলে।
২২. ভারতের জলবায়ু নিয়ন্ত্রক প্রধান পর্বতমালা কোনটি?
উত্তর: হিমালয় পর্বতমালা।
২৩. কোন মেঘ থেকে কালবৈশাখী ঝড় হয়?
উত্তর: কিউমুলোনিম্বাস মেঘ।
২৪. ‘মৌসুমী ছেদ’ বা ‘Break of Monsoon’ কী?
উত্তর: বর্ষাকালে একটানা বৃষ্টির পর কয়েকদিন বৃষ্টির সাময়িক বিরতিকে ‘মৌসুমী ছেদ’ বলে।
২৫. ‘কফি বৃষ্টি’ বা ‘চেরি ব্লসম’ কোন রাজ্যে দেখা যায়?
উত্তর: কর্ণাটকে।
২৬. ভারতের শুষ্কতম মাস কোনটি?
উত্তর: সাধারণত ডিসেম্বর বা জানুয়ারি।
২৭. ভারতের কোন দুটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে মরু জলবায়ু দেখা যায়?
উত্তর: রাজস্থানের পশ্চিমাংশ ও লাদাখ। (লাদাখ শীতল মরুভূমি)
২৮. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর দুটি শাখার নাম কী?
উত্তর: আরব সাগরীয় শাখা ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখা।
২৯. ভারতের কোন ঋতুকে ‘আকাশের স্বচ্ছতার ঋতু’ বলা হয়?
উত্তর: শরৎকাল।
৩০. লা নিনার প্রভাবে ভারতের জলবায়ুতে কী প্রভাব পড়ে?
উত্তর: ভারতে বৃষ্টিপাত বাড়ে এবং বন্যার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
৩১. ভারতের কোন রাজ্যে শীতকালীন তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়?
উত্তর: জম্মু ও কাশ্মীর বা হিমাচল প্রদেশ।
৩২. ভারতের কোন ঋতুতে রবিশস্য চাষ হয়?
উত্তর: শীতকালে।
৩৩. আই.টি.সি.জেড (ITCZ)-এর পুরো নাম কী?
উত্তর: Inter Tropical Convergence Zone বা আন্তঃক্রান্তীয় অভিসরণ অঞ্চল।
৩৪. কোন বায়ুর প্রভাবে পাঞ্জাবে শীতকালে বৃষ্টি হয়?
উত্তর: পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে।
৩৫. ভারতের কোন রাজ্য বন্যায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়?
উত্তর: আসাম।
৩৬. ভারতের বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কত?
উত্তর: প্রায় ১১৮-১২৫ সেন্টিমিটার।
৩৭. প্রাক-মৌসুমী বৃষ্টিপাতকে পশ্চিমবঙ্গে কী বলা হয়?
উত্তর: কালবৈশাখী।
৩৮. ভারতের কোন উপকূলে সমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায়?
উত্তর: কোঙ্কন বা মালাবার উপকূলে।
৩৯. ভারতের কোন রাজ্যে মৌসুমী বায়ু সবচেয়ে শেষে পৌঁছায়?
উত্তর: পাঞ্জাব বা রাজস্থানে।
৪০. ENSO-এর পুরো নাম কী?
উত্তর: El Niño and Southern Oscillation.
৪১. ভারতের জলবায়ুতে সমুদ্রের প্রভাব আছে এমন একটি শহরের নাম লেখো।
উত্তর: মুম্বাই বা চেন্নাই।
৪২. ভারতের কোন রাজ্যে খরা একটি নিয়মিত ঘটনা?
উত্তর: রাজস্থান।
৪৩. ‘পশ্চিমা জেট বায়ু’ ভারতের জলবায়ুকে কোন ঋতুতে প্রভাবিত করে?
উত্তর: শীতকালে।
৪৪. ভারতের কোন রাজ্যে তুলা চাষ ভালো হয়?
উত্তর: গুজরাট বা মহারাষ্ট্র।
৪৫. ‘लू’ কোন দিক থেকে প্রবাহিত হয়?
উত্তর: পশ্চিম দিক থেকে।
৪৬. করমণ্ডল উপকূলে কোন বায়ুর প্রভাবে বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর: উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে।
৪৭. ভারতের কোন অঞ্চলে বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর সবচেয়ে বেশি?
উত্তর: রাজস্থানের মরু অঞ্চলে।৪৮. মৌসুমী বায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রক কী?
উত্তর: স্থলভাগ ও জলভাগের উত্তাপের পার্থক্য।
৪৯. কোন মাসে ভারতে বর্ষাকাল শুরু হয়?
উত্তর: জুন মাসে।
৫০. ভারতের একটি বন্যাপ্রবণ রাজ্যের নাম লেখো।
উত্তর: আসাম বা বিহার।
৫১. কোন মেঘ থেকে ভারতে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর: কিউমুলোনিম্বাস।
৫২. ভারতের কোন রাজ্যে মৌসুমী বায়ু সবচেয়ে দেরিতে পৌঁছায়?
উত্তর: পাঞ্জাব।
৫৩. ‘পুবালি জেট বায়ু’ কোন ঋতুতে ভারতে প্রবাহিত হয়?
উত্তর: বর্ষাকালে।
৫৪. কোন ফসল চাষের জন্য পশ্চিমী ঝঞ্ঝার বৃষ্টিপাত খুব উপকারী?
উত্তর: গম ও যব।
৫৫. ভারতের কোন শহরে প্রথম বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর: তিরুবনন্তপুরম বা পোর্ট ব্লেয়ার।
৫৬. শরৎকালে তামিলনাড়ু উপকূলে ঝড়ের কারণ কী?
উত্তর: প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ু ও বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণিঝড়।
৫৭. ভারতের দুটি প্রধান ঋতুর নাম লেখো।
উত্তর: গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকাল।
৫৮. ভারতের কোন অংশে দৈনিক উষ্ণতার পার্থক্য সবচেয়ে কম?
উত্তর: উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপপুঞ্জে।
৫৯. ভারতের কোন মেঘালয় ছাড়া আর কোন রাজ্যে প্রচুর বৃষ্টি হয়?
উত্তর: কেরালা বা গোয়া (পশ্চিমঘাট পর্বতের পশ্চিম ঢালে)।
৬০. ‘Monsoon Trough’ কী?
উত্তর: বর্ষাকালে উত্তর-পশ্চিম ভারত থেকে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত নিম্নচাপ অক্ষরেখাকে ‘মৌসুমী অক্ষরেখা’ বা ‘Monsoon Trough’ বলে।
গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ২ (২৫টি)
১. ভারতের জলবায়ুতে হিমালয়ের দুটি প্রভাব লেখো।
উত্তর: ১. হিমালয় মধ্য এশিয়ার তীব্র শীতল বায়ুকে ভারতে প্রবেশ করতে বাধা দিয়ে দেশকে শৈত্যপ্রবাহ থেকে রক্ষা করে। ২. এটি দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুকে বাধা দিয়ে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে।
২. মৌসুমী বিস্ফোরণ বলতে কী বোঝো?
উত্তর: গ্রীষ্মের শেষে জুন মাসের প্রথম দিকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু আরব সাগর থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প নিয়ে ভারতের মূল ভূখণ্ডে (কেরালা উপকূলে) প্রবেশ করে। এর প্রভাবে বজ্রবিদ্যুৎসহ যে আকস্মিক ও প্রবল বৃষ্টিপাত শুরু হয়, তাকে মৌসুমী বিস্ফোরণ বলে।
৩. পশ্চিমী ঝঞ্ঝার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: ১. এটি শীতকালে ভূমধ্যসাগর থেকে সৃষ্ট নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত, যা উত্তর-পশ্চিম ভারতে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত ঘটায়। ২. এই বৃষ্টিপাত গম ও অন্যান্য রবিশস্য চাষের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
৪. করমণ্ডল উপকূলে বছরে দুবার বৃষ্টিপাত হয় কেন?
উত্তর: করমণ্ডল উপকূলে বছরে দুবার বৃষ্টিপাত হয়। একবার গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর বঙ্গোপসাগরীয় শাখার প্রভাবে। দ্বিতীয়বার শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে আসার সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে এখানে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
৫. আম্রবৃষ্টি ও কফি বৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: দুটিই প্রাক-মৌসুমী বৃষ্টিপাত।
আম্রবৃষ্টি: এটি মূলত কেরালা ও কর্ণাটকে হয় এবং আম পাকাতে সাহায্য করে।
কফি বৃষ্টি (চেরি ব্লসম): এটি কর্ণাটকে হয় এবং কফি ফুলের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
৬. ভারতের জলবায়ুতে জেট বায়ুর প্রভাব কী?
উত্তর: ১. শীতকালে উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ু হিমালয়ের দক্ষিণে অবস্থান করে পশ্চিমী ঝঞ্ঝাকে ভারতে আসতে সাহায্য করে। ২. গ্রীষ্মকালে এই জেট বায়ু উত্তরে সরে গেলে পুবালি জেট বায়ুর আবির্ভাব ঘটে, যা মৌসুমী বায়ুকে ভারতে আকর্ষণ করে আনে।
৭. ভারতের জলবায়ুতে এল নিনোর প্রভাব লেখো।
উত্তর: এল নিনো হল পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোত। এর প্রভাবে ভারত মহাসাগরে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়, যা দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুকে দুর্বল করে দেয়। এর ফলে ভারতে বৃষ্টিপাত কমে যায় এবং খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
৮. চরমভাবাপন্ন ও সমভাবাপন্ন জলবায়ুর পার্থক্য কী?
উত্তর: চরমভাবাপন্ন: যে জলবায়ুতে গ্রীষ্ম ও শীতের উষ্ণতার পার্থক্য খুব বেশি হয়। এটি মূলত সমুদ্র থেকে দূরে অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে দেখা যায় (যেমন – দিল্লি)। সমভাবাপন্ন: যে জলবায়ুতে গ্রীষ্ম ও শীতের উষ্ণতার পার্থক্য কম হয়। এটি মূলত উপকূলীয় অঞ্চলে দেখা যায় (যেমন – মুম্বাই)।
৯. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল কেন সৃষ্টি হয়?
উত্তর: জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু পর্বতে বাধা পেয়ে প্রতিবাত ঢালে বৃষ্টিপাত ঘটানোর পর যখন অনুবাদ ঢালে পৌঁছায়, তখন তাতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায় এবং বায়ু উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে ওঠে। এই কারণে অনুবাদ ঢালে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে। এই বৃষ্টিহীন অঞ্চলকেই বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।
১০. কালবৈশাখী ও আঁধির মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: কালবৈশাখী: এটি পশ্চিমবঙ্গ ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে গ্রীষ্মকালের বিকেলে সৃষ্ট বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টি। আঁধি: এটি উত্তর-পশ্চিম ভারতে (রাজস্থান, পাঞ্জাব) গ্রীষ্মকালের বিকেলে সৃষ্ট প্রবল ধূলিঝড়। কালবৈশাখী আর্দ্র, কিন্তু আঁধি শুষ্ক।
১১. ভারতে খরা ও বন্যার কারণ কী?
উত্তর: ভারতে খরা ও বন্যার মূল কারণ হল মৌসুমী বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন ও অনিশ্চয়তা। যখন মৌসুমী বায়ু দেরিতে আসে বা কম বৃষ্টিপাত ঘটায়, তখন খরা হয়। আবার, যখন অল্প সময়ে খুব বেশি বৃষ্টিপাত হয় বা নদীর জলধারণ ক্ষমতা কমে যায়, তখন বন্যা হয়।
১২. ভারতে শীতকাল শুষ্ক হয় কেন?
উত্তর: ভারতের শীতকাল মূলত উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই বায়ু স্থলভাগের উপর দিয়ে আসার কারণে এতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ খুব কম থাকে। তাই এই বায়ুর প্রভাবে করমণ্ডল উপকূল ছাড়া ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় না এবং আবহাওয়া শুষ্ক থাকে।১৩. মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন বলতে কী বোঝো?
উত্তর: সেপ্টেম্বর মাসের শেষ থেকে সূর্যের দক্ষিণায়নের ফলে উত্তর ভারতে উচ্চচাপ বলয় তৈরি হয়। এর ফলে জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ধীরে ধীরে ভারত থেকে বিদায় নিতে শুরু করে এবং তার পরিবর্তে শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। এই ঘটনাকেই মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন বা পশ্চাদপসরণ বলে।১৪. ভারতের জলবায়ুর দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: ১. ঋতু পরিবর্তন: মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের উপর ভিত্তি করে ভারতে চারটি সুস্পষ্ট ঋতুর আবির্ভাব ঘটে। ২. বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন: ভারতের সর্বত্র সমান বৃষ্টিপাত হয় না; কোথাও অতিবৃষ্টি (মৌসিনরাম), আবার কোথাও অনাবৃষ্টি (থর মরুভূমি) দেখা যায়।
১৫. ভারতের শীতকালীন আবহাওয়ার পরিচয় দাও।
উত্তর: ভারতে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শীতকাল। এই সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করায় ভারতে উষ্ণতা কম থাকে এবং আবহাওয়া শুষ্ক ও শীতল হয়। উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। তবে পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারতে মাঝে মাঝে বৃষ্টি ও তুষারপাত হয়।
১৬. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর দুটি শাখার নাম ও তাদের প্রভাব লেখো।
উত্তর: দুটি শাখা হল:১. আরব সাগরীয় শাখা: এটি পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে পশ্চিম উপকূলে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়।
২. বঙ্গোপসাগরীয় শাখা: এটি মেঘালয় মালভূমি ও হিমালয়ে বাধা পেয়ে উত্তর-পূর্ব ভারত ও গাঙ্গেয় সমভূমিতে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
১৭. ‘আশ্বিনের ঝড়’ কেন হয়?
উত্তর: শরৎকালে মৌসুমী বায়ু ভারত থেকে প্রত্যাবর্তন করার সময় স্থলভাগ শীতল ও উচ্চচাপযুক্ত এবং বঙ্গোপসাগর উষ্ণ ও নিম্নচাপযুক্ত থাকে। এই চাপের পার্থক্যের কারণে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, যা পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানে। এটি আশ্বিন মাসে হয় বলে একে ‘আশ্বিনের ঝড়’ বলে।
১৮. ‘লু’ ও ‘কালবৈশাখী’-এর মধ্যে কোনটি বেশি বিপজ্জনক ও কেন?
উত্তর: দুটিই বিপজ্জনক, তবে কালবৈশাখী বেশি ধ্বংসাত্মক। ‘লু’ একটি উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ যা সানস্ট্রোক বা হিটস্ট্রোক ঘটাতে পারে। কিন্তু কালবৈশাখী হল বজ্রবিদ্যুৎ, শিলাবৃষ্টি ও প্রবল ঝড়সহ বৃষ্টিপাত, যা ঘরবাড়ি, ফসল ও জীবনহানির কারণ হতে পারে।
১৯. ভারতের কৃষি মৌসুমী বায়ুর দ্বারা কীভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়?
উত্তর: ভারতের কৃষি ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণরূপে মৌসুমী বায়ুর উপর নির্ভরশীল, তাই একে ‘মৌসুমী বায়ুর জুয়াখেলা’ বলা হয়। সময়মতো ও পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হলে খরিফ ফসলের (যেমন – ধান) উৎপাদন ভালো হয়। আবার, অনাবৃষ্টি বা দেরিতে বৃষ্টি হলে খরা হয় এবং ফসল নষ্ট হয়।২০. ভারতের শরৎকালকে ‘দ্বিতীয় বসন্ত’ বলা হয় কেন?
উত্তর: বর্ষার পর শরৎকালে আকাশ মেঘমুক্ত, পরিষ্কার ও উজ্জ্বল থাকে। আবহাওয়া মনোরম ও আরামদায়ক হয়। এই সময় দুর্গাপূজা, দীপাবলির মতো উৎসব হয়। এই মনোরম পরিবেশ ও উৎসবের আমেজের জন্য শরৎকালকে ‘দ্বিতীয় বসন্ত’ বলা হয়।২১. মৌসিনরাম ও শিলং-এর মধ্যে বৃষ্টিপাতের এত পার্থক্য কেন?
উত্তর: মৌসিনরাম ও শিলং দুটি স্থানই মেঘালয় মালভূমিতে অবস্থিত হলেও তাদের অবস্থানে পার্থক্য রয়েছে। মৌসিনরাম খাসি পাহাড়ের প্রতিবাত ঢালে অবস্থিত, তাই দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু এখানে সরাসরি বাধা পেয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। অন্যদিকে, শিলং খাসি পাহাড়ের অনুবাদ ঢালে অর্থাৎ বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত, তাই এখানে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনেক কম।
২২. ‘এনসো’ (ENSO) বলতে কী বোঝো?
উত্তর: ENSO-এর পুরো নাম হল El Niño and Southern Oscillation। এল নিনো হল পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ স্রোত এবং সাদার্ন ওসিলেশন হল পূর্ব ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরের মধ্যে বায়ুচাপের দোলকস্বরূপ পরিবর্তন। এই দুটি ঘটনা একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত এবং মিলিতভাবে বিশ্বের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে। এই সম্মিলিত ঘটনাকেই ENSO বলে।
২৩. ভারতে গ্রীষ্মকাল কেন উষ্ণ ও আর্দ্র হয়?
উত্তর: গ্রীষ্মকালে (মার্চ-মে) সূর্য উত্তর গোলার্ধে লম্বভাবে কিরণ দেয়, ফলে ভারতের স্থলভাগ প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এর ফলে আবহাওয়া উষ্ণ ও শুষ্ক থাকে। তবে এই সময় দক্ষিণ ভারত ও পূর্ব ভারতে স্থানীয়ভাবে ঝড়বৃষ্টি হয় (যেমন – আম্রবৃষ্টি, কালবৈশাখী), যা বাতাসে আর্দ্রতা নিয়ে আসে।
২৪. ভারতের কোন কোন অঞ্চলে বছরে ১০০ সেমি-এর কম বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর: ভারতের যে সমস্ত অঞ্চলে বছরে ১০০ সেমি-এর কম বৃষ্টিপাত হয়, সেগুলি হল:১. পশ্চিমঘাট পর্বতমালার বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরীণ অংশ।
২. উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজস্থান মরুভূমি এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল (পাঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজরাট)।
৩. লাদাখের শীতল মরুভূমি অঞ্চল।
২৫. জেট স্ট্রিম কীভাবে পশ্চিমী ঝঞ্ঝাকে প্রভাবিত করে?
উত্তর: শীতকালে উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট স্ট্রিমটি হিমালয়ের দক্ষিণে সরে আসে এবং মধ্যপ্রাচ্য ও ভূমধ্যসাগরের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ ভূমধ্যসাগরে সৃষ্ট নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতকে (পশ্চিমী ঝঞ্ঝা) পূর্ব দিকে ঠেলে নিয়ে আসে এবং অবশেষে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত ঘটায়।ঘ) রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৩ (২৫টি)
১. ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলি কী কী?
উত্তর: ভারতের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণকারী প্রধান নিয়ামকগুলি হল:
ক) অক্ষাংশগত অবস্থান: কর্কটক্রান্তি রেখা ভারতের মাঝখান দিয়ে যাওয়ায় দেশের দক্ষিণ অংশ ক্রান্তীয় এবং উত্তর অংশ উপক্রান্তীয় জলবায়ুর অন্তর্গত।
খ) হিমালয়ের অবস্থান: উত্তরে হিমালয় পর্বতমালা জলবায়ুগত প্রাচীর হিসেবে কাজ করে; এটি শীতল মেরু বায়ুকে আটকায় এবং মৌসুমী বায়ুকে বাধা দিয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
গ) সমুদ্র থেকে দূরত্ব: সমুদ্রের নিকটবর্তী উপকূলীয় অঞ্চলে সমভাবাপন্ন জলবায়ু এবং সমুদ্র থেকে দূরবর্তী অভ্যন্তরীণ অঞ্চলে চরমভাবাপন্ন জলবায়ু দেখা যায়।
ঘ) মৌসুমী বায়ু: এটি ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রক, যা ঋতু পরিবর্তন ও বৃষ্টিপাতের বন্টন নির্ধারণ করে।
২. ভারতের চারটি প্রধান ঋতুর সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।
উত্তর: ভারতের ঋতুচক্রকে প্রধান চারটি ভাগে ভাগ করা যায়:
১. গ্রীষ্মকাল (মার্চ-মে): এই সময় সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ায় উষ্ণতা খুব বেশি থাকে। উত্তর-পশ্চিম ভারতে ‘লু’ নামক উষ্ণ বায়ু এবং পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে ‘কালবৈশাখী’ বা ‘বরদৈছিলা’ ঝড়বৃষ্টি হয়।
২. বর্ষাকাল (জুন-সেপ্টেম্বর): এই সময় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারতে সর্বাধিক বৃষ্টিপাত হয়।
৩. শরৎকাল (অক্টোবর-নভেম্বর): এই সময় মৌসুমী বায়ু প্রত্যাবর্তন করে এবং আকাশ পরিষ্কার থাকে। একে ‘প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ুর কাল’ও বলে।
৪. শীতকাল (ডিসেম্বর-ফেব্রুয়ারি): এই সময় আবহাওয়া শীতল ও শুষ্ক থাকে। উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয় এবং পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারতে বৃষ্টিপাত হয়।
৩. ভারতের জলবায়ুতে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: ভারতের জলবায়ু, অর্থনীতি ও জনজীবনে মৌসুমী বায়ুর প্রভাব অপরিসীম, তাই ভারতকে ‘মৌসুমী জলবায়ুর দেশ’ বলা হয়।
১. ঋতু সৃষ্টি: মৌসুমী বায়ুর আগমন (বর্ষাকাল) ও প্রত্যাগমনের (শরৎকাল) উপর ভিত্তি করেই ভারতের ঋতুচক্র আবর্তিত হয়।
২. বৃষ্টিপাতের বন্টন: ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০% হয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে। এই বায়ুর গতিপথ ও বাধার কারণে ভারতের কোথাও অতিবৃষ্টি (মৌসিনরাম) আবার কোথাও অনাবৃষ্টি (থর) হয়।
৩. অর্থনৈতিক প্রভাব: ভারতের কৃষি ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণরূপে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল। সময়মতো বৃষ্টি হলে ফসল ভালো হয়, যা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখে। আবার অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টির ফলে খরা বা বন্যা হয়, যা অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৪. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলতে কী বোঝো? উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু যখন কোনো পর্বতে বাধা পেয়ে তার প্রতিবাত ঢালে (যে ঢালে বায়ু ধাক্কা খায়) প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়, তখন পর্বতের অপর ঢালে বা অনুবাদ ঢালে পৌঁছানোর সময় সেই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক কমে যায়। এছাড়া, বায়ু নীচে নামার সময় উষ্ণ ও সংকুচিত হওয়ায় তার জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যায়। এই দুই কারণে অনুবাদ ঢালে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে। পর্বতের এই বৃষ্টিহীন অনুবাদ ঢালকেই বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।
উদাহরণ:
১. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে পশ্চিম ঢালে (প্রতিবাত) প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়, কিন্তু পূর্ব ঢালটি (অনুবাদ) বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়েছে। তাই মুম্বাইয়ে বৃষ্টিপাত বেশি হলেও পুনেতে কম।
২. মেঘালয়ের খাসি পাহাড়ের প্রতিবাত ঢালে মৌসিনরাম অবস্থিত হওয়ায় সেখানে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়, কিন্তু অনুবাদ ঢালে অবস্থিত শিলং একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল।
৫. ভারতের বৃষ্টিপাতের বন্টনের তারতম্যের কারণগুলি কী কী?
উত্তর: ভারতের সর্বত্র বৃষ্টিপাত সমান নয়। এর প্রধান কারণগুলি হল:
১. মৌসুমী বায়ুর গতিপথ ও শাখা: দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আরব সাগরীয় শাখা ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখার গতিপথ ও প্রভাবের কারণে বৃষ্টিপাতের তারতম্য হয়।
২. পর্বতের অবস্থান: পশ্চিমঘাট, হিমালয়, আরাবল্লী পর্বতের অবস্থান মৌসুমী বায়ুকে বাধা দিয়ে বৃষ্টিপাতকে নিয়ন্ত্রণ করে। পর্বতের প্রতিবাত ঢালে প্রচুর বৃষ্টি হয় এবং অনুবাদ ঢাল বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়।
৩. সমুদ্র থেকে দূরত্ব: উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়, কিন্তু সমুদ্র থেকে যত দেশের অভ্যন্তরে যাওয়া যায়, বায়ুর জলীয় বাষ্প কমে যাওয়ায় বৃষ্টিপাতও কমতে থাকে।
৪. জেট বায়ু ও ঘূর্ণবাত: জেট বায়ুর অবস্থান এবং পশ্চিমী ঝঞ্ঝা ও ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘটনাগুলিও স্থানীয়ভাবে বৃষ্টিপাতের তারতম্য ঘটায়।
৬. ভারতের কৃষিতে জলবায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: ভারতের কৃষি ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণরূপে জলবায়ু, বিশেষত মৌসুমী বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
১. ফসলের ধরন: বৃষ্টিপাতের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ফসল চাষ হয়। যেমন – বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে ধান এবং কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে জোয়ার, বাজরা, মিলেট চাষ হয়।
২. ঋতুভিত্তিক চাষ: ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ভারতে খরিফ (বর্ষাকালীন), রবি (শীতকালীন) ও জায়িদ (গ্রীষ্মকালীন) – এই তিন ধরনের ফসল চাষ করা হয়।
৩. উৎপাদন: সময়মতো ও পর্যাপ্ত মৌসুমী বৃষ্টিপাত হলে কৃষিজ উৎপাদন ভালো হয়, যা দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করে।
৪. অনিশ্চয়তা: মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালিপনার জন্য প্রায়শই খরা বা বন্যা দেখা দেয়, যা ফসল নষ্ট করে এবং কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতির কারণ হয়। এই কারণেই ভারতীয় কৃষিকে ‘মৌসুমী বায়ুর জুয়াখেলা’ বলা হয়।
৭. এল নিনো ও লা নিনার মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: | বৈশিষ্ট্য | এল নিনো (El Niño) | লা নিনা (La Niña) | |—|—|—| | **প্রকৃতি** | এটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ সমুদ্রস্রোত। | এটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল সমুদ্রস্রোত। | | **সময়কাল** | সাধারণত প্রতি ৩-৭ বছর অন্তর ডিসেম্বর মাসে দেখা যায়। | এল নিনোর পরবর্তী পর্যায়ে বা স্বাধীনভাবেও দেখা যেতে পারে। | | **ভারতের উপর প্রভাব** | এর প্রভাবে ভারতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে এবং বৃষ্টিপাত কমে গিয়ে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। | এর প্রভাবে মৌসুমী বায়ু শক্তিশালী হয় এবং ভারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ও বন্যার সম্ভাবনা থাকে। | | **অর্থ** | ‘এল নিনো’ একটি স্প্যানিশ শব্দ, যার অর্থ ‘যিশুপুত্র’ বা ‘ছোট্ট বালক’। | ‘লা নিনা’ একটি স্প্যানিশ শব্দ, যার অর্থ ‘ছোট্ট বালিকা’। |
৮. টিকা লেখো: কালবৈশাখী।
উত্তর: গ্রীষ্মকালে (এপ্রিল-মে) বিকেলের দিকে ছোটনাগপুর মালভূমি অঞ্চলে সৃষ্ট উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ুর সঙ্গে বঙ্গোপসাগর থেকে আসা আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শে এক ধরনের শক্তিশালী বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টির সৃষ্টি হয়। এই ঝড়বৃষ্টি পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা এবং বাংলাদেশে ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। যেহেতু এটি বৈশাখ মাসে হয় এবং ধ্বংসাত্মক প্রকৃতির, তাই একে ‘কালবৈশাখী’ বলা হয়। এই ঝড়কে অসমে ‘বরদৈছিলা’ এবং ইংরেজিতে ‘Nor’westers’ বলা হয়। এর ফলে জীবন ও সম্পত্তির ক্ষতি হলেও, এই বৃষ্টি ধান, পাট ও চা চাষের জন্য উপকারী।
৯. ভারতের শীতকালীন আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।
উত্তর: ভারতে ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শীতকাল বিরাজ করে। এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
১. আবহাওয়ার প্রকৃতি: এই সময় আকাশ সাধারণত মেঘমুক্ত, পরিষ্কার ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল থাকে। আবহাওয়া মনোরম, শুষ্ক ও শীতল হয়।
২. বায়ুপ্রবাহ: এই সময় উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু শুষ্ক হওয়ায় বৃষ্টিপাত ঘটায় না।
৩. পশ্চিমী ঝঞ্ঝা: ভূমধ্যসাগর থেকে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারতে (পাঞ্জাব, হরিয়ানা) হালকা বৃষ্টিপাত এবং হিমালয়ের উঁচু অঞ্চলে তুষারপাত হয়।
৪. করমণ্ডল উপকূলে বৃষ্টি: প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ু বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে তামিলনাড়ুর করমণ্ডল উপকূলে এই সময় বৃষ্টিপাত ঘটায়।
১০. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আগমন প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: গ্রীষ্মকালে সূর্যের উত্তরায়ণের ফলে ভারতের স্থলভাগ প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং একটি গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে, ভারত মহাসাগর তুলনামূলকভাবে শীতল থাকায় সেখানে উচ্চচাপ বিরাজ করে। এই চাপের পার্থক্যের কারণে উচ্চচাপযুক্ত ভারত মহাসাগর থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু নিম্নচাপযুক্ত ভারতের স্থলভাগের দিকে ছুটে আসে। ফেরেলের সূত্র অনুসারে এই বায়ু ডানদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ভারতে প্রবেশ করে, তাই একে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বলে। এটি ভারতের উপদ্বীপীয় আকৃতির কারণে দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায় – আরব সাগরীয় শাখা ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখা।
১১. ভারতের জলবায়ুতে সমুদ্রের প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: ভারতের জলবায়ুতে সমুদ্রের প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষত উপকূলীয় অঞ্চলে:
১. সমভাবাপন্ন জলবায়ু: সমুদ্রের নিকটবর্তী হওয়ায় উপকূলীয় অঞ্চলে জলভাগের প্রভাবে দিন ও রাতের এবং গ্রীষ্ম ও শীতের উষ্ণতার পার্থক্য কম হয়। অর্থাৎ, জলবায়ু সমভাবাপন্ন প্রকৃতির হয়।
২. স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ু: দিনের বেলায় সমুদ্র থেকে আর্দ্র সমুদ্রবায়ু এবং রাত্রিবেলায় স্থলভাগ থেকে শুষ্ক স্থলবায়ু প্রবাহিত হয়ে উপকূলীয় অঞ্চলের আবহাওয়াকে আরামদায়ক করে তোলে।
৩. বৃষ্টিপাত ও ঘূর্ণিঝড়: সমুদ্র থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প বায়ুতে মেশায় উপকূলীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বেশি হয়। এছাড়া, বঙ্গোপসাগর ও আরব সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় উপকূলীয় রাজ্যগুলিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলে।
১২. ভারতের ঋতু বৈচিত্র্যের কারণ কী?
উত্তর: ভারতে সুস্পষ্ট ঋতু বৈচিত্র্যের প্রধান কারণগুলি হল:
১. পৃথিবীর পরিক্রমণ ও অক্ষের কৌণিক অবস্থান: পৃথিবীর অক্ষ তার কক্ষতলের সঙ্গে ৬৬.৫° কোণে হেলে থাকার কারণে এবং পরিক্রমণ গতির জন্য বছরের বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশ সূর্যের কাছে আসে। এর ফলে উষ্ণতার পরিবর্তন ঘটে এবং ঋতু পরিবর্তিত হয়।
২. মৌসুমী বায়ুর প্রভাব: ভারতের ঋতু পরিবর্তন মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের দ্বারা বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। মৌসুমী বায়ুর দিক পরিবর্তনের ফলেই ভারতে গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত ঋতুর চক্র আবর্তিত হয়।
৩. অক্ষাংশগত অবস্থান: ভারতের বিশাল অক্ষাংশগত বিস্তারের কারণে দেশের বিভিন্ন অংশে ঋতুগুলির তীব্রতা ও স্থায়িত্বের পার্থক্য দেখা যায়।
১৩. ‘ভারতের অর্থনীতি মৌসুমী বায়ুর জুয়াখেলা’ – উক্তিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: ভারত একটি কৃষিনির্ভর দেশ এবং এখানকার কৃষি ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণরূপে মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালিপনার উপর নির্ভরশীল। এই কারণেই ভারতীয় অর্থনীতিকে ‘মৌসুমী বায়ুর জুয়াখেলা’ বলা হয়।
কারণ:
১. যদি মৌসুমী বায়ু সময়মতো আসে এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত ঘটায়, তবে খরিফ ফসলের উৎপাদন খুব ভালো হয়, যা দেশের অর্থনীতিকে সচল রাখে।
২. কিন্তু যদি মৌসুমী বায়ু দেরিতে আসে, আগে চলে যায় বা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হয়, তবে খরা দেখা দেয়, ফসল নষ্ট হয় এবং কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩. আবার, অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের ফলে বিধ্বংসী বন্যা হয়, যা ফসল, ঘরবাড়ি ও পরিকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি করে।
এই অনিশ্চয়তার কারণেই ভারতের ভাগ্য যেন মৌসুমী বায়ুর হাতে এক অনিশ্চিত খেলায় পরিণত হয়েছে।
১৪. ‘মৌসুমী ছেদ’ কেন হয়?
উত্তর: বর্ষাকালে একটানা কয়েকদিন বৃষ্টিপাতের পর যখন ৭ থেকে ১৫ দিনের জন্য বৃষ্টির সাময়িক বিরতি ঘটে, তখন তাকে ‘মৌসুমী ছেদ’ বা ‘Break of Monsoon’ বলে। এর প্রধান কারণগুলি হল:
১. বর্ষাকালে মৌসুমী নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি (Monsoon Trough) হিমালয়ের পাদদেশে সরে গেলে গাঙ্গেয় সমভূমিতে বৃষ্টিপাত বন্ধ হয়ে যায়।
২. আরব সাগরীয় শাখার দুর্বল হয়ে পড়া বা বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের অভাব ঘটলেও বৃষ্টির পরিমাণ কমে যায়।
৩. উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ুর অস্বাভাবিক আচরণও মৌসুমী ছেদের কারণ হতে পারে।
১৫. ভারতের প্রাক-বর্ষা এবং প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ুর সময়ের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: প্রাক-বর্ষা (গ্রীষ্মকাল):
১. এটি মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
২. এই সময় আবহাওয়া উষ্ণ ও শুষ্ক থাকে।
৩. এই সময় স্থানীয়ভাবে বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টি হয়, যা কালবৈশাখী, আম্রবৃষ্টি ইত্যাদি নামে পরিচিত।
প্রত্যাবর্তনকারী মৌসুমী বায়ু (শরৎকাল):
১. এটি অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
২. এই সময় আকাশ মেঘমুক্ত ও পরিষ্কার থাকে এবং আবহাওয়া মনোরম হয়।
৩. এই সময় স্থলভাগ থেকে শুষ্ক বায়ু প্রবাহিত হয়, তবে বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে (আশ্বিনের ঝড়)।
১৬. জেট বায়ুপ্রবাহের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: জেট বায়ুপ্রবাহের দুটি প্রধান বৈশিষ্ট্য হল:
১. উচ্চ গতিবেগ: এটি ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বস্তরে (৯-১২ কিমি উচ্চতায়) অত্যন্ত দ্রুতগতিতে (ঘন্টায় ৩০০-৫০০ কিমি) প্রবাহিত হয়।
২. সর্পিল গতিপথ: এটি সোজা পথে না চলে অত্যন্ত আঁকাবাঁকা বা সর্পিল পথে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়।
১৭. ভারতের দুটি বন্যাপ্রবণ ও দুটি খরাপ্রবণ অঞ্চলের নাম লেখো।
উত্তর: বন্যাপ্রবণ অঞ্চল:
১. আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা।
২. বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের গাঙ্গেয় সমভূমি।
খরাপ্রবণ অঞ্চল:
১. রাজস্থানের থর মরুভূমি এবং তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চল।
২. পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরীণ অংশ (যেমন – মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ, কর্নাটকের রায়ালসীমা)।
১৮. সমভাবাপন্ন জলবায়ু বলতে কী বোঝায়? ভারতের কোথায় এই জলবায়ু দেখা যায়?
উত্তর: যে জলবায়ুতে সমুদ্রের প্রভাবে গ্রীষ্ম ও শীতের এবং দিন ও রাতের উষ্ণতার পার্থক্য খুব কম থাকে, অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে খুব বেশি গরম বা শীতকালে খুব বেশি ঠান্ডা অনুভূত হয় না, তাকে সমভাবাপন্ন জলবায়ু বলে।
উদাহরণ: ভারতের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে, বিশেষত মুম্বাই, চেন্নাই, কলকাতা এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে এই ধরনের জলবায়ু দেখা যায়।
১৯. ‘লু’ ও ‘আঁধি’র মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: দুটিই গ্রীষ্মকালে উত্তর-পশ্চিম ভারতে দেখা যায়।লু: এটি একটি অত্যন্ত উষ্ণ ও শুষ্ক বায়ুপ্রবাহ। এর সঙ্গে ধূলিকণা থাকতেও পারে বা নাও থাকতে পারে।
আঁধি: এটি একটি প্রবল ধূলিঝড়। এর গতিবেগ অনেক বেশি এবং এর ফলে আকাশ ধুলোয় ঢেকে যায়। কখনও কখনও এর সঙ্গে সামান্য বৃষ্টিপাতও হয়।
২০. ভারতের শরৎকালীন আবহাওয়ার বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: ভারতে অক্টোবর ও নভেম্বর মাস জুড়ে শরৎকাল বিরাজ করে। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
১. এই সময় মৌসুমী বায়ু প্রত্যাবর্তন করায় আকাশ মেঘমুক্ত, পরিষ্কার ও রৌদ্রোজ্জ্বল থাকে।
২. বাতাসে আর্দ্রতা কমে যায় এবং আবহাওয়া মনোরম ও আরামদায়ক হয়।
৩. দিনের বেলায় সামান্য গরম থাকলেও রাত্রি বেশ শীতল হয়।
৪. বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে মাঝে মাঝে উপকূলে ঝড়বৃষ্টি হয়, যা ‘আশ্বিনের ঝড়’ নামে পরিচিত।
২১. করমণ্ডল উপকূলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় কেন?
উত্তর: শীতকালে ভারতে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু স্থলভাগ থেকে আসার কারণে সাধারণত শুষ্ক হয়। কিন্তু এর একটি শাখা বঙ্গোপসাগরের উপর দিয়ে আসার সময় প্রচুর পরিমাণে জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে। এই আর্দ্র বায়ুপ্রবাহ ভারতের পূর্ব উপকূল, বিশেষত তামিলনাড়ুর করমণ্ডল উপকূলে বাধা পেয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই কারণেই করমণ্ডল উপকূলে বছরে দুবার বৃষ্টিপাত হয়।২২. মুম্বাই ও নাগপুর প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও তাদের জলবায়ু ভিন্ন কেন?
উত্তর: মুম্বাই ও নাগপুর প্রায় একই অক্ষাংশে অবস্থিত হলেও তাদের জলবায়ু ভিন্ন হওয়ার প্রধান কারণ হল সমুদ্র থেকে দূরত্ব।মুম্বাই: এটি আরব সাগরের তীরে অবস্থিত হওয়ায় সমুদ্রের প্রভাবে এখানকার জলবায়ু সমভাবাপন্ন প্রকৃতির। এখানে গ্রীষ্ম ও শীতের উষ্ণতার পার্থক্য কম।
নাগপুর: এটি সমুদ্র থেকে অনেক দূরে দেশের অভ্যন্তরীণ অংশে অবস্থিত। তাই এখানে সমুদ্রের প্রভাব পড়ে না এবং জলবায়ু চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির। এখানে গ্রীষ্মকালে খুব গরম এবং শীতকালে খুব ঠান্ডা অনুভূত হয়।
২৩. ভারতে মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: মৌসুমী বায়ুর আগমন (বর্ষাকাল):
১. এটি জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
২. এই সময় জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়।
৩. এর প্রভাবে সারা ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়।
মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন (শরৎকাল):
১. এটি অক্টোবর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
২. এই সময় শুষ্ক উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়।
৩. এই সময় আকাশ পরিষ্কার থাকে, তবে উপকূলে ঘূর্ণিঝড় হতে পারে।
২৪. ভারতের কোন কোন অঞ্চলে বছরে ২০০ সেমি-এর বেশি বৃষ্টিপাত হয়?
উত্তর: ভারতে বছরে ২০০ সেমি-এর বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলগুলি হল:
১. পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ঢাল (কোঙ্কন ও মালাবার উপকূল)।
২. উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় মালভূমি (মৌসিনরাম, চেরাপুঞ্জি) এবং অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ডের কিছু অংশ।
৩. আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ।
এই অঞ্চলগুলিতে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু সরাসরি বাধা পেয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়।
২৫. ভারতের জলবায়ুতে অক্ষাংশ ও উচ্চতার প্রভাব লেখো।
উত্তর: অক্ষাংশের প্রভাব: কর্কটক্রান্তি রেখা ভারতের মাঝখান দিয়ে যাওয়ায় দেশের দক্ষিণ অংশ ক্রান্তীয় উষ্ণমণ্ডল এবং উত্তর অংশ উপক্রান্তীয় নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের অন্তর্গত। এর ফলে দক্ষিণে সারাবছর উষ্ণতা বেশি থাকে এবং উত্তরে গ্রীষ্ম ও শীতের পার্থক্য সুস্পষ্ট।
উচ্চতার প্রভাব: উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা কমে। তাই হিমালয়ের মতো উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে জলবায়ু শীতল ও তুন্দ্রা প্রকৃতির হয়। আবার, দাক্ষিণাত্যের উঁচু মালভূমি অঞ্চলের জলবায়ু পার্শ্ববর্তী সমভূমির থেকে আরামদায়ক হয়।
ঙ) রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৫ (১০টি)
১. ভারতের জলবায়ুর প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলির ভূমিকা বিস্তারিতভাবে আলোচনা করো।
উত্তর:
ভারতের জলবায়ু বিভিন্ন প্রাকৃতিক কারণ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। প্রধান নিয়ন্ত্রকগুলি হল:
১. অক্ষাংশগত অবস্থান: কর্কটক্রান্তি রেখা (২৩.৫° উত্তর) ভারতের প্রায় মাঝখান দিয়ে যাওয়ায় দেশের দক্ষিণ অংশ ক্রান্তীয় উষ্ণমণ্ডল এবং উত্তর অংশ উপক্রান্তীয় নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলের অন্তর্গত। এর ফলে ভারতের জলবায়ুতে ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ উভয় বৈশিষ্ট্যই লক্ষ্য করা যায়।
২. হিমালয় পর্বতমালার অবস্থান: ভারতের উত্তরে অবস্থিত হিমালয় পর্বতমালা একটি বিশাল জলবায়ুগত প্রাচীর হিসেবে কাজ করে। এটি একদিকে মধ্য এশিয়ার তীব্র শৈত্যপ্রবাহকে ভারতে প্রবেশ করতে বাধা দেয়, অন্যদিকে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুকে বাধা দিয়ে সারা ভারতে বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে।
৩. সমুদ্র থেকে দূরত্ব: ভারতের দক্ষিণ অংশ তিনদিকে সমুদ্র দ্বারা বেষ্টিত হওয়ায় উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে সমুদ্রের প্রভাবে সমভাবাপন্ন জলবায়ু (গ্রীষ্ম ও শীতের তাপমাত্রার পার্থক্য কম) দেখা যায়। কিন্তু সমুদ্র থেকে দূরবর্তী অভ্যন্তরীণ অঞ্চলগুলিতে জলবায়ু চরমভাবাপন্ন প্রকৃতির হয় (তাপমাত্রার পার্থক্য খুব বেশি)।
৪. মৌসুমী বায়ু: এটি ভারতের জলবায়ুর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক। মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের উপর ভিত্তি করে ভারতে ঋতুচক্র আবর্তিত হয় এবং বৃষ্টিপাতের বন্টন নির্ধারিত হয়।
৫. ভূপ্রকৃতি: পশ্চিমঘাট পর্বতমালার মতো উঁচু ভূমিরূপ মৌসুমী বায়ুকে বাধা দিয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় এবং বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল সৃষ্টি করে।
৬. জেট বায়ু: ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বস্তরের জেট বায়ুপ্রবাহ মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনকে নিয়ন্ত্রণ করে।
২. ভারতের চারটি প্রধান ঋতুর বৈশিষ্ট্যসহ একটি বিবরণ দাও।
উত্তর:
মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের উপর ভিত্তি করে ভারতের ঋতুচক্রকে প্রধান চারটি ভাগে ভাগ করা যায়:
ক) গ্রীষ্মকাল (মার্চ – মে):
এই সময় সূর্যের উত্তরায়ণের ফলে সারা ভারতে উষ্ণতা বাড়তে থাকে এবং দেশের উত্তর-পশ্চিম অংশে একটি গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্র তৈরি হয়। আবহাওয়া উষ্ণ ও শুষ্ক থাকে। এই সময় উত্তর ভারতে ‘লু’ নামক উষ্ণ বায়ু এবং পশ্চিমবঙ্গ ও অসমে ‘কালবৈশাখী’ বা ‘বরদৈছিলা’ নামক বজ্রবিদ্যুৎসহ ঝড়বৃষ্টি হয়। দক্ষিণ ভারতেও ‘আম্রবৃষ্টি’ ও ‘কফি বৃষ্টি’র মতো প্রাক-মৌসুমী বৃষ্টিপাত হয়।
খ) বর্ষাকাল (জুন – সেপ্টেম্বর):
এটি দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রবাহকাল। এই সময় ভারত মহাসাগর থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু ভারতে প্রবেশ করে এবং সারা দেশে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়। ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০% এই ঋতুতেই হয়।
গ) শরৎকাল (অক্টোবর – নভেম্বর):
এটি মৌসুমী বায়ুর প্রত্যাবর্তন কাল। এই সময় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু ভারত থেকে বিদায় নেয় এবং উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হতে শুরু করে। আকাশ সাধারণত মেঘমুক্ত ও পরিষ্কার থাকে এবং আবহাওয়া মনোরম হয়। তবে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে উপকূলে ‘আশ্বিনের ঝড়’ হয়।
ঘ) শীতকাল (ডিসেম্বর – ফেব্রুয়ারি):
এই সময় সূর্য দক্ষিণ গোলার্ধে অবস্থান করায় ভারতে উষ্ণতা কম থাকে। আবহাওয়া শীতল ও শুষ্ক থাকে। ভূমধ্যসাগর থেকে আসা পশ্চিমী ঝঞ্ঝার প্রভাবে উত্তর-পশ্চিম ভারতে হালকা বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত হয়, যা গম চাষের জন্য উপকারী।
৩. ভারতের বৃষ্টিপাতের বন্টন আলোচনা করো এবং এর তারতম্যের কারণগুলি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
ভারতের বৃষ্টিপাত অত্যন্ত অসমভাবে বন্টিত। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ অনুসারে ভারতকে প্রধানত চারটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়:
১. অতিবৃষ্টিযুক্ত অঞ্চল (বার্ষিক > ২০০ সেমি): পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পশ্চিম ঢাল, উত্তর-পূর্ব ভারতের মেঘালয় মালভূমি (মৌসিনরাম, চেরাপুঞ্জি) এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
২. মাঝারি বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চল (বার্ষিক ১০০-২০০ সেমি): পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মধ্যপ্রদেশের পূর্বাংশ এবং হিমালয়ের পাদদেশীয় তরাই অঞ্চল এর অন্তর্গত।
৩. স্বল্প বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চল (বার্ষিক ৫০-১০০ সেমি): দাক্ষিণাত্য মালভূমির অভ্যন্তরীণ অংশ, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানার পূর্বাংশ এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
৪. অতি স্বল্প বৃষ্টিযুক্ত অঞ্চল (বার্ষিক < ৫০ সেমি): রাজস্থানের থর মরুভূমি, গুজরাটের কচ্ছ এবং লাদাখের শীতল মরুভূমি এই অঞ্চলের অন্তর্গত।
বৃষ্টিপাতের তারতম্যের কারণ:
ক) পর্বতের অবস্থান: পশ্চিমঘাট ও হিমালয় পর্বতের প্রতিবাত ঢালে মৌসুমী বায়ু বাধা পেয়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটায়, কিন্তু অনুবাদ ঢাল বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয়।
খ) সমুদ্র থেকে দূরত্ব: উপকূল থেকে যত দেশের অভ্যন্তরে যাওয়া যায়, বায়ুর জলীয় বাষ্প কমে যাওয়ায় বৃষ্টিপাতও কমতে থাকে।
গ) মৌসুমী বায়ুর গতিপথ: মৌসুমী বায়ুর আরব সাগরীয় ও বঙ্গোপসাগরীয় শাখার গতিপথ বৃষ্টিপাতের বন্টনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন – আরাবল্লী পর্বত মৌসুমী বায়ুর সমান্তরালে থাকায় রাজস্থানে বৃষ্টিপাত কম হয়।
৪. ভারতের জলবায়ুর উপর মৌসুমী বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো এবং ভারতীয় কৃষিকে ‘মৌসুমী বায়ুর জুয়াখেলা’ বলার কারণ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
জলবায়ুর উপর প্রভাব:
ভারতের জলবায়ু প্রায় সম্পূর্ণরূপে মৌসুমী বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।
১. ঋতু সৃষ্টি: মৌসুমী বায়ুর আগমন (বর্ষাকাল) ও প্রত্যাগমনের (শরৎকাল) উপর ভিত্তি করে ভারতে প্রধান ঋতুচক্র আবর্তিত হয়।
২. উষ্ণতার নিয়ন্ত্রণ: বর্ষাকালে মেঘ ও বৃষ্টির কারণে উষ্ণতা কিছুটা কমে যায়।
৩. বৃষ্টিপাতের বন্টন: ভারতের মোট বৃষ্টিপাতের প্রায় ৮০% হয় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে। এর গতিপথ ও বাধার কারণেই ভারতের বৃষ্টিপাতের আঞ্চলিক বৈষম্য সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতীয় কৃষিকে ‘মৌসুমী বায়ুর জুয়াখেলা’ বলার কারণ:
ভারত একটি কৃষিনির্ভর দেশ এবং এখানকার কৃষি ব্যবস্থা মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালিপনার উপর নির্ভরশীল। এই অনিশ্চয়তার কারণেই ভারতীয় কৃষিকে ‘মৌসুমী বায়ুর জুয়াখেলা’ বলা হয়।
১. অনুকূল প্রভাব: যদি মৌসুমী বায়ু সময়মতো আসে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তবে খরিফ ফসলের (যেমন – ধান, পাট, তুলা) উৎপাদন খুব ভালো হয়। এর ফলে দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হয় এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
২. প্রতিকূল প্রভাব:
ক) খরা: যদি মৌসুমী বায়ু দেরিতে আসে বা বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম হয়, তবে খরা দেখা দেয়। এর ফলে ফসল নষ্ট হয়, পানীয় জলের সংকট দেখা দেয় এবং কৃষকরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
খ) বন্যা: আবার, যদি অল্প সময়ে খুব বেশি বৃষ্টিপাত হয় বা একটানা বৃষ্টি চলতে থাকে, তবে বিধ্বংসী বন্যা হয়। বন্যা ফসল, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট ও গবাদি পশুর ব্যাপক ক্ষতি করে।
এই অনিশ্চয়তার কারণেই ভারতের কৃষকদের ভাগ্য এবং দেশের অর্থনীতি মৌসুমী বায়ুর হাতে এক অনিশ্চিত খেলায় পরিণত হয়েছে।
৫. পশ্চিমী ঝঞ্ঝা কী? ভারতের জলবায়ু ও অর্থনীতিতে এর প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর:
পশ্চিমী ঝঞ্ঝা: শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে সৃষ্ট দুর্বল নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ুর প্রভাবে পূর্ব দিকে সরে এসে পাকিস্তান ও আফগানিস্তান হয়ে উত্তর-পশ্চিম ভারতে প্রবেশ করে। এই ঘূর্ণবাতের প্রভাবে যে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টিপাত ও তুষারপাত হয়, তাকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝা বা Western Disturbance বলে।
জলবায়ুতে প্রভাব:
১. এর প্রভাবে শীতকালে পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশে হালকা বৃষ্টিপাত হয়।
২. হিমালয়ের উঁচু পার্বত্য অঞ্চলে (জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড) প্রবল তুষারপাত হয়।
৩. এর আগমনের ফলে শীতের তীব্রতা হঠাৎ করে বেড়ে যায় এবং শৈত্যপ্রবাহ দেখা দেয়।
অর্থনীতিতে প্রভাব:
১. কৃষিতে প্রভাব: এই বৃষ্টিপাত রবিশস্য, বিশেষত গম, যব, ছোলা চাষের জন্য অত্যন্ত উপকারী। একে ‘সোনালী ফসল’ (Golden Harvest) ফলানোর সহায়ক বৃষ্টি বলা হয়।
২. ফল চাষে প্রভাব: পার্বত্য অঞ্চলে আপেল, নাসপাতির মতো ফল চাষের জন্য তুষারপাত অপরিহার্য।
৩. নেতিবাচক প্রভাব: অতিরিক্ত তুষারপাতের ফলে অনেক সময় রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যায় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে, যা পর্যটন ও অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
৬. দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর উৎপত্তি এবং এর দুটি শাখার গতিপথ চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
উৎপত্তি: গ্রীষ্মকালে সূর্যের উত্তরায়ণের ফলে ভারতের স্থলভাগ, বিশেষত উত্তর-পশ্চিম অংশ, প্রচণ্ড উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং একটি গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এর বিপরীতে, দক্ষিণ গোলার্ধের ভারত মহাসাগর তুলনামূলকভাবে শীতল থাকায় সেখানে উচ্চচাপ বিরাজ করে। এই প্রবল চাপের পার্থক্যের কারণে ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে ভারতের নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। নিরক্ষরেখা অতিক্রম করার পর ফেরেলের সূত্র অনুসারে এই বায়ু ডানদিকে বেঁকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ভারতে প্রবেশ করে, তাই একে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু বলে।
দুটি শাখার গতিপথ:
ভারতের উপদ্বীপীয় আকৃতির কারণে এই বায়ু দুটি শাখায় বিভক্ত হয়ে যায়:
১. আরব সাগরীয় শাখা: এটি অপেক্ষাকৃত শক্তিশালী শাখা। এটি পশ্চিমঘাট পর্বতে বাধা পেয়ে পশ্চিম উপকূলে (কেরালা, কর্ণাটক, মহারাষ্ট্র) প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায় (সাধারণত জুনের প্রথম সপ্তাহে)। এরপর এটি নর্মদা-তাপ্তি উপত্যকা দিয়ে মধ্য ভারতে প্রবেশ করে এবং শেষে বঙ্গোপসাগরীয় শাখার সঙ্গে মিলিত হয়।
২. বঙ্গোপসাগরীয় শাখা: এই শাখাটি বঙ্গোপসাগর থেকে আরও জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে প্রথমে মায়ানমারের আরাকান ইয়োমা পর্বতে বাধা পায়। এরপর এটি উত্তর দিকে বেঁকে মেঘালয় মালভূমির খাসি পাহাড়ে বাধা পেয়ে মৌসিনরামে বিশ্বের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত ঘটায়। এরপর এটি হিমালয়ের সমান্তরালে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হয়ে পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, উত্তরপ্রদেশ হয়ে পাঞ্জাবে আরব সাগরীয় শাখার সঙ্গে মিলিত হয়।
(একটি মানচিত্র আঁকতে হবে যেখানে দুটি শাখার গতিপথ ও বৃষ্টিপাত অঞ্চল দেখানো থাকবে)।
৭. ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।
উত্তর:
ভারতের জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
১. মৌসুমী বায়ুর প্রভাব: ভারতের জলবায়ু প্রায় সম্পূর্ণরূপে মৌসুমী বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। এই বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের উপর ভিত্তি করে ভারতে ঋতুচক্র আবর্তিত হয়।
২. ঋতু পরিবর্তন: মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারতে চারটি সুস্পষ্ট ঋতু দেখা যায় – গ্রীষ্ম, বর্ষা, শরৎ ও শীত।
৩. বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন: ভারতের সর্বত্র সমান বৃষ্টিপাত হয় না। মৌসুমী বায়ুর গতিপথ ও পর্বতের অবস্থানের কারণে মেঘালয়ের মৌসিনরামে যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১১,০০০ মিমি-এর বেশি, সেখানে রাজস্থানের জয়সলমীরে মাত্র ১০-১২ সেমি।
৪. বৃষ্টিপাতের অনিশ্চয়তা: মৌসুমী বায়ু অত্যন্ত খামখেয়ালি। এর আগমন ও প্রত্যাগমনের সময় এবং বৃষ্টিপাতের পরিমাণে প্রতি বছর পার্থক্য দেখা যায়, যা খরা ও বন্যার কারণ হয়।
৫. উষ্ণতার বৈচিত্র্য: অক্ষাংশগত অবস্থান, উচ্চতা ও সমুদ্র থেকে দূরত্বের কারণে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে উষ্ণতার ব্যাপক পার্থক্য দেখা যায়। গ্রীষ্মে রাজস্থানে তাপমাত্রা ৫০°সে ছাড়িয়ে যায়, আবার শীতে লাদাখের দ্রাসে তাপমাত্রা -৪০°সে-এর নীচে নেমে যায়।
৬. আর্দ্র গ্রীষ্মকাল ও শুষ্ক শীতকাল: করমণ্ডল উপকূল ছাড়া ভারতের প্রায় সর্বত্রই গ্রীষ্মকাল আর্দ্র (বর্ষার কারণে) এবং শীতকাল শুষ্ক থাকে।
৮. ভারতের গ্রীষ্মকালীন ও শীতকালীন মৌসুমী বায়ুর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর:
| বৈশিষ্ট্য | গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ু (দক্ষিণ-পশ্চিম) | শীতকালীন মৌসুমী বায়ু (উত্তর-পূর্ব) |
|—|—|—|
| **প্রবাহকাল** | জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। | ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত প্রবাহিত হয়। |
| **উৎপত্তি** | ভারত মহাসাগরের উচ্চচাপ বলয় থেকে উৎপন্ন হয়। | উত্তর-পূর্ব ভারতের স্থলভাগের উচ্চচাপ বলয় থেকে উৎপন্ন হয়। |
| **প্রকৃতি** | সমুদ্রের উপর দিয়ে আসায় এটি উষ্ণ ও আর্দ্র প্রকৃতির। | স্থলভাগের উপর দিয়ে আসায় এটি শীতল ও শুষ্ক প্রকৃতির। |
| **প্রবাহের দিক** | দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে ভারতের স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। | উত্তর-পূর্ব দিক থেকে স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। |
| **প্রভাব** | এর প্রভাবে ভারতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় এবং বর্ষাকালের সূচনা হয়। | এর প্রভাবে ভারতে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না (ব্যতিক্রম করমণ্ডল উপকূল) এবং শীতকালের সূচনা হয়। |
৯. ভারতের খরাপ্রবণ এবং বন্যাপ্রবণ অঞ্চলগুলির একটি বিবরণ দাও।
উত্তর:
মৌসুমী বৃষ্টিপাতের অসম বন্টন ও অনিশ্চয়তার কারণে ভারতে খরা ও বন্যা একটি নিয়মিত ঘটনা।
খরাপ্রবণ অঞ্চল:
যেখানে বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৫০ সেমি-এর কম এবং অনিয়মিত, সেই অঞ্চলগুলি খরাপ্রবণ।
১. প্রধান অঞ্চল: রাজস্থানের থর মরুভূমি এবং তার সংলগ্ন গুজরাটের কচ্ছ ও পাঞ্জাবের দক্ষিণাংশ।
২. অন্যান্য অঞ্চল: পশ্চিমঘাট পর্বতের বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে অবস্থিত মহারাষ্ট্রের বিদর্ভ, কর্নাটকের রায়ালসীমা এবং অন্ধ্রপ্রদেশের অভ্যন্তরীণ অংশ।
বন্যাপ্রবণ অঞ্চল:
যেখানে অল্প সময়ে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় বা নদীগুলি বিপুল জল বহন করে, সেই অঞ্চলগুলি বন্যাপ্রবণ।
১. প্রধান অঞ্চল: আসামের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা। ব্রহ্মপুত্র ও তার উপনদীগুলির বিপুল জলরাশি এবং নদীখাতে পলি জমার কারণে এখানে প্রতি বছর বিধ্বংসী বন্যা হয়।
২. অন্যান্য অঞ্চল: বিহারের কোশী নদী অববাহিকা (‘বিহারের দুঃখ’), পশ্চিমবঙ্গ ও উত্তরপ্রদেশের গাঙ্গেয় সমভূমি এবং ওড়িশার মহানদী অববাহিকা।
১০. ভারতের ঋতুচক্রের উপর জেট বায়ুপ্রবাহের প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর:
ভারতের ঋতুচক্র, বিশেষ করে মৌসুমী বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমন, ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বস্তরের জেট বায়ুপ্রবাহ দ্বারা বিশেষভাবে প্রভাবিত হয়।
ক) শীতকালে পশ্চিমা জেট বায়ুর প্রভাব:
শীতকালে উপক্রান্তীয় পশ্চিমা জেট বায়ু হিমালয়ের দক্ষিণে (ভারতের উপর) অবস্থান করে। এর প্রভাবে ভারতে উচ্চচাপ বলয় শক্তিশালী হয় এবং উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু প্রবাহিত হয়। এই জেট বায়ুই ভূমধ্যসাগর থেকে পশ্চিমী ঝঞ্ঝাকে ভারতে নিয়ে আসে।
খ) গ্রীষ্মকালে পুবালি জেট বায়ুর প্রভাব:
গ্রীষ্মকালে সূর্যের উত্তরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে পশ্চিমা জেট বায়ু হিমালয়ের উত্তরে সরে যায়। এই সময় তিব্বত মালভূমি প্রচণ্ড উত্তপ্ত হলে তার ঊর্ধ্বাকাশে একটি শক্তিশালী পুবালি জেট বায়ুর সৃষ্টি হয়। এই পুবালি জেট বায়ু ভারতের উপর একটি শক্তিশালী নিম্নচাপ অক্ষ তৈরি করে এবং দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুকে প্রবলভাবে ভারতের দিকে আকর্ষণ করে আনে, যা মৌসুমী বিস্ফোরণে সাহায্য করে।
এইভাবে জেট বায়ুর অবস্থান পরিবর্তনই ভারতের ঋতুচক্রকে নিয়ন্ত্রণ করে।
ভারতের জলবায়ু class 10 প্রশ্ন উত্তর MCQ, অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : Class 10 Geography ভারতের জলবায়ু Question Answer