ভারতের মৃত্তিকা Class 10
ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৭০টি)
১. ভারতের বেশিরভাগ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে –
২. কার্পাস বা তুলা চাষের জন্য আদর্শ মৃত্তিকা হল –
৩. ‘রেগুর’ নামে পরিচিত যে মৃত্তিকা, তা হল –
৪. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার প্রধান ফসল হল –
৫. ভারতের মৃত্তিকা গবেষণাগার অবস্থিত –
৬. গাঙ্গেয় সমভূমির নবীন পলিমাটিকে বলে –
৭. মৃত্তিকা ক্ষয়ের একটি মনুষ্যসৃষ্ট কারণ হল –
৮. পার্বত্য অঞ্চলে মৃত্তিকা সংরক্ষণের একটি প্রধান পদ্ধতি হল –
৯. লোহিত মৃত্তিকার লাল রঙের কারণ হল –
১০. জাফরান চাষের জন্য বিখ্যাত মৃত্তিকা হল –
১১. গাঙ্গেয় সমভূমির প্রাচীন পলিমাটিকে বলে –
১২. ‘স্বয়ং কর্ষণ’ (Self-ploughing) দেখা যায় যে মৃত্তিকায়, তা হল –
১৩. ICAR-এর সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
১৪. চম্বল নদী উপত্যকায় যে ধরনের মৃত্তিকা ক্ষয় দেখা যায়, তা হল –
১৫. ভারতের মরু অঞ্চলের মৃত্তিকার অপর নাম হল –
১৬. হিউমাস সমৃদ্ধ মৃত্তিকা হল –
১৭. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা গঠনের প্রধান প্রক্রিয়াটি হল –
১৮. কৃষ্ণ মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়েছে যে শিলা থেকে, তা হল –
১৯. ভারতের একটি লবণাক্ত মৃত্তিকাযুক্ত অঞ্চল হল –
২০. মৃত্তিকা সংরক্ষণের একটি জৈবিক পদ্ধতি হল –
২১. পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় যে মৃত্তিকা বেশি দেখা যায়, তা হল –
২২. চাদর ক্ষয় (Sheet erosion) বেশি হয় –
২৩. কোন মৃত্তিকা জল পেলে আঠালো হয়?
২৪. ICAR ভারতকে কটি প্রধান মৃত্তিকা অঞ্চলে ভাগ করেছে?
২৫. ‘ব্যাডল্যান্ড’ বা ‘খারাপ ভূমি’ দেখা যায় –
২৬. ভারতের কোন রাজ্যে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার পরিমাণ সর্বাধিক?
২৭. কোন মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি?
২৮. সমোন্নতি রেখা বরাবর বাঁধ দিয়ে চাষ করাকে বলে –
২৯. চা চাষের জন্য উপযুক্ত মৃত্তিকা হল –
৩০. মৃত্তিকার অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব পরিমাপের একক হল –
৩১. কোন ফসলকে ‘স্বর্ণতন্তু’ বলা হয়?
৩২. ভারতের একটি ক্ষয়জাত পর্বতের উদাহরণ হল –
৩৩. মৃত্তিকা গঠনের একটি প্রধান নিয়ামক হল –
৩৪. কোন মৃত্তিকা ইটের মতো শক্ত হয়?
৩৫. রাজস্থানের মরু অঞ্চলে যে উদ্ভিদ জন্মায়, তা হল –
৩৬. কেন্দ্রীয় মরু অঞ্চল গবেষণাগার (CAZRI) অবস্থিত –
৩৭. কোন মৃত্তিকার স্থানীয় নাম ‘মোরাম’?
৩৮. ভারতের কোন রাজ্যে কৃষ্ণ মৃত্তিকা সবচেয়ে বেশি দেখা যায়?
৩৯. মৃত্তিকার উর্বরতা হ্রাসের প্রধান কারণ হল –
৪০. ল্যাটেরাইট শব্দটি এসেছে যে শব্দ থেকে, তা হল –
৪১. ভারতে চা উৎপাদনে প্রথম রাজ্য হল –
৪২. কোন ফসল কৃষ্ণ মৃত্তিকার ‘সাদা সোনা’ নামে পরিচিত?
৪৩. ‘ভাবর’ অঞ্চলে নদীগুলি অদৃশ্য হয়ে যায় কারণ –
৪৪. লবণাক্ত মৃত্তিকাকে স্থানীয় ভাষায় বলে –
৪৫. মৃত্তিকা বিজ্ঞানের চর্চাকে বলা হয় –
৪৬. কোন মৃত্তিকায় বালির ভাগ সবচেয়ে বেশি?
৪৭. ধান চাষের জন্য আদর্শ মৃত্তিকা হল –
৪৮. মৃত্তিকার জৈব পদার্থকে কী বলে?
৪৯. ‘ঝুম’ চাষ হল মৃত্তিকা ক্ষয়ের একটি –
৫০. কোন মৃত্তিকার জলনিকাশি ব্যবস্থা ভালো হওয়া প্রয়োজন?
৫১. পাঞ্জাবের নবীন পলিগঠিত সমভূমিকে বলে –
৫২. ছোটনাগপুর মালভূমিতে যে মৃত্তিকা দেখা যায়, তা হল –
৫৩. কোন মৃত্তিকার উর্বরতা সবচেয়ে কম?
৫৪. ‘খোয়াই’ ক্ষয় দেখা যায় –
৫৫. মালনাদ অঞ্চলে যে মৃত্তিকা দেখা যায়, তা হল –
৫৬. ‘সোশ্যাল ফরেস্ট্রি’ বা সামাজিক বনসৃজন হল –
৫৭. কোন মৃত্তিকা ‘চুন ও লবণে’ সমৃদ্ধ?
৫৮. মৃত্তিকার স্তরবিন্যাসকে একত্রে বলা হয় –
৫৯. মৃত্তিকার প্রধান খনিজ উপাদান হল –
৬০. কোন মৃত্তিকার অপর নাম ‘উষর’?
৬১. গম চাষের জন্য কোন মৃত্তিকা আদর্শ?
৬২. মৃত্তিকার কোন স্তরে হিউমাস থাকে?
৬৩. জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে কোন মৃত্তিকা গঠনের প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে?
৬৪. ‘শস্যাবর্তন’ কীসের উপায়?
৬৫. ‘রেগোলিথ’ কী?
৬৬. কোন মৃত্তিকা চিনা বাদাম চাষের জন্য ভালো?
৬৭. ভারতের কোন রাজ্যে সর্বাধিক মৃত্তিকা ক্ষয় হয়?
৬৮. পিট ও জলাভূমির মৃত্তিকা দেখা যায় –
৬৯. কোন ধরনের অরণ্য মৃত্তিকা ক্ষয় রোধে সবচেয়ে বেশি কার্যকর?
৭০. কোন মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়াকে ‘পেডালফার’ বলা হয়?
খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (SAQ) – মান ১ (৬০টি)
১. মৃত্তিকা কাকে বলে?
উত্তর: ভূপৃষ্ঠের উপর অবস্থিত আবহবিকারগ্রস্ত, নরম ও জৈব পদার্থ মিশ্রিত শিলাচূর্ণের স্তরকে মৃত্তিকা বলে।
২. রেগুর কী?
উত্তর: দাক্ষিণাত্য মালভূমির কৃষ্ণ মৃত্তিকাকে স্থানীয় ভাষায় রেগুর বলা হয়।
৩. ভারতের কোন মৃত্তিকা কার্পাস চাষের জন্য আদর্শ?
উত্তর: কৃষ্ণ মৃত্তিকা।
৪. খাদার কী?
উত্তর: গাঙ্গেয় সমভূমির নবীন পলিমাটিকে খাদার বলে।
৫. মৃত্তিকা ক্ষয়ের একটি প্রাকৃতিক কারণ লেখো।
উত্তর: প্রবল বৃষ্টিপাত বা বায়ুপ্রবাহ।
৬. ICAR-এর পুরো নাম কী?
উত্তর: Indian Council of Agricultural Research.
৭. হিউমাস কী?
উত্তর: মৃত্তিকার মধ্যে থাকা পচা উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষকে হিউমাস বলে।
৮. ভারতের কোন রাজ্যে সর্বাধিক লোহিত মৃত্তিকা দেখা যায়?
উত্তর: তামিলনাড়ু।
৯. ফালি চাষ কী?
উত্তর: ঢালু জমিতে আড়াআড়িভাবে ফালি বা স্ট্রিপ তৈরি করে শস্য চাষ করার পদ্ধতিকে ফালি চাষ বলে।
১০. ‘কারেওয়া’ মৃত্তিকা কোথায় দেখা যায়?
উত্তর: কাশ্মীর উপত্যকায়।
১১. কোন ফসল চাষের জন্য ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা উপযোগী?
উত্তর: কাজুবাদাম বা কফি।
১২. ভাঙ্গর কী?
উত্তর: গাঙ্গেয় সমভূমির প্রাচীন পলিমাটিকে ভাঙ্গর বলে।
১৩. ধাপ চাষ কোথায় করা হয়?
উত্তর: পার্বত্য অঞ্চলের ঢালু জমিতে।
১৪. ভারতের মরুভূমি গবেষণাগারটি কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: রাজস্থানের যোধপুরে।
১৫. কোন মৃত্তিকায় কাদার ভাগ সবচেয়ে বেশি?
উত্তর: কৃষ্ণ মৃত্তিকায়।
১৬. মৃত্তিকা সংরক্ষণের একটি প্রধান উপায় লেখো।
উত্তর: বৃক্ষরোপণ।
১৭. ল্যাটেরাইট কথাটির অর্থ কী?
উত্তর: ল্যাটিন শব্দ ‘Later’-এর অর্থ ইট। তাই ল্যাটেরাইট কথার অর্থ ইটের মতো।
১৮. কৃষ্ণ মৃত্তিকা কোন শিলা থেকে সৃষ্টি হয়?
উত্তর: ব্যাসল্ট শিলা থেকে।
১৯. ভারতের কোন রাজ্যে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার প্রাধান্য দেখা যায়?
উত্তর: মহারাষ্ট্র ও কেরালা।
২০. মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে সৃষ্ট ‘ব্যাডল্যান্ড’ কোথায় দেখা যায়?
উত্তর: চম্বল নদী উপত্যকায়।
২১. রেগোলিথ কী?
উত্তর: আবহবিকারের ফলে ভূপৃষ্ঠের আদি শিলার উপর যে বিচূর্ণীভূত শিলাস্তরের আস্তরণ তৈরি হয়, তাকে রেগোলিথ বলে।
২২. ভারতের কোন রাজ্যে ঝুম চাষ প্রচলিত আছে?
উত্তর: নাগাল্যান্ড বা মিজোরাম।
২৩. পডসল মৃত্তিকা কোথায় দেখা যায়?
উত্তর: হিমালয়ের সরলবর্গীয় অরণ্য অঞ্চলে।
২৪. একটি মনুষ্যসৃষ্ট কারণে সৃষ্ট মৃত্তিকা ক্ষয়ের উদাহরণ দাও।
উত্তর: অবৈজ্ঞানিক কৃষিকাজ বা নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন।
২৫. ‘উষর’ বা ‘কালার’ কোন মৃত্তিকাকে বলা হয়?
উত্তর: লবণাক্ত ও ক্ষারীয় মৃত্তিকাকে।
২৬. কোন মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা সবচেয়ে কম?
উত্তর: মরু মৃত্তিকা বা বেলে মাটির।
২৭. মৃত্তিকা গঠনের প্রক্রিয়াকে কী বলে?
উত্তর: পেডোজেনেসিস।
২৮. সমোন্নতিরেখা চাষ কী?
উত্তর: পার্বত্য ঢালের সমোন্নতি রেখা বরাবর বাঁধ দিয়ে বা চাষ করে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করার পদ্ধতি।
২৯. লোহিত মৃত্তিকা কোন শিলা থেকে তৈরি হয়?
উত্তর: গ্রানাইট ও নিস শিলা থেকে।
৩০. মৃত্তিকার pH বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: এটি মৃত্তিকার অম্লত্ব ও ক্ষারত্বের পরিমাপক।
৩১. কোন মৃত্তিকা আর্দ্র ঋতুতে নরম ও শুষ্ক ঋতুতে কঠিন হয়?
উত্তর: ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা।
৩২. ভারতের কোন রাজ্যে পিট মৃত্তিকা দেখা যায়?
উত্তর: কেরালা।
৩৩. ভারতের একটি সক্রিয় নালি ক্ষয় অঞ্চলের নাম লেখো।
উত্তর: মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়র অঞ্চল।
৩৪. কোন মৃত্তিকা চিনা বাদাম চাষের জন্য উপযুক্ত?
উত্তর: লোহিত মৃত্তিকা।
৩৫. শস্যাবর্তন কী?
উত্তর: জমির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য একই জমিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসল চাষ করার পদ্ধতিকে শস্যাবর্তন বলে।
৩৬. ভারতের কোন অঞ্চলে মৃত্তিকা গবেষণাগার রয়েছে?
উত্তর: ভোপাল (मध्य प्रदेश)।
৩৭. মৃত্তিকার কোন স্তরকে ‘Top Soil’ বলা হয়?
উত্তর: A-স্তরকে।
৩৮. ‘টেরারোসা’ কোন মৃত্তিকার অপর নাম?
উত্তর: লোহিত মৃত্তিকার।
৩৯. কোন মৃত্তিকায় বালির ভাগ বেশি থাকে?
উত্তর: মরু মৃত্তিকায়।
৪০. কৃষ্ণ মৃত্তিকা কালো হয় কেন?
উত্তর: টাইটেনিফেরাস ম্যাগনেটাইট যৌগের উপস্থিতির জন্য।
৪১. গালি ক্ষয় কী?
উত্তর: বৃষ্টির জলপ্রবাহের ফলে মৃত্তিকার উপর সরু সরু নালার মতো খাঁজ তৈরি হলে তাকে গালি বা নালি ক্ষয় বলে।
৪২. ভারতের কোন রাজ্যে সর্বাধিক গম উৎপাদিত হয়?
উত্তর: উত্তরপ্রদেশ।
৪৩. ‘দোআঁশ’ মাটি কী?
উত্তর: যে মাটিতে বালি, পলি ও কাদার ভাগ প্রায় সমান থাকে, তাকে দোআঁশ মাটি বলে।
৪৪. সামাজিক বনসৃজন কী?
উত্তর: সমাজের উদ্যোগে পতিত বা অব্যবহৃত জমিতে গাছ লাগিয়ে বনভূমি তৈরি করাকে সামাজিক বনসৃজন বলে।
৪৫. মৃত্তিকা দূষণের একটি কারণ লেখো।
উত্তর: কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার।
৪৬. কোন ফসলকে ‘তৃষ্ণার্ত ফসল’ বলা হয়?
উত্তর: ধান।
৪৭. ভারতের কোন অঞ্চলে সর্বাধিক পলি মৃত্তিকা দেখা যায়?
উত্তর: উত্তরের সমভূমি অঞ্চলে।
৪৮. মৃত্তিকা প্রোফাইল কী?
উত্তর: ভূপৃষ্ঠ থেকে আদি শিলা পর্যন্ত মৃত্তিকার উল্লম্ব প্রস্থচ্ছেদকে মৃত্তিকা প্রোফাইল বলে।
৪৯. মৃত্তিকার একটি ভৌত ধর্মের উল্লেখ করো।
উত্তর: মৃত্তিকার গ্রথন বা বর্ণ।
৫০. কোন মৃত্তিকা কফি চাষের জন্য উপযুক্ত?
উত্তর: ল্যাটেরাইট বা পার্বত্য মৃত্তিকা।
৫১. পাঞ্জাবের প্রাচীন পলিগঠিত সমভূমিকে কী বলে?
উত্তর: ধায়া।
৫২. কৃষ্ণ মৃত্তিকার মূল উপাদান কী?
উত্তর: কাদা ও পলি।
৫৩. কোন মৃত্তিকায় লোহা ও অ্যালুমিনিয়ামের ভাগ বেশি থাকে?
উত্তর: ল্যাটেরাইট মৃত্তিকায়।
৫৪. মৃত্তিকা ক্ষয়ের একটি ফলাফল লেখো।
উত্তর: জমির উর্বরতা হ্রাস।
৫৫. ভারতের কোন রাজ্যে ইক্ষু উৎপাদনে প্রথম?
উত্তর: উত্তরপ্রদেশ।
৫৬. ‘এলুভিয়েশন’ প্রক্রিয়া কোন স্তরে ঘটে?
উত্তর: A-স্তরে।
৫৭. ‘ইলুভিয়েশন’ প্রক্রিয়া কোন স্তরে ঘটে?
উত্তর: B-স্তরে।
৫৮. কোন মৃত্তিকার অপর নাম ‘চেরনোজেম’?
উত্তর: কৃষ্ণ মৃত্তিকার।
৫৯. ভারতের কোন রাজ্যে সর্বাধিক তুলা উৎপাদিত হয়?
উত্তর: গুজরাট।
৬০. কোন মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়াকে ‘গ্লেইজেশন’ বলে?
উত্তর: জলাভূমির মৃত্তিকা গঠন প্রক্রিয়াকে।
গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ২ (২৫টি)
১. পলি মৃত্তিকার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: ১. এই মৃত্তিকা খুব উর্বর এবং এতে পটাশ ও চুনের ভাগ বেশি থাকে। ২. এই মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা মাঝারি এবং এটি কৃষিকাজের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
২. কৃষ্ণ মৃত্তিকা কালো রঙের হয় কেন?
উত্তর: কৃষ্ণ মৃত্তিকা ব্যাসল্ট শিলা থেকে সৃষ্টি হয়, যা লৌহ যৌগে সমৃদ্ধ। এই মৃত্তিকায় টাইটেনিফেরাস ম্যাগনেটাইট নামক লৌহ যৌগের উপস্থিতির কারণেই এর রঙ কালো হয়।
৩. মৃত্তিকা সংরক্ষণের দুটি পদ্ধতি উল্লেখ করো।
উত্তর: ১. বৃক্ষরোপণ: গাছের শিকড় মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে, ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ হয়। ২. ধাপ চাষ: পার্বত্য ঢালে সিঁড়ির ধাপের মতো জমি তৈরি করে চাষ করলে জলের গতি কমে যায় এবং মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়।
৪. খাদার ও ভাঙ্গরের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: খাদার: এটি নদীর তীরবর্তী নবীন পলিগঠিত নিচু অঞ্চল, যা প্রতি বছর প্লাবিত হয়। এটি খুব উর্বর। ভাঙ্গর: এটি নদী থেকে দূরে অবস্থিত প্রাচীন পলিগঠিত উঁচু অঞ্চল, যা সাধারণত প্লাবিত হয় না। এটি খাদারের চেয়ে কম উর্বর।
৫. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা অনুর্বর কেন?
উত্তর: ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে গঠিত হয়, যেখানে প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ধৌত বা লিচিং প্রক্রিয়ায় মাটির উপরিস্তরের সিলিকা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ ধুয়ে নীচে চলে যায়। এর ফলে মাটিতে শুধুমাত্র লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড পড়ে থাকে এবং মাটি অনুর্বর হয়ে যায়।
৬. ‘ঝুম চাষ’ কীভাবে মৃত্তিকা ক্ষয় ঘটায়?
উত্তর: ঝুম চাষে পার্বত্য অঞ্চলের জঙ্গল পুড়িয়ে পরিষ্কার করে চাষ করা হয়। কয়েক বছর পর সেই জমির উর্বরতা কমে গেলে চাষিরা অন্য জায়গায় গিয়ে একই পদ্ধতিতে চাষ করে। এর ফলে বনভূমি ধ্বংস হয় এবং মাটির উপরিস্তর আলগা হয়ে গিয়ে সহজেই বৃষ্টি বা বায়ুর দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
৭. ‘শস্যাবর্তন’ কৃষি পদ্ধতির গুরুত্ব কী?
উত্তর: শস্যাবর্তন পদ্ধতির মাধ্যমে জমির উর্বরতা বজায় রাখা যায়। একই জমিতে বিভিন্ন ফসল পর্যায়ক্রমে চাষ করলে মাটি তার হারানো পুষ্টি (যেমন – নাইট্রোজেন) ফিরে পায়। এটি মাটির গঠন উন্নত করে এবং রোগপোকার আক্রমণও কমায়।৮. ভারতের মরু অঞ্চলের মৃত্তিকার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: ১. এই মৃত্তিকা মূলত বালুকাময় এবং এর জলধারণ ক্ষমতা খুব কম। ২. এই মৃত্তিকায় লবণ ও চুনের ভাগ বেশি থাকে কিন্তু জৈব পদার্থের পরিমাণ খুব কম।
৯. ‘সামাজিক বনসৃজন’-এর দুটি উদ্দেশ্য লেখো।
উত্তর: ১. পতিত বা অব্যবহৃত জমিতে গাছ লাগিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করা এবং মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করা। ২. গ্রামীণ মানুষের জন্য জ্বালানি কাঠ, ফল ও পশুখাদ্যের জোগান দেওয়া এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা।
১০. জলবিভাজিকা উন্নয়ন কীভাবে মৃত্তিকা সংরক্ষণে সাহায্য করে?
উত্তর: জলবিভাজিকা উন্নয়নে ছোট ছোট বাঁধ, চেক ড্যাম ইত্যাদি তৈরি করে বৃষ্টির জলের গতি কমানো হয়। এর ফলে জলপ্রবাহের দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয় কমে যায়। এছাড়া, এই পদ্ধতিতে বৃক্ষরোপণও করা হয়, যা মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে।
১১. ভাবর ও তরাই অঞ্চলের পার্থক্য কী?
উত্তর: ভাবর: এটি শিবালিকের পাদদেশে অবস্থিত নুড়ি-পাথরযুক্ত, সচ্ছিদ্র ও অনুর্বর অঞ্চল। এখানে নদী অদৃশ্য হয়ে যায়। তরাই: এটি ভাবরের দক্ষিণে অবস্থিত স্যাঁতস্যাঁতে, ঘন অরণ্যময় ও উর্বর জলাভূমি। এখানে ভাবরের লুপ্ত নদীগুলি পুনরায় ভূপৃষ্ঠে আত্মপ্রকাশ করে।
১২. ‘রেগুর’ মৃত্তিকার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: ১. এই মৃত্তিকার জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি এবং জল পেলে এটি খুব আঠালো হয়। ২. শুষ্ক ঋতুতে এই মাটি শুকিয়ে গিয়ে বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি করে, যা ‘স্বয়ং কর্ষণ’ (self-ploughing) নামে পরিচিত।
১৩. মৃত্তিকা ক্ষয়ের দুটি ফলাফল লেখো।
উত্তর: ১. জমির উপরিস্তরের উর্বর মাটি অপসারিত হওয়ায় কৃষিজ উৎপাদন কমে যায়। ২. ক্ষয়প্রাপ্ত মাটি নদীর খাতে জমা হয়ে নাব্যতা কমিয়ে দেয়, যা বন্যার কারণ হয়।
১৪. ধাপ চাষ ও ফালি চাষের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ধাপ চাষ: এটি খুব খাড়া পার্বত্য ঢালে সিঁড়ির ধাপের মতো জমি তৈরি করে করা হয়। ফালি চাষ: এটি অপেক্ষাকৃত কম ঢালু জমিতে আড়াআড়িভাবে ফালি তৈরি করে করা হয়। দুটিই মৃত্তিকা ক্ষয় রোধে সহায়ক।
১৫. ভারতের দুটি প্রধান মৃত্তিকা অঞ্চলের নাম ও সেখানে উৎপাদিত একটি করে ফসলের নাম লেখো।
উত্তর: ১. পলি মৃত্তিকা অঞ্চল: প্রধান ফসল ধান। ২. কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চল: প্রধান ফসল তুলা।
১৬. হিউমাস কী? এর গুরুত্ব কী?
উত্তর: মৃত্তিকার মধ্যে থাকা পচনশীল জৈব পদার্থকে হিউমাস বলে। এটি মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি করে, জলধারণ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মাটির গঠনকে উন্নত করে।
১৭. মৃত্তিকা সংরক্ষণে বৃক্ষরোপণের ভূমিকা কী?
উত্তর: গাছের শিকড় মাটিকে জালের মতো শক্ত করে ধরে রাখে, যা বৃষ্টিপাত বা বায়ুর দ্বারা মাটির ক্ষয় রোধ করে। গাছের পাতা বৃষ্টির ফোঁটার আঘাত থেকে মাটিকে রক্ষা করে এবং ঝরে পড়া পাতা পচে গিয়ে হিউমাস তৈরি করে মাটির উর্বরতা বাড়ায়।১৮. লোহিত মৃত্তিকা ও ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: লোহিত মৃত্তিকা: এটিতে লৌহ অক্সাইডের পরিমাণ বেশি থাকে এবং এটি তুলনামূলকভাবে উর্বর। ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা: এটিতে লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড বেশি থাকে এবং ধৌত প্রক্রিয়ার কারণে এটি কম উর্বর।
১৯. ‘ব্যাডল্যান্ড টোপোগ্রাফি’ বা ‘খারাপ ভূমিরূপ’ কীভাবে তৈরি হয়?
উত্তর: নরম ও শিথিল শিলাযুক্ত অঞ্চলে, যেমন – চম্বল উপত্যকায়, নদীর জলপ্রবাহ বা প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে অসংখ্য ছোট-বড় নালা বা গালি তৈরি হয়। এই নালাগুলি ক্রমশ বড় হয়ে জমিকে চাষাবাদের অযোগ্য, বন্ধুর ও বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ডে পরিণত করে, যা ‘ব্যাডল্যান্ড’ নামে পরিচিত।২০. লবণাক্ত মৃত্তিকা কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর: শুষ্ক অঞ্চলে অতিরিক্ত জলসেচ করলে বাষ্পীভবনের সময় মাটির নীচের লবণ কৈশিক প্রক্রিয়ায় উপরে উঠে এসে জমা হয়। এছাড়া, উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ারের লবণাক্ত জল জমিতে প্রবেশ করলেও লবণাক্ত মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।
২১. পার্বত্য মৃত্তিকার দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: ১. এই মৃত্তিকার স্তর খুব পাতলা এবং এতে পাথর ও কাঁকরের ভাগ বেশি থাকে। ২. ঠাণ্ডা জলবায়ুর কারণে জৈব পদার্থ ধীরে ধীরে পচে বলে এই মাটিতে হিউমাসের পরিমাণ বেশি থাকে, তাই এটি অম্লধর্মী হয়।
২২. মৃত্তিকা দূষণের দুটি কারণ লেখো।
উত্তর: ১. কৃষিক্ষেত্রে অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার। ২. শিল্প ও পৌর আবর্জনা, বিশেষত প্লাস্টিক ও বিষাক্ত রাসায়নিক, মাটিতে নিক্ষেপ করা।
২৩. ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চলকে ‘কার্পাস বলয়’ বলা হয় কেন?
উত্তর: ভারতের দাক্ষিণাত্য মালভূমির কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা রেগুর মাটি কার্পাস বা তুলা চাষের জন্য অত্যন্ত আদর্শ। এই অঞ্চলের মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ রাজ্যে প্রচুর পরিমাণে তুলা উৎপাদিত হয়। তাই এই অঞ্চলকে ভারতের ‘কার্পাস বলয়’ বলা হয়।২৪. মৃত্তিকা গঠনের দুটি মৌলিক প্রক্রিয়া কী কী?
উত্তর: মৃত্তিকা গঠনের দুটি মৌলিক প্রক্রিয়া হল:১. আবহবিকার: যান্ত্রিক ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় ভূপৃষ্ঠের আদি শিলা চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে রেগোলিথ তৈরি করে।
২. হিউমিফিকেশন: উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ জীবাণু দ্বারা বিয়োজিত হয়ে হিউমাস তৈরি করে এবং মাটির সঙ্গে মেশে।
২৫. ‘জৈব চাষ’ বা ‘Organic Farming’ বলতে কী বোঝায়?
উত্তর: যে কৃষি ব্যবস্থায় কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার না করে শুধুমাত্র জৈব সার (যেমন – কম্পোস্ট, গোবর সার) এবং প্রাকৃতিক উপায়ে রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ করে ফসল উৎপাদন করা হয়, তাকে জৈব চাষ বলে। এটি পরিবেশবান্ধব এবং মৃত্তিকার স্বাস্থ্য রক্ষা করে।ঘ) সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৩ (২৫টি)
১. ভারতের পলি মৃত্তিকার বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
উত্তর: বণ্টন: পলি মৃত্তিকা ভারতের বৃহত্তম মৃত্তিকা অঞ্চল (প্রায় ৪৩%)। এটি মূলত সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের সুবিশাল সমভূমি (পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম) এবং পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমিতে দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:
১. এটি নদী দ্বারা বাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে গঠিত, তাই এটি খুব উর্বর।
২. এই মৃত্তিকায় পটাশ ও চুনের ভাগ বেশি থাকলেও নাইট্রোজেন ও হিউমাসের পরিমাণ কম।
৩. এর গ্রথন দোআঁশ প্রকৃতির এবং জলধারণ ক্ষমতা মাঝারি।
৪. এই মৃত্তিকা ধান, গম, পাট, আঁখ ইত্যাদি ফসল চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
২. ভারতের কৃষ্ণ মৃত্তিকার বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
উত্তর: বণ্টন: এই মৃত্তিকা মূলত দাক্ষিণাত্যের লাভা গঠিত অঞ্চলে দেখা যায়। মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অংশে এই মৃত্তিকা বিস্তৃত।
বৈশিষ্ট্য:
১. ব্যাসল্ট শিলা থেকে সৃষ্টি হওয়ায় এবং টাইটেনিফেরাস ম্যাগনেটাইটের উপস্থিতির কারণে এর রঙ কালো।
২. এর জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি। জল পেলে এটি খুব আঠালো হয়, আবার শুকিয়ে গেলে ফেটে চৌচির হয়ে যায়।
৩. এটি চুন, লোহা, ম্যাগনেসিয়াম ও অ্যালুমিনিয়ামে সমৃদ্ধ, কিন্তু নাইট্রোজেন ও ফসফরাসের পরিমাণ কম।
৪. এই মৃত্তিকা তুলা চাষের জন্য সবচেয়ে আদর্শ, তাই একে ‘কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা’ বা ‘রেগুর’ বলে।
৩. মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রধান কারণগুলি কী কী?
উত্তর: মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
ক) প্রাকৃতিক কারণ:
১. প্রবল বৃষ্টিপাত: বৃষ্টির ফোঁটার আঘাতে এবং জলপ্রবাহের ফলে মাটির উপরিস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
২. বায়ুপ্রবাহ: শুষ্ক অঞ্চলে প্রবল বায়ুপ্রবাহ আলগা মাটিকে উড়িয়ে নিয়ে যায়।
৩. নদীর কার্য: নদীর স্রোত তীরবর্তী অঞ্চলের মাটি ক্ষয় করে।
৪. ভূমির ঢাল: খাড়া পার্বত্য ঢালে জলের গতি বেশি হওয়ায় মৃত্তিকা ক্ষয় বেশি হয়।
খ) মনুষ্যসৃষ্ট কারণ:
১. নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন: গাছপালা কেটে ফেলার ফলে মাটির বাঁধন আলগা হয়ে যায়।
২. অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ: অতিরিক্ত পশুচারণের ফলে মাটির উপরকার তৃণভূমির আচ্ছাদন নষ্ট হয়ে যায়।
৩. অবৈজ্ঞানিক কৃষিকাজ: ঝুম চাষ এবং ভুল পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
৪. মৃত্তিকা সংরক্ষণের প্রধান পদ্ধতিগুলি আলোচনা করো।
উত্তর: মৃত্তিকা সংরক্ষণের প্রধান পদ্ধতিগুলি হল:
ক) কৃষিভিত্তিক পদ্ধতি:
১. ধাপ চাষ: পার্বত্য ঢালে সিঁড়ির মতো ধাপ তৈরি করে চাষ করা।
২. ফালি চাষ: ঢালু জমিতে আড়াআড়ি ফালি তৈরি করে শস্য ও ঘাস চাষ করা।
৩. সমোন্নতিরেখা চাষ: সমোন্নতি রেখা বরাবর বাঁধ দিয়ে চাষ করা।
৪. শস্যাবর্তন: জমিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসল চাষ করে উর্বরতা বজায় রাখা।
খ) বনসৃজন পদ্ধতি:
১. বৃক্ষরোপণ: পতিত জমিতে বা ক্ষয়প্রবণ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো।
২. সামাজিক বনসৃজন: সমাজের উদ্যোগে পতিত জমিতে বনভূমি তৈরি করা।
গ) অন্যান্য পদ্ধতি:
১. নিয়ন্ত্রিত পশুচারণ: পশুচারণ নিয়ন্ত্রণ করে তৃণভূমিকে রক্ষা করা।
২. গালি ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ: ছোট ছোট বাঁধ বা চেক ড্যাম তৈরি করে নালি ক্ষয় রোধ করা।
৫. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার গঠন, বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: গঠন: ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা উষ্ণ ও আর্দ্র ক্রান্তীয় অঞ্চলে গঠিত হয়, যেখানে শুষ্ক ও আর্দ্র ঋতু পর্যায়ক্রমে আসে। প্রবল বৃষ্টিপাতের কারণে ধৌত বা লিচিং প্রক্রিয়ায় মাটির উপরিস্তরের সিলিকা ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ ধুয়ে নীচে চলে যায়। এর ফলে মাটিতে শুধুমাত্র অদ্রবণীয় লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইড পড়ে থাকে।
বণ্টন: এই মৃত্তিকা পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, মেঘালয় এবং পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতের কিছু অংশে দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:
১. এর রঙ ইটের মতো লাল।
২. এটি অত্যন্ত অনুর্বর এবং এতে বালির ভাগ বেশি থাকে।
৩. শুকিয়ে গেলে এটি ইটের মতো শক্ত হয়ে যায়। কাজুবাদাম, কফি, চা ইত্যাদি ফসল এই মাটিতে ভালো হয়।
৬. ভারতের মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলাফল আলোচনা করো।
উত্তর: ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলাফল অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী:
১. উর্বরতা হ্রাস ও উৎপাদন কমে যাওয়া: মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে জমির উপরিস্তরের উর্বর মাটি (Top Soil) অপসারিত হয়ে যায়, যার ফলে কৃষিজ উৎপাদন মারাত্মকভাবে কমে যায়।
২. বন্যা ও খরা: ক্ষয়প্রাপ্ত মাটি নদীর খাতে জমা হয়ে নাব্যতা কমিয়ে দেয়, ফলে বর্ষাকালে বন্যা হয়। আবার, মাটির জলধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
৩. মরুভূমির প্রসার: বায়ুপ্রবাহের দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয়ের ফলে মরুভূমি পার্শ্ববর্তী উর্বর অঞ্চলের দিকে প্রসারিত হতে থাকে।
৪. ভূমিরূপের পরিবর্তন: নালি ক্ষয়ের ফলে চম্বল উপত্যকার মতো ‘ব্যাডল্যান্ড’ বা বন্ধুর ভূমিরূপ তৈরি হয়, যা চাষাবাদের অযোগ্য।
৭. মৃত্তিকা গঠনে আদি শিলা ও জলবায়ুর ভূমিকা কী?
উত্তর: আদি শিলার ভূমিকা: মৃত্তিকার গঠন, রঙ ও খনিজ উপাদান মূলত আদি শিলার উপর নির্ভর করে। যেমন –
১. ব্যাসল্ট শিলা থেকে কালো রঙের, কাদা সমৃদ্ধ কৃষ্ণ মৃত্তিকা তৈরি হয়।
২. গ্রানাইট ও নিস শিলা থেকে লাল রঙের, লৌহ সমৃদ্ধ লোহিত মৃত্তিকা তৈরি হয়।
৩. বেলেপাথর থেকে বালুকাময় মরু মৃত্তিকা তৈরি হয়।
জলবায়ুর ভূমিকা: জলবায়ু মৃত্তিকা গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ন্ত্রক।
১. বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতা আবহবিকারের হারকে নিয়ন্ত্রণ করে। উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে রাসায়নিক আবহবিকার বেশি হয়।
২. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা গঠনের জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু এবং পর্যায়ক্রমিক শুষ্ক ও আর্দ্র ঋতু প্রয়োজন।
৩. মরু অঞ্চলের শুষ্ক জলবায়ুতে যান্ত্রিক আবহবিকার বেশি হয়।
৮. ভারতের পার্বত্য মৃত্তিকার বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: বণ্টন: এই মৃত্তিকা মূলত হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে (জম্মু ও কাশ্মীর, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ) এবং দক্ষিণ ভারতের নীলগিরি, আনাইমালাই পর্বতে দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:
১. এটি একটি অসম্পূর্ণ বা অপরিণত মৃত্তিকা। এর স্তর খুব পাতলা এবং এতে পাথর, কাঁকর ও বালির ভাগ বেশি থাকে।
২. ঠাণ্ডা জলবায়ুর কারণে জৈব পদার্থ ধীরে ধীরে পচে বলে এই মাটিতে হিউমাসের পরিমাণ বেশি থাকে।
৩. এটি সাধারণত অম্লধর্মী (Acidic) প্রকৃতির হয়।
৪. এই মৃত্তিকা চা, কফি, মশলা এবং বিভিন্ন ধরনের ফল (আপেল, নাসপাতি) চাষের জন্য উপযুক্ত।
৯. ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলের মৃত্তিকার একটি বিবরণ দাও।
উত্তর: ভারতের উপকূলীয় অঞ্চলে মূলত দুই ধরনের মৃত্তিকা দেখা যায়:
ক) উপকূলীয় পলি মৃত্তিকা: নদীর মোহনায় এবং উপকূলীয় সমভূমিতে এই মৃত্তিকা দেখা যায়। এটি উর্বর এবং ধান ও নারকেল চাষের জন্য উপযুক্ত।
খ) লবণাক্ত ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা: উপকূলের নিচু অংশে, বিশেষত বদ্বীপ অঞ্চলে, জোয়ারের জল প্রবেশ করার কারণে লবণাক্ত মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়। সুন্দরবন অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়, যা ম্যানগ্রোভ অরণ্যের জন্য আদর্শ। গুজরাটের কচ্ছের রান অঞ্চলেও লবণাক্ত মৃত্তিকা দেখা যায়। এই মাটিতে সাধারণ ফসল ভালো হয় না।
১০. ভারতের মৃত্তিকা সংরক্ষণে গৃহীত প্রধান ব্যবস্থাগুলি কী কী?
উত্তর: ভারতে মৃত্তিকা সংরক্ষণের জন্য একাধিক সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে:
১. কেন্দ্রীয় মৃত্তিকা সংরক্ষণ বোর্ড স্থাপন: ১৯৫৩ সালে এই বোর্ড স্থাপন করা হয়, যা মৃত্তিকা ক্ষয় রোধে বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে।
২. বনসৃজন কর্মসূচি: সামাজিক বনসৃজন, কৃষি বনসৃজন ইত্যাদি প্রকল্পের মাধ্যমে বৃক্ষরোপণ করে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
৩. মরুভূমি প্রসার রোধ: যোধপুরে অবস্থিত কেন্দ্রীয় মরু অঞ্চল গবেষণাগার (CAZRI) মরুভূমির প্রসার রোধে বিভিন্ন গবেষণা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
৪. জলবিভাজিকা উন্নয়ন: এই প্রকল্পের মাধ্যমে জল ও মৃত্তিকার সামগ্রিক সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার উপর জোর দেওয়া হচ্ছে।
৫. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমের দ্বারা সাধারণ মানুষকে মৃত্তিকা সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সচেতন করা হচ্ছে।
১১. লোহিত মৃত্তিকার বৈশিষ্ট্য ও উৎপাদিত ফসল আলোচনা করো।
উত্তর: বৈশিষ্ট্য:
১. এই মৃত্তিকা প্রাচীন গ্রানাইট ও নিস শিলা থেকে সৃষ্টি হয়েছে।
২. ফেরিক অক্সাইড বা লৌহ যৌগের উপস্থিতির কারণে এর রঙ লাল হয়।
৩. এর জলধারণ ক্ষমতা কম এবং এটি সাধারণত দোআঁশ প্রকৃতির হয়।
৪. এটি কৃষ্ণ বা পলি মৃত্তিকার মতো উর্বর নয়, তবে জলসেচ ও সার প্রয়োগ করে চাষাবাদ করা যায়।
উৎপাদিত ফসল: এই মৃত্তিকায় মূলত চিনা বাদাম, জোয়ার, বাজরা, রাগি এবং বিভিন্ন ধরনের ডাল চাষ করা হয়।
১২. ‘ভাবর’ ও ‘ভাঙ্গর’-এর মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: ভাবর: এটি শিবালিক হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত একটি নুড়ি, পাথর ও বালি পূর্ণ সচ্ছিদ্র ভূভাগ। এখানে নদীর জলধারা ভূগর্ভে অদৃশ্য হয়ে যায়। এটি কৃষিকাজের অনুপযুক্ত।
ভাঙ্গর: এটি উত্তরের সমভূমির নদী থেকে দূরে অবস্থিত একটি প্রাচীন পলিগঠিত উঁচু অঞ্চল। এটি সাধারণত বন্যা প্লাবিত হয় না এবং এর উর্বরতা খাদারের চেয়ে কম।
১৩. মৃত্তিকা ক্ষয়ে ‘গালি’ ও ‘রেভাইন’-এর ভূমিকা কী?
উত্তর: গালি (Gully): বৃষ্টির জলপ্রবাহের ফলে মৃত্তিকার উপর যখন আঙুলের মতো সরু সরু নালার সৃষ্টি হয়, তখন তাকে গালি ক্ষয় বলে। এটি মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রাথমিক পর্যায়।রেভাইন (Ravine): গালিগুলি যখন ক্রমশ বড়, চওড়া ও গভীর হয়ে পরস্পরের সঙ্গে মিলিত হয়ে একটি অত্যন্ত বন্ধুর ও বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড তৈরি করে, তখন তাকে রেভাইন বলে। চম্বল উপত্যকার রেভাইন ভারতের ‘ব্যাডল্যান্ড’ ভূমিরূপের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ।
১৪. ভারতের মরু মৃত্তিকার বণ্টন ও বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: বণ্টন: এই মৃত্তিকা মূলত রাজস্থানের পশ্চিমাংশে (থর মরুভূমি) এবং গুজরাট, পাঞ্জাব ও হরিয়ানার কিছু শুষ্ক অংশে দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য:
১. এই মৃত্তিকা মূলত বালুকাময় এবং এর জলধারণ ক্ষমতা অত্যন্ত কম।
২. এতে লবণ, ফসফেট ও চুনের পরিমাণ বেশি থাকে, কিন্তু নাইট্রোজেন ও হিউমাসের পরিমাণ খুব কম।
৩. এটি সাধারণত ক্ষারীয় প্রকৃতির হয়।
৪. জলসেচের সাহায্যে এই মাটিতে জোয়ার, বাজরা, মিলেট, গম ও তুলার মতো ফসল চাষ করা হয়।
১৫. মৃত্তিকা সংরক্ষণে জৈবিক পদ্ধতিগুলি কী কী?
উত্তর: মৃত্তিকা সংরক্ষণে জৈবিক পদ্ধতিগুলি হল মূলত উদ্ভিদকে ব্যবহার করে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করা।১. বৃক্ষরোপণ ও বনসৃজন: গাছের শিকড় মাটিকে আঁকড়ে ধরে রাখে, ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় কম হয়।
২. তৃণভূমির আচ্ছাদন তৈরি: পতিত জমিতে ঘাস লাগিয়ে মাটির উপরিস্তরকে ঢেকে রাখলে বায়ু বা জলের দ্বারা ক্ষয় কমে যায়।
৩. শস্য দ্বারা আচ্ছাদন (Cover Cropping): মূল ফসলের মাঝে বা ফসল তোলার পর জমিতে শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদ বা অন্যান্য ফসল চাষ করে জমিকে ঢেকে রাখা হয়।
১৬. পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে অতিরিক্ত জলসেচের কুফল কী?
উত্তর: পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে সবুজ বিপ্লবের সময় থেকে অতিরিক্ত জলসেচ করা হচ্ছে, যার কিছু কুফল দেখা দিয়েছে:
১. অতিরিক্ত জলসেচের ফলে মাটির নীচের লবণ কৈশিক প্রক্রিয়ায় উপরে উঠে এসে মাটির উপরিস্তরে জমা হচ্ছে। এর ফলে মাটি লবণাক্ত ও ক্ষারীয় হয়ে উর্বরতা হারাচ্ছে।
২. অপরিকল্পিতভাবে ভৌমজল উত্তোলনের ফলে ভৌমজলের স্তর দ্রুত নীচে নেমে যাচ্ছে, যা ভবিষ্যতে পানীয় ও সেচের জলের সংকট তৈরি করতে পারে।
১৭. ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে কোন কোন ধরনের মৃত্তিকা দেখা যায়?
উত্তর: ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চতা ও জলবায়ুর তারতম্য অনুসারে বিভিন্ন ধরনের মৃত্তিকা দেখা যায়:
১. পডসল মৃত্তিকা: হিমালয়ের সরলবর্গীয় অরণ্য অঞ্চলে (২০০০-৩০০০ মিটার উচ্চতায়) এই ধূসর রঙের, অম্লধর্মী মৃত্তিকা দেখা যায়।
২. পার্বত্য তৃণভূমি মৃত্তিকা: অধিক উচ্চতায় আলপীয় তৃণভূমি অঞ্চলে এই কালো রঙের, হিউমাস সমৃদ্ধ মৃত্তিকা দেখা যায়।
৩. তরাই মৃত্তিকা: হিমালয়ের পাদদেশের স্যাঁতস্যাঁতে তরাই অঞ্চলে এই উর্বর মৃত্তিকা দেখা যায়।
১৮. মৃত্তিকা গঠনে সময়ের ভূমিকা কী?
উত্তর: মৃত্তিকা গঠন একটি অত্যন্ত ধীর ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া।১. একটি পরিণত মৃত্তিকা স্তর (Profile) তৈরি হতে কয়েক হাজার বছর সময় লাগে।
২. নবীন পলিমাটি (খাদার) অল্প সময়ে গঠিত হয়, তাই এর স্তরবিন্যাস সুস্পষ্ট নয়।
৩. প্রাচীন পলিমাটি (ভাঙ্গর) অনেক সময় ধরে গঠিত হওয়ায় এর স্তরবিন্যাস সুস্পষ্ট এবং এতে কंकর বা চুনের স্তর দেখা যায়।
সুতরাং, সময়ের উপর মৃত্তিকার গভীরতা, স্তরবিন্যাস এবং পরিপক্কতা নির্ভর করে।
১৯. কৃষ্ণ মৃত্তিকা ও লোহিত মৃত্তিকার মধ্যে তিনটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর: | বৈশিষ্ট্য | কৃষ্ণ মৃত্তিকা | লোহিত মৃত্তিকা | |—|—|—| | **রঙ** | টাইটেনিফেরাস ম্যাগনেটাইটের জন্য রঙ কালো হয়। | ফেরিক অক্সাইডের জন্য রঙ লাল হয়। | | **গঠন** | ব্যাসল্ট শিলা থেকে সৃষ্টি হয়েছে। | গ্রানাইট ও নিস শিলা থেকে সৃষ্টি হয়েছে। | | **জলধারণ ক্ষমতা** | জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি। | জলধারণ ক্ষমতা কম। | | **প্রধান ফসল** | তুলা। | চিনা বাদাম। |
২০. ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের দুটি প্রধান অঞ্চল চিহ্নিত করো।
উত্তর: ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের দুটি প্রধান অঞ্চল হল:
১. চম্বল ও যমুনা নদী উপত্যকা: এখানে নালি ক্ষয়ের (Gully Erosion) ফলে অত্যন্ত বন্ধুর ‘ব্যাডল্যান্ড’ বা ‘রেভাইন’ ভূমিরূপ তৈরি হয়েছে।
২. ছোটনাগপুর মালভূমি ও পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিমাংশ: এখানে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা অঞ্চলে চাদর ক্ষয় (Sheet Erosion) এবং খোয়াই ক্ষয় দেখা যায়।
২১. মৃত্তিকা দূষণ রোধের উপায়গুলি কী কী?
উত্তর: মৃত্তিকা দূষণ রোধের প্রধান উপায়গুলি হল:
১. কৃষিক্ষেত্রে রাসায়নিক সারের পরিবর্তে জৈব সার (কম্পোস্ট) এবং রাসায়নিক কীটনাশকের পরিবর্তে জৈব উপায়ে রোগপোকা নিয়ন্ত্রণ করা।
২. শিল্প ও পৌর বর্জ্য, বিশেষত প্লাস্টিক ও বিষাক্ত রাসায়নিক, মাটিতে ফেলার আগে তার সঠিক শোধন ও ব্যবস্থাপনা করা।
৩. নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংস বন্ধ করা এবং প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগানো।
৪. এই বিষয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
২২. ‘খাদার’ ও ‘বেট’-এর মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: দুটিই নবীন পলিমাটি, তবে এদের মধ্যে আঞ্চলিক পার্থক্য রয়েছে।
খাদার: গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে নদীর তীরবর্তী নবীন, উর্বর পলিমাটিকে খাদার বলে।
বেট: পাঞ্জাব সমভূমি অঞ্চলে নদীর তীরবর্তী নবীন পলিগঠিত প্লাবনভূমিকে স্থানীয় ভাষায় বেট বলা হয়।সুতরাং, খাদার ও বেট মূলত একই ধরনের ভূমিরূপ, শুধুমাত্র আঞ্চলিক নাম আলাদা।
২৩. ভারতের মৃত্তিকা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা কী?
উত্তর: ভারত একটি কৃষিনির্ভর দেশ, তাই মৃত্তিকা সংরক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়:
১. কৃষি উৎপাদন বজায় রাখা: মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করে জমির উর্বরতা বজায় রাখা এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
২. বন্যা নিয়ন্ত্রণ: মৃত্তিকা ক্ষয় কমলে নদীর খাতে পলি জমা কমে, ফলে নদীর নাব্যতা বজায় থাকে এবং বন্যার প্রকোপ কমে।
৩. পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা: মৃত্তিকা সংরক্ষণ করলে ভূমির অবনমন রোধ হয় এবং বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্য বজায় থাকে।
৪. মরুভূমির প্রসার রোধ: মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করে মরুভূমির প্রসারকে আটকানো সম্ভব হয়।
২৪. ভারতের কোন কোন অঞ্চলে লবণাক্ত মৃত্তিকা দেখা যায়?
উত্তর: ভারতে লবণাক্ত মৃত্তিকা প্রধানত নিম্নলিখিত অঞ্চলগুলিতে দেখা যায়:
১. শুষ্ক অঞ্চল: পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের শুষ্ক অঞ্চলে অতিরিক্ত জলসেচের কারণে।
২. উপকূলীয় অঞ্চল: গুজরাট, পশ্চিমবঙ্গ (সুন্দরবন), অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ুর উপকূলীয় অঞ্চলে জোয়ারের জল প্রবেশের কারণে।
৩. মরু অঞ্চল: রাজস্থানের মরু অঞ্চলের হ্রদগুলির (ধান্দ) চারপাশে লবণাক্ত মৃত্তিকা দেখা যায়।
২৫. মৃত্তিকা গঠনে ভূপ্রকৃতির প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: মৃত্তিকা গঠনে ভূপ্রকৃতির প্রভাব অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ:
১. ভূমির ঢাল: খাড়া পার্বত্য ঢালে মৃত্তিকার স্তর খুব পাতলা হয়, কারণ ক্ষয়कार्य বেশি হয়। অন্যদিকে, মৃদু ঢাল বা সমতল ভূমিতে মৃত্তিকার স্তর গভীর ও পরিণত হয়।
২. উচ্চতা: উচ্চতা পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তিত হয়, যা মৃত্তিকার ধরনকেও প্রভাবিত করে। যেমন – হিমালয়ের বিভিন্ন উচ্চতায় বিভিন্ন ধরনের পার্বত্য মৃত্তিকা দেখা যায়।
৩. জলনিকাশি ব্যবস্থা: নিচু, জলমগ্ন অঞ্চলে (যেমন – জলাভূমি) অক্সিজেনের অভাবে পিট মৃত্তিকা তৈরি হয়। অন্যদিকে, উঁচু ও ভালো জলনিকাশিযুক্ত অঞ্চলে স্বাভাবিক মৃত্তিকা গঠিত হয়।
ঙ) রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৫ (১০টি)
১. ভারতের মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ করো এবং যেকোনো দুটি বিভাগের বণ্টন, বৈশিষ্ট্য ও উৎপাদিত ফসল আলোচনা করো।
উত্তর:
ICAR (Indian Council of Agricultural Research) ভারতের মৃত্তিকাকে প্রধানত ৮টি ভাগে ভাগ করেছে। সেগুলি হল – পলি মৃত্তিকা, কৃষ্ণ মৃত্তিকা, লোহিত মৃত্তিকা, ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা, পার্বত্য মৃত্তিকা, মরু মৃত্তিকা, লবণাক্ত ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা এবং পিট ও জলাভূমির মৃত্তিকা।
নিচে দুটি প্রধান বিভাগের আলোচনা করা হল:
ক) পলি মৃত্তিকা (Alluvial Soil):
বণ্টন: এটি ভারতের বৃহত্তম মৃত্তিকা অঞ্চল (প্রায় ৪৩%)। এটি মূলত সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্রের সুবিশাল সমভূমি (পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, আসাম) এবং পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলীয় সমভূমিতে দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য: ① এটি নদী দ্বারা বাহিত পলি সঞ্চিত হয়ে গঠিত, তাই খুব উর্বর। ② এতে পটাশ ও চুনের ভাগ বেশি থাকে, কিন্তু নাইট্রোজেন ও হিউমাসের পরিমাণ কম। ③ এর গ্রথন দোআঁশ প্রকৃতির এবং জলধারণ ক্ষমতা মাঝারি।
উৎপাদিত ফসল: এই মৃত্তিকা ধান, গম, পাট, আঁখ, ডাল, তৈলবীজ ইত্যাদি প্রায় সব ধরনের ফসল চাষের জন্য আদর্শ।
খ) কৃষ্ণ মৃত্তিকা (Black Soil):
বণ্টন: এই মৃত্তিকা মূলত দাক্ষিণাত্য মালভূমির লাভা গঠিত অঞ্চলে দেখা যায়। মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ, কর্ণাটক ও অন্ধ্রপ্রদেশের কিছু অংশে এই মৃত্তিকা বিস্তৃত।
বৈশিষ্ট্য: ① ব্যাসল্ট শিলা থেকে সৃষ্টি হওয়ায় এবং টাইটেনিফেরাস ম্যাগনেটাইটের উপস্থিতির কারণে এর রঙ কালো। ② এর জলধারণ ক্ষমতা খুব বেশি এবং জল পেলে খুব আঠালো হয়। ③ শুষ্ক ঋতুতে এই মাটি শুকিয়ে গিয়ে বড় বড় ফাটলের সৃষ্টি করে (স্বয়ং কর্ষণ)।
উৎপাদিত ফসল: এই মৃত্তিকা তুলা চাষের জন্য সবচেয়ে আদর্শ, তাই একে ‘কৃষ্ণ কার্পাস মৃত্তিকা’ বা ‘রেগুর’ বলে। এছাড়া ইক্ষু, জোয়ার, তৈলবীজও চাষ হয়।
২. মৃত্তিকা ক্ষয় কী? ভারতে মৃত্তিকা ক্ষয়ের কারণ এবং এর নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি আলোচনা করো।
উত্তর:
মৃত্তিকা ক্ষয়: বিভিন্ন প্রাকৃতিক (যেমন – বৃষ্টি, বায়ু) ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে ভূপৃষ্ঠের উপরিভাগের উর্বর মাটির স্তর অপসারিত হয়ে অন্যত্র চলে যাওয়াকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে।
কারণ:
১. প্রাকৃতিক কারণ: প্রবল বৃষ্টিপাত, বন্যা, বায়ুপ্রবাহ, নদীর স্রোত এবং ভূমির খাড়া ঢাল মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রধান প্রাকৃতিক কারণ।
২. মনুষ্যসৃষ্ট কারণ:
ক) নির্বিচারে বৃক্ষচ্ছেদন: গাছপালা কেটে ফেলার ফলে মাটির বাঁধন আলগা হয়ে যায় এবং ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
খ) অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ: অতিরিক্ত পশুচারণের ফলে মাটির উপরকার তৃণভূমির আচ্ছাদন নষ্ট হয়ে যায়।
গ) অবৈজ্ঞানিক কৃষিকাজ: ঝুম চাষ এবং ভুল পদ্ধতিতে চাষাবাদের ফলে মৃত্তিকা ক্ষয় বৃদ্ধি পায়।
ঘ) অপরিকল্পিত নগরায়ন ও শিল্পায়ন: রাস্তাঘাট, বাড়িঘর নির্মাণের ফলে মাটির উপরিস্তর নষ্ট হয়।
নিয়ন্ত্রণের উপায় (মৃত্তিকা সংরক্ষণ):
১. বৃক্ষরোপণ ও বনসৃজন: ক্ষয়প্রবণ অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগিয়ে মাটির ক্ষয় রোধ করা।
২. কৃষিভিত্তিক পদ্ধতি: পার্বত্য অঞ্চলে ধাপ চাষ, ফালি চাষ ও সমোন্নতিরেখা বরাবর চাষ করা।
৩. নিয়ন্ত্রিত পশুচারণ: পশুচারণ ভূমি নির্দিষ্ট করে অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ বন্ধ করা।
৪. গালি ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ: ছোট ছোট বাঁধ বা চেক ড্যাম তৈরি করে নালি ক্ষয় রোধ করা।
৫. জনসচেতনতা বৃদ্ধি: মৃত্তিকা সংরক্ষণের গুরুত্ব সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা।
৩. মৃত্তিকা গঠনে নিয়ামকগুলির ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর:
মৃত্তিকা গঠন একটি জটিল প্রক্রিয়া যা পাঁচটি প্রধান নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয়:
১. আদি শিলা (Parent Material): মৃত্তিকার মূল ভিত্তি হল আদি শিলা। শিলার গঠন ও খনিজ উপাদানের উপর মৃত্তিকার রঙ, গ্রথন ও রাসায়নিক ধর্ম নির্ভর করে। যেমন – ব্যাসল্ট শিলা থেকে কালো কৃষ্ণ মৃত্তিকা এবং গ্রানাইট শিলা থেকে লাল লোহিত মৃত্তিকা তৈরি হয়।
২. জলবায়ু (Climate): এটি মৃত্তিকা গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সক্রিয় নিয়ামক। বৃষ্টিপাত ও উষ্ণতা আবহবিকারের হার এবং জৈব পদার্থের পচনকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন – উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা এবং শুষ্ক জলবায়ুতে মরু মৃত্তিকা গঠিত হয়।
৩. ভূপ্রকৃতি (Topography/Relief): ভূমির ঢাল মৃত্তিকার গভীরতাকে প্রভাবিত করে। খাড়া ঢালে মৃত্তিকার স্তর পাতলা এবং সমতল ভূমিতে গভীর হয়। জলনিকাশি ব্যবস্থাও ভূপ্রকৃতির উপর নির্ভরশীল।
৪. জীবজগৎ (Organisms): উদ্ভিদ ও প্রাণী মৃত্তিকায় জৈব পদার্থ বা হিউমাস যোগ করে উর্বরতা বাড়ায়। অণুজীবরা (ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক) জৈব পদার্থকে পচিয়ে হিউমাস তৈরিতে সাহায্য করে।
৫. সময় (Time): মৃত্তিকা গঠন একটি অত্যন্ত ধীর ও সময়সাপেক্ষ প্রক্রিয়া। একটি পরিণত মৃত্তিকা স্তর তৈরি হতে কয়েক হাজার বছর সময় লাগে। সময়ের উপর মৃত্তিকার পরিপক্কতা ও গভীরতা নির্ভর করে।
৪. ভারতের লোহিত মৃত্তিকা এবং ল্যাটেরাইট মৃত্তিকার মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করো।
উত্তর:
| বৈশিষ্ট্য | লোহিত মৃত্তিকা (Red Soil) | ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা (Laterite Soil) |
|—|—|—|
| **গঠন** | প্রাচীন গ্রানাইট ও নিস শিলা আবহবিকারগ্রস্ত হয়ে গঠিত হয়। | উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু অঞ্চলে ধৌত বা লিচিং প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়। |
| **রঙ** | ফেরিক অক্সাইডের উপস্থিতির কারণে রঙ লাল হয়। | লোহা ও অ্যালুমিনিয়াম অক্সাইডের কারণে রঙ ইটের মতো লাল হয়। |
| **বণ্টন** | দাক্ষিণাত্য মালভূমির পূর্বাংশে (তামিলনাড়ু, কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ) এবং ছোটনাগপুর মালভূমিতে দেখা যায়। | পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় এবং পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতের কিছু অংশে দেখা যায়। |
| **উর্বরতা** | এটি তুলনামূলকভাবে উর্বর। জলসেচ ও সার প্রয়োগে চাষাবাদ ভালো হয়। | এটি অত্যন্ত অনুর্বর, কারণ খনিজ পদার্থ ধুয়ে নীচে চলে যায়। |
| **প্রধান ফসল** | চিনা বাদাম, জোয়ার, বাজরা, রাগি, ডাল। | কাজুবাদাম, কফি, চা, রাবার, ট্যাপিওকা। |
| **অন্যান্য বৈশিষ্ট্য** | এর জলধারণ ক্ষমতা কম। | শুকিয়ে গেলে এটি ইটের মতো শক্ত হয়ে যায়। |
৫. মৃত্তিকা সংরক্ষণের বিভিন্ন পদ্ধতিগুলি উদাহরণসহ আলোচনা করো।
উত্তর:
মৃত্তিকা সংরক্ষণ হল মৃত্তিকার উর্বরতা বজায় রাখা এবং ক্ষয় রোধ করার বিভিন্ন পদ্ধতি। প্রধান পদ্ধতিগুলি হল:
ক) কৃষিভিত্তিক পদ্ধতি:
১. ধাপ চাষ (Terrace Farming): পার্বত্য অঞ্চলের খাড়া ঢালে সিঁড়ির ধাপের মতো জমি তৈরি করে চাষ করা হয়। এর ফলে জলপ্রবাহের গতি কমে যায় এবং মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ হয়। হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে এই পদ্ধতিতে চা চাষ হয়।
২. ফালি চাষ (Strip Cropping): কম ঢালু জমিতে আড়াআড়িভাবে ফালি তৈরি করে এক ফালিতে শস্য এবং অন্য ফালিতে ঘাস বা ডাল জাতীয় ফসল চাষ করা হয়। এটি বায়ু ও জলের দ্বারা ক্ষয় রোধ করে।
৩. সমোন্নতিরেখা চাষ (Contour Ploughing): পার্বত্য ঢালের সমোন্নতি রেখা বরাবর বাঁধ দিয়ে বা লাঙল দিয়ে চাষ করলে জলপ্রবাহ বাধা পায় এবং মৃত্তিকা সংরক্ষিত হয়।
খ) বনসৃজন পদ্ধতি:
১. বৃক্ষরোপণ: গাছের শিকড় মাটিকে শক্ত করে ধরে রাখে। তাই ক্ষয়প্রবণ অঞ্চলে, নদীর তীরে বা মরুভূমির প্রান্তে প্রচুর পরিমাণে গাছ লাগিয়ে মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ করা হয়।
২. সামাজিক বনসৃজন: জনগণের অংশগ্রহণে পতিত জমিতে বনভূমি তৈরি করা।
গ) যান্ত্রিক পদ্ধতি:
১. গালি ক্ষয় নিয়ন্ত্রণ: ছোট ছোট বাঁধ বা চেক ড্যাম তৈরি করে এবং গালিতে পাথর ফেলে নালি ক্ষয় রোধ করা।
৬. ভারতের উপকূলীয় সমভূমির মৃত্তিকার একটি বিবরণ দাও।
উত্তর:
ভারতের উপকূলীয় সমভূমির মৃত্তিকা মূলত দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত:
ক) উপকূলীয় পলি মৃত্তিকা:
গঠন ও বণ্টন: পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের নদীগুলির (যেমন – মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী) মোহনায় এবং পার্শ্ববর্তী সমভূমিতে নদীর পলি ও সমুদ্রের বালি জমে এই মৃত্তিকা গঠিত হয়েছে।
বৈশিষ্ট্য: এই মৃত্তিকা সাধারণত উর্বর, দোআঁশ প্রকৃতির এবং এতে পটাশ ও ফসফরাসের পরিমাণ বেশি থাকে।
ফসল: ধান, নারকেল, সুপারি, কাজুবাদাম ইত্যাদি এই মাটিতে ভালো চাষ হয়।
খ) লবণাক্ত ও ক্ষারীয় মৃত্তিকা:
গঠন ও বণ্টন: উপকূলের নিচু অংশে, বিশেষত বদ্বীপ অঞ্চলে (যেমন – সুন্দরবন) এবং শুষ্ক উপকূলীয় অঞ্চলে (যেমন – গুজরাটের কচ্ছের রান) জোয়ারের জল প্রবেশ করার কারণে বা অতিরিক্ত বাষ্পীভবনের ফলে মাটিতে লবণের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে এই মৃত্তিকা সৃষ্টি হয়।
বৈশিষ্ট্য: এই মৃত্তিকায় সোডিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়ামের লবণ বেশি থাকায় এটি চাষাবাদের অনুপযুক্ত।
উদ্ভিদ: এই মাটিতে লবণাম্বু বা ম্যানগ্রোভ উদ্ভিদ (যেমন – সুন্দরী, গরান) ভালো জন্মায়।
৭. ভারতের পার্বত্য অঞ্চলের মৃত্তিকার শ্রেণিবিভাগ করে তাদের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
উত্তর:
ভারতের পার্বত্য অঞ্চলে উচ্চতা ও জলবায়ুর তারতম্য অনুসারে বিভিন্ন ধরনের মৃত্তিকা দেখা যায়। প্রধান বিভাগগুলি হল:
১. পডসল মৃত্তিকা:
অবস্থান: হিমালয়ের অধিক উচ্চতায় (২০০০-৩০০০ মিটার) সরলবর্গীয় অরণ্য অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য: ঠাণ্ডা ও আর্দ্র জলবায়ুতে সরলবর্গীয় গাছের পাতা পচে অম্লধর্মী হিউমাস তৈরি হয়। এই অম্লের প্রভাবে মাটির উপরিস্তরের খনিজ পদার্থ ধুয়ে নীচে চলে যায়, ফলে উপরের স্তরটি ধূসর বা ছাই রঙের হয়। এটি কৃষিকাজের জন্য খুব একটা উর্বর নয়।
২. পার্বত্য তৃণভূমি মৃত্তিকা:
অবস্থান: হিমালয়ের অধিক উচ্চতায় (৩০০০ মিটারের উপরে) আলপীয় তৃণভূমি অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য: প্রচণ্ড ঠাণ্ডার কারণে জৈব পদার্থের পচন খুব ধীরে হয়, তাই এই মাটিতে হিউমাসের পরিমাণ খুব বেশি থাকে। এর রঙ কালো এবং এটি উর্বর। তবে প্রতিকূল জলবায়ুর কারণে এখানে চাষাবাদ সম্ভব নয়।
৩. তরাই মৃত্তিকা:
অবস্থান: হিমালয়ের পাদদেশের স্যাঁতস্যাঁতে তরাই অঞ্চলে এই মৃত্তিকা দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য: এটি উর্বর পলি ও জৈব পদার্থে সমৃদ্ধ। এই মাটিতে ধান, পাট, আঁখের মতো ফসল ভালো চাষ হয়।
৮. মৃত্তিকা ক্ষয়ের বিভিন্ন প্রকারভেদ আলোচনা করো।
উত্তর:
মৃত্তিকা ক্ষয় প্রধানত দুটি শক্তি দ্বারা হয় – জলপ্রবাহ ও বায়ুপ্রবাহ।
ক) জলপ্রবাহ দ্বারা ক্ষয়:
১. আস্তরণ বা চাদর ক্ষয় (Sheet Erosion): মৃদু ঢালযুক্ত জমিতে বৃষ্টির জল যখন একটি চাদরের মতো প্রবাহিত হয়ে মাটির উপরিস্তরের পাতলা আস্তরণকে ক্ষয় করে, তখন তাকে চাদর ক্ষয় বলে।
২. নালি বা গালি ক্ষয় (Gully Erosion): জলপ্রবাহ যখন মাটির উপর আঙুলের মতো সরু সরু নালার সৃষ্টি করে, তখন তাকে নালি ক্ষয় বলে।
৩. খোয়াই ক্ষয় বা রেভাইন ক্ষয় (Ravine Erosion): নালিগুলি যখন ক্রমশ বড় ও গভীর হয়ে অত্যন্ত বন্ধুর ও বিচ্ছিন্ন ভূখণ্ড তৈরি করে, তখন তাকে খোয়াই ক্ষয় বা রেভাইন বলে। যেমন – চম্বল উপত্যকার রেভাইন।
খ) বায়ুপ্রবাহ দ্বারা ক্ষয়:
১. অপসারণ (Deflation): শুষ্ক মরু অঞ্চলে প্রবল বায়ুপ্রবাহ আলগা বালি ও মাটিকে এক স্থান থেকে উড়িয়ে নিয়ে যায়।
২. অবঘর্ষ (Abrasion): বায়ুবাহিত বালির কণার আঘাতে শিলাস্তর ক্ষয়প্রাপ্ত হয়।
৯. মৃত্তিকা সংরক্ষণে কৃষি প্রযুক্তি ও বনসৃজনের ভূমিকা আলোচনা করো।
উত্তর:
মৃত্তিকা সংরক্ষণে কৃষি প্রযুক্তি ও বনসৃজনের ভূমিকা অপরিসীম।
কৃষি প্রযুক্তির ভূমিকা:
১. ধাপ চাষ: পার্বত্য অঞ্চলে সিঁড়ির মতো ধাপ তৈরি করে চাষ করলে জলের গতি কমে যায় এবং মৃত্তিকা ক্ষয় রোধ হয়।
২. ফালি চাষ: ঢালু জমিতে আড়াআড়ি ফালি তৈরি করে শস্য ও ঘাস চাষ করলে তা বায়ু ও জলের ক্ষয়কে বাধা দেয়।
৩. সমোন্নতিরেখা চাষ: সমোন্নতি রেখা বরাবর বাঁধ দিয়ে বা লাঙল দিয়ে চাষ করলে জলপ্রবাহ বাধা পায় এবং জল মাটিতে শোষিত হয়, ফলে ক্ষয় কমে।
৪. শস্যাবর্তন: জমিতে পর্যায়ক্রমে শিম্বগোত্রীয় ও অন্য ফসল চাষ করলে মাটির উর্বরতা বজায় থাকে এবং মাটির গঠন উন্নত হয়।
বনসৃজনের ভূমিকা:
১. মাটিকে ধরে রাখা: গাছের শিকড় মাটিকে জালের মতো শক্ত করে ধরে রাখে, যা মাটির ক্ষয় রোধ করে।
২. বৃষ্টির আঘাত থেকে রক্ষা: গাছের পাতা বৃষ্টির ফোঁটার সরাসরি আঘাত থেকে মাটিকে রক্ষা করে।
৩. বায়ুপ্রবাহে বাধা: গাছপালা বায়ুপ্রবাহের গতি কমিয়ে দেয়, ফলে বায়ু দ্বারা মৃত্তিকা ক্ষয় কমে।
৪. হিউমাস সরবরাহ: ঝরে পড়া পাতা পচে হিউমাস তৈরি করে মাটির উর্বরতা ও জলধারণ ক্ষমতা বাড়ায়।
১০. ভারতের প্রধান মৃত্তিকা অঞ্চলগুলি মানচিত্রে চিহ্নিত করে তাদের প্রধান ফসলগুলি উল্লেখ করো।
উত্তর:
(এই প্রশ্নের উত্তরের জন্য একটি ভারতের মানচিত্র আঁকতে হবে এবং নিম্নলিখিত অঞ্চলগুলি চিহ্নিত করতে হবে):
১. পলি মৃত্তিকা অঞ্চল:
চিহ্নিতকরণ: সিন্ধু-গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র সমভূমি এবং উপকূলীয় সমভূমি।
প্রধান ফসল: ধান, গম, পাট, আঁখ, ডাল, তৈলবীজ।
২. কৃষ্ণ মৃত্তিকা অঞ্চল:
চিহ্নিতকরণ: দাক্ষিণাত্য মালভূমির উত্তর-পশ্চিমাংশ (মহারাষ্ট্র, গুজরাট, মধ্যপ্রদেশ)।
প্রধান ফসল: তুলা, ইক্ষু, জোয়ার, তৈলবীজ।
৩. লোহিত মৃত্তিকা অঞ্চল:
চিহ্নিতকরণ: দাক্ষিণাত্য মালভূমির পূর্বাংশ (তামিলনাড়ু, কর্ণাটক) এবং ছোটনাগপুর মালভূমি।
প্রধান ফসল: চিনা বাদাম, জোয়ার, বাজরা, রাগি, ডাল।
৪. ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা অঞ্চল:
চিহ্নিতকরণ: পশ্চিমবঙ্গ, মেঘালয় এবং পশ্চিমঘাট ও পূর্বঘাট পর্বতের কিছু অংশ।
প্রধান ফসল: কাজুবাদাম, কফি, চা, রাবার।
৫. পার্বত্য মৃত্তিকা অঞ্চল:
চিহ্নিতকরণ: হিমালয় পার্বত্য অঞ্চল।
প্রধান ফসল: চা, কফি, আপেল, মশলা।
৬. মরু মৃত্তিকা অঞ্চল:
চিহ্নিতকরণ: রাজস্থানের পশ্চিমাংশ।
প্রধান ফসল: জোয়ার, বাজরা, মিলেট, গম।
(মানচিত্রে এই অঞ্চলগুলিকে বিভিন্ন রঙ বা চিহ্ন দিয়ে দেখিয়ে পাশে ফসলের নাম লিখতে হবে)।
ভারতের মৃত্তিকা class 10 প্রশ্ন উত্তর MCQ, অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : Class 10 Geography ভারতের মৃত্তিকা Question Answer