ভারতের কৃষি Class 10

ভারতের কৃষি class 10

ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৭০টি)

১. ভারতের প্রধান খাদ্যশস্য হল –

  • (ক) গম
  • (খ) ধান
  • (গ) জোয়ার
  • (ঘ) বাজরা

২. একটি খরিফ ফসলের উদাহরণ হল –

  • (ক) গম
  • (খ) যব
  • (গ) ছোলা
  • (ঘ) ধান

৩. ভারতের কোন রাজ্য কফি উৎপাদনে প্রথম?

  • (ক) কেরালা
  • (খ) তামিলনাড়ু
  • (গ) কর্ণাটক
  • (ঘ) অন্ধ্রপ্রদেশ

৪. ভারতের ‘চিনির বাটি’ বলা হয় কোন রাজ্যকে?

  • (ক) পাঞ্জাব
  • (খ) মহারাষ্ট্র
  • (গ) উত্তরপ্রদেশ
  • (ঘ) হরিয়ানা

৫. একটি রবি ফসলের উদাহরণ হল –

  • (ক) ধান
  • (খ) পাট
  • (গ) তুলা
  • (ঘ) গম

৬. সবুজ বিপ্লবের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে যে ফসলের উপর, তা হল –

  • (ক) ধান
  • (খ) গম
  • (গ) তুলা
  • (ঘ) আঁখ

৭. ভারতের কোন রাজ্যে চা উৎপাদন সর্বাধিক?

  • (ক) পশ্চিমবঙ্গ
  • (খ) কেরালা
  • (গ) তামিলনাড়ু
  • (ঘ) আসাম

৮. ভারতের কৃষি গবেষণাগার (ICAR) অবস্থিত –

  • (ক) দেরাদুনে
  • (খ) ভোপালে
  • (গ) নতুন দিল্লিতে
  • (ঘ) কলকাতায়

৯. ‘সোনালী পানীয়’ বলা হয় –

  • (ক) কফিকে
  • (খ) চা-কে
  • (গ) দুধকে
  • (ঘ) ফলের রসকে

১০. একটি বাগিচা ফসলের উদাহরণ হল –

  • (ক) ধান
  • (খ) গম
  • (গ) চা
  • (ঘ) পাট

১১. ধান উৎপাদনে পৃথিবীতে ভারতের স্থান –

  • (ক) প্রথম
  • (খ) দ্বিতীয়
  • (গ) তৃতীয়
  • (ঘ) চতুর্থ

১২. ভারতের কোন রাজ্য তুলা উৎপাদনে প্রথম?

  • (ক) মহারাষ্ট্র
  • (খ) গুজরাট
  • (গ) পাঞ্জাব
  • (ঘ) অন্ধ্রপ্রদেশ

১৩. একটি জায়িদ ফসলের উদাহরণ হল –

  • (ক) ধান
  • (খ) গম
  • (গ) তরমুজ
  • (ঘ) পাট

১৪. ভারতের কোন রাজ্য ইক্ষু উৎপাদনে প্রথম?

  • (ক) মহারাষ্ট্র
  • (খ) উত্তরপ্রদেশ
  • (গ) পাঞ্জাব
  • (ঘ) তামিলনাড়ু

১৫. ‘সোনালী তন্তু’ বলা হয় –

  • (ক) তুলাকে
  • (খ) রেশমকে
  • (গ) পাটকে
  • (ঘ) শণকে

১৬. ভারতের কোন রাজ্য গম উৎপাদনে প্রথম?

  • (ক) পাঞ্জাব
  • (খ) হরিয়ানা
  • (গ) উত্তরপ্রদেশ
  • (ঘ) মধ্যপ্রদেশ

১৭. ভারতের একটি মিলেট জাতীয় শস্য হল –

  • (ক) ধান
  • (খ) গম
  • (গ) জোয়ার
  • (ঘ) ভুট্টা

১৮. ‘অপারেশন ফ্লাড’ কিসের সঙ্গে সম্পর্কিত?

  • (ক) বন্যা নিয়ন্ত্রণ
  • (খ) দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি
  • (গ) মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি
  • (ঘ) তৈলবীজ উৎপাদন বৃদ্ধি

১৯. ধান হল একটি –

  • (ক) রবি ফসল
  • (খ) খরিফ ফসল
  • (গ) জায়িদ ফসল
  • (ঘ) বাগিচা ফসল

২০. কোন ফসলকে ‘তৃষ্ণার্ত ফসল’ বলা হয়?

  • (ক) গম
  • (খ) ধান
  • (গ) পাট
  • (ঘ) আঁখ

২১. ভারতের ধান গবেষণাগারটি অবস্থিত –

  • (ক) দিল্লিতে
  • (খ) কলকাতায়
  • (গ) কটকে
  • (ঘ) দেরাদুনে

২২. দক্ষিণ ভারতের শ্রেষ্ঠ কার্পাস উৎপাদক রাজ্য হল –

  • (ক) কেরালা
  • (খ) তামিলনাড়ু
  • (গ) অন্ধ্রপ্রদেশ
  • (ঘ) তেলেঙ্গানা

২৩. হেক্টর প্রতি ধান উৎপাদনে ভারতের কোন রাজ্য প্রথম?

  • (ক) পশ্চিমবঙ্গ
  • (খ) উত্তরপ্রদেশ
  • (গ) পাঞ্জাব
  • (ঘ) অন্ধ্রপ্রদেশ

২৪. কোন ফসল চাষের জন্য ‘ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ’ প্রয়োজন?

  • (ক) ধান
  • (খ) চা
  • (গ) কফি
  • (ঘ) খ ও গ উভয়ই

২৫. ‘সাদা সোনা’ বলা হয় –

  • (ক) পাটকে
  • (খ) তুলাকে
  • (গ) রেশমকে
  • (ঘ) দুধকে

২৬. ভারতের কোন রাজ্য পাট উৎপাদনে প্রথম?

  • (ক) বিহার
  • (খ) আসাম
  • (গ) ওড়িশা
  • (ঘ) পশ্চিমবঙ্গ

২৭. সবুজ বিপ্লবের জনক কাকে বলা হয় (ভারতে)?

  • (ক) ভার্গিস কুরিয়েন
  • (খ) নরম্যান বোরলগ
  • (গ) এম. এস. স্বামীনাথন
  • (ঘ) সি. সুব্রহ্মণ্যম

২৮. একটি অর্থকরী ফসলের উদাহরণ হল –

  • (ক) ধান
  • (খ) গম
  • (গ) তুলা
  • (ঘ) জোয়ার

২৯. ভারতের কোন রাজ্যে হেক্টর প্রতি গম উৎপাদন সর্বাধিক?

  • (ক) উত্তরপ্রদেশ
  • (খ) হরিয়ানা
  • (গ) রাজস্থান
  • (ঘ) পাঞ্জাব

৩০. কোন ফসলকে ‘গরিবের খাদ্যশস্য’ বলা হয়?

  • (ক) ধান
  • (খ) গম
  • (গ) মিলেট
  • (ঘ) ভুট্টা

৩১. কোন কৃষিপদ্ধতিতে হেক্টর প্রতি উৎপাদন খুব বেশি?

  • (ক) স্থানান্তর কৃষি
  • (খ) প্রথাগত কৃষি
  • (গ) নিবিড় বা প্রগাঢ় কৃষি
  • (ঘ) ব্যাপক কৃষি

৩২. ভারতের কোন রাজ্যে ধান উৎপাদনে পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয়?

  • (ক) উত্তরপ্রদেশ
  • (খ) পাঞ্জাব
  • (গ) অন্ধ্রপ্রদেশ
  • (ঘ) কোনোটিই নয়

৩৩. ভারতের ‘শস্য ভান্ডার’ বলা হয় –

  • (ক) দাক্ষিণাত্য মালভূমিকে
  • (খ) ছোটনাগপুর মালভূমিকে
  • (গ) পাঞ্জাব-হরিয়ানা সমভূমিকে
  • (ঘ) উপকূলীয় সমভূমিকে

৩৪. শ্বেত বিপ্লব জড়িত –

  • (ক) মৎস্য উৎপাদনের সঙ্গে
  • (খ) ডিম উৎপাদনের সঙ্গে
  • (গ) দুগ্ধ উৎপাদনের সঙ্গে
  • (ঘ) আলু উৎপাদনের সঙ্গে

৩৫. কোন মাসে খরিফ ফসল বোনা হয়?

  • (ক) জুন-জুলাই
  • (খ) অক্টোবর-নভেম্বর
  • (গ) মার্চ-এপ্রিল
  • (ঘ) জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি

৩৬. দক্ষিণ ভারতের প্রধান খাদ্যশস্য হল –

  • (ক) গম
  • (খ) জোয়ার
  • (গ) ধান
  • (ঘ) রাগি

৩৭. কোন फसलকে ‘বল উইভিল’ পোকা ক্ষতি করে?

  • (ক) ধান
  • (খ) পাট
  • (গ) আঁখ
  • (ঘ) তুলা

৩৮. ভারতের কোন রাজ্যে মিলেট উৎপাদন সর্বাধিক?

  • (ক) মধ্যপ্রদেশ
  • (খ) রাজস্থান
  • (গ) মহারাষ্ট্র
  • (ঘ) কর্ণাটক

৩৯. কোন প্রকার চা স্বাদে ও গন্ধে শ্রেষ্ঠ?

  • (ক) আসাম চা
  • (খ) দার্জিলিং চা
  • (গ) নীলগিরি চা
  • (ঘ) কাংড়া চা

৪০. ভারতের কোন রাজ্যকে ‘মশলার বাগান’ বলা হয়?

  • (ক) কর্ণাটক
  • (খ) তামিলনাড়ু
  • (গ) অন্ধ্রপ্রদেশ
  • (ঘ) কেরালা

৪১. ‘ঝুম’ চাষ হল এক ধরনের –

  • (ক) স্থায়ী কৃষি
  • (খ) স্থানান্তর কৃষি
  • (গ) বাণিজ্যিক কৃষি
  • (ঘ) বাগিচা কৃষি

৪২. নীল বিপ্লব কিসের সঙ্গে সম্পর্কিত?

  • (ক) দুগ্ধ উৎপাদন
  • (খ) মৎস্য উৎপাদন
  • (গ) তৈলবীজ উৎপাদন
  • (ঘ) আলু উৎপাদন

৪৩. আঁখ উৎপাদনে পৃথিবীতে ভারতের স্থান –

  • (ক) প্রথম
  • (খ) দ্বিতীয়
  • (গ) তৃতীয়
  • (ঘ) চতুর্থ

৪৪. কোন কৃষি পদ্ধতিতে একই জমিতে বছরে একাধিক ফসল চাষ করা হয়?

  • (ক) স্থানান্তর কৃষি
  • (খ) ব্যাপক কৃষি
  • (গ) শস্যাবর্তন কৃষি
  • (ঘ) শুষ্ক কৃষি

৪৫. ভারতের একটি প্রধান তন্তু ফসল হল –

  • (ক) চা
  • (খ) কফি
  • (গ) পাট
  • (ঘ) আঁখ

৪৬. কৃষ্ণ মৃত্তিকা যে চাষের জন্য বিখ্যাত, তা হল –

  • (ক) ধান
  • (খ) গম
  • (গ) চা
  • (ঘ) তুলা

৪৭. কেন্দ্রীয় কফি গবেষণাগারটি অবস্থিত –

  • (ক) চিকমাগালুরে
  • (খ) কোট্টায়ামে
  • (গ) কোয়েম্বাটুরে
  • (ঘ) জোড়হাটে

৪৮. কোন মাসে রবি ফসল কাটা হয়?

  • (ক) জুন-জুলাই
  • (খ) অক্টোবর-নভেম্বর
  • (গ) মার্চ-এপ্রিল
  • (ঘ) আগস্ট-সেপ্টেম্বর

৪৯. একটি পানীয় ফসলের উদাহরণ হল –

  • (ক) ধান
  • (খ) গম
  • (গ) চা
  • (ঘ) পাট

৫০. কোন মৃত্তিকা চা চাষের জন্য আদর্শ?

  • (ক) কৃষ্ণ মৃত্তিকা
  • (খ) পলি মৃত্তিকা
  • (গ) ল্যাটেরাইট মৃত্তিকা
  • (ঘ) অম্লধর্মী পার্বত্য মৃত্তিকা

৫১. ভারতের কোন রাজ্যে সর্বাধিক সয়াবিন উৎপাদিত হয়?

  • (ক) মহারাষ্ট্র
  • (খ) রাজস্থান
  • (গ) মধ্যপ্রদেশ
  • (ঘ) উত্তরপ্রদেশ

৫২. ভারতের কোন রাজ্যে ‘ফ্লোরিকালচার’ বা ফুলের চাষ সর্বাধিক?

  • (ক) পশ্চিমবঙ্গ
  • (খ) কর্ণাটক
  • (গ) তামিলনাড়ু
  • (ঘ) মহারাষ্ট্র

৫৩. কোন ফসলকে ‘আন্তর্জাতিক ফসল’ বলা হয়?

  • (ক) ধান
  • (খ) গম
  • (গ) ভুট্টা
  • (ঘ) জোয়ার

৫৪. ‘আউশ’, ‘আমন’, ‘বোরো’ হল –

  • (ক) গমের প্রকারভেদ
  • (খ) ধানের প্রকারভেদ
  • (গ) তুলার প্রকারভেদ
  • (ঘ) পাটের প্রকারভেদ

৫৫. সবুজ বিপ্লবের ফলে কোন শস্যের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে?

  • (ক) ধান
  • (খ) গম
  • (গ) ডাল ও তৈলবীজ
  • (ঘ) আঁখ

৫৬. কোন ধরনের কৃষিতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যই প্রধান?

  • (ক) স্থানান্তর কৃষি
  • (খ) জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি
  • (গ) বাগিচা কৃষি
  • (ঘ) প্রথাগত কৃষি

৫৭. ‘রেটুন’ প্রথা কোন ফসল চাষের সঙ্গে যুক্ত?

  • (ক) ধান
  • (খ) পাট
  • (গ) আঁখ
  • (ঘ) তুলা

৫৮. ভারতের কোন রাজ্যকে ‘ভারতের আপেল রাজ্য’ বলা হয়?

  • (ক) উত্তরাখণ্ড
  • (খ) জম্মু ও কাশ্মীর
  • (গ) হিমাচল প্রদেশ
  • (ঘ) অরুণাচল প্রদেশ

৫৯. হোলস্টাইন, জার্সি ইত্যাদি হল –

  • (ক) উন্নত জাতের ধান
  • (খ) উন্নত জাতের গম
  • (গ) উন্নত জাতের গরু
  • (ঘ) উন্নত জাতের তুলা

৬০. কোন ফসলকে ‘শস্যরানী’ বলা হয়?

  • (ক) ধান
  • (খ) গম
  • (গ) ভুট্টা
  • (ঘ) জোয়ার

৬১. ভারতের কেন্দ্রীয় গম গবেষণাগার কোথায় অবস্থিত?

  • (ক) নতুন দিল্লি
  • (খ) পুষা (দিল্লি)
  • (গ) লুধিয়ানা
  • (ঘ) কারনাল

৬২. কোন ফসল চাষের জন্য প্রচুর পরিমাণে সস্তা শ্রমিক প্রয়োজন?

  • (ক) গম
  • (খ) মিলেট
  • (গ) চা
  • (ঘ) সবগুলিই

৬৩. ভারতের কোন রাজ্যে জাফরান চাষ হয়?

  • (ক) হিমাচল প্রদেশ
  • (খ) উত্তরাখণ্ড
  • (গ) সিকিম
  • (ঘ) জম্মু ও কাশ্মীর

৬৪. নিম্নলিখিত কোনটি একটি তৈলবীজ?

  • (ক) ছোলা
  • (খ) সর্ষে
  • (গ) মটর
  • (ঘ) অরহর

৬৫. কোন ফসল পচানোর জন্য জলের প্রয়োজন হয়?

  • (ক) তুলা
  • (খ) পাট
  • (গ) আঁখ
  • (ঘ) চা

৬৬. ভারতের কোন রাজ্যে তামাক উৎপাদন সর্বাধিক?

  • (ক) অন্ধ্রপ্রদেশ
  • (খ) গুজরাট
  • (গ) কর্ণাটক
  • (ঘ) উত্তরপ্রদেশ

৬৭. ভারতের ‘কমলালেবুর শহর’ বলা হয় –

  • (ক) জলপাইগুড়ি
  • (খ) দার্জিলিং
  • (গ) নাগপুর
  • (ঘ) পুনে

৬৮. হর্টিকালচার বলতে বোঝায় –

  • (ক) শস্য চাষ
  • (খ) মৎস্য চাষ
  • (গ) ফল, ফুল ও সবজি চাষ
  • (ঘ) রেশম চাষ

৬৯. কোন দুটি রাজ্য ভারতের সবুজ বিপ্লবের কেন্দ্র ছিল?

  • (ক) পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার
  • (খ) পাঞ্জাব ও হরিয়ানা
  • (গ) মহারাষ্ট্র ও গুজরাট
  • (ঘ) উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশ

৭০. ভারতের কোন রাজ্যে ‘পোডু’ চাষ প্রচলিত?

  • (ক) ওড়িশা
  • (খ) মধ্যপ্রদেশ
  • (গ) কেরালা
  • (ঘ) উত্তর-পূর্ব ভারত

  • খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (SAQ) – মান ১ (৬০টি)

    ১. ভারতের প্রধান পানীয় ফসল কী?

    উত্তর: চা।

    ২. খরিফ ফসল কোন ঋতুতে চাষ হয়?

    উত্তর: বর্ষাকালে।

    ৩. একটি রবি ফসলের নাম লেখো।

    উত্তর: গম।

    ৪. সবুজ বিপ্লব কী?

    উত্তর: ১৯৬০-এর দশকে ভারতে উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার ও জলসেচ ব্যবহার করে কৃষিজ উৎপাদনে, বিশেষত গম উৎপাদনে, যে অভূতপূর্ব বৃদ্ধি ঘটে, তাকে সবুজ বিপ্লব বলে।

    ৫. ICAR-এর পুরো নাম কী?

    উত্তর: Indian Council of Agricultural Research.

    ৬. একটি বাগিচা ফসলের উদাহরণ দাও।

    উত্তর: চা বা কফি।

    ৭. ভারতের কোন রাজ্য ধান উৎপাদনে প্রথম?

    উত্তর: পশ্চিমবঙ্গ।

    ৮. ভারতের কোন রাজ্যকে ‘চিনির বাটি’ বলা হয়?

    উত্তর: উত্তরপ্রদেশ।

    ৯. ভারতের কোন রাজ্য কফি উৎপাদনে শ্রেষ্ঠ?

    উত্তর: কর্ণাটক।

    ১০. জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি কী?

    উত্তর: যখন কৃষক মূলত নিজের পরিবারের খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য চাষাবাদ করে, তখন তাকে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলে।

    ১১. একটি তন্তু ফসলের নাম লেখো।

    উত্তর: তুলা বা পাট।

    ১২. ‘অপারেশন ফ্লাড’ কীসের সঙ্গে যুক্ত?

    উত্তর: দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে (শ্বেত বিপ্লব)।

    ১৩. জায়িদ ফসল কোন ঋতুতে চাষ হয়?

    উত্তর: গ্রীষ্মকালে (খরিফ ও রবি ফসলের মধ্যবর্তী সময়ে)।

    ১৪. ভারতের ধান গবেষণাগার কোথায় অবস্থিত?

    উত্তর: ওড়িশার কটকে।

    ১৫. কোন ফসলকে ‘সোনালী তন্তু’ বলে?

    উত্তর: পাটকে।

    ১৬. হেক্টর প্রতি গম উৎপাদনে কোন রাজ্য প্রথম?

    উত্তর: পাঞ্জাব।

    ১৭. ‘শস্যাবর্তন’ কৃষি কাকে বলে?

    উত্তর: জমির উর্বরতা বজায় রাখার জন্য একই জমিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসল চাষ করার পদ্ধতিকে শস্যাবর্তন বলে।

    ১৮. মিলেট কী?

    উত্তর: জোয়ার, বাজরা, রাগি ইত্যাদি স্বল্প বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে উৎপাদিত পুষ্টিকর খাদ্যশস্যকে একত্রে মিলেট বলে।

    ১৯. একটি অর্থকরী ফসলের নাম লেখো।

    উত্তর: আঁখ বা তুলা।

    ২০. কোন মৃত্তিকা তুলা চাষের জন্য আদর্শ?

    উত্তর: কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা রেগুর মাটি।

    ২১. সবুজ বিপ্লবের জনক কে?

    উত্তর: নরম্যান বোরলগ (বিশ্বে) এবং এম. এস. স্বামীনাথন (ভারতে)।

    ২২. ভারতের কোন রাজ্যকে ‘ভারতের মশলার বাগান’ বলা হয়?

    উত্তর: কেরালা।

    ২৩. ‘রেটুন’ প্রথা কোন ফসল চাষে দেখা যায়?

    উত্তর: আঁখ চাষে।

    ২৪. ভারতের কোন রাজ্য আম উৎপাদনে প্রথম?

    উত্তর: উত্তরপ্রদেশ।

    ২৫. ‘সোনালী পানীয়’ কাকে বলে?

    উত্তর: চা-কে।

    ২৬. ভারতের কেন্দ্রীয় চা গবেষণাগারটি কোথায় অবস্থিত?

    উত্তর: আসামের জোড়হাটে।

    ২৭. কোন সেচ পদ্ধতি চা চাষের জন্য উপযোগী?

    উত্তর: স্প্রিংকলার বা ফোঁয়ারা সেচ।

    ২৮. ধান চাষের জন্য কত বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন?

    উত্তর: বার্ষিক ১০০-২০০ সেমি।

    ২৯. ভারতের কোন রাজ্যে সবচেয়ে বেশি পাট উৎপাদিত হয়?

    উত্তর: পশ্চিমবঙ্গ।

    ৩০. শ্বেত বিপ্লবের জনক কে?

    উত্তর: ডঃ ভার্গিস কুরিয়েন।

    ৩১. HYV-এর পুরো নাম কী?

    উত্তর: High Yielding Variety.

    ৩২. ধাপ চাষ কোথায় দেখা যায়?

    উত্তর: পার্বত্য অঞ্চলের ঢালু জমিতে।

    ৩৩. ভারতের কোন রাজ্যে সর্বাধিক ডাল উৎপাদিত হয়?

    উত্তর: মধ্যপ্রদেশ।

    ৩৪. একটি জায়িদ শস্যের উদাহরণ দাও।

    উত্তর: আউশ ধান, তরমুজ, শসা।

    ৩৫. কোন শহরকে ‘ভারতের কমলালেবুর শহর’ বলে?

    উত্তর: নাগপুর।

    ৩৬. কোন মৃত্তিকা ধান চাষের জন্য আদর্শ?

    উত্তর: উর্বর পলি ও এঁটেল দোআঁশ মাটি।

    ৩৭. পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যে কোন ফসলের উৎপাদন সবচেয়ে বেশি?

    উত্তর: গম।

    ৩৮. ‘আউশ’, ‘আমন’ ও ‘বোরো’ কীসের প্রকারভেদ?

    উত্তর: ধানের।

    ৩৯. একটি রবি শস্যের নাম লেখো যা তৈলবীজ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।

    উত্তর: সর্ষে।

    ৪০. ভারতের কোন রাজ্যে জাফরান চাষ হয়?উত্তর: জম্মু ও কাশ্মীর।

    ৪১. কোন ফসল পচানোর জন্য জলের প্রয়োজন হয়?

    উত্তর: পাট।

    ৪২. ভারতের কোন রাজ্য আপেল উৎপাদনে প্রথম?

    উত্তর: হিমাচল প্রদেশ।

    ৪৩. ‘শুষ্ক কৃষি’ কাকে বলে?

    উত্তর: বার্ষিক ৫০ সেমি-এর কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে জলসেচ ছাড়া শুধুমাত্র বৃষ্টির জলের উপর নির্ভর করে খরা সহনশীল ফসল চাষ করার পদ্ধতিকে শুষ্ক কৃষি বলে।

    ৪৪. ভারতের কোন রাজ্যে কাজুবাদাম উৎপাদন সর্বাধিক?

    উত্তর: মহারাষ্ট্র।

    ৪৫. ‘স্থানান্তর কৃষি’ উত্তর-পূর্ব ভারতে কী নামে পরিচিত?

    উত্তর: ঝুম চাষ।

    ৪৬. কোন ফসল চাষের জন্য ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষের প্রয়োজন হয়?

    উত্তর: চা ও কফি।

    ৪৭. ভারতের কোন রাজ্যকে ‘ফলের ঝুড়ি’ বলা হয়?

    উত্তর: হিমাচল প্রদেশ।

    ৪৮. ভারতের কোন রাজ্য আখ উৎপাদনে প্রথম?

    উত্তর: উত্তরপ্রদেশ।

    ৪৯. ‘পশম’-এর জন্য বিখ্যাত একটি প্রাণীর নাম লেখো।

    উত্তর: মেরিনো মেষ।

    ৫০. কোন মৃত্তিকা কফি চাষের জন্য আদর্শ?

    উত্তর: লৌহ ও পটাশ সমৃদ্ধ উর্বর দোআঁশ মাটি বা ল্যাটেরাইট মাটি।

    ৫১. কোন ফসলকে ‘সাদা সোনা’ বলা হয়?

    উত্তর: তুলা।

    ৫২. ভারতের একটি প্রধান ডাল শস্যের নাম লেখো।

    উত্তর: ছোলা বা মুগ।

    ৫৩. কোন দুটি রাজ্য ভারতের সবুজ বিপ্লবের কেন্দ্র ছিল?

    উত্তর: পাঞ্জাব ও হরিয়ানা।

    ৫৪. কোন ফসলের জন্য ‘ছাঁটাই’ পদ্ধতি প্রয়োজন?

    উত্তর: চা।

    ৫৫. ভারতের কোন রাজ্যে নারকেল উৎপাদন সর্বাধিক?

    উত্তর: কেরালা।

    ৫৬. ‘ফ্লোরিকালচার’ কী?

    উত্তর: বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে ফুলের চাষকে ফ্লোরিকালচার বলে।

    ৫৭. একটি বাগিচা ফসলের নাম লেখো যা পানীয় হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

    উত্তর: চা বা কফি।

    ৫৮. কোন ফসলকে ‘শস্য সম্রাট’ বলা হয়?

    উত্তর: গম।

    ৫৯. ভারতের কোন রাজ্যে আঙ্গুর উৎপাদন সর্বাধিক?

    উত্তর: মহারাষ্ট্র।

    ৬০. NABARD-এর পুরো নাম কী?উত্তর: National Bank for Agriculture and Rural Development.


    গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ২ (২৫টি)

    ১. খরিফ ও রবি ফসলের দুটি পার্থক্য লেখো।

    উত্তর: খরিফ ফসল: এটি বর্ষার শুরুতে (জুন-জুলাই) বোনা হয় এবং শরৎকালে (অক্টোবর-নভেম্বর) কাটা হয়। যেমন – ধান। রবি ফসল: এটি শীতের শুরুতে (অক্টোবর-নভেম্বর) বোনা হয় এবং বসন্তকালে (মার্চ-এপ্রিল) কাটা হয়। যেমন – গম।

    ২. সবুজ বিপ্লবের দুটি সুফল ও দুটি কুফল লেখো।

    উত্তর: সুফল: ১. ভারত খাদ্য উৎপাদনে, বিশেষত গম উৎপাদনে, স্বনির্ভর হয়েছে। ২. কৃষকদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটেছে। কুফল: ১. অতিরিক্ত জলসেচ ও রাসায়নিক সারের ব্যবহারে মাটির উর্বরতা ও ভৌমজলের স্তর কমে গেছে। ২. এর সুফল মূলত পাঞ্জাব, হরিয়ানার মতো কয়েকটি রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

    ৩. বাগিচা কৃষি কী? দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

    উত্তর: যে কৃষি ব্যবস্থায় বিস্তীর্ণ জমিতে শুধুমাত্র একটি ফসল (যেমন – চা, কফি, রাবার) বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে রপ্তানির জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়, তাকে বাগিচা কৃষি বলে।
    বৈশিষ্ট্য: ১. এটি একটি একফসলি ও মূলধন-নির্ভর কৃষি। ২. এতে প্রচুর পরিমাণে দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।

    ৪. জীবিকাসত্তাভিত্তিক ও বাণিজ্যিক কৃষির পার্থক্য কী?

    উত্তর: জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি: এর মূল উদ্দেশ্য হল কৃষকের নিজের পরিবারের খাবারের চাহিদা মেটানো। এতে উৎপাদন কম হয়। বাণিজ্যিক কৃষি: এর মূল উদ্দেশ্য হল বাজারে বিক্রি করে লাভ করা। এতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদন বাড়ানো হয়।

    ৫. ‘শস্যাবর্তন’ কৃষি পদ্ধতির দুটি গুরুত্ব লেখো।

    উত্তর: ১. জমিতে পর্যায়ক্রমে বিভিন্ন ফসল চাষ করলে মাটির উর্বরতা বজায় থাকে এবং পুষ্টির ভারসাম্য রক্ষা পায়। ২. এটি রোগপোকার আক্রমণ কমাতে সাহায্য করে এবং মাটির গঠন উন্নত করে।

    ৬. ধাপ চাষ ও ফালি চাষের মধ্যে পার্থক্য কী?

    উত্তর: ধাপ চাষ: এটি খুব খাড়া পার্বত্য ঢালে সিঁড়ির ধাপের মতো জমি তৈরি করে করা হয়। ফালি চাষ: এটি অপেক্ষাকৃত কম ঢালু জমিতে আড়াআড়িভাবে ফালি তৈরি করে করা হয়। দুটিই মৃত্তিকা ক্ষয় রোধে সহায়ক।

    ৭. ভারতের কৃষির দুটি প্রধান সমস্যা উল্লেখ করো।

    উত্তর: ১. মৌসুমী বায়ুর উপর নির্ভরশীলতা: ভারতের কৃষি ব্যবস্থা মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালিপনার উপর নির্ভরশীল, যা প্রায়শই খরা বা বন্যার কারণ হয়। ২. জমির ক্ষুদ্র আয়তন: জনসংখ্যার চাপে মাথাপিছু জমির পরিমাণ খুব কম, যা আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও বাণিজ্যিক কৃষির পথে বাধা।

    ৮. ‘অপারেশন ফ্লাড’ বা শ্বেত বিপ্লব কী?

    উত্তর: ১৯৭০-এর দশকে ভারতে দুগ্ধ উৎপাদন নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করার জন্য যে কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল, তাকে ‘অপারেশন ফ্লাড’ বা শ্বেত বিপ্লব বলে। ডঃ ভার্গিস কুরিয়েন ছিলেন এর প্রধান রূপকার। এর ফলে ভারত দুগ্ধ উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়।

    ৯. মিলেট জাতীয় শস্যের দুটি গুরুত্ব লেখো।

    উত্তর: ১. জোয়ার, বাজরা, রাগি ইত্যাদি মিলেট খুব কম বৃষ্টিপাতযুক্ত শুষ্ক অঞ্চলেও চাষ করা যায়। ২. এগুলি পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এবং গরিব মানুষের প্রধান খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

    ১০. ধান ও গম চাষের দুটি পার্থক্য লেখো।

    উত্তর: ধান: এটি একটি খরিফ ফসল। এর জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু এবং ১০০-২০০ সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। গম: এটি একটি রবি ফসল। এর জন্য শীতল ও শুষ্ক জলবায়ু এবং ৫০-১০০ সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন।

    ১১. আঁখ ও তুলা চাষের জন্য কেমন মৃত্তিকা প্রয়োজন?

    উত্তর: আঁখ: চুন ও লবণযুক্ত উর্বর দোআঁশ ও পলি মাটি আঁখ চাষের জন্য আদর্শ। তুলা: চুন ও লবণযুক্ত, জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা রেগুর মাটি তুলা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।

    ১২. ‘জায়িদ ফসল’ বলতে কী বোঝায়? উদাহরণ দাও।

    উত্তর: রবি ফসল তোলার পর এবং খরিফ ফসল বোনার আগে, অর্থাৎ গ্রীষ্মকালে যে স্বল্পমেয়াদী ফসল চাষ করা হয়, তাকে জায়িদ ফসল বলে।
    উদাহরণ: তরমুজ, শসা, আউশ ধান, চিনাবাদাম ইত্যাদি।

    ১৩. ভারতীয় কৃষিতে সবুজ বিপ্লবের দুটি প্রভাব লেখো।

    উত্তর: ১. ইতিবাচক প্রভাব: ভারত খাদ্যশস্য, বিশেষত গম উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়েছে এবং খাদ্য সংকট দূর হয়েছে। ২. নেতিবাচক প্রভাব: অতিরিক্ত রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহারে মাটি ও জল দূষিত হয়েছে এবং ভৌমজলের স্তর নীচে নেমে গেছে।

    ১৪. স্থানান্তর কৃষি পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কেন?

    উত্তর: স্থানান্তর কৃষিতে (যেমন – ঝুম চাষ) বনভূমি পুড়িয়ে পরিষ্কার করে চাষ করা হয়। এর ফলে মূল্যবান বনজ সম্পদ নষ্ট হয়, জীববৈচিত্র্য হ্রাস পায় এবং মাটির উপরিস্তর আলগা হয়ে গিয়ে ভূমিক্ষয় বৃদ্ধি পায়।

    ১৫. ভারতের প্রধান দুটি পানীয় ফসলের নাম ও তাদের প্রধান উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো।

    উত্তর: ১. চা: প্রধান উৎপাদক রাজ্য আসাম। ২. কফি: প্রধান উৎপাদক রাজ্য কর্ণাটক।

    ১৬. হর্টিকালচার বা উদ্যান কৃষি কী?

    উত্তর: যে কৃষি ব্যবস্থায় আধুনিক পদ্ধতিতে বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে বিভিন্ন ধরনের ফল, ফুল ও সবজির চাষ করা হয়, তাকে হর্টিকালচার বা উদ্যান কৃষি বলে। বর্তমানে ভারতে এই কৃষির গুরুত্ব বাড়ছে।

    ১৭. ‘রেটুন’ চাষ কী?

    উত্তর: আঁখ বা ইক্ষু কেটে নেওয়ার পর তার গোড়া বা মূল অংশটি জমিতে রেখে দেওয়া হয়। সেই গোড়া থেকে আবার নতুন চারা জন্মায় এবং ফসল পাওয়া যায়। এই পদ্ধতিকে ‘রেটুন’ চাষ বলে। এর ফলে নতুন করে চারা লাগানোর খরচ ও সময় বাঁচে।

    ১৮. ‘সবুজ বিপ্লব’ কথাটি প্রথম কে ব্যবহার করেন?

    উত্তর: ১৯৬৮ সালে মার্কিন কৃষিবিজ্ঞানী ডঃ উইলিয়াম গ্যাড প্রথম ‘সবুজ বিপ্লব’ কথাটি ব্যবহার করেন।

    ১৯. ভারতের দুটি প্রধান তন্তু ফসলের নাম ও তাদের প্রধান উৎপাদক রাজ্যের নাম লেখো।

    উত্তর: ১. তুলা: প্রধান উৎপাদক রাজ্য গুজরাট। ২. পাট: প্রধান উৎপাদক রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ।

    ২০. ভারতের কৃষির আধুনিকীকরণের দুটি উদাহরণ দাও।

    উত্তর: ১. উচ্চ ফলনশীল (HYV) বীজের ব্যবহার। ২. ট্রাক্টর, হারভেস্টারের মতো আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার।

    ২১. পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য কৃষিতে উন্নত কেন?উত্তর: পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য কৃষিতে উন্নত কারণ এখানে সবুজ বিপ্লবের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছে। এখানকার কৃষকরা উন্নত বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং জলসেচের (খাল ও নলকূপ) ব্যাপক ব্যবহার করে, যার ফলে হেক্টর প্রতি উৎপাদন খুব বেশি।

    ২২. ‘মিশ্র কৃষি’ (Mixed Farming) কাকে বলে?উত্তর: যে কৃষি ব্যবস্থায় ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি পশুপালন (যেমন – গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি) করা হয়, তাকে মিশ্র কৃষি বলে। এটি কৃষকদের অতিরিক্ত আয়ের উৎস এবং ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।

    ২৩. কৃষি কাজে জলসেচ অপরিহার্য কেন?উত্তর: ভারতের কৃষি ব্যবস্থা মৌসুমী বায়ুর উপর নির্ভরশীল, যা অত্যন্ত অনিশ্চিত। সময়মতো বৃষ্টি না হলে বা কম হলে খরা দেখা দেয়। এই অনিশ্চয়তা থেকে ফসলকে রক্ষা করতে এবং শুষ্ক ঋতুতে চাষাবাদের জন্য জলসেচ অপরিহার্য।

    ২৪. ভারতের কোন কোন রাজ্যে সবুজ বিপ্লবের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছিল?

    উত্তর: ভারতের সবুজ বিপ্লবের প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়েছিল উত্তর-পশ্চিম ভারতের রাজ্যগুলিতে, বিশেষত পাঞ্জাব, হরিয়ানা এবং উত্তরপ্রদেশের পশ্চিমাংশে।

    ২৫. ‘সোনালী চতুর্ভুজ’ কীসের সঙ্গে যুক্ত?

    উত্তর: এটি ভারতের সড়ক পরিবহণের সঙ্গে যুক্ত একটি বৃহৎ প্রকল্প, যা দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও কলকাতাকে যুক্ত করেছে। (এটি কৃষি অধ্যায়ের প্রশ্ন না হলেও প্রাসঙ্গিকতা থাকতে পারে)।


    ঘ) সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৩ (২৫টি)

    ১. ভারতীয় কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলোচনা করো।

    উত্তর: ভারতীয় কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
    ক) মৌসুমী বায়ুর উপর নির্ভরশীলতা: ভারতের কৃষি ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণরূপে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল, যা অত্যন্ত খামখেয়ালি ও অনিশ্চিত।
    খ) জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি: ভারতের বেশিরভাগ কৃষক মূলত নিজের পরিবারের খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য চাষাবাদ করে, বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য গৌণ।
    গ) ক্ষুদ্রায়তন কৃষিজমি: জনসংখ্যার চাপে ও উত্তরাধিকার সূত্রে জমির বিভাজনের ফলে মাথাপিছু জমির পরিমাণ খুব কম।
    ঘ) খাদ্যশস্যের প্রাধান্য: ভারতে মোট চাষের জমির বেশিরভাগ অংশেই ধান, গমের মতো খাদ্যশস্য চাষ করা হয়।
    ঙ) পশুশক্তির ব্যবহার: এখনো ভারতের অনেক অঞ্চলে কৃষিকাজে প্রথাগতভাবে বলদ বা মহিষের মতো পশুশক্তি ব্যবহৃত হয়।

    ২. ধান চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ আলোচনা করো।

    উত্তর: ধান ভারতের প্রধান খাদ্যশস্য। এর জন্য নিম্নলিখিত ভৌগোলিক পরিবেশ প্রয়োজন:
    ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ:
    ১. জলবায়ু: ধান ক্রান্তীয় অঞ্চলের ফসল। এর জন্য গড় উষ্ণতা ২০°-৩০° সেলসিয়াস এবং প্রচুর সূর্যকিরণ প্রয়োজন।
    ২. বৃষ্টিপাত: ধান চাষের জন্য বছরে ১০০-২০০ সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। জমিতে জল জমিয়ে রাখতে হয়।
    ৩. মৃত্তিকা: উর্বর পলি বা এঁটেল দোআঁশ মাটি, যা জল ধরে রাখতে পারে, ধান চাষের জন্য আদর্শ।
    খ) অর্থনৈতিক পরিবেশ:
    ১. শ্রমিক: ধান রোপণ, কাটা, ঝাড়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে সস্তা ও সুলভ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
    ২. মূলধন ও প্রযুক্তি: উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার, কীটনাশক ও জলসেচের জন্য মূলধন প্রয়োজন।

    ৩. গম চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ আলোচনা করো।

    উত্তর: গম ভারতের দ্বিতীয় প্রধান খাদ্যশস্য। এর জন্য নিম্নলিখিত ভৌগোলিক পরিবেশ প্রয়োজন:
    ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ:
    ১. জলবায়ু: গম নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলের ফসল। চারাগাছ বৃদ্ধির সময় শীতল (১০°-১৫° সে) এবং পাকার সময় উষ্ণ (২০°-২৫° সে) ও রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া প্রয়োজন।
    ২. বৃষ্টিপাত: এর জন্য বছরে ৫০-১০০ সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। অতিরিক্ত বৃষ্টি ক্ষতিকর।
    ৩. মৃত্তিকা: উর্বর দোআঁশ ও এঁটেল মাটি গম চাষের জন্য আদর্শ।
    খ) অর্থনৈতিক পরিবেশ:
    ১. জলসেচ: কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে জলসেচ অপরিহার্য।
    ২. আধুনিক যন্ত্রপাতি: বর্তমানে গম চাষে ট্রাক্টর, হারভেস্টারের মতো আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বাড়ছে।

    ৪. চা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ আলোচনা করো।

    উত্তর: চা একটি গুরুত্বপূর্ণ বাগিচা ও পানীয় ফসল। এর জন্য নিম্নলিখিত ভৌগোলিক পরিবেশ প্রয়োজন:
    ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ:
    ১. জলবায়ু: উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু চা চাষের জন্য আদর্শ। গড় উষ্ণতা ২০°-৩০° সেলসিয়াস প্রয়োজন।
    ২. বৃষ্টিপাত: বছরে ১৫০-২৫০ সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। কিন্তু গাছের গোড়ায় জল জমা ক্ষতিকর।
    ৩. ভূমিরূপ: জলনিকাশিযুক্ত পাহাড়ি ঢালু জমি চা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
    ৪. মৃত্তিকা: লৌহ ও হিউমাস সমৃদ্ধ অম্লধর্মী দোআঁশ মাটি প্রয়োজন।
    খ) অর্থনৈতিক পরিবেশ:
    ১. শ্রমিক: চা পাতা তোলা ও পরিচর্যার জন্য প্রচুর পরিমাণে দক্ষ ও সুলভ মহিলা শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
    ২. মূলধন: বাগান তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য প্রচুর মূলধন প্রয়োজন।

    ৫. কফি চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ আলোচনা করো।

    উত্তর: কফি ভারতের অন্যতম প্রধান পানীয় ফসল। এর জন্য নিম্নলিখিত ভৌগোলিক পরিবেশ প্রয়োজন:
    ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ:
    ১. জলবায়ু: উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। গড় উষ্ণতা ২০°-৩০° সেলসিয়াস। সরাসরি প্রখর সূর্যরশ্মি ক্ষতিকর, তাই ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষের প্রয়োজন হয়।
    ২. বৃষ্টিপাত: বছরে ১৫০-২৫০ সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন।
    ৩. ভূমিরূপ: জলনিকাশিযুক্ত পাহাড়ি ঢালু জমি (৬০০-১৮০০ মিটার উচ্চতা) আদর্শ।
    ৪. মৃত্তিকা: লৌহ, পটাশ ও হিউমাস সমৃদ্ধ উর্বর লাল দোআঁশ মাটি প্রয়োজন।
    খ) অর্থনৈতিক পরিবেশ:
    ১. শ্রমিক: কফি ফল তোলা ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন।

    ৬. ভারতের কৃষির প্রধান সমস্যাগুলি কী কী?

    উত্তর: ভারতীয় কৃষি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জরিত:
    ১. মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালিপনা: অনিয়মিত, অপর্যাপ্ত বা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত প্রায়শই খরা বা বন্যার কারণ হয়, যা ফসল নষ্ট করে।
    ২. ক্ষুদ্র কৃষিজোত: জনসংখ্যার চাপে ও উত্তরাধিকার সূত্রে জমির বিভাজনের ফলে মাথাপিছু জমির পরিমাণ খুব কম, যা আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ও বাণিজ্যিক চাষের পথে বাধা।
    ৩. উন্নত পরিকাঠামোর অভাব: অনেক গ্রামীণ অঞ্চলে উন্নত বীজ, সার, জলসেচ, বিদ্যুৎ এবং হিমঘরের মতো পরিকাঠামোর অভাব রয়েছে।
    ৪. মূলধনের অভাব: বেশিরভাগ কৃষক দরিদ্র হওয়ায় তারা মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিতে বাধ্য হয় এবং ঋণের জালে জড়িয়ে পড়ে।
    ৫. বিপণন ব্যবস্থার ত্রুটি: সঠিক বাজার ও ন্যায্য মূল্যের অভাবে কৃষকরা ফড়ে বা দালালদের কাছে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়।

    ৭. সবুজ বিপ্লবের সুফল ও কুফলগুলি আলোচনা করো।

    উত্তর: সুফল (Positive Impacts):
    ১. খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা: সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারত খাদ্যশস্য, বিশেষত গম ও ধান উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়েছে। বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি বন্ধ হয়েছে।
    ২. কৃষকদের আয় বৃদ্ধি: পাঞ্জাব, হরিয়ানার মতো রাজ্যের কৃষকদের হেক্টর প্রতি উৎপাদন ও আয় বহুগুণ বেড়েছে।
    ৩. কৃষির আধুনিকীকরণ: এর ফলে কৃষিতে উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার বেড়েছে।
    কুফল (Negative Impacts):
    ১. পরিবেশগত সমস্যা: অতিরিক্ত জলসেচের ফলে ভৌমজলের স্তর নীচে নেমে গেছে এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহারে মাটি ও জল দূষিত হয়েছে।
    ২. আঞ্চলিক বৈষম্য: এর সুফল মূলত পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল, যা আঞ্চলিক বৈষম্য বাড়িয়েছে।
    ৩. সামাজিক বৈষম্য: শুধুমাত্র বড় কৃষকরাই এর সুবিধা নিতে পেরেছে, ছোট ও প্রান্তিক কৃষকরা আরও গরিব হয়েছে।

    ৮. ভারতের কৃষির উন্নতির জন্য গৃহীত ব্যবস্থাগুলি কী কী?

    উত্তর: ভারতের কৃষির উন্নতির জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:
    ১. সবুজ বিপ্লব: উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার ও জলসেচ ব্যবহার করে খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
    ২. প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার: জমিদারি প্রথা বিলোপ, ভূমি সংস্কার এবং সমবায় কৃষি ব্যবস্থা চালু করা।
    ৩. আর্থিক সহায়তা: কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার জন্য গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ও সমবায় সমিতি স্থাপন করা হয়েছে। শস্য বীমা প্রকল্পও চালু করা হয়েছে।
    ৪. পরিকাঠামোগত উন্নয়ন: জলসেচ ব্যবস্থার প্রসার, বিদ্যুৎ সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণ এবং হিমঘর স্থাপন করা হচ্ছে।
    ৫. সহায়ক মূল্য (MSP): কৃষকদের ফসলের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য সরকার ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করে।

    ৯. পাট চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ আলোচনা করো।

    উত্তর: পাট একটি গুরুত্বপূর্ণ তন্তু ফসল। এর জন্য নিম্নলিখিত ভৌগোলিক পরিবেশ প্রয়োজন:
    ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ:
    ১. জলবায়ু: উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু প্রয়োজন। গড় উষ্ণতা ২৫°-৩৫° সেলসিয়াস।
    ২. বৃষ্টিপাত: বছরে ১৫০-২৫০ সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন।
    ৩. মৃত্তিকা: নদীর তীরবর্তী উর্বর পলি মাটি বা দোআঁশ মাটি পাট চাষের জন্য আদর্শ।
    খ) অর্থনৈতিক পরিবেশ:
    ১. শ্রমিক: পাট গাছ কাটা, জাগ দেওয়া, আঁশ ছাড়ানোর জন্য প্রচুর পরিমাণে সস্তা শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
    ২. জল: পাট পচানোর (জাগ দেওয়া) জন্য প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার ও স্থির জলের (পুকুর, বিল) প্রয়োজন।

    ১০. তুলা চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ আলোচনা করো।

    উত্তর: তুলা ভারতের প্রধান তন্তু ফসল। এর জন্য নিম্নলিখিত ভৌগোলিক পরিবেশ প্রয়োজন:
    ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ:
    ১. জলবায়ু: উষ্ণ জলবায়ু প্রয়োজন। গড় উষ্ণতা ২০°-৩০° সেলসিয়াস এবং অন্তত ২০০টি তুহিনমুক্ত দিন প্রয়োজন।
    ২. বৃষ্টিপাত: বছরে ৬০-১০০ সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। গুটি পাকার সময় রৌদ্রকরোজ্জ্বল ও শুষ্ক আবহাওয়া দরকার।
    ৩. মৃত্তিকা: চুন ও লবণযুক্ত, জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কৃষ্ণ মৃত্তিকা বা রেগুর মাটি তুলা চাষের জন্য সবচেয়ে উপযোগী।
    খ) অর্থনৈতিক পরিবেশ:
    ১. শ্রমিক: তুলা গাছ পরিচর্যা এবং গুটি ফাটলে তা তোলার জন্য প্রচুর পরিমাণে সস্তা শ্রমিকের প্রয়োজন।

    ১১. ভারতের পূর্বাঞ্চলে ধান চাষ বেশি হয় কেন?

    উত্তর: ভারতের পূর্বাঞ্চলে (পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ওড়িশা, আসাম) ধান চাষ বেশি হওয়ার কারণগুলি হল:
    ১. অনুকূল জলবায়ু: এই অঞ্চলে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু বিরাজ করে এবং বর্ষাকালে মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয় (১০০-২০০ সেমি), যা ধান চাষের জন্য আদর্শ।
    ২. উর্বর মৃত্তিকা: গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র, মহানদীর মতো নদীগুলির পলি সঞ্চয়ের ফলে এখানকার মাটি খুব উর্বর।
    ৩. জলের প্রাচুর্য: এখানকার নদীগুলিতে সারাবছর জল থাকায় এবং খাল, পুকুরের মতো জলাশয় বেশি থাকায় জলসেচের সুবিধা রয়েছে।
    ৪. সুলভ শ্রমিক: এই অঞ্চল অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ হওয়ায় ধান চাষের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর সস্তা শ্রমিক সহজেই পাওয়া যায়।

    ১২. পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য কৃষিতে উন্নত কেন?

    উত্তর: পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্য ভারতের কৃষি উৎপাদনে, বিশেষত গম উৎপাদনে, অত্যন্ত উন্নত। এর কারণগুলি হল:
    ১. সবুজ বিপ্লবের প্রভাব: এই রাজ্য দুটি ছিল সবুজ বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু। এখানকার কৃষকরা প্রথম থেকেই উচ্চ ফলনশীল বীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যাপক ব্যবহার করে।
    ২. উন্নত জলসেচ ব্যবস্থা: ভাকরা-নাঙ্গাল পরিকল্পনার খাল এবং অসংখ্য নলকূপের মাধ্যমে এখানকার প্রায় সমস্ত কৃষিজমিতে জলসেচের ব্যবস্থা রয়েছে।
    ৩. কৃষির যান্ত্রিকীকরণ: এখানকার কৃষকরা ট্রাক্টর, হারভেস্টার, থ্রেসারের মতো আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যাপকভাবে ব্যবহার করে।
    ৪. সরকারি সহায়তা: এখানকার কৃষকরা সরকারের কাছ থেকে ঋণ, ভর্তুকি এবং সহায়ক মূল্যের মতো সুবিধাগুলি বেশি পায়।

    ১৩. খরিফ ও রবি শস্যের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

    উত্তর: | বৈশিষ্ট্য | খরিফ শস্য | রবি শস্য | |—|—|—| | **রোপণকাল** | বর্ষার শুরুতে (জুন-জুলাই) বোনা হয়। | শীতের শুরুতে (অক্টোবর-নভেম্বর) বোনা হয়। | | **তোলার সময়** | শরৎ বা হেমন্তকালে (সেপ্টেম্বর-অক্টোবর) কাটা হয়। | বসন্ত বা গ্রীষ্মের শুরুতে (ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল) কাটা হয়। | | **জলবায়ু** | এর জন্য উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। | এর জন্য শীতল ও শুষ্ক জলবায়ু এবং কম বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। | | **উদাহরণ** | ধান, পাট, তুলা, ভুট্টা। | গম, যব, ছোলা, সর্ষে। |

    ১৪. স্থানান্তর কৃষি ও বাগিচা কৃষির মধ্যে পার্থক্য লেখো।

    উত্তর: স্থানান্তর কৃষি: এটি একটি প্রথাগত ও অনুন্নত কৃষি পদ্ধতি। এতে বনভূমি পুড়িয়ে পরিষ্কার করে কয়েক বছর চাষ করার পর জমির উর্বরতা কমে গেলে নতুন জায়গায় চলে যাওয়া হয়। এটি জীবিকাসত্তাভিত্তিক।
    বাগিচা কৃষি: এটি একটি আধুনিক ও উন্নত কৃষি পদ্ধতি। এতে বিস্তীর্ণ জমিতে স্থায়ীভাবে শুধুমাত্র একটি ফসল বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে চাষ করা হয়। এটি মূলধন-নির্ভর।

    ১৫. ভারতের ডাল চাষের সমস্যা ও গুরুত্ব লেখো।

    উত্তর: গুরুত্ব:
    ১. ডাল ভারতীয়দের খাদ্যের প্রোটিনের প্রধান উৎস।
    ২. ডাল চাষ করলে শিম্বগোত্রীয় উদ্ভিদ হওয়ায় মাটির নাইট্রোজেনের পরিমাণ বাড়ে, যা উর্বরতা বৃদ্ধি করে।
    সমস্যা:
    ১. সবুজ বিপ্লবের সময় ধান ও গমের উপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় ডাল চাষের এলাকা কমে গেছে।
    ২. ডালে রোগপোকার আক্রমণ বেশি হয় এবং এর কোনো উচ্চ ফলনশীল বীজ তেমনভাবে আবিষ্কৃত হয়নি।
    ৩. বেশিরভাগ ডাল চাষ বৃষ্টিপাতের উপর নির্ভরশীল হওয়ায় উৎপাদন অনিশ্চিত।

    ১৬. উত্তর-পূর্ব ভারতে চা চাষের উন্নতির কারণ কী?

    উত্তর: উত্তর-পূর্ব ভারতে (বিশেষত আসাম ও দার্জিলিং) চা চাষের উন্নতির কারণগুলি হল:
    ১. অনুকূল ভূপ্রকৃতি: এখানকার পাহাড়ি ঢালু জমি জলনিকাশের জন্য অত্যন্ত উপযোগী, যা চা চাষের জন্য অপরিহার্য।
    ২. অনুকূল জলবায়ু: এখানে সারাবছর উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু এবং প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়া চায়ের গুণমান বাড়ায়।
    ৩. উর্বর মৃত্তিকা: এখানকার লৌহ ও হিউমাস সমৃদ্ধ অম্লধর্মী মাটি চা চাষের জন্য আদর্শ।
    ৪. সুলভ শ্রমিক: চা পাতা তোলা ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রয়োজনীয় প্রচুর সস্তা ও দক্ষ শ্রমিক এখানে সহজেই পাওয়া যায়।

    ১৭. ভারতের কৃষিভিত্তিক কয়েকটি বিপ্লবের নাম লেখো।

    উত্তর: ভারতের কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিপ্লব হল:
    ১. সবুজ বিপ্লব: খাদ্যশস্য (বিশেষত গম) উৎপাদন বৃদ্ধি।
    ২. শ্বেত বিপ্লব: দুগ্ধ উৎপাদন বৃদ্ধি (অপারেশন ফ্লাড)।
    ৩. নীল বিপ্লব: মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি।
    ৪. হলুদ বিপ্লব: তৈলবীজ উৎপাদন বৃদ্ধি।
    ৫. গোল বিপ্লব: আলু উৎপাদন বৃদ্ধি।

    ১৮. ভারতের কৃষির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা সম্পর্কে লেখো।

    উত্তর: ভারতের কৃষির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল, তবে কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
    সম্ভাবনা:
    ১. জৈব চাষ (Organic Farming) এবং হর্টিকালচারের (ফল, ফুল, সবজি) প্রসার ঘটছে, যা রপ্তানি ও আয় বাড়াতে পারে।
    ২. খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের উন্নতি ঘটলে কৃষিপণ্যের অপচয় কমবে এবং কৃষকদের আয় বাড়বে।
    ৩. উন্নত প্রযুক্তি (যেমন – ড্রোন, AI) এবং জেনেটিক্যালি মডিফায়েড (GM) বীজের ব্যবহার উৎপাদন আরও বাড়াতে পারে।
    চ্যালেঞ্জ:
    জলবায়ু পরিবর্তন, ভৌমজলের সংকট এবং ক্ষুদ্র কৃষিজোতের মতো সমস্যাগুলি মোকাবিলা করা প্রয়োজন।

    ১৯. ‘জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি’র বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

    উত্তর: জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষির বৈশিষ্ট্যগুলি হল:
    ১. উদ্দেশ্য: এর প্রধান উদ্দেশ্য হল কৃষকের নিজের ও তার পরিবারের ভরণপোষণ, বাণিজ্যিক লাভ নয়।
    ২. জমির আয়তন: কৃষিজমিগুলি আকারে খুব ছোট ও খণ্ডিত হয়।
    ৩. উৎপাদন পদ্ধতি: মূলত প্রথাগত পদ্ধতিতে ও পরিবারের সদস্যদের শ্রমের উপর নির্ভর করে চাষ করা হয়। আধুনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার কম।
    ৪. উৎপাদন: হেক্টর প্রতি উৎপাদন কম এবং উদ্বৃত্ত প্রায় থাকে না বললেই চলে।

    ২০. ভারতের কোন কোন অঞ্চলে কফি চাষ হয়? কফির প্রকারভেদ লেখো।

    উত্তর: উৎপাদক অঞ্চল: ভারতের কফি চাষ মূলত দক্ষিণ ভারতের তিনটি রাজ্যে সীমাবদ্ধ – কর্ণাটক (প্রথম), কেরালা ও তামিলনাড়ু। পশ্চিমঘাট পর্বতের ঢালে এই চাষ হয়।
    প্রকারভেদ: ভারতে প্রধানত দুই প্রকার কফির চাষ হয়:
    ১. আরবিকা (Arabica): এটি উৎকৃষ্ট মানের এবং সুগন্ধযুক্ত। ভারতের বেশিরভাগ কফিই এই প্রজাতির।
    ২. রোবাস্টা (Robusta): এটি অপেক্ষাকৃত নিম্নমানের এবং এর ফলন বেশি।

    ২১. সবুজ বিপ্লব বলতে কী বোঝো?

    উত্তর: ১৯৬০-এর দশকে ভারতের খাদ্য সংকট মোকাবিলার জন্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যে উচ্চ ফলনশীল (HYV) বীজ, প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক এবং উন্নত জলসেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করে খাদ্যশস্য, বিশেষত গম ও ধানের উৎপাদন নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করা হয়। এই যুগান্তকারী ঘটনাকেই ‘সবুজ বিপ্লব’ বলা হয়। ভারতে এর রূপকার ছিলেন ডঃ এম. এস. স্বামীনাথন।

    ২২. ভারতের কোন অঞ্চলকে ‘ভারতের রুটির ঝুড়ি’ বলা হয় এবং কেন?

    উত্তর: ভারতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানা রাজ্যকে একত্রে ‘ভারতের রুটির ঝুড়ি’ (Bread Basket of India) বলা হয়।
    কারণ: সবুজ বিপ্লবের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ায় এই রাজ্য দুটি গম উৎপাদনে অসাধারণ সাফল্য লাভ করেছে। এখানকার হেক্টর প্রতি গমের উৎপাদন ভারতের মধ্যে সর্বাধিক। এই রাজ্য দুটি ভারতের কেন্দ্রীয় খাদ্য ভাণ্ডারে সবচেয়ে বেশি পরিমাণ গম সরবরাহ করে, যা সারা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এই কারণেই এদের ‘ভারতের রুটির ঝুড়ি’ বলা হয়।

    ২৩. ভারতের কৃষিতে জলবায়ুর দুটি ইতিবাচক ও দুটি নেতিবাচক প্রভাব লেখো।উত্তর: ইতিবাচক প্রভাব:
    ১. মৌসুমী জলবায়ুর প্রভাবে ভারতে সারাবছর উষ্ণতা থাকায় এবং পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত হওয়ায় বছরে একাধিকবার ফসল চাষ করা সম্ভব হয়।
    ২. জলবায়ুর বৈচিত্র্যের কারণে ভারতে ধান, গম, তুলা, চা, কফি, মশলার মতো বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করা যায়।
    নেতিবাচক প্রভাব:
    ১. মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালিপনার কারণে অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টির ফলে প্রায়শই খরা ও বন্যা দেখা দেয়, যা ফসল নষ্ট করে।
    ২. ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি, শৈত্যপ্রবাহের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলিও কৃষির ব্যাপক ক্ষতি করে।

    ২৪. ভারতের কৃষিতে মহিলাদের ভূমিকা আলোচনা করো।

    উত্তর: ভারতের কৃষিতে মহিলাদের ভূমিকা অপরিসীম, যদিও তা অনেক সময় স্বীকৃতি পায় না।
    ১. বীজ রোপণ, চারাগাছ পরিচর্যা, নিড়ানি দেওয়া, ফসল কাটা ও ঝাড়ার মতো বেশিরভাগ কাজই মহিলারা করে থাকেন।
    ২. চা ও কফি বাগানে পাতা ও ফল তোলার কাজে মূলত দক্ষ মহিলা শ্রমিকরাই নিযুক্ত থাকেন।
    ৩. ফসল উৎপাদনের পাশাপাশি বীজ সংরক্ষণ, পশুপালন এবং কৃষিজাত দ্রব্য প্রক্রিয়াকরণের মতো কাজেও তাঁরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। গ্রামীণ অর্থনীতিতে তাঁদের অবদান অনস্বীকার্য।

    ২৫. ‘ফালি চাষ’ ও ‘ধাপ চাষ’ – এই দুটি পদ্ধতি কোন ধরনের সমস্যার সমাধানে ব্যবহৃত হয়?

    উত্তর: ‘ফালি চাষ’ ও ‘ধাপ চাষ’ – এই দুটি কৃষি পদ্ধতি মূলত পার্বত্য বা ঢালু অঞ্চলে মৃত্তিকা ক্ষয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য ব্যবহৃত হয়।
    ধাপ চাষ: খাড়া পার্বত্য ঢালে সিঁড়ির ধাপের মতো জমি তৈরি করে চাষ করলে জলপ্রবাহের গতি কমে যায় এবং মাটির ক্ষয় রোধ হয়।
    ফালি চাষ: অপেক্ষাকৃত কম ঢালু জমিতে আড়াআড়িভাবে ফালি তৈরি করে শস্য ও ঘাস চাষ করলে তা বায়ু ও জলের দ্বারা মাটির উপরিস্তর ক্ষয় হয়ে যাওয়াকে বাধা দেয়।


    ঙ) রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৫ (১০টি)

    ১. ধান ও গম চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের তুলনামূলক আলোচনা করো।

    উত্তর:
    ধান ও গম ভারতের দুটি প্রধান খাদ্যশস্য, কিন্তু এদের চাষের জন্য ভিন্ন ধরনের ভৌগোলিক পরিবেশ প্রয়োজন।
    | বৈশিষ্ট্য | ধান (Paddy) | গম (Wheat) | |—|—|—| | **জলবায়ু** | উষ্ণ ও আর্দ্র ক্রান্তীয় জলবায়ু। গড় উষ্ণতা ২০°-৩০° সেলসিয়াস। | শীতল ও শুষ্ক নাতিশীতোষ্ণ জলবায়ু। বৃদ্ধির সময় ১০°-১৫° সে এবং পাকার সময় ২০°-২৫° সে উষ্ণতা প্রয়োজন। | | **বৃষ্টিপাত** | প্রচুর বৃষ্টিপাত প্রয়োজন (১০০-২০০ সেমি)। জমিতে জল জমিয়ে রাখতে হয়। | মাঝারি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন (৫০-১০০ সেমি)। অতিরিক্ত বৃষ্টি ক্ষতিকর। তুহিনমুক্ত আবহাওয়া দরকার। | | **মৃত্তিকা** | জলধারণ ক্ষমতাযুক্ত উর্বর পলি বা এঁটেল দোআঁশ মাটি আদর্শ। | জলনিকাশিযুক্ত উর্বর দোআঁশ বা এঁটেল মাটি আদর্শ। | | **শ্রমিক** | চারা রোপণ, নিড়ানি দেওয়া, কাটা ও ঝাড়ার জন্য প্রচুর সস্তা শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। | চাষের বেশিরভাগ কাজই যন্ত্রের সাহায্যে হয়, তাই শ্রমিকের প্রয়োজন তুলনামূলকভাবে কম। | | **মূলধন** | মূলত প্রথাগত পদ্ধতিতে চাষ হওয়ায় মূলধনের প্রয়োজন কম। | উচ্চ ফলনশীল বীজ, সার, কীটনাশক ও যন্ত্রপাতির জন্য বেশি মূলধনের প্রয়োজন। | | **উৎপাদক অঞ্চল**| পশ্চিমবঙ্গ, উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, অন্ধ্রপ্রদেশ। | উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, হরিয়ানা, মধ্যপ্রদেশ। |

    ২. চা ও কফি চাষের অনুকূল প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশের তুলনামূলক আলোচনা করো।

    উত্তর:
    চা ও কফি ভারতের দুটি প্রধান বাগিচা ও পানীয় ফসল। এদের চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পরিবেশের মধ্যে কিছু মিল ও অমিল রয়েছে।
    | বৈশিষ্ট্য | চা (Tea) | কফি (Coffee) | |—|—|—| | **জলবায়ু** | উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু। গড় উষ্ণতা ২০°-৩০° সে। কুয়াশা ও শিশির চায়ের গুণমান বাড়ায়। | উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ু। গড় উষ্ণতা ২০°-৩০° সে। সরাসরি প্রখর সূর্যরশ্মি ক্ষতিকর, তাই ছায়া প্রদানকারী বৃক্ষ প্রয়োজন। | | **বৃষ্টিপাত** | প্রচুর বৃষ্টিপাত প্রয়োজন (১৫০-২৫০ সেমি)। | প্রচুর বৃষ্টিপাত প্রয়োজন (১৫০-২৫০ সেমি)। | | **ভূমিরূপ** | গাছের গোড়ায় জল জমা ক্ষতিকর, তাই জলনিকাশিযুক্ত পাহাড়ি ঢালু জমি অপরিহার্য। | গাছের গোড়ায় জল জমা ক্ষতিকর, তাই জলনিকাশিযুক্ত পাহাড়ি ঢালু জমি (৬০০-১৮০০ মিটার উচ্চতা) প্রয়োজন। | | **মৃত্তিকা** | লৌহ ও হিউমাস সমৃদ্ধ অম্লধর্মী দোআঁশ মাটি প্রয়োজন। | লৌহ, পটাশ ও হিউমাস সমৃদ্ধ উর্বর লাল দোআঁশ বা ল্যাটেরাইট মাটি প্রয়োজন। | | **শ্রমিক** | চা পাতা তোলা ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য প্রচুর পরিমাণে দক্ষ ও সুলভ মহিলা শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। | কফি ফল তোলা ও প্রক্রিয়াকরণের জন্য দক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়, তবে চায়ের মতো এত বেশি নয়। | | **উৎপাদক অঞ্চল**| আসাম, পশ্চিমবঙ্গ (দার্জিলিং), তামিলনাড়ু। | কর্ণাটক, কেরালা, তামিলনাড়ু। |

    ৩. ভারতের কৃষির প্রধান সমস্যা ও তার সমাধানগুলি আলোচনা করো।

    উত্তর:
    ভারতের কৃষির প্রধান সমস্যা:
    ১. প্রাকৃতিক সমস্যা:
    ক) মৌসুমী বায়ুর খামখেয়ালিপনা: অনিয়মিত, অপর্যাপ্ত বা অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত প্রায়শই খরা বা বন্যার কারণ হয়।
    খ) মৃত্তিকা ক্ষয় ও উর্বরতা হ্রাস: অবৈজ্ঞানিক চাষাবাদ ও বনভূমি ধ্বংসের ফলে মাটির উর্বরতা কমে যাচ্ছে।
    ২. অর্থনৈতিক সমস্যা:
    ক) মূলধনের অভাব: বেশিরভাগ কৃষক দরিদ্র হওয়ায় উন্নত বীজ, সার বা যন্ত্রপাতি কিনতে পারে না।
    খ) ক্ষুদ্র কৃষিজোত: জনসংখ্যার চাপে মাথাপিছু জমির পরিমাণ খুব কম, যা আধুনিক চাষের পথে বাধা।
    ৩. প্রাতিষ্ঠানিক সমস্যা:
    ক) পরিকাঠামোর অভাব: অনেক অঞ্চলে উন্নত জলসেচ, বিদ্যুৎ, রাস্তাঘাট ও হিমঘরের অভাব রয়েছে।
    খ) বিপণন ব্যবস্থার ত্রুটি: সঠিক বাজার ও ন্যায্য মূল্যের অভাবে কৃষকরা ফড়ে বা দালালদের কাছে কম দামে ফসল বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
    সমাধানের উপায়:
    ১. জলসেচ ব্যবস্থার প্রসার: মৌসুমী বায়ুর উপর নির্ভরতা কমাতে খাল, নলকূপ ও জলাশয়ের মাধ্যমে জলসেচ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটানো।
    ২. উন্নত কৃষি প্রযুক্তি গ্রহণ: কৃষকদের উচ্চ ফলনশীল বীজ, জৈব সার ও আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে উৎসাহিত করা।
    ৩. আর্থিক সহায়তা প্রদান: সমবায় ব্যাঙ্ক ও সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ এবং শস্য বীমার সুবিধা দেওয়া।
    ৪. ভূমি সংস্কার: জমির একত্রীকরণ বা সমবায় চাষের মাধ্যমে ক্ষুদ্র জোতের সমস্যা সমাধান করা।
    ৫. বিপণন ব্যবস্থার উন্নয়ন: নিয়ন্ত্রিত বাজার স্থাপন এবং ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (MSP) নিশ্চিত করে কৃষকদের ন্যায্য মূল্য পাইয়ে দেওয়া।

    ৪. সবুজ বিপ্লব কাকে বলে? ভারতীয় কৃষিতে এর প্রভাব আলোচনা করো।

    উত্তর:
    সবুজ বিপ্লব: ১৯৬০-এর দশকে ভারতের খাদ্য সংকট মোকাবিলার জন্য পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যে উচ্চ ফলনশীল (HYV) বীজ, প্রচুর পরিমাণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক এবং উন্নত জলসেচ ব্যবস্থা ব্যবহার করে খাদ্যশস্য, বিশেষত গম ও ধানের উৎপাদন নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি করা হয়। এই যুগান্তকারী ঘটনাকেই ‘সবুজ বিপ্লব’ বলা হয়। ভারতে এর রূপকার ছিলেন ডঃ এম. এস. স্বামীনাথন।
    ভারতীয় কৃষিতে প্রভাব:
    সবুজ বিপ্লবের প্রভাব ছিল সুদূরপ্রসারী এবং এর কিছু ইতিবাচক ও নেতিবাচক দিক রয়েছে।
    সুফল (ইতিবাচক প্রভাব):
    ১. খাদ্য উৎপাদনে স্বনির্ভরতা: সবুজ বিপ্লবের ফলে ভারত খাদ্যশস্য, বিশেষত গম উৎপাদনে স্বনির্ভর হয়ে ওঠে। বিদেশ থেকে খাদ্য আমদানি বন্ধ হয় এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়।
    ২. কৃষকদের আর্থিক উন্নতি: পাঞ্জাব, হরিয়ানার মতো রাজ্যের কৃষকদের হেক্টর প্রতি উৎপাদন ও আয় বহুগুণ বেড়ে যাওয়ায় তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়।
    ৩. কৃষির আধুনিকীকরণ: এর ফলে কৃষিতে ট্রাক্টর, হারভেস্টারের মতো আধুনিক যন্ত্রপাতি এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়।
    কুফল (নেতিবাচক প্রভাব):
    ১. পরিবেশগত অবনমন: অতিরিক্ত জলসেচের ফলে ভৌমজলের স্তর নীচে নেমে গেছে। রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহারে মাটি ও জল দূষিত হয়েছে এবং মাটির স্বাভাবিক উর্বরতা নষ্ট হয়েছে।
    ২. আঞ্চলিক ও সামাজিক বৈষম্য: এর সুফল মূলত পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও উত্তরপ্রদেশের মতো কয়েকটি রাজ্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এছাড়া, শুধুমাত্র বড় ও ধনী কৃষকরাই এর সুবিধা নিতে পেরেছে, ছোট ও প্রান্তিক কৃষকরা আরও পিছিয়ে পড়েছে, যা সামাজিক বৈষম্য বাড়িয়েছে।
    ৩. শস্য বৈষম্য: ধান ও গমের উপর অতিরিক্ত গুরুত্ব দেওয়ায় ডাল, তৈলবীজ ও মিলেটের মতো ফসলের উৎপাদন কমে গেছে।

    ৫. আঁখ বা ইক্ষু চাষের অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ এবং ভারতের প্রধান উৎপাদক অঞ্চলগুলির বিবরণ দাও।

    উত্তর:
    আঁখ ভারতের একটি অন্যতম প্রধান অর্থকরী ফসল, যা থেকে চিনি ও গুড় তৈরি হয়।
    অনুকূল ভৌগোলিক পরিবেশ:
    ক) প্রাকৃতিক পরিবেশ:
    ১. জলবায়ু: আঁখ ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের ফসল। এর জন্য গড় উষ্ণতা ২০°-২৭° সেলসিয়াস এবং প্রচুর সূর্যকিরণ প্রয়োজন। বৃদ্ধির সময় আর্দ্র এবং পাকার সময় শুষ্ক আবহাওয়া দরকার।
    ২. বৃষ্টিপাত: বছরে ৭৫-১৫০ সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়োজন। কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে জলসেচ অপরিহার্য।
    ৩. মৃত্তিকা: চুন ও লবণযুক্ত উর্বর দোআঁশ, পলি বা কৃষ্ণ মৃত্তিকা আঁখ চাষের জন্য আদর্শ।
    খ) অর্থনৈতিক পরিবেশ:
    ১. শ্রমিক: জমি তৈরি, চারা রোপণ, আঁখ কাটা ও কারখানায় নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচুর সস্তা শ্রমিকের প্রয়োজন হয়।
    ২. মূলধন ও সার: এটি একটি মূলধন-নির্ভর ফসল। জমিতে প্রচুর পরিমাণে সার প্রয়োগ করতে হয়।
    ৩. পরিবহন ও শিল্প: আঁখ কাটার পর তাড়াতাড়ি কারখানায় নিয়ে যেতে হয়, তাই উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা এবং চিনিকলের সান্নিধ্য প্রয়োজন।
    প্রধান উৎপাদক অঞ্চল:
    ভারত আঁখ উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয়।
    ১. উত্তর ভারত: উত্তরপ্রদেশ ভারতের সর্বাধিক আঁখ উৎপাদক রাজ্য। তাই একে ‘ভারতের চিনির বাটি’ বলা হয়। এছাড়া পাঞ্জাব, হরিয়ানা, বিহারেও আঁখ চাষ হয়।
    ২. দক্ষিণ ভারত: মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক, তামিলনাড়ু ও অন্ধ্রপ্রদেশেও প্রচুর আঁখ উৎপাদিত হয়। এখানকার আঁখে চিনির পরিমাণ বেশি।

    ৬. ভারতের কৃষির ধরন বা প্রকারভেদ আলোচনা করো।

    উত্তর:
    উদ্দেশ্য, পদ্ধতি ও ফসলের প্রকৃতির উপর ভিত্তি করে ভারতের কৃষিকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:
    ১. জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি (Subsistence Farming): যখন কৃষক মূলত নিজের পরিবারের খাবারের চাহিদা মেটানোর জন্য ক্ষুদ্র জমিতে প্রথাগত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করে, তখন তাকে জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলে। ভারতের বেশিরভাগ কৃষক এই পদ্ধতির অন্তর্গত।
    ২. বাণিজ্যিক কৃষি (Commercial Farming): যখন বাজারে বিক্রি করে লাভ করার উদ্দেশ্যে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বড় জমিতে চাষ করা হয়, তখন তাকে বাণিজ্যিক কৃষি বলে। পাঞ্জাব, হরিয়ানায় গম চাষ এর উদাহরণ।
    ৩. বাগিচা কৃষি (Plantation Agriculture): এটি বাণিজ্যিক কৃষিরই একটি অংশ, যেখানে বিস্তীর্ণ বাগান তৈরি করে শুধুমাত্র একটি ফসল (যেমন – চা, কফি, রাবার) রপ্তানির জন্য চাষ করা হয়।
    ৪. স্থানান্তর কৃষি (Shifting Cultivation): এটি একটি আদিম প্রথার কৃষি, যেখানে বনভূমি পুড়িয়ে পরিষ্কার করে কয়েক বছর চাষ করার পর জমির উর্বরতা কমে গেলে নতুন জায়গায় চলে যাওয়া হয়। উত্তর-পূর্ব ভারতে এটি ‘ঝুম’ চাষ নামে পরিচিত।
    ৫. নিবিড় বা প্রগাঢ় কৃষি (Intensive Farming): যখন কম জমিতে প্রচুর পরিমাণে সার, জলসেচ ও শ্রম ব্যবহার করে বছরে একাধিকবার ফসল উৎপাদন করা হয়, তখন তাকে নিবিড় কৃষি বলে। ভারতের ঘনবসতিপূর্ণ অঞ্চলে এই চাষ দেখা যায়।
    ৬. ব্যাপক কৃষি (Extensive Farming): যখন বিশাল জমিতে আধুনিক যন্ত্রপাতির সাহায্যে কম শ্রম ব্যবহার করে চাষ করা হয়, তখন তাকে ব্যাপক কৃষি বলে। ভারতে এর প্রচলন কম।

    ৭. ভারতের কৃষিতে জলবায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।

    উত্তর:
    ভারতের কৃষি ব্যবস্থা প্রায় সম্পূর্ণরূপে জলবায়ু, বিশেষত মৌসুমী বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়।
    ক) ঋতুভিত্তিক চাষাবাদ:
    জলবায়ু ও ঋতু পরিবর্তনের উপর ভিত্তি করে ভারতে প্রধানত তিন ধরনের ফসল চাষ হয়:
    ১. খরিফ শস্য: বর্ষাকালে উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুতে ধান, পাট, তুলা ইত্যাদি চাষ হয়।
    ২. রবি শস্য: শীতকালে শীতল ও শুষ্ক জলবায়ুতে গম, যব, ছোলা, সর্ষে ইত্যাদি চাষ হয়।
    ৩. জায়িদ শস্য: গ্রীষ্মকালে তরমুজ, শসার মতো ফসল চাষ হয়।
    খ) বৃষ্টিপাতের প্রভাব:
    ১. ফসলের বন্টন: বৃষ্টিপাতের পরিমাণের উপর ভিত্তি করে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ফসল চাষ হয়। যেমন – বেশি বৃষ্টিপাতযুক্ত পূর্বাঞ্চলে ধান এবং কম বৃষ্টিপাতযুক্ত পশ্চিমাঞ্চলে মিলেট চাষ হয়।
    ২. উৎপাদন: সময়মতো ও পর্যাপ্ত মৌসুমী বৃষ্টিপাত হলে কৃষিজ উৎপাদন ভালো হয়। কিন্তু অনাবৃষ্টি বা অতিবৃষ্টির ফলে খরা বা বন্যা হয়, যা ফসল নষ্ট করে।
    গ) উষ্ণতার প্রভাব:
    উষ্ণতা ফসলের অঙ্কুরোদ্গম, বৃদ্ধি ও পাকার সময়কে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন – গম পাকার সময় রৌদ্রকরোজ্জ্বল আবহাওয়া প্রয়োজন।
    এই কারণেই ভারতীয় কৃষিকে ‘মৌসুমী বায়ুর জুয়াখেলা’ বলা হয়।

    ৮. ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে বিভিন্ন সেচ পদ্ধতির প্রচলনের কারণগুলি কী কী?

    উত্তর:
    ভারতের উত্তর ও দক্ষিণ ভারতে বিভিন্ন সেচ পদ্ধতির প্রচলনের পিছনে প্রাকৃতিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলি দায়ী।
    উত্তর ভারতে কূপ, নলকূপ ও খালের প্রাধান্য:
    ১. ভূপ্রকৃতি: উত্তর ভারতের সুবিশাল সমভূমি নরম পাললিক শিলা দ্বারা গঠিত। তাই এখানে সহজেই কূপ, নলকূপ ও খাল খনন করা যায়।
    ২. ভৌমজল: এখানকার ভৌমজলের স্তর ভূপৃষ্ঠের অনেক কাছে অবস্থিত, ফলে পাম্পের সাহায্যে জল উত্তোলন করা সহজ ও কম ব্যয়বহুল।
    ৩. নিত্যবহ নদী: হিমালয় থেকে সৃষ্ট গঙ্গা, যমুনা, শতদ্রুর মতো নিত্যবহ নদীগুলি খালে সারাবছর জলের জোগান দেয়, যা সেচকে নির্ভরযোগ্য করে তুলেছে।
    দক্ষিণ ভারতে জলাশয়ের প্রাধান্য:
    ১. ভূপ্রকৃতি: দক্ষিণ ভারতের ভূপ্রকৃতি প্রাচীন, কঠিন ও অপ্রবেশ্য আগ্নেয় শিলা (গ্রানাইট, ব্যাসল্ট) দ্বারা গঠিত। তাই এখানে কূপ বা খাল খনন করা অত্যন্ত কঠিন ও ব্যয়সাপেক্ষ।
    ২. বন্ধুর ভূমিরূপ: এখানকার বন্ধুর ভূপ্রকৃতিতে স্বাভাবিকভাবেই অনেক ছোট-বড় গর্ত বা নিচু জায়গা রয়েছে, যেখানে বৃষ্টির জল জমে সহজেই জলাশয় তৈরি হয়।
    ৩. অনিত্যবহা নদী: এখানকার নদীগুলি বৃষ্টির জলে পুষ্ট হওয়ায় অনিত্যবহা। তাই খালে সারাবছর জল পাওয়া যায় না। এই কারণে বৃষ্টির জল জলাশয়ে সঞ্চয় করে রাখা হয় এবং পরে তা সেচের কাজে ব্যবহার করা হয়।

    ৯. ভারতের কৃষির সমস্যা সমাধানে গৃহীত সরকারি পদক্ষেপগুলি আলোচনা করো।

    উত্তর:
    ভারতের কৃষির সমস্যা সমাধানের জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে:
    ১. প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার: স্বাধীনতার পর জমিদারি প্রথা বিলোপ করা হয়েছে। ‘ভূমি সংস্কার আইন’ (Land Reform Act) চালু করে জমির সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে। জমির একত্রীকরণ বা ‘चकबंदी’র মাধ্যমে খণ্ডিত জমিকে একত্রিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
    ২. প্রযুক্তিগত সংস্কার:
    ক) সবুজ বিপ্লব: উচ্চ ফলনশীল (HYV) বীজ, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার বাড়িয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি করা হয়েছে।
    খ) জলসেচ ব্যবস্থার প্রসার: বড় বড় বহুমুখী নদী পরিকল্পনা (যেমন – ভাকরা-নাঙ্গাল) এবং ‘প্রধানমন্ত্রী কৃষি সিંચাই যোজনা’র মাধ্যমে জলসেচের আওতা বাড়ানো হচ্ছে।
    ৩. আর্থিক সংস্কার:
    ক) কৃষিঋণ: গ্রামীণ ব্যাঙ্ক ও সমবায় সমিতির মাধ্যমে কৃষকদের স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ‘কিষাণ ক্রেডিট কার্ড’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে।
    খ) সহায়ক মূল্য (MSP): কৃষকরা যাতে ফসলের ন্যায্য মূল্য পায়, তার জন্য সরকার প্রতি বছর ২৪টি প্রধান ফসলের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য ঘোষণা করে।
    গ) শস্য বীমা: প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসল নষ্ট হলে কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার জন্য ‘প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা’ চালু করা হয়েছে।

    ১০. ভারতের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব আলোচনা করো।

    উত্তর:
    ভারত একটি কৃষিনির্ভর দেশ এবং ভারতের অর্থনীতিতে কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম:
    ১. কর্মসংস্থান: ভারতের প্রায় অর্ধেক কর্মক্ষম মানুষ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কৃষিকাজের সঙ্গে যুক্ত। এটি দেশের বৃহত্তম কর্মসংস্থান ক্ষেত্র।
    ২. জাতীয় আয়ে অবদান: যদিও শিল্প ও পরিষেবা ক্ষেত্রের তুলনায় কৃষির অবদান কমেছে, তবুও এটি এখনো দেশের মোট জাতীয় আয়ের (GDP) একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ (প্রায় ১৫-১৭%) জোগান দেয়।
    ৩. খাদ্য সরবরাহ: কৃষি দেশের বিশাল জনসংখ্যার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যশস্যের জোগান দেয় এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
    ৪. শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ: কার্পাস বয়ন শিল্প, পাট শিল্প, চিনি শিল্প, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্পের মতো অনেক শিল্পের কাঁচামাল (তুলা, পাট, আঁখ) কৃষি থেকে আসে।
    ৫. বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন: চা, কফি, মশলা, ফল ইত্যাদি কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি করে ভারত প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে।
    ৬. বাজার সৃষ্টি: গ্রামীণ মানুষের আয় বাড়লে শিল্পজাত পণ্যের (যেমন – সার, কীটনাশক, যন্ত্রপাতি) চাহিদা বাড়ে, যা শিল্পের বিকাশে সাহায্য করে।
    সুতরাং, ভারতের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কৃষির উন্নতির উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল।

    ভারতের কৃষি class 10 প্রশ্ন উত্তর MCQ, অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : Class 10 Geography ভারতের কৃষি Question Answer

    Leave a Comment

    Your email address will not be published. Required fields are marked *

    Scroll to Top