ভারতের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা class 10
ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৭০টি)
১. ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় সড়কপথ হল –
২. ভারতের ব্যস্ততম জাতীয় সড়কপথ কোনটি?
৩. সোনালী চতুর্ভুজ দ্বারা যুক্ত নয় কোন শহর?
৪. ভারতের প্রথম মেট্রো রেল চালু হয় –
৫. ভারতের বৃহত্তম বন্দর হল –
৬. ভারতের একটি শুল্কমুক্ত বন্দর হল –
৭. ভারতের দীর্ঘতম রেলওয়ে প্ল্যাটফর্মটি হল –
৮. ভারতের প্রবেশদ্বার বলা হয় কোন বন্দরকে?
৯. ভারতের একটি স্বাভাবিক পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর হল –
১০. ভারতের প্রধান অভ্যন্তরীণ জলপথটি হল –
১১. ভারতের বৃহত্তম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল –
১২. ভারতের ‘হীরক চতুর্ভুজ’ যে ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত, তা হল –
১৩. ভারতের প্রথম ট্রেন চলেছিল –
১৪. পূর্ব উপকূলের একটি নদী বন্দর হল –
১৫. উত্তর-দক্ষিণ করিডোরটি যুক্ত করেছে –
১৬. ভারতের দ্রুততম ট্রেন হল –
১৭. ভারতের একটি হাই-টেক বন্দর হল –
১৮. ইন্টারনেট হল একটি –
১৯. ভারতের দীর্ঘতম রোপওয়ে বা রজ্জুপথটি অবস্থিত –
২০. কোন পরিবহন ব্যবস্থাকে ‘উন্নয়নের জীবনরেখা’ বলা হয়?
২১. ভারতের কোন শহরে দুটি রেলওয়ে জোনের সদর দপ্তর রয়েছে?
২২. ভারতের পূর্ব-পশ্চিম করিডোর যুক্ত করেছে –
২৩. ভারতের বৃহত্তম রেলওয়ে জোন হল –
২৪. ভারতের প্রাচীনতম মেট্রো রেল হল –
২৫. ভারতের গভীরতম বন্দর হল –
২৬. ভারতের কোন রাজ্যে সড়কপথের ঘনত্ব সর্বাধিক?
২৭. ভারতের একটি কৃত্রিম পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর হল –
২৮. ভারতের কোন রাজ্যে রেলপথের দৈর্ঘ্য সর্বাধিক?
২৯. ভারতের কোন রাজ্যে রেলপথ নেই?
৩০. ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় জলপথ (NW-1) কোন দুটি স্থানকে যুক্ত করেছে?
৩১. পূর্ব রেলের সদর দপ্তর হল –
৩২. ভারতের প্রথম বৈদ্যুতিক ট্রেন চলে –
৩৩. ভারতের একটি নদীভিত্তিক বন্দর হল –
৩৪. কোন পরিবহন মাধ্যমটি পার্বত্য দুর্গম অঞ্চলে সবচেয়ে উপযোগী?
৩৫. ভারতের বৃহত্তম কন্টেইনার বন্দর হল –
৩৬. NHAI-এর পুরো নাম কী?
৩৭. ভারতের ডেয়ারি গবেষণাগারটি অবস্থিত –
৩৮. ভারতের কোন বন্দর দিয়ে সর্বাধিক কফি রপ্তানি করা হয়?
৩৯. কোন পরিবহন ব্যবস্থায় দরজা থেকে দরজা পরিষেবা দেওয়া সম্ভব?
৪০. ভারতের কোন রাজ্যে সড়কপথের দৈর্ঘ্য সর্বাধিক?
৪১. ভারতের ‘লাইফলাইন এক্সপ্রেস’ হল একটি –
৪২. ভারতের কোন রাজ্যে বিমান চলাচল ব্যবস্থা সবচেয়ে উন্নত?
৪৩. ভারতের কোন বন্দর ‘আরব সাগরের রানী’ নামে পরিচিত?
৪৪. ই-মেল হল এক প্রকার –
৪৫. ভারতের কোন রাজ্যে গ্রামীণ সড়কপথের দৈর্ঘ্য সর্বাধিক?
৪৬. ভারতের রেল ব্যবস্থার সদর দপ্তর কোথায়?
৪৭. কোন দুটি শহরকে যুক্তকারী সড়কপথকে ‘গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড’ বলা হয়?
৪৮. ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় জলপথটি কোন নদীর উপর অবস্থিত?
৪৯. ভারতের একটি পণ্যভিত্তিক বন্দরের উদাহরণ হল –
৫০. ভারতের কোন শহরে দুটি প্রধান বন্দরের অবস্থান রয়েছে?
৫১. কোন পরিবহন মাধ্যম সবচেয়ে পরিবেশবান্ধব?
৫২. ভারতের একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম হল –
৫৩. ভারতের প্রথম সুপারফাস্ট ট্রেন কোনটি?
৫৪. কোন বন্দর দিয়ে ভারতের সর্বাধিক লৌহ আকরিক রপ্তানি হয়?
৫৫. ভারতের কোন রাজ্যে ব্রডগেজ রেলপথের দৈর্ঘ্য সর্বাধিক?
৫৬. ব্রডগেজ রেলপথে দুটি লাইনের মধ্যে ব্যবধান থাকে –
৫৭. ভারতের প্রধান বিমান পরিবহন সংস্থা কোনটি?
৫৮. ভারতের একটি পেট্রোলিয়াম আমদানিকারক বন্দর হল –
৫৯. কোন পরিবহন মাধ্যম সবচেয়ে ব্যয়বহুল?
৬০. ভারতের দীর্ঘতম সুরঙ্গ পথ (সড়ক) কোনটি?
৬১. ভারতের কেন্দ্রীয় অভ্যন্তরীণ জলপথ পরিবহন সংস্থার সদর দপ্তর কোথায়?
৬২. ভারতের কোন রাজ্যে জাতীয় সড়কের দৈর্ঘ্য সর্বাধিক?
৬৩. পূর্ব-মধ্য রেলের সদর দপ্তর কোথায়?
৬৪. ভারতের কোন রাজ্যে বিমানবন্দর নেই?
৬৫. দূরদর্শন হল একটি –
৬৬. ভারতের কোন বন্দরকে ‘পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার’ বলা হয়?
৬৭. ভারতের প্রথম মনোরেল চালু হয় –
৬৮. ভারতের প্রথম দ্রুতগতির রেল করিডোর কোন দুটি শহরকে যুক্ত করবে?
৬৯. কোন বন্দরের মাধ্যমে ভারতের সর্বাধিক চা রপ্তানি হয়?
৭০. ভারতের কোন শহরে উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব, পশ্চিম করিডোর মিলিত হয়েছে?
খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (SAQ) – মান ১ (৬০টি)
১. সোনালী চতুর্ভুজ কী?
উত্তর: ভারতের চারটি প্রধান মহানগর—দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও কলকাতাকে যুক্তকারী ৬-লেনের জাতীয় সড়কপথকে সোনালী চতুর্ভুজ বলে।
২. ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় সড়কপথ কোনটি?
উত্তর: NH 44 (শ্রীনগর থেকে কন্যাকুমারী)।
৩. ভারতের একটি শুল্কমুক্ত বন্দরের নাম লেখো।
উত্তর: গুজরাটের কান্ডালা বন্দর।
৪. ভারতের প্রবেশদ্বার কোন শহরকে বলে?
উত্তর: মুম্বাই।
৫. ভারতের প্রথম পাতাল রেল কোথায় চালু হয়?
উত্তর: কলকাতায় (১৯৮৪ সালে)।
৬. রজ্জুপথ বা রোপওয়ে কী?
উত্তর: পার্বত্য বা দুর্গম অঞ্চলে দুটি স্থানের মধ্যে তারের সাহায্যে যাত্রী বা পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থাকে রজ্জুপথ বা রোপওয়ে বলে।
৭. ভারতের একটি নদী বন্দরের উদাহরণ দাও।
উত্তর: কলকাতা বন্দর।
৮. ভারতের বৃহত্তম বন্দর কোনটি?
উত্তর: মুম্বাই বন্দর।
৯. ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় জলপথ কোনটি?
উত্তর: NW-1 (এলাহাবাদ-হলদিয়া)।
১০. যোগাযোগ ব্যবস্থা কী?
উত্তর: যে ব্যবস্থার মাধ্যমে কোনো তথ্য, সংবাদ বা ধারণা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে বা এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে পৌঁছানো হয়, তাকে যোগাযোগ ব্যবস্থা বলে।
১১. ভারতের প্রধান বিমান পরিবহন সংস্থার নাম কী?
উত্তর: এয়ার ইন্ডিয়া।
১২. ভারতের একটি হাই-টেক বন্দরের নাম লেখো।
উত্তর: নভসেবা বা জওহরলাল নেহরু বন্দর।
১৩. ব্রডগেজ কী?
উত্তর: যে রেলপথে দুটি লাইনের মধ্যে ব্যবধান ১.৬৭৬ মিটার, তাকে ব্রডগেজ বলে।
১৪. ভারতের কোন রাজ্যে সড়কপথের ঘনত্ব সর্বাধিক?
উত্তর: কেরালা।
১৫. হীরক চতুর্ভুজ কী?
উত্তর: ভারতের চারটি প্রধান মহানগরকে দ্রুতগামী রেলপথ দ্বারা যুক্ত করার পরিকল্পনাকে হীরক চতুর্ভুজ বলে।
১৬. ভারতের একটি কৃত্রিম পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দরের নাম লেখো।
উত্তর: চেন্নাই বন্দর।
১৭. ভারতের রেল ব্যবস্থার সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
উত্তর: নতুন দিল্লিতে।
১৮. ভারতের কোন রাজ্যে কোনো রেলপথ নেই?
উত্তর: সিকিম।
১৯. পূর্ব রেলের সদর দপ্তর কোথায়?
উত্তর: কলকাতা।
২০. ভারতের একটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম লেখো।
উত্তর: নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কলকাতা।
২১. NHAI-এর পুরো নাম কী?
উত্তর: National Highway Authority of India.
২২. ভারতের দীর্ঘতম সুরঙ্গ রেলপথ কোনটি?
উত্তর: জম্মু ও কাশ্মীরের পীর পাঞ্জাল রেলওয়ে টানেল।
২৩. ভারতের একটি তৈল রপ্তানিকারক বন্দরের নাম লেখো।
উত্তর: কান্ডালা।
২৪. কোন দুটি শহরকে উত্তর-দক্ষিণ করিডোর যুক্ত করেছে?
উত্তর: শ্রীনগর ও কন্যাকুমারীকে।
২৫. ইন্টারনেট কী ধরনের যোগাযোগ মাধ্যম?
উত্তর: গণমাধ্যম বা Mass Media.
২৬. ভারতের কোন বন্দর দিয়ে সর্বাধিক লৌহ আকরিক রপ্তানি হয়?
উত্তর: গোয়ার মার্মাগাঁও বন্দর।
২৭. ভারতের প্রথম ট্রেন কবে চলেছিল?
উত্তর: ১৮৫৩ সালে।
২৮. ভারতের কোন রাজ্যে জাতীয় সড়কের দৈর্ঘ্য সর্বাধিক?
উত্তর: মহারাষ্ট্র।
২৯. ভারতের একটি স্বাভাবিক পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দরের নাম লেখো।
উত্তর: বিশাখাপত্তনম।
৩০. ভারতের দীর্ঘতম রেলওয়ে প্ল্যাটফর্ম কোনটি?
উত্তর: কর্ণাটকের হুবলি জংশন (শ্রী সিদ্ধারুধা স্বামীজি স্টেশন)।
৩১. কোন বন্দরকে ‘আরব সাগরের রানী’ বলা হয়?
উত্তর: কোচি বন্দরকে।
৩২. ভারতের কোন রাজ্যে সড়কপথের ঘনত্ব সর্বনিম্ন?
উত্তর: জম্মু ও কাশ্মীর।
৩৩. ভারতের কোন রাজ্যে দুটি প্রধান বন্দর রয়েছে?
উত্তর: তামিলনাড়ু (চেন্নাই, তুতিকোরিন, এন্নোর)।
৩৪. কোন পরিবহন ব্যবস্থাকে উন্নয়নের জীবনরেখা বলা হয়?
উত্তর: জলপথকে।
৩৫. ভারতের বৃহত্তম কন্টেইনার বন্দর কোনটি?
উত্তর: নভসেবা বা জওহরলাল নেহরু বন্দর।
৩৬. ভারতের একটি ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যমের উদাহরণ দাও।
উত্তর: টেলিফোন বা ই-মেল।
৩৭. ভারতের কোন রাজ্যে সর্বাধিক সংখ্যক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর আছে?
উত্তর: কেরালা।
৩৮. ভারতের কোন বন্দর ‘ডলফিনস নোজ’ নামক অন্তরীপ দ্বারা সুরক্ষিত?
উত্তর: বিশাখাপত্তনম বন্দর।
৩৯. কোন পরিবহন ব্যবস্থা সবচেয়ে দ্রুতগামী?
উত্তর: বিমানপথ।
৪০. ভারতের মোট কটি রেলওয়ে জোন রয়েছে?
উত্তর: ১৮টি।
৪১. ভারতের কোন শহরে উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিম করিডোর মিলিত হয়েছে?
উত্তর: ঝাঁসি।
৪২. ভারতের কোন রাজ্যে সর্বাধিক গ্রামীণ সড়কপথ রয়েছে?
উত্তর: মহারাষ্ট্র।
৪৩. ভারতের একটি গণমাধ্যমের উদাহরণ দাও।
উত্তর: সংবাদপত্র বা দূরদর্শন।
৪৪. ভারতের কোন রাজ্যে রেলপথের ঘনত্ব সর্বাধিক?
উত্তর: পাঞ্জাব।
৪৫. কলকাতা বন্দরের সহযোগী বন্দর কোনটি?
উত্তর: হলদিয়া বন্দর।
৪৬. ভারতের দ্রুততম ট্রেনের নাম কী?
উত্তর: বন্দে ভারত এক্সপ্রেস।
৪৭. কোন দুটি শহরকে যুক্তকারী সড়ককে ‘গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড’ বলে?
উত্তর: কলকাতা ও দিল্লি।
৪৮. ভারতের কোন রাজ্যে কোনো প্রধান বন্দর নেই?
উত্তর: বিহার বা রাজস্থান (যে কোনো স্থলবেষ্টিত রাজ্য)।
৪৯. কোন পরিবহন ব্যবস্থা সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল?
উত্তর: জলপথ।
৫০. ভারতের কোন শহরে মনোরেল চালু হয়েছে?
উত্তর: মুম্বাই।
৫১. BRO-এর পুরো নাম কী?
উত্তর: Border Roads Organisation.
৫২. ভারতের কোন রাজ্যে প্রথম ট্রেন চলাচল শুরু হয়?
উত্তর: মহারাষ্ট্র।
৫৩. ভারতের কোন বন্দর দিয়ে সর্বাধিক চা রপ্তানি হয়?
উত্তর: কলকাতা বন্দর।
৫৪. ভারতের বৃহত্তম রেল ইঞ্জিন নির্মাণ কারখানা কোনটি?
উত্তর: চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কস।
৫৫. ভারতের কোন রাজ্যে সড়কপথের দৈর্ঘ্য সবচেয়ে কম?
উত্তর: সিকিম।
৫৬. কোন পরিবহন মাধ্যম door-to-door পরিষেবা দেয়?
উত্তর: সড়কপথ।
৫৭. ভারতের দুটি প্রধান বন্দরের নাম লেখো।
উত্তর: মুম্বাই ও কলকাতা।
৫৮. ভারতের একটি বিমান নির্মাণ সংস্থার নাম লেখো।
উত্তর: হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL)।
৫৯. ভারতের কোন রাজ্যে লেহ-মানালি সড়কপথ অবস্থিত?
উত্তর: হিমাচল প্রদেশ ও লাদাখ।
৬০. ভারতের একটি মুদ্রণ মাধ্যমের উদাহরণ দাও।
উত্তর: সংবাদপত্র বা পত্রিকা।
গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ২ (২৫টি)
১. সোনালী চতুর্ভুজ প্রকল্পের দুটি গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: ১. এটি ভারতের চারটি প্রধান মহানগরকে যুক্ত করে দেশের পরিবহন ব্যবস্থাকে দ্রুত ও উন্নত করেছে। ২. এর ফলে শিল্প ও বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে এবং যাতায়াতের সময় ও খরচ কমেছে।
২. রজ্জুপথ বা রোপওয়ের গুরুত্ব কী?
উত্তর: পার্বত্য বা দুর্গম অঞ্চলে যেখানে সড়ক বা রেলপথ নির্মাণ করা কঠিন ও ব্যয়বহুল, সেখানে রজ্জুপথ যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের একটি সহজ ও পরিবেশবান্ধব মাধ্যম। এটি পর্যটন শিল্পেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. ভারতের প্রধান বন্দরগুলির দুটি সমস্যা লেখো।
উত্তর: ১. অনেক বন্দরে আধুনিক যন্ত্রপাতির অভাব রয়েছে। ২. নদীর মোহনায় অবস্থিত বন্দরগুলিতে (যেমন – কলকাতা) পলি জমে নাব্যতা কমে যাওয়া একটি বড় সমস্যা।
৪. ইন্টারনেট ও ই-মেলের দুটি গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: ১. ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের তথ্য মুহূর্তের মধ্যে পাওয়া যায়। ২. ই-মেলের মাধ্যমে খুব কম খরচে ও দ্রুততার সঙ্গে ব্যক্তিগত বা প্রাতিষ্ঠানিক বার্তা আদান-প্রদান করা যায়।
৫. জলপথকে ‘উন্নয়নের জীবনরেখা’ বলা হয় কেন?
উত্তর: জলপথে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ ভারী পণ্য অনেক কম খরচে পরিবহন করা যায়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের বেশিরভাগই জলপথের মাধ্যমে হয়। এই কারণে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জলপথের গুরুত্ব অপরিসীম, তাই একে ‘উন্নয়নের জীবনরেখা’ বলা হয়।
৬. কলকাতা বন্দরের দুটি সমস্যা উল্লেখ করো।
উত্তর: ১. হুগলি নদীতে পলি জমে নাব্যতা কমে যাওয়া এই বন্দরের প্রধান সমস্যা। ২. কলকাতা বন্দর সমুদ্র থেকে অনেক দূরে (প্রায় ১২৮ কিমি) অবস্থিত, ফলে বড় জাহাজ আসতে পারে না।
৭. ভারতের সড়কপথ ও রেলপথের দুটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর: সড়কপথ: এটি স্বল্প দূরত্বের জন্য এবং ‘ডোর-টু-ডোর’ পরিষেবার জন্য উপযোগী। এর নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ কম। রেলপথ: এটি দীর্ঘ দূরত্বের জন্য এবং ভারী পণ্য পরিবহনের জন্য উপযোগী। এর নির্মাণ খরচ অনেক বেশি।
৮. যোগাযোগ ব্যবস্থার দুটি গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: ১. দ্রুত সংবাদ ও তথ্য আদান-প্রদানের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রশাসনিক কাজ সহজ হয়। ২. প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পূর্বাভাস দেওয়া এবং ত্রাণকার্যে সমন্বয় সাধনে এটি অপরিহার্য।
৯. পাইপলাইন পরিবহনের সুবিধা কী?
উত্তর: পাইপলাইনের মাধ্যমে তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ (যেমন – খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস) নিরবচ্ছিন্নভাবে, কম খরচে এবং নিরাপদে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পরিবহন করা যায়। এতে আবহাওয়ার কোনো প্রভাব পড়ে না।
১০. নভসেবা বন্দর (JNPT) গড়ে তোলার কারণ কী?
উত্তর: মুম্বাই বন্দরের উপর অত্যাধিক চাপ কমানোর জন্য এর কাছেই নভসেবা বা জওহরলাল নেহরু বন্দরটি একটি আধুনিক ও স্বয়ংক্রিয় কন্টেইনার বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
১১. ভারতের অভ্যন্তরীণ জলপথের দুটি সমস্যা লেখো।
উত্তর: ১. দক্ষিণ ভারতের নদীগুলি খরস্রোতা ও অনিত্যবহা হওয়ায় নৌচলাচলের অযোগ্য। ২. নদীগুলিতে পলি জমে নাব্যতা কমে যাওয়া এবং বর্ষা ছাড়া অন্য ঋতুতে জলের অভাব একটি বড় সমস্যা।
১২. সোনালী চতুর্ভুজ ও হীরক চতুর্ভুজের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: সোনালী চতুর্ভুজ: এটি ভারতের চারটি প্রধান মহানগরকে যুক্তকারী একটি জাতীয় সড়কপথ প্রকল্প। হীরক চতুর্ভুজ: এটি ভারতের চারটি প্রধান মহানগরকে দ্রুতগামী রেলপথ দ্বারা যুক্ত করার একটি পরিকল্পনা।
১৩. গণমাধ্যম ও ব্যক্তিগত মাধ্যমের পার্থক্য কী?
উত্তর: গণমাধ্যম: যে মাধ্যমের সাহায্যে একই সঙ্গে বহু মানুষের কাছে তথ্য বা সংবাদ পৌঁছানো যায়। যেমন – সংবাদপত্র, রেডিও, টেলিভিশন। ব্যক্তিগত মাধ্যম: যে মাধ্যমের সাহায্যে দুজন বা কয়েকজন ব্যক্তির মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান হয়। যেমন – টেলিফোন, ই-মেল, চিঠি।
১৪. ভারতের বিমান পরিবহনের দুটি গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: ১. এটি সবচেয়ে দ্রুতগামী পরিবহন ব্যবস্থা, যা দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রার সময় বাঁচায়। ২. প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণ ও উদ্ধারকার্যে এবং দুর্গম অঞ্চলে পৌঁছানোর জন্য বিমান পরিবহন অপরিহার্য।
১৫. ভারতের রেলপথের দুটি সমস্যা লেখো।
উত্তর: ১. ভারতের বিভিন্ন অংশে বিভিন্ন গেজের (ব্রড, মিটার, ন্যারো) রেলপথ থাকায় যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে অসুবিধা হয়। ২. টিকিট ছাড়া ভ্রমণ এবং আধুনিকীকরণের অভাব এখনো একটি বড় সমস্যা।
১৬. কৃত্রিম ও স্বাভাবিক পোতাশ্রয়ের পার্থক্য কী?
উত্তর: স্বাভাবিক পোতাশ্রয়: যখন কোনো বন্দরের উপকূলভাগ স্বাভাবিকভাবেই গভীর এবং সামুদ্রিক ঝড়ঝঞ্ঝা থেকে সুরক্ষিত থাকে, তাকে স্বাভাবিক পোতাশ্রয় বলে। যেমন – বিশাখাপত্তনম। কৃত্রিম পোতাশ্রয়: যখন কংক্রিটের দেওয়াল বা ব্রেকওয়াটার তৈরি করে বন্দরকে সুরক্ষিত করা হয়, তাকে কৃত্রিম পোতাশ্রয় বলে। যেমন – চেন্নাই।
১৭. ভারতের দুটি প্রধান জাতীয় জলপথের নাম ও বিস্তার লেখো।
উত্তর: ১. NW-1: গঙ্গা-ভাগীরথী-হুগলি নদীর উপর এলাহাবাদ থেকে হলদিয়া পর্যন্ত। ২. NW-2: ব্রহ্মপুত্র নদের উপর সাদিয়া থেকে ধুবড়ি পর্যন্ত।
১৮. পূর্ব উপকূলের বন্দরগুলির দুটি অসুবিধা লেখো।
উত্তর: ১. পূর্ব উপকূলের মহীসোপান চওড়া ও অগভীর হওয়ায় বড় জাহাজ সরাসরি তীরে আসতে পারে না। ২. বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এই বন্দরগুলি প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১৯. ভারতের জাতীয় সড়ক ও রাজ্য সড়কের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: জাতীয় সড়ক: এগুলি দেশের প্রধান শহর, রাজ্যের রাজধানী ও বন্দরগুলিকে যুক্ত করে এবং কেন্দ্রীয় সরকার দ্বারা নির্মিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়। রাজ্য সড়ক: এগুলি রাজ্যের প্রধান শহর ও জেলা সদরগুলিকে যুক্ত করে এবং রাজ্য সরকার দ্বারা নির্মিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
২০. ইন্টারনেটকে ‘যোগাযোগ ব্যবস্থার বিপ্লব’ বলা হয় কেন?
উত্তর: ইন্টারনেটের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান, ই-মেল, ভিডিও কলিং, অনলাইন শিক্ষা, বাণিজ্য ইত্যাদি সম্ভব হয়েছে। এটি তথ্য ও যোগাযোগকে সহজলভ্য করে আমাদের জীবনযাত্রায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে।
২১. ভারতের কোন কোন রাজ্যে রেলপথের বিস্তার খুব কম ও কেন?
উত্তর: ভারতের উত্তর-পূর্বের পার্বত্য রাজ্যগুলিতে (যেমন – সিকিম, মিজোরাম, মেঘালয়) রেলপথের বিস্তার খুব কম। এর কারণ হল – বন্ধুর পার্বত্য ভূপ্রকৃতি, ঘন অরণ্য এবং কম জনসংখ্যা ও অর্থনৈতিক কার্যকলাপের কারণে রেলপথ নির্মাণ করা অত্যন্ত কঠিন ও ব্যয়বহুল।
২২. মুম্বাই বন্দরকে ‘ভারতের প্রবেশদ্বার’ বলা হয় কেন?
উত্তর: মুম্বাই বন্দর ভারতের বৃহত্তম এবং ব্যস্ততম বন্দর। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি বড় অংশ এই বন্দরের মাধ্যমে হয়। ইউরোপ, আমেরিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে বেশিরভাগ জাহাজ এই বন্দরেই প্রথম প্রবেশ করে। এই কারণেই মুম্বাইকে ‘ভারতের প্রবেশদ্বার’ বলা হয়।২৩. হলদিয়া বন্দর গড়ে তোলার কারণ কী?
উত্তর: হুগলি নদীতে পলি জমে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা কমে যাওয়ায় বড় বড় জাহাজ বন্দরে আসতে পারত না। এই সমস্যা সমাধানের জন্য এবং কলকাতা বন্দরের উপর চাপ কমানোর জন্য এর সহযোগী বন্দর হিসেবে হলদিয়া বন্দরটি গড়ে তোলা হয়েছে।
২৪. ভারতের দুটি প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নাম ও অবস্থান লেখো।
উত্তর: ১. ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: নতুন দিল্লি। ২. ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: মুম্বাই।
২৫. ‘সাগরমালা’ প্রকল্পটি কী?
উত্তর: ‘সাগরমালা’ প্রকল্পটি হল ভারত সরকারের একটি महत्त्वाकांক্ষী প্রকল্প যার উদ্দেশ্য হল দেশের বন্দরগুলির আধুনিকীকরণ, বন্দরের সঙ্গে সড়ক ও রেলপথের যোগাযোগ উন্নত করা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো।
ঘ) সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৩ (২৫টি)
১. ভারতের পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর: ভারতের মতো একটি বিশাল দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নে পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম:
ক) অর্থনৈতিক গুরুত্ব: উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা শিল্পের জন্য কাঁচামাল আনা এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারে পৌঁছে দিতে সাহায্য করে। এটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে গতিশীল করে এবং কৃষির উন্নয়নে সহায়তা করে।
খ) সামাজিক গুরুত্ব: পরিবহন ব্যবস্থা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে যোগাযোগ, সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান এবং ভাবের বিনিময় ঘটিয়ে জাতীয় সংহতিকে শক্তিশালী করে। এটি শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও অন্যান্য পরিষেবা মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়।
গ) প্রশাসনিক ও সামরিক গুরুত্ব: দেশের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখা এবং জরুরি অবস্থায় বা যুদ্ধের সময় দ্রুত সেনা ও রসদ পাঠানোর জন্য উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা অপরিহার্য। এই কারণেই পরিবহন ব্যবস্থাকে ‘দেশের জীবনরেখা’ বলা হয়।
২. ভারতের সড়কপথ ও রেলপথের মধ্যে তিনটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর: | বৈশিষ্ট্য | সড়কপথ | রেলপথ | |—|—|—| | **নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ** | এর নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ তুলনামূলকভাবে কম এবং এটি দুর্গম অঞ্চলেও নির্মাণ করা যায়। | এর নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের খরচ অনেক বেশি এবং শুধুমাত্র সমতল বা মৃদু ঢালু অঞ্চলেই নির্মাণ করা সম্ভব। | | **উপযোগিতা** | এটি স্বল্প দূরত্বের যাত্রী ও পণ্য পরিবহনের জন্য এবং ‘ডোর-টু-ডোর’ পরিষেবার জন্য সবচেয়ে উপযোগী। | এটি দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রী এবং বিপুল পরিমাণ ভারী পণ্য পরিবহনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী। | | **গতি ও নিরাপত্তা** | এর গতি তুলনামূলকভাবে কম এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা বেশি। | এর গতি বেশি এবং এটি তুলনামূলকভাবে নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা। |
৩. ভারতের জলপথ পরিবহনের গুরুত্ব ও সমস্যাগুলি কী কী?
উত্তর: গুরুত্ব:
১. এটি সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল পরিবহন মাধ্যম, তাই ভারী ও বিপুল পরিমাণ পণ্য (যেমন – কয়লা, আকরিক লোহা) পরিবহনের জন্য এটি আদর্শ।
২. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের প্রায় ৯৫% জলপথের মাধ্যমেই হয়।
৩. এটি একটি পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থা, কারণ এতে দূষণ কম হয়।
সমস্যা:
১. ভারতের বেশিরভাগ অভ্যন্তরীণ জলপথ বা নদীগুলি অনিত্যবহা এবং পলি জমে নাব্যতা কমে যাওয়ায় নৌচলাচলের অযোগ্য।
২. এটি একটি ধীরগতিসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থা।
৩. বন্দরগুলির আধুনিকীকরণ এবং পরিকাঠামোর অভাবও একটি বড় সমস্যা।
৪. সোনালী চতুর্ভুজ প্রকল্পের পরিচয় দাও।
উত্তর: পরিচয়: সোনালী চতুর্ভুজ হল ভারত সরকারের গৃহীত একটি জাতীয় সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। এটি একটি প্রায় চতুর্ভুজাকৃতি ৬-লেনের জাতীয় সড়ক যা ভারতের চারটি প্রধান মহানগর – দিল্লি, মুম্বাই, চেন্নাই ও কলকাতাকে যুক্ত করেছে। এর মোট দৈর্ঘ্য ৫৮৪৬ কিমি।
গুরুত্ব:
১. এটি দেশের প্রধান শিল্প, বাণিজ্য ও কৃষি কেন্দ্রগুলিকে যুক্ত করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে গতি এনেছে।
২. এর ফলে এই চারটি মহানগরের মধ্যে যাতায়াতের সময় ও খরচ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে।
৩. এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে দ্রুত ও মসৃণ করেছে।
৫. ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমগুলির শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর: ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমগুলিকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
ক) ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যম (Personal Communication):
যখন দুজন বা কয়েকজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে তথ্য বা সংবাদ আদান-প্রদান হয়।
উদাহরণ: ডাক ও তার ব্যবস্থা (চিঠি), টেলিফোন, মোবাইল ফোন, ই-মেল, ফ্যাক্স।
খ) গণমাধ্যম বা গণযোগাযোগ (Mass Communication):
যখন একটি মাধ্যমের সাহায্যে একই সঙ্গে বহু মানুষের কাছে তথ্য, সংবাদ বা বিনোদন পৌঁছানো হয়।
উদাহরণ:
১. মুদ্রণ মাধ্যম: সংবাদপত্র, পত্রিকা।
২. বৈদ্যুতিন মাধ্যম: রেডিও, টেলিভিশন।
৩. আধুনিক মাধ্যম: ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া।
৬. ভারতের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের বন্দরগুলির মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: পূর্ব উপকূলের বন্দর:
১. এখানকার মহীসোপান চওড়া ও অগভীর, তাই বন্দরগুলি স্বাভাবিক পোতাশ্রয়যুক্ত নয় এবং বেশিরভাগই কৃত্রিম।
২. বড় বড় নদীগুলির মোহনায় পলি জমে নাব্যতা কমে যাওয়ার সমস্যা রয়েছে।
৩. বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ের কারণে এই বন্দরগুলি প্রায়ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যেমন – চেন্নাই, কলকাতা।
পশ্চিম উপকূলের বন্দর:
১. এখানকার মহীসোপান সংকীর্ণ ও উপকূলভাগ ভগ্ন হওয়ায় অনেক স্বাভাবিক ও গভীর পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর গড়ে উঠেছে।
২. এখানে নদীর সংখ্যা কম এবং সেগুলি খাড়ি তৈরি করায় পলি জমার সমস্যা নেই।
৩. এই উপকূল তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। যেমন – মুম্বাই, কোচি, মার্মাগাঁও।
৭. ভারতের অর্থনীতিতে পরিবহনের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর: ভারতের অর্থনীতিতে পরিবহনের গুরুত্ব অপরিসীম, তাই একে ‘অর্থনীতির ধমনী’ বলা হয়।
১. কৃষি উন্নয়ন: উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা কৃষকদের কাছে সার, বীজ পৌঁছে দিতে এবং উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে আসতে সাহায্য করে।
২. শিল্প উন্নয়ন: শিল্পের জন্য কাঁচামাল আনা এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারে পাঠানো পরিবহনের উপরই নির্ভরশীল।
৩. বাণিজ্য প্রসার: এটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে গতিশীল করে। বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়।
৪. কর্মসংস্থান: পরিবহন ক্ষেত্রটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।
৮. ভারতের বিমানপথের গুরুত্ব কী?
উত্তর: ভারতের মতো বিশাল দেশে বিমানপথের গুরুত্ব অপরিসীম:
১. দ্রুততম পরিবহন: এটি সবচেয়ে দ্রুতগামী পরিবহন ব্যবস্থা। দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রার জন্য এবং জরুরি অবস্থায় সময় বাঁচানোর জন্য এটি অপরিহার্য।
২. দুর্গম অঞ্চলে যোগাযোগ: পার্বত্য বা দুর্গম অঞ্চলে যেখানে সড়ক বা রেলপথ নির্মাণ করা সম্ভব নয়, সেখানে বিমানপথই যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।
৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগে সহায়তা: বন্যা, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় ত্রাণ সামগ্রী পাঠানো এবং উদ্ধারকার্যে বিমান ও হেলিকপ্টার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৪. আন্তর্জাতিক যোগাযোগ: আন্তর্জাতিক যোগাযোগ ও পর্যটন শিল্পের বিকাশে বিমানপথের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি।
৯. ভারতের রেলপথের সমস্যা ও সম্ভাবনা আলোচনা করো।
উত্তর: সমস্যা:
১. ভারতের বিভিন্ন অংশে এখনো বিভিন্ন গেজের (ব্রড, মিটার, ন্যারো) রেলপথ রয়েছে, যা যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে অসুবিধা ও সময় নষ্টের কারণ।
২. অনেক রেলপথ এখনো বিদ্যুতায়িত হয়নি, যা গতি কমায় ও দূষণ বাড়ায়।
৩. টিকিট ছাড়া ভ্রমণ, দুর্ঘটনা এবং আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থার অভাব এখনো একটি বড় সমস্যা।
সম্ভাবনা:
১. ‘হীরক চতুর্ভুজ’ এবং ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডোরের মতো প্রকল্পের মাধ্যমে দ্রুতগামী ও পণ্যবাহী রেলের প্রসার ঘটছে।
২. ‘বন্দে ভারতে’র মতো আধুনিক ট্রেন চালু হচ্ছে এবং স্টেশনগুলির আধুনিকীকরণ করা হচ্ছে।
৩. উত্তর-পূর্ব ভারতের মতো দুর্গম অঞ্চলে রেলপথের বিস্তার ঘটানো হচ্ছে।
১০. কলকাতা বন্দরের গুরুত্ব হ্রাস পাওয়ার কারণ কী?
উত্তর: কলকাতা বন্দর একসময় ভারতের প্রধান বন্দর থাকলেও, বর্তমানে এর গুরুত্ব হ্রাস পাওয়ার কয়েকটি কারণ হল:
১. নাব্যতা হ্রাস: হুগলি নদীতে পলি জমে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা মারাত্মকভাবে কমে গেছে। ফলে বড় বড় সমুদ্রগামী জাহাজ সরাসরি বন্দরে প্রবেশ করতে পারে না।
২. पृष्ठভূমির সংকোচন: দেশভাগের ফলে কলকাতা বন্দরের স্বাভাবিক পশ্চাদভূমি (যেমন – পূর্ব বাংলা, আসাম) সংকুচিত হয়ে গেছে।
৩. বিকল্প বন্দরের উত্থান: বিশাখাপত্তনম, পারাদ্বীপ ও হলদিয়ার মতো আধুনিক বন্দরগুলি গড়ে ওঠায় কলকাতা বন্দরের উপর চাপ কমেছে এবং ব্যবসাও ভাগ হয়ে গেছে।
৪. পরিকাঠামোগত সমস্যা: পুরানো যন্ত্রপাতি এবং আধুনিক পরিকাঠামোর অভাবও এর গুরুত্ব হ্রাসের একটি কারণ।
১১. ভারতের জাতীয় সড়কপথগুলির গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর: ভারতের জাতীয় সড়কপথগুলি দেশের পরিবহন ব্যবস্থার শিরা-উপশিরার মতো কাজ করে।
১. এগুলি দেশের রাজ্যের রাজধানী, প্রধান শহর, শিল্পকেন্দ্র ও বন্দরগুলিকে যুক্ত করে, যা অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য ও শিল্পের বিকাশে সহায়তা করে।
২. সোনালী চতুর্ভুজের মতো প্রকল্পগুলি দেশের প্রধান অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলির মধ্যে দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন করেছে।
৩. জাতীয় সড়কগুলি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান ঘটিয়ে জাতীয় সংহতিকে শক্তিশালী করে।
৪. সামরিক দিক থেকেও দেশের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে দ্রুত সেনা ও রসদ পাঠানোর জন্য এগুলি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১২. রজ্জুপথ ও পাইপলাইনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: রজ্জুপথ (Ropeway): এটি পার্বত্য বা দুর্গম অঞ্চলে তারের সাহায্যে যাত্রী বা কঠিন পণ্য (যেমন – কয়লা, কাঠ) পরিবহন করে। এটি স্বল্প দূরত্বের জন্য উপযোগী।
পাইপলাইন (Pipeline): এটি মাটির নীচে বা উপরে পাইপের মাধ্যমে তরল ও গ্যাসীয় পদার্থ (যেমন – খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, জল) পরিবহন করে। এটি দীর্ঘ দূরত্বের জন্য অত্যন্ত উপযোগী।
১৩. আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমগুলি কী কী?
উত্তর: আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমগুলি অত্যন্ত উন্নত ও দ্রুতগামী।
১. ইন্টারনেট: এটি বর্তমান যুগের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। এর মাধ্যমে ই-মেল, ভিডিও কলিং, সোশ্যাল মিডিয়া, অনলাইন শিক্ষা, ই-কমার্স ইত্যাদি সম্ভব হয়েছে।
২. মোবাইল ফোন: এটি ব্যক্তিগত যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। স্মার্টফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে যোগাযোগ আরও সহজ হয়েছে।
৩. স্যাটেলাইট টেলিভিশন: এর মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের ঘটনা সরাসরি সম্প্রচার করা সম্ভব হয়।
৪. ফ্যাক্স ও ই-মেল: এগুলি দাপ্তরিক বা প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
১৪. ভারতের বিমানপথের প্রধান সমস্যাগুলি কী কী?
উত্তর: ভারতের বিমানপথের প্রধান সমস্যাগুলি হল:
১. অত্যধিক ব্যয়বহুল: বিমানপথ সবচেয়ে ব্যয়বহুল পরিবহন ব্যবস্থা হওয়ায় সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে।
২. আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীলতা: কুয়াশা, ঝড়, প্রবল বৃষ্টির মতো খারাপ আবহাওয়ায় বিমান চলাচল ব্যাহত বা বাতিল হয়ে যায়।
৩. পরিকাঠামোর অভাব: ছোট শহরগুলিতে এখনো আধুনিক বিমানবন্দরের অভাব রয়েছে।
৪. নিরাপত্তার ঝুঁকি: প্রযুক্তিগত ত্রুটি বা অন্য কারণে দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে।
১৫. ভারতের বন্দরগুলির শ্রেণিবিভাগ করো।
উত্তর: ভারতের বন্দরগুলিকে বিভিন্ন ভিত্তিতে ভাগ করা যায়:
ক) অবস্থান অনুসারে:
১. পূর্ব উপকূলের বন্দর: যেমন – কলকাতা, হলদিয়া, পারাদ্বীপ, বিশাখাপত্তনম, চেন্নাই।
২. পশ্চিম উপকূলের বন্দর: যেমন – কান্ডালা, মুম্বাই, নভসেবা, মার্মাগাঁও, কোচি।
খ) প্রকৃতি অনুসারে:
১. স্বাভাবিক পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর: যেমন – মুম্বাই, বিশাখাপত্তনম।
২. কৃত্রিম পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর: যেমন – চেন্নাই।
৩. নদী বন্দর: যেমন – কলকাতা।
গ) কার্যকারিতা অনুসারে:
১. বাণিজ্যিক বন্দর: যেমন – মুম্বাই।
২. শিল্প বা পণ্যভিত্তিক বন্দর: যেমন – পারাদ্বীপ (লৌহ আকরিক)।
১৬. ভারতের পরিবহন ব্যবস্থার সমস্যাগুলি কী কী?
উত্তর: ভারতের পরিবহন ব্যবস্থার প্রধান সমস্যাগুলি হল:
১. অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো: জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তাঘাট, রেলপথ ও বন্দরের সংখ্যা এখনো অপর্যাপ্ত।
২. দুর্বল রক্ষণাবেক্ষণ: অনেক সড়ক ও রেলপথের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হয় না, ফলে সেগুলি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ে।
৩. যানজট: বড় শহরগুলিতে যানজট একটি নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা, যা সময় ও জ্বালানির অপচয় ঘটায়।
৪. আঞ্চলিক বৈষম্য: সমভূমি অঞ্চলের তুলনায় পার্বত্য ও দুর্গম অঞ্চলে পরিবহন ব্যবস্থা এখনো অনুন্নত।
৫. আধুনিকীকরণের অভাব: অনেক ক্ষেত্রে এখনো পুরানো প্রযুক্তি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা গতি ও দক্ষতাকে কমিয়ে দেয়।
১৭. ‘জলপথ’ পরিবহনের সুবিধা ও অসুবিধাগুলি লেখো।
উত্তর: সুবিধা:
১. এটি সবচেয়ে কম ব্যয়বহুল পরিবহন মাধ্যম।
২. জলপথে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ ভারী পণ্য পরিবহন করা যায়।
৩. এর জন্য পথ নির্মাণের প্রয়োজন হয় না এবং এটি পরিবেশবান্ধব।
অসুবিধা:
১. এটি সবচেয়ে ধীরগতিসম্পন্ন পরিবহন ব্যবস্থা।
২. অভ্যন্তরীণ জলপথগুলি শুধুমাত্র নির্দিষ্ট নদীপথেই সীমাবদ্ধ এবং নাব্যতা কমে গেলে অকেজো হয়ে পড়ে।
৩. খারাপ আবহাওয়া বা সামুদ্রিক ঝড়ে জলপথ চলাচল বিপজ্জনক হতে পারে।
১৮. পূর্ব-পশ্চিম ও উত্তর-দক্ষিণ করিডোরের গুরুত্ব কী?
উত্তর: পূর্ব-পশ্চিম করিডোর (শিলচর-পোরবন্দর) এবং উত্তর-দক্ষিণ করিডোর (শ্রীনগর-কন্যাকুমারী) ভারতের সড়ক পরিবহন ব্যবস্থায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে:
১. এই করিডোরগুলি দেশের দুই বিপরীত প্রান্তকে সরাসরি যুক্ত করে যাতায়াতের সময়কে নাটকীয়ভাবে কমিয়ে দিয়েছে।
২. এগুলি দেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য এবং পণ্য পরিবহণকে অনেক বেশি গতিশীল ও কার্যকর করেছে।
৩. দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে সহজ যোগাযোগ স্থাপন করে এগুলি জাতীয় সংহতিকে আরও শক্তিশালী করেছে।
১৯. ভারতের প্রধান বিমানবন্দরগুলির নাম ও অবস্থান লেখো।
উত্তর: ভারতের প্রধান কয়েকটি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হল:
১. ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: নতুন দিল্লি।
২. ছত্রপতি শিবাজী মহারাজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: মুম্বাই।
৩. নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: কলকাতা।
৪. আন্না আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: চেন্নাই।
৫. কেম্পেগৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর: বেঙ্গালুরু।
২০. ব্রডগেজ, মিটারগেজ ও ন্যারোগেজের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: এগুলি হল ভারতীয় রেলপথে ব্যবহৃত তিন ধরনের গেজ বা দুটি লাইনের মধ্যেকার ব্যবধান:
১. ব্রডগেজ: দুটি লাইনের মধ্যে ব্যবধান ১.৬৭৬ মিটার। এটি ভারতের প্রধান এবং সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত রেলপথ।
২. মিটারগেজ: দুটি লাইনের মধ্যে ব্যবধান ১ মিটার। বর্তমানে এগুলিকে ব্রডগেজে রূপান্তরিত করা হচ্ছে।
৩. ন্যারোগেজ: দুটি লাইনের মধ্যে ব্যবধান ০.৭৬২ মিটার বা ০.৬১০ মিটার। এটি মূলত পার্বত্য বা দুর্গম অঞ্চলে (যেমন – দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে) ব্যবহৃত হয়।
২১. আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় উপগ্রহের ভূমিকা কী?
উত্তর: আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থায় কৃত্রিম উপগ্রহের ভূমিকা অপরিহার্য:
১. দূরদর্শন ও বেতার সম্প্রচার: উপগ্রহের মাধ্যমেই টেলিভিশন ও রেডিওর অনুষ্ঠান সারা দেশে বা বিশ্বে সম্প্রচার করা হয়।
২. টেলিযোগাযোগ: মোবাইল ফোন ও আন্তর্জাতিক টেলিফোন যোগাযোগ উপগ্রহের মাধ্যমেই সম্ভব হয়।
৩. ইন্টারনেট পরিষেবা: দুর্গম অঞ্চলে ইন্টারনেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার জন্য স্যাটেলাইট ইন্টারনেট ব্যবহৃত হয়।
৪. আবহাওয়ার পূর্বাভাস: উপগ্রহ আবহাওয়ার তথ্য ও ছবি পাঠিয়ে ঘূর্ণিঝড় বা অন্যান্য দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করে।
২২. ভারতের প্রধান পাঁচটি বন্দরের নাম লেখো।
উত্তর: ভারতের প্রধান পাঁচটি বন্দর হল:
১. মুম্বাই বন্দর (মহারাষ্ট্র): ভারতের বৃহত্তম ও ব্যস্ততম বন্দর।
২. কলকাতা-হলদিয়া বন্দর (পশ্চিমবঙ্গ): পূর্ব ভারতের প্রধান নদী বন্দর।
৩. চেন্নাই বন্দর (তামিলনাড়ু): ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম বন্দর।
৪. বিশাখাপত্তনম বন্দর (অন্ধ্রপ্রদেশ): ভারতের গভীরতম স্বাভাবিক পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর।
৫. কান্ডালা বন্দর (গুজরাট): ভারতের প্রধান শুল্কমুক্ত বন্দর।
২৩. ভারতের রেলপথকে ‘ভারতের জীবনরেখা’ বলা হয় কেন?
উত্তর: ভারতীয় রেলপথকে দেশের ‘জীবনরেখা’ বলা হয় কারণ:১. এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তকে যুক্ত করে জাতীয় সংহতিকে বজায় রাখে।
২. এটি দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রী এবং বিপুল পরিমাণ ভারী পণ্য (কয়লা, লোহা, খাদ্যশস্য) পরিবহনের প্রধান মাধ্যম।
৩. দেশের শিল্প, কৃষি ও বাণিজ্যের উন্নয়ন সম্পূর্ণরূপে রেলপথের উপর নির্ভরশীল।
৪. এটি দেশের বৃহত্তম সরকারি নিয়োগকারী সংস্থা, যা লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান করে।
২৪. ভারতের কোন কোন অঞ্চলে পরিবহন ব্যবস্থা অনুন্নত ও কেন?
উত্তর: ভারতে পরিবহন ব্যবস্থা মূলত দুটি অঞ্চলে অনুন্নত:১. উত্তর-পূর্বের পার্বত্য অঞ্চল: সিকিম, অরুণাচল প্রদেশ, নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যগুলিতে বন্ধুর পার্বত্য ভূপ্রকৃতি, ঘন অরণ্য, প্রবল বৃষ্টিপাত এবং ধসের কারণে সড়ক ও রেলপথ নির্মাণ করা অত্যন্ত কঠিন ও ব্যয়বহুল।
২. পশ্চিমের মরু অঞ্চল: রাজস্থানের থর মরুভূমিতে চলমান বালিয়াড়ি এবং জলের অভাবের কারণে রাস্তাঘাট ও রেলপথ নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণ করা খুব কঠিন।
এই সমস্ত প্রাকৃতিক বাধার কারণেই এই অঞ্চলগুলিতে পরিবহন ব্যবস্থা এখনো অনুন্নত।
২৫. ইন্টারনেট ব্যবহারের সুফল ও কুফল লেখো।
উত্তর: সুফল:১. এটি তথ্য ও জ্ঞানের এক বিশাল ভাণ্ডার, যা শিক্ষা ও গবেষণার ক্ষেত্রে অপরিহার্য।
২. ই-মেল, সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তের সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করা যায়।
৩. অনলাইন শপিং (ই-কমার্স), ব্যাঙ্কিং, বিনোদন ইত্যাদি জীবনযাত্রাকে অনেক সহজ করে দিয়েছে।
কুফল:
১. সাইবার ক্রাইম, হ্যাকিং এবং ব্যক্তিগত তথ্যের চুরির মতো ঝুঁকি রয়েছে।
২. এর অতিরিক্ত ব্যবহার সামাজিক বিচ্ছিন্নতা, মানসিক চাপ এবং সময়ের অপচয় ঘটাতে পারে।
৩. ভুল বা ভুয়ো তথ্যের (Fake News) প্রসার ঘটতে পারে।
ঙ) রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৫ (১০টি)
১. ভারতের পরিবহন ব্যবস্থার প্রধান মাধ্যমগুলির একটি তুলনামূলক আলোচনা করো।
উত্তর:
ভারতের পরিবহন ব্যবস্থাকে প্রধানত চারটি মাধ্যমে ভাগ করা যায়। এদের তুলনামূলক আলোচনা নিচে দেওয়া হল:
| বৈশিষ্ট্য | সড়কপথ | রেলপথ | জলপথ | বিমানপথ |
|—|—|—|—|—|
| **গতি** | মাঝারি। | দ্রুত (সড়কপথের চেয়ে)। | সবচেয়ে ধীর। | সবচেয়ে দ্রুত। |
| **ব্যয়** | নির্মাণ ব্যয় কম, কিন্তু পরিবহন ব্যয় মাঝারি। | নির্মাণ ব্যয় খুব বেশি, কিন্তু পরিবহন ব্যয় কম। | পথ নির্মাণের ব্যয় নেই, পরিবহন ব্যয় সবচেয়ে কম। | নির্মাণ ও পরিবহন ব্যয় উভয়ই সবচেয়ে বেশি। |
| **উপযোগিতা** | স্বল্প দূরত্বের যাত্রী ও পণ্য এবং ‘ডোর-টু-ডোর’ পরিষেবার জন্য শ্রেষ্ঠ। | দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রী এবং বিপুল পরিমাণ ভারী পণ্য পরিবহনের জন্য শ্রেষ্ঠ। | দীর্ঘ দূরত্বের বিপুল পরিমাণ ভারী পণ্য পরিবহনের জন্য শ্রেষ্ঠ (বিশেষত আন্তর্জাতিক বাণিজ্য)। | দীর্ঘ দূরত্বের যাত্রী এবং হালকা ও মূল্যবান পণ্য পরিবহনের জন্য শ্রেষ্ঠ। |
| **প্রবেশ্যতা** | দেশের যেকোনো প্রান্তে, এমনকি দুর্গম অঞ্চলেও পৌঁছানো সম্ভব। | শুধুমাত্র সমতল বা মৃদু ঢালু অঞ্চলেই নির্মাণ করা যায়। | শুধুমাত্র নদী বা সমুদ্রপথেই সীমাবদ্ধ। | শুধুমাত্র যেখানে বিমানবন্দর আছে, সেখানেই পরিষেবা সীমাবদ্ধ। |
| **নিরাপত্তা** | দুর্ঘটনার আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি। | তুলনামূলকভাবে নিরাপদ। | তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, তবে আবহাওয়ার উপর নির্ভরশীল। | অত্যন্ত নিরাপদ, তবে দুর্ঘটনা মারাত্মক হতে পারে। |
২. ভারতের অর্থনীতিতে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর:
ভারতের মতো একটি বিশাল ও উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতিতে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। এই দুটি ব্যবস্থাকে দেশের ‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধমনী ও স্নায়ুতন্ত্র’ বলা হয়।
পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব:
১. কৃষি উন্নয়ন: উন্নত পরিবহন ব্যবস্থা কৃষকদের কাছে সার, বীজ, কীটনাশক পৌঁছে দিতে এবং উৎপাদিত ফসল দ্রুত বাজারে নিয়ে আসতে সাহায্য করে, যা কৃষির বাণিজ্যিকীকরণে সহায়তা করে।
২. শিল্প উন্নয়ন: শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল শিল্পকেন্দ্রে আনা এবং উৎপাদিত পণ্য দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বা বন্দরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য সুলভ ও উন্নত পরিবহন অপরিহার্য।
৩. বাণিজ্য প্রসার: এটি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে গতিশীল করে। বন্দরের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য হয়।
৪. কর্মসংস্থান: পরিবহন ক্ষেত্রটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে।
যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব:
১. দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ: আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা (ইন্টারনেট, মোবাইল) ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করে।
২. বিশ্বায়ন ও আউটসোর্সিং: উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলেই ভারত বিশ্ব বাজারের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছে এবং তথ্যপ্রযুক্তি ও BPO শিল্পে উন্নতি লাভ করেছে।
৩. বাজার সৃষ্টি: টেলিভিশন, ইন্টারনেট ও সংবাদপত্রের মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের দ্বারা পণ্যের জন্য নতুন বাজার তৈরি করা সম্ভব হয়।
৪. জাতীয় সংহতি: পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে জাতীয় সংহতিকে শক্তিশালী করে।
৩. ভারতের সড়কপথের শ্রেণিবিভাগ করে প্রত্যেকটির বিবরণ দাও।
উত্তর:
নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অনুসারে ভারতের সড়কপথকে প্রধানত কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়:
ক) জাতীয় সড়ক (National Highways – NH):
এগুলি দেশের প্রধান সড়কপথ যা রাজ্যের রাজধানী, প্রধান শহর, শিল্পকেন্দ্র ও বন্দরগুলিকে যুক্ত করে। এগুলি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনস্থ National Highway Authority of India (NHAI)-এর উপর। ভারতের মোট সড়কপথের মাত্র ২% হলেও এগুলি প্রায় ৪০% যান চলাচল নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন – NH 44 (দীর্ঘতম)।
খ) রাজ্য সড়ক (State Highways – SH):
এগুলি রাজ্যের প্রধান শহর ও জেলা সদরগুলিকে রাজ্যের রাজধানীর সঙ্গে এবং পার্শ্ববর্তী জাতীয় সড়কগুলির সঙ্গে যুক্ত করে। এগুলি নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের উপর।
গ) জেলা সড়ক (District Roads):
এগুলি জেলার বিভিন্ন ব্লক বা তহসিল সদরকে জেলা সদরের সঙ্গে যুক্ত করে। এগুলি জেলা পরিষদ দ্বারা রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
ঘ) গ্রামীণ সড়ক (Village Roads):
এগুলি গ্রামগুলিকে নিকটবর্তী শহর বা জেলা সড়কের সঙ্গে যুক্ত করে। ‘প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনা’র মাধ্যমে এই সড়কগুলির উন্নতি ঘটানো হচ্ছে।
ঙ) সীমান্ত সড়ক (Border Roads):
দেশের সীমান্তবর্তী দুর্গম অঞ্চলে সামরিক প্রয়োজনে এবং যোগাযোগ রক্ষার জন্য এই সড়কগুলি নির্মাণ করা হয়। এগুলি Border Roads Organisation (BRO) দ্বারা নির্মিত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়।
৪. ভারতের প্রধান প্রধান বন্দরগুলির অবস্থান ও গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর:
ভারতের দীর্ঘ উপকূলরেখায় ১৩টি প্রধান এবং প্রায় ২০০টি অপ্রধান বন্দর রয়েছে। কয়েকটি প্রধান বন্দর হল:
পশ্চিম উপকূল:
১. মুম্বাই (মহারাষ্ট্র): এটি ভারতের বৃহত্তম, ব্যস্ততম এবং শ্রেষ্ঠ স্বাভাবিক পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর। এটি ‘ভারতের প্রবেশদ্বার’ নামে পরিচিত।
২. নভসেবা বা জওহরলাল নেহরু বন্দর (মহারাষ্ট্র): এটি ভারতের বৃহত্তম কন্টেইনার বন্দর এবং একটি আধুনিক হাই-টেক বন্দর।
৩. কান্ডালা (গুজরাট): এটি ভারতের প্রধান শুল্কমুক্ত বন্দর। উত্তর-পশ্চিম ভারতের বাণিজ্যে এটি গুরুত্বপূর্ণ।
৪. মার্মাগাঁও (গোয়া): এই বন্দর দিয়ে ভারতের সর্বাধিক লৌহ আকরিক রপ্তানি হয়।
৫. কোচি (কেরালা): এটি একটি স্বাভাবিক পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর এবং ‘আরব সাগরের রানী’ নামে পরিচিত।
পূর্ব উপকূল:
১. কলকাতা-হলদিয়া (পশ্চিমবঙ্গ): এটি পূর্ব ভারতের প্রধান নদী বন্দর। কলকাতা বন্দরের নাব্যতা সমস্যা সমাধানের জন্য হলদিয়াকে সহযোগী বন্দর হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে।
২. পারাদ্বীপ (ওড়িশা): এটি একটি গভীর পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর, যা মূলত লৌহ আকরিক ও কয়লা রপ্তানির জন্য বিখ্যাত।
৩. বিশাখাপত্তনম (অন্ধ্রপ্রদেশ): এটি ভারতের গভীরতম স্বাভাবিক পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর এবং এখানে জাহাজ নির্মাণ ও মেরামতির কারখানা রয়েছে।
৪. চেন্নাই (তামিলনাড়ু): এটি ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম কৃত্রিম পোতাশ্রয়যুক্ত বন্দর।
৫. ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার গুরুত্ব ও মাধ্যমগুলি আলোচনা করো।
উত্তর:
গুরুত্ব:
আধুনিক বিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থা একটি দেশের উন্নয়নের অন্যতম প্রধান মাপকাঠি।
১. এটি ব্যবসা-বাণিজ্য ও প্রশাসনিক কাজকে দ্রুত ও সহজ করে।
২. শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও বিনোদনের প্রসারে এর ভূমিকা অপরিসীম।
৩. প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় পূর্বাভাস দেওয়া এবং ত্রাণকার্যে সমন্বয় সাধনে এটি অপরিহার্য।
৪. এটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে এবং জাতীয় সংহতিকে শক্তিশালী করে।
মাধ্যম:
ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমগুলিকে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
ক) ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যম:
যখন দুজন বা কয়েকজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান হয়।
উদাহরণ:
১. ডাক ও তার ব্যবস্থা: চিঠি, পার্সেল, মানি অর্ডার ইত্যাদি।
২. টেলিযোগাযোগ: ল্যান্ডলাইন টেলিফোন, মোবাইল ফোন।
৩. ইন্টারনেট ভিত্তিক: ই-মেল, ফ্যাক্স, ভিডিও কনফারেন্সিং।
খ) গণমাধ্যম বা গণযোগাযোগ:
যখন একটি মাধ্যমের সাহায্যে একই সঙ্গে বহু মানুষের কাছে তথ্য পৌঁছানো হয়।
উদাহরণ:
১. মুদ্রণ মাধ্যম: সংবাদপত্র, পত্রিকা।
২. বৈদ্যুতিন মাধ্যম: রেডিও, টেলিভিশন।
৩. আধুনিক মাধ্যম: ইন্টারনেট, সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েবসাইট।
৬. ভারতের রেলপথের গুরুত্ব এবং প্রধান সমস্যাগুলি কী কী?
উত্তর:
গুরুত্ব:
ভারতীয় রেলপথকে দেশের ‘জীবনরেখা’ বলা হয়। এর গুরুত্ব অপরিসীম:
১. যাত্রী পরিবহন: এটি দেশের সাধারণ মানুষের জন্য দীর্ঘ দূরত্বের যাতায়াতের প্রধান এবং সবচেয়ে সস্তা মাধ্যম।
২. পণ্য পরিবহন: কয়লা, লোহা, সিমেন্ট, খাদ্যশস্যের মতো বিপুল পরিমাণ ভারী পণ্য পরিবহনের জন্য রেলপথই শ্রেষ্ঠ।
৩. শিল্প ও কৃষির উন্নয়ন: রেলপথ শিল্পের জন্য কাঁচামাল এবং কৃষির জন্য সার, বীজ সরবরাহ করে এবং উৎপাদিত পণ্য বাজারে পৌঁছে দিয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়নে সাহায্য করে।
৪. জাতীয় সংহতি: এটি দেশের বিভিন্ন প্রান্তকে যুক্ত করে মানুষের মধ্যে যোগাযোগ বাড়িয়ে জাতীয় সংহতিকে শক্তিশালী করে।
৫. সামরিক গুরুত্ব: জরুরি অবস্থায় বা যুদ্ধের সময় দ্রুত সেনা ও রসদ পাঠানোর জন্য রেলপথ অপরিহার্য।
সমস্যা:
১. বিভিন্ন গেজের উপস্থিতি: ব্রড, মিটার ও ন্যারো – এই তিন ধরনের গেজের উপস্থিতি যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে অসুবিধা সৃষ্টি করে।
২. আধুনিকীকরণের অভাব: অনেক রুটে এখনো বিদ্যুতায়ন হয়নি এবং সিগন্যালিং ব্যবস্থা পুরানো।
৩. সময়ানুবর্তিতার অভাব: অনেক ট্রেন সময়মতো চলে না, যা যাত্রীদের সমস্যায় ফেলে।
৪. নিরাপত্তা ও পরিচ্ছন্নতার অভাব: দুর্ঘটনা এবং অপরিচ্ছন্নতা এখনো একটি বড় সমস্যা।
৭. ভারতের প্রধান অভ্যন্তরীণ জলপথগুলির একটি বিবরণ দাও।
উত্তর:
ভারত সরকার দেশের অভ্যন্তরীণ জলপথ পরিবহনের উন্নতির জন্য কয়েকটি প্রধান জলপথকে ‘জাতীয় জলপথ’ (National Waterways – NW) হিসেবে ঘোষণা করেছে। প্রধান কয়েকটি হল:
১. জাতীয় জলপথ-১ (NW-1):
নদী: গঙ্গা-ভাগীরথী-হুগলি নদী।
বিস্তার: এটি এলাহাবাদ (প্রয়াগরাজ) থেকে হলদিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত।
দৈর্ঘ্য: ১৬২০ কিমি (এটি ভারতের দীর্ঘতম জাতীয় জলপথ)।
গুরুত্ব: এটি উত্তরপ্রদেশ, বিহার, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গের মধ্যে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়।
২. জাতীয় জলপথ-২ (NW-2):
নদী: ব্রহ্মপুত্র নদ।
বিস্তার: এটি সাদিয়া থেকে ধুবড়ি পর্যন্ত বিস্তৃত।
দৈর্ঘ্য: ৮৯১ কিমি।
গুরুত্ব: এটি আসাম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের অভ্যন্তরীণ পরিবহনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
৩. জাতীয় জলপথ-৩ (NW-3):
অবস্থান: কেরালার পশ্চিম উপকূলীয় খাল (কোট্টাপুরম থেকে কোল্লাম)।
দৈর্ঘ্য: ২০৫ কিমি।
গুরুত্ব: এটি কেরালার অভ্যন্তরীণ পর্যটন ও পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত হয়।
এছাড়া গোদাবরী-কৃষ্ণা নদী (NW-4) এবং ব্রাহ্মণী-মহানদী (NW-5)-কেও জাতীয় জলপথ হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।
৮. ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সড়কপথের গুরুত্ব আলোচনা করো।
উত্তর:
ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সড়কপথের গুরুত্ব অপরিসীম:
১. গ্রামীণ সংযোগ স্থাপন: সড়কপথই একমাত্র মাধ্যম যা দেশের প্রতিটি গ্রামকে নিকটবর্তী শহর, বাজার ও রেলস্টেশনের সঙ্গে যুক্ত করে। এটি গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশে সাহায্য করে।
২. ‘ডোর-টু-ডোর’ পরিষেবা: সড়কপথের মাধ্যমে সরাসরি উৎপত্তিস্থল থেকে গন্তব্যস্থলে (দরজা থেকে দরজা) পণ্য বা যাত্রী পরিবহন করা সম্ভব, যা অন্য কোনো মাধ্যমে সম্ভব নয়।
৩. স্বল্প দূরত্বের জন্য শ্রেষ্ঠ: স্বল্প দূরত্বের যাত্রী ও পচনশীল পণ্য (যেমন – দুধ, সবজি) পরিবহনের জন্য সড়কপথ সবচেয়ে উপযোগী ও দ্রুতগামী।
৪. অন্যান্য পরিবহনের সহায়ক: সড়কপথ রেলপথ, বিমানবন্দর ও বন্দরকে যুক্ত করে একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলে।
৫. কৃষির উন্নয়ন: কৃষকদের কাছে সার, বীজ পৌঁছে দেওয়া এবং উৎপাদিত ফসল বাজারে নিয়ে আসার জন্য সড়কপথ অপরিহার্য।
৬. শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ: উন্নত সড়ক ব্যবস্থার কারণে শিল্পকেন্দ্রগুলি এখন বড় শহরের বাইরেও গড়ে উঠছে, যা আঞ্চলিক উন্নয়নে সাহায্য করছে।
৯. ভারতের প্রধান যোগাযোগ মাধ্যমগুলির একটি বিবরণ দাও।
উত্তর:
ভারতের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়:
ক) ব্যক্তিগত যোগাযোগ মাধ্যম:
১. ডাক ব্যবস্থা: এটি ভারতের প্রাচীনতম ও বৃহত্তম যোগাযোগ ব্যবস্থা। এর মাধ্যমে চিঠি, পার্সেল, মানি অর্ডার পাঠানো হয়। স্পিড পোস্টের মাধ্যমে দ্রুত পরিষেবা দেওয়া হয়।
২. টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা: মোবাইল ফোন বর্তমানে ব্যক্তিগত যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। ভারত বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোবাইল ব্যবহারকারী দেশ। ল্যান্ডলাইন টেলিফোনও ব্যবহৃত হয়।
৩. ইন্টারনেট ভিত্তিক মাধ্যম: ই-মেল, ফ্যাক্স, হোয়াটসঅ্যাপ, ভিডিও কনফারেন্সিং ইত্যাদি ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক যোগাযোগের জন্য বহুল ব্যবহৃত হয়।
খ) গণমাধ্যম বা গণযোগাযোগ:
১. মুদ্রণ মাধ্যম: সংবাদপত্র ও পত্রিকা তথ্য ও সংবাদ পরিবেশনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।
২. বৈদ্যুতিন মাধ্যম: রেডিও (আকাশবাণী) এবং টেলিভিশন (দূরদর্শন) দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সংবাদ ও বিনোদন পৌঁছে দেয়।
৩. ইন্টারনেট: এটি বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী গণমাধ্যম। ওয়েবসাইট, ব্লগ, সোশ্যাল মিডিয়া (ফেসবুক, টুইটার), ইউটিউবের মাধ্যমে মুহূর্তের মধ্যে সারা বিশ্বে তথ্য ছড়িয়ে পড়ে।
১০. ভারতের পরিবহন ব্যবস্থার সমস্যা ও সমাধানের উপায়গুলি আলোচনা করো।
উত্তর:
সমস্যা:
১. অপর্যাপ্ত পরিকাঠামো ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাব: জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তাঘাট, রেলপথ ও বন্দরের সংখ্যা এখনো অপর্যাপ্ত। এছাড়া, বিদ্যমান পরিকাঠামোর সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ হয় না।
২. যানজট ও দূষণ: বড় শহরগুলিতে যানজট একটি গুরুতর সমস্যা, যা সময় ও জ্বালানির অপচয় ঘটায়। যানবাহন থেকে নির্গত ধোঁয়া বায়ুদূষণের প্রধান কারণ।
৩. আঞ্চলিক বৈষম্য: সমভূমি অঞ্চলের তুলনায় পার্বত্য, মরু ও উত্তর-পূর্বের দুর্গম অঞ্চলে পরিবহন ব্যবস্থা এখনো অত্যন্ত অনুন্নত।
৪. আধুনিকীকরণের অভাব: অনেক ক্ষেত্রে এখনো পুরানো প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহৃত হচ্ছে, যা পরিবহন ব্যবস্থার গতি ও দক্ষতাকে কমিয়ে দিয়েছে।
৫. সমন্বয়ের অভাব: সড়ক, রেল, জল ও বিমানপথের মধ্যে সঠিক সমন্বয়ের অভাবে একটি সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে ওঠেনি।
সমাধানের উপায়:
১. পরিকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন: সোনালী চতুর্ভুজ, জাতীয় সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, ডেডিকেটেড ফ্রেট করিডোরের মতো প্রকল্পগুলির দ্রুত বাস্তবায়ন প্রয়োজন।
২. আধুনিকীকরণ: রেলপথের সম্পূর্ণ বিদ্যুতায়ন, আধুনিক সিগন্যালিং ব্যবস্থা চালু করা এবং বন্দরগুলির আধুনিকীকরণ করা প্রয়োজন।
৩. গণপরিবহনের উপর জোর: যানজট ও দূষণ কমাতে ব্যক্তিগত গাড়ির পরিবর্তে মেট্রো রেল, বাস ইত্যাদির মতো গণপরিবহন ব্যবহারে উৎসাহ দিতে হবে।
৪. সমন্বিত ব্যবস্থা গড়ে তোলা: বিভিন্ন পরিবহন মাধ্যমগুলির মধ্যে সঠিক সমন্বয় স্থাপন করে একটি কার্যকর ও সমন্বিত পরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।
৫. পরিবেশবান্ধব পরিবহন: বৈদ্যুতিক গাড়ি এবং জলপথের মতো পরিবেশবান্ধব পরিবহন ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব দিতে হবে।
Class 10 Geography ভারতের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা Question Answer MCQ,অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : class 10 ভারতের পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রশ্ন উত্তর