মূল্যায়ন (Assessment)
মূল্যায়ন হলো শিক্ষার্থীদের শেখার অগ্রগতি, জ্ঞান, দক্ষতা, এবং আচরণ পর্যালোচনা করার একটি প্রক্রিয়া। এটি শিক্ষকদের শিক্ষার্থীদের শেখার দক্ষতা এবং দুর্বল দিকগুলো চিহ্নিত করতে সহায়তা করে, যাতে ভবিষ্যতে আরও কার্যকর শিক্ষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা যায়।
মূল্যায়নের উদ্দেশ্য:
- শিক্ষার্থীদের অগ্রগতি পরিমাপ করা।
- শিক্ষণের প্রভাব বিশ্লেষণ করা।
- দুর্বলতা এবং শক্তি চিহ্নিত করা।
- ভবিষ্যতের শিক্ষণ পরিকল্পনা উন্নত করা।
- শিক্ষার্থীদের স্ব–উন্নয়নে উৎসাহিত করা।
মূল্যায়নের ধরন:
১. গঠনত্মূলক মূল্যায়ন (Formative Assessment):
- শিক্ষণ চলাকালীন পরিচালিত হয়।
- শিক্ষার্থীর শেখার অগ্রগতি নিরীক্ষণ এবং তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া প্রদান।
- উদাহরণ:
- ক্লাসে প্রশ্নোত্তর পর্ব।
- ছোট ছোট পরীক্ষার মাধ্যমে শেখার পর্যবেক্ষণ।
২. সামগ্রিক মূল্যায়ন (Summative Assessment):
- শিক্ষণ শেষে পরিচালিত হয়।
- শিক্ষার্থীর শেখার ফলাফল মূল্যায়ন।
- উদাহরণ:
- চূড়ান্ত পরীক্ষা।
- প্রকল্প উপস্থাপনা।
৩. আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন (Formal Assessment):
- পূর্বনির্ধারিত কাঠামোর অধীনে পরিচালিত।
- উদাহরণ:
- লিখিত পরীক্ষা।
- শংসাপত্র পরীক্ষার মূল্যায়ন।
৪. অনানুষ্ঠানিক মূল্যায়ন (Informal Assessment):
- আনুষ্ঠানিক কাঠামো ছাড়াই পরিচালিত।
- উদাহরণ:
- শিক্ষকের পর্যবেক্ষণ।
- গ্রুপ কার্যক্রমে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ।
৫. মান পরিমাপ মূল্যায়ন (Criterion-referenced Assessment):
- নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা মান অনুযায়ী মূল্যায়ন।
- উদাহরণ:
- গণিতের নির্দিষ্ট সমস্যার সমাধান করতে পারা।
৬. তুলনামূলক মূল্যায়ন (Norm-referenced Assessment):
- অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সাথে তুলনা করে মূল্যায়ন।
- উদাহরণ:
- মেধা তালিকা (Rank list)।
মূল্যায়নের কৌশল:
১. লিখিত পরীক্ষা:
- বর্ণনামূলক প্রশ্ন।
- সংক্ষিপ্ত প্রশ্ন।
- বহুনির্বাচনী প্রশ্ন (MCQ)।
২. মৌখিক পরীক্ষা:
- ক্লাসে প্রশ্নোত্তর।
- উপস্থাপনা।
৩. প্রকল্প এবং কার্যক্রম:
- শিক্ষার্থীদের প্রায়োগিক জ্ঞান যাচাই।
- উদাহরণ: বিজ্ঞান মডেল, রচনা, বা গবেষণা প্রকল্প।
৪. পর্যবেক্ষণ (Observation):
- শিক্ষার্থীর আচরণ, দক্ষতা এবং মনোযোগ পর্যবেক্ষণ।
৫. স্ব–মূল্যায়ন (Self-assessment):
- শিক্ষার্থীরা নিজের শেখার অগ্রগতি পর্যালোচনা করে।
৬. সহ–মূল্যায়ন (Peer-assessment):
- সহপাঠীরা একে অপরের কাজ মূল্যায়ন করে।
মূল্যায়নের মানদণ্ড:
- নির্ভুলতা: প্রশ্ন এবং পদ্ধতি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্তরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া উচিত।
- ন্যায্যতা: সব শিক্ষার্থীর জন্য একই মানদণ্ড প্রযোজ্য।
- স্বচ্ছতা: মূল্যায়নের পদ্ধতি এবং ফলাফল শিক্ষার্থীদের কাছে পরিষ্কার হওয়া।
- উপযোগিতা: মূল্যায়ন ফলাফল ভবিষ্যতের শিক্ষার জন্য কার্যকর হওয়া।
মূল্যায়নের গুরুত্ব:
- শিক্ষার্থীদের শেখার মান উন্নয়ন।
- শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস এবং দক্ষতা বৃদ্ধি।
- শিক্ষকদের শিক্ষণ প্রক্রিয়া উন্নত করার সুযোগ।
- ভবিষ্যতের শিক্ষণ পরিকল্পনা সঠিকভাবে প্রস্তুত করা।