ইতিহাসে দূরবর্তী দেশসমূহের সঙ্গে সংযোগ (Connections with Distant Lands in History)

১. ভূমিকা

মানব সভ্যতা যখন বিকশিত হলো, তখন তারা নিজেদের সীমান্ত ছাড়িয়ে দূরবর্তী দেশ ও অঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতে শুরু করে। বাণিজ্য, ধর্ম, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি আদান-প্রদান ও কূটনীতি এই সংযোগের মূল উদ্দেশ্য ছিল।


২. প্রাচীন সময়ের যোগাযোগ

(ক) মেসোপটেমিয়া ও ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্য

  • মেসোপটেমিয়া ও সিন্ধু সভ্যতার মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল।
  • মূর্তি, গয়না, দুধের পণ্য, ধাতু, মসলা প্রভৃতি পণ্য বিনিময় হত।
  • সুমের ও হ্যারাপ্পা নগরীগুলোতে দূরবর্তী বাণিজ্যের চিহ্ন পাওয়া যায়।

(খ) মিশর ও নুবিয়া, লেবানন

  • মিশরীয়রা কাণ্ডার ও নুবিয়া অঞ্চলের সোনা, হস্তশিল্প ও কাঠ আমদানি করত।
  • ফিনিশীয়দের সঙ্গে বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগ ছিল, যারা সমুদ্রপথে বহু দূরগামী।

(গ) প্রাচীন চীন ও মধ্য এশিয়া

  • প্রাচীন চীন থেকে সিল্ক, মসলিন কাপড়, কাঁচামাল মধ্য এশিয়ার কাচারী ও কণ্ঠ দেশগুলোতে পৌঁছত।
  • পালি ও সংস্কৃত ভাষায় চীনের বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য প্রেরিত মিশনারিরা।

৩. সিল্ক রোড: সবচেয়ে প্রসিদ্ধ যোগাযোগ পথ

(ক) পরিচিতি

  • সিল্ক রোড ছিল একটি বৃহৎ বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক পথ, যা পূর্ব এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • প্রায় ২,০০০ বছর পূর্বে খ্রিস্টপূর্বের সময় শুরু হয়।

(খ) বাণিজ্যিক পণ্য

  • সিল্ক, মসলা, কাচ, ধাতু, কাগজ, ঘোড়া, গয়না ও দামী রত্ন বাণিজ্য হত।
  • বৌদ্ধ, ইসলাম, খ্রিষ্টান ধর্মের ভাববাদ ও সংস্কৃতি ছড়িয়েছিল।

(গ) সাংস্কৃতিক ও প্রযুক্তিগত আদান-প্রদান

  • কাগজ তৈরি, দস্তারকাজ, চীন থেকে ইউরোপে আগুনের অস্ত্রের ধারণা পৌঁছায়।
  • শিল্পকলার বিভিন্ন ধরন, সাহিত্য, ধর্মীয় দর্শন শেয়ার হয়।

৪. সমুদ্রপথে যোগাযোগ ও বাণিজ্য

(ক) প্রাচীন বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্য

  • প্রাচীনকাল থেকে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালয়, ইন্দোনেশিয়া, চীন ও আরব অঞ্চলের মধ্যে বাণিজ্য হত।
  • কাঁচ, মসলার সঙ্গে সোনার বাণিজ্য প্রসার লাভ করে।

(খ) ফিনিশিয়ান নাবিক ও মেথিনার বাণিজ্য

  • ফিনিশিয়ানরা সমুদ্রপথে পশ্চিম এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা ও ইউরোপের তটবর্তী অঞ্চলে যোগাযোগ স্থাপন করেছিল।

৫. মধ্যযুগ ও নবযুগে সংযোগের প্রসার

(ক) ইসলামি বিশ্বের বাণিজ্য ও সংস্কৃতি

  • ইসলামী সাম্রাজ্যের বিস্তারের মাধ্যমে আরব, পারস্য, ভারত, আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যে সংযোগ গড়ে ওঠে।
  • জ্ঞান, বিজ্ঞান ও শিল্পকলার প্রসার।

(খ) ইউরোপীয় প্রাচ্যের অনুসন্ধান

  • ১৫-১৬ শতকে ইউরোপীয়রা সমুদ্রপথে নতুন নতুন স্থানের সন্ধান করে, যেমন ক্রিস্টোফার কলম্বাস, ভাস্কো ডা গামা।
  • এর ফলে আমেরিকা ও এশিয়ার নতুন অঞ্চল ইউরোপের সঙ্গে যুক্ত হয়।

৬. সংক্ষিপ্ত সারাংশ

বিষয়বিবরণ
প্রাচীন বাণিজ্যমেসোপটেমিয়া, সিন্ধু সভ্যতা, মিশর, চীনসহ বহু অঞ্চলে বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সংযোগ।
সিল্ক রোডপূর্ব এশিয়া থেকে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত বাণিজ্য ও সাংস্কৃতিক যোগাযোগের পথ।
সমুদ্রপথভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর ও ভূমধ্যসাগরে বাণিজ্য ও নাবিক যোগাযোগ।
মধ্যযুগ ও নবযুগইসলামি বিশ্বের বিস্তার ও ইউরোপীয় অনুসন্ধানের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী সংযোগের বৃদ্ধি।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top