শিক্ষাগত বিষয়বস্তু জ্ঞান হলো শিক্ষকত্বের এমন এক গুরুত্বপূর্ণ দিক যেখানে শিক্ষক শুধু বিষয়বস্তুর তাত্ত্বিক জ্ঞানই নয়, বরং সেই বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের কাছে কিভাবে সহজ, কার্যকরী ও বোধগম্যভাবে উপস্থাপন করা যায়, সেই জ্ঞান ও দক্ষতাও অন্তর্ভুক্ত থাকে।
এই ধারণাটি প্রথম প্রবর্তন করেন শিক্ষাবিদ লি শুলম্যান (Lee Shulman) ১৯৮৬ সালে। তিনি বলেন, শিক্ষকের সফলতা নির্ভর করে তিনটি জ্ঞানের সংমিশ্রণের ওপর: বিষয়বস্তু জ্ঞান, শিক্ষাগত জ্ঞান, এবং শিক্ষাগত বিষয়বস্তু জ্ঞান।
১. শিক্ষাগত বিষয়বস্তু জ্ঞানের সংজ্ঞা
শিক্ষাগত বিষয়বস্তু জ্ঞান হলো:
- বিষয়বস্তু বা বিষয়গত জ্ঞান (Content Knowledge) ও
- শিক্ষণ-পাঠন কৌশল সম্পর্কিত জ্ঞান (Pedagogical Knowledge) এর সংমিশ্রণ।
অর্থাৎ, এটি এমন একটি জ্ঞান যেখানে শিক্ষক বিষয়বস্তু (যেমন গণিত, বিজ্ঞান) শিক্ষার্থীদের বোধগম্য ও সহজভাবে শেখানোর উপায় জানে এবং প্রয়োগ করে।
২. শিক্ষাগত বিষয়বস্তু জ্ঞানের উপাদানসমূহ
(ক) বিষয়বস্তু জ্ঞান (Content Knowledge)
- বিষয়বস্তুর তাত্ত্বিক ও বাস্তব জ্ঞান।
- বিষয়বস্তুর বিভিন্ন দিক, ধারণা, সূত্র, নিয়মাবলী জানা।
(খ) শিক্ষাগত জ্ঞান (Pedagogical Knowledge)
- শিক্ষা ও শেখার সাধারণ তত্ত্ব ও পদ্ধতি।
- শ্রেণিকক্ষ ব্যবস্থাপনা, মূল্যায়ন, শিখনধারা ইত্যাদি।
(গ) শিক্ষাগত বিষয়বস্তু জ্ঞান (Pedagogical Content Knowledge)
- বিষয়বস্তু শেখানোর বিশেষ কৌশল।
- বিষয়বস্তু শিক্ষার্থীদের জন্য সহজ ও আকর্ষণীয় করে তোলা।
- শিক্ষার্থীদের সম্ভাব্য ভুল ধারণা চিহ্নিত করে সংশোধন করা।
- উপযুক্ত উদাহরণ ও শিখন উপকরণ নির্বাচন।
৩. শিক্ষাগত বিষয়বস্তু জ্ঞানের বৈশিষ্ট্য
- সম্পর্ক নির্ভর: বিষয়বস্তু ও শিক্ষণ কৌশলের মধ্যে আন্তঃসম্পর্ক বুঝে নিয়ন্ত্রণ করা।
- শিক্ষার্থীবান্ধব: শিক্ষার্থীর বয়স, আগ্রহ ও পূর্বজ্ঞানের সাথে মানানসই।
- অভিজ্ঞতা নির্ভর: অভিজ্ঞ শিক্ষকগণ এই জ্ঞান অর্জন ও উন্নত করে।
- দ্রুত পরিবর্তনশীল: নতুন শিক্ষণ কৌশল ও প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ার সাথে সাথে উন্নয়নশীল।
৪. শিক্ষাগত বিষয়বস্তু জ্ঞানের গুরুত্ব
- শিক্ষার্থীর বোঝাপড়া বৃদ্ধি: জটিল বিষয়গুলো সহজ ভাষায় ও উদাহরণে উপস্থাপন করা যায়।
- ভুল ধারণা প্রতিরোধ: শিক্ষার্থীদের ভুল বোঝা বা বিভ্রান্তি কমানো সম্ভব হয়।
- শিক্ষার কার্যকারিতা বৃদ্ধি: শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার গুণগত মান উন্নত হয়।
- শিক্ষক আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি: শিক্ষককে দক্ষ ও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে।
- শিক্ষার্থীর মনোযোগ ও আগ্রহ বৃদ্ধি: শিক্ষার্থীরা আগ্রহ নিয়ে শিখতে উৎসাহিত হয়।
৫. শিক্ষাগত বিষয়বস্তু জ্ঞান বিকাশের উপায়
(ক) বিষয়বস্তু গভীর অধ্যয়ন
শিক্ষককে শুধু পাঠ্যপুস্তক নয়, বরং বিষয়বস্তুর অতিরিক্ত তথ্য, আধুনিক গবেষণা ও বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি জানত হবে।
(খ) শিক্ষণ পদ্ধতি ও কৌশল শিক্ষা
বিভিন্ন শিক্ষণ পদ্ধতি ও শিক্ষার্থীর বিভিন্ন শিখনধারার বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন।
(গ) শ্রেণিকক্ষে বাস্তব প্রয়োগ
পাঠদান অভিজ্ঞতার মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষণ কৌশল প্রয়োগ ও তার ফলাফল পর্যবেক্ষণ।
(ঘ) সহপাঠী ও অভিজ্ঞ শিক্ষকের সঙ্গে সহযোগিতা
অন্য শিক্ষকের অভিজ্ঞতা ও মতামত গ্রহণ।
(ঙ) নিরন্তর পেশাগত উন্নয়ন
সেমিনার, ওয়ার্কশপ, প্রশিক্ষণ ও নতুন প্রযুক্তি ও পদ্ধতি সম্পর্কে আপডেট থাকা।
৬. শিক্ষাগত বিষয়বস্তু জ্ঞানের উদাহরণ (Mathematics Teaching Context)
- শিক্ষক জানে কোন সূত্র কোন ধরণের সমস্যায় প্রয়োগ করতে হবে।
- শিক্ষার্থী যেখানে ভুল ধারণা পোষণ করতে পারে (যেমন বর্গমূল নিয়ে ভুল ব্যাখ্যা), তা পূর্বেই বুঝে সে সংশোধনমূলক ব্যাখ্যা দেয়।
- কঠিন বিষয়কে সহজ উদাহরণ, ভিজ্যুয়াল উপকরণ বা বাস্তব জীবনের সঙ্গে যুক্ত করে শেখায়।
- শিক্ষার্থীর আগের ধারণার সঙ্গে নতুন ধারণা যুক্ত করে শেখানোর কৌশল অবলম্বন করে।
৭. সংক্ষেপে শিক্ষাগত বিষয়বস্তু জ্ঞানের উপাদান
| উপাদান | বিবরণ |
| বিষয়বস্তু জ্ঞান | বিষয়বস্তুর গভীর ও সুস্পষ্ট জ্ঞান |
| শিক্ষাগত জ্ঞান | শিক্ষার পদ্ধতি, মনোবিজ্ঞান ও শ্রেণিকক্ষ পরিচালনা |
| শিক্ষাগত বিষয়বস্তু জ্ঞান | বিষয়বস্তু শেখানোর জন্য বিশেষ কৌশল ও পদ্ধতি |