অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর

অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর

অভিষেক ( মাইকেল মধুসূদন দত্ত )

ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৫০টি)

১. ‘অভিষেক’ কাব্যাংশটি মাইকেল মধুসূদন দত্তের কোন কাব্য থেকে নেওয়া হয়েছে?

  • (ক) বীরাঙ্গনা কাব্য
  • (খ) মেঘনাদবধ কাব্য
  • (গ) ব্রজাঙ্গনা কাব্য
  • (ঘ) তিলোত্তমাসম্ভব কাব্য

২. ‘অভিষেক’ কাব্যাংশটি মেঘনাদবধ কাব্যের কোন স্বর্গ থেকে নেওয়া হয়েছে?

  • (ক) প্রথম স্বর্গ
  • (খ) দ্বিতীয় স্বর্গ
  • (গ) তৃতীয় স্বর্গ
  • (ঘ) নবম স্বর্গ

৩. ইন্দ্রজিতের স্ত্রীর নাম কী?

  • (ক) মন্দোদরী
  • (খ) সীতা
  • (গ) সরমা
  • (ঘ) প্রমীলা

৪. ইন্দ্রজিতের কাছে কে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন?

  • (ক) রাবণ
  • (খ) মন্দোদরী
  • (গ) ছদ্মবেশী লক্ষ্মী
  • (ঘ) বিভীষণ

৫. “কনক-আসন ত্যাজি” – কে কনক-আসন ত্যাগ করলেন?

  • (ক) ইন্দ্রজিৎ
  • (খ) বীরবাহু
  • (গ) রাবণ
  • (ঘ) লক্ষ্মী

৬. ছদ্মবেশী লক্ষ্মীর নাম কী ছিল?

  • (ক) প্রভাতী
  • (খ) প্রভাষা
  • (গ) সরমা
  • (ঘ) চিত্রাঙ্গদা

৭. বীরবাহুর মৃত্যুতে কে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন?

  • (ক) কুম্ভকর্ণ
  • (খ) বিভীষণ
  • (গ) ইন্দ্রজিৎ
  • (ঘ) রাবণ

৮. “হাসিবে মেঘবাহন” – ‘মেঘবাহন’ কে?

  • (ক) বায়ু
  • (খ) বরুণ
  • (গ) ইন্দ্র
  • (ঘ) মেঘনাদ

৯. ইন্দ্রজিৎ কার রথ চেয়েছিলেন?

  • (ক) রাবণের
  • (খ) বায়ুর
  • (গ) পবনের
  • (ঘ) ইন্দ্রের

১০. ইন্দ্রজিৎকে অভিষেক করা হয়েছিল কী পদে?

  • (ক) রাজা
  • (খ) যুবরাজ
  • (গ) সেনাপতি
  • (ঘ) মন্ত্রী

১১. “কি হেতু, মাতঃ, গতি তব আজি এ ভবনে?” – বক্তা কে?

  • (ক) রাবণ
  • (খ) প্রমীলা
  • (গ) ইন্দ্রজিৎ
  • (ঘ) মন্দোদরী

১২. ‘হৈমবতীসুত’ কে?

  • (ক) গণেশ
  • (খ) শিব
  • (গ) ইন্দ্র
  • (ঘ) কার্তিকেয়

১৩. “এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি” – বক্তা কে?

  • (ক) বিভীষণ
  • (খ) ইন্দ্রজিৎ
  • (গ) বীরবাহু
  • (ঘ) কুম্ভকর্ণ

১৪. রাবণ তার মৃত পুত্রকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?

  • (ক) শুকতারা
  • (খ) অকালে পড়া বৃক্ষ
  • (গ) ঝরা ফুল
  • (ঘ) ভাঙা পর্বত

১৫. “শিরঃ চুম্বি, ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা” – ‘অম্বুরাশি-সুতা’ কে?

  • (ক) গঙ্গা
  • (খ) লক্ষ্মী
  • (গ) সরস্বতী
  • (ঘ) যমুনা

১৬. ইন্দ্রজিৎ কী দেখে নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিলেন?

  • (ক) রামচন্দ্রের শক্তি
  • (খ) রাবণের কান্না
  • (গ) নারীদের মাঝে আমোদ-প্রমোদ
  • (ঘ) বিভীষণের বিশ্বাসঘাতকতা

১৭. “বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী” – ‘বিধুমুখী’ কে?

  • (ক) মন্দোদরী
  • (খ) সীতা
  • (গ) প্রমীলা
  • (ঘ) প্রভাষা

১৮. ইন্দ্রজিতের ধনুকের নাম কী?

  • (ক) গাণ্ডীব
  • (খ) পিনাক
  • (গ) বিজয়
  • (ঘ) কবিতায় উল্লেখ নেই

১৯. “উড়িছে কৌশিক-ধ্বজ” – ‘কৌশিক-ধ্বজ’ অর্থ কী?

  • (ক) রেশমি কাপড়ের পতাকা
  • (খ) পাখির পালক
  • (গ) কুশ ঘাসের পতাকা
  • (ঘ) স্বর্ণ পতাকা

২০. “কে কবে শুনেছে পুত্র, ভাসে শিলা জলে” – বক্তা কে?

  • (ক) ইন্দ্রজিৎ
  • (খ) রাবণ
  • (গ) বিভীষণ
  • (ঘ) মন্দোদরী

২১. ইন্দ্রজিৎ লঙ্কা থেকে কী দূর করতে চেয়েছিলেন?

  • (ক) দারিদ্র্য
  • (খ) শত্রু
  • (গ) অপবাদ
  • (ঘ) শোক

২২. ‘নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে’ ইন্দ্রজিৎ কার পূজা করতেন?

  • (ক) শিবের
  • (খ) ব্রহ্মার
  • (গ) ইষ্টদেব অগ্নিদেবের
  • (ঘ) বিষ্ণুর

২৩. “ত্যজিল কনক-লঙ্কা” – কে কনক-লঙ্কা ত্যাগ করেছিলেন?

  • (ক) রাবণ
  • (খ) বিভীষণ
  • (গ) ইন্দ্রজিৎ
  • (ঘ) লক্ষ্মী

২৪. “এই কি সাজে আমারে” – কী ইন্দ্রজিতের সাজে না?

  • (ক) যুদ্ধ করা
  • (খ) বিশ্রাম নেওয়া
  • (গ) নারীদের মাঝে আমোদ-প্রমোদ করা
  • (ঘ) পিতার আজ্ঞা পালন করা

২৫. ‘অভিষেক’ শব্দটির অর্থ কী?

  • (ক) পূজা
  • (খ) সংবর্ধনা
  • (গ) পদে বরণ
  • (ঘ) উৎসব

২৬. “তবু শরে মরিয়া বাঁচিল” – কে মরে বেঁচে উঠেছিল?

  • (ক) রামচন্দ্র
  • (খ) লক্ষ্মণ
  • (গ) রাবণ
  • (ঘ) ইন্দ্রজিৎ

২৭. ইন্দ্রজিতের রথের রঙ কেমন ছিল?

  • (ক) সোনালী
  • (খ) মেঘবর্ণ
  • (গ) রুপোলি
  • (ঘ) লাল

২৮. “নাহি কাজ সীতায় উদ্ধারি” – বক্তা কে?

  • (ক) রাবণ
  • (খ) ইন্দ্রজিৎ
  • (গ) বিভীষণ
  • (ঘ) কুম্ভকর্ণ

২৯. ইন্দ্রজিৎ কাকে ‘রাক্ষসকুল-শেখর’ বলেছেন?

  • (ক) নিজেকে
  • (খ) রাবণকে
  • (গ) বিভীষণকে
  • (ঘ) কুম্ভকর্ণকে

৩০. ‘মহাশোকী’ কে?

  • (ক) প্রমীলা
  • (খ) সীতা
  • (গ) মন্দোদরী
  • (ঘ) রাবণ

৩১. “অভিষেক করিলা কুমারে” – কে অভিষেক করলেন?

  • (ক) পুরোহিত
  • (খ) মন্দোদরী
  • (গ) রাবণ
  • (ঘ) বিভীষণ

৩২. বীরবাহু কার হাতে নিহত হয়েছিলেন?

  • (ক) লক্ষ্মণের হাতে
  • (খ) হনুমানের হাতে
  • (গ) রামচন্দ্রের হাতে
  • (ঘ) সুগ্রীবের হাতে

৩৩. “কাপিলা লঙ্কা, কাঁপিলা জলধি” – কীসের কারণে?

  • (ক) ভূমিকম্পের কারণে
  • (খ) ইন্দ্রজিতের ধনুকের টঙ্কারে
  • (গ) রাবণের চিৎকারে
  • (ঘ) যুদ্ধের কারণে

৩৪. “আগে পূজ ইষ্টদেবে” – ইন্দ্রজিতের ইষ্টদেব কে?

  • (ক) শিব
  • (খ) ব্রহ্মা
  • (গ) অগ্নি
  • (ঘ) বিষ্ণু

৩৫. ‘অরিন্দম’ কার অপর নাম?

  • (ক) রাবণের
  • (খ) লক্ষ্মণের
  • (গ) রামচন্দ্রের
  • (ঘ) ইন্দ্রজিতের

৩৬. ‘বৈরীদল’ বলতে কাদের বোঝানো হয়েছে?

  • (ক) রাক্ষসদের
  • (খ) দেবতাদের
  • (গ) রাম-লক্ষ্মণের বাহিনীকে
  • (ঘ) বানরদের

৩৭. ইন্দ্রজিৎ রামচন্দ্রকে কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?

  • (ক) মশা
  • (খ) সামান্য মানব
  • (গ) সিংহ
  • (ঘ) বনফুল

৩৮. ‘প্রমোদ উদ্যান’ কী?

  • (ক) যুদ্ধক্ষেত্র
  • (খ) বাগানবাড়ি
  • (গ) আনন্দ-কানন
  • (ঘ) অশোক বন

৩৯. রাবণ কোথায় সিংহাসনে বসেছিলেন?

  • (ক) অশোক বনে
  • (খ) রাজসভায়
  • (গ) কাঞ্চন-সভায়
  • (ঘ) নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে

৪০. “এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে” – ‘কলঙ্ক’ শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত?

  • (ক) দাগ
  • (খ) পাপ
  • (গ) অপযশ বা লোকনিন্দা
  • (ঘ) পরাজয়

৪১. ‘জিজ্ঞাসিলা মহাবাহু’ – ‘মহাবাহু’ কে?

  • (ক) রাবণ
  • (খ) রামচন্দ্র
  • (গ) ইন্দ্রজিৎ
  • (ঘ) লক্ষ্মণ

৪২. ‘রত্নাকর-রত্নোত্তমা’ কে?

  • (ক) সীতা
  • (খ) লক্ষ্মী
  • (গ) মন্দোদরী
  • (ঘ) প্রমীলা

৪৩. ইন্দ্রজিতের রথের চূড়ায় কী উড়ছিল?

  • (ক) ময়ূরের পালক
  • (খ) লাল পতাকা
  • (গ) রেশমি পতাকা
  • (ঘ) সিংহের ছবি

৪৪. “ত্বরায় আমি আসিব ফিরিয়া” – বক্তা কোথায় যাবেন?

  • (ক) যুদ্ধক্ষেত্রে
  • (খ) পিতার কাছে
  • (গ) নিকুম্ভিলা যজ্ঞাগারে
  • (ঘ) মায়ের কাছে

৪৫. ‘শূলী-শম্ভুনিভ’ কে?

  • (ক) ইন্দ্রজিৎ
  • (খ) কুম্ভকর্ণ
  • (গ) রাবণ
  • (ঘ) বীরবাহু

৪৬. ইন্দ্রজিৎ দুবার কাকে হারিয়েছিলেন?

  • (ক) ইন্দ্রকে
  • (খ) রামচন্দ্রকে
  • (গ) লক্ষ্মণকে
  • (ঘ) হনুমানকে

৪৭. ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ কোন ছন্দে লেখা?

  • (ক) স্বরবৃত্ত
  • (খ) মাত্রাবৃত্ত
  • (গ) অমিত্রাক্ষর
  • (ঘ) গৈরিশ

৪৮. “একতিল রোষানলে” – এখানে ‘তিল’ শব্দটি কী অর্থে ব্যবহৃত?

  • (ক) শস্য
  • (খ) সামান্য বা অল্প পরিমাণ
  • (গ) একটি মুহূর্ত
  • (ঘ) ক্রোধ

৪৯. ‘ধাত্রী’ শব্দের অর্থ কী?

  • (ক) মাতা
  • (খ) সেবিকা
  • (গ) পালনকারিণী মাতা
  • (ঘ) দেবী

৫০. ‘অভিষেক’ কাব্যাংশের মূল রস কী?

  • (ক) করুণ রস
  • (খ) শান্ত রস
  • (গ) বীর রস
  • (ঘ) হাস্য রস

খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (SAQ) – মান ১ (৪০টি)

১. ‘অভিষেক’ কাব্যাংশটির কবি কে?

উত্তর: ‘অভিষেক’ কাব্যাংশটির কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত।

২. কাব্যাংশটি কোন কাব্যের অন্তর্গত?

উত্তর: কাব্যাংশটি ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর অন্তর্গত।

৩. ইন্দ্রজিতের অপর নাম কী?

উত্তর: ইন্দ্রজিতের অপর নাম মেঘনাদ।

৪. বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ কে নিয়ে এসেছিলেন?

উত্তর: দেবী লক্ষ্মী প্রভাষা ধাত্রীর ছদ্মবেশে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ নিয়ে এসেছিলেন।

৫. ইন্দ্রজিৎ তখন কোথায় ছিলেন?

উত্তর: ইন্দ্রজিৎ তখন প্রমোদ-উদ্যানে স্ত্রী প্রমীলার সঙ্গে আমোদ-প্রমোদে রত ছিলেন।

৬. ‘কনক-আসন’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: ‘কনক-আসন’ শব্দের অর্থ সোনার আসন।

৭. “হৈমবতীসুত” কাকে বলা হয়েছে?

উত্তর: দেবসেনাপতি কার্তিকেয়কে “হৈমবতীসুত” বলা হয়েছে।

৮. বীরবাহু কার হাতে নিহত হন?

উত্তর: বীরবাহু রামচন্দ্রের হাতে নিহত হন।

৯. ইন্দ্রজিৎ নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিলেন কেন?

উত্তর: দেশের ঘোর বিপদের দিনে তিনি নারীদের মাঝে আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত ছিলেন বলে ইন্দ্রজিৎ নিজেকে ধিক্কার দিয়েছিলেন।

১০. ‘অম্বুরাশি-সুতা’ কে?

উত্তর: ‘অম্বুরাশি-সুতা’ হলেন সমুদ্রের কন্যা দেবী লক্ষ্মী।

১১. রাবণ স্বয়ং যুদ্ধে যেতে চেয়েছিলেন কেন?

উত্তর: প্রিয় পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুতে শোকার্ত এবং ক্রুদ্ধ হয়ে রাবণ স্বয়ং যুদ্ধে যেতে চেয়েছিলেন।

১২. “এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।” – কোন কলঙ্কের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: পুত্র ইন্দ্রজিৎ জীবিত থাকতে পিতা রাবণ যুদ্ধে গেলে জগতে যে অপযশ রটবে, সেই কলঙ্কের কথা বলা হয়েছে।

১৩. ইন্দ্রজিৎ কার কাছে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি চেয়েছিলেন?

উত্তর: ইন্দ্রজিৎ পিতা রাবণের কাছে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি চেয়েছিলেন।

১৪. ‘অরিন্দম’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: ‘অরিন্দম’ শব্দের অর্থ হলো অরি বা শত্রুকে দমন করে যে।

১৫. রাবণ ইন্দ্রজিৎকে কী পদে অভিষেক করেন?

উত্তর: রাবণ ইন্দ্রজিৎকে সেনাপতি পদে অভিষেক করেন।

১৬. “বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী” – ‘বিধুমুখী’ কে?

উত্তর: ‘বিধুমুখী’ হলেন ইন্দ্রজিতের স্ত্রী প্রমীলা।

১৭. ইন্দ্রজিৎ কোথায় গিয়েছিলেন যুদ্ধসাজে সজ্জিত হতে?

উত্তর: ইন্দ্রজিৎ অস্ত্রাগারে বা সাজঘরে গিয়েছিলেন যুদ্ধসাজে সজ্জিত হতে।

১৮. ‘কৌশিক-ধ্বজ’ অর্থ কী?

উত্তর: ‘কৌশিক-ধ্বজ’ অর্থ হলো রেশমি কাপড়ের পতাকা।

১৯. ইন্দ্রজিতের রথের বর্ণনা দাও।

উত্তর: ইন্দ্রজিতের রথ ছিল মেঘের মতো রঙের (মেঘবর্ণ), তার চাকায় বিজলির ছটা ছিল এবং রেশমি পতাকা উড়ছিল।

২০. “কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে?” – এই উক্তির অর্থ কী?

উত্তর: এই উক্তির অর্থ হলো, শিলা যেমন জলে ভাসে না, তেমনি মৃত মানুষও বেঁচে ওঠে না। এটি একটি অসম্ভব ঘটনার উদাহরণ।

২১. ইন্দ্রজিৎ দ্বিতীয়বার কাকে পরাজিত করার কথা বলেছেন?

উত্তর: ইন্দ্রজিৎ দ্বিতীয়বার রামচন্দ্রকে পরাজিত করার কথা বলেছেন।

২২. রাবণ কাকে ‘রাক্ষসকুল-ভরসা’ বলেছেন?

উত্তর: রাবণ তার পুত্র ইন্দ্রজিৎকে ‘রাক্ষসকুল-ভরসা’ বলেছেন।

২৩. অভিষেক করার জন্য কোথা থেকে জল আনা হয়েছিল?

উত্তর: অভিষেক করার জন্য বিভিন্ন তীর্থ ও নদীর পবিত্র জল আনা হয়েছিল।

২৪. ইন্দ্রজিৎ কার মতো করে অস্ত্রাগারে প্রবেশ করেন?

উত্তর: ইন্দ্রজিৎ তারকাসুরকে বধ করার সময় কার্তিকেয় যেমন অস্ত্রাগারে প্রবেশ করেছিলেন, ঠিক তেমনভাবে প্রবেশ করেন।

২৫. ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ কোন শ্রেণীর কাব্য?

উত্তর: ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ একটি সাহিত্যিক মহাকাব্য।

২৬. “ত্বরায় আমি আসিব ফিরিয়া” – বক্তা কার কল্যাণে ফিরে আসার কথা বলেছেন?

উত্তর: বক্তা তার স্ত্রী প্রমীলার কল্যাণে দ্রুত ফিরে আসার কথা বলেছেন।

২৭. “কাপিলা লঙ্কা, কাঁপিলা জলধি” – কেন?

উত্তর: ইন্দ্রজিতের ধনুকের টঙ্কার বা শব্দে লঙ্কা ও সমুদ্র কেঁপে উঠেছিল।

২৮. রাবণ কাকে ‘মহাশোকী’ বলেছেন?

উত্তর: রাবণ পুত্রশোকে নিজেকেই ‘মহাশোকী’ বলেছেন।

২৯. ইন্দ্রজিৎ কী সমূলে নির্মূল করতে চেয়েছিলেন?

উত্তর: ইন্দ্রজিৎ তার শত্রু রামচন্দ্রকে সমূলে নির্মূল করতে চেয়েছিলেন।

৩০. ‘ধাত্রী’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: ‘ধাত্রী’ শব্দের অর্থ হলো পালনকারিণী মা বা উপমাতা।

৩১. “কি ছার সে নর” – ‘নর’ বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে?

উত্তর: ‘নর’ বলতে সামান্য মানুষ রামচন্দ্রকে বোঝানো হয়েছে।

৩২. ইন্দ্রজিতের ধাত্রী মাতার নাম কী ছিল?

উত্তর: ইন্দ্রজিতের ধাত্রী মাতার নাম ছিল প্রভাষা।

৩৩. “ছদ্মবেশী অম্বুরাশি-সুতা” – কে এবং কেন ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন?

উত্তর: দেবী লক্ষ্মী ছদ্মবেশ ধারণ করেছিলেন। ইন্দ্রজিৎকে দ্রুত লঙ্কার বিপদের সংবাদ দিয়ে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানোর জন্যই তিনি এই ছদ্মবেশ নেন।

৩৪. ‘বৈরীদল’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: ‘বৈরীদল’ শব্দের অর্থ হলো শত্রুদল।

৩৫. “আগে পূজ ইষ্টদেবে” – কে, কাকে এই পরামর্শ দেন?

উত্তর: রাবণ তার পুত্র ইন্দ্রজিৎকে এই পরামর্শ দেন।

৩৬. ‘মেঘবাহন’ কে?

উত্তর: ‘মেঘবাহন’ হলেন দেবরাজ ইন্দ্র।

৩৭. ইন্দ্রজিতের গলার স্বর কেমন ছিল?

উত্তর: ইন্দ্রজিতের গলার স্বর ছিল মেঘের গর্জনের মতো গম্ভীর।

৩৮. রাবণের শোককে কবি কীসের সঙ্গে তুলনা করেছেন?

উত্তর: রাবণের শোককে কবি বিশাল পাথরের নিচে চাপা পড়া স্রোতস্বিনীর সঙ্গে তুলনা করেছেন।

৩৯. ইন্দ্রজিৎকে কেন ‘ইন্দ্রজিৎ’ বলা হয়?

উত্তর: কারণ তিনি যুদ্ধে দেবরাজ ইন্দ্রকে জয় করেছিলেন।

৪০. ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর উৎস কী?

উত্তর: ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর উৎস হলো রামায়ণ, তবে কবি তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে কাহিনীকে নতুন রূপ দিয়েছেন।


গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ৩ (২৫টি)

১. “কি হেতু, মাতঃ, গতি তব আজি এ ভবনে?” – বক্তা কে? তাঁর এই প্রশ্নের কারণ কী?

উত্তর: উক্তিটির বক্তা হলেন ইন্দ্রজিৎ। তাঁর ধাত্রী মাতা প্রভাষা রূপী দেবী লক্ষ্মী যখন তাঁর প্রমোদ-উদ্যানে আসেন, তখন তিনি অবাক হয়ে যান। কারণ, লঙ্কাপুরী যখন শোকাহত, তখন ধাত্রী মাতার এমন আকস্মিক আগমন অপ্রত্যাশিত ছিল। এই কারণেই তিনি তাঁর আগমনের কারণ জানতে চেয়েছেন।

২. “হা ধিক্, মোরে!” – বক্তা কে? তাঁর এই আত্মধিক্কারের কারণ কী?

উত্তর: উক্তিটির বক্তা মেঘনাদ বা ইন্দ্রজিৎ। তিনি যখন শোনেন যে, তাঁর ভাই বীরবাহু নিহত এবং পিতা রাবণ স্বয়ং যুদ্ধে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, তখন তিনি লজ্জিত ও অনুতপ্ত হন। দেশের এই ঘোর সংকটের সময় তিনি নারীদের মাঝে আমোদ-প্রমোদে মত্ত ছিলেন বলে তিনি নিজেকে ধিক্কার জানিয়েছেন।

৩. “এ কলঙ্ক, পিতঃ, ঘুষিবে জগতে।” – কোন ঘটনাকে বক্তা ‘কলঙ্ক’ বলেছেন এবং কেন?

উত্তর: বক্তা ইন্দ্রজিৎ মনে করেন, তিনি জীবিত থাকতে যদি তাঁর পিতা রাবণকে যুদ্ধে যেতে হয়, তবে তা হবে এক বিরাট কলঙ্ক। কারণ, লোকে বলবে যে, লঙ্কার বীরপুত্র ভয়ে যুদ্ধ থেকে বিরত থেকেছে এবং বৃদ্ধ পিতাকে যুদ্ধের ময়দানে পাঠিয়েছে। এই লোকনিন্দা বা অপযশকেই তিনি ‘কলঙ্ক’ বলে অভিহিত করেছেন।

৪. “কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে,/কে কবে শুনেছে, লোক মরে পুনঃ বাঁচে?” – বক্তা কে? এই উক্তির মাধ্যমে তিনি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: উক্তিটির বক্তা হলেন লঙ্কাধিপতি রাবণ। ইন্দ্রজিৎ যখন রামচন্দ্রকে সামান্য মানব ভেবে উপহাস করেন, তখন রাবণ এই উক্তিটি করেন। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে, রামচন্দ্র কোনো সাধারণ মানুষ নন। তাঁর মায়াবী শক্তিতেই শিলা জলে ভাসছে এবং মৃত মানুষও বেঁচে উঠছে, যা এক অলৌকিক ও অবিশ্বাস্য ঘটনা।

৫. “বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী” – বক্তা কার কাছে বিদায় চেয়েছেন? এই বিদায় দৃশ্যের বর্ণনা দাও।

উত্তর: বক্তা ইন্দ্রজিৎ তাঁর প্রিয়তমা স্ত্রী প্রমীলার কাছে বিদায় চেয়েছেন। যুদ্ধযাত্রার আগে এই বিদায় দৃশ্যটি অত্যন্ত করুণ। ইন্দ্রজিৎ প্রমীলাকে আশ্বস্ত করে বলেন যে, তিনি শীঘ্রই ফিরে আসবেন। কিন্তু প্রমীলা স্বামীর আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় ভীত ও শোকাতুর। তিনি ইন্দ্রজিতের হাত ধরে তাকে যেতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন, যা এক মর্মস্পর্শী পরিবেশ তৈরি করে।

৬. “সাজিলা রথীন্দ্রর্ষভ বীর-আভরণে” – ‘রথীন্দ্রর্ষভ’ কে? তাঁর সজ্জার বর্ণনা দাও।

উত্তর: ‘রথীন্দ্রর্ষভ’ অর্থাৎ রথী শ্রেষ্ঠ হলেন ইন্দ্রজিৎ। পিতার আদেশে তিনি যুদ্ধসাজে সজ্জিত হন। তিনি এমনভাবে অস্ত্রাগারে প্রবেশ করেন, যেমনভাবে কার্তিকেয় তারকাসুর বধের সময় সেজেছিলেন। তাঁর মেঘবর্ণ রথ, তার চাকায় বিজলির ছটা এবং রেশমি পতাকা—সব মিলিয়ে তাঁর বীরোচিত সজ্জা এক ঐশ্বর্যময় ও ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছিল।

৭. ছদ্মবেশী লক্ষ্মী কীভাবে ইন্দ্রজিতের মনে যুদ্ধের উত্তেজনা জাগিয়ে তুলেছিলেন?

উত্তর: ছদ্মবেশী লক্ষ্মী অত্যন্ত কৌশলে ইন্দ্রজিতের মনে যুদ্ধের উত্তেজনা জাগিয়ে তোলেন। তিনি প্রথমে বীরবাহুর মৃত্যুর করুণ সংবাদ দেন। তারপর তিনি বলেন যে, পুত্রশোকে রাবণ স্বয়ং যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। এই কথা শুনেই ইন্দ্রজিতের বীর মনে আত্মগ্লানি ও ক্রোধের জন্ম হয় এবং তিনি যুদ্ধের জন্য উদগ্রীব হয়ে ওঠেন।

৮. “নাহি কাজ সীতায় উদ্ধারি” – বক্তার এই উক্তির কারণ কী?

উত্তর: উক্তিটির বক্তা রাবণ। প্রিয় পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুতে তিনি এতটাই শোকার্ত ও বিধ্বস্ত যে, তাঁর কাছে রাজ্য, সম্মান বা সীতাকে উদ্ধার করার চেয়েও পুত্রশোক বড় হয়ে উঠেছে। তিনি মনে করছেন, যে পুত্রের জন্য এত আয়োজন, সেই যদি না থাকে, তবে সীতাকে উদ্ধার করে বা যুদ্ধ জয় করেও কোনো লাভ নেই। এই উক্তির মাধ্যমে তাঁর গভীর পিতৃস্নেহ ও হতাশা প্রকাশ পেয়েছে।

৯. ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে রাবণের চরিত্রটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর: ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে রাবণ একাধারে একজন শোকাহত পিতা এবং একজন গর্বিত রাজা। পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুতে তিনি গভীরভাবে শোকাহত, কিন্তু ইন্দ্রজিতের বীরত্বব্যঞ্জক কথায় তিনি গর্বিত হন। তিনি একজন স্নেহশীল পিতা, তাই প্রথমে ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠাতে চান না। আবার, তিনি একজন দূরদর্শী রাজা, তাই ইন্দ্রজিৎকে সেনাপতি পদে অভিষেক করে পাঠান। তাঁর চরিত্রে স্নেহ ও রাজধর্মের এক সুন্দর সমন্বয় ঘটেছে।

১০. ‘অভিষেক’ নামটি কতখানি সার্থক হয়েছে?

উত্তর: ‘অভিষেক’ নামকরণটি অত্যন্ত সার্থক। কাব্যাংশের কেন্দ্রীয় ঘটনা হলো ইন্দ্রজিতের সেনাপতি পদে অভিষেক। বীরবাহুর মৃত্যুর পর রাবণ যখন স্বয়ং যুদ্ধে যেতে চান, তখন ইন্দ্রজিৎ তাঁকে নিবৃত্ত করে নিজে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি চান। রাবণ তখন সানন্দে ইন্দ্রজিৎকে সেনাপতি পদে বরণ বা অভিষেক করেন। এই অভিষেকই গল্পের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। তাই কেন্দ্রীয় ঘটনা অনুসারে নামকরণটি যথার্থ।

১১. “ঘুচাব এ অপবাদ, বধি রিপুকুলে।” – বক্তা কে? কোন অপবাদ, কীভাবে তিনি ঘোচাতে চেয়েছেন?

উত্তর: উক্তিটির বক্তা ইন্দ্রজিৎ। তিনি মনে করেন, লঙ্কাপুরী যখন শত্রুকর্তৃক আক্রান্ত এবং তাঁর ভাই নিহত, তখন তাঁর আমোদ-প্রমোদে লিপ্ত থাকা এক বিরাট অপবাদ। তিনি রিপুকুল অর্থাৎ শত্রুদলকে বধ করে এই অপবাদ ঘোচাতে চেয়েছেন। তাঁর মতে, যুদ্ধজয়ই হবে এই কলঙ্ক মোচনের একমাত্র উপায়।

১২. প্রমীলা চরিত্রটি সম্পর্কে যা জানো লেখো।

উত্তর: ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে প্রমীলা ইন্দ্রজিতের প্রেমময়ী ও স্নেহশীলা স্ত্রী। তিনি স্বামীর প্রতি গভীরভাবে অনুরক্ত। যুদ্ধযাত্রার সময় তিনি স্বামীর বিপদের আশঙ্কায় কাতর হয়ে পড়েন এবং তাঁকে যেতে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তাঁর চরিত্রের মধ্যে দিয়ে একাধারে প্রেম, উদ্বেগ এবং এক নারীর অসহায়তা ফুটে উঠেছে। তিনি কাব্যাংশের করুণ রসের উৎস।

১৩. “আগে পূজ ইষ্টদেবে” – বক্তা কেন এই পরামর্শ দিয়েছেন?

উত্তর: বক্তা রাবণ এই পরামর্শ দিয়েছেন কারণ, তিনি জানেন যে রামচন্দ্র সাধারণ মানুষ নন, তাঁর সঙ্গে দৈবশক্তি রয়েছে। তাই ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠানোর আগে তিনি চেয়েছেন, সে যেন ইষ্টদেব অগ্নিদেবের পূজা করে তাঁর আশীর্বাদ লাভ করে। এই দৈব কৃপা লাভ করলে ইন্দ্রজিতের জয় সুনিশ্চিত হবে বলে তিনি বিশ্বাস করতেন।

১৪. ইন্দ্রজিতের বীরধর্মের পরিচয় দাও।

উত্তর: ইন্দ্রজিৎ একজন আদর্শ বীর। তাঁর মধ্যে রয়েছে দেশপ্রেম, পিতৃভক্তি এবং প্রবল আত্মমর্যাদাবোধ। তিনি দেশের বিপদে নিশ্চেষ্ট থাকাকে ‘কলঙ্ক’ বলে মনে করেন। তিনি শত্রুকে সামান্য মানব ভেবে অবজ্ঞা করেন এবং নিজের শক্তিতে তাঁর অগাধ বিশ্বাস রয়েছে। তাঁর কথায় ও কাজে বীররসের এক অসাধারণ প্রকাশ ঘটেছে।

১৫. মেঘনাদবধ কাব্যের প্রথম স্বর্গের বিষয়বস্তু সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: মেঘনাদবধ কাব্যের প্রথম স্বর্গের নাম ‘অভিষেক’। এই স্বর্গে বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ পেয়ে ইন্দ্রজিতের ঘুম ভাঙে। তিনি পিতা রাবণের কাছে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি চান। শোকার্ত রাবণ প্রথমে নিজে যুদ্ধে যেতে চাইলেও, পরে ইন্দ্রজিতের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে সেনাপতি পদে অভিষেক করেন। এরপর ইন্দ্রজিৎ মা ও স্ত্রীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে যুদ্ধযাত্রার জন্য প্রস্তুত হন।

১৬. “এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি” – বক্তা কোন মায়া বুঝতে পারছেন না?

উত্তর: বক্তা ইন্দ্রজিৎ বুঝতে পারছেন না যে, তিনি একবার রামচন্দ্রকে পরাজিত করে হত্যা করার পরেও কীভাবে সে আবার বেঁচে উঠল। তাঁর মতে, মৃত মানুষের পুনরায় বেঁচে ওঠা এক অসম্ভব ঘটনা। রামচন্দ্রের এই পুনর্জীবন লাভকেই তিনি ‘মায়া’ বা অলৌকিক ঘটনা বলে অভিহিত করেছেন, যা তাঁর বোধের অতীত।

১৭. “ছিঁড়িলা কুসুমদাম রোষে মহাবলী” – ‘মহাবলী’ কে? তাঁর এই আচরণের কারণ কী?

উত্তর: এখানে ‘মহাবলী’ হলেন ইন্দ্রজিৎ। বীরবাহুর মৃত্যুর সংবাদ শুনে তাঁর মনে তীব্র ক্রোধ ও গ্লানির জন্ম হয়। তিনি যে ফুলের মালা পরে আমোদ-প্রমোদে রত ছিলেন, তা তাঁর কাছে লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাই তিনি ক্রোধে সেই ফুলের মালা ছিঁড়ে ফেলে দেন, যা তাঁর ভোগবিলাস ত্যাগ করে বীরধর্মে দীক্ষিত হওয়ার প্রতীক।

১৮. ইন্দ্রজিৎ ও রাবণের কথোপকথনের সারমর্ম লেখো।

উত্তর: ইন্দ্রজিৎ ও রাবণের কথোপকথনে মূলত বাৎসল্য রস ও বীর রসের সংঘাত ঘটেছে। ইন্দ্রজিৎ বীরধর্ম পালনের জন্য যুদ্ধযাত্রার অনুমতি চান। অন্যদিকে, পুত্রশোকে কাতর রাবণ প্রথমে নিজে যুদ্ধে যেতে চান এবং ইন্দ্রজিৎকে নিবৃত্ত করতে চান। কিন্তু ইন্দ্রজিতের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা ও বীরত্বব্যঞ্জক কথায় রাবণের পিতৃস্নেহ রাজধর্মের কাছে নতি স্বীকার করে এবং তিনি ইন্দ্রজিৎকে সেনাপতি পদে বরণ করেন।

১৯. কাব্যাংশে বর্ণিত অভিষেক অনুষ্ঠানের বর্ণনা দাও।

উত্তর: রাবণের আদেশে অভিষেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বিভিন্ন তীর্থ ও নদীর পবিত্র জল সোনার ঘট বা কলসে করে নিয়ে আসা হয়। পুরোহিত বা ব্রাহ্মণরা মন্ত্র উচ্চারণ করতে থাকেন। স্বয়ং রাজা রাবণ সেই পবিত্র জল দিয়ে পুত্র ইন্দ্রজিৎকে লঙ্কার সেনাপতি পদে অভিষেক করেন। এই অনুষ্ঠানে রাজকীয় আড়ম্বর ও গাম্ভীর্য প্রকাশ পেয়েছে।

২০. “কাপিলা লঙ্কা, কাঁপিলা জলধি” – এই পঙক্তিটির কাব্যসৌন্দর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: এই পঙক্তিটিতে অতিশয়োক্তি অলঙ্কার ব্যবহৃত হয়েছে। ইন্দ্রজিতের ধনুকের টঙ্কার বা শব্দ এতটাই তীব্র ছিল যে, তার প্রভাবে সমগ্র লঙ্কাপুরী এবং সমুদ্র পর্যন্ত কেঁপে উঠেছিল। এর মাধ্যমে কবি ইন্দ্রজিতের immense শক্তি ও বীরত্বকে প্রকাশ করেছেন। এই চিত্রকল্পটি ইন্দ্রজিতের যুদ্ধযাত্রার আগে এক ভয়ঙ্কর ও মহাকাব্যিক পরিবেশ তৈরি করে।

২১. “কনক-লঙ্কার দশা” কেমন ছিল?

উত্তর: ‘কনক-লঙ্কার দশা’ ছিল অত্যন্ত সংকটময়। লঙ্কার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বীর বীরবাহু নিহত হয়েছেন। শত্রুরা লঙ্কার দোরগোড়ায় উপস্থিত। রাজা রাবণ পুত্রশোকে কাতর। সমগ্র লঙ্কাপুরী এক গভীর শোক ও বিপদের ছায়ায় আচ্ছন্ন। এই অবস্থাকেই ‘কনক-লঙ্কার দশা’ বলা হয়েছে।

২২. দেবী লক্ষ্মী কেন ইন্দ্রজিতের কাছে এসেছিলেন?

উত্তর: দেবী লক্ষ্মী রামচন্দ্রের হিতৈষী ছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন, ইন্দ্রজিৎ যেন দ্রুত যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে রামচন্দ্রের হাতে নিহত হন। তাই তিনি ইন্দ্রজিতের ধাত্রী মাতা প্রভাষার ছদ্মবেশে তাঁর কাছে এসেছিলেন, যাতে ইন্দ্রজিৎকে উত্তেজিত করে যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠানো যায়। এটি ছিল এক দৈব চক্রান্তের অংশ।

২৩. রাবণ কীভাবে ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন?

উত্তর: রাবণ ইন্দ্রজিৎকে সেনাপতি পদে অভিষেক করে যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত করেছিলেন। তিনি তাকে ইষ্টদেবের পূজা করার পরামর্শ দেন এবং তাঁর বীরত্বে আস্থা প্রকাশ করেন। তিনি ইন্দ্রজিৎকে ‘রাক্ষসকুল-ভরসা’ বলে অভিহিত করে তাকে মানসিকভাবে উৎসাহিত করেন এবং আশীর্বাদ করেন।

২৪. কাব্যাংশে বীররস কীভাবে ফুটে উঠেছে?

উত্তর: কাব্যাংশে বীররস মূলত ইন্দ্রজিতের কথায় ও কাজে ফুটে উঠেছে। বীরবাহুর মৃত্যুসংবাদ শুনে তাঁর ক্রোধ, নিজেকে ধিক্কার দেওয়া, যুদ্ধযাত্রার জন্য তাঁর উদগ্রীব মনোভাব এবং শত্রুকে অবজ্ঞা করে তাঁর বীরত্বব্যঞ্জক উক্তি—সবকিছুই বীররসের সঞ্চার করে। তাঁর যুদ্ধসজ্জা এবং ধনুকের টঙ্কারে লঙ্কার কম্পিত হওয়ার বর্ণনাও বীররসের এক उत्कृष्ट উদাহরণ।

২৫. ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-কে ট্র্যাজেডি বলা হয় কেন?

উত্তর: ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-কে ট্র্যাজেডি বলা হয় কারণ, এর নায়ক রাবণ ও ইন্দ্রজিৎ অসাধারণ গুণাবলী থাকা সত্ত্বেও ভাগ্যের পরিহাস এবং কিছু ভুলের কারণে এক করুণ পরিণতির দিকে এগিয়ে গেছেন। তাঁদের বীরত্ব, দেশপ্রেম এবং সংগ্রাম সত্ত্বেও তাঁদের পতন পাঠকের মনে করুণা ও ভয়ের সঞ্চার করে, যা ট্র্যাজেডির মূল বৈশিষ্ট্য।


ঘ) রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৫ (১০টি)

১. ‘অভিষেক’ কাব্যাংশ অবলম্বনে ইন্দ্রজিৎ চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:
ভূমিকা: মাইকেল মধুসূদন দত্তের ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এর প্রথম স্বর্গ ‘অভিষেক’ থেকে গৃহীত এই কাব্যাংশে ইন্দ্রজিৎ এক আদর্শ বীর, স্নেহশীল স্বামী এবং কর্তব্যপরায়ণ পুত্র হিসেবে চিত্রিত হয়েছেন।
১. বিলাসী কিন্তু কর্তব্যপরায়ণ: কাব্যাংশের শুরুতে ইন্দ্রজিৎকে প্রমোদ-উদ্যানে আমোদ-প্রমোদে রত দেখা যায়। কিন্তু লঙ্কার বিপদের সংবাদ পাওয়া মাত্রই তিনি বিলাসিতা ত্যাগ করে কর্তব্যের পথে ধাবিত হন। “এই কি সাজে আমারে” – এই উক্তির মাধ্যমে তাঁর কর্তব্যবোধের জাগরণ ঘটে।
২. অসামান্য বীর ও আত্মবিশ্বাসী: ইন্দ্রজিৎ এক অসামান্য বীর। তিনি এর আগে দুবার রামচন্দ্রকে পরাজিত করেছেন এবং দেবরাজ ইন্দ্রকে জয় করেছেন। তাই তাঁর নিজের শক্তির উপর অগাধ বিশ্বাস। তিনি শত্রুকে “কি ছার সে নর” বলে অবজ্ঞা করেন এবং একাই শত্রুকুল নির্মূল করার প্রতিজ্ঞা করেন।
৩. পিতৃভক্ত ও দেশপ্রেমিক: ইন্দ্রজিতের চরিত্রে পিতৃভক্তি ও দেশপ্রেম অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। পিতা রাবণ যুদ্ধে যাচ্ছেন শুনে তিনি একে ‘কলঙ্ক’ বলে মনে করেন এবং নিজে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি চান। দেশের সম্মান রক্ষা করাকেই তিনি নিজের প্রধান কর্তব্য বলে মনে করেন।
৪. স্নেহশীল স্বামী: যুদ্ধযাত্রার আগে তিনি তাঁর স্ত্রী প্রমীলার কাছে বিদায় নিতে যান। “বিদায় এবে দেহ, বিধুমুখী” – এই আহ্বানের মধ্যে তাঁর বীরোচিত দৃঢ়তার পাশাপাশি স্ত্রীর প্রতি গভীর ভালোবাসা ও স্নেহ প্রকাশ পেয়েছে।
উপসংহার: সুতরাং, ইন্দ্রজিৎ চরিত্রটি বীরত্ব, কর্তব্যবোধ, দেশপ্রেম ও ভালোবাসার এক মহৎ সমন্বয়, যা তাকে বাংলা সাহিত্যের এক অবিস্মরণীয় চরিত্রে পরিণত করেছে।

২. “নাহি কাজ সীতায় উদ্ধারি” – বক্তা কে? তাঁর এই উক্তির মধ্যে দিয়ে যে মানসিক দ্বন্দ্ব ও যন্ত্রণা প্রকাশ পেয়েছে, তা আলোচনা করো।

উত্তর:
বক্তা: উক্তিটির বক্তা হলেন লঙ্কাধিপতি রাবণ। প্রিয় পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুর পর শোকে বিহ্বল হয়ে তিনি এই কথাটি বলেছেন।
মানসিক দ্বন্দ্ব ও যন্ত্রণা: এই একটি মাত্র উক্তির মধ্যে দিয়ে রাবণের চরিত্রের দুটি বিপরীত সত্তার—রাজা রাবণ ও পিতা রাবণের—তুমুল দ্বন্দ্ব প্রকাশ পেয়েছে।
১. পিতা রাবণের যন্ত্রণা: একজন পিতা হিসেবে রাবণ পুত্রশোকে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। তাঁর কাছে এই মুহূর্তে পুত্র হারানোর যন্ত্রণা এতটাই তীব্র যে, জগতের অন্য কোনো কিছুই—এমনকি যে সীতার জন্য এই যুদ্ধ, সেই সীতাকে উদ্ধার করাও তাঁর কাছে অর্থহীন বলে মনে হচ্ছে। তাঁর পিতৃসত্তা তাঁর রাজসত্তাকে ছাপিয়ে গেছে। এই উক্তি তাঁর গভীর বাৎসল্য এবং অসহায়ত্বের চরম প্রকাশ।
২. রাজা রাবণের হতাশা: অন্যদিকে, একজন রাজা হিসেবে তিনি বুঝতে পারছেন যে, এই যুদ্ধ তিনি আর জিততে পারবেন না। একের পর এক বীরের মৃত্যু তাঁর মনোবল ভেঙে দিয়েছে। তাই এই উক্তি তাঁর হতাশা ও পরাজয়ের এক আগাম ইঙ্গিত বহন করে। তিনি বুঝতে পারছেন, যে যুদ্ধের জন্য এত ত্যাগ, সেই যুদ্ধের পরিণাম হয়তো সুখকর হবে না।
উপসংহার: সুতরাং, এই উক্তিটি শুধুমাত্র একটি শোকোক্তি নয়, এটি একজন পরাক্রমী রাজার ভেতরে থাকা স্নেহশীল পিতা এবং হতাশ শাসকের এক মর্মস্পর্শী আর্তি, যা রাবণ চরিত্রকে এক ট্র্যাজিক মহিমা দান করেছে।

৩. “এ মায়া, পিতঃ, বুঝিতে না পারি” – বক্তা কে? তাঁর এই ‘মায়া’ বা বিস্ময়ের কারণ কী? এই প্রসঙ্গে রাবণের প্রতিক্রিয়া কী ছিল?

উত্তর:
বক্তা: উক্তিটির বক্তা হলেন রাবণপুত্র ইন্দ্রজিৎ।
‘মায়া’ বা বিস্ময়ের কারণ: ইন্দ্রজিতের বিস্ময়ের কারণ হলো রামচন্দ্রের পুনর্জীবন লাভ। তিনি এর আগে দুবার যুদ্ধে রামচন্দ্রকে পরাজিত ও আহত করেছিলেন। তাঁর মতে, রামচন্দ্রের মৃত্যু হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তিনি শুনেছেন, সেই রামচন্দ্রই তাঁর ভাই বীরবাহুকে হত্যা করেছেন। মৃত মানুষের এই অলৌকিকভাবে বেঁচে ওঠাকেই তিনি ‘মায়া’ বলে অভিহিত করেছেন, যা তাঁর কাছে অবিশ্বাস্য ও বোধের অতীত।
রাবণের প্রতিক্রিয়া: পুত্রের এই বিস্ময়ের উত্তরে রাবণ তাঁর নিজের অসহায়ত্ব ও নিয়তির কাছে পরাজয়ের কথা স্বীকার করে নিয়েছেন। তিনি ইন্দ্রজিৎকে বুঝিয়েছেন যে, রামচন্দ্র কোনো সাধারণ মানুষ নন, তাঁর সঙ্গে দৈবশক্তি রয়েছে। নিয়তির কারণেই শিলা জলে ভাসছে এবং মৃত মানুষও বেঁচে উঠছে। তিনি বলেছেন— “কে কবে শুনেছে, পুত্র, ভাসে শিলা জলে,/কে কবে শুনেছে, লোক মরে পুনঃ বাঁচে?” এই উক্তির মাধ্যমে রাবণ ইন্দ্রজিৎকে শত্রুর প্রকৃত শক্তি সম্পর্কে সচেতন করেছেন এবং ভাগ্যের পরিহাসকে মেনে নেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া ছিল একাধারে শোক, হতাশা এবং বাস্তবতার এক করুণ স্বীকারোক্তি।

৪. ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে ইন্দ্রজিৎ ও রাবণের কথোপকথন অবলম্বনে পিতা-পুত্রের সম্পর্কটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:
ভূমিকা: ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে ইন্দ্রজিৎ ও রাবণের সম্পর্কটি শুধুমাত্র পিতা-পুত্রের নয়, এটি একজন রাজা ও তাঁর শ্রেষ্ঠ বীরের সম্পর্কও বটে। তাঁদের কথোপকথনে বাৎসল্য, বীরত্ব, কর্তব্যবোধ ও পারস্পরিক শ্রদ্ধার এক জটিল রসায়ন ফুটে উঠেছে।
সম্পর্কের বিভিন্ন দিক:
১. স্নেহ ও বাৎসল্য: রাবণ একজন স্নেহশীল পিতা। পুত্র বীরবাহুর মৃত্যুতে তিনি গভীরভাবে শোকাহত। তিনি চান না তাঁর আরেক পুত্র ইন্দ্রজিৎও বিপদের মুখে পড়ুক। তাই তিনি প্রথমে ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে যেতে বাধা দেন।
২. শ্রদ্ধা ও আনুগত্য: ইন্দ্রজিৎ তাঁর পিতার প্রতি অত্যন্ত শ্রদ্ধাশীল ও অনুগত। তিনি পিতাকে ‘রক্ষোরক্ষক’ বলে সম্বোধন করেন এবং তাঁর অনুমতি ছাড়া কোনো কাজ করতে চান না। তাঁর পিতৃভক্তি প্রশ্নাতীত।
৩. পারস্পরিক আস্থা ও গর্ব: রাবণ তাঁর পুত্র ইন্দ্রজিতের বীরত্বে গভীরভাবে আস্থাশীল। তিনি ইন্দ্রজিৎকে ‘রাক্ষসকুল-ভরসা’ বলে অভিহিত করেন। অন্যদিকে, ইন্দ্রজিৎও তাঁর পিতার সম্মান ও বংশের গৌরব রক্ষায় বদ্ধপরিকর।
৪. রাজধর্ম ও বীরধর্মের সমন্বয়: তাঁদের সম্পর্ক শুধুমাত্র আবেগের উপর নির্ভরশীল নয়। যখন ইন্দ্রজিৎ বীরধর্ম পালনের জন্য যুদ্ধযাত্রার অনুমতি চান, তখন রাবণের পিতৃস্নেহ রাজধর্মের কাছে নতি স্বীকার করে। তিনি পুত্রকে সেনাপতি পদে অভিষেক করে তাঁর রাজকীয় কর্তব্য পালন করেন।
উপসংহার: সুতরাং, ইন্দ্রজিৎ ও রাবণের সম্পর্কটি স্নেহ, শ্রদ্ধা, গর্ব এবং কর্তব্যের এক মহৎ মিশ্রণ, যা পিতা-পুত্রের সম্পর্ককে এক মহাকাব্যিক উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।

৫. “সাজিলা রথীন্দ্রর্ষভ বীর-আভরণে” – ‘রথীন্দ্রর্ষভ’ কে? তাঁর বীর-সজ্জার বর্ণনা দাও। এই সজ্জা তাঁর চরিত্রের কোন দিকটিকে তুলে ধরে?

উত্তর:
‘রথীন্দ্রর্ষভ’-এর পরিচয়: ‘রথীন্দ্রর্ষভ’ বলতে রথীশ্রেষ্ঠ বা শ্রেষ্ঠ বীরকে বোঝানো হয়েছে। এখানে এই শব্দটি ইন্দ্রজিতের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে।
বীর-সজ্জার বর্ণনা:
পিতার অনুমতি পেয়ে ইন্দ্রজিৎ যুদ্ধসাজে সজ্জিত হন। কবি এই সজ্জার বর্ণনা দিয়েছেন পৌরাণিক উপমার মাধ্যমে। ইন্দ্রজিৎ এমনভাবে অস্ত্রাগারে প্রবেশ করেন, যেমনভাবে দেবসেনাপতি কার্তিকেয় তারকাসুরকে বধ করার জন্য সেজেছিলেন। তাঁর মেঘবর্ণ রথ, যার চাকায় ছিল বিজলির ছটা, তা এক ভয়ঙ্কর গর্জনে চলতে শুরু করে। রথের চূড়ায় রেশমি পতাকা উড়ছিল। এই বর্ণনার মাধ্যমে কবি ইন্দ্রজিতের এক ঐশ্বর্যময়, মহাকাব্যিক এবং অপ্রতিরোধ্য বীররূপ অঙ্কন করেছেন। তাঁর ধনুকের টঙ্কারে সমগ্র লঙ্কা এবং সমুদ্র পর্যন্ত কেঁপে ওঠে, যা তাঁর immense শক্তির পরিচায়ক।
চরিত্রের উন্মোচিত দিক:
এই বীর-সজ্জা ইন্দ্রজিতের চরিত্রের কয়েকটি দিককে তুলে ধরে—
১. অসামান্য বীরত্ব: তাঁর সজ্জা ও তার প্রভাব প্রমাণ করে যে, তিনি কোনো সাধারণ বীর নন, তিনি মহাকাব্যের নায়কের মতোই শক্তিশালী।
২. রাজকীয় মহিমা: তাঁর রথ ও পতাকার বর্ণনা তাঁর রাজকীয় মর্যাদা ও ঐশ্বর্যকে প্রকাশ করে।
৩. যুদ্ধের প্রতি দৃঢ়তা: তাঁর এই সজ্জা প্রমাণ করে যে, তিনি যুদ্ধের জন্য মানসিকভাবে সম্পূর্ণ প্রস্তুত এবং শত্রুকে ধ্বংস করার জন্য দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

৬. ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে মাইকেল মধুসূদন দত্ত পৌরাণিক কাহিনীর पात्र ও ঘটনাকে যেভাবে নতুন আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন, তা আলোচনা করো।

উত্তর:
ভূমিকা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত ‘মেঘনাদবধ কাব্য’-এ রামায়ণের কাহিনীকে ভিত্তি করলেও, তিনি পাত্র-পাত্রীদের চিরাচরিত রূপ ভেঙে দিয়ে তাদের এক নতুন, মানবিক ও আধুনিক আঙ্গিকে উপস্থাপন করেছেন। ‘অভিষেক’ কাব্যাংশেও তার পরিচয় সুস্পষ্ট।
নতুন আঙ্গিকের প্রয়োগ:
১. রাবণ চরিত্রের মানবিকীকরণ: বাল্মীকির রামায়ণে রাবণ মূলত একজন খলনায়ক। কিন্তু মধুসূদনের কাব্যে, বিশেষত এই অংশে, রাবণ একজন স্নেহশীল, শোকাহত পিতা হিসেবে চিত্রিত হয়েছেন। পুত্রশোকে তাঁর আর্তনাদ (“নাহি কাজ সীতায় উদ্ধারি”) তাঁকে এক ট্র্যাজিক মহিমা দান করেছে, যা মূল কাহিনীতে অনুপস্থিত।
২. ইন্দ্রজিতের নায়কোচিত রূপ: ইন্দ্রজিৎকে কবি দেশপ্রেমিক, পিতৃভক্ত, স্নেহশীল স্বামী এবং আদর্শ বীর হিসেবে গড়ে তুলেছেন। রামায়ণে তিনি একজন অসুর বা রাক্ষস মাত্র, কিন্তু মধুসূদনের হাতে তিনি হয়ে উঠেছেন কাব্যের প্রকৃত নায়ক (Hero)। তাঁর কর্তব্যবোধ, আত্মগ্লানি এবং বীরত্ব তাঁকে এক মহৎ চরিত্রে পরিণত করেছে।
৩. দৈবশক্তির ভূমিকা: কবি দৈবশক্তিকে সরাসরি হস্তক্ষেপকারী হিসেবে না দেখিয়ে, মানব চরিত্রের ভাগ্যনিয়ন্তা হিসেবে দেখিয়েছেন। দেবী লক্ষ্মীর ছদ্মবেশ ধারণ এবং ইন্দ্রজিৎকে যুদ্ধে পাঠানোর চক্রান্ত দৈবের এক অনিবার্য পরিহাসকে তুলে ধরে, যা গ্রিক ট্র্যাজেডির কথা স্মরণ করায়।
উপসংহার: এভাবেই, মধুসূদন দত্ত পৌরাণিক কাহিনীর কাঠামোকে অক্ষুণ্ণ রেখেও, তার পাত্র-পাত্রীদের আধুনিক মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব ও মানবিক অনুভূতি দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন, যা ‘অভিষেক’ কাব্যাংশকে এক নতুন মাত্রা দিয়েছে।

৭. “ঘুচাব এ অপবাদ, বধি রিপুকুলে।” – বক্তা কে? কোন অপবাদ, কীভাবে তিনি ঘোচাতে চেয়েছেন? তাঁর এই উক্তির মধ্যে দিয়ে চরিত্রের কোন বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে?

উত্তর:
বক্তা: উক্তিটির বক্তা হলেন লঙ্কার যুবরাজ ইন্দ্রজিৎ।
অপবাদ ও তা মোচনের উপায়:
ইন্দ্রজিতের কাছে অপবাদটি হলো, লঙ্কার ঘোর বিপদের দিনে, যখন তাঁর ভাই বীরবাহু নিহত এবং পিতা স্বয়ং যুদ্ধে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত, তখন তিনি নারীদের সঙ্গে প্রমোদ-উদ্যানে বিলাসিতায় মত্ত ছিলেন। একজন বীর হিসেবে এই निष्क्रियতা তাঁর কাছে চরম লজ্জার ও অপমানের। তিনি মনে করেন, এই অপবাদ বা কলঙ্ক মোচনের একমাত্র উপায় হলো যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়ে শত্রুকুলকে (“রিপুকুলে”) বধ করা। যুদ্ধজয় এবং শত্রুকে ধ্বংস করার মাধ্যমেই তিনি নিজের বীরত্বের প্রমাণ দিয়ে এই অপবাদ থেকে মুক্ত হতে চান।
চরিত্রের বৈশিষ্ট্য:
এই উক্তির মধ্যে দিয়ে ইন্দ্রজিতের চরিত্রের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে—
১. প্রবল আত্মমর্যাদাবোধ: তিনি অত্যন্ত আত্মসম্মান সচেতন। লোকনিন্দা বা অপযশ তাঁর কাছে মৃত্যুর চেয়েও ভয়ঙ্কর।
২. বীরধর্ম ও কর্তব্যপরায়ণতা: তিনি একজন আদর্শ ক্ষত্রিয় বীরের মতোই নিজের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন। দেশের সংকটকালে বিলাসিতা ত্যাগ করে যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়াই যে তাঁর প্রধান ধর্ম, তা তিনি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করেন।
৩. সক্রিয়তা ও দৃঢ়সংকল্প: তিনি শুধু অনুতাপ করেই থেমে থাকেননি, সঙ্গে সঙ্গে এই কলঙ্ক মোচনের জন্য দৃঢ়সংকল্প গ্রহণ করেছেন। তাঁর এই সক্রিয়তা তাঁর চরিত্রের দৃঢ়তাকে প্রকাশ করে।

৮. ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে যে সমস্ত পৌরাণিক অনুষঙ্গ ব্যবহৃত হয়েছে, তার পরিচয় ও সার্থকতা বিচার করো।

উত্তর:
ভূমিকা: মাইকেল মধুসূদন দত্ত তাঁর কাব্যে পাশ্চাত্য মহাকাব্যের রীতি অনুসরণ করে প্রচুর পৌরাণিক অনুষঙ্গ ব্যবহার করেছেন, যা তাঁর রচনাকে এক ক্লাসিক গাম্ভীর্য ও সমৃদ্ধি দান করেছে। ‘অভিষেক’ কাব্যাংশেও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি।
ব্যবহৃত পৌরাণিক অনুষঙ্গ:
১. হৈমবতীসুত (কার্তিকেয়): ইন্দ্রজিৎ যখন যুদ্ধসাজে সজ্জিত হন, তখন কবি তাঁকে ‘হৈমবতীসুত’ বা কার্তিকেয়ের সঙ্গে তুলনা করেছেন। তারকাসুর বধের সময় কার্তিকেয় যেমন সেজেছিলেন, ইন্দ্রজিৎও তেমন সেজেছেন। এই তুলনার মাধ্যমে ইন্দ্রজিতের বীরত্বকে দেবসেনাপতির সমকক্ষ দেখানো হয়েছে।
২. অম্বুরাশি-সুতা (লক্ষ্মী): সমুদ্রের কন্যা লক্ষ্মীকে ‘অম্বুরাশি-সুতা’ বলা হয়েছে। তিনি প্রভাষার ছদ্মবেশে আসেন। এই অনুষঙ্গটি কাব্যে দৈবশক্তির হস্তক্ষেপ এবং নিয়তির ভূমিকা নির্দেশ করে।
৩. মেঘবাহন (ইন্দ্র): দেবরাজ ইন্দ্রকে ‘মেঘবাহন’ বলা হয়েছে। ইন্দ্রজিৎ তাঁকে যুদ্ধে পরাজিত করেছিলেন, তাই তাঁর নাম ইন্দ্রজিৎ। এই অনুষঙ্গটি ইন্দ্রজিতের অতীত গৌরব ও বীরত্বকে স্মরণ করিয়ে দেয়।
সার্থকতা: এই পৌরাণিক অনুষঙ্গগুলি কাব্যাংশকে এক মহাকাব্যিক বিস্তার দিয়েছে। এগুলি শুধুমাত্র অলঙ্করণ নয়, বরং চরিত্রের মহত্ত্ব বৃদ্ধি করতে, ঘটনার গাম্ভীর্য বাড়াতে এবং কাহিনীর প্রেক্ষাপটকে আরও সমৃদ্ধ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এই অনুষঙ্গগুলির সার্থক প্রয়োগই মধুসূদনের পাণ্ডিত্য ও শিল্পনৈপুণ্যের পরিচায়ক।

৯. “কাপিলা লঙ্কা, কাঁপিলা জলধি।” – এই পঙক্তিটির প্রেক্ষাপট উল্লেখ করে এর তাৎপর্য ও কাব্যসৌন্দর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:
প্রেক্ষাপট: ইন্দ্রজিৎ যখন পিতা রাবণের কাছ থেকে যুদ্ধযাত্রার অনুমতি পেয়ে বীর-আভরণে সজ্জিত হন, তখন তিনি তাঁর ধনুকে টঙ্কার দেন। সেই ধনুকের ভয়ঙ্কর শব্দেই সমগ্র লঙ্কাপুরী এবং কাছের সমুদ্র পর্যন্ত কেঁপে ওঠে। এই প্রেক্ষাপটেই কবি পঙক্তিটি রচনা করেছেন।
তাৎপর্য: এই পঙক্তিটির তাৎপর্য হলো ইন্দ্রজিতের immense শক্তি ও বীরত্বের প্রকাশ। তাঁর ধনুকের শব্দে প্রকৃতি পর্যন্ত কেঁপে উঠছে—এই বর্ণনার মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, ইন্দ্রজিতের আগমন শত্রুপক্ষের জন্য এক ভয়ংকর বার্তা বহন করছে। এটি তাঁর অপ্রতিরোধ্য শক্তি এবং যুদ্ধের ভয়াবহতার এক আগাম সূচনা।
কাব্যসৌন্দর্য: এই পঙক্তিটিতে কবি অতিশয়োক্তি অলঙ্কার ব্যবহার করেছেন। ধনুকের শব্দে লঙ্কা বা সমুদ্র কেঁপে ওঠা বাস্তবসম্মত না হলেও, কাব্যিক সত্য হিসেবে এটি ইন্দ্রজিতের বীরত্বকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘কাপিলা’ এবং ‘কাঁপিলা’—এই দুটি ক্রিয়াপদের প্রায় সমোচ্চারিত রূপ এক চমৎকার শব্দ ঝঙ্কার তৈরি করেছে। এই ধ্বনিগত সৌন্দর্য এবং চিত্রের বিশালতা পঙক্তিটিকে এক মহাকাব্যিক গাম্ভীর্য দান করেছে। এটি মধুসূদনের কাব্যরীতির এক উৎকৃষ্ট উদাহরণ।

১০. ‘অভিষেক’ কাব্যাংশে করুণ রস ও বীর রসের সমন্বয় কীভাবে ঘটেছে, তা আলোচনা করো।

উত্তর:
ভূমিকা: ‘অভিষেক’ কাব্যাংশটি মূলত বীররস প্রধান হলেও, এর পরতে পরতে করুণ রসের এক ফল্গুধারা বয়ে গেছে, যা কাহিনীকে এক অনন্য মাত্রা দিয়েছে।
করুণ রসের প্রকাশ:
১. রাবণের শোক: কাব্যাংশের একটি বড় অংশ জুড়ে রয়েছে পুত্রশোকে কাতর পিতা রাবণের আর্তনাদ। বীরবাহুর মৃত্যুতে তাঁর বিলাপ, হতাশা এবং সীতাকে উদ্ধার করার প্রতি অনীহা—সবকিছুই করুণ রসের সৃষ্টি করে।
২. প্রমীলার বিচ্ছেদ-যন্ত্রণা: যুদ্ধযাত্রার আগে ইন্দ্রজিতের কাছ থেকে প্রমীলার বিদায় দৃশ্যটি অত্যন্ত করুণ। স্বামীর বিপদের আশঙ্কায় তাঁর নীরব কান্না এবং অসহায়তা পাঠকের মনে গভীর করুণার সঞ্চার করে।
৩. দৈবের পরিহাস: ইন্দ্রজিতের মতো বীরের নিয়তির হাতে অসহায় হয়ে পড়া এবং দৈব চক্রান্তের শিকার হওয়া—এই বিষয়টিও এক ট্র্যাজিক ও করুণ আবহ তৈরি করে।
বীর রসের প্রকাশ:
কাব্যাংশের প্রধান রস হলো বীররস, যা ইন্দ্রজিৎকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়েছে। লঙ্কার বিপদের কথা শুনে তাঁর ক্রোধ, আত্মধিক্কার, যুদ্ধযাত্রার প্রতিজ্ঞা, রাবণের সঙ্গে তাঁর বীরত্বব্যঞ্জক কথোপকথন এবং তাঁর যুদ্ধসজ্জা—সবকিছুই বীররসের উদ্রেক করে। তাঁর ধনুকের টঙ্কারে লঙ্কার কম্পিত হওয়ার বর্ণনা বীররসের চূড়ান্ত প্রকাশ।
সমন্বয়: মধুসূদন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এই দুই বিপরীতধর্মী রসকে সমন্বিত করেছেন। রাবণের করুণ বিলাপের পরেই ইন্দ্রজিতের বীরত্বব্যঞ্জক উক্তি কাহিনীতে গতি আনে। আবার, ইন্দ্রজিতের বীরোচিত যুদ্ধযাত্রার ঠিক আগেই প্রমীলার সঙ্গে তাঁর করুণ বিদায় দৃশ্যটি কাহিনীর মানবিক আবেদনকে গভীর করে। এই দুই রসের সার্থক সমন্বয়ের ফলেই ‘অভিষেক’ কাব্যাংশটি এত মর্মস্পর্শী ও মহৎ হয়ে উঠেছে।

Class 10 bengali অভিষেক question answer

অভিষেক মাইকেল মধুসূদন দত্ত কবিতার প্রশ্ন উত্তর, MCQ, অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : Class 10 bengali অভিষেক কবিতার প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top