অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

অসুখী একজন ( পাবলো নেরুদা )

ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৫০টি)

১. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির কবি কে?

  • (ক) রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  • (খ) পাবলো নেরুদা
  • (গ) নবারুণ ভট্টাচার্য
  • (ঘ) শক্তি চট্টোপাধ্যায়

২. কবিতাটি বাংলায় কে তরজমা করেছেন?

  • (ক) শঙ্খ ঘোষ
  • (খ) সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়
  • (গ) শক্তি চট্টোপাধ্যায়
  • (ঘ) নবারুণ ভট্টাচার্য

৩. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম” – কথক কাকে ছেড়ে দিলেন?

  • (ক) তার বন্ধুকে
  • (খ) অপেক্ষারত মেয়েটিকে
  • (গ) তার মাকে
  • (ঘ) তার দেশকে

৪. “তারপর যুদ্ধ এল” – যুদ্ধ কীভাবে এল?

  • (ক) ঝড়ের মতো
  • (খ) রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো
  • (গ) বন্যার মতো
  • (ঘ) শান্ত পায়ে

৫. “সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না” – কেন মৃত্যু হল না?

  • (ক) সে পালিয়ে গিয়েছিল
  • (খ) সে খুব শক্তিশালী ছিল
  • (গ) ভালোবাসা অমর বলে
  • (ঘ) যুদ্ধ তাকে স্পর্শ করেনি

৬. কথক মেয়েটিকে কোথায় দাঁড় করিয়ে রেখে গিয়েছিলেন?

  • (ক) রাস্তায়
  • (খ) স্টেশনে
  • (গ) দরজায়
  • (ঘ) বারান্দায়

৭. যুদ্ধের আগুনে কী পুড়ে গিয়েছিল?

  • (ক) শুধু ঘরবাড়ি
  • (খ) শুধু গাছপালা
  • (গ) স্বপ্ন
  • (ঘ) সবকিছু

৮. “সব চূর্ণ হয়ে গেল” – কী চূর্ণ হয়ে গেল?

  • (ক) মিষ্টি বাড়ি, বারান্দা, চিমনি
  • (খ) কবির স্বপ্ন
  • (গ) মেয়েটির আশা
  • (ঘ) সবগুলোই সঠিক

৯. দেবতারা কত বছর ধ্যানে ডুবেছিলেন?

  • (ক) একশো বছর
  • (খ) পাঁচশো বছর
  • (গ) হাজার বছর
  • (ঘ) এক যুগ

১০. কথক কোন পথে চলে গিয়েছিলেন?

  • (ক) শহরের পথে
  • (খ) অনেক দূরে
  • (গ) গ্রামের পথে
  • (ঘ) যুদ্ধের পথে

১১. “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।” – কারা স্বপ্ন দেখতে পারল না?

  • (ক) শান্ত হলুদ দেবতারা
  • (খ) অপেক্ষারত মেয়েটি
  • (গ) কবি
  • (ঘ) সৈন্যরা

১২. যুদ্ধের ফলে শহরের অবস্থা কেমন হয়েছিল?

  • (ক) ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল
  • (খ) জনশূন্য হয়ে গিয়েছিল
  • (গ) শান্ত হয়ে গিয়েছিল
  • (ঘ) বন্যায় ভেসে গিয়েছিল

১৩. কথকের মাথার উপর কী ঘুরছিল?

  • (ক) মেঘ
  • (খ) প্লেন
  • (গ) গোলা-বারুদ
  • (ঘ) বছরগুলো

১৪. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘অসুখী’ কে?

  • (ক) মেয়েটি
  • (খ) কবি/কথক
  • (গ) দেবতারা
  • (ঘ) শহরবাসী

১৫. কীসের মতো বছরগুলো নেমে এসেছিল?

  • (ক) বৃষ্টির মতো
  • (খ) পাথরের মতো
  • (গ) ঝর্ণার মতো
  • (ঘ) স্বপ্নের মতো

১৬. “রক্তের একটা কালো দাগ” – কোথায় দেখা গিয়েছিল?

  • (ক) রাস্তায়
  • (খ) দেওয়ালে
  • (গ) শরীরে
  • (ঘ) কবির হৃদয়ে

১৭. ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কোন কাব্যগ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে?

  • (ক) Extravagaria
  • (খ) বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে
  • (গ) পাতার মুকুট
  • (ঘ) হে আমার愛

১৮. “যেখানে ছিল শহর” – সেখানে কী ছড়িয়ে রইল?

  • (ক) কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা
  • (খ) মানুষের কঙ্কাল
  • (গ) ভাঙা কাঁচ
  • (ঘ) শুধু ছাই

১৯. যুদ্ধ কাদের হত্যা করেছিল?

  • (ক) শুধু সৈন্যদের
  • (খ) শিশু ও বাড়িদের
  • (গ) দেবতাদের
  • (ঘ) সবাইকে

২০. অপেক্ষারত মেয়েটির কী হল না?

  • (ক) বিয়ে হল না
  • (খ) মৃত্যু হল না
  • (গ) ঘুম হল না
  • (ঘ) ফেরা হল না

২১. “চিমনি” কীসের অংশ?

  • (ক) গাড়ির
  • (খ) কারখানার
  • (গ) বাড়ির
  • (ঘ) জাহাজের

২২. ‘জলতরঙ্গ’ কী?

  • (ক) নদীর ঢেউ
  • (খ) এক ধরনের বাদ্যযন্ত্র
  • (গ) ঝর্ণা
  • (ঘ) জলের স্রোত

২৩. “সেই মিষ্টি বাড়ি” – বাড়িটি কার ছিল?

  • (ক) কবির
  • (খ) মেয়েটির
  • (গ) ঈশ্বরের
  • (ঘ) প্রতিবেশীর

২৪. “বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ” – এটি কিসের প্রতীক?

  • (ক) পরিচ্ছন্নতার
  • (খ) স্মৃতি মুছে যাওয়ার
  • (গ) নতুন সূচনার
  • (ঘ) বন্যার

২৫. “শান্ত হলুদ দেবতারা” কীসের প্রতীক?

  • (ক) ঐশ্বর্যের
  • (খ) শান্তির
  • (গ) ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির
  • (ঘ) ভয়ের

২৬. “একটা কুকুর চলে গেল” – এই চিত্রকল্পটি কী বোঝায়?

  • (ক) সময়ের প্রবাহ
  • (খ) কুকুরের মৃত্যু
  • (গ) অবহেলা
  • (ঘ) বিশ্বস্ততা

২৭. কবিতার শেষে কে কার জন্য অপেক্ষা করছিল?

  • (ক) কবি মেয়েটির জন্য
  • (খ) মেয়েটি কবির জন্য
  • (গ) দেবতারা ভক্তের জন্য
  • (ঘ) কেউ কারও জন্য নয়

২৮. ‘আগ্নেয়পাহাড়’ কীসের রূপক?

  • (ক) ভালোবাসা
  • (খ) প্রকৃতি
  • (গ) ভয়ংকর যুদ্ধ
  • (ঘ) রাগ

২৯. কবি যখন চলে যান, তখন কী নেমে এসেছিল?

  • (ক) সন্ধ্যা
  • (খ) বৃষ্টি
  • (গ) অন্ধকার
  • (ঘ) শীত

৩০. পাবলো নেরুদা কোন দেশের কবি?

  • (ক) স্পেন
  • (খ) আর্জেন্টিনা
  • (গ) চিলি
  • (ঘ) মেক্সিকো

৩১. “মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা” – কোথায় গড়িয়ে পড়ল?

  • (ক) নদীতে
  • (খ) রক্তের স্রোতে
  • (গ) নর্দমায়
  • (ঘ) ধ্বংসস্তূপে

৩২. “যেখানে আমি ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম” – এই চিত্রকল্পটি কীসের?

  • (ক) শৈশবের
  • (খ) অতীতের শান্তিময় জীবনের
  • (গ) যুদ্ধের
  • (ঘ) ভবিষ্যতের

৩৩. যুদ্ধ আসার আগে শহরের জীবন কেমন ছিল?

  • (ক) কোলাহলপূর্ণ
  • (খ) শান্ত ও সুন্দর
  • (গ) বিষণ্ণ
  • (ঘ) বিশৃঙ্খল

৩৪. কথক কী জানতেন?

  • (ক) তিনি আবার ফিরে আসবেন
  • (খ) যুদ্ধ আসছে
  • (গ) তিনি আর কখনও ফিরে আসবেন না
  • (ঘ) মেয়েটি অপেক্ষা করবে না

৩৫. “অসুখী একজন” কবিতাটি কোন ধরনের কবিতা?

  • (ক) প্রেমের কবিতা
  • (খ) প্রকৃতির কবিতা
  • (গ) যুদ্ধবিরোধী কবিতা
  • (ঘ) ব্যঙ্গ কবিতা

৩৬. “একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল” – এটি কিসের পরিচায়ক?

  • (ক) বিরহের
  • (খ) অপেক্ষার
  • (গ) সময়ের অনন্ত প্রবাহের
  • (ঘ) ঋতু পরিবর্তনের

৩৭. দেবতাদের মন্দির থেকে কী হয়েছিল?

  • (ক) তারা পালিয়ে গিয়েছিল
  • (খ) তারা উল্টে পড়েছিল
  • (গ) তারা ধ্যানে মগ্ন ছিল
  • (ঘ) তারা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল

৩৮. কবিতার একমাত্র জীবন্ত প্রতীক কে?

  • (ক) কবি
  • (খ) কুকুর
  • (গ) মেয়েটি
  • (ঘ) দেবতারা

৩৯. “তারপর, সময়…” – সময়কে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?

  • (ক) নদীর স্রোত
  • (খ) অন্তহীন পথ
  • (গ) পুরনো দিনের চিহ্ন
  • (ঘ) অনন্ত অপেক্ষার

৪০. “সেই বারান্দা… যেখানে আমি ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমিয়েছিলাম” – ‘বারান্দা’ কীসের প্রতীক?

  • (ক) ঐশ্বর্যের
  • (খ) অবসরের
  • (গ) ব্যক্তিগত স্মৃতি ও সুখের
  • (ঘ) স্বাধীনতার

৪১. ‘হিম’ শব্দের অর্থ কী?

  • (ক) ঠাণ্ডা
  • (খ) বরফ
  • (গ) তুষার
  • (ঘ) সবগুলোই

৪২. যুদ্ধের কারণে কারা নিহত হয়েছিল?

  • (ক) দেবতারা
  • (খ) গাছপালা
  • (গ) শিশুরা
  • (ঘ) মেয়েটি

৪৩. “হেঁটে গেল গির্জার এক নান” – ‘নান’ শব্দের অর্থ কী?

  • (ক) पुजारी
  • (খ) সন্ন্যাসিনী
  • (গ) সাধারণ মহিলা
  • (ঘ) সেবিকা

৪৪. “সবকিছু হয়ে গেল” – এই ‘সবকিছু’র মধ্যে কোনটি পড়ে না?

  • (ক) মিষ্টি বাড়ি
  • (খ) বারান্দা
  • (গ) অপেক্ষারত মেয়েটি
  • (ঘ) চিমনি

৪৫. কবিতাটিতে কোন সময়ের কথা বলা হয়েছে?

  • (ক) কবির শৈশব
  • (খ) যুদ্ধ-পূর্ববর্তী ও যুদ্ধ-পরবর্তী সময়
  • (গ) একটি কাল্পনিক সময়
  • (ঘ) বর্তমান সময়

৪৬. বছরগুলোকে ‘পাথর’ বলার কারণ কী?

  • (ক) তারা শক্ত
  • (খ) তারা ভারী ও অনুভূতিহীন
  • (গ) তারা সুন্দর
  • (ঘ) তারা পুরনো

৪৭. কবির ছেড়ে আসা বাড়িটি কেমন ছিল?

  • (ক) বিশাল
  • (খ) পুরনো
  • (গ) মিষ্টি
  • (ঘ) সাজানো

৪৮. “গোলাপ গাছ, ছড়ানো করতলের মতো পাতা” – এই চিত্রকল্পটি কীসের প্রতীক?

  • (ক) সৌন্দর্য
  • (খ) ভালোবাসা
  • (গ) শান্তিময় অতীত
  • (ঘ) প্রকৃতির ধ্বংস

৪৯. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবির মানসিক অবস্থা কেমন?

  • (ক) আনন্দিত
  • (খ) উদাসীন
  • (গ) বিষণ্ণ ও বেদনাহত
  • (ঘ) আশাবাদী

৫০. “যেখানে ছিল শহর…” – এই লাইনটি কী প্রকাশ করে?

  • (ক) শহরের পরিবর্তন
  • (খ) শহরের বিলুপ্তি
  • (গ) শহরের উন্নতি
  • (ঘ) শহরের নতুন নির্মাণ

খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (SAQ) – মান ১ (৪০টি)

১. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘আমি’ কে?

উত্তর: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘আমি’ হলেন কথক বা কবি স্বয়ং।

২. কথক কাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন?

উত্তর: কথক তাঁর অপেক্ষারত প্রিয়তমাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন।

৩. মেয়েটি কোথায় অপেক্ষা করছিল?

উত্তর: মেয়েটি দরজায় অপেক্ষা করছিল।

৪. কথক চলে যাওয়ার পর কী নেমেছিল?

উত্তর: কথক চলে যাওয়ার পর বৃষ্টি নেমেছিল।

৫. বৃষ্টিতে কী ধুয়ে গিয়েছিল?

উত্তর: বৃষ্টিতে কথকের পায়ের দাগ ধুয়ে গিয়েছিল।

৬. ‘আগ্নেয়পাহাড়’ কীসের মতো এসেছিল?

উত্তর: যুদ্ধ রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো এসেছিল।

৭. যুদ্ধের ফলে কাদের মৃত্যু হয়েছিল?

উত্তর: যুদ্ধের ফলে শিশু এবং বাড়িদের মৃত্যু হয়েছিল।

৮. দেবতারা কেমন ছিলেন?

উত্তর: দেবতারা ছিলেন শান্ত, হলুদ এবং হাজার বছর ধরে ধ্যানে মগ্ন।

৯. যুদ্ধের পর দেবতারা কী করতে পারলেন না?

উত্তর: যুদ্ধের পর দেবতারা আর স্বপ্ন দেখতে পারলেন না।

১০. মিষ্টি বাড়িটি কোথায় ছিল?

উত্তর: মিষ্টি বাড়িটি ছিল কবির ফেলে আসা শহরের রাস্তায়।

১১. কথক কোথায় ঘুমিয়েছিলেন?

উত্তর: কথক বারান্দায় ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমিয়েছিলেন।

১২. “সব চূর্ণ হয়ে গেল” – দুটি চূর্ণ হওয়া জিনিসের নাম লেখো।

উত্তর: দুটি চূর্ণ হওয়া জিনিস হলো চিমনি এবং প্রাচীন জলতরঙ্গ।

১৩. শহরের ধ্বংসস্তূপে কী কী ছড়িয়ে রইল?

উত্তর: শহরের ধ্বংসস্তূপে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা এবং পাথরের মূর্তির মাথা ছড়িয়ে রইল।

১৪. “সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না।” – এই লাইনটির অর্থ কী?

উত্তর: এই লাইনটির অর্থ হলো, যুদ্ধের ধ্বংসলীলার মাঝেও ভালোবাসা ও অপেক্ষা অমর হয়ে থাকে।

১৫. বছরগুলো কথকের মাথার উপর কীভাবে নেমে এসেছিল?

উত্তর: বছরগুলো পরপর পাথরের মতো কথকের মাথার উপর নেমে এসেছিল।

১৬. কবিতাটির উৎস কাব্যগ্রন্থের নাম কী?

উত্তর: কবিতাটির উৎস কাব্যগ্রন্থের নাম ‘বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে’।

১৭. যুদ্ধ কীসের মতো এসেছিল?

উত্তর: যুদ্ধ রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো এসেছিল।

১৮. ঘাস জন্মানোর কথা কোথায় বলা হয়েছে?

উত্তর: কথকের চলে যাওয়া রাস্তায় ঘাস জন্মানোর কথা বলা হয়েছে।

১৯. ‘বীভৎস’ শব্দটি কবিতায় কী প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়েছে?

উত্তর: মৃত পাথরের মূর্তির মাথা প্রসঙ্গে ‘বীভৎস’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে।

২০. অপেক্ষারত মেয়েটি কী জানত না?

উত্তর: অপেক্ষারত মেয়েটি জানত না যে কথক আর কখনও ফিরে আসবে না।

২১. “উল্টে পড়ল মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে” – কারা উল্টে পড়ল?

উত্তর: শান্ত হলুদ দেবতারা মন্দির থেকে উল্টে পড়ল।

২২. ‘রক্তের একটা কালো দাগ’ কোথায় দেখা গেল?

উত্তর: রাস্তায় ‘রক্তের একটা কালো দাগ’ দেখা গেল।

২৩. কথকের ফেলে আসা জিনিসগুলির মধ্যে একটির নাম লেখো।

উত্তর: কথকের ফেলে আসা জিনিসগুলির মধ্যে একটি হলো ঝুলন্ত বিছানা।

২৪. কবিতাটিতে কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: কবিতাটিতে যুদ্ধের মতো ভয়াবহ দুর্যোগের কথা বলা হয়েছে, যা প্রাকৃতিক না হলেও প্রকৃতির মতোই ধ্বংসাত্মক।

২৫. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় সময়কে কীসের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে?

উত্তর: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় সময়কে পাথরের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে।

২৬. কবির বারান্দায় কী গাছ ছিল?

উত্তর: কবির বারান্দায় গোলাপ গাছ ছিল।

২৭. যুদ্ধের আগুনে কারা জ্বলে গেল?

উত্তর: যুদ্ধের আগুনে স্বপ্ন জ্বলে গেল।

২৮. কথক কোন জিনিসটি জানতেন?

উত্তর: কথক জানতেন যে তিনি আর কখনও ফিরে আসবেন না।

২৯. কীসের মতো পাতা ছড়ানো ছিল?

উত্তর: করতলের মতো পাতা ছড়ানো ছিল।

৩০. ‘আগ্নেয়পাহাড়’ শব্দটির অর্থ কী?

উত্তর: ‘আগ্নেয়পাহাড়’ শব্দটির অর্থ হলো আগ্নেয়গিরি।

৩১. “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।” – এই অপেক্ষার स्वरूप কী?

উত্তর: এই অপেক্ষার स्वरूप হলো অন্তহীন, কারণ কথক আর ফিরবেন না।

৩২. কবিতাটিতে কোন ঋতুর উল্লেখ আছে?

উত্তর: কবিতাটিতে বর্ষা ঋতুর উল্লেখ আছে (“বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল…”)।

৩৩. যুদ্ধ শেষে শহরের অবস্থা কেমন হয়েছিল?

উত্তর: যুদ্ধ শেষে শহরটি এক বিশাল ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল।

৩৪. কবিতার মূল সুর কী?

উত্তর: কবিতার মূল সুর হলো যুদ্ধের ভয়াবহতা এবং তার মধ্যে ভালোবাসার অমরত্ব।

৩৫. “হেঁটে গেল গির্জার এক নান।” – এটি কীসের ইঙ্গিত দেয়?

উত্তর: এটি সময়ের স্বাভাবিক প্রবাহ এবং দৈনন্দিন জীবনের ছবিকে ইঙ্গিত দেয়।

৩৬. ‘চূর্ণ’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: ‘চূর্ণ’ শব্দের অর্থ হলো গুঁড়ো বা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া।

৩৭. কবি কোথায় চলে গিয়েছিলেন?

উত্তর: কবি অনেক দূরে চলে গিয়েছিলেন।

৩৮. পাবলো নেরুদা কোন পুরস্কার পেয়েছিলেন?

উত্তর: পাবলো নেরুদা সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছিলেন (১৯৭১ সালে)।

৩৯. কবিতার শেষে কীসের কালো দাগের কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: কবিতার শেষে রক্তের কালো দাগের কথা বলা হয়েছে।

৪০. “অসুখী একজন” নামটি কেন দেওয়া হয়েছে?

উত্তর: কারণ কথক তার প্রিয়জন ও ভালোবাসার পৃথিবীকে যুদ্ধের ধ্বংসলীলার মধ্যে ফেলে রেখে যেতে বাধ্য হয়েছেন, তাই তিনি অসুখী।


গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ৩ (২৫টি)

১. “সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না।” – কেন মেয়েটির মৃত্যু হল না, তা বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: এখানে ‘মেয়েটি’ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তি নয়, সে ভালোবাসা, আশা এবং শান্তির প্রতীক। যুদ্ধ সমস্ত भौतिक বস্তু, সভ্যতা, এমনকি দেবতাদেরও ধ্বংস করতে পারে, কিন্তু ভালোবাসা বা অপেক্ষার মতো মানবিক অনুভূতিকে ধ্বংস করতে পারে না। তাই মেয়েটি শারীরিকভাবে মৃত হলেও, প্রতীকী অর্থে তার মৃত্যু হয় না। ভালোবাসা অমর, তাই তারও মৃত্যু নেই।

২. “তারপর যুদ্ধ এল রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো।” – এই উপমাটির তাৎপর্য কী?

উত্তর: এই উপমাটির মাধ্যমে যুদ্ধের ভয়াবহ, আকস্মিক এবং সর্বগ্রাসী রূপকে তুলে ধরা হয়েছে। ‘আগ্নেয়পাহাড়’ যেমন হঠাৎ অগ্ন্যুৎপাত ঘটিয়ে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়, যুদ্ধও তেমনই আকস্মিকভাবে এসে সবকিছু ধ্বংস করে দেয়। ‘রক্তের’ শব্দটি যুদ্ধের হিংস্রতা ও প্রাণহানিকে বোঝায়। এই উপমা যুদ্ধের বীভৎসতাকে মূর্ত করে তুলেছে।

৩. “সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে।” – কী কী চূর্ণ হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?

উত্তর: যুদ্ধে কবির মিষ্টি বাড়ি, বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপ গাছ, চিমনি এবং প্রাচীন জলতরঙ্গ—সবকিছু চূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এর মাধ্যমে কবি বোঝাতে চেয়েছেন যে, যুদ্ধ কোনো কিছুকেই রেহাই দেয় না। এটি মানুষের ব্যক্তিগত স্মৃতি, সুখ, ভালোবাসা এবং সংস্কৃতির সমস্ত চিহ্নকে নির্মমভাবে ধ্বংস করে দেয়।

৪. “তারা আর স্বপ্ন দেখতে পারল না।” – কারা, কেন স্বপ্ন দেখতে পারল না?

উত্তর: এখানে ‘তারা’ বলতে শান্ত হলুদ দেবতাদের বোঝানো হয়েছে। দেবতারা হলেন শান্তি, স্থিতি এবং সংস্কৃতির প্রতীক। যুদ্ধ এসে তাদের মন্দির থেকে উল্টে ফেলে টুকরো টুকরো করে দিয়েছিল। তাদের এই ধ্বংসের মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, যুদ্ধের ভয়াবহতা মানুষের বিশ্বাস, ধর্ম ও ঐতিহ্যকেও ধ্বংস করে দেয়। তাই দেবতারা আর স্বপ্ন দেখতে, অর্থাৎ শান্তি ও স্থিতিশীলতার প্রতীক হতে পারলেন না।

৫. “বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল আমার পায়ের দাগ/ঘাস জন্মাল রাস্তায়।” – এই পঙক্তি দুটির অন্তর্নিহিত অর্থ কী?

উত্তর: এই পঙক্তি দুটির মাধ্যমে সময়ের প্রবাহ এবং স্মৃতির বিলীয়মানতাকে বোঝানো হয়েছে। ‘পায়ের দাগ’ হলো অতীতের চিহ্ন বা স্মৃতি। বৃষ্টি যেমন পায়ের দাগ ধুয়ে দেয়, সময়ও তেমনই ধীরে ধীরে অতীত স্মৃতিকে মুছে দেয়। রাস্তায় ঘাস জন্মানোও বোঝায় যে, সেই পথ দিয়ে আর কেউ চলাচল করে না, অর্থাৎ কথকের অস্তিত্ব সেই জায়গা থেকে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে।

৬. “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।” – এই অপেক্ষার স্বরূপ বিশ্লেষণ করো।

উত্তর: এই অপেক্ষা এক অন্তহীন ও করুণ অপেক্ষা। কারণ কথক নিজেই জানেন যে, তিনি আর কখনও ফিরে আসবেন না। মেয়েটি হয়তো যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় শারীরিকভাবে বেঁচে নেই, কিন্তু তার অপেক্ষা বা ভালোবাসা বেঁচে আছে। এই অপেক্ষা একদিকে যেমন ভালোবাসার অমরত্বের প্রতীক, তেমনই অন্যদিকে এটি এক মর্মান্তিক পরিহাস, কারণ এই অপেক্ষার কোনোদিন শেষ হবে না।

৭. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় সময়ের ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর: এই কবিতায় সময় এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। প্রথমে সময়কে দেখানো হয়েছে এক স্বাভাবিক প্রবাহ হিসেবে (“একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল”)। পরে সময়কে পাথরের মতো ভারী ও অনুভূতিহীন বলা হয়েছে, যা প্রিয়জনের থেকে দূরত্ব বাড়ায়। সময় একদিকে যেমন স্মৃতি মুছে দেয় (“বৃষ্টিতে ধুয়ে দিল…”), তেমনই অন্যদিকে অপেক্ষাকে দীর্ঘায়িত করে।

৮. “শিশুরা আর বাড়িরা খুন হল।” – এই পঙক্তিটির তাৎপর্য কী?

উত্তর: এই পঙক্তিটির মাধ্যমে যুদ্ধের নির্মমতা ও নির্বিচার ধ্বংসলীলাকে তুলে ধরা হয়েছে। ‘শিশুরা’ হলো সারল্য ও ভবিষ্যতের প্রতীক, আর ‘বাড়ি’ হলো আশ্রয় ও নিরাপত্তার প্রতীক। যুদ্ধ এই দুই পবিত্র জিনিসকেই ধ্বংস করে দেয়। ‘খুন হল’ শব্দটি প্রয়োগ করে কবি বুঝিয়েছেন যে, এই ধ্বংস কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়, এটি মানুষের দ্বারাই সৃষ্ট এক হত্যাকাণ্ড।

৯. কবিতায় যে মিষ্টি বাড়িটির কথা বলা হয়েছে, তার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

উত্তর: কবিতায় বর্ণিত মিষ্টি বাড়িটি ছিল কথকের ভালোবাসার আশ্রয়। সেখানে ছিল একটি বারান্দা, যেখানে তিনি ঝুলন্ত বিছানায় ঘুমোতেন। বাড়ির সামনে ছিল একটি গোলাপ গাছ এবং চিমনি। এছাড়াও একটি প্রাচীন জলতরঙ্গ ছিল, যা সংস্কৃতির প্রতীক। এই বাড়িটি ছিল কবির শান্তিময় ও সুখের অতীতের প্রতীক, যা যুদ্ধ এসে ধ্বংস করে দেয়।

১০. ‘অসুখী একজন’ কে এবং কেন?

উত্তর: ‘অসুখী একজন’ হলেন কবি বা কথক স্বয়ং। তিনি অসুখী কারণ, তিনি তার প্রিয়তমা এবং ভালোবাসার পৃথিবীকে পিছনে ফেলে রেখে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি জানেন, এই বিচ্ছেদের কোনো শেষ নেই এবং তার ফেলে আসা পৃথিবী যুদ্ধের আগুনে ধ্বংস হয়ে যাবে। এই অসহায়ত্ব ও বেদনাবোধই তাকে ‘অসুখী’ করে তুলেছে।

১১. “যেখানে ছিল শহর/সেখানে ছড়িয়ে রইল…” – কী ছড়িয়ে রইল? এই দৃশ্যের তাৎপর্য কী?

উত্তর: যেখানে শহর ছিল, সেখানে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা এবং মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা ছড়িয়ে রইল। এই দৃশ্যটি যুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলার পরিচয় দেয়। এটি বোঝায় যে, যুদ্ধ শুধুমাত্র প্রাণহানি ঘটায় না, এটি একটি সম্পূর্ণ সভ্যতা, তার শিল্প, স্থাপত্য এবং মানুষের তৈরি সমস্ত কাঠামোকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।

১২. ‘অপেক্ষা’ এবং ‘ভালোবাসা’—এই দুটি বিষয় কবিতায় কীভাবে এসেছে?

উত্তর: ‘ভালোবাসা’ এসেছে কথক ও মেয়েটির সম্পর্কের মাধ্যমে। এই ভালোবাসা এতটাই গভীর যে, কথক দূরে চলে গেলেও মেয়েটি তার জন্য অপেক্ষা করে। ‘অপেক্ষা’ হলো এই ভালোবাসারই বহিঃপ্রকাশ। যুদ্ধের সমস্ত ধ্বংসলীলার পরেও মেয়েটির এই অপেক্ষা প্রমাণ করে যে, ভালোবাসা ধ্বংসের ঊর্ধ্বে এক শাশ্বত অনুভূতি।

১৩. পাবলো নেরুদার কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর: পাবলো নেরুদার কবিতার মূল বৈশিষ্ট্য হলো গভীর প্রেম, রাজনৈতিক চেতনা এবং প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা। তাঁর কবিতায় সাধারণ বস্তুও অসাধারণ প্রতীকী ব্যঞ্জনা লাভ করে। ‘অসুখী একজন’ কবিতায় এই তিনটি বৈশিষ্ট্যই—প্রেম (মেয়েটির জন্য), রাজনৈতিক চেতনা (যুদ্ধবিরোধী মনোভাব) এবং প্রকৃতির চিত্রকল্প (বৃষ্টি, ঘাস)—উপস্থিত।

১৪. “বছরগুলো নেমে এল তার মাথার উপর/পরপর।” – এই পঙক্তিটির অর্থ বুঝিয়ে দাও।

উত্তর: এই পঙক্তিটির মাধ্যমে কথক বোঝাতে চেয়েছেন যে, তাঁর প্রিয়জনের থেকে দূরে থাকাকালীন সময়গুলো তাঁর কাছে অত্যন্ত ভারী ও কষ্টকর ছিল। বছরগুলোকে ‘পাথরের মতো’ বলা হয়েছে কারণ, প্রতিটি বছর তাঁর উপর মানসিক চাপ ও বেদনার বোঝা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই সময়গুলো ছিল অনুভূতিহীন এবং যন্ত্রণাদায়ক।

১৫. কবিতাটিতে ধ্বংসের চিত্র কীভাবে আঁকা হয়েছে?

উত্তর: কবিতাটিতে ধ্বংসের চিত্র ধাপে ধাপে আঁকা হয়েছে। প্রথমে ব্যক্তিগত স্মৃতি (পায়ের দাগ) মুছে যাওয়া, তারপর বাড়ি, বারান্দা, চিমনি ইত্যাদি ব্যক্তিগত আশ্রয় ধ্বংস হওয়া। এরপর সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতীক (দেবালয়, জলতরঙ্গ) ধ্বংস হয় এবং শেষে পুরো শহরটিই কাঠকয়লা ও দোমড়ানো লোহায় পরিণত হয়। এই ক্রমিক ধ্বংসের চিত্র যুদ্ধের সর্বগ্রাসী রূপকে তুলে ধরে।

১৬. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম/অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়” – এই বিদায় দৃশ্যের তাৎপর্য কী?

উত্তর: এই বিদায় দৃশ্যটি অত্যন্ত করুণ ও অনিবার্য। ‘ছেড়ে দিলাম’ কথাটির মধ্যে এক ধরনের অসহায়ত্ব রয়েছে, যা বোঝায় যে এই বিচ্ছেদ কবির ইচ্ছাকৃত নয়, পরিস্থিতি তাকে বাধ্য করেছে। ‘অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে’ কথাটি এক অন্তহীন বিচ্ছেদের ইঙ্গিত দেয়। এই দৃশ্যটিই পরবর্তীকালে ঘটা সমস্ত ধ্বংসলীলার প্রেক্ষাপট তৈরি করে।

১৭. ‘শান্ত হলুদ দেবতারা’ – এই বিশেষণগুলির সার্থকতা কী?

উত্তর: ‘শান্ত’ বিশেষণটি দেবতাদের স্থির, অচঞ্চল এবং ধ্যানমগ্ন অবস্থাকে বোঝায়, যা শান্তির প্রতীক। ‘হলুদ’ বিশেষণটি তাদের প্রাচীনত্ব এবং ঐতিহ্যকে নির্দেশ করে। এই দুটি বিশেষণ একত্রে শান্তি, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক স্নিগ্ধ চিত্র তৈরি করে, যা যুদ্ধের হিংস্রতার দ্বারা নির্মমভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।

১৮. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ব্যক্তিগত জীবন ও সামাজিক বিপর্যয়ের সম্পর্ক দেখাও।

উত্তর: কবিতায় কথকের ব্যক্তিগত জীবন (তার প্রেম, মিষ্টি বাড়ি) এবং সামাজিক বিপর্যয় (যুদ্ধ) অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত। যুদ্ধ নামক সামাজিক বিপর্যয়টিই তার ব্যক্তিগত জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। তার ভালোবাসার মানুষ থেকে তাকে বিচ্ছিন্ন হতে হয়েছে, তার সুখের স্মৃতিমাখা বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। এর মাধ্যমে কবি দেখিয়েছেন যে, কোনো সামাজিক বিপর্যয় ঘটলে তার প্রভাব থেকে ব্যক্তিগত জীবন মুক্ত থাকতে পারে না।

১৯. “তারপর যুদ্ধ এল।” – ‘তারপর’ শব্দটি ব্যবহারের কারণ কী?

উত্তর: ‘তারপর’ শব্দটি ব্যবহারের মাধ্যমে কবি শান্তিময় অতীত এবং ভয়াবহ বর্তমানের মধ্যে একটি সুস্পষ্ট বিভাজন তৈরি করেছেন। এর আগের অংশে ছিল প্রেম, অপেক্ষা এবং সময়ের স্বাভাবিক প্রবাহের বর্ণনা। ‘তারপর’ শব্দটি আকস্মিকভাবে সেই শান্ত অবস্থাকে ভেঙে দিয়ে যুদ্ধের ভয়াবহ পর্বের সূচনা করে, যা ঘটনার নাটকীয়তাকে বাড়িয়ে তুলেছে।

২০. “মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা” – এই চিত্রকল্পটি কীসের প্রতীক?

উত্তর: এই চিত্রকল্পটি যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট ধ্বংস এবং মানবিকতার অবক্ষয়ের প্রতীক। মূর্তি হলো শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতীক। যুদ্ধের ফলে সেই শিল্পকর্ম যখন ভেঙে বীভৎস মাথায় পরিণত হয়, তখন তা সভ্যতার পতনকে নির্দেশ করে। রক্তের স্রোতে ভেসে যাওয়া এই মাথা যুদ্ধের ভয়াবহতার এক শক্তিশালী চিত্রকল্প।

২১. কবিতাটির মূল কাব্যগ্রন্থের মূল নাম কী ছিল?

উত্তর: কবিতাটির মূল কাব্যগ্রন্থের স্প্যানিশ নাম হলো ‘Extravagaria’। নবারুণ ভট্টাচার্য এই কাব্যগ্রন্থের কিছু কবিতা অনুবাদ করে ‘বিদেশি ফুলে রক্তের ছিটে’ নামক সংকলন প্রকাশ করেন, যার মধ্যে ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি রয়েছে।

২২. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘আগুন’ কী কী ধ্বংস করেছিল?

উত্তর: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় আগুন কথকের স্বপ্ন, মিষ্টি বাড়ি, বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপ গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ এবং পুরো শহরটিকে জ্বালিয়ে দিয়েছিল। এই আগুন শুধু भौतिक বস্তুকেই ধ্বংস করেনি, মানুষের স্মৃতি, সুখ এবং আশ্রয়কেও ধ্বংস করেছিল।

২৩. “সেই মিষ্টি বাড়ি, সেই বারান্দা…” – এই পুনরাবৃত্তির কারণ কী?

উত্তর: এই পুনরাবৃত্তির মাধ্যমে কবি তাঁর হারানো অতীতের প্রতি গভীর মমতা ও আর্তি প্রকাশ করেছেন। ‘সেই’ শব্দটি ব্যবহার করে তিনি সেই সুখের দিনগুলো থেকে তাঁর বর্তমানের দূরত্বকে বুঝিয়েছেন। এই স্মৃতিচারণ যুদ্ধের ধ্বংসলীলাকে আরও বেশি বেদনাদায়ক করে তুলেছে।

২৪. কবিতাটিতে কোনো আশার আলো আছে কি? তোমার মতামত দাও।

উত্তর: কবিতাটির সামগ্রিক সুর হতাশাব্যঞ্জক হলেও, “সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না” – এই লাইনটির মধ্যে এক ক্ষীণ আশার আলো রয়েছে। মেয়েটি যদি ভালোবাসা ও জীবনের প্রতীক হয়, তবে তার বেঁচে থাকা প্রমাণ করে যে, সমস্ত ধ্বংসের পরেও মানবিকতা ও প্রেম টিকে থাকে। এই শাশ্বত ভালোবাসাই হয়তো未来的 পুনর্গঠনের একমাত্র আশা।

২৫. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কথকের চরিত্রটি কীভাবে ফুটে উঠেছে?

উত্তর: কবিতায় কথক একজন সংবেদনশীল, প্রেমময় কিন্তু অসহায় ব্যক্তি। তিনি তার প্রিয়জনকে ভালোবাসেন, কিন্তু পরিস্থিতি তাকে বিচ্ছিন্ন হতে বাধ্য করে। তিনি যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখে বেদনাহত এবং নিজের হারানো অতীতের জন্য আর্তি বোধ করেন। তিনি একই সঙ্গে একজন প্রেমিক, একজন স্মৃতিকাতর মানুষ এবং যুদ্ধের ভয়াবহতার এক নীরব সাক্ষী।


ঘ) রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৫ (১০টি)

১. ‘অসুখী একজন’ কবিতার নামকরণ কতখানি সার্থক হয়েছে, তা আলোচনা করো।

উত্তর:
ভূমিকা: যেকোনো সাহিত্যের নামকরণ তার বিষয়বস্তু ও অন্তর্নিহিত ব্যঞ্জনার ধারক। পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতাটির নামকরণও এই বিচারে অত্যন্ত সার্থক ও সুচিন্তিত।
‘অসুখী একজন’ কে?: কবিতাটির কথকই হলেন সেই ‘অসুখী একজন’। তিনি তার প্রিয়তমা, তার মিষ্টি বাড়ি, তার ভালোবাসার শহর—সবকিছুকে পিছনে ফেলে এক অজানা, অন্তহীন পথে চলে যেতে বাধ্য হয়েছেন। তিনি জানতেন, তিনি আর ফিরবেন না। এই অনিবার্য বিচ্ছেদ এবং ফেলে আসা পৃথিবীর জন্য তাঁর মনে যে গভীর বেদনা, তা-ই তাঁকে ‘অসুখী’ করে তুলেছে।
অসুখের কারণ: তাঁর অসুখের কারণ multifaceted। প্রথমত, প্রিয়জনের থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার যন্ত্রণা। দ্বিতীয়ত, যুদ্ধের ভয়াবহতার সাক্ষী হওয়ার কষ্ট। তিনি দেখেছেন কীভাবে তাঁর স্মৃতিমাখা পৃথিবী—বাড়ি, শহর, দেবালয়—সবকিছু ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এই ধ্বংসের অসহায় সাক্ষী হওয়া তাঁকে আরও বেশি অসুখী করেছে।
উপসংহার: কবিতাটি এক ব্যক্তির ব্যক্তিগত দুঃখের মধ্য দিয়ে যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট সমগ্র মানবজাতির দুঃখকে প্রকাশ করেছে। কথকের এই ব্যক্তিগত অসুখ আসলে যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর সমস্ত মানুষের সার্বজনীন অসুখের প্রতিচ্ছবি। তাই, কবিতার মূল ভাব ও বিষণ্ণ সুরকে সার্থকভাবে ধারণ করায় ‘অসুখী একজন’ নামকরণটি যথার্থ।

২. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যুদ্ধের যে ভয়াবহ ও সর্বগ্রাসী রূপের পরিচয় পাওয়া যায়, তা নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর:
ভূমিকা: পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি মূলত একটি যুদ্ধবিরোধী কবিতা, যেখানে যুদ্ধের ভয়াবহ, সর্বগ্রাসী রূপ অত্যন্ত মর্মস্পর্শী ভাষায় ফুটে উঠেছে।
যুদ্ধের আগমন: কবি যুদ্ধকে “রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো” বলে বর্ণনা করেছেন। এই উপমা যুদ্ধের আকস্মিকতা, হিংস্রতা এবং ভয়াবহতাকে নির্দেশ করে।
সর্বগ্রাসী ধ্বংসলীলা: যুদ্ধ কোনো কিছুকেই রেহাই দেয় না। এটি ধ্বংস করে—
১. ব্যক্তিগত আশ্রয় ও স্মৃতি: কথকের “মিষ্টি বাড়ি”, “বারান্দা”, “ঝুলন্ত বিছানা”—সবকিছু চূর্ণ হয়ে যায়। এটি মানুষের ব্যক্তিগত সুখ ও স্মৃতির উপর আঘাত।
২. মানবতা ও ভবিষ্যৎ: “শিশুরা আর বাড়িরা খুন হল” – এই লাইনের মাধ্যমে কবি দেখান যে, যুদ্ধ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম (শিশু) এবং মানুষের নিরাপত্তা (বাড়ি) দুটোকেই হত্যা করে।
৩. সভ্যতা ও সংস্কৃতি: হাজার বছর ধরে ধ্যানে মগ্ন “শান্ত হলুদ দেবতারা” টুকরো টুকরো হয়ে যায়। এটি প্রমাণ করে, যুদ্ধ মানুষের বিশ্বাস, ঐতিহ্য ও সভ্যতাকেও ধ্বংস করে।
চূড়ান্ত পরিণতি: যুদ্ধের শেষে পুরো শহরটিই “কাঠকয়লা”, “দোমড়ানো লোহা” আর “মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা”য় ভরা এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়।
উপসংহার: এভাবেই কবি দেখিয়েছেন যে, যুদ্ধ এক সর্বগ্রাসী শক্তি, যা মানুষের জীবন, স্মৃতি, সভ্যতা—সবকিছুকে নিঃশেষ করে দেয়।

৩. “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়।” – ‘সেই মেয়েটি’র প্রতীক্ষাকে কবি অমরত্ব দিয়েছেন কীভাবে? আলোচনা করো।

উত্তর:
ভূমিকা: ‘অসুখী একজন’ কবিতার শেষ পঙক্তি “আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়” সমগ্র কবিতার বিষণ্ণ সুরের মধ্যে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। এই অপেক্ষার মধ্য দিয়েই কবি মেয়েটিকে অমরত্ব দান করেছেন।
প্রতীক্ষার অমরত্ব:
১. ধ্বংসের ঊর্ধ্বে ভালোবাসা: কবিতাটিতে যুদ্ধ সবকিছু ধ্বংস করে দিয়েছে—বাড়ি, শহর, সভ্যতা, এমনকি দেবতাদেরও। কিন্তু একমাত্র যে জিনিসটি ধ্বংস হয়নি, তা হলো মেয়েটির ভালোবাসা ও অপেক্ষা। এর মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, भौतिक ধ্বংসলীলার ঊর্ধ্বে হলো মানবিক আবেগ।
২. সময়ের ঊর্ধ্বে অপেক্ষা: কথক চলে যাওয়ার পর বছরের পর বছর কেটে গেছে। সময় সবকিছু বদলে দিয়েছে, স্মৃতি মুছে দিয়েছে। কিন্তু মেয়েটির অপেক্ষা সময়ের এই প্রবাহকেও অতিক্রম করে গেছে।
৩. প্রতীকের মাধ্যমে অমরত্ব: ‘মেয়েটি’ এখানে আর শুধু একজন ব্যক্তি নয়, সে শাশ্বত ভালোবাসা, আশা এবং শান্তির প্রতীক। যুদ্ধ শান্তিকে বিঘ্নিত করতে পারে, কিন্তু তাকে সম্পূর্ণ ধ্বংস করতে পারে না। মেয়েটির এই প্রতীকী অমরত্বের মাধ্যমেই কবি তার অপেক্ষাকে শাশ্বত করে তুলেছেন।
উপসংহার: সুতরাং, মেয়েটি হয়তো শারীরিকভাবে যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় বিলীন হয়ে গেছে, কিন্তু তার ভালোবাসা ও অপেক্ষা কবিতার শেষে এক অমোঘ সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এইভাবেই কবি তার প্রতীক্ষাকে অমরত্ব দান করেছেন।

৪. “যেখানে ছিল শহর/সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা…” – এই ধ্বংসচিত্রের বর্ণনা দাও। এই ধ্বংসের মধ্যেও কোন্ বিষয়টি অক্ষত ছিল?

উত্তর:
ধ্বংসচিত্রের বর্ণনা: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি যুদ্ধের পরবর্তী এক ভয়াবহ ধ্বংসচিত্র এঁকেছেন। একসময় যেখানে একটি জীবন্ত শহর ছিল, সেখানে এখন কেবল ধ্বংসের চিহ্ন। চারিদিকে ছড়িয়ে আছে পোড়া কাঠকয়লা, যা পুড়ে যাওয়া ঘরবাড়ি ও আসবাবপত্রের স্মৃতি বহন করে। যুদ্ধের গোলার আঘাতে দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়া লোহা শহরের যান্ত্রিক সভ্যতার ধ্বংসকে নির্দেশ করে। আর রক্তের স্রোতে ভেসে যাওয়া পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা প্রমাণ করে যে, যুদ্ধ মানুষের শিল্প, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসকেও রেহাই দেয়নি। পুরো শহরটিই যেন এক বিশাল শ্মশানে পরিণত হয়েছে।
অক্ষত বিষয়: এই ভয়াবহ ও সর্বগ্রাসী ধ্বংসের মধ্যেও একটি বিষয় অক্ষত ছিল—সেটি হলো মেয়েটির ভালোবাসা ও অপেক্ষা। “সেই মেয়েটির মৃত্যু হল না” – এই পঙক্তির মাধ্যমে কবি বুঝিয়েছেন যে, যুদ্ধ সমস্ত भौतिक ও জাগতিক বস্তুকে ধ্বংস করতে পারলেও, মানুষের হৃদয়ের গভীরে থাকা ভালোবাসা, স্মৃতি ও অপেক্ষার মতো অনুভূতিকে স্পর্শ করতে পারে না। এই শাশ্বত মানবিক আবেগই সমস্ত ধ্বংসলীলার পরেও টিকে থাকে।

৫. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ব্যবহৃত প্রতীক ও চিত্রকল্পগুলির সার্থকতা বিচার করো।

উত্তর:
ভূমিকা: পাবলো নেরুদা তাঁর কবিতায় প্রতীক ও চিত্রকল্প ব্যবহারে অত্যন্ত দক্ষ। ‘অসুখী একজন’ কবিতাতেও তিনি সাধারণ বস্তুকে অসাধারণ ব্যঞ্জনায় ব্যবহার করে কবিতার ভাবকে গভীরতর করেছেন।
ব্যবহৃত প্রতীক ও চিত্রকল্প:
১. অপেক্ষারত মেয়েটি: সে শুধু একজন প্রেমিকা নয়, সে ভালোবাসা, শান্তি, আশা এবং ফেলে আসা জীবনের প্রতীক।
২. বৃষ্টি ও ঘাস: বৃষ্টি এবং ঘাস হলো সময়ের প্রবাহ এবং স্মৃতির বিলীয়মানতার প্রতীক। বৃষ্টি যেমন পায়ের দাগ মুছে দেয়, সময়ও তেমনই অতীতকে অস্পষ্ট করে দেয়।
৩. রক্তের আগ্নেয়পাহাড়: এটি যুদ্ধের ভয়াবহতা, আকস্মিকতা ও হিংস্রতার এক শক্তিশালী চিত্রকল্প।
৪. শান্ত হলুদ দেবতারা: এঁরা হলেন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও বিশ্বাসের প্রতীক, যা যুদ্ধের আঘাতে চূর্ণ হয়ে যায়।
৫. মিষ্টি বাড়ি ও ঝুলন্ত বিছানা: এগুলি ব্যক্তিগত সুখ, স্মৃতি ও নিরাপদ আশ্রয়ের প্রতীক, যা যুদ্ধের ফলে ধ্বংস হয়।
সার্থকতা: এই প্রতীক ও চিত্রকল্পগুলি কবিতার বক্তব্যকে শুধুমাত্র বর্ণনামূলক না রেখে এক গভীরতর ব্যঞ্জনায় পৌঁছে দিয়েছে। এগুলির মাধ্যমে কবি প্রেম, বিচ্ছেদ, যুদ্ধ, ধ্বংস এবং ভালোবাসার অমরত্বের মতো বিমূর্ত ধারণাগুলিকে মূর্ত করে তুলেছেন, যা কবিতার আবেদনকে সার্বজনীন ও মর্মস্পর্শী করেছে।

৬. “আমার পায়ের দাগ ধুয়ে দিল বৃষ্টি” এবং “রক্তের একটা কালো দাগ” – এই দুটি দাগের তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:
ভূমিকা: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় ‘দাগ’ শব্দটি দুটি ভিন্ন প্রসঙ্গে ব্যবহৃত হয়ে গভীর তাৎপর্য বহন করেছে।
“আমার পায়ের দাগ”: এটি কথকের ব্যক্তিগত অস্তিত্ব ও স্মৃতির প্রতীক। তিনি যখন তাঁর প্রিয়তমাকে ছেড়ে চলে যান, তখন তাঁর পায়ের দাগ রাস্তায় পড়ে থাকে। কিন্তু বৃষ্টি এসে সেই দাগ ধুয়ে দেয়। এর প্রতীকী অর্থ হলো, সময়ের প্রবাহে কথকের ব্যক্তিগত স্মৃতি এবং তাঁর অস্তিত্ব সেই স্থান থেকে ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। এটি এক প্রাকৃতিক ও শান্ত বিলীয়মানতার ছবি।
“রক্তের একটা কালো দাগ”: এই দাগটি যুদ্ধের ভয়াবহতা ও হিংসার প্রতীক। এটি কোনো প্রাকৃতিক দাগ নয়, এটি হত্যাকাণ্ডের চিহ্ন। যুদ্ধ শেষ হয়ে গেলেও এই রক্তের দাগ থেকে যায়, যা মানুষের মনে ও ইতিহাসে এক স্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করে। ‘কালো’ শব্দটি এই দাগের বীভৎসতা, শোক এবং অন্ধকার দিকটিকে আরও তীব্র করে তুলেছে।
পার্থক্য ও তাৎপর্য: প্রথম দাগটি সময়ের স্বাভাবিক নিয়মে মুছে যাওয়া স্মৃতির প্রতীক, যা বিষণ্ণ হলেও হিংস্র নয়। কিন্তু দ্বিতীয় দাগটি হলো মানুষের তৈরি করা হিংসার স্থায়ী চিহ্ন, যা সভ্যতার এক কলঙ্ক। এই দুটি দাগের বৈপরীত্যের মাধ্যমে কবি শান্তিময় অতীত ও যুদ্ধবিধ্বস্ত বর্তমানের পার্থক্যকে ফুটিয়ে তুলেছেন।

৭. “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম” – এই পঙক্তিটির মধ্য দিয়ে কথকের যে মানসিক অবস্থা ও অসহায়তা প্রকাশ পেয়েছে, তা আলোচনা করো।

উত্তর:
ভূমিকা: “আমি তাকে ছেড়ে দিলাম” – ‘অসুখী একজন’ কবিতার এই প্রথম পঙক্তিটিই সমগ্র কবিতার বিষণ্ণ সুর ও মূল ভাবকে প্রতিষ্ঠা করে।
মানসিক অবস্থা ও অসহায়তা:
১. অনিবার্য বিচ্ছেদ: ‘ছেড়ে দিলাম’ কথাটির মধ্যে কোনো আনন্দ বা ইচ্ছার প্রকাশ নেই। বরং এর মধ্যে রয়েছে এক গভীর বেদনা ও বাধ্যবাধকতা। কথক স্বেচ্ছায় এই বিচ্ছেদ চাননি, পরিস্থিতি তাঁকে বাধ্য করেছে তাঁর প্রিয়তমাকে ছেড়ে যেতে।
২. অপরাধবোধ ও দুঃখ: তিনি তাঁর প্রিয়তমাকে দরজায় অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে চলে যাচ্ছেন। তিনি জানেন যে তিনি আর ফিরবেন না, কিন্তু মেয়েটি তা জানে না। এই সত্যটি তাঁকে এক গভীর অপরাধবোধ ও দুঃখে নিমজ্জিত করেছে।
৩. অসহায়ত্ব: কথক এক বৃহত্তর শক্তির (হতে পারে যুদ্ধ, রাজনীতি বা অন্য কোনো পরিস্থিতি) কাছে অসহায়। তাঁর নিজের জীবনের উপর বা ভালোবাসার উপর তাঁর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। এই অসহায়ত্বই তাঁকে ‘অসুখী’ করে তুলেছে।
উপসংহার: সুতরাং, এই একটি মাত্র লাইনের মাধ্যমে কবি বিচ্ছেদের যন্ত্রণা, অপরাধবোধ এবং ভাগ্যের কাছে মানুষের অসহায়তার এক মর্মস্পর্শী চিত্র এঁকেছেন, যা পরবর্তীকালে ঘটা ধ্বংসলীলার প্রেক্ষাপট তৈরি করে।

৮. ‘অসুখী একজন’ কবিতায় মানব সৃষ্ট দুর্যোগ এবং তার ভয়াবহ পরিণতির ছবি কীভাবে ফুটে উঠেছে?

উত্তর:
ভূমিকা: ‘অসুখী একজন’ কবিতাটি কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগের কাহিনী নয়, এটি মানুষের দ্বারাই সৃষ্ট সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্যোগ—যুদ্ধের কাহিনী। কবি ধাপে ধাপে এই দুর্যোগের ভয়াবহ পরিণতি তুলে ধরেছেন।
দুর্যোগের রূপ: যুদ্ধ এখানে “রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো” আবির্ভূত হয়েছে, যা তার হিংস্র ও ধ্বংসাত্মক প্রকৃতিকে নির্দেশ করে।
ভয়াবহ পরিণতি:
১. ব্যক্তিগত জীবনের ধ্বংস: মানুষের তৈরি করা এই দুর্যোগ কথকের ব্যক্তিগত জীবনকে ছারখার করে দিয়েছে। তার ভালোবাসার সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছে, তার স্মৃতিমাখা “মিষ্টি বাড়ি” ও আশ্রয় ধ্বংস হয়েছে।
২. সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ধ্বংস: যুদ্ধ শুধু ব্যক্তিজীবন নয়, একটি গোটা সভ্যতাকে ধ্বংস করে। শহরের পর শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। দেবালয়, যা মানুষের বিশ্বাস ও সংস্কৃতির প্রতীক, তা-ও রক্ষা পায় না। “শান্ত হলুদ দেবতারা” টুকরো টুকরো হয়ে যায়।
৩. মানবিকতার বিনাশ: সবচেয়ে ভয়াবহ পরিণতি হলো মানবিকতার বিনাশ। “শিশুরা…খুন হল” – এই লাইনটি প্রমাণ করে যে, যুদ্ধ সারল্য ও ভবিষ্যৎকে হত্যা করে। রক্তের কালো দাগ ও বীভৎস মাথার ছবি মানুষের তৈরি করা এই দুর্যোগের চূড়ান্ত অমানবিকতাকে প্রকাশ করে।
উপসংহার: এভাবেই কবি দেখিয়েছেন যে, মানুষের তৈরি যুদ্ধ নামক দুর্যোগ কীভাবে মানুষেরই জীবন, সভ্যতা ও মানবিকতাকে গ্রাস করে নেয়।

৯. “সব চূর্ণ হয়ে গেল” – কী কী চূর্ণ হয়েছিল? এই ধ্বংসের বিপরীতে কোন্ জিনিসটি টিকে ছিল এবং কেন?

উত্তর:
চূর্ণ হওয়া বস্তুসমূহ: ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যুদ্ধের ভয়াবহ আগুনে প্রায় সবকিছুই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে ছিল—
১. ব্যক্তিগত স্মৃতি ও আশ্রয়: কথকের মিষ্টি বাড়ি, বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপ গাছ এবং চিমনি।
২. সংস্কৃতির প্রতীক: প্রাচীন জলতরঙ্গ, যা শিল্প ও সংস্কৃতির প্রতীক।
৩. বিশ্বাস ও ঐতিহ্য: হাজার বছর ধরে ধ্যানে মগ্ন দেবতাদের মন্দির এবং দেবমূর্তি।
৪. সভ্যতা: আস্ত একটা শহর পুড়ে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা এবং পাথরের বীভৎস মাথায় পরিণত হয়েছিল।
টিকে থাকা জিনিস এবং তার কারণ: এই সর্বগ্রাসী ধ্বংসের বিপরীতে একমাত্র যে জিনিসটি টিকে ছিল, তা হলো “সেই মেয়েটি”। তবে এখানে মেয়েটি বলতে তার শারীরিক অস্তিত্বকে বোঝানো হয়নি, বোঝানো হয়েছে তার ভালোবাসা ও অপেক্ষাকে। মেয়েটি টিকে ছিল কারণ—
১. ভালোবাসা অমর: যুদ্ধ भौतिक সবকিছু ধ্বংস করতে পারে, কিন্তু মানুষের হৃদয়ের প্রেম, স্মৃতি বা অপেক্ষার মতো অনুভূতিকে ধ্বংস করতে পারে না।
২. শান্তির প্রতীক: মেয়েটি ছিল শান্তি ও জীবনের প্রতীক। যুদ্ধ তাকে সাময়িকভাবে গ্রাস করলেও, জীবনের এই আকাঙ্ক্ষা চিরন্তন।
উপসংহার: সুতরাং, কবি বুঝিয়েছেন যে, ধ্বংসের মাঝেও ভালোবাসা ও জীবনের প্রতি आस्था অক্ষয় থাকে।

১০. কবিতার প্রথম স্তবক এবং শেষ স্তবকের মধ্যেকার বৈপরীত্য ও যোগসূত্র আলোচনা করো।

উত্তর:
ভূমিকা: ‘অসুখী একজন’ কবিতার প্রথম ও শেষ স্তবক দুটি ভিন্ন সময়ের ও ভিন্ন অবস্থার চিত্র তুলে ধরলেও, তাদের মধ্যে এক গভীর যোগসূত্র ও বৈপরীত্য রয়েছে।
প্রথম স্তবক: প্রথম স্তবকে একটি শান্ত, ব্যক্তিগত ও বিষণ্ণ বিদায়ের ছবি আঁকা হয়েছে। কথক তাঁর প্রিয়তমাকে দরজায় অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে চলে যাচ্ছেন। এখানে রয়েছে প্রেম, বিচ্ছেদ এবং সময়ের স্বাভাবিক প্রবাহের (বৃষ্টি, ঘাস জন্মানো) ইঙ্গিত। পরিবেশটি শান্ত হলেও এর মধ্যে এক অনিবার্য বিচ্ছেদের করুণ সুর ধ্বনিত হয়।
শেষ স্তবক: শেষ স্তবকে রয়েছে এক ভয়াবহ, সর্বগ্রাসী ধ্বংসের ছবি। শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে,到处 রক্তের দাগ। এই স্তবকে ব্যক্তিগত কোনো অনুভূতি নেই, আছে শুধু যুদ্ধের নির্মমতার সার্বজনীন চিত্র।
বৈপরীত্য ও যোগসূত্র:
বৈপরীত্য: প্রথম স্তবকের শান্ত, ব্যক্তিগত পরিবেশের সঙ্গে শেষ স্তবকের ভয়াবহ, নৈর্ব্যক্তিক ধ্বংসের চিত্রটি সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রথমটিতে আছে জীবনের স্পন্দন, আর শেষটিতে মৃত্যুর ছাপ।
যোগসূত্র: এই দুই স্তবকের মধ্যে প্রধান যোগসূত্র হলো ‘সেই মেয়েটি’। প্রথম স্তবকে যে মেয়েটি অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিল, শেষ স্তবকেও সে-ই অপেক্ষায় রয়েছে। তার এই অপরিবর্তিত অপেক্ষা প্রথম স্তবকের শান্ত অতীতকে শেষ স্তবকের ধ্বংসাত্মক বর্তমানের সঙ্গে যুক্ত করেছে। মেয়েটির অপেক্ষাই হলো সেই সুতো, যা কবিতার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সমস্ত ঘটনাকে এক সূত্রে গেঁথে রেখেছে এবং প্রমাণ করেছে যে, ধ্বংসের মাঝেও ভালোবাসা টিকে থাকে।

Class 10 bengali অসুখী একজন Question Answer

অসুখী একজন পাবলো নেরুদা কবিতার প্রশ্ন উত্তর, MCQ, অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : Class 10 bengali অসুখী একজন কবিতার প্রশ্ন উত্তর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top