আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন প্রশ্ন উত্তর
ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৫০টি)
১. কোনটি আয়নীয় যৌগ?
২. সমযোজী বন্ধন গঠিত হয়—
৩. নাইট্রোজেন (N₂) অণুতে কয়টি সমযোজী বন্ধন আছে?
৪. কোনটি সমযোজী যৌগ হওয়া সত্ত্বেও জলীয় দ্রবণে তড়িৎ পরিবহন করে?
৫. সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) গঠনে সোডিয়াম পরমাণু—
৬. কোন যৌগটির ক্ষেত্রে অষ্টক সূত্রের ব্যতিক্রম ঘটে?
৭. আয়নীয় যৌগগুলি সাধারণত—
৮. মিথেন (CH₄) অণুতে সমযোজী বন্ধনের সংখ্যা হল—
৯. একটি ধ্রুবীয় দ্রাবক হল—
১০. MgO যৌগে Mg²⁺ ও O²⁻ আয়নের ইলেকট্রন বিন্যাস কোন গ্যাসের মতো?
১১. কোন যৌগটিতে সমযোজী ত্রিবন্ধন বর্তমান?
১২. সমযোজী যৌগের অণুগুলির মধ্যে আকর্ষণ বল হল—
১৩. নিচের কোনটি তড়িৎযোজী বন্ধন গঠন করে?
১৪. হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) গ্যাসে কী ধরনের বন্ধন বর্তমান?
১৫. ক্যালসিয়াম অক্সাইড (CaO) যৌগে ক্যালসিয়ামের যোজ্যতা কত?
১৬. ক্লোরিন (Cl₂) অণুতে নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড়ের সংখ্যা কত?
১৭. কোনটি তড়িৎ পরিবহন করে?
১৮. দুটি পরমাণুর মধ্যে ইলেকট্রন জোড় সমানভাবে ব্যবহৃত হলে গঠিত হয়—
১৯. অ্যাসিটিলিন (C₂H₂) অণুতে কার্বন-কার্বন বন্ধনটি হল—
২০. কোনটির গলনাঙ্ক সবচেয়ে বেশি?
২১. জল (H₂O) অণুর লুইস ডট গঠনচিত্রে অক্সিজেন পরমাণুর নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় সংখ্যা—
২২. কোন মৌলটি আয়নীয় ও সমযোজী উভয় প্রকার যৌগ গঠন করে?
২৩. তড়িৎযোজী যৌগ গঠিত হয় একটি—
২৪. অক্সিজেন (O₂) অণুতে বন্ধন সৃষ্টিকারী ইলেকট্রন জোড়ের সংখ্যা হল—
২৫. কোনটির জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহনে অক্ষম?
২৬. LiH যৌগে H এর ইলেকট্রন বিন্যাস কোন মৌলের মতো?
২৭. ইথিলিন (C₂H₄) অণুতে মোট সমযোজী বন্ধনের সংখ্যা—
২৮. ক্যাটায়ন oluşur হয়—
২৯. অ্যামোনিয়া (NH₃) অণুতে নাইট্রোজেন পরমাণুর নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় সংখ্যা হল—
৩০. দুটি পরমাণুর মধ্যে সর্বাধিক কয়টি সমযোজী বন্ধন গঠিত হতে পারে?
৩১. কোন যৌগটি আয়ন দ্বারা গঠিত?
৩২. নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের প্রবণতা থেকে গঠিত হয়—
৩৩. আয়নীয় যৌগের ক্ষেত্রে ‘আণবিক ওজন’ কথাটির পরিবর্তে ব্যবহৃত হয়—
৩৪. কোনটিতে নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় নেই?
৩৫. CaCl₂ যৌগে মোট কটি ইলেকট্রন আদান-প্রদান হয়?
৩৬. কোনটির গলনাঙ্ক সর্বনিম্ন?
৩৭. সমযোজী যৌগের স্ফুটনাঙ্ক কম হয় কারণ—
৩৮. একটি সমযোজী তরল হল—
৩৯. কোনটির মধ্যে আয়নীয় বন্ধন দেখা যায়?
৪০. লুইস ডট গঠনে পরমাণুর কোন ইলেকট্রন অংশগ্রহণ করে?
৪১. কার্বন টেট্রাক্লোরাইড (CCl₄) কোন ধরনের দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়?
৪২. দ্বৈত সূত্র মেনে চলে কোন পরমাণুটি?
৪৩. সমযোজী একবন্ধনীর উদাহরণ হল—
৪৪. দুটি অধাতব পরমাণুর মধ্যে সাধারণত কী ধরনের বন্ধন গঠিত হয়?
৪৫. আয়নীয় যৌগের কেলাসে অণুর অস্তিত্ব—
৪৬. কোনটিতে সমযোজী দ্বিবন্ধন আছে?
৪৭. একটি পরমাণু থেকে ক্যাটায়ন তৈরি হলে তার আকার—
৪৮. আয়নীয় বন্ধনের কোনো নির্দিষ্ট ______ নেই।
৪৯. কোনটির কঠিন অবস্থা তড়িৎ পরিবহন করে?
৫০. রাসায়নিক বন্ধন গঠনে অংশগ্রহণ করে—
খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (VSA) – মান ১ (৪০টি)
(i) একটি শব্দে বা একটি বাক্যে উত্তর দাও
১. সমযোজী বন্ধন কী?
উত্তর: দুটি পরমাণু ইলেকট্রন জোড় সমভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে যে রাসায়নিক বন্ধন গঠন করে, তাকে সমযোজী বন্ধন বলে।
২. একটি আয়নীয় যৌগের উদাহরণ দাও।
উত্তর: সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl)।
৩. অষ্টক সূত্রটি কী?
উত্তর: পরমাণুগুলির সর্ববহিঃস্থ কক্ষে আটটি ইলেকট্রন রাখার প্রবণতাকেই অষ্টক সূত্র বলে।
৪. মিথেন অণুর লুইস ডট চিত্র অঙ্কন করো।
উত্তর: (শিক্ষার্থীরা কার্বনের চারটি যোজক ইলেকট্রনের সাথে চারটি হাইড্রোজেনের একটি করে ইলেকট্রন শেয়ার করে চিত্রটি আঁকবে)।
৫. অ্যানায়ন কীভাবে তৈরি হয়?
উত্তর: কোনো পরমাণু এক বা একাধিক ইলেকট্রন গ্রহণ করলে অ্যানায়ন তৈরি হয়।
৬. একটি সমযোজী ত্রিবন্ধনযুক্ত মৌলিক অণুর নাম লেখো।
উত্তর: নাইট্রোজেন (N₂)।
৭. NaCl কেন জলে দ্রাব্য?
উত্তর: কারণ জল একটি ধ্রুবীয় দ্রাবক এবং NaCl একটি আয়নীয় যৌগ।
৮. এমন একটি যৌগের নাম লেখো যাতে আয়নীয় ও সমযোজী উভয় বন্ধনই আছে।
উত্তর: কস্টিক সোডা (NaOH) বা পটাশিয়াম সায়ানাইড (KCN)।
৯. যোজ্যতা ইলেকট্রন কাকে বলে?
উত্তর: কোনো পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষের ইলেকট্রনগুলিকে যোজ্যতা ইলেকট্রন বলে।
১০. N₂ অণুতে কটি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় আছে?
উত্তর: দুটি (প্রতিটি নাইট্রোজেন পরমাণুতে একটি করে)।
(ii) নীচের বাক্যগুলো সত্য অথবা মিথ্যা নিরূপণ করো
১১. সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত উদ্বায়ী হয়।
উত্তর: সত্য।
১২. আয়নীয় যৌগের নির্দিষ্ট আণবিক ওজন আছে।
উত্তর: মিথ্যা (সংকেত ওজন আছে)।
১৩. গ্রাফাইট একটি সমযোজী যৌগ হলেও তড়িৎ পরিবহন করে।
উত্তর: সত্য।
১৪. হাইড্রোজেন অণুতে দ্বিবন্ধন থাকে।
উত্তর: মিথ্যা।
১৫. পরমাণু থেকে ক্যাটায়ন তৈরি হলে তার আকার বাড়ে।
উত্তর: মিথ্যা।
১৬. সমযোজী বন্ধনের কোনো নির্দিষ্ট অভিমুখ নেই।
উত্তর: মিথ্যা (নির্দিষ্ট অভিমুখ আছে)।
১৭. সোডিয়াম ক্লোরাইড কেলাসে Na⁺ ও Cl⁻ আয়ন থাকে।
উত্তর: সত্য।
১৮. কার্বন টেট্রাক্লোরাইড জলে দ্রাব্য।
উত্তর: মিথ্যা।
১৯. অ্যাসিটিলিন একটি রৈখিক অণু।
উত্তর: সত্য।
২০. LiH একটি সমযোজী যৌগ।
উত্তর: মিথ্যা (এটি আয়নীয় যৌগ)।
(iii) শূন্যস্থান পূরণ করো
২১. দুটি অধাতব পরমাণুর মধ্যে ______ বন্ধন গঠিত হয়।
উত্তর: সমযোজী।
২২. আয়নীয় যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক খুব ______ হয়।
উত্তর: উচ্চ।
২৩. অ্যাসিটিলিন অণুতে দুটি কার্বন পরমাণুর মধ্যে ______ বন্ধন আছে।
উত্তর: ত্রিবন্ধন।
২৪. রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরমাণুর ______ কক্ষের ইলেকট্রন অংশগ্রহণ করে।
উত্তর: যোজ্যতা।
২৫. Na⁺ আয়নে ইলেকট্রনের সংখ্যা হল ______।
উত্তর: 10।
২৬. H₂S একটি ______ সমযোজী যৌগ।
উত্তর: ধ্রুবীয়।
২৭. Ca এবং Cl দ্বারা গঠিত যৌগের সংকেত হল ______।
উত্তর: CaCl₂।
২৮. সমযোজী যৌগের অণুগুলির মধ্যে ______ আকর্ষণ বল কাজ করে।
উত্তর: ভ্যান ডার ওয়ালস।
২৯. যে রাসায়নিক বন্ধনে অণুর অস্তিত্ব থাকে না তা হল ______ বন্ধন।
উত্তর: আয়নীয়।
৩০. ইলেকট্রন গ্রহণ করলে পরমাণুটি ______ আয়নে পরিণত হয়।
উত্তর: ঋণাত্মক (অ্যানায়ন)।
(iv) A স্তম্ভের সঙ্গে B স্তম্ভের সমতা বিধান করো
৩১.
A স্তম্ভ | B স্তম্ভ |
---|---|
১. NaCl | (ক) ত্রিবন্ধন |
২. CH₄ | (খ) দ্বিবন্ধন |
৩. O₂ | (গ) আয়নীয় বন্ধন |
৪. N₂ | (ঘ) একবন্ধন |
উত্তর:
১ → (গ), ২ → (ঘ), ৩ → (খ), ৪ → (ক)
৩২.
A স্তম্ভ | B স্তম্ভ |
---|---|
১. আয়নীয় যৌগ | (ক) ধ্রুবীয় দ্রাবক |
২. জল | (খ) নিম্ন গলনাঙ্ক |
৩. সমযোজী যৌগ | (গ) ইলেকট্রন বর্জন |
৪. ক্যাটায়ন | (ঘ) উচ্চ গলনাঙ্ক |
উত্তর:
১ → (ঘ), ২ → (ক), ৩ → (খ), ৪ → (গ)
৩৩. হাইড্রোজেন অণুর লুইস ডট গঠন দেখাও।
উত্তর: H : H।
৩৪. একটি অধ্রুবীয় সমযোজী যৌগের উদাহরণ দাও।
উত্তর: মিথেন (CH₄)।
৩৫. CaO যৌগে কী ধরনের রাসায়নিক বন্ধন দেখা যায়?
উত্তর: আয়নীয় বা তড়িৎযোজী বন্ধন।
৩৬. কোন নিষ্ক্রিয় গ্যাসের ইলেকট্রন বিন্যাস লাভের জন্য পরমাণুগুলি বন্ধন গঠন করে?
উত্তর: নিকটতম নিষ্ক্রিয় গ্যাসের।
৩৭. জলের অণুতে কয়টি সমযোজী বন্ধন আছে?
উত্তর: দুটি।
৩৮. একটি মৌলের পরমাণুর K কক্ষে 2টি, L কক্ষে 8টি ও M কক্ষে 1টি ইলেকট্রন আছে। এটি কী ধরনের বন্ধন গঠন করবে?
উত্তর: আয়নীয় বা তড়িৎযোজী বন্ধন (কারণ এটি একটি ইলেকট্রন বর্জন করবে)।
৩৯. ক্লোরোফর্ম কি জলে দ্রাব্য?
উত্তর: না, কারণ ক্লোরোফর্ম একটি সমযোজী যৌগ যা অধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রাব্য।
৪০. সমাবয়বতা কোন ধরনের যৌগে দেখা যায়?
উত্তর: সমযোজী যৌগে (বিশেষত জৈব যৌগে)।
গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ২ (২০টি)
১. আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধনের দুটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর:
(i) গঠন: আয়নীয় বন্ধন ইলেকট্রন আদান-প্রদানের মাধ্যমে গঠিত হয়। সমযোজী বন্ধন ইলেকট্রন জোড় সমভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে গঠিত হয়।
(ii) অংশগ্রহণকারী পরমাণু: আয়নীয় বন্ধন সাধারণত ধাতু ও অধাতুর মধ্যে গঠিত হয়। সমযোজী বন্ধন সাধারণত দুটি অধাতব পরমাণুর মধ্যে গঠিত হয়।
২. লুইস ডট ডায়াগ্রামের সাহায্যে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) অণুর গঠন দেখাও।
উত্তর: Na (2, 8, 1) → Na⁺ (2, 8) + e⁻
Cl (2, 8, 7) + e⁻ → Cl⁻ (2, 8, 8)
Na⁺ এবং Cl⁻ আয়ন তীব্র তড়িৎ আকর্ষণ বল দ্বারা যুক্ত হয়ে NaCl গঠন করে। (শিক্ষার্থীরা এখানে ইলেকট্রন স্থানান্তর দেখিয়ে লুইস ডট চিত্র আঁকবে)।
৩. আয়নীয় যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক উচ্চ হয় কেন?
উত্তর: আয়নীয় যৌগগুলি কঠিন অবস্থায় ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন দ্বারা গঠিত সুস্থিত কেলাস গঠন করে। এই আয়নগুলি পরস্পরের সঙ্গে তীব্র স্থির-তড়িৎ আকর্ষণ বল দ্বারা দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। এই তীব্র আকর্ষণ বলকে ছিন্ন করতে প্রচুর তাপশক্তির প্রয়োজন হয়। তাই আয়নীয় যৌগের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক খুব উচ্চ হয়।
৪. লুইস ডট ডায়াগ্রামের সাহায্যে নাইট্রোজেন (N₂) অণুর গঠন দেখাও।
উত্তর: নাইট্রোজেন পরমাণুর (Z=7) সর্ববহিঃস্থ কক্ষে 5টি ইলেকট্রন থাকে। দুটি নাইট্রোজেন পরমাণু প্রত্যেকে 3টি করে ইলেকট্রন দিয়ে তিনটি ইলেকট্রন জোড় গঠন করে। এর ফলে উভয়ের অষ্টক পূরণ হয় এবং একটি সমযোজী ত্রিবন্ধন (N≡N) গঠিত হয়। (শিক্ষার্থীরা এখানে লুইস ডট চিত্র আঁকবে)।
৫. সমযোজী যৌগগুলি সাধারণত তড়িৎ পরিবহন করে না কেন?
উত্তর: সমযোজী যৌগগুলি অণু দ্বারা গঠিত, কোনো আয়ন দ্বারা নয়। এদের মধ্যে তড়িৎ পরিবহনের জন্য কোনো মুক্ত ইলেকট্রন বা আয়ন থাকে না। এই কারণে সাধারণ অবস্থায় সমযোজী যৌগগুলি তড়িৎ পরিবহন করতে পারে না।
৬. জল একটি ধ্রুবীয় দ্রাবক—ব্যাখ্যা করো। NaCl কেন জলে দ্রবীভূত হয়?
উত্তর: জলের অণুতে (H₂O) অক্সিজেন পরমাণুর তড়িৎ-ঋণাত্মকতা হাইড্রোজেনের চেয়ে বেশি হওয়ায়, বন্ধন ইলেকট্রন জোড় অক্সিজেনের দিকে কিছুটা সরে থাকে। ফলে অক্সিজেন প্রান্তে আংশিক ঋণাত্মক (δ⁻) ও হাইড্রোজেন প্রান্তে আংশিক ধনাত্মক (δ⁺) আধানের সৃষ্টি হয়। এই কারণে জল একটি ধ্রুবীয় বা পোলার অণু।
NaCl একটি আয়নীয় যৌগ (Na⁺ ও Cl⁻)। জলের ধ্রুবীয় অণুগুলি NaCl-এর আয়নগুলিকে আকর্ষণ করে ও কেলাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে, ফলে NaCl জলে দ্রবীভূত হয়।
৭. অষ্টক সূত্রের দুটি ব্যতিক্রম উল্লেখ করো।
উত্তর:
(i) অষ্টক অসম্পূর্ণ যৌগ: কিছু যৌগে কেন্দ্রীয় পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষে আটটির কম ইলেকট্রন থাকে। যেমন, লিথিয়াম হাইড্রাইড (LiH), বোরন ট্রাইফ্লুরাইড (BF₃)।
(ii) অষ্টক সম্প্রসারিত যৌগ: কিছু যৌগে কেন্দ্রীয় পরমাণুর সর্ববহিঃস্থ কক্ষে আটটির বেশি ইলেকট্রন থাকে। যেমন, ফসফরাস পেন্টাক্লোরাইড (PCl₅), সালফার হেক্সাফ্লুরাইড (SF₆)।
৮. লুইস ডট চিত্রের সাহায্যে মিথেন (CH₄) অণুর গঠন দেখাও।
উত্তর: কার্বন পরমাণুর (Z=6) সর্ববহিঃস্থ কক্ষে 4টি ইলেকট্রন থাকে। এটি চারটি হাইড্রোজেন পরমাণুর (Z=1) প্রত্যেকটির একটি করে ইলেকট্রনের সঙ্গে চারটি ইলেকট্রন জোড় গঠন করে। এর ফলে কার্বনের অষ্টক এবং প্রতিটি হাইড্রোজেনের দ্বৈত সূত্র পূরণ হয়। (শিক্ষার্থীরা এখানে লুইস ডট চিত্র আঁকবে)।
৯. MgCl₂ যৌগের গঠন লুইস ডটের সাহায্যে দেখাও।
উত্তর: ম্যাগনেসিয়াম (Mg) পরমাণু (2, 8, 2) দুটি ইলেকট্রন বর্জন করে Mg²⁺ (2, 8) ক্যাটায়নে পরিণত হয়। দুটি ক্লোরিন (Cl) পরমাণু (2, 8, 7) প্রত্যেকে একটি করে ইলেকট্রন গ্রহণ করে দুটি Cl⁻ (2, 8, 8) অ্যানায়নে পরিণত হয়। এই আয়নগুলি যুক্ত হয়ে MgCl₂ গঠন করে। (শিক্ষার্থীরা ইলেকট্রন স্থানান্তর দেখিয়ে লুইস ডট চিত্র আঁকবে)।
১০. আয়নীয় যৌগের ক্ষেত্রে ‘সংকেত ভর’ কথাটি ব্যবহার করা হয় কেন?
উত্তর: আয়নীয় যৌগগুলি কঠিন অবস্থায় কোনো বিচ্ছিন্ন অণু হিসেবে থাকে না। এরা ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন দ্বারা গঠিত ত্রিমাত্রিক কেলাস গঠন করে। তাই এদের নির্দিষ্ট কোনো আণবিক ওজন থাকে না। এদের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র একটি সংকেত একক (Formula Unit) কল্পনা করা হয় এবং তার ভরকে ‘সংকেত ভর’ বলা হয়। যেমন, NaCl-এর সংকেত ভর 58.5।
১১. ধ্রুবীয় ও অধ্রুবীয় সমযোজী যৌগের মধ্যে পার্থক্য কী? একটি করে উদাহরণ দাও।
উত্তর:
পার্থক্য: ধ্রুবীয় সমযোজী যৌগের অণুতে পরমাণুগুলির তড়িৎ-ঋণাত্মকতার পার্থক্য থাকায় আংশিক ধনাত্মক ও ঋণাত্মক মেরুর সৃষ্টি হয়। অধ্রুবীয় সমযোজী যৌগে এই ধরনের কোনো মেরু সৃষ্টি হয় না।
উদাহরণ: ধ্রুবীয় – জল (H₂O), অধ্রুবীয় – মিথেন (CH₄)।
১২. দেখাও যে হাইড্রোজেন ক্লোরাইড (HCl) একটি সমযোজী যৌগ, কিন্তু এর জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহন করে।
উত্তর: হাইড্রোজেন (1টি যোজক ইলেকট্রন) ও ক্লোরিন (7টি যোজক ইলেকট্রন) একটি করে ইলেকট্রন শেয়ার করে সমযোজী বন্ধন গঠন করে। তাই এটি সমযোজী যৌগ।
কিন্তু জলের (ধ্রুবীয় দ্রাবক) উপস্থিতিতে HCl অণু বিয়োজিত হয়ে H⁺ (বা H₃O⁺) ও Cl⁻ আয়ন উৎপন্ন করে। এই মুক্ত আয়নের উপস্থিতির জন্য HCl-এর জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহন করে।
১৩. ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের মধ্যে দুটি পার্থক্য লেখো।
উত্তর:
(i) গঠন: পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন করে ক্যাটায়ন গঠন করে। পরমাণু ইলেকট্রন গ্রহণ করে অ্যানায়ন গঠন করে।
(ii) আকার: ক্যাটায়নের আকার তার মূল পরমাণুর চেয়ে ছোট হয়। অ্যানায়নের আকার তার মূল পরমাণুর চেয়ে বড় হয়।
১৪. ইথিলিন (C₂H₄) অণুর লুইস ডট গঠন অঙ্কন করো।
উত্তর: দুটি কার্বন পরমাণু নিজেদের মধ্যে দুটি ইলেকট্রন জোড় (দ্বিবন্ধন) এবং প্রত্যেকে দুটি করে হাইড্রোজেন পরমাণুর সাথে দুটি একবন্ধন গঠন করে। এর ফলে প্রতিটি কার্বনের অষ্টক এবং প্রতিটি হাইড্রোজেনের দ্বৈত সূত্র পূরণ হয়। (শিক্ষার্থীরা লুইস ডট চিত্র আঁকবে)।
১৫. সোডিয়ামের পারমাণবিক ক্রমাঙ্ক 11 এবং ক্লোরিনের 17। এরা কীভাবে রাসায়নিক বন্ধন গঠন করে?
উত্তর: সোডিয়ামের (2, 8, 1) সর্ববহিঃস্থ কক্ষে একটি ইলেকট্রন আছে। এটি একটি ইলেকট্রন বর্জন করে Na⁺ (2, 8) আয়নে পরিণত হয় এবং স্থায়িত্ব লাভ করে।
ক্লোরিনের (2, 8, 7) সর্ববহিঃস্থ কক্ষে সাতটি ইলেকট্রন আছে। এটি একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cl⁻ (2, 8, 8) আয়নে পরিণত হয় এবং স্থায়িত্ব লাভ করে। এই Na⁺ ও Cl⁻ আয়ন দুটি তড়িৎযোজী বা আয়নীয় বন্ধন গঠন করে।
১৬. সমযোজী ও তড়িৎযোজী যোজ্যতার মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর:
তড়িৎযোজী যোজ্যতা: কোনো পরমাণু যতগুলি ইলেকট্রন বর্জন বা গ্রহণ করে আয়নীয় যৌগ গঠন করে, সেই সংখ্যাকে তার তড়িৎযোজী যোজ্যতা বলে।
সমযোজী যোজ্যতা: কোনো পরমাণু যতগুলি ইলেকট্রন জোড় গঠন করে সমযোজী যৌগ গঠন করে, সেই সংখ্যাকে তার সমযোজী যোজ্যতা বা সমযোজ্যতা বলে।
১৭. ‘লাইক ডিজলভস লাইক’ (Like dissolves like) নীতিটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: এই নীতি অনুসারে, ধ্রুবীয় যৌগগুলি ধ্রুবীয় দ্রাবকে এবং অধ্রুবীয় যৌগগুলি অধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত হয়। যেমন, আয়নীয় যৌগ NaCl (ধ্রুবীয় প্রকৃতির) ধ্রুবীয় দ্রাবক জলে দ্রবীভূত হয়, কিন্তু অধ্রুবীয় দ্রাবক বেনজিনে হয় না। আবার, সমযোজী যৌগ ন্যাপথালিন (অধ্রুবীয়) অধ্রুবীয় দ্রাবক বেনজিনে দ্রবীভূত হয়, কিন্তু জলে হয় না।
১৮. লুইস ডট ডায়াগ্রামের সাহায্যে জল (H₂O) অণুর গঠন দেখাও।
উত্তর: অক্সিজেন পরমাণুর (Z=8) সর্ববহিঃস্থ কক্ষে 6টি ইলেকট্রন থাকে। এটি দুটি হাইড্রোজেন পরমাণুর প্রত্যেকটির সাথে একটি করে ইলেকট্রন শেয়ার করে দুটি সমযোজী একবন্ধন গঠন করে। এর ফলে অক্সিজেনের অষ্টক এবং হাইড্রোজেনের দ্বৈত সূত্র পূরণ হয়। অক্সিজেনের উপর দুটি নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় থেকে যায়। (শিক্ষার্থীরা লুইস ডট চিত্র আঁকবে)।
১৯. নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় ও বন্ধন ইলেকট্রন জোড় কাকে বলে?
উত্তর:
বন্ধন ইলেকট্রন জোড়: সমযোজী বন্ধন গঠনে যে ইলেকট্রন জোড় অংশগ্রহণ করে, তাকে বন্ধন ইলেকট্রন জোড় (Bond Pair) বলে।
নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড়: যোজ্যতা কক্ষের যে ইলেকট্রন জোড় রাসায়নিক বন্ধনে অংশগ্রহণ করে না, তাকে নিঃসঙ্গ ইলেকট্রন জোড় (Lone Pair) বলে।
২০. কঠিন NaCl তড়িৎ পরিবহন করে না, কিন্তু গলিত অবস্থায় করে কেন?
উত্তর: কঠিন অবস্থায় NaCl-এর আয়নগুলি (Na⁺, Cl⁻) কেলাস জালকে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে এবং চলাচল করতে পারে না। তাই কঠিন NaCl তড়িৎ পরিবহন করে না।
কিন্তু গলিত অবস্থায় বা জলীয় দ্রবণে এই আয়নগুলি মুক্তভাবে চলাচল করতে পারে, তাই গলিত বা দ্রবীভূত NaCl তড়িৎ পরিবহন করে।
Class 10 Physical Science আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন Question Answer MCQ,অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : class 10 আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন প্রশ্ন উত্তর