বারিমন্ডল প্রশ্ন উত্তর Class 10
ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৭০টি)
১. পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে দূরত্ব যখন সবচেয়ে কম থাকে, তখন তাকে বলে –
২. একটি স্থানের মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের পার্থক্য হল –
৩. উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে সৃষ্টি হয় –
৪. একটি উষ্ণ স্রোতের উদাহরণ হল –
৫. মরা কোটাল হয় –
৬. আটলান্টিক মহাসাগরের একটি শীতল স্রোত হল –
৭. চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করলে তাকে বলে –
৮. শৈবাল সাগর সৃষ্টি হয়েছে যে মহাসাগরে, তা হল –
৯. জোয়ার ও ভাঁটার মধ্যে সময়ের ব্যবধান হল প্রায় –
১০. পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়া হল –
১১. ভরা কোটাল হয় –
১২. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ হল –
১৩. এল নিনো হল একটি –
১৪. জোয়ার-ভাটা খেলে এমন একটি নদীর নাম হল –
১৫. কোন তিথিতে চাঁদের আকর্ষণ শক্তি সর্বাধিক হয়?
১৬. বানডাকা দেখা যায় –
১৭. হিমপ্রাচীর দেখা যায় –
১৮. পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে যে জোয়ার হয়, তা হল –
১৯. ভারত মহাসাগরের একটি স্রোতের নাম হল –
২০. চাঁদ ও সূর্যের পারস্পরিক সমকোণে অবস্থানকে বলে –
২১. একটি স্থানে দিনে ক’বার জোয়ার-ভাটা হয়?
২২. প্রশান্ত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোত হল –
২৩. চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবীর সরলরৈখিক অবস্থানকে বলে –
২৪. ল্যাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে সৃষ্ট হিমপ্রাচীর যে দুটি স্রোতের সীমানা নির্দেশ করে, তা হল –
২৫. অ্যাপোজি অবস্থানে জোয়ারের প্রাবল্য –
২৬. কোন মহাসাগরে ঋতু পরিবর্তনের সাথে সমুদ্রস্রোতের দিক পরিবর্তিত হয়?
২৭. পৃথিবীর উপর চাঁদের আকর্ষণের ফলে যে জোয়ার হয়, তা হল –
২৮. জাপান উপকূল দিয়ে প্রবাহিত উষ্ণ স্রোতটি হল –
২৯. যে তিথিতে জোয়ারের প্রাবল্য সবচেয়ে কম হয়, তা হল –
৩০. সমুদ্রের জলে ভাসমান বিশাল বরফের স্তূপকে বলে –
৩১. সংযোগ অবস্থানে পৃথিবীতে হয় –
৩২. বেঙ্গুয়েলা স্রোত দেখা যায় –
৩৩. পেরু ও চিলি উপকূলে প্রবাহিত শীতল স্রোতটি হল –
৩৪. মগ্নচড়াগুলি বিখ্যাত –
৩৫. প্রতিযোগ অবস্থানে চাঁদ ও সূর্যের মাঝে থাকে –
৩৬. উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত এবং শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনস্থল হল –
৩৭. ক্যানারি স্রোত হল একটি –
৩৮. সারা দিনে মোট জোয়ার ও ভাঁটার সংখ্যা –
৩৯. কোন মহাসাগরীয় স্রোতটি ‘সুমাত্রা স্রোত’ নামেও পরিচিত?
৪০. ভরা কোটালের সময় জোয়ারের জল –
৪১. পৃথিবীর দ্রুততম সমুদ্রস্রোত হল –
৪২. ভারত মহাসাগরের একটি শীতল স্রোত হল –
৪৩. অমাবস্যা তিথিতে পৃথিবীর যে অংশে মুখ্য জোয়ার হয়, তার প্রতিপাদ স্থানে হয় –
৪৪. আটলান্টিক মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোত হল –
৪৫. মরা কোটালের সময় চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর সাপেক্ষে যে কোণে থাকে, তা হল –
৪৬. ‘জাপানের জাপান’ বলা হয় কোন স্রোতকে?
৪৭. জোয়ার সৃষ্টির প্রধান কারণ হল –
৪৮. ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত প্রবাহিত হয় –
৪৯. একটি নির্দিষ্ট স্থানে দুটি মুখ্য জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান –
৫০. উষ্ণ কুরোশিও ও শীতল ওয়াশিও স্রোতের মিলনে ঘন কুয়াশা সৃষ্টি হয় –
৫১. জোয়ারের জল নদীতে প্রবেশ করলে তাকে বলে –
৫২. এল নিনোর বিপরীত অবস্থা হল –
৫৩. সমুদ্রজলের উল্লম্ব সঞ্চালনকে বলে –
৫৪. ‘The Gulf Stream’ গ্রন্থটি রচনা করেন –
৫৫. পৃথিবীর আবর্তনের ফলে যে বলের প্রভাবে সমুদ্রস্রোত বেঁকে যায়, তা হল –
৫৬. মোজাম্বিক স্রোত হল একটি –
৫৭. পেরিজি অবস্থানে জোয়ারের শক্তি স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় –
৫৮. সমুদ্রজলের অনুভূমিক সঞ্চালনকে বলে –
৫৯. গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক মগ্নচড়াটি অবস্থিত –
৬০. একটি ঋতুভিত্তিক সমুদ্রস্রোতের উদাহরণ হল –
৬১. সূর্য অপেক্ষা চাঁদের আকর্ষণ শক্তি পৃথিবীতে প্রায় –
৬২. যে জলবায়ু অঞ্চলে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব সবচেয়ে কম –
৬৩. সমুদ্রের স্রোতবিহীন শান্ত অঞ্চলকে বলে –
৬৪. ভরা কোটালে চন্দ্র ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ শক্তি সর্বাধিক হয় –
৬৫. লা নিনার প্রভাবে ভারতের জলবায়ু হয় –
৬৬. মগ্নচড়ার বাণিজ্যিক গুরুত্ব হল –
৬৭. কোন তিথিতে চাঁদের অর্ধেক অংশ দেখা যায়?
৬৮. সমুদ্রের জল এক স্থান থেকে অন্য স্থানে প্রবাহিত হয় যার প্রভাবে, তা হল –
৬৯. কোন দুটি স্রোতের মিলনে নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে কুয়াশা হয়?
৭০. কোন যন্ত্রের সাহায্যে সমুদ্রের গভীরতা মাপা হয়?
খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (SAQ) – মান ১ (৬০টি)
১. সিজিগি কী?
উত্তর: চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী যখন একই সরলরেখায় অবস্থান করে, সেই বিশেষ কৌণিক অবস্থানকে সিজিগি বলে।
২. ভরা কোটাল কোন তিথিতে হয়?
উত্তর: অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে।
৩. শৈবাল সাগর কোথায় দেখা যায়?
উত্তর: উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সারগাসো সাগরে।
৪. হিমপ্রাচীর কী?
উত্তর: আটলান্টিক মহাসাগরে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত এবং শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনস্থলে যে স্পষ্ট বিভাজন রেখা দেখা যায়, তাকে হিমপ্রাচীর বলে।
৫. মগ্নচড়া কী?
উত্তর: উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে হিমশৈল গলে গিয়ে নুড়ি, কাঁকর, বালি ইত্যাদি সঞ্চিত হয়ে যে অগভীর সমুদ্রভাগ তৈরি হয়, তাকে মগ্নচড়া বলে।
৬. বানডাকা কী?
উত্তর: বর্ষাকালে বা ভরা কোটালের সময় সমুদ্রের জোয়ারের জল নদীর মোহনা দিয়ে প্রবল বেগে উঁচু হয়ে যে জলপ্রাচীর রূপে প্রবেশ করে, তাকে বানডাকা বলে।
৭. অ্যাপোজি কী?
উত্তর: চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার সময় যখন পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে (প্রায় ৪,০৭,০০০ কিমি) অবস্থান করে, সেই অবস্থানকে অ্যাপোজি বলে।
৮. একটি উষ্ণ স্রোতের নাম লেখো।
উত্তর: উপসাগরীয় স্রোত।
৯. একটি শীতল স্রোতের নাম লেখো।
উত্তর: ল্যাব্রাডর স্রোত।
১০. সমুদ্রস্রোত নিয়ন্ত্রণে কোন বায়ুর প্রভাব সবচেয়ে বেশি?
উত্তর: নিয়ত বায়ুপ্রবাহের।
১১. মুখ্য জোয়ার সৃষ্টির কারণ কী?
উত্তর: চাঁদের আকর্ষণ বল।
১২. গৌণ জোয়ার সৃষ্টির কারণ কী?
উত্তর: পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বল।
১৩. কোন তিথিতে মরা কোটাল হয়?
উত্তর: শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে।
১৪. জোয়ার-ভাটার প্রধান কারণ কী?
উত্তর: চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ শক্তি।
১৫. পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়ার নাম কী?
উত্তর: গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক।
১৬. প্রতিযোগ অবস্থান কী?
উত্তর: যখন পৃথিবী, চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে একই সরলরেখায় অবস্থান করে, সেই অবস্থানকে প্রতিযোগ বলে। এটি পূর্ণিমা তিথিতে হয়।
১৭. সংযোগ অবস্থান কী?
উত্তর: যখন চাঁদ, পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে একই সরলরেখায় অবস্থান করে, সেই অবস্থানকে সংযোগ বলে। এটি অমাবস্যা তিথিতে হয়।
১৮. পেরিজি কী?
উত্তর: চাঁদ পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করার সময় যখন পৃথিবী থেকে সবচেয়ে কাছে (প্রায় ৩,৫৬,০০০ কিমি) অবস্থান করে, সেই অবস্থানকে পেরিজি বলে।
১৯. মগ্নচড়াগুলি কীসের জন্য বিখ্যাত?
উত্তর: বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণের জন্য।
২০. কোন মহাসাগরের জল সবচেয়ে উষ্ণ?
উত্তর: প্রশান্ত মহাসাগরের।
২১. এল নিনো কোন মহাসাগরে দেখা যায়?
উত্তর: প্রশান্ত মহাসাগরে।
২২. জায়ার কী?
উত্তর: মহাসাগরের স্রোতগুলি চক্রাকারে আবর্তিত হয়ে মধ্যবর্তী যে স্রোতবিহীন শান্ত জলাবর্ত তৈরি করে, তাকে জায়ার বলে।
২৩. ‘কালো জল’ কোন স্রোতকে বলা হয়?
উত্তর: কুরোশিও স্রোতকে।
২৪. নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে ঘন কুয়াশা হয় কেন?
উত্তর: উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনের ফলে।
২৫. সমুদ্রের জলে লবণাক্ততার প্রধান কারণ কী?
উত্তর: নদীতে দ্রবীভূত খনিজ লবণ সমুদ্রে মেশার ফলে।
২৬. সমুদ্রতরঙ্গ কী?
উত্তর: বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে সমুদ্রের জলরাশি একই স্থানে থেকে উল্লম্বভাবে ওঠানামা করলে তাকে সমুদ্রতরঙ্গ বলে।
২৭. প্রতিদিন জোয়ার-ভাটা সময়ের ব্যবধান ঘটে কেন?
উত্তর: পৃথিবীর আবর্তন ও চাঁদের পরিক্রমণ গতির পার্থক্যের জন্য।
২৮. কোন নদীতে বছরে দুবার বানডাকা হয়?
উত্তর: আমাজন নদীতে।
২৯. ভারত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোতের নাম লেখো।
উত্তর: মোজাম্বিক স্রোত।
৩০. পৃথিবীর কোন অঞ্চলে জোয়ার-ভাটার প্রাবল্য সবচেয়ে বেশি?
উত্তর: কানাডার ফান্ডি উপসাগরে।৩১. সমুদ্রের জল কোন দিকে বিক্ষিপ্ত হয়?
উত্তর: করিওলিস বলের প্রভাবে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে।
৩২. ল্যাব্রাডর স্রোতের সঙ্গে কী ভেসে আসে?
উত্তর: বিশাল হিমশৈল।
৩৩. квадраচার কী?
উত্তর: চাঁদ ও সূর্য যখন পৃথিবীর সঙ্গে ৯০° বা সমকোণে অবস্থান করে, তখন তাকে квадраচার বলে।
৩৪. সৈকত প্রবাহ কী?
উত্তর: সমুদ্রতরঙ্গ যখন উপকূলের সঙ্গে সমান্তরালে প্রবাহিত হয়, তখন তাকে সৈকত প্রবাহ বা Longshore current বলে।
৩৫. আটলান্টিক মহাসাগরের একটি জায়ারের নাম লেখো।
উত্তর: সারগাসো সাগর বা শৈবাল সাগর।
৩৬. উষ্ণ স্রোত কোন অঞ্চল থেকে কোন অঞ্চলের দিকে যায়?
উত্তর: নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে মেরু অঞ্চলের দিকে।
৩৭. মরা কোটালের সময় জোয়ারের প্রাবল্য কম হয় কেন?
উত্তর: কারণ চাঁদ ও সূর্য পরস্পরের সমকোণে থেকে একে অপরের শক্তিকে প্রতিহত করে।
৩৮. আটলান্টিক মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে প্রবাহিত শীতল স্রোতটির নাম কী?
উত্তর: ক্যানারি স্রোত।
৩৯. কোন দুটি স্রোতের মিলনে দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব উপকূলে মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়েছে?
উত্তর: উষ্ণ ব্রাজিল স্রোত ও শীতল ফকল্যান্ড স্রোত।
৪০. ভরা কোটালের সময় জোয়ারের জল কতটা বেশি ফোলে?
উত্তর: স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২০% বেশি।
৪১. পৃথিবীর গভীরতম সমুদ্রখাত কোনটি?
উত্তর: প্রশান্ত মহাসাগরের মারিয়ানা খাত।
৪২. হামবোল্ট স্রোত কোন উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হয়?
উত্তর: দক্ষিণ আমেরিকার পেরু-চিলি উপকূল দিয়ে।
৪৩. একটি সামুদ্রিক শৈবাল যা শৈবাল সাগরে জন্মায়?
উত্তর: সারগাসাম।
৪৪. জোয়ার-ভাটা বিদ্যুৎ উৎপাদনে কোন দেশ প্রথম?
উত্তর: ফ্রান্স।
৪৫. মরা কোটাল কোন ইংরেজী শব্দ থেকে এসেছে?
উত্তর: Neap tide, যেখানে Neap-এর অর্থ inactive বা নিষ্ক্রিয়।
৪৬. ভারত মহাসাগরের স্রোত কোন বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়?
উত্তর: মৌসুমী বায়ু।
৪৭. একটি দৈনিক জোয়ার-ভাটার বন্দরের নাম লেখো।
উত্তর: লন্ডনের টেমস নদীর বন্দর।
৪৮. কোন বলের প্রভাবে সমুদ্রস্রোত বৃত্তাকারে ঘোরে?
উত্তর: করিওলিস বল।
৪৯. কোন তিথিতে চাঁদকে দেখাই যায় না?
উত্তর: অমাবস্যা তিথিতে।
৫০. উষ্ণ স্রোতের জলরাশি কেমন হয়?
উত্তর: হালকা ও কম ঘনত্বের।
৫১. এল নিনো কথার অর্থ কী?
উত্তর: যিশুপুত্র বা ছোট্ট বালক।
৫২. একটি অর্ধ-দৈনিক জোয়ার-ভাটার বন্দরের উদাহরণ দাও।
উত্তর: ভারতের কান্ডালা বন্দর।
৫৩. কোন স্রোতের প্রভাবে ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের জলবায়ু আরামদায়ক হয়?
উত্তর: উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে।
৫৪. চাঁদের তুলনায় সূর্যের আকর্ষণ শক্তি কম কেন?
উত্তর: কারণ সূর্য চাঁদ অপেক্ষা অনেক বেশি দূরে অবস্থিত।
৫৫. ওয়াশিও স্রোতের অপর নাম কী?
উত্তর: কুরিল স্রোত।
৫৬. কোন মহাসাগরের আকৃতি ‘S’ অক্ষরের মতো?
উত্তর: আটলান্টিক মহাসাগর।
৫৭. ভরা কোটালকে ইংরেজিতে কী বলে?
উত্তর: Spring Tide।
৫৮. আটাকামা মরুভূমি সৃষ্টির জন্য কোন স্রোত দায়ী?
উত্তর: শীতল পেরু বা হামবোল্ট স্রোত।
৫৯. ভারতের কোন নদীতে বানডাকা দেখা যায়?
উত্তর: হুগলি নদীতে।
৬০. একটি প্রায়-বদ্ধ সাগরের উদাহরণ দাও।
উত্তর: ভূমধ্যসাগর।
গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ২ (২৫টি)
১. ভরা কোটাল ও মরা কোটালের পার্থক্য লেখো।
উত্তর: ভরা কোটাল: এটি অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে হয়। এই সময় জোয়ারের প্রাবল্য সবচেয়ে বেশি এবং ভাটার প্রাবল্যও বেশি। মরা কোটাল: এটি শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে হয়। এই সময় জোয়ারের প্রাবল্য সবচেয়ে কম এবং ভাটার প্রাবল্যও কম।
২. শৈবাল সাগর কী? এর নামকরণের কারণ কী?
উত্তর: উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের মাঝে কয়েকটি স্রোতের বলয়ের মধ্যে অবস্থিত স্রোতবিহীন, শান্ত জলাবর্তকে শৈবাল সাগর বলে। এখানে ‘সারগাসাম’ নামক এক প্রকার শৈবাল প্রচুর পরিমাণে জন্মায় বলে একে শৈবাল সাগর বা সারগাসো সি বলা হয়।
৩. মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ারের পার্থক্য কী?
উত্তর: মুখ্য জোয়ার: এটি চাঁদের আকর্ষণে পৃথিবীর যে অংশে হয়। এর প্রাবল্য বেশি। গৌণ জোয়ার: এটি পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের প্রভাবে মুখ্য জোয়ারের প্রতিপাদ স্থানে হয়। এর প্রাবল্য মুখ্য জোয়ারের থেকে কম।
৪. সমুদ্রস্রোত ও সমুদ্রতরঙ্গের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: সমুদ্রস্রোত: এটি সমুদ্রের জলের অনুভূমিক প্রবাহ, যা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে জলকে নিয়ে যায়। সমুদ্রতরঙ্গ: এটি জলের উল্লম্ব ওঠানামা, যেখানে জলকণা একই স্থানে থেকে ওঠানামা করে, স্থান পরিবর্তন করে না।
৫. মগ্নচড়াগুলিতে মৎস্যক্ষেত্র গড়ে ওঠে কেন?
উত্তর: মগ্নচড়াগুলি অগভীর হওয়ায় সূর্যের আলো সহজে পৌঁছায়, ফলে মাছের প্রধান খাদ্য প্ল্যাঙ্কটন প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এছাড়াও উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনে মাছের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। এই কারণে মগ্নচড়াগুলি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মৎস্যক্ষেত্র।
৬. বানডাকা সৃষ্টির দুটি কারণ লেখো।
উত্তর: ১. নদীর মোহনা ফানেল আকৃতির বা চওড়া হলে জোয়ারের জল সহজেই নদীতে প্রবেশ করতে পারে। ২. নদীর মধ্যে চড়া থাকলে বা নদীখাত অগভীর হলে জোয়ারের জল বাধা পেয়ে ফুলে ওঠে এবং জলপ্রাচীর তৈরি করে।
৭. অ্যাপোজি ও পেরিজি জোয়ার কী?
উত্তর: অ্যাপোজি জোয়ার: চাঁদ যখন পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরে (অ্যাপোজি) অবস্থান করে, তখন চাঁদের আকর্ষণ কম হওয়ায় জোয়ারের তীব্রতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম হয়। একে অ্যাপোজি জোয়ার বলে। পেরিজি জোয়ার: চাঁদ যখন পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে (পেরিজি) অবস্থান করে, তখন চাঁদের আকর্ষণ বেশি হওয়ায় জোয়ারের তীব্রতা অনেক বেড়ে যায়। একে পেরিজি জোয়ার বলে।
৮. হিমপ্রাচীর বরাবর আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ হয় কেন?
উত্তর: হিমপ্রাচীর হল উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনস্থল। এই উষ্ণ ও শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ঘন কুয়াশা, ঝড়, বৃষ্টি ইত্যাদি সৃষ্টি করে। তাই এই অঞ্চল জাহাজ চলাচলের জন্য বিপজ্জনক এবং আবহাওয়া দুর্যোগপূর্ণ থাকে।
৯. সিজিগি অবস্থানে ভরা কোটাল হয় কেন?
উত্তর: সিজিগি অবস্থানে (অমাবস্যা ও পূর্ণিমা) চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় থাকে। ফলে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ শক্তি একসঙ্গে কাজ করে। এই প্রবল আকর্ষণের জন্যই এই সময় জোয়ারের জল খুব বেশি ফুলে ওঠে, যা ভরা কোটাল নামে পরিচিত।
১০. শীতল স্রোতের দুটি প্রভাব লেখো।
উত্তর: ১. শীতল স্রোতের প্রভাবে উপকূলবর্তী অঞ্চলের উষ্ণতা কমে যায় এবং জলবায়ু শীতল হয়। ২. শীতল স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকায় বৃষ্টিপাত হয় না, ফলে উপকূলবর্তী অঞ্চলে মরুভূমি সৃষ্টি হতে পারে (যেমন – আটাকামা মরুভূমি)।
১১. সংযোগ ও প্রতিযোগ অবস্থানের পার্থক্য কী?
উত্তর: সংযোগ: এটি অমাবস্যা তিথিতে হয়, যখন চাঁদ পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে থাকে। প্রতিযোগ: এটি পূর্ণিমা তিথিতে হয়, যখন পৃথিবী চাঁদ ও সূর্যের মাঝখানে থাকে। উভয় ক্ষেত্রেই এরা একই সরলরেখায় অবস্থান করে।
১২. জোয়ার-ভাটার দুটি সুবিধা লেখো।
উত্তর: ১. জোয়ারের সময় নদীর নাব্যতা বাড়ে, ফলে বড় বড় জাহাজ সহজেই নদীতে প্রবেশ করে বন্দরে পৌঁছাতে পারে। ২. জোয়ার-ভাটার স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
১৩. জায়ার কীভাবে সৃষ্টি হয়?
উত্তর: আয়ন বায়ু ও পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাসাগরের স্রোতগুলি উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে চক্রাকারে আবর্তিত হয়। এই স্রোত চক্রের মধ্যবর্তী অংশে জলস্তর কিছুটা ফুলে ওঠে এবং একটি স্রোতবিহীন শান্ত অঞ্চল তৈরি হয়। একেই জায়ার বলে।
১৪. উষ্ণ স্রোতের দুটি প্রভাব লেখো।
উত্তর: ১. উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে উপকূলবর্তী অঞ্চলের উষ্ণতা বাড়ে, ফলে শীতল অঞ্চলের বন্দরগুলিও বরফমুক্ত থাকে (যেমন – নরওয়ে)। ২. উষ্ণ স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটায়।
১৫. কোনো স্থানে দুটি মুখ্য জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান ২৪ ঘন্টা ৫২ মিনিট হয় কেন?
উত্তর: পৃথিবী নিজের অক্ষের উপর ২৪ ঘন্টায় একবার আবর্তন করে। এই সময়ে চাঁদও পৃথিবীর চারিদিকে প্রায় ১৩° পথ এগিয়ে যায়। এই অতিরিক্ত ১৩° পথ অতিক্রম করতে পৃথিবীর আরও প্রায় ৫২ মিনিট সময় লাগে। তাই কোনো স্থানে একটি মুখ্য জোয়ারের পর আবার মুখ্য জোয়ার হতে ২৪ ঘন্টা ৫২ মিনিট সময় লাগে।
১৬. উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলের দুটি ভৌগোলিক গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: ১. এই অঞ্চলে ঘন কুয়াশা ও ঝড়ের সৃষ্টি হয়, যা জাহাজ চলাচলের জন্য বিপজ্জনক। ২. এই অঞ্চলে প্ল্যাঙ্কটন প্রচুর পরিমাণে জন্মায়, যা মাছের প্রধান খাদ্য। তাই এখানে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মৎস্যক্ষেত্র গড়ে উঠেছে।
১৭. মরা কোটালের সময় জোয়ার দুর্বল হয় কেন?
উত্তর: মরা কোটালের সময় চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর সঙ্গে সমকোণে (৯০°) অবস্থান করে। ফলে চাঁদ ও সূর্য পরস্পরের আকর্ষণ শক্তিকে প্রতিহত করে। এই কারণে এই সময় জোয়ারের জল খুব সামান্য ফোলে এবং জোয়ার দুর্বল প্রকৃতির হয়।
১৮. সমুদ্রের লবণাক্ততার তারতম্যের দুটি কারণ লেখো।
উত্তর: ১. বাষ্পীভবন: যে অঞ্চলে বাষ্পীভবন বেশি, সেখানে লবণাক্ততা বেশি (যেমন – ক্রান্তীয় অঞ্চল)। ২. মিষ্টি জলের জোগান: নদী যেখানে সমুদ্রে মেশে বা যেখানে বরফগলা জল মেশে, সেখানে লবণাক্ততা কম হয়।
১৯. ভারত মহাসাগরের স্রোত ঋতুভিত্তিক কেন?
উত্তর: ভারত মহাসাগরের উত্তরাংশের স্রোত সম্পূর্ণরূপে মৌসুমী বায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে সমুদ্রস্রোত তার দিক পরিবর্তন করে। এই কারণেই ভারত মহাসাগরের স্রোত ঋতুভিত্তিক।
২০. জোয়ার-ভাটার দুটি অসুবিধা লেখো।
উত্তর: ১. প্রবল জোয়ার বা বানডাকার ফলে উপকূল ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যা হতে পারে এবং ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়। ২. জোয়ারের সময় আসা লবণাক্ত জল কৃষিজমিতে প্রবেশ করে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে।
২১. এল নিনো ও লা নিনার মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: এল নিনো: এটি পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরের একটি উষ্ণ স্রোত। এর প্রভাবে ভারতে খরা ও পেরু উপকূলে বন্যা হয়। লা নিনা: এটি একই অঞ্চলের একটি শীতল স্রোত। এর প্রভাবে ভারতে বন্যা ও পেরু উপকূলে খরা হয়। এরা পরস্পর বিপরীতধর্মী ঘটনা।
২২. করিওলিস বল কীভাবে সমুদ্রস্রোতকে প্রভাবিত করে?
উত্তর: পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে সৃষ্ট করিওলিস বলের প্রভাবে সমুদ্রস্রোত সরাসরি উত্তর-দক্ষিণে প্রবাহিত না হয়ে উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়। এই বলের প্রভাবেই মহাসাগরে বৃত্তাকার স্রোত বা জায়ার সৃষ্টি হয়।
২৩. ‘সারা পৃথিবীর সমস্ত মহাসাগরই পরস্পর যুক্ত’—এর গুরুত্ব কী?
উত্তর: সমস্ত মহাসাগর পরস্পর যুক্ত থাকায় সমুদ্রস্রোতের মাধ্যমে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের মধ্যে তাপের আদান-প্রদান ঘটে। উষ্ণ অঞ্চলের অতিরিক্ত তাপ শীতল অঞ্চলে পরিবাহিত হয়। এর ফলে পৃথিবীর সামগ্রিক তাপের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং কোনো অঞ্চলই অতিরিক্ত উষ্ণ বা শীতল হয়ে পড়ে না।
২৪. অন্তঃস্রোত ও পৃষ্ঠস্রোতের পার্থক্য কী?
উত্তর: পৃষ্ঠস্রোত: এটি সমুদ্রের উপরিভাগ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি মূলত বায়ুপ্রবাহ দ্বারা সৃষ্ট হয়। যেমন – উপসাগরীয় স্রোত। অন্তঃস্রোত: এটি সমুদ্রের নীচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এটি মূলত জলের ঘনত্ব ও লবণাক্ততার পার্থক্যের জন্য সৃষ্টি হয়।
২৫. মগ্নচড়া ও মহীসোপানের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: মহীসোপান: এটি মহাদেশের প্রান্তভাগে অবস্থিত সমুদ্রে নিমজ্জিত অগভীর অংশ। এটি স্থলভাগের সম্প্রসারিত অংশ। মগ্নচড়া: এটি সমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত হিমবাহ দ্বারা সঞ্চিত অগভীর অংশ। এটি মহীসোপানের উপর বা গভীর সমুদ্রেও গঠিত হতে পারে।ঘ) সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৩ (২৫টি)
১. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান তিনটি কারণ আলোচনা করো।
উত্তর: সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান তিনটি কারণ হল:
ক) নিয়ত বায়ুপ্রবাহ: এটি সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ। নিয়ত বায়ু (আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু, মেরু বায়ু) সারা বছর ধরে সমুদ্রের জলের উপর দিয়ে একই দিকে প্রবাহিত হয়ে ঘর্ষণের মাধ্যমে জলরাশিকে তার প্রবাহের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায় এবং স্রোতের সৃষ্টি করে।
খ) সমুদ্রজলের উষ্ণতার পার্থক্য: নিরক্ষীয় অঞ্চলের উষ্ণ ও হালকা জল পৃষ্ঠস্রোত রূপে মেরু অঞ্চলের দিকে এবং মেরু অঞ্চলের শীতল ও ভারী জল অন্তঃস্রোত রূপে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
গ) সমুদ্রজলের লবণাক্ততার পার্থক্য: বেশি লবণাক্ত জল ভারী হওয়ায় নীচে চলে যায় এবং অন্তঃস্রোত রূপে কম লবণাক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয়। আবার, কম লবণাক্ত হালকা জল পৃষ্ঠস্রোত রূপে বেশি লবণাক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয়।
২. ভরা কোটাল ও মরা কোটালের মধ্যে পার্থক্য চিত্রসহ লেখো।
উত্তর: | বৈশিষ্ট্য | ভরা কোটাল (Spring Tide) | মরা কোটাল (Neap Tide) |
|—|—|—|
| **তিথি** | অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে হয়। | শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে হয়। |
| **অবস্থান** | চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় থাকে (সিজিগি)। | চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর সঙ্গে সমকোণে (৯০°) থাকে। |
| **আকর্ষণ** | চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণে জোয়ার অত্যন্ত প্রবল হয়। | চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ শক্তি পরস্পরের বিরুদ্ধে কাজ করায় জোয়ার খুব দুর্বল হয়। |
| **প্রাবল্য** | জোয়ারের জলস্তর স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ওঠে এবং ভাটার জলস্তর অনেক বেশি নামে। | জোয়ারের জলস্তর সামান্যই ওঠে এবং ভাটার জলস্তর সামান্যই নামে। |
(একটি চিত্রে সিজিগি অবস্থান এবং অন্য চিত্রে квадраচার অবস্থান দেখাতে হবে)।
৩. জোয়ার-ভাটার তিনটি সুফল ও তিনটি কুফল লেখো।
উত্তর: সুফল:
১. জোয়ারের সময় নদীর নাব্যতা বাড়ায় বড় জাহাজ বন্দরে যাতায়াত করতে পারে।
২. জোয়ার-ভাটার স্রোতকে কাজে লাগিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যায়।
৩. জোয়ারের সময় নদীর আবর্জনা সমুদ্রে চলে যায়, ফলে নদীর জল পরিষ্কার থাকে।
কুফল:
১. প্রবল জোয়ার বা বানডাকার ফলে উপকূলীয় ও নদী তীরবর্তী অঞ্চলে বন্যা হয়।
২. জোয়ারের লবণাক্ত জল কৃষিজমিতে ঢুকে মাটির উর্বরতা নষ্ট করে।
৩. ভাটার সময় নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় নৌচলাচল ব্যাহত হয়।
৪. জলবায়ুর উপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: জলবায়ুর উপর সমুদ্রস্রোতের প্রভাব অপরিসীম:
ক) উষ্ণতার নিয়ন্ত্রণ: উষ্ণ স্রোত উপকূলবর্তী অঞ্চলের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয়, ফলে শীতল অঞ্চলের বন্দরও বরফমুক্ত থাকে (যেমন – নরওয়ে)। শীতল স্রোত উপকূলের উষ্ণতা কমিয়ে দেয়। এইভাবে সমুদ্রস্রোত পৃথিবীর তাপের ভারসাম্য রক্ষা করে।
খ) বৃষ্টিপাত: উষ্ণ স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু জলীয় বাষ্প সংগ্রহ করে উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটায়। শীতল স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু শুষ্ক হওয়ায় বৃষ্টিপাত ঘটায় না, ফলে মরুভূমি সৃষ্টি হতে পারে (যেমন – আটাকামা)।
গ) দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া: উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে ঘন কুয়াশা, ঝড়, বৃষ্টি ইত্যাদি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার সৃষ্টি হয়, যা নৌচলাচলের জন্য বিপজ্জনক।
৫. মগ্নচড়া সৃষ্টির প্রক্রিয়া ও বাণিজ্যিক গুরুত্ব লেখো।
উত্তর: সৃষ্টির প্রক্রিয়া: শীতল মেরু অঞ্চল থেকে আসা সমুদ্রস্রোতের সঙ্গে বিশাল হিমশৈল ভেসে আসে। উষ্ণ স্রোতের সংস্পর্শে এসে এই হিমশৈলগুলি গলে যায়। হিমশৈলের মধ্যে থাকা নুড়ি, পাথর, বালি, কাঁকর ইত্যাদি সমুদ্রের অগভীর অংশে সঞ্চিত হয়ে যে চড়া তৈরি করে, তাকে মগ্নচড়া বলে। যেমন – উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনে নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক মগ্নচড়া সৃষ্টি হয়েছে।
বাণিজ্যিক গুরুত্ব: মগ্নচড়াগুলি অগভীর হওয়ায় মাছের প্রধান খাদ্য প্ল্যাঙ্কটন প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। তাই এই অঞ্চলগুলি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ মৎস্য আহরণ ক্ষেত্র হিসেবে পরিচিত। এখানে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে মাছ ধরা হয়।
৬. এল নিনো কী? এটি কীভাবে ভারতের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে?
উত্তর: এল নিনো: সাধারণত প্রতি ৩ থেকে ৭ বছর অন্তর প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব উপকূলে (পেরু-ইকুয়েডর) কোনো অজ্ঞাত কারণে দক্ষিণমুখী একটি উষ্ণ স্রোতের আবির্ভাব ঘটে। এই সাময়িক উষ্ণ স্রোতকে এল নিনো বলে।
ভারতের জলবায়ুর উপর প্রভাব: এল নিনোর প্রভাবে পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে নিম্নচাপ এবং ভারত মহাসাগর ও পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরে উচ্চচাপ সৃষ্টি হয়। এই উচ্চচাপের কারণে গ্রীষ্মকালে ভারতে জলীয় বাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর আগমন বাধা পায়। এর ফলে ভারতে বৃষ্টিপাত কমে যায় এবং খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
৭. চিত্রসহ মুখ্য ও গৌণ জোয়ারের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: জোয়ার-ভাটা মূলত দুটি বলের প্রভাবে হয় – চাঁদের আকর্ষণ বল এবং পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বল।
মুখ্য জোয়ার: পৃথিবীর যে অংশ যখন চাঁদের সবচেয়ে কাছে আসে, তখন চাঁদের প্রবল আকর্ষণে সেই স্থানের জলরাশি ফুলে ওঠে এবং জোয়ার সৃষ্টি হয়। এটিই মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার।
গৌণ জোয়ার: পৃথিবীর যে অংশে মুখ্য জোয়ার হয়, তার ঠিক বিপরীত বা প্রতিপাদ স্থানে পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বলের (আবর্তনের ফলে সৃষ্ট বাইরের দিকে ছিটকে যাওয়ার প্রবণতা) প্রভাব চাঁদের আকর্ষণ বলের চেয়ে বেশি হয়। ফলে সেখানেও জলরাশি ফুলে ওঠে এবং জোয়ার হয়। একে গৌণ জোয়ার বা পরোক্ষ জোয়ার বলে।
(একটি চিত্র আঁকতে হবে যেখানে পৃথিবী, চাঁদ, মুখ্য জোয়ার ও গৌণ জোয়ার দেখানো থাকবে)।
৮. বানডাকা কেন হয়? এর দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: কারণ: ভরা কোটালের সময় বা বর্ষাকালে যখন নদীতে জলের পরিমাণ বেশি থাকে, তখন সমুদ্র থেকে আসা জোয়ারের জল নদীর মোহনা দিয়ে প্রবল বেগে প্রবেশ করে। যদি নদীর মোহনা চওড়া এবং নদীখাত সংকীর্ণ ও অগভীর হয়, তবে সেই জল বাধা পেয়ে উঁচু জলপ্রাচীর তৈরি করে নদীর স্রোতের বিপরীতে এগিয়ে যায়। একেই বানডাকা বলে।
বৈশিষ্ট্য: ১. এটি একটি উঁচু, উত্তাল ও সশব্দ জলপ্রাচীর। ২. এর গতিবেগ খুব বেশি হয় এবং এটি ধ্বংসাত্মক প্রকৃতির হতে পারে।
৯. উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান স্রোতগুলির বর্ণনা দাও।
উত্তর: উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের প্রধান স্রোতগুলি একটি চক্রাকারে আবর্তিত হয়:
১. উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত (উষ্ণ): আয়ন বায়ুর প্রভাবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়।
২. উপসাগরীয় স্রোত (উষ্ণ): মেক্সিকো উপসাগর থেকে উৎপন্ন হয়ে ফ্লোরিডা প্রণালী দিয়ে আমেরিকার পূর্ব উপকূল বরাবর উত্তর-পূর্বে প্রবাহিত হয়। এটি পৃথিবীর দ্রুততম স্রোত।
৩. উত্তর আটলান্টিক স্রোত (উষ্ণ): উপসাগরীয় স্রোতেরই প্রসারিত অংশ, যা পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে ইউরোপের পশ্চিম উপকূলের দিকে যায়।
৪. ল্যাব্রাডর স্রোত (শীতল): সুমেরু মহাসাগর থেকে গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল দিয়ে দক্ষিণ দিকে আসে।
৫. ক্যানারি স্রোত (শীতল): উত্তর আটলান্টিক স্রোতের একটি শাখা যা আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল দিয়ে দক্ষিণে প্রবাহিত হয়।
১০. শৈবাল সাগর সৃষ্টির কারণ কী? এর বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর: কারণ: উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের উপসাগরীয় স্রোত, উত্তর আটলান্টিক স্রোত, ক্যানারি স্রোত এবং উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত ঘড়ির কাঁটার দিকে চক্রাকারে আবর্তিত হয়। এই স্রোত চক্রের মাঝে একটি বিশাল শান্ত জলাবর্ত বা জায়ার সৃষ্টি হয়েছে। এখানে কোনো স্রোত না থাকায় প্রচুর পরিমাণে ‘সারগাসাম’ নামক শৈবাল জন্মায়।
বৈশিষ্ট্য: ১. এটি একটি স্রোতবিহীন, শান্ত সমুদ্রাঞ্চল। ২. এখানকার জলে লবণাক্ততা ও উষ্ণতা উভয়ই বেশি। ৩. এটি শৈবালে পরিপূর্ণ হওয়ায় জাহাজ চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে।
১১. সমুদ্রের জলের উষ্ণতার তারতম্যের কারণগুলি কী কী?
উত্তর: সমুদ্রের জলের উষ্ণতার তারতম্যের প্রধান কারণগুলি হল:
ক) অক্ষাংশ: নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ায় জল বেশি উত্তপ্ত হয়। মেরু অঞ্চলে তির্যক রশ্মির কারণে উষ্ণতা কম থাকে।
খ) স্থলভাগের নৈকট্য: স্থলভাগ দ্বারা পরিবেষ্টিত সমুদ্রের (যেমন – ভূমধ্যসাগর) উষ্ণতা খোলা সমুদ্রের চেয়ে বেশি হয়।
গ) সমুদ্রস্রোত: উষ্ণ স্রোত জলের উষ্ণতা বাড়ায় এবং শীতল স্রোত উষ্ণতা কমায়।
ঘ) গভীরতা: সমুদ্রের উপরিভাগের জল সূর্যকিরণে উত্তপ্ত হয়, কিন্তু গভীরতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা কমতে থাকে।
১২. জোয়ার-ভাটার সময়সীমা ব্যাখ্যা করো।
উত্তর: পৃথিবীর কোনো স্থানে একটি মুখ্য জোয়ার ও পরবর্তী গৌণ জোয়ারের মধ্যে সময়ের ব্যবধান হল ১২ ঘন্টা ২৬ মিনিট। আবার, একটি গৌণ জোয়ার ও পরবর্তী মুখ্য জোয়ারের মধ্যেও সময়ের ব্যবধান ১২ ঘন্টা ২৬ মিনিট। সুতরাং, কোনো স্থানে একটি মুখ্য জোয়ার হওয়ার ২৪ ঘন্টা ৫২ মিনিট পর আবার মুখ্য জোয়ার হয়। প্রতিটি জোয়ারের প্রায় ৬ ঘন্টা ১৩ মিনিট পর ভাটা আসে। এই সময়ের পার্থক্যের মূল কারণ হল পৃথিবীর আবর্তন গতির সঙ্গে চাঁদের পরিক্রমণ গতির পার্থক্য।
১৩. মানব জীবনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর: মানব জীবনে সমুদ্রস্রোতের প্রভাব বহুমুখী:
১. জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ: সমুদ্রস্রোত উপকূলবর্তী অঞ্চলের জলবায়ুকে নিয়ন্ত্রণ করে। উষ্ণ স্রোত জলবায়ুকে উষ্ণ ও আর্দ্র এবং শীতল স্রোত জলবায়ুকে শীতল ও শুষ্ক করে তোলে।
২. মৎস্য আহরণ: উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে মগ্নচড়া সৃষ্টি হওয়ায় বিশ্বের শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক মৎস্যক্ষেত্রগুলি গড়ে উঠেছে, যা বহু মানুষের জীবিকা নির্বাহ করে।
৩. পরিবহন: সমুদ্রস্রোতের অনুকূলে জাহাজ চালালে সময় ও জ্বালানি উভয়ই বাঁচে। তবে হিমশৈল বা কুয়াশার কারণে নৌচলাচল বিপজ্জনকও হতে পারে।
১৪. জোয়ার ও ভাটার মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: | বৈশিষ্ট্য | জোয়ার | ভাটা | |—|—|—| | **সংজ্ঞা** | চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণে সমুদ্রের জলস্তর নিয়মিতভাবে ফুলে ওঠাকে জোয়ার বলে। | ফুলে ওঠা জলস্তর নেমে যাওয়াকে ভাটা বলে। | | **কারণ** | চাঁদের আকর্ষণ ও পৃথিবীর কেন্দ্রাতিগ বল প্রধান কারণ। | মূলত পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির কারণে হয়। | | **সময়** | প্রতিটি মুখ্য বা গৌণ জোয়ারের প্রায় ৬ ঘন্টা ১৩ মিনিট পর ভাটা আসে। | ভাটার প্রায় ৬ ঘন্টা ১৩ মিনিট পর জোয়ার আসে। | | **প্রভাব** | নদীর নাব্যতা বাড়ায়, বিদ্যুৎ উৎপাদনে সাহায্য করে। | নদীর নাব্যতা কমায়, নৌচলাচল ব্যাহত করে। |
১৫. অ্যাপোজি ও পেরিজি অবস্থানের মধ্যে পার্থক্য কী?
উত্তর: অ্যাপোজি: এটি পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরতম অবস্থান (প্রায় ৪,০৭,০০০ কিমি)। এই সময় চাঁদের আকর্ষণ শক্তি কম হওয়ায় জোয়ারের প্রাবল্য স্বাভাবিকের চেয়ে কমে যায়।
পেরিজি: এটি পৃথিবী থেকে চাঁদের নিকটতম অবস্থান (প্রায় ৩,৫৬,০০০ কিমি)। এই সময় চাঁদের আকর্ষণ শক্তি বেশি হওয়ায় জোয়ারের প্রাবল্য স্বাভাবিকের চেয়ে প্রায় ২০% বেড়ে যায়।
১৬. হিমশৈল কী? এটি নৌচলাচলে কীভাবে বাধা সৃষ্টি করে?
উত্তর: হিমশৈল: মেরু অঞ্চল থেকে ভেসে আসা সমুদ্রের জলে ভাসমান বিশাল বরফের স্তূপকে হিমশৈল বলে। এর মাত্র ১/৯ অংশ জলের উপরে ভাসে এবং ৮/৯ অংশ জলের নীচে থাকে।
বাধা সৃষ্টি: হিমশৈলের বেশিরভাগ অংশ জলের নীচে থাকায় দূর থেকে এর প্রকৃত আকার বোঝা যায় না। ফলে জাহাজগুলি এর সঙ্গে ধাক্কা লেগে মারাত্মক দুর্ঘটনার শিকার হতে পারে। টাইটানিক জাহাজ হিমশৈলের সঙ্গে ধাক্কা লেগেই ডুবে গিয়েছিল।
১৭. মগ্নচড়া ও মহীঢালের মধ্যে পার্থক্য লেখো।
উত্তর: মগ্নচড়া: এটি সমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত একটি অগভীর অংশ যা সঞ্চয়কার্যের ফলে গঠিত। এখানে মৎস্য চাষ হয়।
মহীঢাল: এটি মহীসোপানের শেষ সীমা থেকে শুরু হয়ে গভীর সমুদ্রের সমভূমি পর্যন্ত বিস্তৃত অত্যন্ত খাড়া ঢালযুক্ত অংশ। এখানে সঞ্চয় প্রায় হয় না।
১৮. ভরা কোটাল মরা কোটালের চেয়ে বেশি শক্তিশালী কেন?
উত্তর: ভরা কোটালের সময় (অমাবস্যা ও পূর্ণিমা) চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় অবস্থান করে। ফলে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ শক্তি একই দিকে বা পরস্পর বিপরীতে প্রবলভাবে কাজ করে। কিন্তু মরা কোটালের সময় (অষ্টমী তিথি) চাঁদ ও সূর্য পরস্পরের সমকোণে থাকায় তাদের আকর্ষণ শক্তি একে অপরকে প্রতিহত করে। এই কারণেই ভরা কোটাল মরা কোটালের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী।
১৯. প্রশান্ত মহাসাগরের প্রধান স্রোতগুলির নাম লেখো।
উত্তর: উষ্ণ স্রোত: উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত, দক্ষিণ নিরক্ষীয় স্রোত, কুরোশিও স্রোত, পূর্ব অস্ট্রেলীয় স্রোত, আলাস্কা স্রোত।
শীতল স্রোত: ওয়াশিও (কুরিল) স্রোত, ক্যালিফোর্নিয়া স্রোত, পেরু (হামবোল্ট) স্রোত, কুমেরু স্রোত।
২০. সমুদ্রজলের তিনটি গতি কী কী?
উত্তর: সমুদ্রজলের গতি প্রধানত তিন প্রকার:
ক) সমুদ্রতরঙ্গ: বায়ুপ্রবাহের কারণে জলের উল্লম্ব ওঠানামা।
খ) সমুদ্রস্রোত: নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, জলের উষ্ণতা ও লবণাক্ততার পার্থক্যের কারণে জলের অনুভূমিক প্রবাহ।
গ) জোয়ার-ভাটা: চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণে জলের নিয়মিত উল্লম্ব স্ফীতি ও পতন।
২১. ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে ভারত মহাসাগরের স্রোত কীভাবে দিক পরিবর্তন করে?
উত্তর: গ্রীষ্মকাল: গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ভারত মহাসাগরের স্রোত দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয় (ঘড়ির কাঁটার দিকে)।
শীতকাল: শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে স্রোতের দিক সম্পূর্ণ উল্টে যায় এবং এটি উত্তর-পূর্ব থেকে দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয় (ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে)।
২২. পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানের দৈনিক জোয়ার-ভাটার সময়ের পার্থক্য হয় কেন?
উত্তর: পৃথিবীর আবর্তন এবং চাঁদের পরিক্রমণ গতির মধ্যে পার্থক্য থাকার কারণে পৃথিবীর কোনো নির্দিষ্ট স্থান ২৪ ঘন্টায় চাঁদের সামনে একবার আসে না, বরং ২৪ ঘন্টা ৫২ মিনিট সময় নেয়। এই কারণেই প্রতিদিন জোয়ার-ভাটার সময় প্রায় ৫২ মিনিট করে পিছিয়ে যায়। এছাড়া স্থানীয় ভূমিরূপ, উপকূলের আকৃতি এবং সমুদ্রের গভীরতার কারণেও বিভিন্ন স্থানে জোয়ার-ভাটার সময়ের পার্থক্য হয়।
২৩. শীতল ক্যানারি স্রোত কীভাবে আফ্রিকার জলবায়ুকে প্রভাবিত করে?
উত্তর: শীতল ক্যানারি স্রোত আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিম উপকূল বরাবর প্রবাহিত হয়।
১. এই শীতল স্রোতের প্রভাবে উপকূলের উষ্ণতা কমে যায়।
২. এই স্রোতের উপর দিয়ে প্রবাহিত বায়ু শুষ্ক হওয়ায় উপকূলে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না।
৩. বৃষ্টিপাতের অভাবে এই অঞ্চলে বিশ্বের বৃহত্তম উষ্ণ মরুভূমি সাহারার সৃষ্টি হয়েছে।
২৪. নিউফাউন্ডল্যান্ডকে ‘পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মৎস্যক্ষেত্র’ বলা হয় কেন?
উত্তর: নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত এবং শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত মিলিত হয়েছে। এই মিলনের ফলে:
১. প্ল্যাঙ্কটন নামক মাছের প্রধান খাদ্য প্রচুর পরিমাণে জন্মায়।
২. শীতল স্রোতের সঙ্গে প্রচুর মাছ ভেসে আসে।
৩. অগভীর মগ্নচড়া (গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক) মাছের বসবাসের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করে।
এই সমস্ত অনুকূল পরিবেশের জন্য নিউফাউন্ডল্যান্ড পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মৎস্যক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
২৫. সমুদ্রের জলে লবণাক্ততার কারণ কী?
উত্তর: সমুদ্রের জলে লবণাক্ততার প্রধান কারণ হল স্থলভাগ থেকে নদীর মাধ্যমে খনিজ লবণের поступন। নদী যখন স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন শিলাস্তর থেকে বিভিন্ন লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড ইত্যাদি) দ্রবীভূত করে সমুদ্রে নিয়ে আসে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলার ফলে এবং সমুদ্রের জল বাষ্পীভূত হলেও লবণ থেকে যাওয়ায় সমুদ্রের জলে লবণাক্ততা সৃষ্টি হয়েছে।
ঙ) রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৫ (১০টি)
১. জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির কারণ চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।
উত্তর:
জোয়ার-ভাটা সৃষ্টির প্রধান কারণ দুটি – ১) মহাকর্ষীয় বল (চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ) এবং ২) কেন্দ্রাতিগ বল (পৃথিবীর আবর্তন জনিত)।
ক) চাঁদের আকর্ষণ ও মুখ্য জোয়ার: পৃথিবী ও চাঁদের মধ্যে দূরত্বের কারণে পৃথিবীর যে অংশ চাঁদের সামনে থাকে, সেখানে চাঁদের আকর্ষণ বল সবচেয়ে বেশি হয়। এই প্রবল আকর্ষণে সেখানকার জলরাশি ফুলে ওঠে এবং জোয়ারের সৃষ্টি হয়। একে মুখ্য জোয়ার বা প্রত্যক্ষ জোয়ার বলে।
খ) কেন্দ্রাতিগ বল ও গৌণ জোয়ার: পৃথিবীর আবর্তন গতির জন্য একটি কেন্দ্রবিমুখী বা কেন্দ্রাতিগ বলের সৃষ্টি হয়, যা বাইরের দিকে ক্রিয়া করে। মুখ্য জোয়ারের ঠিক বিপরীত দিকে বা প্রতিপাদ স্থানে চাঁদের আকর্ষণ বলের তুলনায় এই কেন্দ্রাতিগ বল বেশি কার্যকরী হয়। এর ফলে সেখানকার জলরাশিও ফুলে ওঠে এবং জোয়ার হয়। একে গৌণ জোয়ার বা পরোক্ষ জোয়ার বলে।
গ) সূর্যের আকর্ষণ: সূর্য চাঁদ থেকে অনেক বড় হলেও অনেক দূরে থাকায় এর আকর্ষণ শক্তি চাঁদের প্রায় অর্ধেক। সূর্যের আকর্ষণও জোয়ার-ভাটা সৃষ্টিতে সাহায্য করে।
ঘ) জোয়ার ও ভাটার সৃষ্টি: মুখ্য ও গৌণ জোয়ারের স্থান থেকে সমকোণে অবস্থিত স্থানগুলি থেকে জল সরে গিয়ে জোয়ারের স্থানে জমা হয়। তাই এই স্থানগুলিতে জলস্তর নেমে গিয়ে ভাটার সৃষ্টি হয়।
(একটি চিত্র আঁকতে হবে যেখানে পৃথিবী, চাঁদ, মুখ্য জোয়ার, গৌণ জোয়ার এবং ভাটার অবস্থান স্পষ্টভাবে দেখানো থাকবে)।
২. সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির কারণগুলি বিস্তারিতভাবে আলোচনা করো।
উত্তর:
সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির একাধিক কারণ রয়েছে, যেগুলিকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়:
১. বায়ুপ্রবাহ: নিয়ত বায়ুপ্রবাহ (আয়ন, পশ্চিমা ও মেরু বায়ু) সমুদ্রস্রোত সৃষ্টির প্রধান কারণ। এই বায়ুপ্রবাহ সমুদ্রের জলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় ঘর্ষণ শক্তির মাধ্যমে জলরাশিকে তার প্রবাহের দিকে চালিত করে স্রোতের জন্ম দেয়। যেমন – আয়ন বায়ুর প্রভাবে নিরক্ষীয় স্রোত সৃষ্টি হয়।
২. সমুদ্রজলের উষ্ণতা ও ঘনত্বের পার্থক্য: নিরক্ষীয় অঞ্চলের জল উষ্ণ হওয়ায় হালকা ও কম ঘনত্বের হয়। এই হালকা জল পৃষ্ঠস্রোত রূপে শীতল মেরু অঞ্চলের দিকে যায়। অন্যদিকে, মেরু অঞ্চলের জল শীতল হওয়ায় ভারী ও বেশি ঘনত্বের হয়। এই ভারী জল অন্তঃস্রোত রূপে নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।
৩. সমুদ্রজলের লবণাক্ততার পার্থক্য: বেশি লবণাক্ত জল ভারী হওয়ায় অন্তঃস্রোত রূপে কম লবণাক্ত জলের দিকে এবং কম লবণাক্ত হালকা জল পৃষ্ঠস্রোত রূপে বেশি লবণাক্ত জলের দিকে প্রবাহিত হয়।
৪. পৃথিবীর আবর্তন ও করিওলিস বল: পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে সৃষ্ট করিওলিস বলের প্রভাবে সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে গিয়ে বৃত্তাকার স্রোত বা জায়ার সৃষ্টি করে।
৫. অন্যান্য কারণ: এছাড়া উপকূলের আকৃতি, ঋতু পরিবর্তন এবং বরফগলা জলের জোগানও সমুদ্রস্রোতকে প্রভাবিত করে।
৩. ভরা কোটাল ও মরা কোটালের সৃষ্টি প্রক্রিয়া উপযুক্ত চিত্রসহ বর্ণনা করো।
উত্তর:
জোয়ারের তীব্রতা চাঁদ ও সূর্যের আপেক্ষিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে। এর ভিত্তিতে ভরা কোটাল ও মরা কোটাল সৃষ্টি হয়।
ক) ভরা কোটাল (Spring Tide):
অবস্থান ও সময়: অমাবস্যা ও পূর্ণিমা তিথিতে যখন চাঁদ, সূর্য ও পৃথিবী একই সরলরেখায় (সিজিগি অবস্থান) থাকে, তখন ভরা কোটাল হয়।
সৃষ্টির প্রক্রিয়া: এই অবস্থানে চাঁদ ও সূর্যের মিলিত আকর্ষণ শক্তি অত্যন্ত প্রবলভাবে কাজ করে। অমাবস্যা তিথিতে চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর একই পাশে থেকে এবং পূর্ণিমা তিথিতে পৃথিবীর দুই পাশে থেকে সম্মিলিতভাবে জলরাশিকে আকর্ষণ করে। এই প্রবল আকর্ষণের ফলে জোয়ারের জল স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি ফুলে ওঠে এবং ভাটার জল অনেক বেশি নেমে যায়। এই প্রবল জোয়ারকে ভরা কোটাল বলে।
খ) মরা কোটাল (Neap Tide):
অবস্থান ও সময়: শুক্ল ও কৃষ্ণপক্ষের অষ্টমী তিথিতে যখন চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীর সঙ্গে সমকোণে (৯০°) অবস্থান করে, তখন মরা কোটাল হয়।
সৃষ্টির প্রক্রিয়া: এই অবস্থানে চাঁদ ও সূর্যের আকর্ষণ শক্তি একে অপরের বিরুদ্ধে কাজ করে, অর্থাৎ একে অপরের শক্তিকে প্রতিহত করে। ফলে জোয়ার সৃষ্টিকারী বল অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়ে। এর ফলে জোয়ারের জল খুব সামান্যই ফোলে এবং ভাটার জলও খুব সামান্যই নামে। এই দুর্বল জোয়ারকে মরা কোটাল বলে।
(ভরা কোটালের জন্য সিজিগি অবস্থানের দুটি চিত্র এবং মরা কোটালের জন্য квадраচার অবস্থানের চিত্র আঁকতে হবে)।
৪. মানব জীবনে জোয়ার-ভাটার প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর:
মানব জীবনে জোয়ার-ভাটার প্রভাব বহুমুখী, এর সুফল ও কুফল উভয়ই রয়েছে।
সুফল (Advantages):
১. নৌচলাচল ও বন্দর: জোয়ারের সময় নদীর নাব্যতা (জলের গভীরতা) বেড়ে যায়, ফলে সমুদ্রগামী বড় বড় জাহাজ সহজেই নদীর মোহনা দিয়ে ভেতরের বন্দরে প্রবেশ করতে পারে। যেমন – কলকাতা ও লন্ডন বন্দর জোয়ার-ভাটার উপর নির্ভরশীল।
২. বিদ্যুৎ উৎপাদন: জোয়ার-ভাটার প্রবল স্রোতকে কাজে লাগিয়ে টারবাইন ঘুরিয়ে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ (জোয়ার-ভাটা বিদ্যুৎ) উৎপাদন করা হয়। যেমন – ফ্রান্সের লা র্যান্স বিদ্যুৎকেন্দ্র।
৩. নদীখাত পলি মুক্ত রাখা: জোয়ারের জল নদীর আবর্জনা ও পলিকে সমুদ্রে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, ফলে নদীর মোহনা পলি জমে ভরাট হয়ে যায় না এবং নদীখাত গভীর থাকে।
৪. মৎস্য শিকার: জোয়ারের সময় প্রচুর মাছ নদীতে প্রবেশ করে, যা মৎস্যজীবীদের মাছ ধরতে সুবিধা করে দেয়।
কুফল (Disadvantages):
১. বন্যা ও ক্ষয়ক্ষতি: প্রবল ভরা কোটাল বা বানডাকার ফলে উপকূলবর্তী ও নদী তীরবর্তী নিচু এলাকা প্লাবিত হয়ে ঘরবাড়ি, কৃষিজমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
২. লবণাক্ততা বৃদ্ধি: জোয়ারের লবণাক্ত জল কৃষিজমিতে ও মিষ্টি জলের জলাশয়ে প্রবেশ করে মাটি ও জলের উর্বরতা নষ্ট করে।
৩. নৌচলাচলে বাধা: ভাটার সময় নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় জাহাজ চলাচল ব্যাহত হয় এবং অনেক সময় জাহাজ চড়ায় আটকে যায়।
৫. উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতগুলির একটি বিবরণ দাও।
উত্তর:
উত্তর আটলান্টিক মহাসাগরের সমুদ্রস্রোতগুলি একটি সুনির্দিষ্ট চক্র বা জায়ার গঠন করে, যা ঘড়ির কাঁটার দিকে আবর্তিত হয়। প্রধান স্রোতগুলি হল:
১. উত্তর নিরক্ষীয় স্রোত: এটি একটি উষ্ণ স্রোত যা আয়ন বায়ুর প্রভাবে পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ দ্বীপপুঞ্জের কাছে পৌঁছায়।
২. উপসাগরীয় স্রোত: এটি পৃথিবীর অন্যতম প্রধান উষ্ণ ও দ্রুতগামী স্রোত। উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের একটি শাখা মেক্সিকো উপসাগর থেকে ফ্লোরিডা প্রণালী দিয়ে আমেরিকার পূর্ব উপকূল বরাবর উত্তর-পূর্বে প্রবাহিত হয়।
৩. উত্তর আটলান্টিক স্রোত: উপসাগরীয় স্রোতটিই পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে উত্তর আটলান্টিক স্রোত নামে উত্তর-পূর্ব দিকে প্রবাহিত হয়ে ইউরোপের পশ্চিম উপকূলে পৌঁছায়। এর প্রভাবে পশ্চিম ইউরোপের জলবায়ু উষ্ণ থাকে।
৪. ক্যানারি স্রোত: এটি একটি শীতল স্রোত। উত্তর আটলান্টিক স্রোতের একটি শাখা দক্ষিণ দিকে বেঁকে স্পেনের উপকূল ও আফ্রিকার পশ্চিম উপকূল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে উত্তর নিরক্ষীয় স্রোতের সঙ্গে মেশে।
৫. ল্যাব্রাডর স্রোত: এটি একটি শীতল স্রোত যা সুমেরু মহাসাগর থেকে ব্যাফিন উপসাগর হয়ে গ্রিনল্যান্ডের পশ্চিম উপকূল দিয়ে দক্ষিণ দিকে আসে এবং নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোতের সঙ্গে মিলিত হয়। এই স্রোতগুলি মিলিত হয়েই শৈবাল সাগর সৃষ্টি করেছে।
৬. জলবায়ুর উপর এল নিনো ও লা নিনার প্রভাব আলোচনা করো।
উত্তর:
এল নিনো ও লা নিনা হল প্রশান্ত মহাসাগরের দুটি বিপরীতধর্মী ঘটনা, যা বিশ্বের জলবায়ুকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে।
এল নিনোর প্রভাব (El Niño’s Effects):
১. পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে: পেরু, ইকুয়েডর ও চিলির উপকূলে উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত ও আর্দ্র হয়ে প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যার সৃষ্টি করে। সামুদ্রিক মাছের মৃত্যু হওয়ায় মৎস্য শিল্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২. পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে: অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় উচ্চচাপ সৃষ্টি হওয়ায় বায় প্রবাহের দিক উল্টে যায়। এর ফলে এই অঞ্চলগুলিতে شدید খরা হয় এবং দাবানলের প্রকোপ বাড়ে।
৩. ভারতীয় উপমহাদেশে: ভারত মহাসাগরে উচ্চচাপ সৃষ্টি হওয়ায় দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু দুর্বল হয়ে পড়ে। ফলে ভারতে বৃষ্টিপাত কমে যায় এবং খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
লা নিনার প্রভাব (La Niña’s Effects):
লা নিনার প্রভাব এল নিনোর ঠিক বিপরীত।
১. পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে: পেরু-চিলি উপকূলে শীতল স্রোতের প্রভাবে বায়ুমণ্ডল শুষ্ক ও শীতল হয় এবং খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়।
২. পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে: অস্ট্রেলিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় নিম্নচাপ শক্তিশালী হওয়ায় প্রবল বৃষ্টিপাত ও বন্যা হয়।
৩. ভারতীয় উপমহাদেশে: মৌসুমী বায়ু শক্তিশালী হওয়ায় ভারতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত ও বন্যা হয়।
৭. নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল এবং জাপান উপকূলে সারা বছর কুয়াশাচ্ছন্ন ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া থাকে কেন? এই অঞ্চলগুলির অর্থনৈতিক গুরুত্ব কী?
উত্তর:
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণ:
১. নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূল (উত্তর আমেরিকা): এই অঞ্চলে উত্তর দিক থেকে আগত শীতল ল্যাব্রাডর স্রোত এবং দক্ষিণ দিক থেকে আগত উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত মিলিত হয়। এই উষ্ণ ও শীতল বায়ুরাশির মিলনের ফলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে ঘন কুয়াশা, ঝড় ও বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে।
২. জাপান উপকূল (এশিয়া): এই অঞ্চলে উত্তর দিক থেকে আগত শীতল ওয়াশিও বা কুরিল স্রোত এবং দক্ষিণ দিক থেকে আগত উষ্ণ কুরোশিও স্রোত মিলিত হয়। নিউফাউন্ডল্যান্ডের মতোই এখানেও দুটি বিপরীতধর্মী স্রোতের মিলনে ঘন কুয়াশা ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি হয়।
অর্থনৈতিক গুরুত্ব:
এই দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সত্ত্বেও অঞ্চল দুটি অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
১. মৎস্যক্ষেত্র: উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থল হওয়ায় এখানে মাছের প্রধান খাদ্য প্ল্যাঙ্কটন প্রচুর পরিমাণে জন্মায়। এর ফলে অঞ্চল দুটি (বিশেষ করে নিউফাউন্ডল্যান্ডের গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক এবং জাপানের মৎস্যক্ষেত্র) পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বাণিজ্যিক মৎস্য আহরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে।
২. বন্দর: উষ্ণ স্রোতের প্রভাবে এই অঞ্চলের বন্দরগুলি শীতকালেও বরফমুক্ত থাকে, যা সারাবছর ধরে বাণিজ্য ও পরিবহণে সাহায্য করে।
৮. সমুদ্রের জল কেন লবণাক্ত? সমুদ্রের জলের লবণাক্ততার তারতম্যের কারণগুলি আলোচনা করো।
উত্তর:
লবণাক্ততার কারণ: সমুদ্রের জল লবণাক্ত হওয়ার প্রধান কারণ হল স্থলভাগ থেকে নদীর মাধ্যমে খনিজ লবণের নিরন্তর поступন। নদী যখন স্থলভাগের উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়, তখন শিলাস্তর থেকে বিভিন্ন লবণ (সোডিয়াম ক্লোরাইড, ম্যাগনেসিয়াম ক্লোরাইড, ক্যালসিয়াম সালফেট ইত্যাদি) দ্রবীভূত করে সমুদ্রে নিয়ে আসে। লক্ষ লক্ষ বছর ধরে এই প্রক্রিয়া চলার ফলে এবং সমুদ্রের জল বাষ্পীভূত হলেও লবণ থেকে যাওয়ায় সমুদ্রের জল লবণাক্ত হয়েছে।
লবণাক্ততার তারতম্যের কারণ:
১. বাষ্পীভবন ও অধঃক্ষেপণ: ক্রান্তীয় অঞ্চলের মতো উষ্ণ ও শুষ্ক অঞ্চলে বাষ্পীভবন বেশি এবং বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় লবণাক্ততা বেশি। অন্যদিকে, নিরক্ষীয় ও মেরু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত বা বরফগলা জলের জোগান বেশি হওয়ায় লবণাক্ততা কম।
২. মিষ্টি জলের জোগান: যে সমস্ত সমুদ্রের সঙ্গে বড় বড় নদী (যেমন – গঙ্গা, আমাজন) এসে মেশে, সেখানে মিষ্টি জলের জোগানের কারণে লবণাক্ততা কম হয়।
৩. সমুদ্রস্রোত: সমুদ্রস্রোত বেশি লবণাক্ত জলকে কম লবণাক্ত জলের দিকে বা কম লবণাক্ত জলকে বেশি লবণাক্ত জলের দিকে নিয়ে গিয়ে লবণাক্ততার ভারসাম্য রক্ষা করে।
৪. প্রায়-বদ্ধ সাগর: প্রায়-বদ্ধ সাগরগুলিতে (যেমন – লোহিত সাগর, ভূমধ্যসাগর) বাষ্পীভবন বেশি এবং জল সঞ্চালন কম হওয়ায় লবণাক্ততা খুব বেশি হয়।
৯. জোয়ার-ভাটা বিদ্যুৎ কীভাবে উৎপাদিত হয়? এর সুবিধা ও অসুবিধাগুলি কী কী?
উত্তর:
উৎপাদন প্রক্রিয়া: জোয়ার-ভাটা বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদীর মোহনা বা খাড়িতে বাঁধ নির্মাণ করা হয়।
১. জোয়ারের সময় যখন জলস্তর ফুলে ওঠে, তখন সেই জলকে বাঁধের গেট দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করানো হয় এবং একটি জলাধারে আটকে রাখা হয়।
২. ভাটার সময় যখন সমুদ্রের জলস্তর নেমে যায়, তখন জলাধারে আটকে রাখা জলকে নিয়ন্ত্রিতভাবে বাঁধের উপর বসানো টারবাইনের উপর দিয়ে ছাড়া হয়।
৩. জলের প্রবল স্রোতে টারবাইন ঘুরতে থাকে এবং তার সঙ্গে যুক্ত জেনারেটরের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয়। ফ্রান্সের লা র্যান্স এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সিহওয়া লেক বিদ্যুৎকেন্দ্র এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ।
সুবিধা:
১. এটি একটি অচিরাচরিত ও নবীকরণযোগ্য শক্তি, তাই এর জোগান অফুরন্ত।
২. এই পদ্ধতিতে কোনো দূষণ হয় না, তাই এটি পরিবেশবান্ধব।
৩. এর উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম।
অসুবিধা:
১. শুধুমাত্র উপকূলের নির্দিষ্ট কিছু স্থানেই (যেখানে জোয়ার-ভাটার পার্থক্য বেশি) এই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা যায়।
২. বাঁধ নির্মাণের ফলে নদীর বাস্তুতন্ত্র ও মাছের স্বাভাবিক চলাচল ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
৩. প্রাথমিক পর্যায়ে কেন্দ্র স্থাপনের খরচ অনেক বেশি।
১০. পৃথিবীর প্রধান প্রধান মগ্নচড়াগুলির উৎপত্তি ও অবস্থান বর্ণনা করো।
উত্তর:
মগ্নচড়া হল সমুদ্রের মধ্যে অবস্থিত অগভীর অংশ, যা মূলত উষ্ণ ও শীতল স্রোতের মিলনস্থলে হিমশৈল থেকে ঝরে পড়া নুড়ি, বালি, কাঁকর ইত্যাদি জমে তৈরি হয়। এগুলি বিশ্বের প্রধান মৎস্য আহরণ কেন্দ্র। প্রধান মগ্নচড়াগুলি হল:
১. গ্র্যান্ড ব্যাঙ্ক: এটি পৃথিবীর বৃহত্তম মগ্নচড়া। উত্তর আমেরিকার নিউফাউন্ডল্যান্ড উপকূলের কাছে আটলান্টিক মহাসাগরে উষ্ণ উপসাগরীয় স্রোত ও শীতল ল্যাব্রাডর স্রোতের মিলনস্থলে এটি অবস্থিত।
২. জর্জেস ব্যাঙ্ক: এটিও উত্তর আমেরিকার পূর্ব উপকূলে, গ্র্যান্ড ব্যাঙ্কের দক্ষিণে অবস্থিত।
৩. ডগার্স ব্যাঙ্ক: এটি ইউরোপের ব্রিটিশ দ্বীপপুঞ্জের কাছে উত্তর সাগরে অবস্থিত। উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে এটি গড়ে উঠেছে।
৪. জাপানের মগ্নচড়া: এশিয়ার জাপান উপকূলের কাছে উষ্ণ কুরোশিও স্রোত এবং শীতল ওয়াশিও স্রোতের মিলনস্থলে এই মগ্নচড়াগুলি গড়ে উঠেছে।
৫. আর্জেন্টিনার মগ্নচড়া: দক্ষিণ আমেরিকার আর্জেন্টিনা উপকূলের কাছে উষ্ণ ব্রাজিল স্রোত ও শীতল ফকল্যান্ড স্রোতের মিলনস্থলে এই মগ্নচড়াগুলি অবস্থিত।
এই সমস্ত মগ্নচড়াগুলি অগভীর এবং প্ল্যাঙ্কটনে পরিপূর্ণ হওয়ায় বাণিজ্যিক মৎস্য চাষের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বারিমন্ডল প্রশ্ন উত্তর class 10 MCQ, অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : Class 10 Geography বারিমন্ডল Question Answer