বায়ুমণ্ডল প্রশ্ন উত্তর

বায়ুমণ্ডল প্রশ্ন উত্তর Class 10

ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৭০টি)

১. বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে মেরুজ্যোতি দেখা যায়, সেটি হল –

  • (ক) ট্রপোস্ফিয়ার
  • (খ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
  • (গ) মেসোক্সফিয়ার
  • (ঘ) আয়নোস্ফিয়ার

২. বায়ুমণ্ডলের যে স্তরটি ‘ক্ষুব্ধমণ্ডল’ নামে পরিচিত, তা হল –

  • (ক) ট্রপোস্ফিয়ার
  • (খ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
  • (গ) মেসোক্সফিয়ার
  • (ঘ) থার্মোস্ফিয়ার

৩. ওজোন গ্যাসের স্তর দেখা যায় –

  • (ক) ট্রপোস্ফিয়ারে
  • (খ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে
  • (গ) আয়নোস্ফিয়ারে
  • (ঘ) এক্সোস্ফিয়ারে

৪. বায়ুমণ্ডলে নাইট্রোজেনের পরিমাণ হল –

  • (ক) ২০.৯৪%
  • (খ) ৭৮.০৮%
  • (গ) ০.৯৩%
  • (ঘ) ০.০৩%

৫. ‘অশ্ব অক্ষাংশ’ বলা হয় যে চাপবলয়কে, তা হল –

  • (ক) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়
  • (খ) কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয়
  • (গ) সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়
  • (ঘ) মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয়

৬. বায়ুর চাপ মাপার যন্ত্র হল –

  • (ক) থার্মোমিটার
  • (খ) ব্যারোমিটার
  • (গ) হাইগ্রোমিটার
  • (ঘ) অ্যানিমোমিটার

৭. মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় পরিচিত –

  • (ক) টাইফুন নামে
  • (খ) হ্যারিকেন নামে
  • (গ) উইলি-উইলি নামে
  • (ঘ) টর্নেডো নামে

৮. পর্বতের প্রতিবাত ঢালে যে বৃষ্টিপাত হয়, তা হল –

  • (ক) পরিচলন বৃষ্টি
  • (খ) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি
  • (গ) ঘূর্ণবাত বৃষ্টি
  • (ঘ) সীমান্ত বৃষ্টি

৯. জেট বিমান চলাচল করে বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে, সেটি হল –

  • (ক) ট্রপোস্ফিয়ার
  • (খ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
  • (গ) মেসোক্সফিয়ার
  • (ঘ) আয়নোস্ফিয়ার

১০. এল নিনো দেখা যায় –

  • (ক) আটলান্টিক মহাসাগরে
  • (খ) ভারত মহাসাগরে
  • (গ) প্রশান্ত মহাসাগরে
  • (ঘ) সুমেরু মহাসাগরে

১১. বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরটি হল –

  • (ক) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
  • (খ) ট্রপোস্ফিয়ার
  • (গ) মেসোক্সফিয়ার
  • (ঘ) থার্মোস্ফিয়ার

১২. বায়ুর আর্দ্রতা মাপক যন্ত্র হল –

  • (ক) ব্যারোমিটার
  • (খ) অ্যানিমোমিটার
  • (গ) হাইগ্রোমিটার
  • (ঘ) রেনগেজ

১৩. একটি সাময়িক বায়ুর উদাহরণ হল –

  • (ক) আয়ন বায়ু
  • (খ) পশ্চিমা বায়ু
  • (গ) মৌসুমী বায়ু
  • (ঘ) মেরু বায়ু

১৪. ‘গর্জনশীল চল্লিশা’ বলা হয় –

  • (ক) ৪০° উঃ অক্ষাংশকে
  • (খ) ৪০° দঃ অক্ষাংশকে
  • (গ) ৫০° দঃ অক্ষাংশকে
  • (ঘ) ৬০° দঃ অক্ষাংশকে

১৫. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে বৃষ্টিপাত হয় –

  • (ক) গ্রীষ্মকালে
  • (খ) শীতকালে
  • (গ) শরৎকালে
  • (ঘ) সারাবছর

১৬. পৃথিবীর অ্যালবেডোর পরিমাণ হল প্রায় –

  • (ক) ৬৬%
  • (খ) ৩৪%
  • (গ) ৫১%
  • (ঘ) ১৯%

১৭. ট্রপোস্ফিয়ারে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে উষ্ণতা –

  • (ক) বাড়ে
  • (খ) কমে
  • (গ) একই থাকে
  • (ঘ) প্রথমে বাড়ে পরে কমে

১৮. চিন সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে বলা হয় –

  • (ক) হ্যারিকেন
  • (খ) সাইক্লোন
  • (গ) টাইফুন
  • (ঘ) উইলি-উইলি

১৯. একটি গ্রিনহাউস গ্যাস হল –

  • (ক) অক্সিজেন
  • (খ) নাইট্রোজেন
  • (গ) কার্বন ডাইঅক্সাইড
  • (ঘ) আর্গন

২০. যে যন্ত্রের সাহায্যে বায়ুর গতিবেগ মাপা হয়, তা হল –

  • (ক) ব্যারোমিটার
  • (খ) থার্মোমিটার
  • (গ) অ্যানিমোমিটার
  • (ঘ) হাইগ্রোমিটার

২১. বৈপরীত্য উষ্ণতা দেখা যায় বায়ুমণ্ডলের –

  • (ক) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে
  • (খ) মেসোক্সফিয়ারে
  • (গ) ট্রপোস্ফিয়ারে
  • (ঘ) আয়নোস্ফিয়ারে

২২. নিরক্ষীয় অঞ্চলে যে ধরনের বৃষ্টিপাত হয়, তা হল –

  • (ক) শৈলোৎক্ষেপ
  • (খ) ঘূর্ণবাত
  • (গ) পরিচলন
  • (ঘ) সীমান্ত

২৩. ‘শান্তমণ্ডল’ বলা হয় –

  • (ক) ট্রপোস্ফিয়ারকে
  • (খ) মেসোক্সফিয়ারকে
  • (গ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারকে
  • (ঘ) থার্মোস্ফিয়ারকে

২৪. বায়ুমণ্ডলের ওজন গ্যাসের ঘনত্ব পরিমাপের একক হল –

  • (ক) মিলিবার
  • (খ) নট
  • (গ) ডবসন
  • (ঘ) পাস্কাল

২৫. পর্বতের অনুবাদ ঢাল বরাবর যে বায়ু নামে, তা হল –

  • (ক) ক্যাটাবেটিক বায়ু
  • (খ) অ্যানাবেটিক বায়ু
  • (গ) লু
  • (ঘ) চিনুক

২৬. আপেক্ষিক আর্দ্রতা প্রকাশ করা হয় –

  • (ক) গ্রাম/ঘনমিটারে
  • (খ) শতাংশে
  • (গ) মিলিবারে
  • (ঘ) ডিগ্রিতে

২৭. বায়ুমণ্ডলের প্রধান গ্যাসীয় উপাদান হল –

  • (ক) অক্সিজেন
  • (খ) কার্বন ডাইঅক্সাইড
  • (গ) নাইট্রোজেন
  • (ঘ) ওজোন

২৮. ক্যারিবিয়ান সাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে বলে –

  • (ক) টাইফুন
  • (খ) টর্নেডো
  • (গ) হ্যারিকেন
  • (ঘ) উইলি-উইলি

২৯. যে যন্ত্রের সাহায্যে বৃষ্টিপাত মাপা হয় –

  • (ক) রেনগেজ
  • (খ) হাইগ্রোমিটার
  • (গ) ব্যারোমিটার
  • (ঘ) থার্মোমিটার

৩০. ‘তুষার ভক্ষক’ বলা হয় যে বায়ুকে, তা হল –

  • (ক) ফন
  • (খ) চিনুক
  • (গ) লু
  • (ঘ) সিরোক্কো

৩১. সমচাপরেখাগুলি খুব কাছাকাছি থাকলে বোঝায় –

  • (ক) বায়ুর চাপ সমান
  • (খ) বায়ুর চাপের পার্থক্য বেশি
  • (গ) শান্ত আবহাওয়া
  • (ঘ) বায়ুর চাপের পার্থক্য কম

৩২. বায়ুমণ্ডলের যে স্তরে উল্কাপিণ্ড পুড়ে ছাই হয়ে যায়, তা হল –

  • (ক) ট্রপোস্ফিয়ার
  • (খ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
  • (গ) মেসোক্সফিয়ার
  • (ঘ) থার্মোস্ফিয়ার

৩৩. স্থলবায়ু প্রবাহিত হয় –

  • (ক) দিনের বেলায়
  • (খ) রাত্রিবেলায়
  • (গ) সন্ধ্যায়
  • (ঘ) সারাদিন

৩৪. একটি স্থানীয় বায়ুর উদাহরণ হল –

  • (ক) পশ্চিমা বায়ু
  • (খ) মৌসুমী বায়ু
  • (গ) লু
  • (ঘ) আয়ন বায়ু

৩৫. বর্ষাকালে ভারতে যে বায়ু প্রবাহিত হয় –

  • (ক) উত্তর-পূর্ব মৌসুমী বায়ু
  • (খ) দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ু
  • (গ) পশ্চিমা বায়ু
  • (ঘ) আয়ন বায়ু

৩৬. কার্যকরী সৌর বিকিরণের পরিমাণ হল –

  • (ক) ১০০%
  • (খ) ৩৪%
  • (গ) ৬৬%
  • (ঘ) ৫১%

৩৭. বায়ুমণ্ডলের সমতাপস্তর হল –

  • (ক) ট্রপোস্ফিয়ার
  • (খ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের নিম্নস্তর
  • (গ) মেসোক্সফিয়ার
  • (ঘ) থার্মোস্ফিয়ার

৩৮. ফন একটি –

  • (ক) শীতল স্থানীয় বায়ু
  • (খ) উষ্ণ স্থানীয় বায়ু
  • (গ) নিয়ত বায়ু
  • (ঘ) সাময়িক বায়ু

৩৯. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে থাকে –

  • (ক) উচ্চচাপ
  • (খ) নিম্নচাপ
  • (গ) সমচাপ
  • (ঘ) কোনোটিই নয়

৪০. মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি মেঘমুক্ত রাত্রির চেয়ে উষ্ণ হয় কারণ –

  • (ক) মেঘ সূর্যরশ্মি শোষণ করে
  • (খ) মেঘ ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ বিকিরণে বাধা দেয়
  • (গ) মেঘ বৃষ্টিপাত ঘটায়
  • (ঘ) মেঘ থেকে তাপ নির্গত হয়

৪১. উত্তর গোলার্ধে আয়ন বায়ুর দিক হল –

  • (ক) দক্ষিণ-পশ্চিম দিক
  • (খ) উত্তর-পশ্চিম দিক
  • (গ) দক্ষিণ-পূর্ব দিক
  • (ঘ) উত্তর-পূর্ব দিক

৪২. পৃথিবীতে মোট চাপ বলয়ের সংখ্যা হল –

  • (ক) ৩টি
  • (খ) ৪টি
  • (গ) ৭টি
  • (ঘ) ৮টি

৪৩. সমোষ্ণরেখাগুলি কাছাকাছি অবস্থান করলে তাপমাত্রার পার্থক্য –

  • (ক) বেশি হয়
  • (খ) কম হয়
  • (গ) সমান থাকে
  • (ঘ) বলা যায় না

৪৪. শিলাবৃষ্টি হল এক ধরনের –

  • (ক) বাষ্পীভবন
  • (খ) ঘনীভবন
  • (গ) অধঃক্ষেপণ
  • (ঘ) বিকিরণ

৪৫. রাসায়নিক গঠন অনুসারে বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তরটি হল –

  • (ক) হোমোস্ফিয়ার
  • (খ) হেটেরোস্ফিয়ার
  • (গ) আয়নোস্ফিয়ার
  • (ঘ) ওজোনোস্ফিয়ার

৪৬. সিরোক্কো বায়ু প্রবাহিত হয় –

  • (ক) রকি পার্বত্য অঞ্চলে
  • (খ) আল্পস পার্বত্য অঞ্চলে
  • (গ) সাহারা মরুভূমি অঞ্চলে
  • (ঘ) আন্দিজ পার্বত্য অঞ্চলে

৪৭. প্রতীপ ঘূর্ণবাতে উত্তর গোলার্ধে বায়ু প্রবাহিত হয় –

  • (ক) ঘড়ির কাঁটার দিকে
  • (খ) ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে
  • (গ) সোজা
  • (ঘ) সর্পিল গতিতে

৪৮. ওজোন স্তর ধ্বংসের জন্য দায়ী প্রধান গ্যাসটি হল –

  • (ক) CO2
  • (খ) CH4
  • (গ) CFC
  • (ঘ) N2O

৪৯. একটি নিয়ত বায়ুর উদাহরণ হল –

  • (ক) লু
  • (খ) মৌসুমী বায়ু
  • (গ) স্থলবায়ু
  • (ঘ) পশ্চিমা বায়ু

৫০. কোন মেঘে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়?

  • (ক) সিরাস
  • (খ) স্ট্র্যাটাস
  • (গ) কিউมูลোনিম্বাস
  • (ঘ) অল্টোস্ট্র্যাটাস

৫১. ইনসোলেশন হল –

  • (ক) আগত সৌররশ্মি
  • (খ) প্রত্যাগত সৌররশ্মি
  • (গ) পার্থিব বিকিরণ
  • (ঘ) কার্যকরী সৌরবিকিরণ

৫২. ফেরেলের সূত্র অনুযায়ী উত্তর গোলার্ধে বায়ুপ্রবাহ –

  • (ক) বামদিকে বেঁকে যায়
  • (খ) ডানদিকে বেঁকে যায়
  • (গ) সোজা প্রবাহিত হয়
  • (ঘ) উপরে উঠে যায়

৫৩. পশ্চিমবঙ্গে কালবৈশাখী সংঘটিত হয় –

  • (ক) শরৎকালে
  • (খ) শীতকালে
  • (গ) বর্ষাকালে
  • (ঘ) গ্রীষ্মকালের বিকেলে

৫৪. বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরের অপর নাম কেমোস্ফিয়ার?

  • (ক) ট্রপোস্ফিয়ার
  • (খ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার
  • (গ) ওজোনোস্ফিয়ার
  • (ঘ) মেসোক্সফিয়ার

৫৫. বায়ুর চাপ সবচেয়ে বেশি হয় –

  • (ক) পার্বত্য অঞ্চলে
  • (খ) মালভূমি অঞ্চলে
  • (গ) সমুদ্রপৃষ্ঠে
  • (ঘ) বায়ুমণ্ডলের উঁচুতে

৫৬. দুটি ভিন্নধর্মী বায়ুপ্রবাহের মিলনস্থলকে বলে –

  • (ক) সীমান্ত
  • (খ) वाताগ্র
  • (গ) ফ্রন্ট
  • (ঘ) সবগুলিই ঠিক

৫৭. যে মেঘ দেখতে পেঁজা তুলোর মতো, তা হল –

  • (ক) সিরাস
  • (খ) কিউমুলাস
  • (গ) স্ট্র্যাটাস
  • (ঘ) নিম্বাস

৫৮. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল দেখা যায় –

  • (ক) পর্বতের প্রতিবাত ঢালে
  • (খ) পর্বতের অনুবাদ ঢালে
  • (গ) পর্বতের চূড়ায়
  • (ঘ) সমভূমিতে

৫৯. পৃথিবীর ছাতা বলা হয় –

  • (ক) ট্রপোস্ফিয়ারকে
  • (খ) ওজোন স্তরকে
  • (গ) মেঘকে
  • (ঘ) আয়নোস্ফিয়ারকে

৬০. ডোলড্রামস দেখা যায় –

  • (ক) নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ে
  • (খ) মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ে
  • (গ) কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়ে
  • (ঘ) সুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ে

৬১. কোন মেঘকে ‘বজ্রমেঘ’ বলা হয়?

  • (ক) অল্টোকিউমুলাস
  • (খ) সিরোস্ট্র্যাটাস
  • (গ) কিউমুলোনিম্বাস
  • (ঘ) নিম্বোস্ট্র্যাটাস

৬২. সীমান্ত বৃষ্টি দেখা যায় –

  • (ক) ক্রান্তীয় অঞ্চলে
  • (খ) নিরক্ষীয় অঞ্চলে
  • (গ) নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে
  • (ঘ) মরু অঞ্চলে

৬৩. একটি নিষ্ক্রিয় গ্যাস হল –

  • (ক) নাইট্রোজেন
  • (খ) অক্সিজেন
  • (গ) হিলিয়াম
  • (ঘ) ওজোন

৬৪. বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হওয়ার প্রক্রিয়াকে বলে –

  • (ক) বাষ্পীভবন
  • (খ) ঘনীভবন
  • (গ) অধঃক্ষেপণ
  • (ঘ) বিকিরণ

৬৫. বায়ুপ্রবাহের দিক নির্ণায়ক যন্ত্র হল –

  • (ক) অ্যানিমোমিটার
  • (খ) বাতপতাকা
  • (গ) ব্যারোমিটার
  • (ঘ) হাইগ্রোমিটার

৬৬. সমবর্ষণ রেখা হল সমান –

  • (ক) উষ্ণতাযুক্ত স্থান
  • (খ) চাপযুক্ত স্থান
  • (গ) বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থান
  • (ঘ) লবণাক্ততাযুক্ত স্থান

৬৭. ট্রপোপজ হল –

  • (ক) ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী স্তর
  • (খ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার ও মেসোক্সফিয়ারের মধ্যবর্তী স্তর
  • (গ) মেসোক্সফিয়ার ও থার্মোস্ফিয়ারের মধ্যবর্তী স্তর
  • (ঘ) একটি বায়ুর নাম

৬৮. জলভাগের উপর থেকে স্থলভাগের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয় –

  • (ক) স্থলবায়ুতে
  • (খ) সমুদ্রবায়ুতে
  • (গ) অ্যানাবেটিক বায়ুতে
  • (ঘ) ক্যাটাবেটিক বায়ুতে

৬৯. বায়ুমণ্ডলের গ্যাসীয় উপাদানগুলির মধ্যে পরিমাণে দ্বিতীয় স্থানে আছে –

  • (ক) নাইট্রোজেন
  • (খ) অক্সিজেন
  • (গ) আর্গন
  • (ঘ) কার্বন ডাইঅক্সাইড

৭০. কোন মেঘ পরিষ্কার আবহাওয়া নির্দেশ করে?

  • (ক) নিম্বোস্ট্র্যাটাস
  • (খ) কিউমুলোনিম্বাস
  • (গ) সিরাস
  • (ঘ) স্ট্র্যাটোকিউমুলাস

খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (SAQ) – মান ১ (৬০টি)

১. বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে আবহাওয়ার যাবতীয় ঘটনা ঘটে?

উত্তর: ট্রপোস্ফিয়ারে।

২. সমোষ্ণরেখা কাকে বলে?

উত্তর: ভূপৃষ্ঠের সমান উষ্ণতাযুক্ত স্থানগুলিকে যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, তাকে সমোষ্ণরেখা বলে।

৩. আপেক্ষিক আর্দ্রতা কী?

উত্তর: নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ুতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প আছে এবং ওই উষ্ণতায় ওই বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয় বাষ্পের প্রয়োজন হয়, তার অনুপাতকে আপেক্ষিক আর্দ্রতা বলে।

৪. বৈপরীত্য উষ্ণতা কী?

উত্তর: উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা না কমে বেড়ে যাওয়ার ঘটনাকে বৈপরীত্য উষ্ণতা বলে।

৫. অ্যালবেডো কী?

উত্তর: সূর্য থেকে আগত মোট সৌররশ্মির যে পরিমাণ অংশ ভূপৃষ্ঠ ও বায়ুমণ্ডল দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে মহাশূন্যে ফিরে যায়, তাকে অ্যালবেডো বলে।

৬. বায়ুর চাপ কোন এককে মাপা হয়?

উত্তর: মিলিবার (mb) এককে।

৭. ITCZ-এর পুরো নাম কী?

উত্তর: Inter-Tropical Convergence Zone বা আন্তঃক্রান্তীয় অভিসরণ অঞ্চল।

৮. চিনুক কী?

উত্তর: চিনুক হল উত্তর আমেরিকার রকি পর্বতের পূর্ব ঢালে প্রবাহিত একটি উষ্ণ ও শুষ্ক স্থানীয় বায়ু।

৯. করিওলিস বল কী?

উত্তর: পৃথিবীর আবর্তন গতির কারণে সৃষ্ট যে বলের প্রভাবে বায়ুপ্রবাহ ও সমুদ্রস্রোত উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়, তাকে করিওলিস বল বলে।

১০. সম্পৃক্ত বায়ু কাকে বলে?

উত্তর: নির্দিষ্ট উষ্ণতায় নির্দিষ্ট পরিমাণ বায়ু সর্বাধিক যে পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে, সেই পরিমাণ জলীয় বাষ্প থাকলে ওই বায়ুকে সম্পৃক্ত বায়ু বলে।

১১. শিশিরাঙ্ক কী?

উত্তর: যে উষ্ণতায় বায়ু জলীয় বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়, তাকে ওই বায়ুর শিশিরাঙ্ক বলে।

১২. বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল কাকে বলে?

উত্তর: পর্বতের অনুবাদ ঢালে জলীয় বাষ্পহীন বায়ু নেমে আসায় বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না বললেই চলে, এই অঞ্চলকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে।

১৩. ওজোন গহ্বর কী?

উত্তর: অ্যান্টার্কটিকা অঞ্চলের উপরে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে ওজোন গ্যাসের ঘনত্ব খুব কমে গিয়ে যে পাতলা স্তর তৈরি হয়েছে, তাকে ওজোন গহ্বর বলে।

১৪. অ্যারোসল কী?

উত্তর: বায়ুমণ্ডলে ভাসমান ধূলিকণা, লবণকণা, ভস্মকণা ইত্যাদিকে একত্রে অ্যারোসল বলে।

১৫. কোন বায়ুকে বাণিজ্য বায়ু বলা হয়?

উত্তর: আয়ন বায়ুকে।

১৬. জেট বায়ু কী?

উত্তর: ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বস্তরে আঁকাবাঁকা পথে প্রবাহিত অতি দ্রুতগামী বায়ুপ্রবাহকে জেট বায়ু বলে।

১৭. ঘূর্ণবাতের চক্ষু কী?

উত্তর: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের শান্ত কেন্দ্রস্থলকে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে।

১৮. ল্যাপস রেট বা উষ্ণতা হ্রাসের স্বাভাবিক হার কত?

উত্তর: প্রতি ১০০০ মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে ৬.৪° সেলসিয়াস (বা প্রতি কিমিতে ৬.৫° সেলসিয়াস)।

১৯. হোমোস্ফিয়ার কী?

উত্তর: ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন গ্যাসের অনুপাত প্রায় একই থাকায় এই স্তরকে হোমোস্ফিয়ার বা সমমণ্ডল বলে।

২০. কোন মেঘ ম্যাকারেল আকাশ তৈরি করে?

উত্তর: সিরোকিউমুলাস মেঘ।

২১. একটি নিয়ত বায়ুর নাম লেখো।

উত্তর: পশ্চিমা বায়ু।

২২. ক্যাটাবেটিক বায়ু কী?

উত্তর: রাত্রিবেলায় পর্বতের শীর্ষ থেকে উপত্যকার দিকে প্রবাহিত শীতল ও ভারী বায়ুকে ক্যাটাবেটিক বায়ু বলে।

২৩. কার্যকরী সৌর বিকিরণ কী?

উত্তর: মোট সৌরশক্তির যে ৬৬% বায়ুমণ্ডল ও ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে, তাকে কার্যকরী সৌর বিকিরণ বলে।

২৪. ভারতের একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলের নাম লেখো।

উত্তর: পশ্চিমঘাট পর্বতমালার পূর্ব ঢালে অবস্থিত শিলং।

২৫. প্রতীপ ঘূর্ণবাত কোথায় সৃষ্টি হয়?

উত্তর: নাতিশীতোষ্ণ ও হিমমণ্ডলীয় উচ্চচাপ অঞ্চলে।

২৬. বায়ুমণ্ডলের কোন স্তরে বেতার তরঙ্গ প্রতিফলিত হয়?

উত্তর: আয়নোস্ফিয়ারে।

২৭. বাইস ব্যালট সূত্রটি কী?

উত্তর: উত্তর গোলার্ধে বায়ুপ্রবাহের দিকে পিছন ফিরে দাঁড়ালে ডানদিকে উচ্চচাপ এবং বামদিকে নিম্নচাপ অবস্থান করে।

২৮. লু কোন ঋতুতে দেখা যায়?

উত্তর: গ্রীষ্মকালে।

২৯. সীমান্ত কী?

উত্তর: নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে দুটি ভিন্নধর্মী (উষ্ণ ও শীতল) বায়ুপ্রবাহের মিলনস্থলকে সীমান্ত বা वाताগ্র বলে।

৩০. অধঃক্ষেপণ কী?

উত্তর: মাধ্যাকর্ষণের টানে জলকণা বা বরফকণা ভূপৃষ্ঠে ঝরে পড়াকে অধঃক্ষেপণ বলে (যেমন – বৃষ্টি, তুষারপাত)।

৩১. সমচাপরেখা কী?

উত্তর: ভূপৃষ্ঠের সমান বায়ুচাপযুক্ত স্থানগুলিকে যে কাল্পনিক রেখা দ্বারা যুক্ত করা হয়, তাকে সমচাপরেখা বা আইসোবার বলে।

৩২. লীন তাপ কাকে বলে?

উত্তর: যে তাপ পদার্থের অবস্থার পরিবর্তন ঘটায় কিন্তু উষ্ণতার পরিবর্তন ঘটায় না, তাকে লীন তাপ বলে।

৩৩. ‘ডোলড্রামস’ শব্দের অর্থ কী?

উত্তর: শান্ত অবস্থা।

৩৪. অ্যানাবেটিক বায়ু কখন প্রবাহিত হয়?

উত্তর: দিনের বেলায়।

৩৫. একটি উষ্ণ স্থানীয় বায়ুর উদাহরণ দাও।

উত্তর: লু।

৩৬. গর্জনশীল চল্লিশা কী?

উত্তর: দক্ষিণ গোলার্ধে ৪০° থেকে ৫০° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে পশ্চিমা বায়ুর বিধ্বংসী রূপকে গর্জনশীল চল্লিশা বলে।

৩৭. পরিচলন স্রোত কী?

উত্তর: বায়ু উত্তপ্ত হয়ে হালকা হয়ে উপরে উঠে যায় এবং উপরের শীতল ভারী বায়ু নীচে নেমে আসে। এই উল্লম্ব বায়ুপ্রবাহকে পরিচলন স্রোত বলে।

৩৮. বায়ুমণ্ডলের প্রধান গ্রিনহাউস গ্যাস কোনটি?

উত্তর: কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2)।

৩৯. কোন মেঘকে ‘বজ্রমেঘ’ বলে?

উত্তর: কিউমুলোনিম্বাস।

৪০. ENSO-এর পুরো নাম কী?

উত্তর: El Niño and Southern Oscillation.

৪১. হেটেরোস্ফিয়ার বা বিষমমণ্ডল কী?

উত্তর: বায়ুমণ্ডলের ৯০ কিমির ঊর্ধ্বে যেখানে গ্যাসের অণুগুলি তাদের আণবিক ওজন অনুসারে বিভিন্ন স্তরে বিভক্ত থাকে, তাকে হেটেরোস্ফিয়ার বলে।

৪২. ‘মাদার অফ পার্ল ক্লাউড’ কোথায় দেখা যায়?

উত্তর: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে।

৪৩. ফোর ও’ ক্লক রেন কোথায় দেখা যায়?

উত্তর: নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে।

৪৪. ঘনীভবন কাকে বলে?

উত্তর: যে প্রক্রিয়ায় বায়ুর জলীয় বাষ্প শীতল হয়ে জলকণা বা বরফকণায় পরিণত হয়, তাকে ঘনীভবন বলে।

৪৫. পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা কত?

উত্তর: প্রায় ১৫° সেলসিয়াস।

৪৬. দক্ষিণ গোলার্ধে আয়ন বায়ুর দিক কী?

উত্তর: দক্ষিণ-পূর্ব দিক।

৪৭. একটি শীতল স্থানীয় বায়ুর নাম লেখো।

উত্তর: মিস্ট্রাল বা বোরা।

৪৮. আকস্মিক বায়ু কী?

উত্তর: কোনো স্বল্প পরিসর স্থানে হঠাৎ চাপের পার্থক্যের কারণে যে বায়ু সৃষ্টি হয়, তাকে আকস্মিক বায়ু বলে (যেমন – ঘূর্ণবাত)।

৪৯. বায়ুমণ্ডলের কোন উপাদানটি সৌররশ্মি শোষণ করে?

উত্তর: ওজোন গ্যাস (UV রশ্মি), জলীয় বাষ্প, কার্বন ডাইঅক্সাইড।

৫০. কোন মেঘ দেখতে অনেকটা চাদরের মতো?

উত্তর: স্ট্র্যাটাস মেঘ।

৫১. ইনসোলেশনের সর্বাধিক পতন কোথায় ঘটে?

উত্তর: নিরক্ষরেখায়।

৫২. বায়ুর গতিবেগ মাপার একক কী?

উত্তর: নট (Knot)।

৫৩. স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ু কী ধরনের বায়ু?

উত্তর: সাময়িক বায়ু।

৫৪. ‘রোরিং ফর্টিস’ কোন বায়ুকে বলা হয়?

উত্তর: পশ্চিমা বায়ুকে (দক্ষিণ গোলার্ধে)।

৫৫. বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে হালকা গ্যাস কোনটি?

উত্তর: হাইড্রোজেন।

৫৬. মেঘমুক্ত আকাশে শিশির ভালো জমে কেন?

উত্তর: কারণ মেঘ না থাকলে ভূপৃষ্ঠ সহজেই তাপ বিকিরণ করে শীতল হতে পারে।

৫৭. তুলা উৎপাদনে কোন মেঘ সহায়ক?

উত্তর: কিউমুলাস মেঘ।

৫৮. লা নিনা কথার অর্থ কী?

উত্তর: ছোট্ট বালিকা।

৫৯. পৃথিবীর তাপ বাজেট কী?

উত্তর: সূর্য থেকে আগত সৌররশ্মি এবং পৃথিবী থেকে বিকিরিত তাপের মধ্যে যে সমতা বজায় থাকে, তাকে পৃথিবীর তাপ বাজেট বা হিট বাজেট বলে।

৬০. একটি নিয়ত উচ্চচাপ বলয়ের নাম লেখো।

উত্তর: কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়।


গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ২ (২৫টি)

১. ট্রপোস্ফিয়ারকে ‘ক্ষুব্ধমণ্ডল’ বলা হয় কেন?

উত্তর: বায়ুমণ্ডলের এই স্তরে ধূলিকণা, জলীয় বাষ্প ইত্যাদি থাকায় মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত সহ আবহাওয়ার প্রায় সমস্ত গোলযোগপূর্ণ ঘটনা ঘটে। এই কারণে ট্রপোস্ফিয়ারকে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলা হয়।

২. ওজোন স্তরকে ‘প্রাকৃতিক সৌরপর্দা’ বলা হয় কেন?

উত্তর: স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে অবস্থিত ওজোন গ্যাসের স্তর সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি (UV-B, UV-C) শোষণ করে নেয় এবং জীবজগতকে তার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করে। এই কারণে ওজোন স্তরকে প্রাকৃতিক সৌরপর্দা বা পৃথিবীর ছাতা বলা হয়।

৩. স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তর: স্থলবায়ু: এটি রাত্রিবেলায় স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত হয়। এটি তুলনামূলকভাবে শীতল ও শুষ্ক। সমুদ্রবায়ু: এটি দিনের বেলায় সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত হয়। এটি আর্দ্র ও আরামদায়ক।

৪. ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: ঘূর্ণবাত: এর কেন্দ্রে নিম্নচাপ ও বাইরে উচ্চচাপ থাকে। বায়ু বাইরে থেকে কেন্দ্রের দিকে আসে। এটি দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া সৃষ্টি করে। প্রতীপ ঘূর্ণবাত: এর কেন্দ্রে উচ্চচাপ ও বাইরে নিম্নচাপ থাকে। বায়ু কেন্দ্র থেকে বাইরের দিকে যায়। এটি শান্ত ও পরিষ্কার আবহাওয়া নির্দেশ করে।

৫. ‘অশ্ব অক্ষাংশ’ নামকরণের কারণ কী?

উত্তর: প্রাচীনকালে পালতোলা জাহাজে করে ইউরোপ থেকে আটলান্টিক মহাসাগর দিয়ে আমেরিকায় ঘোড়া নিয়ে যাওয়ার সময় কর্কটীয় শান্ত বলয়ে (২৫°-৩৫° অক্ষাংশ) বায়ুপ্রবাহ না থাকায় জাহাজগুলি থেমে যেত। তখন জাহাজের ভার কমাতে কিছু ঘোড়াকে সমুদ্রে ফেলে দেওয়া হত। এই ঘটনা থেকে এই অঞ্চল ‘অশ্ব অক্ষাংশ’ নামে পরিচিত।

৬. সমোষ্ণরেখা ও সমচাপরেখার মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: সমোষ্ণরেখা: এটি সমান উষ্ণতাযুক্ত স্থানগুলিকে যুক্ত করে। এর একক ডিগ্রি সেলসিয়াস বা ফারেনহাইট। সমচাপরেখা: এটি সমান বায়ুচাপযুক্ত স্থানগুলিকে যুক্ত করে। এর একক মিলিবার।

৭. বৈপরীত্য উষ্ণতা সৃষ্টির দুটি কারণ লেখো।

উত্তর: ১. শান্ত, মেঘমুক্ত রাত্রি: মেঘমুক্ত আকাশে ভূপৃষ্ঠ দ্রুত তাপ বিকিরণ করে শীতল হয় এবং সংলগ্ন বায়ুস্তরও শীতল হয়। কিন্তু উপরের বায়ুস্তর উষ্ণ থেকে যায়। ২. পার্বত্য উপত্যকা: রাত্রিবেলায় পর্বতের উপরের ঠান্ডা ও ভারী বায়ু নীচে নেমে এসে উপত্যকার উষ্ণ ও হালকা বায়ুকে উপরে তুলে দেয়।

৮. টিকা লেখো: অ্যালবেডো।

উত্তর: সূর্য থেকে আগত মোট সৌররশ্মির ১০০ ভাগের মধ্যে যে ৩৪ ভাগ মেঘ, ধূলিকণা, ভূপৃষ্ঠ (বিশেষত বরফ) দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে সরাসরি মহাশূন্যে ফিরে যায় এবং পৃথিবীকে উত্তপ্ত করতে পারে না, তাকে পৃথিবীর অ্যালবেডো বলে।

৯. মেঘাচ্ছন্ন রাত্রি অপেক্ষা মেঘমুক্ত রাত্রি বেশি শীতল হয় কেন?

উত্তর: দিনের বেলায় ভূপৃষ্ঠ যে তাপ গ্রহণ করে, রাতে তা বিকিরণ করে শীতল হয়। মেঘমুক্ত রাতে এই বিকিরিত তাপ সরাসরি মহাশূন্যে চলে যেতে পারে, তাই ভূপৃষ্ঠ দ্রুত শীতল হয়। কিন্তু মেঘাচ্ছন্ন রাতে মেঘ কম্বলের মতো কাজ করে এবং বিকিরিত তাপকে মহাশূন্যে যেতে বাধা দেয়। ফলে ভূপৃষ্ঠ উষ্ণ থাকে।

১০. দক্ষিণ গোলার্ধে পশ্চিমা বায়ু উত্তর গোলার্ধের তুলনায় বেশি শক্তিশালী কেন?

উত্তর: দক্ষিণ গোলার্ধের ৪০° থেকে ৬০° অক্ষাংশের মধ্যে স্থলভাগের তুলনায় জলভাগের বিস্তার অনেক বেশি। তাই বায়ুপ্রবাহ প্রায় বাধাহীনভাবে প্রবাহিত হতে পারে। এই কারণে দক্ষিণ গোলার্ধে পশ্চিমা বায়ু উত্তর গোলার্ধের তুলনায় অনেক বেশি শক্তিশালী ও বিধ্বংসী হয়।

১১. শিশির ও তুহিনের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: শিশির: বায়ুর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের উপরে (০°C এর বেশি) থাকলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণারূপে ভূপৃষ্ঠের উপর জমা হলে তাকে শিশির বলে। তুহিন: বায়ুর তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে (০°C এর কম) নেমে গেলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে বরফকণায় পরিণত হয়ে জমা হলে তাকে তুহিন বা ফ্রস্ট বলে।

১২. জেট বায়ুপ্রবাহের দুটি বৈশিষ্ট্য লেখো।

উত্তর: ১. এটি ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বস্তরে (৯-১২ কিমি উচ্চতায়) প্রবাহিত হয়। ২. এটি অত্যন্ত দ্রুতগামী (ঘন্টায় ৩০০-৫০০ কিমি) এবং সর্পিল বা আঁকাবাঁকা পথে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রবাহিত হয়।

১৩. পরিচলন বৃষ্টিপাত কীভাবে হয়?

উত্তর: দিনের বেলায় সূর্যতাপে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হলে সংলগ্ন বায়ুও উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। উপরে শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে ঐ বায়ু সম্পৃক্ত হয় এবং ঘনীভূত হয়ে কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি করে। এরপর বজ্রবিদ্যুৎসহ যে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়, তাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে।

১৪. ‘মৌসুমী’ শব্দের অর্থ কী? এই বায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য কী?

উত্তর: আরবি শব্দ ‘মৌসিম’ থেকে মৌসুমী কথাটি এসেছে, যার অর্থ ঋতু। এর প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এটি ঋতু পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে তার প্রবাহের দিক সম্পূর্ণ বিপরীত দিকে (১৮০° কোণে) পরিবর্তন করে।

১৫. গর্জনশীল চল্লিশা, ভয়ঙ্কর পঞ্চাশা ও তীক্ষ্ণ চিৎকারী ষাট কী?

উত্তর: দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের বিশালতার কারণে ৪০°, ৫০° ও ৬০° দক্ষিণ অক্ষাংশ বরাবর পশ্চিমা বায়ু প্রবল বেগে প্রবাহিত হওয়ার সময় যে ভয়ঙ্কর শব্দ করে, তাদের যথাক্রমে গর্জনশীল চল্লিশা, ভয়ঙ্কর পঞ্চাশা ও তীক্ষ্ণ চিৎকারী ষাট বলা হয়।

১৬. টর্নেডো ও হ্যারিকেনের মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: টর্নেডো: এটি স্থলভাগে সৃষ্ট ফানেল আকৃতির অত্যন্ত বিধ্বংসী স্বল্পস্থায়ী ঝড়। এর ব্যাস কম কিন্তু গতিবেগ অনেক বেশি। হ্যারিকেন: এটি সমুদ্রে সৃষ্ট সুবিশাল ক্রান্তীয় ঘূর্ণিঝড়। এর ব্যাস অনেক বেশি কিন্তু গতিবেগ টর্নেডোর থেকে কম।

১৭. হোমোস্ফিয়ার ও হেটেরোস্ফিয়ারের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তর: হোমোস্ফিয়ার: ভূপৃষ্ঠ থেকে ৯০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত এই স্তরে গ্যাসের অনুপাত প্রায় সমান থাকে। হেটেরোস্ফিয়ার: ৯০ কিমির ঊর্ধ্বে অবস্থিত এই স্তরে গ্যাসের অনুপাত সমান থাকে না, বরং আণবিক ওজন অনুসারে স্তরবিন্যাস দেখা যায়।

১৮. সমোষ্ণরেখাগুলি স্থলভাগের ওপর বেঁকে যায় কেন?

উত্তর: জলভাগ ও স্থলভাগের উত্তপ্ত ও শীতল হওয়ার হারের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। স্থলভাগ দ্রুত উত্তপ্ত ও শীতল হয়। তাই সমোষ্ণরেখাগুলি জলভাগ থেকে স্থলভাগে প্রবেশ করার সময় তাপমাত্রার এই পার্থক্যের জন্য অক্ষাংশের সঙ্গে সমান্তরাল না থেকে উত্তর বা দক্ষিণে বেঁকে যায়।

১৯. বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের গুরুত্ব কী?

উত্তর: ১. জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ, বৃষ্টি, কুয়াশা ইত্যাদি সৃষ্টি করে এবং পৃথিবীতে জলের জোগান দেয়। ২. জলীয় বাষ্প পৃথিবীর তাপ শোষণ করে বায়ুমণ্ডলকে উষ্ণ রাখতে সাহায্য করে এবং এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রিনহাউস গ্যাস।

২০. বায়ুমণ্ডলে ধূলিকণার গুরুত্ব কী?

উত্তর: ১. ধূলিকণাকে আশ্রয় করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করে। তাই ধূলিকণাকে ‘ঘনীভবন নিউক্লিয়াস’ বলে। ২. ধূলিকণা সূর্যরশ্মিকে বিচ্ছুরিত করে ঊষা ও গোধূলি সৃষ্টি করে।

২১. ক্যাটাবেটিক ও অ্যানাবেটিক বায়ুর পার্থক্য লেখো।

উত্তর: ক্যাটাবেটিক: এটি রাত্রিবেলায় পর্বতের শীর্ষ থেকে উপত্যকায় নামে। এটি শীতল ও ভারী। অ্যানাবেটিক: এটি দিনের বেলায় উপত্যকা থেকে পর্বতের ঢাল বেয়ে উপরে ওঠে। এটি উষ্ণ ও হালকা।

২২. কুয়াশা ও ধোঁয়াশার মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: কুয়াশা: ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরে ভাসমান জলকণাকে কুয়াশা বলে। এটি একটি প্রাকৃতিক ঘটনা। ধোঁয়াশা: শিল্পাঞ্চল বা শহরাঞ্চলে ধোঁয়া ও কুয়াশা মিশে যে বিষাক্ত আস্তরণ তৈরি হয়, তাকে ধোঁয়াশা (Smog = Smoke + Fog) বলে।

২৩. আয়ন বায়ুকে বাণিজ্য বায়ু বলা হয় কেন?

উত্তর: প্রাচীনকালে পালতোলা জাহাজের নাবিকেরা এই বায়ুর নির্দিষ্ট গতিপথ অনুসরণ করে ব্যবসা-বাণিজ্য করত। বাণিজ্যে সাহায্য করত বলে এই বায়ুকে বাণিজ্য বায়ু বলা হয়।

২৪. লীন তাপ কী? বায়ুমণ্ডলে এর ভূমিকা কী?

উত্তর: যে তাপ পদার্থের উষ্ণতার পরিবর্তন না ঘটিয়ে শুধুমাত্র অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়, তাকে লীন তাপ বলে। বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘে পরিণত হওয়ার সময় এই লীন তাপ নির্গত করে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে, যা ঘূর্ণবাতের শক্তি জোগায়।

২৫. বিশ্ব উষ্ণায়নের দুটি ফলাফল লেখো।

উত্তর: ১. মেরু অঞ্চলের বরফ গলে গিয়ে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, যার ফলে উপকূলবর্তী নিচু এলাকা ও দ্বীপগুলি প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে। ২. আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতা (যেমন – খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়) বৃদ্ধি পাচ্ছে।


ঘ) সংক্ষিপ্ত রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৩ (২৫টি)

১. বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাসের কারণগুলি কী কী?

উত্তর: বায়ুমণ্ডলকে প্রধানত উষ্ণতা ও রাসায়নিক গঠনের তারতম্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করা হয়।
ক) উষ্ণতার তারতম্য: উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতার পরিবর্তন ঘটে। যেমন – ট্রপোস্ফিয়ারে উষ্ণতা কমে, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে বাড়ে, মেসোক্সফিয়ারে আবার কমে এবং থার্মোস্ফিয়ারে দ্রুত বাড়ে। এই পরিবর্তনের কারণেই স্তরগুলি সৃষ্টি হয়েছে।
খ) গ্যাসীয় উপাদানের পার্থক্য: ওজোন গ্যাসের উপস্থিতির কারণে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার উষ্ণ হয়। থার্মোস্ফিয়ারে গ্যাসীয় অণুগুলি আয়নিত অবস্থায় থাকে।
গ) ঘনত্ব ও চাপের পার্থক্য: উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বায়ুর ঘনত্ব ও চাপ দ্রুত কমতে থাকে, যা স্তরবিন্যাসে সাহায্য করে।

২. ট্রপোস্ফিয়ার ও স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের মধ্যে তিনটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর: ১. অবস্থান ও উচ্চতা: ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর (গড়ে ০-১২ কিমি)। এর উপরে অবস্থিত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (১২-৫০ কিমি)।
২. উষ্ণতার পরিবর্তন: ট্রপোস্ফিয়ারে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা কমে (প্রতি কিমিতে ৬.৫°সে)। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে উষ্ণতা বাড়ে।
৩. আবহাওয়ার অবস্থা: ট্রপোস্ফিয়ারে মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি ইত্যাদি গোলযোগপূর্ণ ঘটনা ঘটে (ক্ষুব্ধমণ্ডল)। স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে আবহাওয়া শান্ত থাকে (শান্তমণ্ডল) এবং জেট বিমান চলে।

৩. পৃথিবীর তাপের সমতা বা হিট বাজেট কীভাবে রক্ষিত হয়?

উত্তর: পৃথিবী সূর্য থেকে যে পরিমাণ তাপ গ্রহণ করে, প্রায় সেই পরিমাণ তাপ মহাশূন্যে ফিরিয়ে দেয়। এইভাবেই তাপের সমতা রক্ষিত হয়।
আগত সৌরশক্তি (১০০%): এর মধ্যে ৩৪% অ্যালবেডো রূপে ফিরে যায়। বাকি ৬৬% পৃথিবী ও বায়ুমণ্ডল শোষণ করে। এর মধ্যে ৫১% সরাসরি ভূপৃষ্ঠ এবং ১৫% বায়ুমণ্ডল শোষণ করে।
প্রত্যাগত তাপ (৬৬%): ভূপৃষ্ঠ দ্বারা শোষিত ৫১% তাপ বিকিরণ, পরিচলন ও বাষ্পীভবনের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডলে ফিরে যায়। বায়ুমণ্ডল মোট (১৫%+৫১%) = ৬৬% তাপ মহাশূন্যে বিকিরণ করে। এইভাবে আয় ও ব্যয়ের সমতা বজায় থাকে।

৪. নিয়ত বায়ুপ্রবাহের উৎপত্তি ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: ভূপৃষ্ঠের উপর স্থায়ী উচ্চচাপ ও নিম্নচাপ বলয়গুলির মধ্যে বায়ু সারা বছর ধরে নির্দিষ্ট দিকে প্রবাহিত হয়, একে নিয়ত বায়ু বলে। এর উৎপত্তির কারণ হল চাপ বলয়গুলির অবস্থান।
ক) আয়ন বায়ু: কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়।
খ) পশ্চিমা বায়ু: কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়।
গ) মেরু বায়ু: মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে বৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। ফেরেলের সূত্র অনুসারে এই বায়ুপ্রবাহগুলি উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়।

৫. শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত প্রক্রিয়াটি চিত্রসহ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: সমুদ্র থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুপ্রবাহের পথে কোনো উঁচু পর্বত অবস্থান করলে, সেই বায়ু পর্বতে বাধা পেয়ে তার গা বেয়ে উপরে উঠতে বাধ্য হয়। উপরে উঠে এই বায়ু প্রসারিত ও শীতল হয় এবং ঘনীভূত হয়ে মেঘ তৈরি করে। এই মেঘ থেকে পর্বতের প্রতিবাত ঢালে যে বৃষ্টিপাত হয়, তাকে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে। পর্বতের অপর ঢাল অর্থাৎ অনুবাদ ঢালে এই বায়ু নেমে আসার সময় উষ্ণ ও শুষ্ক হয়ে যায়, তাই সেখানে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না। এই অঞ্চলকে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল বলে। (একটি চিত্র আঁকতে হবে যেখানে পর্বত, প্রতিবাত ও অনুবাদ ঢাল, বৃষ্টিপাত ও বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল দেখানো থাকবে)।

৬. ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয় কেন?

উত্তর: ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলটি ৩০° থেকে ৪০° অক্ষাংশের মধ্যে অবস্থিত।
গ্রীষ্মকাল: গ্রীষ্মকালে সূর্যের উত্তরায়ণের ফলে চাপবলয়গুলি উত্তরে সরে যায়। ফলে এই অঞ্চল কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয়ের অধীনে চলে আসে এবং আয়ন বায়ুর প্রভাবে শুষ্ক থাকে।
শীতকাল: শীতকালে সূর্যের দক্ষিণায়নের ফলে চাপবলয়গুলি দক্ষিণে সরে আসে। ফলে এই অঞ্চল পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবাধীন হয়। সমুদ্রের উপর দিয়ে আসা এই আর্দ্র পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবেই এখানে শীতকালে বৃষ্টিপাত হয়।

৭. বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তরের গুরুত্ব ও তার বিনাশের কারণ লেখো।

উত্তর: গুরুত্ব: ওজোন স্তর (O3) সূর্য থেকে আগত ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে জীবজগতকে রক্ষা করে। এটি না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব বিপন্ন হত, মানুষের ত্বকের ক্যান্সার, চোখের ছানি ইত্যাদি রোগ হতো।
বিনাশের কারণ: মানুষের তৈরি কিছু রাসায়নিক পদার্থ, বিশেষত ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC), হ্যালন, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি গ্যাস স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারে পৌঁছে ওজোন অণুকে ভেঙে দেয়। রেফ্রিজারেটর, এসি, স্প্রে ক্যান ইত্যাদি থেকে নির্গত CFC গ্যাসই ওজোন স্তর বিনাশের প্রধান কারণ।

৮. বায়ুর চাপের তারতম্যের প্রধান তিনটি কারণ আলোচনা করো।

উত্তর: বায়ুর চাপের তারতম্যের প্রধান তিনটি কারণ হল:
ক) উষ্ণতা: উষ্ণতা বাড়লে বায়ু হালকা হয়ে প্রসারিত হয় এবং বায়ুর চাপ কমে (নিম্নচাপ)। উষ্ণতা কমলে বায়ু সংকুচিত ও ভারী হয় এবং চাপ বাড়ে (উচ্চচাপ)। উষ্ণতার সঙ্গে চাপের সম্পর্ক ব্যস্তানুপাতিক।
খ) উচ্চতা: ভূপৃষ্ঠ থেকে যত উপরে ওঠা যায়, বায়ুর ঘনত্ব তত কমে, ফলে বায়ুর চাপও কমতে থাকে।
গ) জলীয় বাষ্প: জলীয় বাষ্প সাধারণ বায়ুর থেকে হালকা। তাই বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়লে বায়ুর চাপ কমে যায়।

৯. বিশ্ব উষ্ণায়নের নিয়ন্ত্রণের তিনটি উপায় লেখো।

উত্তর: বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণের তিনটি প্রধান উপায় হল:
ক) গ্রিনহাউস গ্যাসের নির্গমন হ্রাস: জীবাশ্ম জ্বালানির (কয়লা, পেট্রোলিয়াম) ব্যবহার কমিয়ে অপ্রচলিত শক্তি (সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি) ব্যবহার বাড়াতে হবে। CFC গ্যাসের ব্যবহার নিষিদ্ধ করতে হবে।
খ) বনসৃজন ও অরণ্য সংরক্ষণ: গাছপালা কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে। তাই নির্বিচারে গাছ কাটা বন্ধ করতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে নতুন গাছ লাগাতে হবে।
গ) আন্তর্জাতিক চুক্তি ও সচেতনতা বৃদ্ধি: কিয়োটো প্রোটোকল, প্যারিস চুক্তির মতো আন্তর্জাতিক চুক্তিগুলিকে কঠোরভাবে মেনে চলতে হবে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে।

১০. ঘূর্ণবাতের কেন্দ্র সর্বদা নিম্নচাপযুক্ত হয় কেন?

উত্তর: কোনো অঞ্চলে সূর্যরশ্মির কারণে বা অন্য কোনো কারণে বায়ু অতিরিক্ত উত্তপ্ত হলে তা হালকা হয়ে উপরে উঠে যায়। এর ফলে সেখানে বায়ুর ঘাটতি দেখা দেয় এবং একটি নিম্নচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। এই নিম্নচাপ কেন্দ্রকে ভরাট করার জন্য চারপাশের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু প্রবল বেগে কুণ্ডলী আকারে কেন্দ্রের দিকে ছুটে আসে। এইভাবেই ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়। তাই ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে সর্বদা নিম্নচাপ বিরাজ করে।

১১. নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর পরিচলন বৃষ্টি হয় কেন?

উত্তর: নিরক্ষীয় অঞ্চলে সারাবছর সূর্যরশ্মি প্রায় লম্বভাবে পড়ে, তাই উষ্ণতা খুব বেশি। এই অতিরিক্ত উষ্ণতার কারণে এখানকার জলভাগ থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্প বায়ুতে মেশে এবং বায়ু উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে সোজা উপরে উঠে যায় (পরিচলন স্রোত)। উপরে উঠে এই বায়ু শীতল হয়ে ঘনীভূত হয় এবং প্রতিদিন বিকেল বা সন্ধ্যার দিকে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই কারণেই এখানে সারাবছর পরিচলন বৃষ্টি হয়।

১২. বায়ুমণ্ডল কীভাবে উত্তপ্ত হয়?

উত্তর: বায়ুমণ্ডল সরাসরি সূর্যরশ্মি দ্বারা সামান্যই উত্তপ্ত হয়। এটি প্রধানত তিনটি পরোক্ষ পদ্ধতিতে উত্তপ্ত হয়:
ক) বিকিরণ: দিনের বেলায় ভূপৃষ্ঠ সূর্য থেকে তাপ গ্রহণ করে এবং রাতে সেই তাপ বিকিরণ করে বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে।
খ) পরিচলন: ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ু উত্তপ্ত ও হালকা হয়ে উপরে ওঠে এবং উপরের শীতল বায়ু নীচে নেমে আসে। এই উল্লম্ব স্রোতের মাধ্যমে তাপ বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে।
গ) পরিবহন: ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তর ভূপৃষ্ঠের সংস্পর্শে এসে সরাসরি উত্তপ্ত হয়। এই তাপ ধীরে ধীরে উপরের বায়ুস্তরে সঞ্চালিত হয়।

১৩. বায়ুচাপ বলয়গুলির স্থান পরিবর্তন ঘটে কেন?

উত্তর: পৃথিবীর বায়ুচাপ বলয়গুলি সূর্যের আপাত বার্ষিক গতির সঙ্গে সম্পর্কিত। সূর্য বছরে ছয় মাস উত্তর গোলার্ধে এবং ছয় মাস দক্ষিণ গোলার্ধে লম্বভাবে কিরণ দেয়। সূর্যের এই স্থান পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতম অঞ্চলটিও পরিবর্তিত হয়। এর ফলে উষ্ণতার উপর নির্ভরশীল বায়ুচাপ বলয়গুলিও বছরে দুইবার প্রায় ৫°-১০° অক্ষাংশ উত্তরে ও দক্ষিণে সরে যায়। একেই চাপবলয়ের স্থান পরিবর্তন বলে।

১৪. মেঘ ও কুয়াশার মধ্যে তিনটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর: ১. অবস্থান: মেঘ বায়ুমণ্ডলের উঁচুতে সৃষ্টি হয়। কুয়াশা ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন বায়ুস্তরে সৃষ্টি হয়।
২. গঠন: মেঘে জলকণা বা বরফকণার আকার বড় হয়। কুয়াশার জলকণা খুব সূক্ষ্ম হয়।
৩. প্রভাব: মেঘ বৃষ্টিপাত ঘটায়। কুয়াশা বৃষ্টিপাত ঘটায় না, তবে দৃশ্যমানতা কমিয়ে দেয়।

১৫. পশ্চিমা বায়ুর প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তর: পশ্চিমা বায়ু মহাদেশগুলির পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত দেশগুলির জলবায়ুকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। এর প্রভাবে এই অঞ্চলগুলিতে সারাবছর معتدل বৃষ্টিপাত হয় এবং জলবায়ু সমভাবাপন্ন থাকে (যেমন – পশ্চিম ইউরোপীয় জলবায়ু)। শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাত ঘটায়। দক্ষিণ গোলার্ধে এর গতিবেগ খুব বেশি হওয়ায় সামুদ্রিক পরিবহণে প্রভাব ফেলে।

১৬. ফেরেলের সূত্র ও বাইস ব্যালট সূত্রের মধ্যে সম্পর্ক কী?

উত্তর: ফেরেলের সূত্র বায়ুপ্রবাহের দিক পরিবর্তনের কারণ (করিওলিস বল) ব্যাখ্যা করে। এটি বলে যে বায়ু উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে ও দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়। বাইস ব্যালট সূত্রটি হল ফেরেলের সূত্রের একটি ব্যবহারিক প্রয়োগ। এটি বায়ুপ্রবাহের সাপেক্ষে উচ্চচাপ ও নিম্নচাপের অবস্থান নির্দেশ করে। অর্থাৎ, ফেরেলের সূত্র কারণ ব্যাখ্যা করে আর বাইস ব্যালট সূত্র তার ফল বা অবস্থান নির্ণয়ে সাহায্য করে।

১৭. ক্রান্তীয় ও নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তর: ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত: এটি ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ সমুদ্রে সৃষ্টি হয়। এটি বিধ্বংসী এবং এর কেন্দ্রে শান্ত ‘চক্ষু’ থাকে। এখানে কোনো সীমান্ত তৈরি হয় না। নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত: এটি নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল বায়ুরাশির মিলনে (সীমান্ত) সৃষ্টি হয়। এটি কম বিধ্বংসী এবং দীর্ঘস্থায়ী বৃষ্টিপাত ঘটায়।

১৮. সম্পৃক্ত ও অসম্পৃক্ত বায়ুর মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তর: সম্পৃক্ত বায়ু: নির্দিষ্ট উষ্ণতায় কোনো বায়ু যখন তার সর্বোচ্চ জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতার সমান জলীয় বাষ্প ধারণ করে, তখন তাকে সম্পৃক্ত বায়ু বলে। এর আপেক্ষিক আর্দ্রতা ১০০%। অসম্পৃক্ত বায়ু: যখন কোনো বায়ুতে তার ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কম জলীয় বাষ্প থাকে, তখন তাকে অসম্পৃক্ত বায়ু বলে। এর আপেক্ষিক আর্দ্রতা ১০০% এর কম।

১৯. এল নিনো ও লা নিনার মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর: এল নিনো: এটি একটি উষ্ণ সমুদ্রস্রোত যা পূর্ব প্রশান্ত মহাসাগরে (পেরু-ইকুয়েডর উপকূলে) দেখা যায়। এর প্রভাবে ভারতে খরা এবং পেরু উপকূলে বন্যা হয়। লা নিনা: এটি একটি শীতল সমুদ্রস্রোত যা একই অঞ্চলে দেখা যায়। এর প্রভাবে ভারতে বন্যা এবং পেরু উপকূলে খরা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এরা পরস্পর বিপরীতধর্মী ঘটনা।

২০. পার্বত্য অঞ্চলে বৈপরীত্য উষ্ণতা সৃষ্টি হয় কেন?

উত্তর: রাত্রিবেলায় পার্বত্য অঞ্চলের উপরের অংশের বায়ু তাপ বিকিরণ করে দ্রুত শীতল ও ভারী হয়ে পড়ে। এই শীতল ও ভারী বায়ু মাধ্যাকর্ষণের টানে পর্বতের ঢাল বেয়ে (ক্যাটাবেটিক বায়ু) নীচে উপত্যকায় নেমে আসে। উপত্যকার নীচে আগে থেকে থাকা উষ্ণ ও হালকা বায়ুকে এটি উপরে তুলে দেয়। এর ফলে উপত্যকার নীচে শীতল এবং তার উপরে উষ্ণ বায়ুস্তর অবস্থান করে। এইভাবেই পার্বত্য অঞ্চলে বৈপরীত্য উষ্ণতা সৃষ্টি হয়।

২১. পৃথিবীর বায়ুমণ্ডল না থাকলে কী হত?

উত্তর: বায়ুমণ্ডল না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব অসম্ভব হত।
১. শ্বাসকার্যের অভাব: অক্সিজেন না থাকায় কোনো প্রাণী বাঁচত না।
২. চরম তাপমাত্রা: বায়ুমণ্ডল না থাকলে দিনের বেলায় তাপমাত্রা প্রচণ্ড বেড়ে যেত এবং রাতে প্রচণ্ড কমে যেত।
৩. মহাজাগতিক বস্তুর আঘাত: উল্কাপিণ্ড সরাসরি ভূপৃষ্ঠে আঘাত করত।
৪. আবহাওয়ার অভাব: মেঘ, বৃষ্টি, বায়ুপ্রবাহ কিছুই থাকত না।
৫. শব্দ শোনা যেত না: শব্দ বিস্তারের জন্য মাধ্যম থাকত না।

২২. আয়ন বায়ু ও পশ্চিমা বায়ুর মধ্যে তিনটি পার্থক্য লেখো।

উত্তর: ১. প্রবাহ অঞ্চল: আয়ন বায়ু ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়। পশ্চিমা বায়ু ক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে বৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়।
২. গতিপথ: আয়ন বায়ুর গতিপথ উত্তর গোলার্ধে উত্তর-পূর্ব এবং দক্ষিণ গোলার্ধে দক্ষিণ-পূর্ব। পশ্চিমা বায়ুর গতিপথ উত্তর গোলার্ধে দক্ষিণ-পশ্চিম এবং দক্ষিণ গোলার্ধে উত্তর-পশ্চিম।
৩. প্রকৃতি: আয়ন বায়ুর গতিবেগ তুলনামূলকভাবে কম ও স্থিতিশীল। পশ্চিমা বায়ুর গতিবেগ বেশি, বিশেষত দক্ষিণ গোলার্ধে।

২৩. স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ু কীভাবে জলবায়ুকে প্রভাবিত করে?

উত্তর: স্থলবায়ু ও সমুদ্রবায়ুর প্রভাবে উপকূলবর্তী অঞ্চলের জলবায়ু সমভাবাপন্ন প্রকৃতির হয়। দিনের বেলায় আর্দ্র সমুদ্রবায়ু প্রবাহিত হওয়ায় উষ্ণতা খুব বেশি বাড়তে পারে না। আবার, রাত্রিবেলায় শুষ্ক স্থলবায়ু প্রবাহিত হওয়ায় উষ্ণতা খুব বেশি কমতেও পারে না। এর ফলে উপকূল অঞ্চলে দিন ও রাতের এবং গ্রীষ্ম ও শীতের তাপমাত্রার পার্থক্য কম হয় এবং আবহাওয়া আরামদায়ক থাকে।

২৪. বায়ুমণ্ডলের বিভিন্ন উপাদানের অনুপাত লেখো।

উত্তর: বায়ুমণ্ডলের প্রধান গ্যাসীয় উপাদানগুলি হল:
১. নাইট্রোজেন (N2): ৭৮.০৮%
২. অক্সিজেন (O2): ২০.৯৪%
৩. আর্গন (Ar): ০.৯৩%
৪. কার্বন ডাইঅক্সাইড (CO2): ০.০৪% (প্রায়)
এছাড়া নিয়ন, হিলিয়াম, ক্রিপটন, জেনন, হাইড্রোজেন, ওজোন ইত্যাদি গ্যাস এবং জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা খুব সামান্য পরিমাণে থাকে।

২৫. পরিচলন ও শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টির মধ্যে পার্থক্য লেখো।

উত্তর: ১. কারণ: পরিচলন বৃষ্টি হয় বায়ুর উল্লম্ব পরিচলন স্রোতের কারণে। শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি হয় পর্বতে বাধা পেয়ে বায়ু উপরে ওঠার কারণে।
২. অঞ্চল: পরিচলন বৃষ্টি মূলত নিরক্ষীয় অঞ্চলে হয়। শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি পার্বত্য অঞ্চলে হয়।
৩. প্রকৃতি: পরিচলন বৃষ্টি বজ্রবিদ্যুৎসহ হয় এবং অল্প জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকে। শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টি দীর্ঘ সময় ধরে বিস্তৃত অঞ্চলে হতে পারে এবং এতে সাধারণত বজ্রপাত কম হয়।


ঙ) রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৫ (১০টি)

১. বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতার তারতম্যের প্রধান পাঁচটি কারণ চিত্রসহ আলোচনা করো।

উত্তর:
ভূপৃষ্ঠের সর্বত্র উষ্ণতা সমান নয়। এর প্রধান কারণগুলি হল:
ক) অক্ষাংশ: অক্ষাংশ উষ্ণতা নিয়ন্ত্রণের প্রধান নিয়ামক। নিরক্ষরেখা থেকে যত মেরুর দিকে যাওয়া যায়, সূর্যরশ্মি তত তির্যকভাবে পড়ে। ফলে কম জায়গায় বেশি রশ্মি পড়ায় নিরক্ষীয় অঞ্চলে উষ্ণতা বেশি এবং মেরু অঞ্চলে বেশি জায়গায় কম রশ্মি পড়ায় উষ্ণতা কম হয়। (একটি চিত্র আঁকতে হবে যেখানে সূর্যরশ্মির পতনকোণ দেখানো থাকবে)।
খ) উচ্চতা: ট্রপোস্ফিয়ারে ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রতি ১০০০ মিটার উচ্চতা বৃদ্ধিতে প্রায় ৬.৫° সেলসিয়াস হারে উষ্ণতা কমে। এই কারণে উঁচু পার্বত্য অঞ্চল নীচু সমভূমি অঞ্চলের চেয়ে বেশি শীতল হয়। যেমন – দার্জিলিং কলকাতার চেয়ে শীতল।
গ) স্থলভাগ ও জলভাগের বন্টন: জলভাগের তুলনায় স্থলভাগ দ্রুত উত্তপ্ত ও শীতল হয়। তাই মহাদেশের অভ্যন্তরে চরমভাবাপন্ন (গ্রীষ্মে খুব গরম, শীতে খুব ঠান্ডা) এবং উপকূল অঞ্চলে সমভাবাপন্ন (তাপমাত্রার পার্থক্য কম) জলবায়ু দেখা যায়।
ঘ) সমুদ্রস্রোত: উষ্ণ সমুদ্রস্রোতের প্রভাবে উপকূলবর্তী অঞ্চলের উষ্ণতা বাড়ে (যেমন – উষ্ণ উত্তর আটলান্টিক স্রোতের প্রভাবে পশ্চিম ইউরোপের বন্দর শীতকালেও বরফমুক্ত থাকে)। শীতল স্রোতের প্রভাবে উষ্ণতা কমে (যেমন – শীতল লাব্রাডর স্রোতের প্রভাবে কানাডার পূর্ব উপকূল শীতল থাকে)।
ঙ) বায়ুপ্রবাহ: উষ্ণ অঞ্চল থেকে আসা বায়ু কোনো অঞ্চলের উষ্ণতা বাড়িয়ে দেয় (যেমন – লু)। আবার, শীতল অঞ্চল থেকে আসা বায়ু উষ্ণতা কমিয়ে দেয়।

২. বায়ুমণ্ডলের চাপের তারতম্যের কারণগুলি কী কী? বিভিন্ন চাপবলয়গুলির উৎপত্তি ও অবস্থান বর্ণনা করো।

উত্তর:
চাপের তারতম্যের কারণ: বায়ুর চাপের তারতম্যের প্রধান কারণ হল উষ্ণতা, উচ্চতা, জলীয় বাষ্প এবং পৃথিবীর আবর্তন গতি।
বায়ুচাপ বলয়: পৃথিবীপৃষ্ঠে ৭টি নির্দিষ্ট বায়ুচাপ বলয় রয়েছে।
তাপজনিত কারণ:
১. নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় (৫° উঃ – ৫° দঃ): এখানে সারাবছর সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ায় বায়ু উত্তপ্ত, হালকা ও জলীয় বাষ্পপূর্ণ হয়ে উপরে উঠে যায়। ফলে এখানে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়।
২. মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় (৮০°-৯০° উঃ ও দঃ): এখানে সারাবছর সূর্যরশ্মি তির্যকভাবে পড়ায় প্রচণ্ড শীতলতার কারণে বায়ু ভারী ও সংকুচিত হয়ে উচ্চচাপ সৃষ্টি করে।
গতিজনিত কারণ:
৩. কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় (২৫°-৩৫° উঃ ও দঃ): নিরক্ষীয় অঞ্চল থেকে উপরে ওঠা বায়ু এবং মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চল থেকে আসা বায়ু পৃথিবীর আবর্তনের কারণে এই অঞ্চলে নেমে এসে উচ্চচাপ সৃষ্টি করে।
৪. সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয় (৬০°-৭০° উঃ ও দঃ): পৃথিবীর আবর্তন গতির কারণে এই অঞ্চলের বায়ু বিক্ষিপ্ত হয়ে বাইরে ছিটকে যায়। ফলে এখানে বায়ুর পরিমাণ কমে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়।
(একটি চিত্র আঁকতে হবে যেখানে পৃথিবীর ৭টি চাপ বলয় দেখানো থাকবে)।

৩. উষ্ণতার ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলের স্তরবিন্যাস করে যেকোনো দুটি স্তরের বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

উত্তর:
উষ্ণতার তারতম্য অনুসারে বায়ুমণ্ডলকে প্রধানত পাঁচটি স্তরে ভাগ করা হয়: ট্রপোস্ফিয়ার, স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার, মেসোক্সফিয়ার, থার্মোস্ফিয়ার ও এক্সোস্ফিয়ার।
দুটি স্তরের বৈশিষ্ট্য:
ক) ট্রপোস্ফিয়ার (Troposphere):

  • এটি বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তর, যা ভূপৃষ্ঠ থেকে গড়ে ১২ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • এই স্তরে বায়ুমণ্ডলের মোট গ্যাসীয় ভরের প্রায় ৭৫% এবং সমস্ত ধূলিকণা ও জলীয় বাষ্প থাকে।
  • উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা প্রতি কিমিতে ৬.৫°সে হারে কমে (ল্যাপস রেট)।
  • মেঘ, ঝড়, বৃষ্টি, বজ্রপাত ইত্যাদি সমস্ত আবহাওয়ার ঘটনা এই স্তরেই ঘটে, তাই একে ‘ক্ষুব্ধমণ্ডল’ বলে।
  • এই স্তরের ঊর্ধ্বসীমাকে ট্রপোপজ বলে।
খ) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার (Stratosphere):
  • এটি ট্রপোপজের উপর থেকে প্রায় ৫০ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত।
  • এই স্তরের নীচের অংশে উচ্চতা বাড়লেও উষ্ণতা প্রায় একই থাকে (সমতাপ অঞ্চল), কিন্তু উপরের দিকে ওজোন গ্যাসের উপস্থিতির কারণে উষ্ণতা বাড়তে থাকে।
  • এই স্তরে ধূলিকণা বা জলীয় বাষ্প না থাকায় আবহাওয়া খুব শান্ত থাকে, তাই একে ‘শান্তমণ্ডল’ বলে।
  • শান্ত আবহাওয়ার জন্য জেট বিমানগুলি এই স্তর দিয়ে চলাচল করে।
  • এই স্তরেই ওজোন গ্যাসের স্তর (ওজোনোস্ফিয়ার) অবস্থিত, যা সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি শোষণ করে।

৪. বিভিন্ন প্রকার বৃষ্টিপাতের উৎপত্তি প্রক্রিয়া উপযুক্ত চিত্রসহ আলোচনা করো।

উত্তর:
উৎপত্তি অনুসারে বৃষ্টিপাত প্রধানত তিন প্রকার:
ক) পরিচলন বৃষ্টিপাত: সূর্যতাপে ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত হলে সংলগ্ন বায়ুও উত্তপ্ত, হালকা ও আর্দ্র হয়ে সোজা উপরে উঠে যায়। এই উল্লম্ব বায়ুপ্রবাহকে পরিচলন স্রোত বলে। উপরে উঠে এই বায়ু প্রসারিত ও শীতল হয়ে ঘনীভূত হয় এবং কিউমুলোনিম্বাস মেঘ তৈরি করে। এই মেঘ থেকে বজ্রবিদ্যুৎসহ যে মুষলধারে বৃষ্টি হয়, তাকে পরিচলন বৃষ্টি বলে। নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রতিদিন বিকেলে এই বৃষ্টিপাত হয়।
খ) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত: সমুদ্র থেকে আসা জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুপ্রবাহের পথে কোনো উঁচু পর্বত অবস্থান করলে, সেই বায়ু পর্বতে বাধা পেয়ে তার গা বেয়ে (প্রতিবাত ঢাল) উপরে উঠতে বাধ্য হয়। উপরে উঠে এই বায়ু শীতল হয়ে ঘনীভূত হয় এবং প্রতিবাত ঢালে প্রবল বৃষ্টিপাত ঘটায়। একে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে। পর্বতের অপর ঢালে (অনুবাদ ঢাল) শুষ্ক বায়ু নেমে আসায় বৃষ্টি হয় না, যা বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল নামে পরিচিত।
গ) ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত: কোনো নিম্নচাপ কেন্দ্রকে ঘিরে জলীয় বাষ্পপূর্ণ উষ্ণ বায়ু কুণ্ডলী আকারে উপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায়, তাকে ঘূর্ণবাত বৃষ্টিপাত বলে। ক্রান্তীয় অঞ্চলে এটি বিধ্বংসী ঝড়সহ হয় (সাইক্লোন, হ্যারিকেন)। নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল বায়ুরাশির মিলনে সীমান্তে (Front) দীর্ঘ সময় ধরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টি হয়, যা সীমান্ত বৃষ্টি নামেও পরিচিত।
(প্রতিটি বৃষ্টিপাতের পাশে একটি করে সরল চিত্র আঁকতে হবে)।

৫. বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ ও ফলাফল আলোচনা করো।

উত্তর:
বিশ্ব উষ্ণায়ন: বায়ুমণ্ডলে গ্রিনহাউস গ্যাস (CO2, CH4, CFC, N2O) এর পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই ঘটনাকেই বিশ্ব উষ্ণায়ন বলে।
কারণ:
১. জীবাশ্ম জ্বালানির দহন: শিল্প, যানবাহন, বিদ্যুৎ উৎপাদনে কয়লা, পেট্রোলিয়াম ইত্যাদি পোড়ানোর ফলে প্রচুর পরিমাণে কার্বন ডাইঅক্সাইড নির্গত হয়।
২. অরণ্য নিধন: গাছপালা কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে। নির্বিচারে বনভূমি ধ্বংসের ফলে বায়ুমণ্ডলে CO2-এর পরিমাণ বাড়ছে।
৩. CFC গ্যাসের ব্যবহার: রেফ্রিজারেটর, এসি, স্প্রে ইত্যাদি থেকে নির্গত ক্লোরোফ্লুরোকার্বন (CFC) একটি শক্তিশালী গ্রিনহাউস গ্যাস।
৪. কৃষিকাজ: কৃষিজমি থেকে মিথেন (CH4) ও নাইট্রাস অক্সাইড (N2O) নির্গত হয়।
ফলাফল:
১. হিমবাহের গলন ও সমুদ্রতলের উচ্চতা বৃদ্ধি: উষ্ণতা বাড়ায় মেরু অঞ্চলের বরফ ও পার্বত্য হিমবাহ গলে যাচ্ছে। ফলে সমুদ্রের জলস্তর বেড়ে গিয়ে উপকূলের নিচু এলাকা ও দ্বীপগুলি প্লাবিত হচ্ছে।
২. আবহাওয়ার চরমভাবাপন্নতা: খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, দাবানলের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা বাড়ছে।
৩. জীববৈচিত্র্য হ্রাস: অনেক প্রাণী ও উদ্ভিদ পরিবর্তিত পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।
৪. কৃষিতে প্রভাব: ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে এবং নতুন নতুন রোগপোকার উপদ্রব বাড়ছে।

৬. নিয়ত বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বায়ুচাপ বলয়ের সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।

উত্তর:
নিয়ত বায়ুপ্রবাহ সম্পূর্ণরূপে ভূপৃষ্ঠের স্থায়ী বায়ুচাপ বলয়গুলির উপর নির্ভরশীল। বায়ু সর্বদা উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। এই নিয়ম অনুসারেই নিয়ত বায়ুপ্রবাহগুলি সৃষ্টি হয়েছে:
১. আয়ন বায়ু: কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়।
২. পশ্চিমা বায়ু: কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে বায়ু সুমেরুবৃত্ত ও কুমেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়।
৩. মেরু বায়ু: মেরুদেশীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে বায়ু বৃত্তপ্রদেশীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়।
সুতরাং, চাপ বলয়গুলিই নিয়ত বায়ুপ্রবাহের উৎপত্তিস্থল এবং গন্তব্যস্থল নির্ধারণ করে। যদি চাপ বলয়গুলির অস্তিত্ব না থাকত, তবে নিয়ত বায়ুপ্রবাহেরও সৃষ্টি হত না। এছাড়া, চাপ বলয়গুলির স্থান পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নিয়ত বায়ুপ্রবাহের ক্ষেত্রও পরিবর্তিত হয়, যা বিভিন্ন অঞ্চলের জলবায়ুকে প্রভাবিত করে (যেমন – ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু)।

৭. বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলির শ্রেণিবিভাগ করে জীবজগতে তাদের গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তর:
বায়ুমণ্ডলের উপাদানগুলিকে প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়:
ক) গ্যাসীয় উপাদান: নাইট্রোজেন (৭৮.০৮%), অক্সিজেন (২০.৯৪%), আর্গন (০.৯৩%), কার্বন ডাইঅক্সাইড (০.০৪%), ওজোন, নিয়ন, হিলিয়াম ইত্যাদি।
খ) জলীয় বাষ্প: বায়ুমণ্ডলের একটি পরিবর্তনশীল উপাদান (০-৪%)।
গ) কঠিন কণা (অ্যারোসল): ধূলিকণা, লবণকণা, ভস্মকণা, পরাগরেণু ইত্যাদি।
জীবজগতে গুরুত্ব:
১. অক্সিজেন: জীবজগতের শ্বাসকার্যের জন্য অপরিহার্য।
২. নাইট্রোজেন: প্রোটিন তৈরিতে সাহায্য করে এবং পরোক্ষভাবে উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
৩. কার্বন ডাইঅক্সাইড: উদ্ভিদের সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ার জন্য অত্যাবশ্যক।
৪. ওজোন: সূর্যের ক্ষতিকারক অতিবেগুনি রশ্মি থেকে জীবজগতকে রক্ষা করে।
৫. জলীয় বাষ্প: মেঘ, বৃষ্টি ইত্যাদি সৃষ্টি করে পৃথিবীতে জলের ভারসাম্য বজায় রাখে এবং বায়ুমণ্ডলকে উষ্ণ রাখে।
৬. ধূলিকণা: ধূলিকণাকে আশ্রয় করে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে মেঘ সৃষ্টি করে, যা বৃষ্টিপাতের কারণ।

৮. ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের জীবনচক্র ও প্রভাব আলোচনা করো।

উত্তর:
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত (Tropical Cyclone):
জীবনচক্র: ক্রান্তীয় অঞ্চলের উষ্ণ সমুদ্রে (২৭°সে এর বেশি) সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপকে কেন্দ্র করে এর জন্ম। জলীয় বাষ্পের লীন তাপ এর প্রধান শক্তি। এটি স্থলভাগে প্রবেশ করলে জলীয় বাষ্পের জোগান বন্ধ হয়ে যায় এবং ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে ও শেষে বিলুপ্ত হয়।
প্রভাব: এটি অত্যন্ত বিধ্বংসী হয়। এর প্রভাবে প্রবল বেগে ঝড় (ঘন্টায় ১২০-২৫০ কিমি), মুষলধারে বৃষ্টি এবং সমুদ্রে জলোচ্ছ্বাস হয়। এর ফলে উপকূল অঞ্চলে ব্যাপক জীবন ও সম্পত্তির ক্ষয়ক্ষতি হয়। যেমন – আইলা, আমফান।
নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত (Temperate Cyclone):
জীবনচক্র: নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উষ্ণ ও শীতল দুটি ভিন্নধর্মী বায়ুরাশির মিলনে সীমান্ত (Front) তৈরি হয়। এই সীমান্তে বায়ুর আলোড়নের ফলে ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়। এটি ধীরে ধীরে শক্তি সঞ্চয় করে এবং উষ্ণ ও শীতল বায়ুরাশি সম্পূর্ণ মিশে গেলে (Occluded Front) এটি দুর্বল হয়ে পড়ে ও বিলুপ্ত হয়।
প্রভাব: এটি ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের মতো বিধ্বংসী নয়। এর প্রভাবে দীর্ঘ সময় ধরে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিপাত হয় এবং আবহাওয়া আর্দ্র ও মেঘাচ্ছন্ন থাকে। এটি পশ্চিম ইউরোপের জলবায়ুকে بشكل كبير নিয়ন্ত্রণ করে।

৯. বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে ছাত্রছাত্রীদের ভূমিকা কী হতে পারে?

উত্তর:
বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণে ছাত্রছাত্রীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে:
১. সচেতনতা বৃদ্ধি: ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের পরিবার, বন্ধু ও প্রতিবেশীদের মধ্যে বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণ ও ফলাফল সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে পারে। পোস্টার, নাটক, আলোচনা সভার মাধ্যমে তারা এই কাজ করতে পারে।
২. বৃক্ষরোপণ: স্কুল প্রাঙ্গণে, বাড়ির আশেপাশে বা ফাঁকা জায়গায় গাছ লাগিয়ে এবং তাদের পরিচর্যা করে সবুজায়নে সাহায্য করতে পারে।
৩. শক্তি সংরক্ষণ: অপ্রয়োজনে লাইট, ফ্যান বন্ধ করা, সাইকেল ব্যবহার করা, গণপরিবহণ ব্যবহারে উৎসাহ দেওয়া ইত্যাদি ছোট ছোট অভ্যাসের মাধ্যমে তারা শক্তি সংরক্ষণ করতে পারে, যা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমাবে।
৪. বর্জ্য পদার্থের সঠিক ব্যবহার: প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানো, রিসাইক্লিং-এ উৎসাহ দেওয়া এবং জৈব বর্জ্য থেকে সার তৈরি করার মতো কাজে তারা অংশ নিতে পারে।
৫. জল সংরক্ষণ: জলের অপচয় বন্ধ করে তারা জল সংরক্ষণ করতে পারে, কারণ জল পরিশোধন ও সরবরাহে প্রচুর শক্তি খরচ হয়।
এই সমস্ত কাজের মাধ্যমে ছাত্রসমাজ বিশ্ব উষ্ণায়নের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এক শক্তিশালী যোদ্ধা হয়ে উঠতে পারে।

১০. বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহের মধ্যে সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো। এই প্রসঙ্গে ফেরেলের সূত্র ও বাইস ব্যালট সূত্রের গুরুত্ব লেখো।

উত্তর:
বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহের সম্পর্ক: বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহের মধ্যে কার্যকারণ সম্পর্ক বিদ্যমান। ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন স্থানে চাপের পার্থক্যের কারণেই বায়ুপ্রবাহের সৃষ্টি হয়। বায়ু সর্বদা উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। চাপের পার্থক্য যত বেশি হয়, বায়ুর গতিবেগও তত বেশি হয়। সমচাপরেখাগুলি যখন কাছাকাছি অবস্থান করে, তখন চাপের পার্থক্য বেশি বোঝায় এবং বায়ু প্রবল বেগে প্রবাহিত হয়।
ফেরেলের সূত্রের গুরুত্ব: বায়ু সরাসরি উচ্চচাপ থেকে নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয় না। পৃথিবীর আবর্তন গতির ফলে সৃষ্ট করিওলিস বলের প্রভাবে এটি বেঁকে যায়। ফেরেলের সূত্র এই বাঁকের দিক নির্দেশ করে। এই সূত্র অনুযায়ী, বায়ু উত্তর গোলার্ধে ডানদিকে এবং দক্ষিণ গোলার্ধে বামদিকে বেঁকে যায়। এই সূত্রটি নিয়ত বায়ুপ্রবাহের গতিপথ বুঝতে অপরিহার্য।
বাইস ব্যালট সূত্রের গুরুত্ব: এটি একটি ব্যবহারিক সূত্র যা বায়ুপ্রবাহের দিক দেখে চাপের অবস্থান নির্ণয় করতে সাহায্য করে। এই সূত্র অনুযায়ী, উত্তর গোলার্ধে বায়ুর দিকে পিছন ফিরে দাঁড়ালে ডানদিকে উচ্চচাপ ও বামদিকে নিম্নচাপ থাকে। নাবিক, বিমানচালক ও আবহাওয়াবিদদের কাছে এই সূত্রটি আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

বায়ুমণ্ডল প্রশ্ন উত্তর class 10 MCQ, অতি-সংক্ষিপ্ত, ও রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : Class 10 Geography বায়ুমণ্ডল Question Answer

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top