১. ভূমিকা
১৭শ ও ১৮শ শতাব্দীতে ইউরোপীয় বণিক ও সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলো ব্যবসা সম্প্রসারণ ও উপনিবেশ স্থাপনের জন্য বিভিন্ন কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে। এগুলো মূলত বাণিজ্য কোম্পানি হলেও পরবর্তীতে সামরিক ও প্রশাসনিক শক্তিও লাভ করে। এভাবে ইংরেজ, ডাচ ও অন্যান্য কোম্পানিগুলো নিজেদের শক্তি প্রতিষ্ঠা করে।
২. কোম্পানি শক্তির সূত্রপাত
- ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (East India Company): ১৬০০ সালে ইংল্যান্ডে প্রতিষ্ঠিত।
- বাণিজ্য প্রতিষ্ঠার জন্য ভারতের উপকূলে বন্দর ও স্থলভাগ নেয়।
- ডাচ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি (VOC), পর্তুগিজ ও ফরাসি কোম্পানি প্রতিযোগী ছিল।
৩. শক্তির প্রতিষ্ঠার কারণ
(ক) বাণিজ্য সম্প্রসারণ
- সুগন্ধি, মসলাদার, চা, কাপড়, মণিক ও অন্যান্য দ্রব্যের ব্যবসা।
- বিশ্ববাজারে স্থান দখল করা।
(খ) সামরিক শক্তি অর্জন
- স্থানীয় শাসক ও প্রতিপক্ষের সঙ্গে যুদ্ধের জন্য সৈন্য বাহিনী গঠন।
- সমুদ্রপথে ও স্থলপথে লড়াইয়ে আধিপত্য প্রতিষ্ঠা।
(গ) রাজনৈতিক ক্ষমতা
- স্থানীয় রাজাদের সঙ্গে চুক্তি বা ফৌজদারি পদক্ষেপ।
- রাজ্যের গভর্নর নিয়োগ ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ।
(ঘ) অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ
- কর ও শুল্ক আদায়ের ক্ষমতা লাভ।
- জমিদারি বা ভূমি মালিকানা অর্জন।
৪. প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া
ধাপ ১: বাণিজ্য স্থাপন
- বন্দর ও ভান্ডার স্থাপন।
- বাণিজ্যের নিরাপত্তার জন্য সৈন্য মোতায়েন।
ধাপ ২: স্থানীয় শাসকের সঙ্গে সম্পর্ক
- চুক্তি ও মিত্রতা।
- যুদ্ধ ও বিজয়।
ধাপ ৩: প্রশাসনিক শক্তি গ্রহণ
- জমিদারি ও কর আদায়।
- স্থানীয় প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ।
ধাপ ৪: সাম্রাজ্য বিস্তার
- বৃহত্তর এলাকায় শাসন প্রতিষ্ঠা।
- ফৌজদারি ও বিচার ব্যবস্থা।
৫. উদাহরণ: ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি
- ১৭৫৭ সালে প্লাসি যুদ্ধে বিজয়।
- বাংলার নিয়ন্ত্রণ লাভ ও নবাবের ক্ষমতা হ্রাস।
- ১৭৬৫ সালে দাজিয়া-ই-আম চুক্তি, কর আদায়ের অধিকার লাভ।
- ধীরে ধীরে গোটা ভারতীয় উপমহাদেশে ক্ষমতা বিস্তার।
৬. কোম্পানি শক্তির প্রভাব
- স্থানীয় রাজতন্ত্রের অবনতি।
- ভারতের অর্থনীতি ও সমাজে ব্যাপক পরিবর্তন।
- উপনিবেশিক শাসনের সূচনা।
- বাণিজ্য ও শিল্পের বিকাশের পাশাপাশি শোষণ ও বিদ্রোহ।
৭. সারাংশ
ধাপ | বিবরণ |
বাণিজ্য সম্প্রসারণ | ব্যবসার জন্য বন্দর ও স্থাপনা প্রতিষ্ঠা |
সামরিক শক্তি অর্জন | সৈন্য বাহিনী ও যুদ্ধ কৌশল গঠন |
রাজনৈতিক ক্ষমতা গ্রহণ | চুক্তি ও প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ |
সাম্রাজ্য বিস্তার | বৃহত্তর এলাকা দখল ও শাসন |