জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর

জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর

জ্ঞানচক্ষু (আশাপূর্ণা দেবী)

ক) বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্নাবলী (MCQ) – মান ১ (৫০টি)

১. তপনের লেখা গল্পের নাম কী ছিল?

  • (ক) প্রথম দিন
  • (খ) স্কুল জীবন
  • (গ) জ্ঞানচক্ষু
  • (ঘ) আমার লেখা

২. তপনের নতুন মেসো কেমন ধরনের মানুষ ছিলেন?

  • (ক) ডাক্তার
  • (খ) অধ্যাপক ও লেখক
  • (গ) উকিল
  • (ঘ) ব্যবসায়ী

৩. তপনের লেখা গল্পটি কোন পত্রিকায় ছাপা হয়েছিল?

  • (ক) আনন্দমেলা
  • (খ) শুকতারা
  • (গ) দেশ
  • (ঘ) সন্ধ্যাতারা

৪. “রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই” – কথাটি কে বলেছিল?

  • (ক) তপনের মা
  • (খ) তপনের বাবা
  • (গ) তপনের ছোটো মাসি
  • (ঘ) তপনের মেসোমশাই

৫. তপন তার লেখা গল্পটি প্রথমে কাকে দেখিয়েছিল?

  • (ক) নতুন মেসোকে
  • (খ) ছোটো মাসিকে
  • (গ) মাকে
  • (ঘ) বাবাকে

৬. “জ্ঞানচক্ষু” খুলে গেল – কার?

  • (ক) মেসোর
  • (খ) মাসির
  • (গ) তপনের
  • (ঘ) মায়ের

৭. তপন কোন বিষয়ে গল্প লিখেছিল?

  • (ক) তার বেড়াতে যাওয়ার অভিজ্ঞতা
  • (খ) তার বিদ্যালয়ে ভর্তির অভিজ্ঞতা
  • (গ) তার লেখালেখির অভিজ্ঞতা
  • (ঘ) তার খেলাধুলার অভিজ্ঞতা

৮. ছোটো মাসি তপনের থেকে বয়সে কত বড় ছিল?

  • (ক) বছর পাঁচেকের
  • (খ) বছর দশেকের
  • (গ) বছর আষ্টেকের
  • (ঘ) বছর দুয়েকের

৯. তপনের সম্পূর্ণ নাম কী?

  • (ক) শ্রী তপন রায়
  • (খ) শ্রী তপন কুমার রায়
  • (গ) শ্রী তপন দেব রায়
  • (ঘ) তপনচন্দ্র রায়

১০. তপনের মেসো কোন পত্রিকার সম্পাদককে চিনতেন?

  • (ক) আনন্দমেলা
  • (খ) শুকতারা
  • (গ) সন্ধ্যাতারা
  • (ঘ) নবকল্লোল

১১. “পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে?” – অলৌকিক ঘটনাটি কী?

  • (ক) তপনের লেখা ছাপানো হয়েছে
  • (খ) তপন গল্প লিখেছে
  • (গ) তপনের মেসো একজন লেখক
  • (ঘ) মাসির বিয়ে হয়ে যাওয়া

১২. ‘কারেকশন’ কথাটির অর্থ কী?

  • (ক) সংযোজন
  • (খ) বিয়োজন
  • (গ) সংশোধন
  • (ঘ) অনুকরণ

১৩. তপন কোথায় বসে তার প্রথম গল্পটি লিখেছিল?

  • (ক) ছাদে
  • (খ) পড়ার ঘরে
  • (গ) তিনতলার সিঁড়িতে
  • (ঘ) মামারবাড়ির বিছানায়

১৪. গল্প ছাপার পর তপনের লেখক-মেসোকে কী খেতে হয়েছিল?

  • (ক) কফি
  • (খ) ডিমভাজা ও চা
  • (গ) লুচি ও আলুরদম
  • (ঘ) ডালভাত

১৫. “গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তপনের।” – কারণ কী?

  • (ক) ভয়ে
  • (খ) শীতে
  • (গ) আনন্দে ও উত্তেজনায়
  • (ঘ) দুঃখে

১৬. তপনের লেখা গল্প তার মেসোর হাতে পড়ার পর কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

  • (ক) তিনি খুব প্রশংসা করেন
  • (খ) তিনি একটু কারেকশনের কথা বলেন
  • (গ) তিনি তপনকে বকাবকি করেন
  • (ঘ) তিনি গল্পটি ছিঁড়ে ফেলেন

১৭. “যেন নেশায় পেয়েছে।” – কিসের নেশা?

  • (ক) বই পড়ার
  • (খ) গল্প লেখার
  • (গ) ঘুড়ি ওড়ানোর
  • (ঘ) সিনেমা দেখার

১৮. তপন কোন সময়ে গল্পটি লিখেছিল?

  • (ক) সকালে
  • (খ) গভীর রাতে
  • (গ) দুপুরবেলায়
  • (ঘ) বিকেলে

১৯. “আমাদের থাকলে আমরাও চেষ্টা করে দেখতাম।” – উক্তিটি কার?

  • (ক) তপনের বাবা
  • (খ) তপনের মা
  • (গ) তপনের মেজো কাকু
  • (ঘ) ছোটো মাসি

২০. তপনের লেখা গল্পে ‘কারেকশন’ করে দিয়েছিলেন –

  • (ক) ছোটোমাসি
  • (খ) নতুন মেসো
  • (গ) বাবা
  • (ঘ) মা

২১. তপনের গল্প পড়ে ছোটোমাসি কী বলেছিল?

  • (ক) “দারুণ লিখেছিস তো!”
  • (খ) “এ তো বেশ হয়েছে!”
  • (গ) “কোনখান থেকে টুকলিফাই করলি?”
  • (ঘ) “এটা আবার লেখা হয়েছে নাকি?”

২২. তপনের কাছে তার মেসোমশাই কীসের মতো ছিলেন?

  • (ক) বাবা-কাকার মতো
  • (খ) শিক্ষকের মতো
  • (গ) দেবতার মতো
  • (ঘ) বন্ধুর মতো

২৩. “ছোটোমাসি সেই দিকে ধাবিত হয়।” – ছোটোমাসি কোন দিকে ধাবিত হয়?

  • (ক) তপনের ঘরের দিকে
  • (খ) রান্নাঘরের দিকে
  • (গ) তপনের নতুন মেসোর দিকে
  • (ঘ) ছাদের দিকে

২৪. “বিকেলে চায়ের টেবিলে ওঠে কথাটা” – কোন কথাটা?

  • (ক) তপনের লেখা গল্পের কথা
  • (খ) তপনের পরীক্ষার ফলের কথা
  • (গ) তপনের মেসোর লেখার কথা
  • (ঘ) তপনের মাসির রান্নার কথা

২৫. তপনের মেসো কোন গাড়িতে করে মামারবাড়ি এসেছিলেন?

  • (ক) ট্যাক্সি
  • (খ) বাস
  • (গ) ট্রেন
  • (ঘ) গল্পের মধ্যে এর উল্লেখ নেই

২৬. “ক্রমশ ও কথাটাও ছড়িয়ে পড়ে” – কোন কথাটা?

  • (ক) তপনের বিয়ের কথা
  • (খ) তপনের গল্প লেখার কথা
  • (গ) তপনের গল্পে কারেকশনের কথা
  • (ঘ) তপনের অসুস্থতার কথা

২৭. “বাবা, তোর পেটে পেটে এত?” – উক্তিটি কার?

  • (ক) বাবা
  • (খ) মেসো
  • (গ) মা
  • (ঘ) মেজো কাকু

২৮. “তপন অবশ্য মাসির এই ব্যবহারে কম বিস্মিত হয়” – কারণ কী?

  • (ক) মাসি এরকমই
  • (খ) মাসি তাকে ভালোবাসে
  • (গ) নতুন বিয়ে হয়েছে বলে মাসির এরকম আহ্লাদ
  • (ঘ) মাসি তপনের লেখা পছন্দ করেনি

২৯. তপন লেখা গল্পটা কতবার পড়েছিল?

  • (ক) একবার
  • (খ) দুই-তিনবার
  • (গ) গুনে শেষ করা যায় না
  • (ঘ) দশবার

৩০. ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি কোন গল্পসংকলন থেকে নেওয়া হয়েছে?

  • (ক) শ্রেষ্ঠ গল্প
  • (খ) কুমকুম
  • (গ) গল্প সমগ্র
  • (ঘ) ভূমিকা

৩১. “শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন” – কী সংকল্প করে?

  • (ক) আর গল্প লিখবে না
  • (খ) মেসোর সাথে কথা বলবে না
  • (গ) লেখা ছাপা হলে নিজে গিয়ে দেবে
  • (ঘ) মাসির বাড়ি যাবে না

৩২. ছাপানো গল্পের প্রত্যেকটি লাইন তপনের কেমন মনে হচ্ছিল?

  • (ক) খুব পরিচিত
  • (খ) নতুন আনকোরা
  • (গ) দুর্বোধ্য
  • (ঘ) নিজের লেখা নয়

৩৩. “যে ভয়ঙ্কর আহ্লাদটা হবার কথা, সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না।” – কেন?

  • (ক) কারণ সবাই তাকে নিয়ে ঠাট্টা করছিল
  • (খ) কারণ গল্পটি তার ভালো লাগেনি
  • (গ) কারণ লেখার কৃতিত্ব মেসো নিয়ে নিয়েছিল
  • (ঘ) কারণ পত্রিকাটা পুরনো ছিল

৩৪. তপনের চোখে জল এসে গিয়েছিল কারণ—

  • (ক) আনন্দের জন্য
  • (খ) অপমানের জন্য
  • (গ) ভয়ের জন্য
  • (ঘ) आश्चর্যের জন্য

৩৫. ‘লেখক’ সম্পর্কে তপনের ধারণা কেমন ছিল?

  • (ক) তারা সাধারণ মানুষ
  • (খ) তারা ভিন্ন জগতের প্রাণী
  • (গ) তারা খুব অহংকারী হয়
  • (ঘ) তারা তপনের মতোই

৩৬. তপনের ছুটি চলছিল কারণ—

  • (ক) পূজোর ছুটি
  • (খ) গরমের ছুটি
  • (গ) বড়দিনের ছুটি
  • (ঘ) অসুস্থতার ছুটি

৩৭. “লেখক মানে কোনো আকাশ থেকে পড়া জীব নয়”— একথা কে বুঝেছিল?

  • (ক) ছোটো মাসি
  • (খ) নতুন মেসো
  • (গ) তপন
  • (ঘ) তপনের মা

৩৮. তপনের লেখা গল্পটি মাসির হাতে দিয়ে সে কী করেছিল?

  • (ক) লজ্জায় ছাদে পালিয়ে গিয়েছিল
  • (খ) মাসির পাশে বসেছিল
  • (গ) মেসোর কাছে গিয়েছিল
  • (ঘ) খেলা করতে গিয়েছিল

৩৯. “আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন” — কার কথা বলা হয়েছে?

  • (ক) তপনের
  • (খ) মাসির
  • (গ) মেসোর
  • (ঘ) মায়ের

৪০. তপন তার মাকে কী পড়তে বলেছিল?

  • (ক) একটি কবিতা
  • (খ) একটি উপন্যাস
  • (গ) তার ছাপানো গল্পটি
  • (ঘ) একটি চিঠি

৪১. “এর মধ্যে তপন কোথা?” – এই প্রশ্ন তপনের মনে জেগেছিল কেন?

  • (ক) গল্পের বিষয়বস্তু পাল্টে যাওয়ায়
  • (খ) গল্পের ভাষা সম্পূর্ণ পাল্টে যাওয়ায়
  • (গ) লেখকের নাম পাল্টে যাওয়ায়
  • (ঘ) গল্পটি খুব ছোট হয়ে যাওয়ায়

৪২. ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার সূচিপত্রে কী লেখা ছিল?

  • (ক) প্রথম দিন (গল্প) শ্রী তপন কুমার রায়
  • (খ) প্রথম লেখা (গল্প) শ্রী তপন রায়
  • (গ) আমার স্কুল (গল্প) শ্রী তপন কুমার রায়
  • (ঘ) আমার দিন (গল্প) তপন কুমার রায়

৪৩. “মেসো তার জ্ঞানচক্ষু খুলে দিল” – উক্তিটি কার?

  • (ক) তপনের বাবা
  • (খ) তপনের মা
  • (গ) তপনের মেজো কাকু
  • (ঘ) তপনের ছোটো মাসি

৪৪. তপন যখন ছাদে চলে যায়, তখন তার হাতে কী ছিল?

  • (ক) বই
  • (খ) খাতা
  • (গ) সন্ধ্যাতারা পত্রিকা
  • (ঘ) কলম

৪৫. ‘জ্ঞানচক্ষু’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে?

  • (ক) তৃতীয় নয়ন
  • (খ) দিব্যজ্ঞান
  • (গ) অন্তর্দৃষ্টির জাগরণ
  • (ঘ) বই পড়া জ্ঞান

৪৬. তপনের মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে কোনটি?

  • (ক) গল্পটি ছিঁড়ে ফেলা
  • (খ) গল্পটি ছাপিয়ে দেওয়া
  • (গ) তপনকে বকা দেওয়া
  • (ঘ) তপনকে উৎসাহ দেওয়া

৪৭. তপন কোন ক্লাসে পড়ত?

  • (ক) নবম শ্রেণি
  • (খ) দশম শ্রেণি
  • (গ) একাদশ শ্রেণি
  • (ঘ) গল্পে উল্লেখ নেই

৪৮. “ঢং করতে করতে অর্ধেক জীবন গেল” – কথাটি কে বলেছিল?

  • (ক) মা
  • (খ) বাবা
  • (গ) মেজো কাকু
  • (ঘ) মাসি

৪৯. তপনের গল্প লেখার মূল অনুপ্রেরণা কে ছিল?

  • (ক) ছোটো মাসি
  • (খ) নতুন মেসো
  • (গ) মা
  • (ঘ) তার শিক্ষকমশাই

৫০. গল্পের শেষে তপন কী মুছতে মুছতে জামার হাতা দিয়ে চোখ মোছে?

  • (ক) ঘাম
  • (খ) কালি
  • (গ) ধুলো
  • (ঘ) জল

খ) অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী (SAQ) – মান ১ (৪০টি)

১. ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি কার লেখা?

উত্তর: ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি প্রখ্যাত সাহিত্যিক আশাপূর্ণা দেবীর লেখা।

২. তপনের লেখা প্রথম গল্পটির বিষয়বস্তু কী ছিল?

উত্তর: তপনের লেখা প্রথম গল্পটির বিষয়বস্তু ছিল তার স্কুলে ভরতির দিনের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতি।

৩. তপনের নতুন মেসো কী কাজ করতেন?

উত্তর: তপনের নতুন মেসো কলেজে অধ্যাপনা করতেন এবং লেখালেখি করতেন।

৪. “এ তো ভয়ানক অপমানের কথা” – কোন কথাকে অপমানের বলা হয়েছে?

উত্তর: নিজের লেখা গল্পে অন্যের থেকে কারেকশন বা সংশোধন করে নেওয়াকে তপন ভয়ানক অপমানের কথা মনে করেছে।

৫. তপনের গল্পটি কোন পত্রিকায় ছাপানোর কথা হয়েছিল?

উত্তর: তপনের গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপানোর কথা হয়েছিল।

৬. “তপন আর পড়তে পারে না” – কেন পড়তে পারে না?

উত্তর: তপন আর পড়তে পারে না কারণ লজ্জায় ও অপমানে তার গলা বুজে এসেছিল।

৭. লেখক সম্পর্কে তপনের কী ধারণা ছিল?

উত্তর: লেখক সম্পর্কে তপনের ধারণা ছিল যে, তারা সাধারণ মানুষ নন, অন্য জগতের বা আকাশ থেকে পড়া জীব।

৮. তপন কার উৎসাহে গল্প লিখেছিল?

উত্তর: তপন তার নতুন লেখক মেসোকে দেখে গল্প লেখার উৎসাহ পেয়েছিল।

৯. ছোটোমাসি তপনের গল্পটি নিয়ে কী করেছিল?

উত্তর: ছোটোমাসি তপনের গল্পটি তার স্বামী অর্থাৎ তপনের নতুন মেসোকে দেখিয়েছিলেন।

১০. তপনের গল্প লেখার কথা শুনে বাড়ির লোকের কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

উত্তর: তপনের গল্প লেখার কথা শুনে বাড়ির সবাই তাকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা করেছিল।

১১. “শুধু কারেকশনের নামে…” – কারেকশনের নামে মেসো কী করেছিলেন?

উত্তর: কারেকশনের নামে মেসোমশাই তপনের লেখা গল্পটির প্রায় পুরোটাই বদলে দিয়েছিলেন।

১২. “বুকের রক্ত ছলকে ওঠে তপনের” – কখন এমন হয়েছিল?

উত্তর: ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা হাতে নিয়ে সূচিপত্রে নিজের নাম ও গল্পের নাম দেখে তপনের বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল।

১৩. ‘জ্ঞানচক্ষু’ কথাটির অর্থ কী?

উত্তর: ‘জ্ঞানচক্ষু’ কথাটির অর্থ হলো অন্তর্দৃষ্টি বা ভেতরের দৃষ্টির উন্মোচন।

১৪. তপন কখন তার ভুল বুঝতে পেরেছিল?

উত্তর: যখন সে দেখল যে ছাপানো গল্পটি তার নিজের লেখা নয়, পুরোটাই মেসোর কারেকশন, তখন তপন তার ভুল বুঝতে পেরেছিল।

১৫. গল্পের শেষে তপন কী সংকল্প করেছিল?

উত্তর: গল্পের শেষে তপন সংকল্প করেছিল যে, ভবিষ্যতে যদি কখনও লেখা ছাপাতে হয়, তবে সে নিজে গিয়ে পত্রিকার দপ্তরে দিয়ে আসবে।

১৬. “আমাদের থাকলে আমরাও চেষ্টা করে দেখতাম।” – কে, কেন এ কথা বলেছিল?

উত্তর: তপনের মেজো কাকু ঠাট্টা করে এ কথা বলেছিলেন, কারণ তাদের বাড়িতে তপনের মতো কোনো লেখক মেসো ছিল না।

১৭. তপন তার লেখা গল্পটি কতবার পড়েছিল?

উত্তর: তপন তার লেখা গল্পটি নিজেই বারবার, গুনে শেষ করা যায় না এমনভাবে পড়েছিল।

১৮. “তপনের হাত আছে” – কে এই মন্তব্য করেন?

উত্তর: তপনের নতুন মেসোমশাই এই মন্তব্য করেন।

১৯. তপনের মাসি তার থেকে কত বছরের বড় ছিল?

উত্তর: তপনের মাসি তার থেকে বছর আষ্টেকের বড় ছিল।

২০. কোন ঋতুতে তপন মামাবাড়ি গিয়েছিল?

উত্তর: তপন গরমের ছুটিতে মামাবাড়ি গিয়েছিল।

২১. “যেন নেশায় পেয়েছে” – কীসের নেশার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: এখানে গল্প লেখার নেশার কথা বলা হয়েছে।

২২. তপনের মায়ের মতে তপনের পেটে পেটে কী ছিল?

উত্তর: তপনের মায়ের মতে তপনের পেটে পেটে এত গল্প লেখার প্রতিভা ছিল।

২৩. “একটু ‘কারেকশন’ করে ইয়ে করে দিলে ছাপাতে দেওয়া চলে” – কে, কাকে এ কথা বলেছিল?

উত্তর: তপনের নতুন মেসো তার স্ত্রী অর্থাৎ তপনের ছোটো মাসিকে এ কথা বলেছিলেন।

২৪. ‘জহুরি’ শব্দটির অর্থ কী?

উত্তর: ‘জহুরি’ শব্দটির অর্থ হলো যিনি রত্ন চেনেন বা রত্ন পরীক্ষক।

২৫. তপন কোথায় বসে গল্প লিখেছিল?

উত্তর: তপন দুপুরবেলায় তিনতলার সিঁড়িতে বসে গল্প লিখেছিল।

২৬. “কথাটা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গেল” – কোন কথা শুনে?

উত্তর: তার নতুন মেসো যে একজন সত্যিকারের লেখক, এই কথা শুনে তপনের চোখ মার্বেল হয়ে গিয়েছিল।

২৭. মেসোর কোন কথায় তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল?

উত্তর: মেসোর কারেকশনের ফলে তার নিজের লেখার অস্তিত্ব প্রায় মুছে যাওয়ায় তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল।

২৮. ছাপানো গল্পের লেখকের নাম কী ছিল?

উত্তর: ছাপানো গল্পের লেখকের নাম ছিল শ্রী তপন কুমার রায়।

২৯. তপনের বাবা কী বলে ঠাট্টা করেছিলেন?

উত্তর: তপনের বাবা বলেছিলেন যে, মেসো তার জ্ঞানচক্ষু খুলে দিয়েছে।

৩০. কেন তপনের কাছে দিনটি সবচেয়ে দুঃখের মনে হয়েছিল?

উত্তর: নিজের লেখার গৌরব অন্যের দ্বারা ছিনিয়ে যাওয়ার অপমানে তপনের কাছে দিনটি সবচেয়ে দুঃখের মনে হয়েছিল।

৩১. “এমন সময় ঘটল সেই ঘটনা” – কোন ঘটনার কথা বলা হয়েছে?

উত্তর: তপনের ছোটোমাসি ও নতুন মেসো ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা হাতে নিয়ে তাদের বাড়িতে আসার ঘটনার কথা বলা হয়েছে।

৩২. তপন কিসের জন্য দিন গুনছিল?

উত্তর: তপন তার লেখা গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় কবে ছাপা হবে তার জন্য অধীর আগ্রহে দিন গুনছিল।

৩৩. “এর প্রত্যেকটি লাইন তো নতুন আনকোরা” – কেন এমন মনে হয়েছিল?

উত্তর: কারণ মেসোর ‘কারেকশন’-এর ফলে তপন নিজের লেখার কোনো অংশই খুঁজে পাচ্ছিল না।

৩৪. তপন কোথায় পালিয়ে গিয়েছিল?

উত্তর: মাসির হাতে গল্পের খাতাটি দিয়ে তপন লজ্জায় ছাদে পালিয়ে গিয়েছিল।

৩৫. তপনের মেসোকে দেখে কেন তপনের জ্ঞানচক্ষু খুলে গিয়েছিল?

উত্তর: কারণ তপন বুঝতে পেরেছিল যে লেখকরা তার বাবা বা কাকার মতোই সাধারণ মানুষ।

৩৬. “গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তপনের” – কেন?

উত্তর: নিজের লেখা গল্প ছাপার অক্ষরে পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে—এই আনন্দের অনুভূতিতে তপনের গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিল।

৩৭. তপন কার কাছে লজ্জা পেয়েছিল?

উত্তর: তপন নিজের কাছেই সবচেয়ে বেশি লজ্জা পেয়েছিল।

৩৮. তপনের মাসি কী নিয়ে তপনদের বাড়ি এসেছিল?

উত্তর: তপনের মাসি এক সংখ্যা ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা নিয়ে তপনদের বাড়ি এসেছিল।

৩৯. “পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে?” – অলৌকিক ঘটনাটি কী?

উত্তর: অলৌকিক ঘটনাটি হল, তপনের মতো এক সাধারণ ছেলের লেখা গল্প পত্রিকায় ছাপা হয়েছে।

৪০. গল্পের শেষে তপন কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়?

উত্তর: গল্পের শেষে তপন তার ঘরের দরজা বন্ধ করে ছাদে গিয়ে দাঁড়ায়।


গ) সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্নাবলী – মান ৩ (২৫টি)

১. “রত্নের মূল্য জহুরির কাছেই” – প্রসঙ্গ উল্লেখ করে কথাটির তাৎপর্য ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: তপনের লেখা গল্পটি পড়ে তার ছোটোমাসি যখন তার লেখক স্বামীকে দেখানোর কথা ভাবে, তখন এই উক্তিটি করে। এখানে, তপনের লেখা গল্পকে ‘রত্ন’ এবং তার লেখক মেসোকে ‘জহুরি’ বা রত্ন-বিশেষজ্ঞের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। মাসির মতে, তপনের গল্পের প্রকৃত মূল্য একমাত্র তার লেখক স্বামীই বুঝতে পারবেন, যেমন একজন জহুরিই পারেন আসল রত্নের কদর করতে।

২. “জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের” – তপনের জ্ঞানচক্ষু কীভাবে খুলেছিল?

উত্তর: ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের দু’বার জ্ঞানচক্ষু খুলেছিল। প্রথমবার, যখন সে তার লেখক মেসোকে দেখে বুঝতে পারে যে লেখকরা কোনো ভিনগ্রহের প্রাণী নন, তারাও সাধারণ মানুষ। দ্বিতীয়বার এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে, যখন সে দেখে যে তার লেখা গল্পটি মেসোর ‘কারেকশন’-এর নামে প্রায় পুরোটাই বদলে গেছে। এই ঘটনায় সে authorship-এর প্রকৃত অর্থ এবং পরনির্ভরশীলতার গ্লানি উপলব্ধি করে, যা তার সত্যিকারের জ্ঞানচক্ষু খুলে দেয়।

৩. “পৃথিবীতে এমন অলৌকিক ঘটনাও ঘটে?” – কোন ঘটনাকে অলৌকিক বলা হয়েছে? কেন?

উত্তর: তপনের লেখা গল্প ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, এই ঘটনাকেই অলৌকিক বলা হয়েছে। তপনের কাছে লেখকরা ছিলেন অতিমানবীয়, অন্য জগতের বাসিন্দা। তার মতো এক সাধারণ ছেলের লেখা ছাপার অক্ষরে প্রকাশিত হওয়াটা তার কাছে অবিশ্বাস্য ও অলৌকিক বলে মনে হয়েছিল, কারণ সে নিজেকে কখনও লেখকের পর্যায়ে ভাবতেই পারেনি।

৪. “তপনের লেখা ছাপার অক্ষরে বের হলে তাঁর কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?”

উত্তর: নিজের লেখা ছাপার অক্ষরে দেখে তপনের প্রথমে গায়ে কাঁটা দিয়েছিল এবং বুকের রক্ত ছলকে উঠেছিল। কিন্তু যখন সে পড়তে গিয়ে দেখল যে মেসোর কারেকশনের ফলে লেখার প্রায় কিছুই তার নিজের নয়, তখন তার সমস্ত আনন্দ 사라 যায়। সে অপমানিত ও লজ্জিত বোধ করে এবং তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন বলে মনে হয়।

৫. “শুধু এই দুঃখের মুহূর্তে গভীরভাবে সংকল্প করে তপন” – কোন দুঃখের মুহূর্তে সে কী সংকল্প করেছিল?

উত্তর: নিজের লেখা গল্পের কৃতিত্ব যখন মেসোমশাই কার্যত ছিনিয়ে নেন এবং সবাই তার প্রশংসা করতে থাকে, তখন তপন এক গভীর দুঃখ ও অপমানে নিমজ্জিত হয়। সেই মুহূর্তে সে সংকল্প করে যে, যদি কখনও লেখা ছাপাতে হয়, তবে সে নিজে পত্রিকার সম্পাদকের কাছে গিয়ে জমা দেবে। প্রয়োজনে লেখা না ছাপা হলেও, অন্যের নামে নিজের লেখা ছাপানোর গ্লানি সে আর বহন করবে না।

৬. “গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল তপনের।” – তপনের গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠার কারণ কী?

উত্তর: হাজার হাজার ছেলের হাতে যে ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা ঘুরছে, তাতে তার নিজের লেখা গল্প ছাপা হয়েছে—এই ভাবনা তপনকে রোমাঞ্চিত করে তোলে। নিজের সৃষ্টি ছাপার অক্ষরে দেখার যে তীব্র আনন্দ ও গর্ব, সেই অনুভূতিতেই তার সর্বাঙ্গে কাঁটা দিয়ে ওঠে। এটি ছিল একজন নবীন লেখকের আত্মপ্রকাশের প্রাথমিক উচ্ছ্বাস।

৭. তপনের নতুন মেসোকে দেখে তার কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল?

উত্তর: তপন ভেবেছিল লেখকরা সাধারণ মানুষের মতো নন। কিন্তু তার নতুন মেসোকে সে দাড়ি কামাতে, সিগারেট খেতে, এবং সাধারণ মানুষের মতো আচরণ করতে দেখে। এই অভিজ্ঞতা তার লেখক সম্পর্কে পূর্বের অলীক ধারণা ভেঙে দেয় এবং সে বুঝতে পারে যে লেখকরাও তার বাবা বা কাকার মতোই সাধারণ মানুষ। এই উপলব্ধিই তার প্রথম ‘জ্ঞানচক্ষু’ খুলে দেয়।

৮. “তপন আর পড়তে পারে না। বোবার মতো বসে থাকে।” – তপনের এই অবস্থার কারণ ব্যাখ্যা করো।

উত্তর: মা যখন তপনকে তার ছাপানো গল্পটি পড়তে বলেন, তখন সে পড়তে গিয়ে বুঝতে পারে যে লেখার প্রতিটি লাইন মেসোর দ্বারা পরিবর্তিত। তার নিজের লেখার কোনো চিহ্নই সেখানে নেই। এই চরম অপমান ও হতাশায় তার গলা বুজে আসে। নিজের সৃষ্টির এই বিকৃতি দেখে সে এতটাই মর্মাহত হয় যে তার মুখ দিয়ে আর কোনো কথা বেরোয় না, তাই সে বোবার মতো বসে থাকে।

৯. “বিকেলে চায়ের টেবিলে ওঠে কথাটা” – কোন কথা? এর প্রতিক্রিয়া কী হয়েছিল?

উত্তর: বিকেলে চায়ের টেবিলে তপনের গল্প লেখার কথাটা ওঠে। এই কথা শুনে বাড়ির সবাই, বিশেষ করে মেজো কাকু, তপনকে নিয়ে ঠাট্টা-তামাশা শুরু করে। তারা বিশ্বাসই করতে পারেনি যে তপন গল্প লিখতে পারে। তবে, তার নতুন মেসোমশাই বিষয়টিকে গুরুত্ব দেন এবং গল্পটি দেখতে চান, যা পরবর্তী ঘটনার সূত্রপাত করে।

১০. তপনের ছোটোমাসির চরিত্রটি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

উত্তর: তপনের ছোটোমাসি চরিত্রটি কিছুটা অপরিণত ও স্বামীগর্বে গর্বিত। সে তপনকে ভালোবাসলেও তার লেখক স্বামীকে নিয়ে তার গর্ব অনেক বেশি। তপনের গল্প লেখার প্রতিভাকে সে প্রথমে ঠাট্টা করে, কিন্তু পরে মেসোর কাছে নিয়ে গিয়ে তার গুরুত্ব বাড়াতে চায়। তার আচরণে স্নেহ থাকলেও আত্মকেন্দ্রিকতা ও লোকদেখানো মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে।

১১. “যেন নেশায় পেয়েছে।” – কীসের নেশা? এই নেশার পরিণতি কী হয়েছিল?

উত্তর: এখানে তপনের গল্প লেখার নেশার কথা বলা হয়েছে। নতুন মেসোকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তপন একটি আস্ত গল্প লিখে ফেলে এবং তারপর সে লেখাটাকে বারবার পড়ে। এই নেশার বশেই সে তার প্রথম সাহিত্য সৃষ্টি করে। এই নেশার পরিণতি হয় দ্বিমুখী: একদিকে তার লেখা পত্রিকায় ছাপা হয়, কিন্তু অন্যদিকে মেসোর ‘কারেকশন’-এর কারণে সে চরম অপমান ও দুঃখ পায়, যা তার লেখকসত্তাকে আরও দৃঢ় করে তোলে।

১২. “কিন্তু হলে কী হবে!” – কী হলে কী হবে? এর কারণ কী?

উত্তর: তপনের লেখা গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। এটি একটি আনন্দের ঘটনা, কিন্তু তাতেও তপনের আনন্দ হয়নি। এর কারণ হলো, ‘কারেকশন’-এর নামে তার মেসোমশাই গল্পটির আগাগোড়া বদলে দিয়েছিলেন। ফলে, গল্পটি ছাপা হলেও তপন তার মধ্যে নিজের লেখকসত্তাকে খুঁজে পায়নি। তাই বাহ্যিক সাফল্য সত্ত্বেও সে आंतरिक আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়।

১৩. “মেসোর উপযুক্ত কাজ হবে সেটা।” – কোন কাজকে উপযুক্ত বলা হয়েছে? কেন?

উত্তর: তপনের লেখা গল্পটি ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় ছাপিয়ে দেওয়াকে তপনের মাসি তার স্বামীর জন্য উপযুক্ত কাজ বলে মনে করেছে। কারণ তার স্বামী একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক এবং পত্রিকার সম্পাদকের সঙ্গে তার চেনা-জানা আছে। মাসির মতে, একজন নবীন প্রতিভাকে (তপন) সুযোগ করে দেওয়া একজন প্রতিষ্ঠিত লেখকের (মেসো) দায়িত্ব ও কর্তব্য।

১৪. “একটু ‘কারেকশন’ করে ইয়ে করে দিলে ছাপাতে দেওয়া চলে” – বক্তার এই মন্তব্যের মধ্যে দিয়ে তাঁর চরিত্রের কোন দিকটি ফুটে ওঠে?

উত্তর: এই মন্তব্যটি তপনের নতুন মেসোর। এর মধ্যে দিয়ে তাঁর চরিত্রের দুটি দিক ফুটে ওঠে। প্রথমত, তিনি তপনের লেখার মধ্যে সম্ভাবনা দেখতে পেয়েছেন এবং তাকে উৎসাহ দিতে চেয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তাঁর মধ্যে এক ধরনের প্রচ্ছন্ন আত্মবিশ্বাস ও অভিভাবকসুলভ মনোভাব রয়েছে। তিনি মনে করেন, তার সামান্য ‘কারেকশন’ ছাড়া লেখাটি ছাপার যোগ্য হবে না। এই মনোভাবই পরে তপনের দুঃখের কারণ হয়।

১৫. “আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন।” – কেন তপনের এমন মনে হয়েছিল?

উত্তর: তপনের কাছে দিনটি দুঃখের ছিল কারণ সে নিজের নামে অপরের লেখা ছাপানোর গ্লানি অনুভব করছিল। যে গল্পটি ছাপা হয়েছিল, তা আদতে তার নিজের লেখা ছিল না। তার সৃষ্টিশীলতার প্রথম স্বীকৃতি এমন এক মিথ্যার উপর দাঁড়িয়েছিল, যা তাকে তীব্রভাবে আহত করে। নিজের পরিচয়ে পরিচিত না হওয়ার এই যন্ত্রণা তার কাছে জীবনের সবচেয়ে বড় দুঃখ হয়ে দেখা দেয়।

১৬. “বাবা, তোর পেটে পেটে এত?” – উক্তিটির প্রেক্ষাপট আলোচনা করো।

উত্তর: তপনের লেখা গল্পের কথা শুনে তার মা অবাক হয়ে এই উক্তিটি করেন। তপন যে লুকিয়ে লুকিয়ে একটা আস্ত গল্প লিখে ফেলতে পারে, এটা তার মায়ের কাছে ছিল এক বিস্ময়কর ঘটনা। এই উক্তির মধ্যে দিয়ে ছেলের অপ্রত্যাশিত প্রতিভায় এক মায়ের স্নেহমাখা বিস্ময় ও আনন্দ প্রকাশ পেয়েছে। তিনি ভাবতেই পারেননি তার শান্তশিষ্ট ছেলের ভেতরে এমন সৃজনশীল ক্ষমতা লুকিয়ে আছে।

১৭. “ক্রমশ ও কথাটাও ছড়িয়ে পড়ে।” – কোন কথা? তা ছড়িয়ে পড়ার ফল কী হয়েছিল?

উত্তর: তপনের লেখা গল্পটি যে তার মেসোমশাই ‘কারেকশন’ করে দিয়েছেন, এই কথাটিই ছড়িয়ে পড়ে। এর ফলে, তপনের কৃতিত্বের প্রশংসা না করে সবাই মেসোর মহানুভবতার জয়গান গাইতে শুরু করে। তপনের বাবা, মেজো কাকু সকলেই বলতে থাকে যে, এমন একজন মেসো থাকা ভাগ্যের ব্যাপার। এর ফলে তপনের নিজস্ব কৃতিত্ব চাপা পড়ে যায় এবং সে নিজেকে আরও অপমানিত বোধ করে।

১৮. তপনের চরিত্রটি তোমার কেমন লেগেছে? সংক্ষেপে লেখো।

উত্তর: তপন একটি সংবেদনশীল, আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন ও সৃজনশীল কিশোর। প্রথমে সে লেখক সম্পর্কে অলীক ধারণা পোষণ করলেও পরে বাস্তবতার সম্মুখীন হয়। তার মধ্যে যেমন লেখক হওয়ার স্বপ্ন আছে, তেমনই আছে নিজের সৃষ্টির প্রতি মমতা। মেসোর হস্তক্ষেপে আহত হলেও সে ভেঙে পড়েনি, বরং আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হয়েছে। তার এই আত্মমর্যাদা ও দৃঢ়তাই চরিত্রটিকে আকর্ষণীয় করে তুলেছে।

১৯. “তপন প্রথমটা ভাবে ঠাট্টা…” – কোন বিষয়কে তপন প্রথমে ঠাট্টা ভেবেছিল? তার এই ভাবনা কীভাবে দূর হয়?

উত্তর: তপনের লেখা গল্প তার মেসো ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকার সম্পাদকের কাছে ছাপানোর জন্য নিয়ে যাবেন—এই কথাটিকে তপন প্রথমে ঠাট্টা ভেবেছিল। কারণ তার লেখা ছাপা হবে, এটা তার কাছে অবিশ্বাস্য ছিল। কিন্তু যখন সে দেখল তার মেসো সত্যি সত্যিই গল্পটি নিয়ে গেলেন এবং ছাপানোর বিষয়ে আশ্বাস দিলেন, তখন তার এই ভাবনা দূর হয় এবং সে আশায় দিন গুনতে থাকে।

২০. “এর মধ্যে তপন কোথা?” – তপনের এমন মনে হওয়ার কারণ কী?

উত্তর: ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় প্রকাশিত ‘প্রথম দিন’ গল্পটি পড়তে গিয়ে তপনের এমন মনে হয়েছিল। কারণ, গল্পের প্রতিটি বাক্য তার কাছে অচেনা ও নতুন মনে হচ্ছিল। তার মেসো ‘কারেকশন’-এর নামে গল্পের ভাষা, বাক্য গঠন—সবই এমনভাবে পাল্টে দিয়েছিলেন যে, তপন তার নিজের লেখার কোনো অংশই খুঁজে পাচ্ছিল না। তাই তার মনে হয়েছিল, এই লেখার মধ্যে তার নিজের অস্তিত্বই নেই।

২১. “চুপ করে থাকতে পারে না ছোটো মাসি।” – ছোটো মাসি কী বলতে পারেনি? এর থেকে তার চরিত্র সম্পর্কে কী ধারণা করা যায়?

উত্তর: তপনের গল্প লেখার কথা শুনে বাড়িতে যখন ঠাট্টা-তামাশা চলছিল, তখন ছোটো মাসি চুপ করে থাকতে পারেনি। সে তার স্বামী অর্থাৎ তপনের মেসোর মহত্ত্ব প্রচারের জন্য বলে ওঠে যে, মেসো তপনের গল্প ছাপিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। এর থেকে বোঝা যায়, ছোটো মাসি তার স্বামীর কৃতিত্ব ও মহানুভবতা জাহির করার সুযোগ ছাড়তে চায় না। তার চরিত্রটি কিছুটা সরল হলেও আত্মগর্বী।

২২. তপনের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচনে তার নতুন মেসোর ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর: তপনের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচনে তার নতুন মেসোর ভূমিকা দ্বিমুখী। প্রথমে, মেসোকে দেখে তপন বুঝতে পারে যে লেখকরা সাধারণ মানুষ, যা তার প্রথম জ্ঞানচক্ষু খোলে। পরে, মেসো যখন ‘কারেকশন’-এর নামে তপনের লেখা প্রায় পুরোটাই বদলে দেন, তখন তপন পরনির্ভরশীলতার গ্লানি ও নিজস্বতা হারানোর যন্ত্রণা উপলব্ধি করে। এই ঘটনাই তার প্রকৃত জ্ঞানচক্ষু খুলে দেয় এবং তাকে আত্মনির্ভরশীল হতে শেখায়।

২৩. “সবাই শুনছে আর অবাক হচ্ছে।” – কী শুনে সবাই অবাক হচ্ছিল?

উত্তর: তপনের লেখা গল্প তার মেসো ছাপানোর জন্য নিয়ে গেছেন এবং ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় তা ছাপা হতে পারে—এই কথা শুনেই বাড়ির সবাই অবাক হচ্ছিল। তপনের মতো একটি ছোটো ছেলের লেখা গল্প পত্রিকায় ছাপা হবে, এটা তাদের কাছে এক অবিশ্বাস্য ঘটনা ছিল। তাই তারা বিস্ময়ের সঙ্গে তপনের দিকে তাকাচ্ছিল এবং মেসোর মহানুভবতার প্রশংসা করছিল।

২৪. “কিন্তু কে শোনে তার কথা?” – কার কথা, কে শোনে না? কেন শোনে না?

উত্তর: এখানে তপনের কথা কেউ শোনে না। যখন ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা হাতে নিয়ে সবাই মেসোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ, তখন তপন বলতে চায় যে লেখাটি আর তার নিজের নেই। কিন্তু তার এই চাপা প্রতিবাদ বা দুঃখের কথা শোনার মতো মানসিকতা কারও ছিল না। সবাই তখন তপনের সাফল্যের আড়ালে মেসোর কৃতিত্ব দেখতেই বেশি ব্যস্ত ছিল।

২৫. গল্পে ‘লেখক’ এবং ‘লেখা’ সম্পর্কে তপনের ধারণা কীভাবে বদলে গেল?

উত্তর: গল্পের শুরুতে তপন ‘লেখক’-দের অলৌকিক জীব ভাবত, যা মেসোকে দেখে বদলে যায়। সে ভাবে, চেষ্টা করলে যে কেউ লেখক হতে পারে। কিন্তু গল্পের শেষে সে বোঝে, শুধু ‘লেখা’ ছাপানোই বড় কথা নয়, লেখার মধ্যে নিজের সত্তা থাকাটা জরুরি। অন্যের সাহায্যে পাওয়া স্বীকৃতি যে কতটা গ্লানিকর, তা সে উপলব্ধি করে। এভাবেই ‘লেখক’ ও ‘লেখা’ সম্পর্কে তার ধারণা গভীরতর হয়।


ঘ) রচনাধর্মী প্রশ্নাবলী – মান ৫ (১০টি)

১. ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের নামকরণ কতখানি সার্থক হয়েছে, তা আলোচনা করো।

উত্তর:
ভূমিকা: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি একটি কিশোরের আত্ম-উপলব্ধির কাহিনী। ‘জ্ঞানচক্ষু’ শব্দের অর্থ হলো অন্তর্দৃষ্টির উন্মোচন। গল্পের মূল চরিত্র তপনের আত্ম-আবিষ্কার ও মোহভঙ্গের 과정을 কেন্দ্র করে এই নামকরণ সার্থক হয়েছে।
প্রথম জ্ঞানচক্ষু উন্মোচন: গল্পের শুরুতে তপন লেখকদের সাধারণ মানুষ ভাবতে পারত না। তার ধারণা ছিল, তারা ভিন্ন জগতের বাসিন্দা। কিন্তু তার নতুন মেসো, যিনি একজন লেখক, তাকে দেখে তপনের এই ভুল ধারণা ভাঙে। সে বুঝতে পারে, লেখকরাও সাধারণ মানুষ। এটি ছিল তার প্রথম জ্ঞানচক্ষু উন্মোচন।
দ্বিতীয় ও প্রকৃত জ্ঞানচক্ষু উন্মোচন: তপন নিজে একটি গল্প লেখে এবং তার মেসো সেটি ‘কারেকশন’ করে ছাপিয়ে দেন। কিন্তু তপন যখন দেখে যে ছাপানো গল্পে তার নিজের লেখার কিছুই অবশিষ্ট নেই, পুরোটাই মেসোর তৈরি, তখন তার দ্বিতীয়বার জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হয়। সে বুঝতে পারে, নিজের নামে অন্যের লেখা ছাপানোটা গৌরবের নয়, বরং চরম অপমানের। পরনির্ভরশীলতার গ্লানি এবং নিজস্বতার মূল্য সে এই ঘটনার মাধ্যমে উপলব্ধি করে।
সার্থকতা: এই দ্বিতীয় উপলব্ধিই হলো গল্পের মূল ‘জ্ঞানচক্ষু’। এটি শুধু লেখক বা লেখা সম্পর্কে নয়, জীবন ও আত্মমর্যাদা সম্পর্কেও তপনের চোখ খুলে দেয়। যেহেতু গল্পের মূল বিষয়বস্তুই হলো তপনের এই আত্ম-উপলব্ধি, তাই ‘জ্ঞানচক্ষু’ নামকরণটি অত্যন্ত ব্যঞ্জনাধর্মী ও সার্থক।

২. “তপনের মনে হয় আজ যেন তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের দিন।” – তপনের এমন মনে হওয়ার কারণ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করো। তার এই অনুভূতি কি যথার্থ? তোমার মতামত দাও।

উত্তর:
দুঃখের কারণ: তপনের জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন ছিল তার লেখা ছাপার অক্ষরে দেখা। যখন সেই স্বপ্ন পূরণ হলো, তখন তার আনন্দিত হওয়ারই কথা। কিন্তু তার আনন্দ বিষাদে পরিণত হলো কারণ—
১. authorship-এর সংকট: তপন যখন গল্পটি পড়তে শুরু করে, সে আবিষ্কার করে যে ‘কারেকশন’-এর নামে তার মেসো গল্পটি আগাগোড়া বদলে দিয়েছেন। সেখানে তার নিজের লেখার লেশমাত্র নেই। ফলে, যে গল্পটি তার নামে ছাপা হয়েছে, তা আদতে তার নিজের সৃষ্টি নয়।
২. কৃতিত্বের অপমান: বাড়ির সবাই যখন তার সাফল্যের জন্য মেসোর মহানুভবতার প্রশংসা করছিল, তখন তপন বুঝতে পারে যে তার নিজস্ব কৃতিত্বকে কেউ স্বীকার করছে না। সবাই তাকে করুণার পাত্র হিসেবে দেখছে।
৩. আত্মগ্লানি: নিজের নামে অন্যের লেখা ছাপানোর এই ঘটনা তপনের আত্মসম্মানে তীব্র আঘাত হানে। তার কাছে এটি এক ধরনের প্রতারণা বলে মনে হয়। এই আত্মগ্লানি ও অপমানবোধ থেকেই তার মনে হয় দিনটি তার জীবনের সবচেয়ে দুঃখের।
যৌক্তিকতা: তপনের এই অনুভূতি সম্পূর্ণ যথার্থ। একজন স্রষ্টার কাছে তার সৃষ্টির মৌলিকত্বই সবচেয়ে বড়। তপনের ক্ষেত্রে, তার প্রথম সৃষ্টিই তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। তার লেখক হিসেবে জন্মলগ্নেই তাকে যে অপমানের শিকার হতে হয়েছে, তা যেকোনো সংবেদনশীল মানুষের কাছেই অত্যন্ত বেদনাদায়ক। তাই তার দুঃখকে অতিরঞ্জিত মনে করার কোনো কারণ নেই।

৩. ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্প অবলম্বনে তপন চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:
ভূমিকা: ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র হলো কিশোর তপন। তার মানসিক বিবর্তনের মধ্য দিয়েই গল্পের মূল সুরটি ধ্বনিত হয়েছে।
১. কল্পনাপ্রবণ ও কৌতূহলী: গল্পের শুরুতে তপন লেখক সম্পর্কে এক অলীক ও কাল্পনিক ধারণা পোষণ করে। সে অত্যন্ত কৌতূহলী এবং নতুন জিনিস জানতে আগ্রহী।
২. সৃজনশীল ও সংবেদনশীল: মেসোকে দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সে একটি গল্প লিখে ফেলে, যা তার সৃজনশীলতার পরিচয় দেয়। সে অত্যন্ত সংবেদনশীল, তাই সামান্য ঠাট্টায় যেমন কষ্ট পায়, তেমনই নিজের লেখা ছাপা হওয়ার আনন্দে রোমাঞ্চিত হয়।
৩. আত্মসম্মানবোধসম্পন্ন: তপনের চরিত্রের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য হলো তার প্রবল আত্মসম্মানবোধ। যখন সে বোঝে যে তার লেখা গল্পটি মেসোর দয়ায় ছাপা হয়েছে এবং তাতে তার নিজের কোনো কৃতিত্ব নেই, তখন সে তীব্র অপমান বোধ করে।
৪. দৃঢ়প্রতিজ্ঞ: গল্পের শেষে অপমানের মধ্য দিয়ে তপনের আত্মিক জাগরণ ঘটে। সে সংকল্প করে, ভবিষ্যতে নিজের যোগ্যতায় লেখক হবে। এই দৃঢ়তা তার চরিত্রকে একটি নতুন মাত্রা দেয়।
উপসংহার: তপন চরিত্রটি এক কিশোরের স্বপ্ন, হতাশা, অপমান এবং অবশেষে আত্ম-উপলব্ধির এক সার্থক প্রতিচ্ছবি।

৪. “ওর হবে” – কে, কার সম্পর্কে এই উক্তি করেছেন? তাঁর এই উক্তির কারণ কী? শেষে কি তাঁর এই ধারণা সত্যি হয়েছিল?

উত্তর:
বক্তা ও প্রসঙ্গ: উক্তিটি করেছেন তপনের নতুন মেসোমশাই, তপনের সম্পর্কে। তপনের লেখা ‘প্রথম দিন’ গল্পটি পড়ার পর তিনি এই মন্তব্যটি করেন।
উক্তির কারণ: তপনের বয়সের তুলনায় তার গল্পের বিষয় নির্বাচন এবং লেখার সাবলীলতা দেখে মেসোমশাই মুগ্ধ হয়েছিলেন। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন যে তপনের মধ্যে একজন লেখকের সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে। তার ভাষায় ‘কাঁচা হাত’ হলেও, লেখার মধ্যে যে একটি নিজস্ব ভঙ্গী ও ভাবনার ছাপ রয়েছে, তা তিনি ধরতে পেরেছিলেন। তাই তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, সঠিক পরিচর্যা পেলে তপন ভবিষ্যতে একজন ভালো লেখক হতে পারবে।
ধারণার সত্যতা: আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে, মেসোর ‘কারেকশন’ তপনকে হতাশ করেছে, তাই তার ধারণা সত্যি হয়নি। কিন্তু গভীরভাবে দেখলে বোঝা যায়, মেসোর এই ভবিষ্যদ্বাণী অন্যভাবে সত্যি হয়েছিল। মেসোর হস্তক্ষেপের ফলে যে অপমান তপন পেয়েছিল, তা-ই তার ভেতরের লেখকসত্তাকে আরও দৃঢ় করে তোলে। সে পরনির্ভরশীলতা ত্যাগ করে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার সংকল্প করে। এই আত্মজাগরণই একজন প্রকৃত লেখকের জন্ম দেয়। তাই, পরোক্ষভাবে হলেও মেসোর ধারণা শেষ পর্যন্ত সত্যি হওয়ার পথেই এগিয়েছিল।

৫. “গল্প ছাপা হলে যে ভয়ঙ্কর আহ্লাদটা হবার কথা, সে আহ্লাদ খুঁজে পায় না।” – কার, কেন আহ্লাদ খুঁজে না পাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করো।

উত্তর:
প্রসঙ্গ: উক্তিটি তপনের অনুভূতি সম্পর্কে করা হয়েছে। ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকায় তার গল্প ছাপা হওয়ার পর তার এই মানসিক অবস্থা হয়েছিল।
আহ্লাদ খুঁজে না পাওয়ার কারণ:
১. কৃতিত্বের অস্বীকৃতি: তপনের গল্প ছাপা হওয়ার খবর পেয়ে বাড়ির সবাই যখন উচ্ছ্বসিত, তখন তারা তপনের কৃতিত্বের চেয়েও বেশি প্রশংসা করতে থাকে তার মেসোর। “তপনের লেখক মেসো থাকাটা ভাগ্যের ব্যাপার”—এই ধরনের মন্তব্য তপনকে বুঝিয়ে দেয় যে, তার সাফল্যের কৃতিত্ব আসলে মেসোকেই দেওয়া হচ্ছে।
২. লেখার বিকৃতি: তপন যখন গল্পটি পড়তে যায়, তখন সে দেখে যে, তার লেখা প্রায় কিছুই অবশিষ্ট নেই। মেসোমশাই ‘কারেকশন’-এর নামে পুরো গল্পটিই নতুন করে লিখেছেন। নিজের সৃষ্টির এই রূপান্তর সে মেনে নিতে পারেনি।
৩. আত্মগ্লানি ও অপমান: নিজের নামে অন্যের লেখা প্রকাশিত হওয়ার ঘটনা তার কাছে অত্যন্ত গ্লানিকর ও অপমানজনক বলে মনে হয়। যে সাফল্যের ভিত্তি মিথ্যা ও পরনির্ভরশীলতা, তা তাকে কোনোভাবেই আনন্দ দিতে পারেনি।
উপসংহার: একজন স্রষ্টার কাছে সৃষ্টির আনন্দই সবচেয়ে বড়। তপনের ক্ষেত্রে সেই আনন্দই শেষ হয়ে গিয়েছিল, কারণ সৃষ্টিটি আর তার নিজের ছিল না। তাই বাহ্যিক সাফল্য সত্ত্বেও সে কোনো আহ্লাদ খুঁজে পায়নি।

৬. ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে নতুন মেসো চরিত্রটির ভূমিকা আলোচনা করো।

উত্তর:
ভূমিকা: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের নতুন মেসো একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি গল্পের প্রধান চালিকাশক্তি এবং তপনের জ্ঞানচক্ষু উন্মোচনের প্রত্যক্ষ কারণ।
১. অনুপ্রেরণা হিসেবে: মেসোই ছিলেন তপনের গল্প লেখার প্রত্যক্ষ অনুপ্রেরণা। একজন লেখককে কাছ থেকে দেখে তপন বুঝতে পারে যে, লেখকরা সাধারণ মানুষ এবং চেষ্টা করলে সে-ও লিখতে পারে।
২. উৎসাহদাতা হিসেবে: তপনের লেখা গল্পটি পড়ে তিনি তাকে উৎসাহ দেন এবং ছাপানোর প্রতিশ্রুতি দেন। এটি তপনের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে।
৩. অভিভাবকসুলভ অহংকার: মেসোর চরিত্রে একটি অভিভাবকসুলভ অহংকার রয়েছে। তিনি তপনের কাঁচা লেখাকে ‘কারেকশন’ করার নামে প্রায় পুরোটাই বদলে দেন। তিনি হয়তো ভেবেছিলেন, এভাবে তিনি তপনের উপকার করছেন, কিন্তু আসলে তিনি তপনের মৌলিকত্বকে নষ্ট করে দেন।
৪. জ্ঞানচক্ষু উন্মোচনের কারণ: মেসোর এই ‘কারেকশন’-এর ফলেই তপনের মোহভঙ্গ হয়। সে বুঝতে পারে, অন্যের সাহায্যে পাওয়া স্বীকৃতি কতটা যন্ত্রণার। এই ঘটনাই তার সত্যিকারের জ্ঞানচক্ষু খুলে দেয় এবং তাকে আত্মনির্ভরশীল হতে শেখায়।
উপসংহার: মেসো চরিত্রটি একই সঙ্গে ইতিবাচক ও নেতিবাচক। তিনি তপনকে লেখার জগতে আসতে সাহায্য করলেও, তার অহংকার তপনকে আঘাত করে। শেষ পর্যন্ত, তার действий তপনের আত্ম-আবিষ্কারের অনুঘটক হিসেবে কাজ করে।

৭. “শুধু এটাই জানা ছিল না” – কী জানা ছিল না? এই না জানার ফলাফল কী হয়েছিল?

উত্তর:
যা জানা ছিল না: তপন এটা জানত না যে, একজন পাকা হাতের লেখক বা সম্পাদক কাঁচা হাতের লেখা ছাপানোর সময় মূল লেখাটিকে আমূল পরিবর্তন করে দিতে পারেন। সে ভেবেছিল, তার মেসো হয়তো সামান্য ভুলত্রুটি শুধরে দেবেন, কিন্তু ‘কারেকশন’-এর নামে যে পুরো লেখাটাই নতুন করে লেখা হতে পারে, এই ধারণা তার ছিল না। সে জানত না যে, অন্যের কৃতিত্বে নিজের নাম ছাপানোর মতো গ্লানিকর ঘটনাও ঘটতে পারে।
পরিণাম: এই না জানার পরিণাম হয়েছিল অত্যন্ত বেদনাদায়ক।
১. মোহভঙ্গ: তপনের লেখক এবং লেখা সম্পর্কে যে সরল ও সুন্দর ধারণা ছিল, তা ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। সে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হয়।
২. মানসিক যন্ত্রণা: নিজের লেখা হারানোর যন্ত্রণা এবং অন্যের কৃতিত্বে নিজের নাম দেখার অপমান তাকে তীব্র মানসিক কষ্টে ফেলে। তার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের দিনটি সবচেয়ে দুঃখের দিনে পরিণত হয়।
৩. আত্ম-উপলব্ধি ও সংকল্প: এই বেদনাদায়ক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়েই তার প্রকৃত জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হয়। সে আত্মনির্ভরশীল হওয়ার দৃঢ় সংকল্প করে, যা তার লেখক জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা ছিল।

৮. “সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে গেল” – কী নিয়ে শোরগোল পড়েছিল? এই শোরগোলের প্রতিক্রিয়া তপনের উপর কেমন হয়েছিল?

উত্তর:
শোরগোলের কারণ: তপনের ছোটোমাসি এবং নতুন মেসো ‘সন্ধ্যাতারা’ পত্রিকা হাতে নিয়ে তাদের বাড়িতে এলে সারা বাড়িতে শোরগোল পড়ে যায়। কারণ, সেই পত্রিকায় তপনের লেখা ‘প্রথম দিন’ গল্পটি ছাপা হয়েছিল। তপনের মতো একটি ছোটো ছেলের লেখা গল্প পত্রিকায় ছাপা হয়েছে, এই অবিশ্বাস্য ও আনন্দদায়ক খবরটিই ছিল শোরগোলের মূল কারণ।
তপনের উপর প্রতিক্রিয়া: এই শোরগোলের প্রতিক্রিয়া তপনের উপর দুই পর্যায়ে হয়েছিল।
প্রথম পর্যায় (আনন্দ ও গর্ব): প্রথমে, খবরটা শুনে তপনের বুকের রক্ত ছলকে ওঠে এবং গায়ে কাঁটা দেয়। হাজার হাজার ছেলের হাতে তার লেখা ঘুরবে, এই ভেবে সে তীব্র আনন্দ ও গর্ব অনুভব করে। এটি ছিল তার লেখক হিসেবে আত্মপ্রকাশের প্রাথমিক উচ্ছ্বাস।
দ্বিতীয় পর্যায় (হতাশা ও অপমান): কিন্তু যখন সবাই তার কৃতিত্বের চেয়ে মেসোর মহানুভবতার প্রশংসা করতে শুরু করে এবং পরে সে দেখে যে লেখাটি তার নিজের নয়, তখন তার সমস্ত আনন্দ শেষ হয়ে যায়। এই শোরগোল তার কাছে অর্থহীন ও বেদনাদায়ক বলে মনে হয়। সে নিজেকে সকলের করুণা ও প্রশংসার আড়ালে এক প্রতারিত সত্তা হিসেবে আবিষ্কার করে, যা তাকে গভীরভাবে আহত করে।

৯. “কিন্তু নতুন মেসোকে দেখে জ্ঞানচক্ষু খুলে গেল তপনের” – প্রথমবার জ্ঞানচক্ষু খোলার এই অভিজ্ঞতা এবং গল্পের শেষে জ্ঞানচক্ষু খোলার অভিজ্ঞতার মধ্যে পার্থক্য কী?

উত্তর:
‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পে তপনের দু’বার জ্ঞানচক্ষু উন্মোচিত হয় এবং দুটির মধ্যে গভীর পার্থক্য রয়েছে।
প্রথম জ্ঞানচক্ষু খোলার অভিজ্ঞতা: এটি ছিল লেখক সম্পর্কে তপনের ভ্রান্ত ধারণার অবসান। তপন ভাবত, লেখকরা আর পাঁচজন সাধারণ মানুষের মতো নন। কিন্তু তার নতুন মেসোকে দাড়ি কামাতে, স্নান করতে এবং সাধারণ জীবনযাপন করতে দেখে তার সেই অলীক ধারণা ভেঙে যায়। সে বুঝতে পারে, লেখকরাও মানুষ। এই উপলব্ধি ছিল বাহ্যিক জগতের জ্ঞান, যা ছিল সরল ও কৌতূহলকেন্দ্রিক।
শেষের জ্ঞানচক্ষু খোলার অভিজ্ঞতা: এটি ছিল অনেক বেশি গভীর ও বেদনাদায়ক। এই পর্যায়ে তপন শুধু বাহ্যিক জগৎ নয়, বরং নিজের ভেতরের জগৎ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করে। সে authorship, আত্মসম্মান এবং পরনির্ভরশীলতার গ্লানি সম্পর্কে শেখে। মেসোর ‘কারেকশন’-এর ফলে নিজের লেখা হারানোর যন্ত্রণা তাকে শিখিয়ে দেয় যে, অন্যের সাহায্যে পাওয়া স্বীকৃতি কতটা অন্তঃসারশূন্য। এটি ছিল তার আত্মিক জাগরণ, যা তাকে একজন সংবেদনশীল কিশোর থেকে আত্মমর্যাদা সম্পন্ন ব্যক্তিতে রূপান্তরিত করে।
পার্থক্য: প্রথম জ্ঞানচক্ষু ছিল মোহমুক্তি, আর দ্বিতীয়টি ছিল মোহভঙ্গ। প্রথমটি ছিল আনন্দের, দ্বিতীয়টি ছিল বেদনার। প্রথমটি তাকে লিখতে অনুপ্রাণিত করেছিল, আর দ্বিতীয়টি তাকে শিখিয়েছিল কীভাবে একজন ‘প্রকৃত’ লেখক হতে হয়।

১০. ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পের মূল বক্তব্য বা বিষয়বস্তু নিজের ভাষায় লেখো।

উত্তর:
ভূমিকা: আশাপূর্ণা দেবীর ‘জ্ঞানচক্ষু’ গল্পটি কেবল একটি কিশোরের লেখক হওয়ার স্বপ্ন ও স্বপ্নভঙ্গের কাহিনী নয়, এটি আত্ম-আবিষ্কার ও আত্মমর্যাদা অর্জনের এক মর্মস্পর্শী আখ্যান।
মূল বক্তব্য: গল্পের মূল বক্তব্য হলো, প্রকৃত জ্ঞান বই পড়ে বা অন্যকে দেখে অর্জিত হয় না, তা অর্জিত হয় ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা ও যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে। গল্পের কেন্দ্রীয় চরিত্র তপন লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখে। তার ধারণা ছিল, লেখক হওয়া এক অলৌকিক ব্যাপার। কিন্তু তার লেখক মেসোকে দেখে সেই ধারণা ভাঙে।
গল্পের গভীরে প্রবেশ করলে দেখা যায়, লেখক সত্তার বিকাশের জন্য শুধু প্রতিভা থাকাই যথেষ্ট নয়, প্রয়োজন আত্মসম্মান ও নিজস্বতার প্রতি অবিচল থাকা। তপন যখন দেখে যে তার লেখা গল্পটি মেসোর ‘কারেকশন’-এর নামে সম্পূর্ণ পরিবর্তিত হয়ে গেছে, তখন সে তীব্র অপমানিত বোধ করে। এই অপমানের মধ্য দিয়েই সে জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষাটি পায়—পরনির্ভরশীল হয়ে পাওয়া সাফল্য কোনো গৌরব বয়ে আনে না, বরং তা গ্লানিকর।
উপসংহার: গল্পের শেষে তপনের সংকল্প—”যদি কখনও লেখা ছাপাতে হয়, নিজে গিয়ে দেবো”—এই উক্তিটিই গল্পের মূল সুরকে প্রতিষ্ঠা করে। এটি প্রমাণ করে যে, প্রকৃত ‘জ্ঞানচক্ষু’ কোনো বাহ্যিক ঘটনায় নয়, বরং আত্ম-উপলব্ধি ও আত্মমর্যাদার জাগরণের মাধ্যমেই উন্মোচিত হয়।

Class 10 Bengali জ্ঞানচক্ষু Question Answer

জ্ঞানচক্ষু গল্পের প্রশ্ন উত্তর বহুবিকল্পভিত্তিক প্রশ্ন উত্তর (MCQ), অতি-সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন উত্তর , সংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন উত্তর, রচনাধর্মী প্রশ্ন উত্তর : Class 10 bengali Gyanchakshu Question MCQ Answer

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top