মাধ্যমিক রচনা সাজেশন 2026

গুরুত্বপূর্ণ ২০টি রচনার কাঠামো

১. দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান / বিজ্ঞানের জয়যাত্রা

ভূমিকা: আধুনিক সভ্যতা ও বিজ্ঞান অবিচ্ছেদ্য। ঘুম থেকে উঠে রাতে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত আমাদের জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত বিজ্ঞানের দ্বারা প্রভাবিত। বিজ্ঞানের আশীর্বাদ ছাড়া আধুনিক জীবন অকল্পনীয়।

মূল বিষয়বস্তু:

  • প্রাত্যহিক জীবনে বিজ্ঞান: সকালে অ্যালার্ম ঘড়ি থেকে শুরু করে রান্নাঘরের গ্যাস, রেফ্রিজারেটর, মিক্সি, সবকিছুই বিজ্ঞানের দান।
  • শিক্ষা ও যোগাযোগে বিজ্ঞান: বই, খাতা, কলম থেকে শুরু করে কম্পিউটার, ইন্টারনেট, মোবাইল ফোন—সবই বিজ্ঞানের অবদান। বিজ্ঞানের দৌলতে আজ বিশ্ব একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজ’-এ পরিণত হয়েছে।
  • চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান: রোগ নির্ণয়, ঔষধ আবিষ্কার, শল্যচিকিৎসা—বিজ্ঞানের অগ্রগতির ফলে আজ মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে, বহু দুরারোগ্য ব্যাধি জয় করা সম্ভব হয়েছে।
  • কৃষি ও শিল্পে বিজ্ঞান: আধুনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত বীজ, সার ইত্যাদি কৃষিতে বিপ্লব এনেছে। শিল্পক্ষেত্রেও নতুন নতুন যন্ত্রের আবিষ্কার উৎপাদন বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে।
  • বিনোদন ও সংস্কৃতিতে বিজ্ঞান: টেলিভিশন, সিনেমা, রেডিও, ইন্টারনেট—এই সবই বিজ্ঞানের দৌলতে আমাদের জীবনে বিনোদনের নতুন দিগন্ত খুলে দিয়েছে।
উপসংহার: বিজ্ঞান একদিকে যেমন আমাদের জীবনে আশীর্বাদ হয়ে এসেছে, তেমনই তার অপব্যবহার মানবসভ্যতার জন্য অভিশাপও হতে পারে। তাই বিজ্ঞানের সঠিক ও মানবিক ব্যবহারই আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।

২. পরিবেশ দূষণ ও তার প্রতিকার

ভূমিকা: “দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর”—কবিগুরুর এই আর্তি আজ আমাদের সকলের। আধুনিক সভ্যতার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশ দূষণ এক ভয়াবহ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সমস্যার সমাধান না করতে পারলে মানবজাতির অস্তিত্বই বিপন্ন হবে।

মূল বিষয়বস্তু:

  • দূষণের প্রকারভেদ: পরিবেশ দূষণ মূলত চার প্রকার—বায়ু দূষণ, জল দূষণ, মাটি দূষণ এবং শব্দ দূষণ।
  • দূষণের কারণ: শিল্পায়ন, নগরায়ন, বৃক্ষচ্ছেদন, জনসংখ্যা বৃদ্ধি, প্লাস্টিকের যথেচ্ছ ব্যবহার, যানবাহনের ধোঁয়া, রাসায়নিক সারের প্রয়োগ ইত্যাদি পরিবেশ দূষণের প্রধান কারণ।
  • দূষণের প্রভাব: দূষণের ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন, ওজোন স্তরের ক্ষয়, অ্যাসিড বৃষ্টি, বিভিন্ন রোগের প্রকোপ (শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, ক্যানসার) এবং জীববৈচিত্র্যের বিনাশ ঘটছে।
  • প্রতিকারের উপায়:
    • প্রচুর পরিমাণে বৃক্ষরোপণ।
    • প্লাস্টিকের ব্যবহার বর্জন।
    • পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির (সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি) ব্যবহার বৃদ্ধি।
    • জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং কঠোর আইন প্রণয়ন।
উপসংহার: পরিবেশ রক্ষা করা শুধুমাত্র সরকারের দায়িত্ব নয়, এটি আমাদের সকলের নৈতিক কর্তব্য। ছাত্রসমাজ এবং প্রতিটি নাগরিকের সম্মিলিত প্রচেষ্টাতেই এক দূষণমুক্ত সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব।

৩. তোমার জীবনের লক্ষ্য

ভূমিকা: জীবন একটি নদীর মতো, যার একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য বা গন্তব্য থাকা প্রয়োজন। লক্ষ্যহীন জীবন হালবিহীন নৌকার মতো, যা সমুদ্রে হারিয়ে যায়। তাই শৈশব থেকেই জীবনের একটি মহৎ লক্ষ্য স্থির করা উচিত। আমার জীবনেরও একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে।

মূল বিষয়বস্তু:

  • লক্ষ্য স্থির করার কারণ: (এখানে নিজের পছন্দের পেশা—যেমন ডাক্তার, শিক্ষক, বিজ্ঞানী, সমাজসেবী—বেছে নিতে হবে)। কেন আমি এই পেশা বেছে নিতে চাই? (যেমন: মানুষের সেবা করা, নতুন কিছু আবিষ্কার করা, জ্ঞানের আলো ছড়ানো ইত্যাদি)।
  • প্রস্তুতির পরিকল্পনা: এই লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য আমার বর্তমান পরিকল্পনা কী? আমাকে কোন কোন বিষয়ে পড়াশোনা করতে হবে? কোন গুণাবলী অর্জন করতে হবে? (যেমন: কঠোর পরিশ্রম, নিয়মানুবর্তিতা, সততা)।
  • আদর্শের অনুপ্রেরণা: এই পথে চলার জন্য আমার আদর্শ কে? (কোনো বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে)। তাঁর কোন গুণগুলি আমাকে অনুপ্রাণিত করে?
  • সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতা: আমি আমার লক্ষ্যের মাধ্যমে কীভাবে দেশ ও দশের সেবা করতে চাই? আমার স্বপ্ন শুধুমাত্র ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, সমাজের উন্নতিতেও অবদান রাখা।
উপসংহার: পথ হয়তো কঠিন, কিন্তু আমি আমার লক্ষ্যে অবিচল। কঠোর পরিশ্রম ও সততার মাধ্যমে আমি একদিন আমার স্বপ্ন পূরণ করব এবং একজন আদর্শ মানুষ হয়ে দেশ ও সমাজের সেবা করব—এটাই আমার প্রতিজ্ঞা।

৪. বিজ্ঞানের ভালো-মন্দ / বিজ্ঞানের আশীর্বাদ ও অভিশাপ

ভূমিকা: বিজ্ঞান মানবসভ্যতার শ্রেষ্ঠ সম্পদ। এটি একদিকে যেমন মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে স্বাচ্ছন্দ্য ও গতি, তেমনই অন্যদিকে তার অপব্যবহার ডেকে এনেছে ভয়াবহ ধ্বংস। তাই বিজ্ঞানকে দ্বিধারী তরোয়ালের সঙ্গে তুলনা করা হয়।

মূল বিষয়বস্তু:

  • বিজ্ঞানের আশীর্বাদ (ভালো দিক):
    • চিকিৎসা: দুরারোগ্য ব্যাধির নিরাময়, জীবনদায়ী ঔষধ আবিষ্কার।
    • যোগাযোগ: মোবাইল, ইন্টারনেট পৃথিবীকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে।
    • কৃষি ও শিল্প: উৎপাদন বৃদ্ধি, মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন।
    • শিক্ষা ও বিনোদন: জ্ঞানচর্চা ও সংস্কৃতির প্রসার।
  • বিজ্ঞানের অভিশাপ (মন্দ দিক):
    • যুদ্ধাস্ত্র: পারমাণবিক বোমা, মারণাস্ত্রের আবিষ্কার মানবজাতিকে ধ্বংসের মুখে দাঁড় করিয়েছে।
    • পরিবেশ দূষণ: শিল্প ও প্রযুক্তির অগ্রগতির ফলে পরিবেশ আজ বিপন্ন।
    • মানবিকতার অবক্ষয়: যন্ত্রনির্ভরতা মানুষকে অনুভূতিহীন ও আত্মকেন্দ্রিক করে তুলছে।
    • সাইবার ক্রাইম: ইন্টারনেটের অপব্যবহার নতুন ধরনের অপরাধের জন্ম দিয়েছে।
উপসংহার: বিজ্ঞান নিজে ভালোও নয়, মন্দও নয়। এর ভালো-মন্দ নির্ভর করে তার ব্যবহারকারীর উপর। মানুষের শুভবুদ্ধি ও विवेकই পারে বিজ্ঞানের অভিশাপ থেকে পৃথিবীকে রক্ষা করে তাকে আশীর্বাদে পরিণত করতে।

৫. বাংলার উৎসব

ভূমিকা: “বারো মাসে তেরো পার্বণ”—এই প্রবাদেই জড়িয়ে আছে বাঙালির উৎসবপ্রিয় মনের পরিচয়। ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সারা বছর ধরে নানা উৎসবের আনন্দে মেতে থাকে বাঙালি। এই উৎসবগুলি বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক।

মূল বিষয়বস্তু:

  • প্রধান ধর্মীয় উৎসব:
    • দুর্গাপূজা: বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব। ধর্মীয় আচারের চেয়েও এটি এক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক মিলনক্ষেত্র।
    • ঈদ: মুসলমান সম্প্রদায়ের প্রধান উৎসব। সম্প্রীতি ও ভালোবাসার বার্তা নিয়ে আসে এই উৎসব।
    • অন্যান্য ধর্মীয় উৎসব: কালীপূজা, দোলযাত্রা, বড়দিন, সরস্বতী পূজা ইত্যাদি।
  • ঋতু উৎসব: পয়লা বৈশাখ (নববর্ষ), পৌষ পার্বণ (নবান্ন), বসন্ত উৎসব ইত্যাদি বাঙালির প্রকৃতি-ঘনিষ্ঠতার পরিচয় দেয়।
  • সাংস্কৃতিক ও সামাজিক উৎসব: বইমেলা, রবীন্দ্র জয়ন্তী, পৌষমেলা ইত্যাদি বাঙালির সংস্কৃতিমনস্কতার পরিচয়।
  • উৎসবের তাৎপর্য: এই উৎসবগুলি শুধুমাত্র আনন্দ-অনুষ্ঠান নয়, এগুলি মানুষের মধ্যেকার বিভেদ দূর করে সম্প্রীতি ও ঐক্যের বন্ধন গড়ে তোলে।
উপসংহার: উৎসবের দিনগুলিতে বাংলা এক মিলনক্ষেত্রে পরিণত হয়। এই উৎসবগুলিই বাঙালির প্রাণশক্তি এবং তার হাজার বছরের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

৬. চরিত্র গঠনে খেলাধুলার ভূমিকা

ভূমিকা: “সুস্থ দেহে সুস্থ মন”—এই প্রবাদটিই খেলাধুলার গুরুত্বকে প্রতিষ্ঠা করে। খেলাধুলা শুধুমাত্র শারীরিক সুস্থতার জন্য নয়, মানসিক গঠন ও চরিত্র গঠনেও এর ভূমিকা অপরিসীম। একজন ছাত্রের জীবনে পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলারও সমান গুরুত্ব রয়েছে।

মূল বিষয়বস্তু:

  • শারীরিক বিকাশ: নিয়মিত খেলাধুলা শরীরকে সুস্থ, সবল ও কর্মক্ষম করে তোলে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
  • মানসিক বিকাশ: খেলাধুলা মনকে সতেজ ও প্রফুল্ল রাখে। এটি মানসিক চাপ ও হতাশা কমাতে সাহায্য করে।
  • শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা: প্রতিটি খেলারই নির্দিষ্ট নিয়মকানুন থাকে। এই নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা বোধ গড়ে ওঠে।
  • দলবদ্ধতা ও নেতৃত্বদানের শিক্ষা: দলগত খেলা (যেমন—ফুটবল, ক্রিকেট) ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে একতা, সহযোগিতা এবং পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ জাগিয়ে তোলে। এখান থেকেই নেতৃত্বের গুণাবলী বিকশিত হয়।
  • হার-জিতকে মেনে নেওয়ার শিক্ষা: খেলাধুলা শেখায় যে, জীবনে জয়-পরাজয় দুটোই আছে। পরাজয়কে মেনে নিয়ে নতুন করে লড়াই করার মানসিকতা খেলাধুলার মাধ্যমেই তৈরি হয়।
উপসংহার: সুতরাং, খেলাধুলা শুধুমাত্র বিনোদন নয়, এটি জীবন গড়ার এক গুরুত্বপূর্ণ পাঠ। সুস্থ সমাজ ও সুস্থ নাগরিক গড়ে তোলার জন্য পড়াশোনার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রসার ঘটানো একান্ত প্রয়োজন।

৭. একটি নদীর আত্মকথা

ভূমিকা: আমি এক নদী। আমার নাম ইচ্ছামতী। পাহাড়ের বুক থেকে আমার জন্ম। তারপর দীর্ঘ পথ পেরিয়ে সাগরে মেশাই আমার একমাত্র লক্ষ্য। আমার চলার পথেই গড়ে উঠেছে সভ্যতা, গ্রাম, নগর।

মূল বিষয়বস্তু:

  • শৈশব ও যৌবন: শৈশবে আমি ছিলাম দুরন্ত, চঞ্চল। পাহাড়ের গা বেয়ে লাফিয়ে নামতাম। যৌবনে আমার বুকে পলি জমিয়ে আমি তৈরি করেছি উর্বর ভূমি, যেখানে মানুষ ফসল ফলায়। আমার জল পান করে মানুষ ও পশু-পাখি তৃষ্ণা মেটায়।
  • সভ্যতার সঙ্গে সম্পর্ক: আমার তীরে গড়ে উঠেছে জনপদ। শিশুরা আমার জলে সাঁতার কাটে, জেলেরা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। আমি মানুষের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িত।
  • বর্তমান অবস্থা ও যন্ত্রণা: কিন্তু আজ আমি বিপন্ন। মানুষ তার লোভের বশে আমার বুকে শিল্পের বর্জ্য, প্লাস্টিক ফেলে আমাকে দূষিত করছে। আমার স্বাভাবিক গতিপথে বাঁধ দিয়ে আমাকে রুদ্ধ করে দিয়েছে। আজ আমি আর আগের মতো স্বচ্ছ নই, আমার বুকে এখন শুধু যন্ত্রণা।
  • আর্তি ও আবেদন: আমি মানুষের মা। মায়ের উপর এই অত্যাচার কি তারা বন্ধ করতে পারে না? আমি আবার আগের মতো প্রাণবন্ত হয়ে উঠতে চাই। আমি আবার মানুষের সেবা করতে চাই।
উপসংহার: আমার এই আর্তি যদি মানুষের কানে পৌঁছায়, তবেই হয়তো আমি এবং আমার সঙ্গে মানবসভ্যতাও রক্ষা পাবে।

৮. বিশ্ব উষ্ণায়ন ও তার প্রতিকার

ভূমিকা: বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে ভয়াবহ সমস্যাগুলির মধ্যে অন্যতম হলো বিশ্ব উষ্ণায়ন বা Global Warming। পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা ক্রমাগত বেড়ে চলাই হলো বিশ্ব উষ্ণায়ন, যা সমগ্র জীবজগতের অস্তিত্বকে এক গভীর সংকটের মুখে দাঁড় করিয়েছে।

মূল বিষয়বস্তু:

  • কারণ: বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রধান কারণ হলো গ্রিনহাউস গ্যাস (কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন ইত্যাদি)-এর পরিমাণ বৃদ্ধি। শিল্পায়ন, জীবাশ্ম জ্বালানির দহন, ব্যাপক হারে বৃক্ষচ্ছেদন ইত্যাদি এই গ্যাস বৃদ্ধির জন্য দায়ী।
  • প্রভাব:
    • মেরু অঞ্চলের বরফ গলে সমুদ্রের জলস্তর বৃদ্ধি।
    • আবহাওয়ার চরম পরিবর্তন—অতিবৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, ভয়ংকর ঝড়।
    • কৃষিক্ষেত্রে সংকট এবং খাদ্যসুরক্ষার অভাব।
    • জীববৈচিত্র্যের বিনাশ এবং বহু প্রজাতির বিলুপ্তি।
  • প্রতিকারের উপায়:
    • জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে অপ্রচলিত শক্তির (সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি) ব্যবহার বাড়ানো।
    • ব্যাপক হারে বৃক্ষরোপণ এবং অরণ্য সংরক্ষণ।
    • জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক স্তরে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ (যেমন—প্যারিস চুক্তি)।
উপসংহার: বিশ্ব উষ্ণায়ন কোনো একটি দেশের সমস্যা নয়, এটি একটি বিশ্বব্যাপী সমস্যা। তাই সমস্ত দেশকে একযোগে এই বিপদ মোকাবিলায় এগিয়ে আসতে হবে, নতুবা আমাদের এই সুন্দর গ্রহটি বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।

৯. তোমার প্রিয় ঋতু

ভূমিকা: ষড়ঋতুর দেশ আমাদের এই বাংলা। প্রতিটি ঋতুরই নিজস্ব রূপ, রস ও গন্ধ রয়েছে। কিন্তু এই সমস্ত ঋতুর মধ্যে আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু হলো শরৎ। মেঘ-রোদের লুকোচুরি খেলা, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা আর শিউলি ফুলের গন্ধ—সব মিলিয়ে শরৎ আমার মনকে আনন্দে ভরিয়ে তোলে।

মূল বিষয়বস্তু:

  • প্রকৃতির রূপ: বর্ষার ঘন কালো মেঘ সরে গিয়ে শরৎকালে আকাশ হয়ে ওঠে নির্মল ও নীল। নদীর জল স্বচ্ছ হয়ে আসে এবং নদীর তীরে কাশফুলের দোলা লাগে। ভোরের ঘাসের উপর শিশিরবিন্দু মুক্তোর মতো চিকচিক করে।
  • উৎসবের ঋতু: শরৎ মানেই উৎসবের ঋতু। বাঙালির শ্রেষ্ঠ উৎসব দুর্গাপূজা এই ঋতুতেই হয়। পূজার ঢাকের শব্দ, নতুন জামার গন্ধ আর বন্ধুদের সঙ্গে প্যান্ডেলে প্যান্ডেলে ঘোরা—এই আনন্দ ভোলার নয়।
  • আমার অনুভূতি: শরতের এই শান্ত, স্নিগ্ধ পরিবেশ আমার মনকে এক অনাবিল আনন্দে ভরিয়ে তোলে। পড়াশোনার ফাঁকে খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে বা কাশফুলের বনে ঘুরে বেড়াতে আমার খুব ভালো লাগে।
  • অন্যান্য ঋতুর সঙ্গে তুলনা: গ্রীষ্মের প্রচণ্ড দাবদাহ বা বর্ষার একটানা বৃষ্টির পর শরতের এই মনোরম আবহাওয়া এক স্বস্তি নিয়ে আসে।
উপসংহার: যদিও শরৎ খুব অল্প দিনের জন্য আসে, কিন্তু তার এই মায়াবী রূপ আমার মনে সারা বছরের জন্য এক গভীর ছাপ রেখে যায়। তাই শরৎই আমার সবচেয়ে প্রিয় ঋতু।

১০. স্বামী বিবেকানন্দ / তোমার প্রিয় মনীষী

ভূমিকা: যে সমস্ত মনীষীর আলোয় ভারত তথা সমগ্র বিশ্ব আলোকিত হয়েছে, তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলেন স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি ছিলেন একাধারে একজন বীর সন্ন্যাসী, একজন দেশপ্রেমিক, একজন দার্শনিক এবং যুবসমাজের পথপ্রদর্শক। তিনিই আমার প্রিয় মনীষী।

মূল বিষয়বস্তু:

  • জন্ম ও পরিচয়: ১৮৬৩ সালের ১২ই জানুয়ারি কলকাতার সিমলা অঞ্চলে নরেন্দ্রনাথ দত্ত নামে তাঁর জন্ম। তাঁর পিতার নাম বিশ্বনাথ দত্ত এবং মাতার নাম ভুবনেশ্বরী দেবী।
  • গুরু শ্রীরামকৃষ্ণের প্রভাব: তরুণ নরেন্দ্রনাথের মনে ঈশ্বর সম্পর্কে নানা প্রশ্ন ছিল। শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের সংস্পর্শে এসে তাঁর সমস্ত প্রশ্নের অবসান ঘটে এবং তিনি আধ্যাত্মিকতার পথে যাত্রা শুরু করেন।
  • শিকাগো ধর্মসভা: ১৮৯৩ সালে আমেরিকার শিকাগো শহরে অনুষ্ঠিত বিশ্বধর্ম মহাসভায় তিনি হিন্দুধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে যে ভাষণ দেন, তা সমগ্র বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তিনি হিন্দুধর্মের উদার ও মানবিক রূপটিকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন।
  • তাঁর বাণী ও দর্শন: তাঁর প্রধান বাণী ছিল—”জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর”। তিনি মানুষকে সেবার মাধ্যমে ঈশ্বরের উপাসনা করতে শিখিয়েছেন। তিনি যুবসমাজকে বলতেন, “ওঠো, জাগো এবং লক্ষ্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত থেমো না।”
  • রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা: গুরুর আদর্শকে বাস্তবায়িত করার জন্য তিনি ১৮৯৭ সালে রামকৃষ্ণ মিশন প্রতিষ্ঠা করেন, যা আজও মানবসেবার কাজে নিযুক্ত।
উপসংহার: স্বামী বিবেকানন্দ শুধুমাত্র একজন সন্ন্যাসী ছিলেন না, তিনি ছিলেন ভারতের নবজাগরণের এক মূর্ত প্রতীক। তাঁর দেখানো পথ ও আদর্শ আজও আমাদের অনুপ্রাণিত করে।

১১. ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য

ভূমিকা: ছাত্রজীবন হলো ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতির সময়। এই সময় শুধুমাত্র পুঁথিগত বিদ্যা অর্জনই একমাত্র কাজ নয়, বরং চরিত্র গঠন, সামাজিক দায়বদ্ধতা পালন এবং একজন সুনাগরিক হয়ে ওঠার শিক্ষাও এই সময়েই গ্রহণ করতে হয়। তাই ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য অপরিসীম।

মূল বিষয়বস্তু:

  • নিজের প্রতি কর্তব্য: ছাত্রছাত্রীদের প্রথম ও প্রধান কর্তব্য হলো মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা করা এবং জ্ঞান অর্জন করা। এর পাশাপাশি শরীর ও মনকে সুস্থ রাখা, নিয়মানুবর্তিতা পালন করা এবং সৎ চরিত্র গঠন করাও নিজের প্রতি কর্তব্য।
  • পরিবারের প্রতি কর্তব্য: বাবা-মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা, তাঁদের আদেশ পালন করা এবং পরিবারের সম্মান রক্ষা করা ছাত্রছাত্রীদের অন্যতম দায়িত্ব।
  • বিদ্যালয়ের প্রতি কর্তব্য: বিদ্যালয়ের নিয়মশৃঙ্খলা মেনে চলা, শিক্ষকদের সম্মান করা এবং বিদ্যালয়ের সুনাম বজায় রাখা প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর কর্তব্য।
  • সমাজের প্রতি কর্তব্য: ছাত্রছাত্রীরা সমাজেরই অংশ। তাই সমাজের প্রতিও তাদের কিছু দায়িত্ব রয়েছে। যেমন—নিরক্ষরতা দূরীকরণ, পরিবেশ রক্ষা, কুসংস্কারের বিরুদ্ধে সচেতনতা গড়ে তোলা ইত্যাদি সামাজিক কাজে অংশগ্রহণ করা।
উপসংহার: ছাত্রজীবনই হলো ভিত্তি স্থাপনের সময়। এই সময়ে অর্জিত শিক্ষা ও মূল্যবোধই ভবিষ্যৎ জীবনকে সুন্দর ও সার্থক করে তোলে। তাই প্রতিটি ছাত্রছাত্রীর উচিত তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকা।

১২. মোবাইল ফোনের সুফল ও কুফল

ভূমিকা: আধুনিক বিজ্ঞানের এক বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো মোবাইল ফোন। এটি আজ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে এর যাত্রা শুরু হলেও, আজ এটি বিনোদন, শিক্ষা, ব্যবসা—সবকিছুর কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর কিছু নেতিবাচক দিকও রয়েছে।

মূল বিষয়বস্তু:

  • সুফল (আশীর্বাদ):
    • যোগাযোগের বিপ্লব: পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের মানুষের সঙ্গে মুহূর্তে যোগাযোগ করা সম্ভব।
    • জ্ঞানের ভান্ডার: ইন্টারনেট সংযুক্ত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আমরা যেকোনো বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করতে পারি। অনলাইন ক্লাস, ই-বুক ইত্যাদি শিক্ষার প্রসারে সাহায্য করেছে।
    • বিনোদন: গান, সিনেমা, গেমস—মোবাইল ফোন আজ বিনোদনের এক বিশাল জগৎ।
    • দৈনন্দিন জীবনে সুবিধা: অনলাইন ব্যাংকিং, টিকিট বুকিং, কেনাকাটা—সবকিছুই আজ মোবাইলের মাধ্যমে সম্ভব।
  • কুফল (অভিশাপ):
    • সময়ের অপচয়: অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারের ফলে ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার ক্ষতি হয় এবং সময়ের অপচয় ঘটে।
    • স্বাস্থ্যের ক্ষতি: মোবাইলের অতিরিক্ত ব্যবহার চোখের ক্ষতি করে, ঘুমের সমস্যা তৈরি করে এবং মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
    • সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: মানুষ ভার্চুয়াল জগতে এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ে যে, বাস্তব জগতের সামাজিক সম্পর্কগুলি দুর্বল হয়ে যায়।
    • সাইবার ক্রাইম: মোবাইলের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কাজও সংঘটিত হচ্ছে।
উপসংহার: মোবাইল ফোন নিজে ভালোও নয়, মন্দও নয়। এর সুফল বা কুফল নির্ভর করে আমাদের ব্যবহারের উপর। আমাদের উচিত, এর ভালো দিকগুলিকে গ্রহণ করা এবং খারাপ দিকগুলি সম্পর্কে সচেতন থেকে এর নিয়ন্ত্রিত ব্যবহার করা।

১৩. একটি স্মরণীয় ভ্রমণ / একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণ

ভূমিকা: ভ্রমণ মানুষের মনকে সতেজ করে এবং নতুন অভিজ্ঞতা অর্জনে সাহায্য করে। গত শীতে আমাদের বিদ্যালয় থেকে যে শিক্ষামূলক ভ্রমণে গিয়েছিলাম, তা আমার জীবনের এক স্মরণীয় অধ্যায় হয়ে আছে। আমরা গিয়েছিলাম মুর্শিদাবাদ, বাংলার ইতিহাসের এক নীরব সাক্ষী।

মূল বিষয়বস্তু:

  • যাত্রার সূচনা: আমরা শিক্ষকমশাইদের সঙ্গে বাসে করে রওনা দিলাম। সারাপথ গান, গল্প আর উত্তেজনায় কেটে গেল।
  • দর্শনীয় স্থান: মুর্শিদাবাদ পৌঁছে আমরা প্রথমেই দেখলাম হাজারদুয়ারি প্যালেস। এর বিশাল স্থাপত্য, অস্ত্রশস্ত্র এবং নবাবদের ব্যবহৃত জিনিসপত্র দেখে আমরা মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এরপর আমরা মতিঝিল, কাটরা মসজিদ এবং জগৎশেঠের বাড়ি ঘুরে দেখলাম।
  • ঐতিহাসিক গুরুত্ব: প্রতিটি স্থান দেখার সময় আমাদের ইতিহাস শিক্ষকমশাই আমাদের সেই জায়গার ঐতিহাসিক গুরুত্ব ও কাহিনী বুঝিয়ে দিচ্ছিলেন। আমরা জানতে পারলাম নবাব সিরাজদ্দৌলার কথা, পলাশীর যুদ্ধের কথা। বইতে পড়া ইতিহাস যেন আমাদের চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল।
  • নতুন অভিজ্ঞতা: এই ভ্রমণ শুধুমাত্র আমাদের আনন্দ দেয়নি, আমাদের জ্ঞানকেও সমৃদ্ধ করেছে। আমরা শিখেছি কীভাবে একসঙ্গে থাকতে হয়, একে অপরকে সাহায্য করতে হয়।
উপসংহার: মুর্শিদাবাদ থেকে ফেরার সময় আমার মন একদিকে যেমন বাংলার ইতিহাসের জন্য গর্বে ভরে উঠেছিল, তেমনই অন্যদিকে সিরাজের পতনের জন্য ব্যথিত হয়েছিল। এই ভ্রমণ আমার কাছে শুধুমাত্র একটি ভ্রমণ ছিল না, ছিল এক জীবন্ত ইতিহাস পাঠ।

১৪. বৃক্ষরোপণের প্রয়োজনীয়তা / একটি গাছ একটি প্রাণ

ভূমিকা: “একটি গাছ একটি প্রাণ”—এই উক্তিটি শুধুমাত্র একটি স্লোগান নয়, এটি আমাদের অস্তিত্বের এক গভীর সত্য। গাছ ছাড়া পৃথিবীতে প্রাণের অস্তিত্ব অকল্পনীয়। কিন্তু মানুষ তার উন্নয়নের স্বার্থে নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস করে চলেছে, যা সমগ্র জীবজগতের জন্য এক ভয়াবহ সংকট তৈরি করেছে।

মূল বিষয়বস্তু:

  • গাছ আমাদের বন্ধু: গাছ আমাদের অক্সিজেন দেয়, যা ছাড়া আমরা বাঁচতে পারি না। এটি আমাদের খাদ্য, আশ্রয়, ঔষধ এবং জ্বালানির জোগান দেয়।
  • পরিবেশ রক্ষায় গাছের ভূমিকা: গাছ বায়ুমণ্ডল থেকে কার্বন ডাইঅক্সাইড শোষণ করে বিশ্ব উষ্ণায়ন রোধ করে। এটি মাটির ক্ষয় রোধ করে, বৃষ্টিপাত ঘটাতে সাহায্য করে এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষা করে।
  • বৃক্ষচ্ছেদের কুফল: নির্বিচারে গাছ কাটার ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। বন্যা, খরা, ভূমিক্ষয়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে। বহু পশুপাখি তাদের আশ্রয় হারাচ্ছে।
  • আমাদের কর্তব্য: এই সংকট থেকে বাঁচার একমাত্র উপায় হলো বৃক্ষরোপণ। আমাদের প্রত্যেকের উচিত অন্তত একটি করে গাছ লাগানো এবং তার যত্ন নেওয়া। বনমহোৎসবের মতো কর্মসূচিকে আরও সফল করে তুলতে হবে এবং বৃক্ষচ্ছেদন রোধে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে।
উপসংহার: আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে একটি সুস্থ ও সুন্দর পৃথিবী উপহার দেওয়ার জন্য বৃক্ষরোপণ এবং অরণ্য সংরক্ষণের কোনো বিকল্প নেই। তাই আজই আমাদের শপথ নিতে হবে—”গাছ লাগান, প্রাণ বাঁচান”।

১৫. আধুনিক প্রযুক্তি ও মানবসমাজ

ভূমিকা: আধুনিক যুগ হলো প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের যুগ। প্রযুক্তি মানবसमाजকে দিয়েছে এক অভাবনীয় গতি এবং বদলে দিয়েছে আমাদের জীবনযাত্রার প্রতিটি দিক। ইন্টারনেট, কম্পিউটার, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা—এই সবই আজ আমাদের জীবনের অঙ্গ।

মূল বিষয়বস্তু:

  • প্রযুক্তির ইতিবাচক প্রভাব:
    • যোগাযোগ: প্রযুক্তি বিশ্বকে এক সূত্রে বেঁধেছে।
    • শিক্ষা: অনলাইন শিক্ষা এবং তথ্যের সহজলভ্যতা জ্ঞানার্জনের পথকে প্রশস্ত করেছে।
    • স্বাস্থ্য: আধুনিক প্রযুক্তি চিকিৎসাবিজ্ঞানে বিপ্লব এনেছে।
    • কর্মসংস্থান: প্রযুক্তি নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করেছে।
  • প্রযুক্তির নেতিবাচক প্রভাব:
    • কর্মসংস্থান হ্রাস: যন্ত্রের ব্যবহার অনেক ক্ষেত্রে মানুষের কর্মসংস্থান কেড়ে নিচ্ছে।
    • সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: মানুষ যন্ত্রনির্ভর হয়ে পড়ায় মানবিক সম্পর্কগুলি দুর্বল হয়ে পড়ছে।
    • নৈতিক অবক্ষয়: সাইবার ক্রাইম, তথ্যের অপব্যবহারের মতো সমস্যা বাড়ছে।
    • পরিবেশের ক্ষতি: প্রযুক্তিগত উন্নয়নের ফলে পরিবেশ দূষণ বাড়ছে।
উপসংহার: প্রযুক্তি মানবসমাজের জন্য এক বিরাট সম্ভাবনা নিয়ে এসেছে। কিন্তু এর সাফল্য নির্ভর করছে আমাদের विवेकपूर्ण ব্যবহারের উপর। আমাদের এমন এক ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে হবে, যেখানে প্রযুক্তির উন্নয়ন হবে, কিন্তু মানবিকতার অবক্ষয় হবে না।

১৬. মাতৃভাষার গুরুত্ব / মাতৃভাষায় শিক্ষাদান

ভূমিকা: “মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ সম”—এই উক্তিটি মাতৃভাষার গুরুত্বকে তুলে ধরে। শিশু যেমন মায়ের দুধ পান করে পুষ্ট হয়, তেমনই মাতৃভাষার মাধ্যমে সে তার মানসিক ও বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটায়। মাতৃভাষাই হলো আমাদের আত্মপরিচয়ের ভিত্তি।

মূল বিষয়বস্তু:

  • শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষা: মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করলে ছাত্রছাত্রীরা যেকোনো বিষয় সহজে ও স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে। তাদের চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে। অন্য ভাষায় শিখতে গিয়ে তাদের যে অতিরিক্ত শ্রম করতে হয়, তা লাঘব হয়।
  • সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ধারক: মাতৃভাষা শুধুমাত্র একটি যোগাযোগের মাধ্যম নয়, এটি একটি জাতির সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও ভাবনার ধারক। মাতৃভাষার মাধ্যমেই আমরা আমাদের সাহিত্য, ইতিহাস ও সংস্কৃতির সঙ্গে পরিচিত হই।
  • আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস: নিজের ভাষায় কথা বলা ও শিক্ষা গ্রহণ করা মানুষের মধ্যে আত্মমর্যাদা ও আত্মবিশ্বাস জাগিয়ে তোলে।
  • বর্তমান সংকট: বিশ্বায়নের যুগে ইংরেজি ভাষার চাপে আজ অনেক মাতৃভাষা সংকটের মুখে। আমাদের দেশেও বাংলা ভাষার প্রতি এক ধরনের অবহেলা লক্ষ্য করা যায়, যা আমাদের সংস্কৃতির জন্য অশনিসংকেত।
উপসংহার: অন্য ভাষা শেখা অবশ্যই প্রয়োজন, কিন্তু তা মাতৃভাষাকে অবহেলা করে নয়। আমাদের মাতৃভাষার চর্চা ও সম্মান রক্ষা করা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।

১৭. বিজ্ঞাপন ও তার প্রভাব

ভূমিকা: বর্তমান যুগ হলো বিজ্ঞাপনের যুগ। সংবাদপত্র, টেলিভিশন, ইন্টারনেট—সর্বত্রই বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। বিজ্ঞাপন একদিকে যেমন আমাদের নতুন নতুন পণ্য ও পরিষেবা সম্পর্কে অবগত করে, তেমনই অন্যদিকে এটি আমাদের জীবনযাত্রাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করে।

মূল বিষয়বস্তু:

  • বিজ্ঞাপনের উদ্দেশ্য: বিজ্ঞাপনের মূল উদ্দেশ্য হলো কোনো পণ্যের প্রতি ক্রেতাকে আকৃষ্ট করা এবং তার বিক্রি বাড়ানো।
  • ইতিবাচক প্রভাব:
    • আমরা নতুন নতুন জিনিস সম্পর্কে জানতে পারি।
    • বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্যের মধ্যে তুলনা করে সঠিক জিনিসটি বেছে নিতে পারি।
    • অনেক বিজ্ঞাপন সামাজিক সচেতনতা (যেমন—স্বাস্থ্য, পরিবেশ) বৃদ্ধিতেও সাহায্য করে।
  • নেতিবাচক প্রভাব:
    • অনেক সময় বিজ্ঞাপন আমাদের মধ্যে অপ্রয়োজনীয় চাহিদা তৈরি করে এবং আমরা লোভে পড়ে অপ্রয়োজনীয় জিনিস কিনি।
    • বিজ্ঞাপন অনেক সময় মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত তথ্য দিয়ে মানুষকে প্রতারিত করে।
    • বিজ্ঞাপন শিশুদের মনে গভীর প্রভাব ফেলে এবং তাদের মধ্যে অস্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস বা চাহিদা তৈরি করে।
    • বিজ্ঞাপন অনেক সময় আমাদের রুচি ও সংস্কৃতিকে বদলে দেয়।
উপসংহার: বিজ্ঞাপন আধুনিক জীবনের এক অপরিহার্য অঙ্গ। কিন্তু আমাদের উচিত বিজ্ঞাপনের দ্বারা অন্ধভাবে প্রভাবিত না হয়ে, নিজের विवेक ও বুদ্ধি দিয়ে বিচার করে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া।

১৮. গ্রন্থাগারের প্রয়োজনীয়তা

ভূমিকা: গ্রন্থাগার হলো জ্ঞানের সমুদ্র। এটি শুধুমাত্র বইয়ের সংগ্রহশালা নয়, এটি একটি জাতির মেধা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র। একটি ভালো গ্রন্থাগার একটি সমাজের আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে।

মূল বিষয়বস্তু:

  • জ্ঞানার্জনের সহায়ক: গ্রন্থাগার হলো জ্ঞানপিপাসু মানুষের আশ্রয়স্থল। এখানে বিভিন্ন বিষয়ের অসংখ্য বই থাকে, যা পড়ে মানুষ তার জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে পারে। সকলের পক্ষে সব বই কেনা সম্ভব নয়, গ্রন্থাগার সেই সুযোগ করে দেয়।
  • ছাত্রছাত্রীদের জন্য গুরুত্ব: ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার জন্য গ্রন্থাগার অপরিহার্য। এখানে তারা পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি সহায়ক বই ও বিভিন্ন পত্রপত্রিকা পড়ার সুযোগ পায়, যা তাদের জ্ঞানকে আরও গভীর করে।
  • সংস্কৃতির পীঠস্থান: গ্রন্থাগার একটি জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করে। এখানে পুরনো পুঁথি, দুষ্প্রাপ্য বই ইত্যাদি সংরক্ষিত থাকে, যা গবেষকদের গবেষণার কাজে সাহায্য করে।
  • সমাজ গঠনে ভূমিকা: একটি ভালো গ্রন্থাগার সমাজের মধ্যে শিক্ষার প্রসার ঘটায় এবং মানুষের মধ্যে রুচিশীলতা ও মূল্যবোধ তৈরি করে। এটি মানুষকে অবসর সময়ে সুস্থ বিনোদনের সুযোগ করে দেয়।
উপসংহার: ইন্টারনেট ও মোবাইলের যুগে হয়তো বই পড়ার অভ্যাস কমে আসছে, কিন্তু গ্রন্থাগারের গুরুত্ব এতটুকুও কমেনি। একটি সুস্থ ও শিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলার জন্য প্রতিটি পাড়ায় গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা করা একান্ত প্রয়োজন।

১৯. ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর

ভূমিকা: উনিশ শতকের বাংলায় যে সমস্ত মনীষী নবজাগরণের আলো জ্বেলেছিলেন, তাঁদের মধ্যে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন অন্যতম। তিনি ছিলেন একাধারে একজন শিক্ষাবিদ, সমাজ সংস্কারক, লেখক এবং দয়ার সাগর। তাঁর দৃঢ় চরিত্র ও পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি ‘বিদ্যাসাগর’ উপাধিতে ভূষিত হন।

মূল বিষয়বস্তু:

  • জন্ম ও শিক্ষা: ১৮২০ সালে মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে তাঁর জন্ম। অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও তিনি অদম্য ইচ্ছাশক্তি ও কঠোর পরিশ্রমে সংস্কৃত কলেজ থেকে পাণ্ডিত্যের সর্বোচ্চ উপাধি লাভ করেন।
  • শিক্ষাসংস্কার: তিনি বুঝেছিলেন, শিক্ষার প্রসার ছাড়া দেশের উন্নতি সম্ভব নয়। তিনি বাংলা গদ্যের জনক হিসেবে পরিচিত। ‘বর্ণপরিচয়’, ‘কথামালা’, ‘বোধোদয়’ ইত্যাদি গ্রন্থ রচনা করে তিনি বাংলা ভাষাকে সহজ ও সুশৃঙ্খল রূপ দেন। তিনি নারীশিক্ষার প্রসারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
  • সমাজ সংস্কার: তাঁর জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হলো বিধবা বিবাহ প্রবর্তন। তিনি সমাজের সমস্ত বাধা উপেক্ষা করে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে বিধবাদের পুনর্বিবাহের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়াও তিনি বহুবিবাহ ও বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধেও সোচ্চার ছিলেন।
  • দয়ার সাগর: তাঁর হৃদয় ছিল দয়ায় পূর্ণ। তিনি নিজের উপার্জনের বেশিরভাগই দরিদ্র ও আর্ত মানুষের সেবায় ব্যয় করতেন। তাই মানুষ তাঁকে ‘দয়ার সাগর’ বলেও ডাকত।
উপসংহার: ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন একজন সত্যিকারের আধুনিক মানুষ। তাঁর দেখানো পথ ও আদর্শ আজও আমাদের সমাজের পাথেয় হয়ে আছে।

২০. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি

ভূমিকা: ভারত এক বৈচিত্র্যময় দেশ। এখানে নানা ধর্ম, ভাষা ও সংস্কৃতির মানুষ একসঙ্গে বাস করে। এই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যই হলো ভারতের শক্তি। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বা বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানই হলো এই ঐক্যের ভিত্তি।

মূল বিষয়বস্তু:

  • সম্প্রীতির ঐতিহ্য: ভারতের ইতিহাসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক গৌরবময় ঐতিহ্য রয়েছে। শ্রীচৈতন্য, কবীর, গুরু নানকের মতো মনীষীরা ধর্মের ভেদাভেদের ঊর্ধ্বে উঠে মানবতার জয়গান গেয়েছেন। বাংলার বাউল-ফকিরদের গানেও এই সম্প্রীতির সুর ধ্বনিত হয়।
  • সম্প্রীতির প্রয়োজনীয়তা: একটি দেশের উন্নতি ও অগ্রগতির জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অপরিহার্য। যেখানে হিংসা, বিদ্বেষ ও বিভেদ থাকে, সেখানে কোনো উন্নতি সম্ভব নয়। শান্তি ও স্থিতি বজায় রাখার জন্য সম্প্রীতি প্রয়োজন।
  • সম্প্রীতি নষ্টের কারণ: কিছু স্বার্থান্বেষী রাজনৈতিক নেতা এবং ধর্মীয় মৌলবাদীরা নিজেদের স্বার্থে মানুষের মধ্যে বিভেদ তৈরি করে। অশিক্ষা, দারিদ্র্য এবং কুসংস্কারও সম্প্রীতি নষ্টের অন্যতম কারণ।
  • আমাদের কর্তব্য: সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষা করা আমাদের সকলের দায়িত্ব। আমাদের উচিত, সমস্ত ধর্মের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া, একে অপরের উৎসবে অংশগ্রহণ করা এবং কোনো রকম প্ররোচনায় পা না দেওয়া। ছাত্রসমাজ এই সম্প্রীতির বার্তা প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
উপসংহার: “নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধান/বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান”—কবির এই কথাই হোক আমাদের আদর্শ। সমস্ত বিভেদ ভুলে আমরা যদি এক ভারতীয় হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতে পারি, তবেই আমাদের দেশ এক মহান দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে।

তুমি কি এবছর Madhyamik 2026 পরিক্ষা দেবে মাধ্যমিক রচনা সাজেশন 2026 পেতে চাও মাধ্যমিক সাজেশন 2026 এখানে পাবে

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top